#নিস্তব্ধ_বিচরণ
#লিখা_তানজিলা
#পর্ব – ৬
রেহান একটু পর পর দরজায় নক করছে। কিন্তু রুমের ভেতর থেকে ইনায়ার কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। বুকের ভেতর অজানা এক ভয়ের আনাগোনা। রেহানের চেহারায় স্পষ্ট আতঙ্ক দেখে জান্নাত রেহানের কাধে হাত রেখে ওকে শান্ত হতে বলে। মারিয়া খেলনা হাতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কেমন যেন একটা অপরাধীর মতো চেহারা করে রেখেছে। জান্নাত সন্দেহের দৃষ্টিতে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে ওকে প্রশ্ন করে,
-“তুমি তখন কী বলছিলে তোমার মামীকে?”
মায়ের মুখে প্রশ্নটা শুনতেই মারিয়া ঠোঁট উল্টে কান্না শুরু করলো। মারিয়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে রেহান সাথে ওকে কোলে তুলে নেয়।
-“ওকে এই প্রশ্ন করছিস কেন? একটা বাচ্চা মেয়ের কথায় ইনায়ার এভাবে ছাঁদ থেকে দৌড়ে এসে দরজা আটকে বসে থাকবে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে তোর কাছে?”
মারিয়ার কান্না আগে থেকে কিছুটা কমে এলো। ফুপিয়ে বললো,
-“মামী অনেক খারাপ! পাগল!”
-“মারিয়া!”
জান্নাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর মেয়ের দিকে। এতটুকু মেয়ের মাথায় এসব ঢুকলো কীভাবে!
রেহান কিছুটা শান্ত কন্ঠে মারিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,
-“মামণি এসব কথা তোমাকে কে বলেছে?”
মারিয়া চোখ কচলে বললো,
-“নানা বলেছে। আমি শুনেছি। আর ঐ…!”
মুহুর্তেই রেহানের চোয়াল শক্ত করে তাকালো। রেহানকে এভাবে দেখে মারিয়াও চুপ হয়ে গেল।
জান্নাত মারিয়াকে রেহানের কোল থেকে নিতেই রেহান হনহন করে বেরিয়ে গেল।
রেহান যাওয়ার পর ইনায়াও দরজা খুললো। চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে আছে।
জান্নাত এ বিষয়ে কোন কথা ইনায়ার সাথে বললো না। এমুহূর্তে হয়তো কিছু না বলাই ভালো হবে। বাবা ভাইয়ের মধ্যে সেই ছোটবেলা থেকেই মনোমালিন্য দেখে আসছে জান্নাত। ওর বাবা যে রেহান আর ইনায়ার বিয়েতে একদমই খুশি না সেটা জান্নাত খুব ভালোভাবেই জানে। বাবার বাড়িতে খুব কমই যাওয়া হয় জান্নাতের। জান্নাতের কাজ ওর দাদাীর ভিষণ অপছন্দের। এ বিষয়ে প্রচুর কটু কথা শুনতে হয় ওকে ওর দাদীর কাছে!
ইনায়া একবারও রেহানের কথা জিজ্ঞেস করেনি। শুধু জান্নাতের সাথে স্বাভাবিক কথা বলছে। মারিয়া মুখ ফুলিয়ে ওর পাশে বসে খেলছে। জান্নাত বলায় ইনায়াকে একবার সরি বলেছে। যদিও ইনায়া মানা করেছিল। সত্যি বলতে মারিয়ার বলা কথাগুলো ছাড়াও আরও কিছু শুনেছে ও। ভাবছে ওর চাচীর সাথে একবার এই বিষয়ে কথা বলবে।
-“আজকাল টাকা থাকলে মানুষ আর কিছু দেখে! খুনের আসামীর হাতে তুইলা দিতেও এক সেকেন্ড ভাবে না! আর মেয়েরওতো নাকি খোট আছে!”
ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুইজন মহিলা যে ওকে নিয়েই কথা বলছিল সেটা ইনায়ার বুঝতে তেমন অসুবিধা হলো না। সবকিছু গোলমেলে হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনেই। খুনের আসামী কাকে বলছিলো ওরা!
রাতের দিকেই জান্নাত আর মারিয়া চলে গেল। রেহান এখনো বাড়িতে আসেনি। জান্নাত আর মারিয়া চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ইনায়া ওর চাচীকে ফোন করলো।
_________________
রাত এখন প্রায় দুইটা। চারদিকে শীতল হাওয়া বিরাজ করছে সাথে নিস্তব্ধতা। রেহান কিছুক্ষণ আগেই ফিরলো। ইনায়াও না ঘুমিয়ে এতক্ষণ রেহানের জন্য অপেক্ষা করছিল। ইনায়াকে দেখে বেশ স্বাভাবিক মনে হচ্ছে এখন। কিন্তু ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই যেন একশো ভোল্টেজের শক খেলো রেহান!
ইনায়া ওর বুকশেলফ থেকে একটা ডায়েরি বের করে পড়ছে। ডায়েরিটা যে রেহানের সেটা বুঝতে ওর সময় লাগলো না। ছো মেরে ইনায়ার হাত থেকে ডায়েরিটা কেড়ে নিয়ে শক্ত গলায় বললো,
-“আমার পারসোনাল ডায়েরি আমি কাউকে ধরতে দেই না, আর তুমি….!”
-“আপনি আমার বাবাকে কেন খুঁজছিলেন?”
নির্লিপ্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে ইনায়া। ডায়েরির এক পাতায় ইনায়ার বাবা হাবিবের বেশ কিছু ইনফোরমেশন লেখা দেখে ইনায়া। ঐ লোকটাও তো…! না! আর ভাবতে পারছে না ও।
-“রাত হয়ে গেছে। এখন এই বিষয়ে কোন কথা বলতে চাচ্ছি না!”
-“কিন্তু আমি জানতে চাই! চাচাীকে অনেক জোর করার পর আজ বলেছে সেদিন আপনি আমাকে জঙ্গলে পেয়ে ওখান থেকে হসপিটালে নিয়ে গেছিলেন। তার কয়েকদিন পর আমার বাবাও…!”
আর বলতে পারলো না ইনায়া। বারবার গলা আটকে আসছে ওর। সামনের মানুষটাকে প্রথম প্রথম ভয় পেলেও কিছুটা হলেও ভরসা করতে চেয়েছিল ও!
চলবে…