#নীলাম্বরীর_প্রেমে
#Tuhina pakira
পর্ব – ২
-” আয়ু , আরে এই আয়ু দাঁড়া না রে বাবা ।
একপ্রকার ছুটতে ছুটতে স্পর্শ আয়ুর কাছে এগিয়ে গেলো । আয়ু তখন স্পর্শের ডাকে ঘুরে ওর দিকে তাকালো । কিন্তু বেশিক্ষন তাকাতে পারলো না একবার চোখ বন্ধ করে পুনরায় স্পর্শের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফেললো । স্পর্শ কোমরে হাত দিয়ে মাথা ঝুঁকে হাঁফাতে লাগলো । আয়ু অনেকটাই চলে এসেছিল ।
-” ওই তোকে কখন ধরে ডাকছি;সাড়া দিতে কষ্ট হয় ?”
– “কষ্ট কেনো হবে । আমি একা ছিলাম বলে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাচ্ছিলাম । ”
-” তো চল দাঁড়িয়ে না থেকে । ”
-” তুমি ওদের সঙ্গে গেলে না যে ? ”
–” এমনি আমার অনেক কাজ আছে বুঝলি । ”
দুজনে একসঙ্গে হাঁটতে লাগলো । ক্লান্ত বিকেলের পরিবেশ বেশ ভালো লাগছে । ঢলে যাওয়া সূর্য্যি মামা পশ্চিম আকাশে আলোর এখনও আভা দিয়ে চলেছে । আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ছে । ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি গুলো একবার তারা বামদিক যাচ্ছে তো একবার ডানদিক । তারা যেনো খেলায় মেতে উঠেছে । সবাই মাঠ থেকে বাড়ির দিকে চলেছে । অনেকে আবার মাঠের আল গুলোতে বসে গল্প করছে । মিষ্টি বাতাস ভেসে চলেছে । সেই বাতাসের দাপটে আয়ুর শাড়ির আঁচল বাঁধন হারা হতে চাইছে বারবার । আয়ু এবার অসহ্য হয়ে আঁচলটা হাতে পাক খাইয়ে গুটিয়ে নিলো । স্পর্শ তা দেখে মিটিমিটি হেসে পায়ের কাছের পাথরটা পায়ে করে দূরে ছিটকে ফেললো ।
-” কী রে আয়ু আজ হঠাৎ ‘নীলাম্বরী ‘ কেনো হলি ?”
আয়ু দাঁড়িয়ে পড়লো । মনে মনে ভাবলো , “স্পর্শ দা কী বললো ‘ নীলাম্বরী ‘ ? নীলাম্বরী তো স্পর্শ দার প্রেমিকা । তাহলে ওকে কেনো নীলাম্বরী বললো ? ”
-” কী রে চুপ করে গেলি যে ? বললি না যে আজ হঠাৎ নীলাম্বরী হতে গেলি কেনো ? ”
স্পর্শের কথায় আয়ুর হুশ ফিরল ।
-” আমি কোথায় নীলাম্বরী ? আমি তো আয়ু , নীলাম্বরী না । নীলাম্বরী তো তোমার প্রেমিকা । ”
আয়ুর মাথায় স্পর্শ গাট্টা মেরে বললো , ” আমি জানি আমার প্রেমিকা নীলাম্বরী । আর এও জানি তুই আমার সামনে বাড়ির প্রতিবেশী । তোকে আমাকে কাউকে চেনাতে হবে না । কিন্তু ব্যাপার হলো তুই আজ নিজেকে নীলম্বরী রূপে সজ্জিত করেছিস । ”
আয়ু বোকার মতো নিজেই নিজেকে একবার দেখে নিল । মনে মনে ভাবলো , ওকে নীলাম্বরী কী করে লাগবে ?
– ” কোথায় , আমাকে নীলাম্বরী তো মনে হচ্ছে না । ”
-” সাধে তোকে আয়ু গাধি বলি । নীলম্বরী মানে নীল রঙের বস্ত্র পরিহিতা কোনো নারী । বুঝলি ? ”
আয়ু মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো । পরক্ষনেই মাথায় কিছু প্রশ্ন নাড়া দিয়ে উঠলো । প্রশ্নটা স্পর্শকে করবে না করবেনা করে অবশেষে করেই ফেললো ।
-” স্পর্শ দা বলছি যে , নীলাম্বরী তবে কারোর নাম না । তাইতো ,
-” হ্যাঁ রে পাগলি । ”
-“তাহলে তুমি কোন নীলাম্বরী প্রেমে পড়েছো ?
– ” সে এখন আমার হৃদয়ের অভ্যন্তরে খিল এঁটে রয়েছে । এযাত্রায় তার সাথে দেখা সাক্ষাতের কোনো কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না । এখন সে শুধু আমার হৃদয়ের একার । আমার নিজের কেউ না । শুধুই হৃদয়ের । ”
-” তবু নাম বলবেনা যতসব । ”
-” তো বললি নাতো , শাড়ি পড়লি কেনো ? ”
-“হঠাৎ ইচ্ছে হলো তাই । ”
-” যাহ , ঢপ মারিস না । বলনা যে , স্পর্শ দা তোমার জন্যে শাড়ি পড়ে এসেছিলাম । মাঝে মাঝে তুই এমন করিস যেনো আমি তোকে মারবো ? ”
-” এখানে মারামারির কি আছে । তুমি যে আস্তো একটা মারকুটে তা তো নতুন করে করে বলতে হবে না । ”
-” আমার মতো জাতির ক্রাশ কে তুই মারকুটে বলতে পরিস না । ক্রাশখোররা তোর উপর চটে যাবে । ”
-” আহা রে কি এমন ক্রাশ । ওইতো শেষে দেখা যাবে ক্রাশ দিয়েছে বাঁশ । ”
-” পাজি , শয়তান , শ্যাওড়া গাছের পেত্নী তুই চুপ কর । ভালোর মূল্য তুই বুঝবি না । ”
আয়ু ভেংচি কেটে দ্রুত পা চালালো । স্পর্শও ওর সঙ্গ দিলো । রাস্তাটা অনেকটাই এখনও । স্পর্শ আয়ুর শাড়ির আঁচলের পাড়ের ডিজাইনটা দেখতে দেখতে বললো ,
-” তোর মা জানে ?”
-” কী ?”
-” এই যে তার মেয়েটা নতুন একখানা শাড়ি লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে বেড়াতে এসেছে । তাও আবার কোথায় না মাঠের মাঝখানে ঝিল দেখতে । ”
আয়ু থমকে দাঁড়িয়ে গেলো । মনে মনে ভাবলো , আজ তার রক্ষে নেই । শাড়িটা ওর মা খুব পছন্দ করে কিনেছিল । ওর বাবাকে অবশ্য বলেনি । পড়ে ওর বাবার থেকে টাকা চাইবে শাড়ি কিনবে বলে । তাই একপ্রকার শাড়িটা আয়ুর ঘরের আলমারিতে রেখে দিয়েছিল । আয়ু কে পইপই করে বলা রয়েছে ভুলেও যেনো ও শাড়িতে হাত না দেয় । কিন্তু আয়ু তো স্পর্শের সাথে ঘুরতে আসার আনন্দে শাড়িটা পড়ে ফেলেছে । ওর মা যদি একবার দেখে নতুন শাড়িটা ও আগেই পড়ে ফেলেছে তবে তো …” আর ভাবতে পারলো না আয়ু । অতীব ভদ্রতার সহিত স্পর্শকে বললো ,
-” বলছি কী স্পর্শ দা তুমি না মা কে বলবে না ঠিক আছে । ”
-” বলতে পারছি না । তবে চেষ্টা করবো না বলার । তবে জানিসই তো আমি আবার তোকে ছাড়া সবার সামনে অতীব ভদ্র একজন ব্যাক্তি । তাই বলেই দেবো । হয়তো বাড়ি গিয়েই বলবোনা । ভুলে যেতে পারি বুঝলি । রাতের দিকে একবার হাঁক দিয়ে বলে দেবো , অ্যান্টি তোমার নতুন শাড়িটা আয়ু পাট ভেঙে পড়েছে ।”
কথাটা বলে স্পর্শ হাসতে হাসতে সামনে চলে গেলো । কিন্তু পাশে আয়ু কে না দেখতে পেয়ে পিছন ফিরে দেখলো আয়ু কোমরে শাড়ির আঁচল টা গুজে পাশের জমিতে বেড়া দেওয়া একটা লাথি খুলে নিয়ে স্পর্শের দিকে তাকালো । স্পর্শকে আর কে পায় সে তো ছুট । আয়ুও কম যায় না লাঠি নিয়ে স্পর্শের পিছনে ছুটতে ছুটতে বললো ,
-“ওই শয়তান দা দাঁড়াও বলছি । আজ তোমার একদিন কী আমার একদিন । উনি নাকি অতীব ভদ্র । এক নম্বরের আস্তো লেজবিশিষ্ট বান্দর । ”
-” ভদ্র ছেলেকে একদম বান্দর বলবিনা বলে দিচ্ছি । ”
পিছনে কাউকে আর দৌড়াতে অনুভব না করে স্পর্শ পিছনে ঘুরে দেখলো সামনে এক জায়গায় কাদা হয়ে ছিল আয়ু সেখানে পড়ে গেছে । স্পর্শ হু হি হা করে হেসে ফেললো । আয়ুর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো ,
-” কোনো কম্মেই তুই নেই দেখি । শেষে কাদা তে পড়ে গেলি । ”
আয়ু নিজের হাত ঝেড়ে স্পর্শকে বললো ,” আমাকে হেল্প করো । ”
-” উহু শখ কতো । আমি তোকে ধরে তুলবো আর তুই আমাকেই ফেলে দিবি । আমি কি বুঝিনা নাকি । নিজে নিজে ওঠ । ”
আয়ুর প্ল্যানে স্পর্শ কাদা জল ফেলে দিল । অবশেষে নিজেই আস্তে আস্তে উঠলো । শাড়িটা অর্ধেকই কাদায় মাখামাখি । কাঁদো কাঁদো চোখে স্পর্শের দিকে তাকাতেই স্পর্শ বললো ,
-” কান্না ছাড়ুন ম্যাম । চল তাড়াতাড়ি দেরি হচ্ছে । ”
দুজনেই এবার সিরিয়াস ভাবে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো ।
-” ওই শোন খবরদার আমাকে স্পর্শ করবি না । এই অবেলায় আমি আর স্নান করতে পারবো না বলে দিলাম । ”
– ” তোমার নামই তো স্পর্শ ।”
-” একটু কম বক । আজ না তোর প্রেমহীন ব্রেকআপ হয়েছে । ”
(চলবে )