#নীরদের_বিষাদিনী- (২)
সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রায়শ দেখা মিলে প্রেমিকার অদ্ভূত কান্ডের খবর।সম্পর্ক এগিয়ে যেতে না করায় প্রেমিকের বাড়ীতে গিয়ে অনশনে বসা।ঘটনাটির সঙ্গে নিজের হালকা মিল বুঝতে পেরেই রাফা চোখ ছোট ছোট করে ফেললো।পরক্ষণে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।বড্ড উসখুস লাগছে তার।কিন্তু এখন সেটা কিঞ্চিত পরিমাণে প্রকাশ করা অনুচিত হবে।সে জাবিরের ফ্ল্যাটে সোফায় পা তুলে বসে আছে।সামনে রিনি ভীতসন্ত্রস্ত অসহায় জাবিরের পানে বারবার মুখ তুলে তাঁকাচ্ছে।রাফা ধমকে উঠে বলল,
“বারবার জাবির ভাইয়ার দিকে কেন তাঁকাতে হবে তোর রিনি?আদিখ্যেতা করিস?”
“আপু।”
“চুপ বেয়াদব মেয়ে।”
জাবির যেন একটু বিরক্ত হলো।গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,
“তুমি কী এখন চলে যাবে নাকী রোহানকে ফোন করতে বাধ্য হবো আমি?”
“কেন?ভাইয়া এসে আমাকে মা”র”বে মনে করছেন জাবির ভাই?”
“অন্তত নিয়ে যেতে পারবে।বোনের শ্বশুর বাড়ীতে এসে এসব করা বড্ড বেমানান।চক্ষুলজ্জার বিষয় আছে।”
রাফা মজা পেলো জাবিরের কথায়।বাক্যে গভীরতা টেনে বলল,
“তাই নাকী?তা রিনি তুইও লজ্জা পাচ্ছিস?কী হলো বল।”
রিনি মাথা নিচু করে রইলো।কণ্ঠে টু শব্দটি নেই তার।রাফা খেয়াল করলো একদিনেই তার ছোট্ট বোনটির চেহারার উজ্জ্বলতা কয়েকশত গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।পক্ষান্তরে রাফা!অনেকগুলো ঘন্টা ধরে আয়নায় নিজেকে দেখার বিন্দুমাত্র সাহস কিংবা ইচ্ছে হয়নি।তবে তার মা বলেছে বড্ড ফ্যাকাশে হয়ে গেছে মুখটা।
“লজ্জা কী জাবির ভাই সেটা আমার বাবা,ভাইকে গিয়ে এখন জিজ্ঞেস করেন।দেখবেন খুব ভালো উত্তর দিতে পারবে।বড় বোনের হবু স্বামীর সঙ্গে বিয়েটা করতে একটুও কষ্ট হলো না রিনি?”
রিনির হয়ে উত্তরটি জাবির নিজে দিয়ে দিলো।
“নাহ।হয়নি উল্টো ভালো কাজ করেছে।তোমাকে বারবার বলেছিলাম বিয়েটা ভেঙে দিতে।”
“বিয়ের একদিন আগে বলেছিলেন জাবির ভাই।আপনারা আপনারা কী করেছেন তা কোনোদিনও বুঝবেন না।”
গলা ধরে এলো রাফার।বড্ড শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।রিনির কাছে এক গ্লাস পানি চাওয়ার ইচ্ছাকে মুহুর্তেই দমন করে ফেললো।সে এখানে কিছু খেতে নয়।মানুষ দুটোকে অল্প সময়ের জন্য জ্বালাতে এসেছে।নিজের বাড়ীতে একদিনেই হাঁপিয়ে উঠেছিল।পুরো ফ্ল্যাটটিকে ভালো মতন দেখলো।সব জায়গায় রিনির উষ্ণ শ্বাসের প্রলেপ।রাফা শুকনো ঢোক গিলে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো।আশ্চর্য চোখের অশ্রু গুলো এতো বেহায়া কেন?রাফাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে ভেতর হতে দমে গেলো রিনি।জাবিরের হাত ধরে ফিসফিস করে বলল,
“আপু সহজে যাবে না।তুমি একবার নীরদ ভাইয়াকে কল করো।সে কোনো মেডিসিন দিয়ে যদি অ”জ্ঞা”ন করতে পারে।”
রিনির কথাটি ভালো লাগলো জাবিরের।তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে সরে গিয়ে বারান্দায় এসে কাওকে ফোন করলো।বেশ কয়েকবার কল দেওয়ার পর রিসিভ করলো।কেউ ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল,
“ভাই চব্বিশ ঘন্টা হসপিটালে কাঁটিয়ে এসেছি।সামান্যও এনার্জি নেই।যা সমস্যা নিজেরা মিটিয়ে নে।”
“নীরদ,রাফা এসেছে অনেক ক্ষণ ধরে।যাওয়ার নাম নিচ্ছে না।শুধু শুধু বসে আছে।”
“যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য।একটু পর চলে যাবে।ভাবিস না।”
“দেখ ভাই।গতকালও আমি আর রিনি আলাদা টাইম স্পেন্ড করতে পারিনি।আজ না পারলে বিষয়টা বাজে হয়ে যাবে।”
ফোনের ওপাশে থাকা নীরদ নামক মানুষটি অদ্ভূত একটি শব্দ করলো।সে যে আগাগোড়া খুব বিরক্ত খুব ভালোমতন বুঝলো জাবির।
“ওয়েল আমি আসছি।”
(*****)
দরজা খুলে বড় বড় পা ফেলে একজন যুবক সোফার দিকে এগিয়ে আসছে।পরনে ট্রাউজার ও লাইট গ্রীন কালারের টি শার্ট।মাথার এলেমেলো চুলগুলো জানান দিচ্ছে যে সে সদ্য বালিশের সাথে যু”দ্ধ করে এখানে এসেছে।চোখের চশমাটি টেনে সোফায় বসে থাকা রাফাকে ভালমতোন দেখে নিলো নীরদ।উষ্ণ শ্বাস ফেলে পাশে গিয়ে বসলো।অন্য আরেকজনের উপস্থিতে টান টান হয়ে বসলো রাফা।নীরদ হাই তুলে রিনির উদ্দেশ্যে বলল,
“ভাবী এক কাপ কফি দাও তো।ঘুম থেকে টেনে এনেছে জাবির।পরে কী রেখে কী ই”ঞ্জে”ক”শ” ন দিয়ে দিবো তোমার বোনকে বুঝতেই পারবো না।”
নীরদের মুখে ভাবী ডাক শুনে রিনি অনেকটা লজ্জা পেলো।সে কিচেনে চলে গেলো কফি বানাতে।জাবির পূর্বের ন্যায় বিরক্ত মুখে বসে আছে।নীরদের দৃষ্টির গাঢ়তা বুঝতে পেরে রাফা সহজ কণ্ঠে বলল,
“চোখ সরান ডাক্তার।তা নয় ভা” ঙা চশমা নিয়ে বাসায় ফিরতে হবে।”
“বাহ।তিন বছর চার মাস পঁচিশ দিন পর আমার সাথে কথা বললে তাও এমন হী” ন বাক্য?এটা কী ঠিক রাফা?”
রাফা জবাব দিলো না।রিনি চট জলদি কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছে।তবে শুধু নীরদকে দিলো।বোনকে সাধতেও ভয় পাচ্ছে।কফি দুই চুমুক দিয়ে রেখে দিলো নীরদ।পকেট থেকে ঔষধ আর সিরিঞ্জ বের করলো।
“রাফা সোজা হও।”
আ”হ”ত হলো রাফা।অবাক চোখে জাবিরের পানে তাঁকালো।নীরদ এখানে কেন এসেছে তা খানিকটা আন্দাজ করতে পারলেও তা যে সত্যি সেটা ভাবতেই শিউরে উঠলো সে।
“আমাকে ঘুমের ই”ঞ্জে”ক”শ”ন দিতে আসার সাহস কীভাবে হয় আপনার ডাক্তার?”
“সাহস আমার আগে থেকেই ছিল।চট জলদি আমাকে সাহায্য করো রাফা।তা নয় ব্যাথা দিতে বাধ্য হবো।তাছাড়া এটা ভদ্রলোকের ফ্ল্যাট।সেখানে এসে সিন ক্রিয়েট করার অধিকার তোমার নেই।”
বাক্যের শেষাংশে নীরদ খানিকটা রেগে উঠেছিল।রাফা অবাক হলো।যে দুটো মানুষের জন্য জীবনটা ফাঁ”সি”র ম”ঞ্চের মতো হয়ে উঠেছে তারা কিনা একটুও যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছেনা?তাছাড়া নীরদ নামক এই নির্দয় মানুষটাও কেন অন্যায় মেনে নিচ্ছে?পরক্ষণে তিন বছর আগেকার অতীত মনে হলো।যে নিজে অন্যায় করে তার নিকট সবটা সহজ মনেই হবে।রাফার অন্য মনস্ক ভাবের সুযোগটাকে কাজে লাগালো নীরদ।চট করে ইঞ্জেলশনটা পুঁশ করে দিলো।জাবির স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো।ঠান্ডা কফিতে চুমুক দিয়ে নীরদ শুধালো,
“এভাবে এখানে আসার মানে কী রাফা?”
“যন্ত্রণা দিতে এসেছিলাম।”
নীরদ ঠোঁট কাঁ”ম”ড়ে ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
“অদ্ভূত।”
ঔষধটি কাজ করতে একটু টাইম লাগছে বিধায় নীরদ বসে আছে।রাফা পূর্বের থেকেও আঁটসাঁট হয়ে বসে আছে।মেয়েটির চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।কার্ণিশ ছুঁইছুঁই।নীরদ স্বীয় ভয়ংকর ইচ্ছাকে দমন করতে পারলো না।আঙুল দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিলো।শুষ্ক মেদুর মুখমণ্ডলে হাত বুলিয়ে কপালে একগোছা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিলো।যদিও সবটা জাবির ও রিনির অগোচরে।তারা ভেতরে চলে গিয়েছে।হয়তো একটু পরে ফিরে আসবে।রাফার অবস্থা তখন শোচনীয়।ঘুমের যন্ত্রণায় সোফায় হেলে পড়লো।নীরদ একমনে মেয়েটিকে দেখে বিশ্বজয়ীর হাসি হাসলো।উষ্ণ শ্বাস ফেলে কারচুপি করে বলল,
“বিয়েটা না হওয়ায় কষ্ট পেয়েছো বিষাদিনী।অথচ হলে আমি কষ্ট পেতাম।আমি বড় স্বার্থপর তাই কষ্টটা তোমার করতে হচ্ছে।কিন্তু ওয়াদা করলাম।সুখ জোনাককে খুব শীঘ্রই তোমার আঁচলে বেঁধে ফেলবো।”
চলবে।
লেখাঃসামিয়া খান প্রিয়া