#নীড়ের_খোজে♥
পর্বঃ১৭
#জান্নাতুল_বিথী
গাড়িতে বসে জানালায় হেলান দিয়ে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছি সমানে মন টা বিষিয়ে আছে।কোনো কিছুই ভালো লাগছে না আমার কাছে!পাশেই বসে আছে শৈবাল তার দিকে একবার আড় চোখে তাকিয়ে দেখি এখনো প্রচন্ড রা’গে তার শরীর কা’পছে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনে তাকাই সৈকত ভাইয়া এক মনে ড্রাইভ করছে তার মুখটাও রা’গে থমথমে হয়ে আছে!সবার রা’গের কারন টা আমিই,আমার কারনেই সবার সাথে কতো ঝামেলা হলো ভাবলেই আরো বেশি কা’ন্না পায় আমার।এক সময় শব্দ করে কেদে উঠতেই শৈবাল আমাকে কাছে টেনে নেয়,এক হাতে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে চুলে আলতো বিলি কেটে দিতে থাকে।আমার কান্না দেখে নিজের রা’গ গুলো বহু কষ্টে গি’লে ফেলে কোমল স্বরে বললো,
‘সমাজে এমন কয়েকটা কী’ট থাকে মানুষ কে কথা শুনানোর জন্য তাই বলে এভাবে কা’ন্না কাটি শুরু করবা এটাও একদম ঠিক না।কাদে না বউ আমার!’
তার কোমল স্বরের কথা শুনে কা’ন্নার বেগ বেড়ে যায় আরো,কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছি না!বার বার মানষপটে সেই দৃশ্য টা ভেসে উঠে।
মাত্র কয়েক ঘন্টা আগের কথা,
আমি শৈবাল কে জড়িয়ে ধরার কথা বলার পরই একটা ছেলে এসে ডেকে নিয়ে যায় শৈবালকে।এখনি নাকি বিয়ে পড়ানো হবে তাই শৈবাল তাকে যেতে বলে আমার কাছে এসে বললো,
‘চলো তুহা মামার কাছে যাই!’
বলতে বলতে আমাকে একপাশ থেকে আ’গলে রেখে অন্য হাত দিয়ে ফোনে স্ক্রল করতে করতে এগিয়ে যায় আমরা!বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে বউকে বিদায় দিতে দিতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।আমরা সবাই বেশ ক্লান্ত থাকায় বাড়ি পৌছাতেই সোফায় ধপ করে বসে পড়ি আমি,আমার পাশেই নতুন বউ মানে ছোট মামি বসা।শৈবালরা গেছে ছোট মামার বাসর ঘর সা’জাতে।অনেকেই নতুন বউ দেখতে আসছে এসে বউ দেখে নানা ধরনের মন্তব্য করতে থাকে।মনে হয় তাদের কাজই এটা ভেবেই মনে মনে হেসে ফেললাম আমি!হঠাৎ পাশ থেকে একজন মহিলা বলে উঠলো,
‘তুমি আমগো রেখার মাইয়্যা না?’
পাশে তাকিয়ে দেখলাম আমার দাদির বয়সি একজন মহিলা বসে,তাই আমি মিষ্টি হেসে নম্র স্বরে বলালাম,
‘জ্বী দাদি!’
‘কোন কেলাশে হরো তুমি?’
গলা ঝেড়ে বললাম আমি,
‘এইচএসসি দিয়েছি দাদি,ইনশাআল্লাহ এইবার ভার্সিটিতে ভর্তি হবো!’
ভদ্র মহিলা আমার দিকে ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ বললো,
‘মাইয়্যা তো মাশাআল্লাহ্ সুন্দরই আছো তা এতো হরা লেহা কইরা কি কইরবা মাইয়্যা,তোমারে একখান বুদ্ধি দিতাছি আমার একখান নাতি আছে বিয়া কইরা ফালাও তারে মেলা সুখি হইবা কইয়া দিলাম!’
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি আমি দাদির দিকে।বিয়ে নিয়ে দ্বিতীয় বার কথা উঠতেই আমার মন পাংশুটে বর্ন ধারন করে।পাশ থেকে হঠাৎ মিহা আপু বললো,
‘তুহা শহরের মেয়ে হয়ে তোমার গ্রামের নাতিকে কেনো বিয়ে করবে দাদিমা?রিজু ভাই মূ’র্খ মানুষ আর তুহা ভার্সিটিতে উঠবে এবার।সব কিছু বিবেচনা করে কথা বলিয়ো দাদিমা।আর সব চাইতে বড় কথা হলো তুহা বিবা..’
তাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দিয়ে হঠাৎ দাদি খেকিয়ে উঠে,তার গায়ে লাগছে নাতিকে মূর্খ বলার কারনে!সে আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
‘এ্যাই কি কইলি তুই আমার নাতি মূ’রুক্ষ?আমার নাতির পায়ের কাছে যাইতে পারবো এ্যাই রা’স্তার মেয়েটা?তোর কি মনে হয় হের বিষয়ে আমি কোনো কিছু জানিনা?উন্নিশ বছর রাস্তায় রাস্তায় ছিলো এ্যাই মাইয়্যা,এহন আবার পরিবার পাইয়া উড়া শুরু কইরা দিছে,ভার্সিটিতে ভর্তি হইবো এহন!আল্লাহ্ই জানে আবার কতো না’গর জুটায় কপালে!এই কপাল পো’ড়োরে বিয়া কইরবো কেডা?নেহাৎ আমার নাতি হেরে হছন্দ কইরছে হের লাইগাই কইছি।নাইলে এরম একখান ন’ষ্টা মাইয়্যারে আমার নাতির বউ করার লিগা আমার ঠ্যা’হা পরে নাই ছেমরি!’
এতো এতো তিক্ত মিথ্যা শুনে গা পিত্তি জ্বলে উঠে আমার, উঠে দাড়িয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই সৈকত ভাইয়া আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে কিছু বলতে নিষেধ করলো!যার জন্য আমি চুপচাপ তার পাশে গিয়ে দাড়াই,দাদির চিৎকারে ইতোমধ্যে ড্রয়িংরুমে অনেক মানুষই জড়ো হয়েছে!তার মধ্যে শৈবাল ও আছে সে এখনো বুঝতে পারছে কাকে কি বলা হয়েছে তাই সে চুপচাপ ই দাড়িয়ে ছিলো!সৈকত ভাইয়া বললো,
‘আপনার নাতির চরিত্র কতো ভালো সেটা খুব ভালো করেই জানা আছে আমার,এমন কোনো অসৎ কাজ নাই যেটা আপনার নাতি করে নাই আবার কোন মুখে আপনি আপনার নাতির জন্য আমার বোন কে সিলেক্ট করেন?তাছাড়া আপনি জানেন ও যে বিবাহিত?’
এতক্ষনে শৈবাল হয়তো কিছুটা আচ করতে পেরেছে তাই সে হঠাৎ করেই হুংকার ছেড়ে বললো,
‘কে কি বলেছে তুহাকে?কার এতো বড় সা’হস হলো আমার বউকে উল্টা পাল্টা কথা শুনানোর?জ্বিব টেনে ছিড়ে ফেলবো একদম।’
তার হুংকারে ড্রয়িংরুমের সবাই কেপে উঠে,মিহা আপু মিনমিন করে বললো,
‘দাদিমা রিজু ভাইয়ের জন্য তুহাকে দেখতে আসছে তারপরই কি কি সব কথা বলছে সে।’
মিহা আপুর কথাটা যেনো আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে তাদের দুই ভাইয়ের মাঝে।সব সময় চুপচাপ থাকা সৈকত ভাই কতো গুলো বি’শ্রি গা’লি দিয়ে বললো,
‘ওই শা’লা কু’ত্তার বা’চ্চাকে আমরা দুই ভাই মিলিয়ে ফিটিয়েও সোজা করতে পারি নাই না?শা’লারে সামনে পাইলে খুন করবো আমি।’
অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে কথা গুলো বলে ফেলে সৈকত ভাইয়া,তার কথাটা শুনে ড্রয়িংরুমের সকলেই চমকে উঠে!আমি নিজেও হালকা চমকে উঠে তার দিকে তাকাই।শৈবাল দাতে দাত চেপে বললো,
‘যে বাড়িতে আমার বউয়ের বিন্দু মাত্র রেসপেক্ট নাই ওই বাড়িতে কখনো থাকবো না আমি,আর কখনো এই শৈবালকে এবাড়ি মুখো করতে পারবে না তোমরা কেউ।’
কথাটা বলতে বলতে আমার হাত ধরে বের হয়ে যায় শৈবাল।আমাদের পিছু পিছু অনেকই বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে আমাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও কাজের কাজ কিছুই হয়না!বড় আম্মু, আম্মু চুপচাপ দাড়িয়ে দেখছে।কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তারা।শৈবালকে অতিরিক্ত রে’গে জেতে দেখে সৈকত ভাইয়াও চলে আসে আমাদের সাথে।এতক্ষন শান্ত থাকলেও প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য পেতেই আমার সব কা’ন্না দলা পাকিয়ে আসে!সহ্য করতে না পেরে ডুকরে কেদে উঠি আমি।
.
নিজেকে শূন্যে ভাসতে দেখে ফট করে চোখ খুলে ফেলি আমি,মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে!কা’ন্না করতে করতে কখন যে শৈবালের বুকে ঘুমিয়ে পড়ি খেয়ালই করিনি,চারদিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি আমি কোথায় আছি।তখন দেখলাম শৈবালের কোলে আছি,এটা দেখেই লজ্জায় তার বুকে মুখ লুকাই আমি।সে আমাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে বললো,
‘ঘুমাও,বেশি মাথা ব্যাথা করছে বউ?’
আমি তার মুখের দিকে তাকাতেই নিজের সব কষ্ট নিমিষেই ভুলে গেলাম,মোহনীয় গলায় বললাম,
‘বেশিনা হালকা ব্যা’থা করছে!’
‘ঠিক আছে ঘুমাও আমি কপালটা হালকা ম্যা’সাজ করে দিচ্ছি ভালো লাগবে তোমার!’
চলবে,,,,,,,,
[গঠন মূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম]