নুর পর্ব গেমস ৩৮+৩৯

#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part- 38-39
#38
তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে?
তারা বলবেঃ আমরা নামায পড়তাম না,
অভাবগ্রস্তকে আহার্য্য দিতাম না
আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা (বেহুদা আলাপে) করতাম
এবং আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম।
সূরা আল মুদ্দাসসির( 42-46)

মেহেরাবের বোধ শক্তি লোপ পেয়েছে। তার জিহ্বা ঝাল ঝাল হয়ে আছে। এক কাপ চা ছাড়া সে কিছুই খায়নি ঘন্টা খানেকের ভেতর। চা খেয়ে নিশ্চয়ই ঝাল লাগার কথা না।
তবে ঝাল টা মন্দ না। বেশ ভালো একটা মোড তৈরি হয়েছে তার।
মেহেরাবের সামনে হরেকরকম চা। সবগুলো থেকে আলাদা আলাদা সুগন্ধি বের হচ্ছে। সবগুলো চায়ের ফ্লেবার একটা কম্বিনেশনে দাঁড়িয়েছে। মেহেরাব ঝালের বিষয়টি সমাধান করেছে একটু আহে। ঝাল চা নামক চা যে তা সে জানতো না।
ম্যানেজার সাহেব তার সামনে কয়েক রকম চা তৈরি করে রেখেছে। চায়ের নামগুলো কি তা বুঝিয়ে দিচ্ছে চায়ের রেসিপি সহ। কাজ টা করতে তার খুব ভালো লাগছে কারণ মেহেরাব তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ফাঁকে ফাঁকে ম্যানেজারের কাছ থেকে মেহেরাব মোমদের মফস্বলের তথ্য জেনে নিচ্ছে। শশুর মিজানুর খন্দকার মানুষ কেমন তা সম্পর্কে সে একটি প্যাটার্ন দাঁড় করিয়েছে। মিজানুর সাহেব কখন কি করবেন তা আগে থেকে বোঝা যায়না। তিনি অত্যন্ত গম্ভীর আর শান্তশিষ্ট স্বভাবের। সাধারনত ভয়ংকর সব কান্ডকারখানা এমন স্বভাবের লোকেরাই করে থাকে।
মেহেরাব চায়ের চুমুকের সাথে সাথে লক্ষ্য করছে তার চারপাশ টা। যদিও হঠাৎ দেখলে বোঝা যাবে বিদেশি এক সাহেব মনোযোগ সহকারে বাঙালি আর ফরেনারদের চায়ের পার্থক্য খোঁজার চেষ্টা করছে।
বাড়িতে মহিলাদের কান্নার আওয়াজ জোরালো হয়েছে মিনহাজের খাটিয়া দেখে। মিজানুর সাহেব মিনহাজের গোসলের পর্ব শেষ হতেই দরজা খুলে বের হলেন।
সাথে সাথে অন্দরমহলের কান্নার আওয়াজ বন্ধ। চারপাশের সমাগম বন্ধ।
ম্যানেজার সাহেব মেহেরাবের সামনে পাজামা-পাঞ্জাবি আর একটা তোয়ালে দিয়ে বলল- আমার সাথে আসুন। গোসল সারতে হবে। বড় সাহেব আপনাকে ছোট সাহেবের জানাজায় শরীক হতে বলেছেন। মেহেরাব ঠিক বুঝতে পাচ্ছে না মোমের বাবার চরিত্র। ছেলের জানাজায় তাকে শরীক হতে বলেছেন তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় তিনি বিয়েটা মেনে নিয়েছেন?মেহেরাব কে মেয়ের জ্যামাই ভাবছেন?
দুনিয়াতে একজন বাবার সবচেয়ে কষ্ট হলো সন্তানের খাটিয়া কাঁধে বহন করা। মিনহাজের খাটিয়ার সামনের এককোণ কাঁধে তুলেছে মিজানুর সাহেব। তার পাশের সামনের আরেক কোণ কাঁধে নিয়েছে মেহেরাব। পেছনের দুই কোণে মিজানুর সাহেবের পালক ছোট পুত্র মিরন আর মিজানুর সাহেবের এক আত্মীয়।
মিনহাজের খাটিয়া কাঁধে তোলার সময় মেহেরাব আর মিজানুর সাহেব প্রথমবারের মতো সরাসরি দুজনের দেখা হলো। দৃষ্টি বিনিময় হলো।
মেহেরাব লক্ষ্য করলো বড় ছেলের মৃত্যুতে কিভাবে মিজানুর সাহেবের মতো বলশালী লোক স্বাভাবিক ব্যবহার করছে সবার সাথে। সালাম বিনিময় করছে।
মিনহাজের খাটিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে মোম। বারান্দা থেকে খাটিয়া দেখা যাচ্ছে। খাটিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবারও কান্নার জোয়ার ভেসে আসতে শোনা যাচ্ছে।
মিনহাজ কে কবরে নামানো হলো। মোম স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে কিভাবে তার প্রানপ্রিয় ভাই একা একা কবরে শুয়ে দিয়ে এসেছে সবাই। অন্ধকারের মানুষ অন্ধকারে চলে গেলো। মোমের জানতে ইচ্ছে করছে মিনহাজের অনুভূতি কি হচ্ছে কবরে যাওয়ার পর। মোমের মাথা ধরেছে। আরকিছু ভাবতে পাচ্ছেনা সে। পর্দার আড়ালে দাসীদের সাথে দাড়িয়ে আছে আসিয়া। তিনি কাপড়ের আঁচল মুখে চাপা দিয়ে আছেন। এতে কান্নার আওয়াজ কেউ শুনতে পাবে না। তিনি আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন। যা হওয়ার তা হয়েছে। আল্লাহর হাতে সবকিছু। মিনহাজের মৃত্যু এখন হওয়ার ছিল তাই হয়েছে। জীবন কখনো একজনের জন্য থেমে থাকে না।
কালকেই সব ঠিক হয়ে যাবে। বাড়িটা আবার আগের মতো হয়ে যাবে। আসিয়ার এখন মেলা কাজ। আত্মীয় স্বজনদের দুপুরের খাবার পরিবেশন করতে হবে। দাসী দের পাঠানো হয়েছে রান্নার কি সমাচার তাকে বলার জন্য।
দুপুরে সবার খাওয়া শেষ হলে মিজানুর সাহেব খেতে বসলেন মেহেরাবের সাথে। মেহেরাব কে ভেতরে ঢুকতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মেহেরাব কে মোমের পালিত ছোট ভাই দালানবাড়ির একেকটা কোণা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখাচ্ছে। মেহেরাব অন্দরমহলে ঢুকে বিষম খেলো।এ যেন একটা রাজবাড়ি। পুরোনো কারুকার্য দ্বারা দালানবাড়ির ভেতরটা খোদাই করা হয়েছে। রাজা মহারাজাদের আমলের জিনিসপত্র দিয়ে সজ্জিত পুরোটা অন্ধরমহল। পুরোনো ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ফুটে উঠেছে।
মোম পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে ভেতরের কথা অস্পষ্ট হয়ে আছে। তেমন কিছু শোনা যাচ্ছে না। আসিয়া দাঁড়িয়ে আছে মোমের ঠিক পেছনে। তার কান দুটো অতি তীক্ষ্ণ। তিনি আরেকটু তীক্ষ্ণ করে রেখেছেন ভেতরের কথা গুলো শোনার জন্য। আশ্চর্যের বিষয় হলো ভেতর থেকে দু-জনের খাওয়ার আওয়াজ ছাড়া আর কোন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। মোমের অস্বস্তি লাগছে।মেহেরাব ইসলামের নতুন মেহমান। সদ্যজাত শিশুর সাথে তার তুলনা চলে।বাবা মিজানুর সাহেবের মতো বিজ্ঞ লোকের কোন কথায় অবুঝ মেহেরাব বুঝবে না। কোন প্রশ্নের উওরে কি উওর দেবে তার নেই ঠিক ।
মেহেরাব আর মিজানুর সাহেবের প্রথম আলাপ খুব সংক্ষিপ্ত হলো।
মেহেরাব প্রথমেই ভাঙা ভাঙা বাংলায় সালাম দিলো- আসিলাকুম।মিজানুর সাহেবের প্রথমে সালাম বুঝতে অসুবিধা হলেও একটুপর তাৎক্ষণিক বুঝে উওর দিলেন।
প্রথমেই সলামের ভুল বাংলা বলার কারণে বেশ বিরক্ত হলেন মিজানুর সাহেব। সালাম ভুল করেছে আবার ভুল সালাম দিয়ে হাসা হচ্ছে। ফাজলামো পেয়েছে বিদেশি ছেলেটা। ধর্ম নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে। নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বললেন,
-ওয়ালাইকুম আসসালম। দাঁড়িয়ে কেন বসো?
-জ্বি ।
মেহেরাব স্বাভাবিক ভাবে বসলো।
দাসীরা আগেই সবকিছু গুছিয়ে দিয়েছে খাবার। আসিয়াও পরিবেশন করেছে গুছিয়ে।
শুধু হাত বাড়িয়ে নিয়ে খেতে হবে।
-খাওয়া শুরু করো। তোমাকে অনেকক্ষণ না খাইয়ে রাখা হয়েছে ঝামেলার কারণে। তুমি এদেশের মেহমান।
তোমার ঠিকঠাক যত্ন নিতে পাচ্ছিনা বলে আমি লজ্জিত।
মেহেরাব কি বুঝলো না বুঝলো তা বোঝা গেলো না তবে তাৎক্ষণিক সে মাথা নাড়ালো।
-আমাকে নিয়ে ব্যাস্ত হতে হবে না। (ইংরেজি)
-অবশ্যই ব্যাস্ত হতে হবে। তুমি মেহমান। (ইংরেজি)
-মোটেও না। আমি এই বাড়ির জামাতা৷ আপনার মেয়ের স্বামী। আমি আপনাদের একজন পরিবারের।বাড়ির ছেলে বলতে পারেন। আমি অন্যসব মেহমানদের মতো মেহমান নয়।
মিজানুর সাহেব ভালো ভাবে বুঝেছেন তিনি যেটা মিন করে মেহমান শব্দটা উল্লেখ করেছেন সেটা মিন করে মেহেরাব মেহমান শব্দটা বাদ দিয়ে ফেলেছে। বিদেশি গাধা হলেও ছেলেটি বেশ চতুর। কথার মানে ভালো বুঝতে পারে।
নিজের রাগ সামলিয়ে তিনি হাসি মুখে বলল- খাওয়ার সময় কথা বলতে পছন্দ করিনা। তুমি মেহমান না বাড়ির লোকজন সেটা এখনো ডিসাইড করা হয়নি।
খাওয়া শুরু করো।
-আমরা একা খাব?
-তো?
-বাকিরা খাবেনা?
-তুমি নিজের দিকে নজর দাও।
মেহেরাব নিজ হাতে নিয়ে খাচ্ছে। কোন রকম লজ্জা না করে খেয়ে যাচ্ছে। খাবারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এতো ভালো রান্না সে আগে কখনো খায়নি। আলামিন কে রান্নার জন্য দশে দশ দিলে এই রান্নাকে দশে বিশ দিলেও ভুল হবে।
মিজানুর সাহেব মেহেরাবের খাওয়া দেখে নিজে খেতে লজ্জা পাচ্ছে। মেহেরাব নিজের মতো, বাড়ির ছেলের মতো অধিকার খাটিয়ে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে মিজানুর সাহেব দূরের কোন মেহমান আর মেহেরাব বাড়ির ছেলে কর্তা।
মেহেরাব তৃপ্তি সহকারে খেয়ে সারা বিকেল ঘুমালো। তাকে মোমের পাশের কামরায় থাকতে দেওয়া হয়েছে। বিকেলের মধ্যে মরা-বাড়িটার চেহেরা চেঞ্জ হয়েছে। মনেই হচ্ছে না আজ এই বাড়ির বড় ছেলের দাফন হয়েছে। মেহেরাবের ভালো ঘুম হলো। ঘুমের মধ্যে মনে হলো মোম তার কাছে এসেছিল। মাথায় হাত বুলিয়ে কি কি যেন বলে গেলো। মোম পর্দার আাড়ালে দাড়িয়ে আছে মেহেরাবের কামরার দরজার পাশে। মেহেরাব উঠে বসলো বিছানায়। ঢকঢক করে এক গ্লাস শীতল পানি খেলো। একটু আগে মোম শীতল পানি রেখেছে মেহেরাবের কামরায়। ঘুমন্ত মেহেরাবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে। মেহেরাব দক্ষিণা জানালার হাওয়ায় হালকা কাঁপছিল। মেহেরাবের গায়ে চাদর টেনে দেওয়া হয়েছে।
কতটা দূর থেকে মেহেরাব এসেছে তার মোমের জন্য। মোমের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। নিজের ভালোবাসাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য।

মেহেরাব পানিটুকু পান করে ফের শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসলো। মোম এখনো পর্দার পেছনে দাড়িয়ে। জানালা দিয়ে
বিকেলের পশ্চিম আকাশের সূর্যাস্তের আলো কামরায় ঢুকেছে। বন্ধ বিশাল কামরাটায় আশ্চর্য আবছা লাল আলো ঢুকেছে। কিছুটা আলো ছটা মেহেরাবের মুখে পড়েছে।
_ভেতরে আসতে লজ্জা পাচ্ছো যে? নতুন বউ তুমি? অবশ্য আমার কাছে অলওয়েজ তুমি নতুন বিয়ে করা বউয়ের মতো।
মোম ধরা পরার পর একটু অস্বস্তিতে পড়লো। নিজেকে সামলে নিলো খানিকটা।
-আপনি অন্যদিকে তাকিয়ে আমার উপস্থিতি বুঝলেন কি করে?
-আমি গভীর ঘুমেও তোমার উপস্থিতি বুঝতে পারি সুইটহার্ট।
-আপনি…….।
কথা শেষ হওয়ার আগেই মেহেরাব কথার মাঝখানে বিড়ালের মতো নিঃশব্দে মোমকে হঠাৎ জরিয়ে ধরলো।
মোমের কানে কানে বলল-বলো আমি কি? বলো? বলো?

মেহেরাবের স্পর্শ মোমের শরীর থেকে হৃদয় পর্যন্ত পুরো অস্তিত্ব কে শিহরিত করে তুললো।শিহরিত মোম ঘোর লাগা কন্ঠে বলল- আপনি আপনি…..!
-হ্যাঁ। আমি আমি কি? শুনছি বলো?
মূল্যবান মুক্তো যেমন নিজেকে ঝিনুকের ভেতর লুকিয়ে রাখে বাহিরের দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য ঠিক তেমনি মোমও মেহেরাবের বুকে মুখ লুকিয়ে রাখলো মেহেরাবের দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য।
-আমার থেকে বাঁচার জন্য আমার বুকেই মুখ লুকানো হচ্ছে সুইটহার্ট?
মোম আরও শক্ত করে মেহেরাবকে ঝাপটে ধরলো।
মেহেরাবের শূন্য বুক যেন আজ পূরণ হয়েছে। মোমের মনে এতোদিনের সকল দুঃখ যেন মুছে গিয়েছে মেহেরাবের বুকে মাথা রেখে। আর কোন কষ্ট নেই।
-এতো জোরে জরিয়ে ধরলে তো মারা পড়ব সুইটহার্ট।
মোম লজ্জা পেয়ে ইতস্তত হয়ে ছেড়ে দিলো মেহেরাব কে।
মেহেরাব মোমকে আবার নিজের কাছে নিয়ে এলো। খুব কাছে।যেখান থেকে একে অপরের নিশ্বাস অনুভব করা যায়। মোমের নিচের দিকে তাকানো মুখখানা উপরে তুলে আনলো মেহেরাব। মোমের দুই গালে হাত রাখলো। মোম আবেশে চোখ বন্ধ করলো।
– লজ্জায় মুখখানা লাল টকটকে হয়েছে তোমার। লজ্জা মাখানো মুখশ্রী কেমন দেখাচ্ছে জানো? তোমাকে আরও বেশি সুন্দরী লাগে যখন তুমি লজ্জায় জর্জরিত হও। আবারও তোমার প্রেমে পড়েছি নতুন করে। মনে হচ্ছে লন্ডনের সুইটহার্ট আর বাংলাদেশের সুইটহার্ট একে অপর থেকে আলাদা।
মোমের গাল বেয়ে চোখের পানির ফোঁটা পড়ছে। আবছা আলো পড়ে চোখের পানি গুলো চিকচিক করছে মুক্তোর মতো। আঙুল দিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে দিলো মেহেরাব।
কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।
মোম কে নিজের বুকের মধ্যে জরিয়ে ধরলো খুব শক্ত ভাবে।
-আর চোখের পানি ফেলবে না সুইটহার্ট। আমি এসে পড়েছি। তোমার সকল কষ্ট আমার ভালোবাসা দিয়ে দূর করে দেব।

.
❤আল কুরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর ১টি বাণীঃ
৩৮। মানুষের সাথে ন্যায়বিচার করো। [সূরা নিসা ৪:৫৮]

.
চলবে……💔💔💔

#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-39

দোতলার একপাশে মিজানুর সাহেবের সুবিশাল জমিদারি কামরা।মিজানুর সাহেব পৈতৃক সূত্রে কামরায় থাকেন। কামরায় উনার পূর্বপুরুষেরা থাকতেন। মিজানুর সাহেবের বড় বাবা, দাদা, বাবা,যথাক্রমে মিজানুর সাহেবের পালা চলছে এখন। ভবিষ্যতে মিনহাজ পেতো পৈতৃক সূত্রে জমিদারি কামরা টা। কামরায় মাঝখানে দোতলা সিঁড়িওয়ালা পালঙ্ক। পালঙ্ক এতো বিশাল যে মনে হবে ফুটবল মাঠ।ধনরত্ন ভরাট করা পুরোনো সিন্ধুক, দেশবিদেশের মূল্যবান বইপুস্তকের সেলফ।।তারমধ্যে ইসলামিক বই-সমুহের বিশাল একটা সেলফ। নানান দেশের অমূল্য সব শোপিস দিয়ে কামরা টা ভর্তি। কামরায় দক্ষিণমুখী জানালা থাকায় জমাট বাঁধা হাওয়ায় কামরা টা শীতল হয়ে থাকে সব সময়৷ উওরের জানালা বন্ধ থাকার কারণে ভেতরটা আবছা অন্ধকার হয়ে থাকে।আতরের গন্ধে ভরপুর হয়ে থাকে কামরাটা। হুট করে ঢুকলে গা জমজমে ব্যপার ঘটে। কামরার সাথে লাগোয়া রেলিং দেওয়া বারান্দা। মিজানুর সাহেব এশারের আজানের সময়ে মসজিদে গিয়ে দেখেন আজান দেওয়া হচ্ছে। আজকের আজান ছিলো আলাদা। গলার স্বরটা অন্যরকম৷ তবে বেশ সুরেলা। মসজিদে ঢুকে তিনি মেহেরাবের হাসিমাখা মুখ দেখে হতভম্ব। আজান দেওয়াটা তাহলে মেহেরাবের ছিল। মেহেরাব কে সবাই আলাদা খাতির করতে শুরু করেছে। একদিনেই এতো খাতির। মিজানুর সাহেব এর রহস্য একটু পর ধরলেন। মেহেরাব মিজানুর সাহেবের জামাতা। এইজন্যই এতো তোয়াজ। নামাজ শেষে একে একে অনেকে জিজ্ঞেস করলেন মিজানুর সাহেব কে মেয়ের জামাইয়ের সমন্বয়ে।কিছু প্রসংশাও করা হচ্ছে মেহেরাবের। মিজানুর সাহেব মসজিদ দেখে কিছু বললেন না। হাসিহাসি মুখ করে রাখলেন সমস্ত মুসল্লীর সামনে। মেহেরাব যতক্ষণই মিজানুর সাহেবের সামনে ছিলেন ততক্ষণই মুচকি মুচকি হাসলো নতুন জামাইয়ের মতো। মিজনুর সাহেবের মনে হলো কেউ তার মাথার ভেতর তবলা বাজাচ্ছে। তিনি এখন ইজিচেয়ারে বসে আছেন।
হাতে একখানা ইসলামিক পুস্তক। নিত্যপ্রয়োজনীয় হাদিসগুলোতে তিনি চোখ বুলাচ্ছেন।মফস্বলের যার সাথেই দেখা হয় সে-ই নানান ধরনের কাজ সম্পর্কে হাদিস কি বলে তা জানতে চায়। মিজানুর সাহেব এই কাজটি অতি নিষ্ঠার সাথে করেন। এই মুহুর্তে তিনি মহানবী কিভাবে চন্দ্র কে খন্ডিত করেছেন এই সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করছেন যদিও এই বিষয়টি তার জানা তবুও মহানবীর ক্ষমতা সম্পর্কে পড়তে তার ভালো লাগে।আজ রাতে মেহেরাবের সাথে মিজানুরের ওয়ান টু ওয়ান মুখোমুখি আলাপচারিতা হওয়ার মিটিং ফিক্সড হয়েছে।মিজানুর সাহেব পুস্তক পড়ার সাথে সাথে কিভাবে বিষয়টি হ্যান্ডেল করবেন সেটা মাথায় সাজিয়ে নিয়েছে। কাজটি করতে হবে হাসিমুখে।পৃথিবীতে অতি বিপদজনক কাজ করা হয় হাসিমুখে। মোম ভিষণ টেনশনে রয়েছে।শাড়ির আঁচল আঙুল দিয়ে পেঁচাচ্ছে।এশারের নামাজের পর থেকে সে জায়নামাজে বসে আছে৷ কিছুতেই তাকে উঠানো যাচ্ছে না। কিছু মুখে দেওয়াও যাচ্ছে না।
বিপদ আপনার জন্য নেয়ামত না শাস্তি?

অনেকেই মনে করেন বিপদ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে এক নেয়ামত। আবার অনেকে মনে করেন, বিপদ মানেই মনে হয় শাস্তি, আমরা অনেক সময় পার্থক্য করতে পারিনা।

চমৎকার একটি ফর্মুলা দিয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত ফকিহ তাকি উসমানি হাফিযাহুল্লাহ। তিনি বলেন, কীভাবে বুঝবেন বিপদ আপনার জন্য নেয়ামত না শাস্তি?

যেকোনো বিপদ বা পেরেশানিতে পড়েছেন আপনি, যদি দেখা যায় বিপদ আসার পর আপনি আগ থেকে আরও বেশি আল্লাহ বিমুখ হয়ে গেছেন, মনে করবেন এই বিপদ আপনার জন্য শাস্তি।

আর যদি বিপদ আসার পর আপনার আমল আগ থেকে আরও বেড়ে যায়। গুনাহের প্রতি আকর্ষণ কমে যায়। নফল সালাত, দুয়ায় কান্নাকাটি, দান সাদাকাহ সহ যাবতীয় ইবাদাতের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাহলে মনে করবেন এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত, আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিকটবর্তী করার জন্য এটি আপনাকে দিয়েছেন।

আচ্ছা! আপনার কী মনে হয়? আল্লাহ তায়ালা চাইলে এক মূহুর্তে আপনার বিপদ কাটিয়ে দিতে পারেন না? অবশ্যই পারেন। কিন্ত করেন না কেন? আল্লাহ চান, বান্দা তুমি আমার ইবাদাতে আরেক টু মনযোগী হও, আরেকটু কাছাকাছি আসো।

আমরা যখন দুয়ায় অশ্রু ঝরাই, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের খুব ভাল লাগে, হোক তা দুনিয়াবি প্রয়োজনে। কিন্ত দু’য়া আমরা আল্লাহর কাছেই তো করি, অন্য কারো কাছে নয়।

আসুন! যেকোনো বিপদে, পেরেশানিতে আল্লাহকে ডাকি, তার কাছেই নিবেদন করি মনের সকল আকুতি, তিনি তো বলেই দিয়েছেন
أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ
‘বান্দা যখন আমাকে ডাকে তখন আমি তার ডাকে সড়া দেই’। (সূরা বাকারাহ)

মোমের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে শীতল আবহাওয়াতেও।বাবার প্রতিটি কাজের স্টেপ মোমের চেনা। বাবার স্বভাব সম্পর্কে মেয়েরা ভালো জানে। অতিরিক্ত টেনশনে মোম তার প্রিয় ভাইয়ের অনুপস্থিতি টের পাচ্ছে না। মেহেরাব এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো।
-তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আমি কোন যুদ্ধে যাচ্ছি।
পানিটুকু পান করো। জাস্ট রিলাক্স।
-যুদ্ধও এর চাইতে ভালো ছিল।
মেহেরাব মোমের মুখে হাত বুলালো।
-সুইটহার্ট।
যুদ্ধের জয় অবশ্যই তোমার পক্ষে যাবে। জয়ের উপহার হচ্ছে তোমার খুশি। তোমার হাসিমাখা নূরের মুখখানি।
মোম পানি পান করলো না। মেহেরাব কে ইশারা দিয়ে চুপ করিয়ে তছবি গণনা করতে লাগলো।
দালানবাড়ি ছমছমে হয়ে আছে। ঘোমট অন্ধকার।
ঘড়ির কাটা ঘুরছে টিকটিক শব্দে। রাত দশ’টায় ঢং করে বিকট আওয়াজ হলো। দালানবাড়ির সমস্ত আলো নিভে গেলো। দেখে মনে হবে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
আসলে তা নয়। ম্যানাজার টাইপ লোকেরা,দাসদাসী টাইপ লোকেরা নিচতলায় ঘাপটি মেরে বসে আছে অন্দরমহলে কি ঝর বয়ে যায় তা সচক্ষে দেখার জন্য। কারও চোখে ঘুম নেই।
যথারীতি মেহেরাবের যাওয়ার ডাক এসেছে। মোম জায়নামাজে বসে থেকেই মেহেরাবের হাত স্পর্শ করে বিধায় দিলো দোয়াদরুদ পাঠ করে। বাড়ির লোকেরাও দোয়া-দরুদ পড়ে ফুঁকে দিয়ে গেলো মেহেরাব কে। যাবার আগে মোম কে মেহেরাব শুধু বললো- সুইটহার্ট একটা কথার সঠিক উওর দেবে?
ভয় নেই। ডিরেক্ট কোন প্রশ্ন করব না যাতে তুমি আনইজি সিচুয়েশনে পড়ে যাও। তুমি আমাকে ভালোবাসও কিনা তাও বলব না।মুখে ভালোবাসার কথা না বললেও সেটা ভালোবাসা হয় যদি সেটা আচরণে স্পষ্ট বোঝা যায়।কিছু ভালোবাসা হয় মনে মনে, অনুভূতিতে। আমাদের ভালোবাসা মুখে বলাবলির মতো না। মনের ভালোবাসা,অনুভূতির ভালোবাসা। জাস্ট রিলাক্স।
মোম মাথা নিচু করে বলল-
-বলুন?
মেহেরাব স্বাভাবিক ভাবে বলল- শশুর সাহেব যদি আমাকে চলে যেতে বলেন তাহলে কি তুমি আমার হাত ধরে চলে যেতে পারবে আমার সাথে?
-না।
মেহেরাব হাসলো। এমন ভাবে হাসলো যেন এই উওর আশা করেছিল মোমের কাছ থেকে। মোম অপরাধীর মতো চুপ করে আছে। মেহেরাব মোমের হাত দুটো খুব শক্ত করে ধরে নিজের হাতের মুঠোয় নিলো একটা হাত। অপর হাতটা নিজের বুকের মধ্যে নিলো। মোমের থেকে এক সুতোর মতো দুরত্ব বজায় রেখে অস্ফুট স্বরে বলল- সুইটহার্ট। আমি তুমি চেনো। আমার ক্ষমতা চেনো। আমার মহা আল্লাহর ক্ষমতা কে জানো। আমার শশুর সাহেব যত বড়ই ক্ষমতাবান হোক না কেন আল্লাহর ক্ষমতার কাছে জাস্ট নাথিং। আল্লাহ তায়ালা তোমার আমার ভাগ্য একসাথে জুড়ে দিয়েছে। তোমার সাথে একদিন দেখা হবে এবং আমি সঠিক মাবুূূদে বিশ্বাসী হব এবং মাবুদে ইলাহির এবাদত করব এটাই মাবুদ আমার ভাগ্যে লিখেছিল আমার কর্ম ধারা। এক মাবুদ ছাড়া পৃথিবীর কোন ক্ষমতাবান থেকে ক্ষমতাবান আমার কাছ থেকে তোমাকে আলাদা করতে পারবেনা। তোমার বাবা, আমার বাবা আর আর… ঐ নাফরমানী আসলামও পারবে না তোমাকে আমার কাছ থেকে করতে। কেউ যদি সপ্নেও তা ভাবে তাহলে আমার ভয়ংকর রুপ বের হয়ে আসবে। আমার ভয়ংকর রুপ সম্পর্কে তুমি অবগত ডিয়ার সুইটহার্ট।
মেহেরাব মোমের গাল শক্ত করে স্পর্ষ করে কপালে গভীর চুমু দিয়ে বলল-সো আমার ভয়ংকর রুপ যেন আবার বের যেন না হয় তার জন্য দোয়া করো।হলে কেয়ামত ঘটে যাবে এটা তো তুমি জানো? কথা গুলো মনে রেখো। মাইন্ড ইট ডিয়ার সুইটহার্ট।
মোম মাথা নাড়ালো৷
মোমের হাতে চুমু দিয়ে মুচকি হেসে মেহেরাব বাংলায় বলল- আমার লক্ষি বউ। মেহেরাব হাসছে। মোম তাকিয়ে আছে আরচোখে।
মেহেরাবের মনে হলো কোন অন্ধকার কুপে ঢুকেছে। কামরার একপাশে ক্ষুদ্র একটি মোমের আলো জ্বলছে।সেই আলোতে মিজানুর সাহেব বই পড়ছেন। খুব মনোযোগ দিয়ে।
মেহেরাব দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে। মনযোগ সহকারে বই পড়া লোক কে আর যাইহোক ডিস্টার্ব করা যায়না। মেহেরাব চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো।
-কাছে এসো?
মিজানুর সাহেব বইয়ের দিকে তাকিয়েই কথাটা বললেন।
মেহেরাব দাড়িয়ে আছে। মিজানুর সাহেব আবার বললেন-এক কথা দুইবার বলতে পছন্দ করিনা।
মেহেরাব মিজানুর সাহেবের কাছে এলো। খুব কাছে। প্রায় মিজানুর সাহেবের গায়ে গা লেগে যায় এমন অবস্থা।
-কাছে আসতে বলেছি তারমানে এই নয় তুমি আমার উপর উঠে দাঁড়াবে।সামনের চেয়ারটাই বসো।
মেহেরাব চুপচাপ বসলো। মিজানুর আবার বই পড়ায় মনোযোগ দিলেন। এই লাইন গুলো পড়তে তার ভালো লাগছে। মেহেরাব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিজানুরের দিকে। প্রায় এক ঘন্টা পর তিনি বই বন্ধ করলেন। চোখের চশমা খুলে টেবিলে রাখলেন।
– এক ঘন্টা তোমাকে অপেক্ষা করতে হলো।
-আমার প্রাপ্য ছিল।
-বুঝতে পেরেছো তাহলে?
-জ্বি। আমি এক মিনিট লেট করেছি। আমার শাস্তি স্বরুপ এক ঘন্টা আমাকে ওয়েট করতে হয়েছে।
-সময়ের ব্যাপারে আমি খুবই কন্সিডার।

যাইহোক,তোমার সম্পর্কে কিছু বলো?
-আপনি তো সব জানেন। আপনার সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন।
-যতটুকু জেনেছি সেটা আমার নিজ উদ্যোগে। আমার জানার মধ্যে ভুলও হতে পারে। নাকি তুমি চাচ্ছো আমি যতটুকু জেনেছি ততটুকু দিয়ে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিই আর সেটা তুমি মেনে নেবে।
-কখনোই না।
-তাহলে যে বললে আমার জানাই সব। আমি সিদ্ধান্ত জানাতে পারি?
-আমি একজন নাস্তিক ছিলাম।
-এখন কি আছো?
-একত্ববাদী আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাসী এবং সর্বশেষ বিশ্বনবীর উম্মত।
-তোমার বাবা কি ছিলো বা আছেন?
-নাস্তিক।
-এখনে নাস্তিক আছেন?
-জ্বি।
-আর তোমার বংশ?
-অধিকাংশ নাস্তিক ছিলেন। লন্ডনের নাস্তিক বিজনেসম্যানদের সম্রাট ছিলেন আমাদের বংশ।
মিজানুর সাহেব বড় ধাক্কা খেলেন।
-তুমি একটা নাস্তিক ছিলে? তোমার বাবা এখনো নাস্তিক? তোমার বংশের প্রায় সবাই নাস্তিক। বলতে পারও লন্ডনে তোমার বংশ নাস্তিক বংশ নামে পরিচিত?
মেহেরাব সাধারণ গলায় বলল- জ্বি।
মিজানুর সাহেবের মনে হচ্ছে তিনি তুখোর নাস্তিকের শেষ বংশের সামনে বসে আছে। তার গা গুলাচ্ছে। সবকিছু যেন এলোমেলো লাগছে। নিজেকে সামলে নিলেন।
-মোম একজন আস্তিক। তার বাবাও আস্তিক। তার বংশ মুসলিম বংশ। তার বংশের সকলে ছিলো মোল্লা-মুন্সি।
আর তুমি তুমি……….।
-আল্লাহ তায়ালা অতীতের সবকিছুর তওবা কবুল করেন। আর আমি তওবা করেছি। আমি বর্তমানে মুসলিম। এটাই আমার বর্তমান পরিচয়।আপনার জ্যামাই এবং আপনার মেয়ের ধর্মীয় স্বামী।আল্লাহ তায়ালা আমাকে মেনে নিয়েছে সেখানে আমাকে আপনার মেনে নেওয়াই জায়েজ হবে।
মিজানুর সাহেব উত্তেজিত বোধ করলেন।নব মুসলিমের জালে তিনি আঁটকে পড়েছেন। এই জাল ধর্মের জাল। বের হওয়া কঠিন। নিজেকে সামলে নিলেন।
-উত্তেজিত হবেন না। আপনার প্রেশার বাড়বে। নিন পানিটুকু খেয়ে নিন।
-তোমার মা? তিনি কি?
যাইহোক,তোমার সম্পর্কে কিছু বলো?
-আপনি তো সব জানেন। আপনার সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন।
-যতটুকু জেনেছি সেটা আমার নিজ উদ্যোগে। আমার জানার মধ্যে ভুলও হতে পারে। নাকি তুমি চাচ্ছো আমি যতটুকু জেনেছি ততটুকু দিয়ে নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিই আর সেটা তুমি মেনে নেবে।
-কখনোই না।
-তাহলে যে বললে আমার জানাই সব। আমি সিদ্ধান্ত জানাতে পারি?
-আমি একজন নাস্তিক ছিলাম।
-এখন কি আছো?
-একত্ববাদী আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাসী এবং সর্বশেষ বিশ্বনবীর উম্মত।
-তোমার বাবা কি ছিলো বা আছেন?
-নাস্তিক।
-এখনে নাস্তিক আছেন?
-জ্বি।
-আর তোমার বংশ?
-অধিকাংশ নাস্তিক ছিলেন। লন্ডনের নাস্তিক বিজনেসম্যানদের সম্রাট ছিলেন আমাদের বংশ।
মিজানুর সাহেব বড় ধাক্কা খেলেন।
-তুমি একটা নাস্তিক ছিলে? তোমার বাবা এখনো নাস্তিক? তোমার বংশের প্রায় সবাই নাস্তিক। বলতে পারও লন্ডনে তোমার বংশ নাস্তিক বংশ নামে পরিচিত?
মেহেরাব সাধারণ গলায় বলল- জ্বি।
মিজানুর সাহেবের মনে হচ্ছে তিনি তুখোর নাস্তিকের শেষ বংশের সামনে বসে আছে। তার গা গুলাচ্ছে। সবকিছু যেন এলোমেলো লাগছে। নিজেকে সামলে নিলেন।
-মোম একজন আস্তিক। তার বাবাও আস্তিক। তার বংশ মুসলিম বংশ। তার বংশের সকলে ছিলো মোল্লা-মুন্সি।
আর তুমি তুমি……….।
-আল্লাহ তায়ালা অতীতের সবকিছুর জন্য তওবা কবুল করেন। আর আমি তওবা করেছি। আমি বর্তমানে মুসলিম। এটাই আমার বর্তমান পরিচয়।আপনার জ্যামাই এবং আপনার মেয়ের ধর্মীয় স্বামী।আল্লাহ তায়ালা আমাকে মেনে নিয়েছে সেখানে আমাকে আপনার মেনে নেওয়াই জায়েজ হবে।
মিজানুর সাহেব উত্তেজিত বোধ করলেন।নব মুসলিমের জালে তিনি আঁটকে পড়েছেন। এই জাল ধর্মের জাল। বের হওয়া কঠিন। নিজেকে সামলে নিলেন।
-উত্তেজিত হবেন না। আপনার প্রেশার বাড়বে। নিন পানিটুকু খেয়ে নিন।
-তোমার মা? তিনি কি?
-উনার বাবা খ্রিস্টান ছিলেন। মা ইহুদি ছিলেন। মমের বিয়ের হয়েছে নাস্তিকের সাথে। মম ঠিক কি ছিলেন বা আছেন নো আইডিয়া।
মিজানুর সাহেব চোখ বন্ধ করলেন।
-শুনেছি তোমার বাবা মা একসাথে থাকেন না? একা একা থাকেন।
-জ্বি।ডিভোর্স হয়েছে। তবে আপনার শোনার মধ্যে ভুল আছে। উনারা দুজন একসাথে থাকেন না বাট কেউ একা থাকে না। বাবা তার প্রেমিকাদের সাথে থাকেন।বর্তমান প্রেমিকার নাল লুসিয়ান। মম একজন মার্কিন গায়িকা।লাস্ট প্রেমিকের সাথে ব্রেকআপ হয়েছে। বর্তমান প্রেমিকের নাম জানি না। বাবা জানতে পারেন। আমি কি বাবার কাছে ফোন করে জেনে নেব?
মেহেরাব ফোন বের করলো। মিজানুর সাহেব মেহেরাবের পা থেকে মাথা পর্যন্ত অবজার্ভ করলো।
তিনি নিজেকে এতোক্ষণ সংযত করে রেখেছিলেন।অন্যকেউ হলে হার্ট-অ্যাটার্কে তৎক্ষনাৎ মৃত্যু হতো। তিনি হাত বাড়িয়ে মেহেরাবের দেওয়া একগ্লাস পানি পান করলেন।
-তোমার পরদাদাদের সম্পর্কে কিছু বলো? উনারাও নিশ্চয়ই বিখ্যাত নাস্তিক বিজনেসম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন?
– জ্বি। তার সাথে ভালো প্রেমিক হিসেবে খ্যাতি ছিলো।
-মানে?
-প্লে বয়।
মিজানুর সাহেব আরেক দফা নিজেকে সামলালেন।
– আমার পরদাদিমা একজন বারের নর্তকী ছিলেন।
মিজানুর সাহেব হাত বাড়িয়ে থামতে বললেন মেহেরাব কে। মেহেরাব সাথে সাথে চুপ।
মিজানুর সাহেব একটু নড়েচড়ে বসলেন।
-শোন, কিং ফায়ার।
-মেহেরাব। মেহেরাব ইসলাম খান।
-শোন, মেহেরাব।আমি অনেক ভেবেছি। তোমার সিদ্ধান্ত আমি তোমার কাছে ছেড়ে দেব। আমার সিদ্ধান্ত তোমার একটি সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর। আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করব। তুমি যদি খাটি মুসলিম হয়ে থাক তবে মন থেকে উওর দেবে। তুমি কি উওর দেওয়ার জন্য তৈরি?
-আমি তৈরি। ইনশাআল্লাহ।
-আমার জায়গায় থাকলে তুমি কি করতে?
আরও সহজ করি বলছি। তুমি তোমার বংশের যে বর্ণনা দিলে তাতে এরকম একটি বংশের নব মুসলিম ছেলের সাথে তোমার আদরের মেয়েকে মেনে নেবে? মানছি তুমি বর্তমানে মুসলিম। কিন্তু তুমি কি তোমার বংশকে অস্বীকার করতে পারবে? তোমাকে অবশ্যই তোমার দেশ, তোমার বংশের কাছে ফিরে যেতে হবে। তোমার পিছু ছাড়বে না তোমার কুখ্যাত বংশ।
তুমি কি তোমার মেয়েকে নাস্তিক কুখ্যাত অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত এমন বংশের হাতে তুলে দেবে?

.
❤আল কুরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর ১টি বাণীঃ
৩৯। একে অপরকে হত্যা করো না। [সূরা নিসা ৪:৯২]

.
চলবে……💔💔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here