নুর পর্ব ৫+৬

#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-05
মডেল কিং ফায়ারের অপমানিত হওয়ার নিউজ সমস্ত চ্যানেলে দেখাচ্ছে। বর্তমানে এটি একটি হিট নিউজ। থাপ্পড় দেওয়ার দৃশ্যটা বার বার দেখানো হচ্ছে জুম করে।
.
কাল কিং ফায়ার vs ক্যান্ডেলের লোমহর্ষক ঘটে যাওয়া ঘটনা মিডিয়ার লোকেরা ভিডিও করে নিয়েছিল। উপস্থিত থেকে পুরো ঘটনা দেখেছে এবং শুনেছে।
.
সবাই এখন আগুন কে খুঁজছে। আগুনের ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য। থাপ্পড় খাওয়ার পর তার অনুভূতি কেমন সেটা দেখার জন্য সবাই উদগ্রীব।
এমনকি থাপ্পড় খাওয়ার পর তার অনুভূতির মতামত কি সেটাও জানতে চায় দেশবাসী।
.
সমস্যা হলো আগুন কে পাওয়া যাচ্ছে না। সে কোথায়? কাল এতো বড় ঘটনা ঘটার পর সে বরফের মতো যেন জমে গিয়েছিল।
একটা কথাও বলেনি।
মোম তার মতো স্বাভাবিক থেকে স্টেজের সামনে বসলো। সে সময় অক্সফোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রফেসরের লেকচার দেওয়ার কথা ছিলো।
প্রফেসর এবং স্টুডেন্টরা সাহস পাচ্ছিল না লেকচারের প্রোগ্রামটা শুরু করার।
মোম সারিতে বসতেই সবাই তাকে অনুসরণ করলো।
এরপর থেকেই আগুন কে কেউ দেখতে পেলো না।
আগুন একেবারে হাওয়া।
.
দুই হাতে দুটো ড্রিংকসের বোতল নিয়ে খালি গায়ে এক হাজার মিটার টাওয়ারের ছাঁদের উপর আগুন শুয়ে আছে উপুড় হয়ে ।
অর্ধ মাতাল আগুনের পা দুটো ছাঁদের কার্ণিশে ঝুলছে।
আগুনের চেখ দুটো লাল হয়ে রয়েছে। সারা শরীর থেকে ড্রিংকসের গন্ধ আসছে।
টাওয়ারের ছাঁদ জুড়ে পড়ে রয়েছে অসংখ্য ওয়াইনের বোতল।
.

আগুনের চোখ দুটো রক্তিমা ধারণ করেছে। সে মাতাল হয়েই উঠে দাঁড়ালো।
নিচে তাকালো।
মাথা ঘুরছে।
আচ্ছা এখান থেকে পড়লে কি হবে? কেউ এখান থেকে এনি চান্স পড়ে গেলে তার নাম নিশানা থাকবেনা।
শরীর টুকরো হয়ে যাবে।
.
মোম চোখ মেলে দেখলো সে একটা উঁচু জায়গার উপর।
সে এখানে এলো কি করে?
চারদিকে অন্ধকার! এখন নিশ্চয়ই রাত।
মোমের যতদূর মনে আছে সে সন্ধ্যার আজানের একটু আগে তাড়াহুড়ো করছিলো লাইব্রেরি থেকে হোস্টেলে ফেরার।
ঠিক তখনই সামনে বিশাল মাইক্রো বাস দাড়ালো। তারপর কিছু মনে নেই।
-হোয়াটস অ্যাপস?
আগুনের কথাটা গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।
তার চেয়ে বড় কথা আগুনের মাতাল সিচুয়েশন দেখে মোমের গায়ের রক্ত হিম হয়ে আসছে।
মোমের হাত পা বাঁধা।
তাকে নিচে ফেলে রাখা হয়েছে।
.
তার পেছনে কিছু নিঃশ্বাসের আওয়াজ হচ্ছে।
মোম কে তাহলে এরাই এনেছে আগুনের কাছে!
আগুনের উদ্দেশ্য ছেলেগুলো বলল- বস দিজ ইউর প্রোপার্টি।
আগুন মাতলামো স্বরে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল- নাউ গো টু হেয়ার!
আগুনের পাশে থাকা ব্রিটকেস থেকে কয়েকটা পাউন্ডের বান্ডিল ছূরে মারলো লোক গুলোর দিকে।
লোক গুলো এসব কাজে প্রফেশনাল।
চারদিকে শুন সান নিরবতা।
এখানে শুধু আগুন আর মোম। তাদের দু-জনের নিশ্বাসের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
হিংস্র পশুদের গর্জন শোনা যাচ্ছে। জায়গাটা একটা বনের মধ্যে হতে পারে।
একেকটা পশুর ডাক শরীর কাঁপিয়ে তোলে।
.
আগুন মোমের দিকে তাকিয়ে ড্রিংকস করছে।
এক চুমুকে একটা বোতল শেষ করে ছূরে মারলো উঁচু জায়গা থেকে। নিচ থেকে কাঁচের বোতল ভাঙার একটুও আওয়াজ হলো না। তার মানে জায়গা টা অনেক উঁচু।
আগুন মোমের সামনে বসে পড়লো ধপ করে।
মোমের গায়ে কাটা দিলো।
আগুন আর্তনাদের মতো করে বলল- (অনুবাদ) আমার মান সম্মান কিছু নেই।
লোকেরা আমাকে নিয়ে ভালো কথা বলতোও সাহস পেতো না। আর আজ তাদের প্রতিটি জোক্সে শুধু আমি।
সবার কাছে কিং ফায়ার জোক্সের পাত্র। এবারের বর্ষ সেরা মডেল ছিলাম। আর এখন বর্ষ সেরা নিউজ হলাম। বর্ষ সেরা সার্কাসের জোঁকার হলাম। কিং ফায়ার জোক্স অফ দ্যা ইয়ার! হা! হা!হা!।
.
আগুনের মাতলামো হাসিটুকু
মোমের কলিজা কাঁপিয়ে দিচ্ছে। শোকে কি লোকটা পাগল হয়ে গেলো নাকি? মোম এখান থেকে প্রাণপণে ছোটার চেষ্টা করছে।
মাতাল আগুন আরেকটা ড্রিংকসের বোতল শেষ করে বলল- প্রতিটা নিউজে মডেল কিং ফায়ার, প্রতিটা চ্যানেলে মডেল কিং ফায়ার, প্রতিটা জোক্সে কিং ফায়ার।
যারা আমাকে ভয় পেত, মেনে চলতো, সম্মান করতো তারা এখন আর আমাকে ভয় পাবে না। সবার মতো সাধারণ ভাববে। আমি শেষ।
কিং ফায়ার শেষ। হা! হা! হা!।
আগুন মোমের খুব কাছে এলো। আবরণের উপর দিয়ে তাকে স্পর্শ করলো।
মোমের মনে হলো সে কোন অগ্নিগিরি তে রয়েছে এই স্পর্শের ছোঁয়ায়।
-ডোন্ট টাচ মি, ডোন্ট টাচ মি।
-বাট হোয়াই বিউটিফুল এঞ্জেল।
মোম প্রাণপণে চেষ্টা করছে আগুনের কাছ থেকে দূরে যাওয়ার।
আগুন বলল- স্টপ ইট। নাড়াচাড়া করো না। এখন একটা মজার ঘটনা ঘটবে।
তুমি দেখতে চাও?
-নো, নো, নো। আমি কিছু দেখতে চাইনা। লিভ মি।
আগুন হঠাৎ একটা ড্রিংকসের বোতল মোমের মুখে ঢেলে দিলো।
তারপর শরীরে ঢেলে আর্তনাদের মতো হাসছে।
-প্লিজ এনজয় দিজ মোমেন্ট লিটল বিউটিফুল এঞ্জেল।
মোমের সারা শরীর ভিজে লেপ্টে গেলো ড্রিংকসে।
বমি বমি ফিলিং হচ্ছে। গা গোলাচ্ছে।
আচমকা আগুন কোলে তোলে নিলো মোম কে।
-ডোন্ট টাচ মি ডেভিল ম্যান। ডোন্ট টাচ মি এভিল। লিভ মি।
কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে আগুন! মোমের মাথা কাজ করছে না।
হে আল্লাহ তায়ালা আমাকে রক্ষা করো। প্লিজ আমাকে রক্ষা করো।
মোম চোখ বন্ধ করে ফেললো ভয়ে।
-প্লিজ ওপেন ইউর আইস বিউটিফুল এঞ্জেল? সি দ্যা ওয়ান্ডারফুল ন্যাচার?
মোম চোখ গুলে সাক্ষাৎ মৃত্যু দেখতে পেলো।
আগুন তাকে কোলে নিয়ে উঁচু জায়গার কার্ণিশে দাড়িয়ে আছে কেন? কি করতে চায় সে?
আগুন বলল- আজ থেকে তোমার চাপ্টার শেষ।
তুমি বেঁচে থাকলে আমার বেঁচে থাকা অপমানের হবে। হয়ত তুমি নিশ্বাস নেবে পৃথিবীতে নয়ত আমি। দু-জনের একজন।
তোমাকে মুক্তি দিচ্ছি সীমাহীন যন্ত্রণা থেকে। তুমি বেঁচে থাকলে তোমাকে আমার দেওয়া যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে প্রতিটি মিনিটে। তার থেকে ভালো যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে যাও। তোমার সৌভাগ্য যে কিং ফায়ারের হাতে তোমার মৃত্যু হবে। ভয়ংকর সুন্দর মৃত্যু।
এখান থেকে পড়লে তোমার শরীর টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। জীবজন্তুদের দারুণ ডিনার হবে। লোভনীয় ডিনার।
তোমাকে খুব মিস করবো লাভিং ডার্লিং। খুব মিস।
আগুন হাতের দুটো আঙুল নিজের ঠোঁটে ছুঁইয়ে মোমকে ডেডিকেট করলো।
লাভ ইউ ডার্লিং! লাভ ইউ ডিয়ার! গুড বাই!
মোম চোখ বন্ধ করে ফেললো। কানে ভেসে আসছে আগুনের হিংস্র হাসি।
মোম যেন হাওয়ায় ভাসছে।
.
মোম চোখ মেলে তাকালো প্রচন্ড ভয়ে। মাটি এমন তুলতুলে লাগছে কেন?
মাঠিতে কি তুলো বিছানো হয়েছে? সে কি পরকালে আছে? সেখান থেকেই কি তার ভাবনা গুলো হচ্ছে?
তীব্র উত্তেজনায় মোম চোখ মেলে তাকালো বহু কষ্টে।
মোমের চোখে মুখে আতংক।
মোম উঠে বসলো।
সবকিছু অন্ধকার! এটা নির্ঘাত মৃত্যুর পরের জীবন। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো সে।
.
.
একটা মোমের আলো তার দিকে জ্বলে উঠলো। আগুনের উত্তাপে মোম গলে বিশাল শিখা হয়েছে।
মোমের মুখে পানি ছিটানো হলো।
-হাউ আর ইউ ক্যান্ডেল?
-আর ইউ অলরাইট?
ঐ তো মোমের আলোয় ক্যারল আর কাশফিয়ার মুখ দেখা যাচ্ছে।
-এটা কোন জায়গা?
-হোয়াট আর ইউ টকিং?
-সরি (অনুবাদ) উত্তেজনায় ইংরেজি ভুলে গিয়েছিলাম।
এটা কোন জায়গা? আমি কোথায়? আমি কি বেঁচে আছি?
.
.
মোম কে দু-জন মিলে শান্ত করলো। এটা তাদের হোস্টেলের রুম। সে বেঁচে আছে।
মোম এক ঢোকে পানি খেলো। তার মানে সপ্ন। সে এতোটাই ক্লান্ত ছিলো যে হোস্টেলে এসেই যেভাবে ছিলো সেভাবে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।
সপ্নটা বেশ ভয়াবহ ছিলো।
অক্সফোর্ড ভার্সিটি এবং শহরে ককখনো লোডশেডিং হয়না। আজ হলো। আজব! অন্ধকারে কেমন একটা ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কয়েক বছরে দূর্ঘটনায় লোডশেডিং হলে যা হয় আরকি। হঠাৎ কেন লোডশেডিং হলো সেটার কারণ জানা কারও বোধগম্য ছিলো না। পরিষ্কার ঝকঝকে আকাশ। হোস্টেলের বেলকুনিতে মেয়েদের গলার স্বর শোনা যাচ্ছে।কিং ফায়ারের বার বার নাকানিচুবানির গল্প করছে সবাই চিপস খেতে খেতে। লোডশেডিংয়ে ডেন্জার কিং ফায়ারের গল্পটা বেশ জমজমাট এবং রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে। গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো সব মেয়েদের।
.
কারেন্ট এলে সবাই বড়সড় ধাক্কা খেলো।
নবীন বরণ ফেস্টিভ্যালে স্টেজ টা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । হকিস্টিক দিয়ে সমস্ত আয়োজন নষ্ট করে দিলো কেউ একটু আগেই। মূহুর্তেই ভয়ংকর এক পরিস্থিতি তৈরি হলো।
সেটারও আলাদা নিউজ হয়েছে।
কে করেছে তা জানা যায়নি।
সিসিটিভি ফুটেজেও কেউ কিছু পায়নি।
কারণ সে সময় সিসি ক্যামেরা কেউ অফ করে দিয়েছিল।
কিছুক্ষণের জন্য অক্সফোর্ডে লোডশেডিং হয়েছিলো।
সে-সময় কেউ কাজটা করেছে।সবার তা-ই ধারণা। নবীন বরণ ফেস্টিভ্যাল হয় পুরো সপ্তাহে জুড়ে।একদিন পরেই এমন ঘটনা শুনে সবাই আশাহত হলো।
.
মোমের শরীর থেকে গন্ধ আসছে। বাজে গন্ধ। মোম চেঞ্জ করার সময় বিষয়টা টের পেলো। এমনকি হাতে কিছু আঙুলের ছাপও পেলো।
কিভাবে সম্ভব! মোমের মাথায় পানি ঢালা হলো।
সিকিউরিটি এসে একটা পার্সেল দিয়ে গেলো। পার্সেল টা মোমের নামে। এই দেশে তাকে আবার কে পার্সেল পাঠাবে? আশ্চর্য হলো মোম!
প্যাকেট ওপেন করে একটা চিরকুট পাওয়া গেলো গোটা গোটা হরফের ইংরেজি তে লেখা। হাতের লেখা টাকে অস্কার দোওয়া উচিৎ!
.
“ডিয়ার বিউটিফুল এঞ্জেল! কেমন ফিল করছো? সপ্নটা কেমন দেখলে? সপ্নটা এনজয় করেছো? আজ থেকে দুঃসপ্ন শুরু হলো তোমার। তৈরি থাক প্রতিটি মোমেন্টে দুঃসপ্ন দেখার জন্য”মিষ্টি হোক আজ রাতের ঘুম! গুড নাইট!
চিরকুট পড়ে মোমের মাথা হ্যাং হয়ে গেলো!
তার মানে ঘটনাটা সপ্ন নয় সত্যি!

.
ক্যারল জানালো মোম মিসিং ছিলো খানিক সময়। ফোনেও পাওয়া যাচ্ছিলো না।
কাশফিয়া জানালো মোম কে হোস্টেলের টেরেসে পাওয়া যায় সেন্সলেস সিচুয়েশনে। কে বা কারা তাকে সেখানে রেখে গিয়েছে তার হদিস পাওয়া যায়নি। এমন কি সিকিউরিটি গার্ডরাও কিছু বলতে পাচ্ছে না। সবার বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার কঠোর ব্যাবস্থা নিয়েছে হোস্টেল কর্তৃপক্ষ!
.
মোমের শরীর খুব খারাপ হয়ে গেলো ঘটনার পর। কিছুদিন বিশ্রামে ছিলো সে। হোস্টেল রুম থেকে কোথাও গেলো বের হলো না।
দেখতে দেখতে রমজান চলে এলো। আকাশে চাঁদ দেখা গেলো। মোম গায়ে চাদর জরিয়ে চাঁদ দেখতে হোস্টেলের বেলকুনি তে দাঁড়ালো।সকল পাপ ধুয়ে মুছে যাবে রমজান মাসে। মোম একটি তালিকা তৈরি করে নিলো রমজান মাসেরঃ
রামাযান মাসে মুমিন/মমুমিনাদের দৈনন্দিন কর্মসূচীঃ
রহমতের মাস, বরকতের মাস, কল্যাণের মাস, ক্ষমার মাস, কুরআনের মাস মাহে রামাযান আমাদের মাঝে আগতপ্রায়। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।

কিন্তু আমরা কি রামাযানের এই মহামূল্যবান সময়গুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর প্লান করছি? আমরা একটি তালিকা তৈরি করি যেন, এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তে নেকী কুড়িয়ে আখেরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে পারি।

ফজরের পূর্বে:
===========

১! আল্লাহর দরবারে তাওবা-ইস্তেগফার ও দুয়া: কারণ মহান আল্লাহ প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করে বলেন: “কে আছে আমার কাছে দুআকারী, আমি তার দুআ কবুল করবো”। (মুসলিম)

২!সাহরী করা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “সাহরী খাও। কারণ সাহরীতে বরকত আছে”। (বুখারী মুসলিম)

ফজর হওয়ার পর:
===============

১! ফজরের সুন্নত আদায়: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “ফজরের দুই রাকাআত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝে যা আছে তার থেকে উত্তম”। (মুসলিম )

২! ইকামত পর্যন্ত দুআ ও যিকিরে মশগুল থাকা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”আযান ও ইকামতের মাঝে দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না”। (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ)

৩! ফজরের নামায আদায়: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”তারা যদি ইশা ও ফজরের ফযীলত জানতো, তো হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত”।
(বুখারী ও মুসলিম)

৪! সূর্যোদয় পর্যন্ত সকালে পঠিতব্য দুআ-যিকর ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মসজিদে অবস্থান: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযের পর নিজ স্থানেই সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করতেন”। (মুসলিম )

৫! সূর্যোদয়েরে পর দু রাকাআত নামায: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”যে ব্যক্তি জামায়াতের সহিত ফজরের নামায পড়লো, অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকর করলো, তারপর দুই রাকাআত নামায আদায় করলো, তার জন্য এটা একটি পূর্ণ হজ্জ ও উমরার মত “। (তিরমিযী)

৬! নিজ নিজ কর্মে মনোযোগ দেয়া: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নিজ হাতের কর্ম দ্বারা উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাবার নেই”। (বুখারী)

যোহরের সময়:
=============

১!জামায়াতের সহিত যোহরের নামায আদায়। অতঃপর কিছুক্ষণ কুরআন কিংবা অন্যান্য দ্বীনি বই পাঠ।

২! আসর পর্যন্ত বিশ্রাম, কারণ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ( তোমার উপর তোমার শরীরেরও হক আছে)।

আসরের সময়:
===========

১!আসরের নামায জামাতের সাথে সম্পাদন করা: অতঃপর ইমাম হলে নামাযীদের উদ্দেশ্যে দারস প্রদান কিংবা দারস শ্রবণ কিংবা ওয়ায নসীহতের ক্যাসেট ও সিডির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”যে ব্যক্তি মসজিদে ভাল কিছু শিক্ষা নিতে কিংবা শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গেল, সে পূর্ণ এক হজ্জের সমান নেকী পেল”। (ত্ববারানী)

২! পরিবারের সদস্যদের সাথে ইফতারির আয়োজনে সহায়তা করা: এর মাধ্যমে যেমন কাজের চাপ হাল্কা হয় তেমন পরিবারের সাথে ভালবাসাও বৃদ্ধি পায়। অথবা সম্মিলিতভাবে কোথাও ইফতারের আয়ােজন করা। কারণ এতে পারস্পারিক ভালবাসা ও সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

মাগরিবের সময়:
================

১!ইফতারি করা এবং এই দুআ পাঠ করা: ইফতার করার সময় যে দুআ প্রমাণিত, তা ইফতার সামান্য কিছু খেয়ে পড়তে হয়।। ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত,
নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) ইফতার করলে এই দুআ বলতেন,

ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ ألأَجْرُ إِنْ شَاءَ الله.

উচ্চারণঃ- যাহাবায যামা-উ অবতাল্লাতিল উরুক্বু অষাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লাহ।

অর্থ- পিপাসা দূরীভূত হল, শিরা-উপশিরা সতেজ হল এবং ইনশা-আল্লাহ সওয়াব সাব্যস্ত হল।

[#আবূ_দাঊদঃ২৩৫৭]

ইফতারের সময় এই দুআয় সবচেয়ে সহীহরূপে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া ইফতারের অন্যান্য (লাকা সুমতু, ইত্যাদি) দুআ বিশুদ্ধরূপে প্রমাণিত নয়।(ভুল করে আমি দূর্বল (ইফতারের দোয়া দিয়েছিলাম পার্ট ৩ এ! মাফ করবেন)
২!মাগরিবের নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা যদিও ইফতারি পূর্ণরূপে না করা যায়। বাকি ইফতারি নামাযের পর সেরে নেওয়া মন্দ নয়। অতঃপর সন্ধ্যায় পঠিতব্য যিকির-আযকার পাঠ করে নেওয়া।

৩! স্বভাবানুযায়ী রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে একটু বিশ্রাম করে তারাবীর নামাযের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

ইশার সময়:
===========

১!জামায়াতের সহিত ইশার নামায আদায় করা।
২!ইমামের সাথে সম্পূর্ণ তারাবীর নামায আদায় করা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমান ও নেকীর আশায় রমযানে কিয়াম করবে, (তারাবীহ পড়বে ) তার বিগত সমস্ত (ছোট গুনাহ) ক্ষমা করা হবে”।
(বুখারী ও মুসলিম)
৩!সম্ভব হলে বিতরের নামায শেষ রাতে পড়া।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :তোমরা বিতরকে রাতের শেষ নামায কর”। (মুত্তাফিকুন আলাইহ)
——————————–

লেখক: আব্দুর রাকীব (মাদানী) দাঈ, দাওয়াহ সেন্টার খাফজী, সৌদী আরব।
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদী আরব।
.
আগুন কেও কেউ দেখতে পেলো এই কয়দিন। মিডিয়ায় এখন তোলপাড় করা নিউজ হলো মডেল কিং ফায়ার।
আগুন নির্জন রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দরজা ওপেন করে গাড়িতে হেলান দিয়ে রাস্তায় পা ছড়িয়ে ড্রিংকস করছে। রিংটোন বাজছে।
আগুনের বাবা কল করে যাচ্ছে সেদিনের পর থেকে বার বার। আগুন কল রিসিভ করেনি একটিবারও!
গাড়ি থেকে রেডিওর নিউজ শোনা যাচ্ছে……….. বিখ্যাত মডেল কিং ফায়ার কে শুধরাবার জন্য বিদেশি এক মেয়ে থাপ্পড় দিয়েছে! তাহলে কি আমাদের ড্যাসিং মডেলে বিগড়ে গিয়েছে যে তাকে শুধরাতে হবে! মডলের লাইফ স্টাইল নিয়েও মেয়েটি কথা বলেছে!
এসব নিউজ শোনা যাচ্ছে রেডিও থেকে।
.
আগুন একটা নিউজ পেপার পড়ছিলো।
” মডেল কিং ফায়ার নিখোঁজ!
তিনি কি লজ্জিত! দেশের লোক তার কাছ থেকে নিজের লাইফ স্টাইল শুধরানোর মতামত শুনতে চায়! কিং ফায়ার এখন কোথায়?
.
প্রতিটা নিউজ পেপারের শিরোনামে সে!
মোম আজ ভার্সিটি গিয়ে লক্ষ্য করলো সবাই তার থেকে সরে সরে থাকছে।
এমনকি প্রফেসর লেকচার দেওয়ার সময়ও অন্যদিনের মতো কিছু জিজ্ঞেস করলো না। সে নিজ থেকে বলতে চাইলে ইশারা দিয়ে তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়।
.
মোম একাই মলে গেলো। কিছু কেনাকাটা দরকার।
মোম কাউন্টারে বিল পরিশোধ করতে গিয়ে চমকে উঠে আগুন কে দেখে।
আগুন কাউন্টারে ম্যানেজারের জায়গায় বসে আছে। মোমের কি যাওয়া ঠিক হবে! বিল দিতে হবে তো!
মোম গিয়ে জিনিসপত্র কাউন্টারে রাখলো।
আগুন নির্ঘাত এখানে সিনক্রিয়েট করবে। একা অচেনা জায়গায় তাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে! মোম যত কাছে আসছে আগুনের ততই হার্টবিট বাড়তে লাগলো।
আজব বিষয় আগুন নিজ হাতে প্যাকিং করে দিলো।
.
মোম বিল দিয়ে কোনরকম দৌড়ে মল থেকে বের হয়ে এলো।
লিফটে ঢুকে সে আগুনকে দেখতে পেলো! লিফটে শুধু আগুন আর মোম!
আজ-ই বার বার কেন পড়তে হচ্ছে মোম কে আগুনের সামনে। আগুন হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
মোমের চোখে চোখ পড়তেই মোম সামনে তাকালো চোখ বন্ধ করে। কি চোখ আগুনের। রক্তিম লাল হয়ে আছে। চোখ দিয়েই যেন তাকে খেয়ে ফেলবে। লিফটে একা পেয়ে তাকে আগুন চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে নাকি? ভরসা নেই খেতেও পারে!
.
বিদেশিরা সবকিছু খেতে পারে! বরং না খেলেই অবাক হবে মোম!
লিফটে সে আর আগুন! একদম ভয়ংকর নিরবতা। শুধু দু-জনের হার্টবিট শোনা যাচ্ছে।
এই ঠান্ডায় মোম ঘেমে একাকার!
লিফটি এক হাজার ফ্লোর নিচে নামছে? এতো লেট কেন?
লিফট থামতেই আগুন মোমের কাছে এগিয়ে এলো! মোমের হার্টবিট দ্রুত বাড়ছে।
আপনাআপনি চোখ শক্ত করে বন্ধ হয়ে গেলো।
আগুন মোমের পাশ দিয়ে চলে গেলো।কিছু করলো না দেখে মোম অবাক হলো। কিছু করলে বোধহয় মোম অবাক হতো না।
মোম শিউর আগুন মনে হয় সবকিছু ভুলে গিয়েছে।
বিখ্যাত মডেল তার মতো মেয়েকে নিয়ে ভাবার সময় কোথায়! এখানকার সব মেয়েরা তো ওর জন্য পাগল!
.
ঘড়িতে দুটো বাজে। জোহরের নামাজ পড়তে হবে। মোম টেক্সি না পেয়ে দ্রুত হাটছে! নামাজ পড়ে আজ কোরআন তেলওয়াত করবে কয়েক ঘন্টা এটাই প্ল্যান করছিলো।
আগুন তার নতুন গাড়ির ভেতর বসে বসে মোম কে দেখছে।
অসম্ভব কষ্ট পেলে মানুষ স্বাভাবিক হয়ে যায়। আগুনের এই সিচুয়েশন।
যখন চোখ মেলে তাকালেই থাপ্পড়ে দৃশ্য ভেসে উঠে। কানে বাজে থাপ্পড়ের আওয়াজ! বুকে বাজে অপমানের আওয়াজ। মনে বাজে ক্রোধের আগুন!
এক সেকেন্ডও সে ভুলতে পারেনা। ঐ দিন রাতে সবার অগোচরে টেরেস থেকে ফেলে দিয়ে শাস্তি দেওয়াতে তার মন তৃপ্ত হতো না। টেরেস থেকে পড়লে মোমের দেহাবশেষ পাওয়া যেতনা! তার আর্তনাদও শোনা যেত না। আগুন শুনতে চায় তার আর্তনাদ।
আশেপাশে প্রচুর লোক!
আচ্ছা এখন সে যদি মোম কে রাস্তায় পিষে ফেলে! ভয়ংকর ভাবে গাড়িটা ওর উপর দিয়ে নিয়ে গেলে পুরো পিষে মিশে যাবে রাস্তায়। তখন ওর আর্তনাদ শোনে তৃপ্ত হবে আগুন। মনের জ্বালা যন্ত্রণা শান্ত হবে। অপমানের বদলা নেওয়া হবে। লোকরা ওর আর্তনাদ শুনবে! আগুনও শুনবে লোকের ভিড়ে।আর বলবে-আহা! মেয়েটা বড় ভালো ছিলো। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতো।খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। ফিউচারে আইনস্টাইন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। অপমানের আর্তনাদ যেভাবে আগুন শোনে প্রতি ক্ষণে,সেভাবে মৃত্যুর আর্তনাদ শুনবে মোমের তৃপ্ত হয়ে নিজ চোখে দেখে।আগুনের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠেছে। এক হাতে ড্রিংকসের বোতল আরেক হাতে ড্রাইভ করছে।
আগুন গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে! হাই স্পিডে মোমের পেছন দিক থেকে ধেয়ে আসছে তার ভয়ংকর মৃত্যু!

Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-06
মোম তাড়াহুড়ো করে পার হচ্ছিলো রোড। আশেপাশে সায় সায় করে স্পিডে গাড়ি চলছে। পার হওয়া মুশকিল। এসময় রোডের ওপারে যাওয়া রিস্ক।
.
আগুন মোমের উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাবে ডিসিশন নিয়েছে। ফার্স্টে ধাক্কা দিয়ে ছিটকে রোডের মাঝখানে ফেলে দেবে।তারপর মোমের শরীরের উপর দিয়ে গাড়ি চালাবে। অবশ্য মোমের ভাগ্য ভালো থাকলে তার উপর দিয়ে শুধু আগুনের গাড়ি যাবে। অন্য গাড়ি যাবে না।
এটা নির্ভর করছে কোন ম্যাজিকের উপর।
আগুন দুটো আঙুল ঠোঁটে ছুঁইয়ে মোম কে ডেডিকেট করে মনে মনে বলল-গুড বাই লিটল বিউটিফুল এঞ্জেল! ইউর চাপ্টার ইজ ক্লোজ নাও! টা টা!
.
আগুন মোমের খুব কাছে এসে পড়েছে গাড়ি নিয়ে।
এখুনি তার মনের জ্বালা যন্ত্রণা মিটে যাবে। অপমানের যন্ত্রণায় ও যেমন ছটফট করেছে ঠিক তেমনি মৃত্যু যন্ত্রণায় মোমও ছটফট করবে আগুনের সামনে! আজ আগুনের বড় সুখের দিন! খুশির দিন! রাতে ক্লাবে বিশাল একটা পার্টির থ্রো করেছে এরমধ্যেই।এরেন্জও হয়ে গিয়েছে।
প্রচন্ড বাতাস বইছে হঠাৎ করে। ঝড় আসার সংকেত। প্রকৃতি অশান্ত হয়ে গিয়েছে মনে হচ্ছে!
.
মোম কে গাড়ি স্পর্শ করার সময়ই হঠাৎ এক বৃদ্ধা তাকে রোডের পাশ থেকে টেনে আনলো।
আগুন জোরে ব্রেক কষলো। পেছন থেকে অন্য একটা গাড়ি তার গাড়িটা কে ধাক্কা দিয়ে ছিটকে রোডের মাঝখানে ফেলে দিলো।
তারপর অন্য কয়েকটা গাড়ি হাই স্পিডে তার গাড়ি মারিয়ে উপর দিয়ে চলে গেলো। আগুনের ভাগ্য ভালো যে গাড়ি নিয়ে ছিটকে রাস্তায় পড়ার পরপরই সে দ্রুত বের হয়ে রোডের সাইডে চলে গিয়েছিলো। তার কয়েক সেকেন্ড পরেই তার শখের গাড়ির এই সিচুয়েশন হলো।
আগুন হতভম্ব!
.
.
আগুন একবার আকাশের দিকে তাকালো। আরেকবার মাটিতে তাকালো।
একটু আগে যেটা হলো সেটা কি হলো? সে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না৷
মোমকে সে যতটা যন্ত্রণা দিতে চাচ্ছিল সেটা এখন তার যন্ত্রণা হতে পারতো।
.
.
আগুনের ভয়ে সিকিউরিটি গার্ডরা পেছনে লুকিয়ে ছিলো গাড়ি নিয়ে তার বাবার আদেশে। রগচটা জেদি কিং ফায়ারের বিপদেআপদে তৎক্ষনাৎ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিক্রেট সিকিউরিটি নিয়োগ করে তার বাবা। একমাত্র আদরের ছেলে! তার উপর এমন পার্সোনালিটির৷
এতো বড় ঘটনা ঘটার পর সিকিউরিটি গার্ডেরা আর লুকিয়ে থাকতে পারলো না। তারাই আগুনকে সেফ কর নিয়ে এলো প্রাণ হাতে।
আগুন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে সিসিটিভি ফুটেজে। বার বার ঐ রোডের এক্সিডেন্ট দেখছিলো। জুম করে মোম কে সে স্ক্যান করে দেখলো। মেয়েটার কি এমন পার্সোনালিটি!
বাথটাবে বসে সে মাথার সোনালী চুল বুলিয়ে বুলিয়ে ঝিমাচ্ছে চোখ বন্ধ করে।
হাউ ইজ পসিবল? মেয়েটা কিভাবে বেঁচে গেলো? এমন কয়েকটা প্ল্যান করা এক্সিডেন সে আরও কয়েক টা করেছে। তবে সবগুলো মৃত্যু নয় ভয়ানক ইনজুরির এক্সিডেন্ট ছিলো!!!
আজ কেন এমন হলো! এর পেছনে কোন কারণ আছে!
আগুনের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।
মোমের মৃত্যু হলে সে একবারেই যন্ত্রণা অনুভব করে ছটফট করতে করতে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে যেত। একবারেই সব শেষ হয়ে যেত। মোমের শাস্তি এতোটা ছোট হতে পারেনা। আরও বড় শাস্তি তার প্রাপ্য। আগুন তাকে সেটা দিয়েই ছাড়বে।
আগুন সারাজীবন তার অপমানের যন্ত্রণা অনুভব করবে, ঠিক তেমন মোমকেও সারাজীবন ভয়ংকর অপমান অনুভব করতে হবে। তার জন্য যা করা দরকার সেটাই করবে আগুন। দ্যাটস ফাইনাল। .
.
মোম ঘটনার পর হোস্টেলে ফিরে এসে শোকরানার নামাজ পড়লো। তার জীবন আজ বেঁচেছে৷ আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শোকর।
কিন্তু কিন্তু সে তো রোডের একেবারে সাইড দিয়ে যাচ্ছিলো তাহলে এক্সিডেন হওয়ার কোন কথায় নয়!
.
হোস্টেলের একটা মেয়ে সবাই কে চাইনিজের ট্রিট দিয়েছে। গতকাল তার মিল নামের এক ব্রিটিশ সিটিজেনের সাথে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ হয়েছে। মিলের ব্যাংক ভর্তি দারুণ পাউন্ড! সে খুব খুশি। সবাই কে বলে বেরাচ্ছে- আই এম লাকি!
মোম ট্রিট নিলো না। কারণ কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ আসলে কোন বিয়ে নয়। এটা শুধু আইনত ভাবে এডাল্ট দুটো ছেলে মেয়ের একসাথে থাকার একটা ডিল! ব্রিটিশদের কাছে এটাই তাদের ম্যারেজ। ডিল শেষ হলে বিয়েও শেষ। দু’জন তখন আলাদা। ছেলে মেয়ে থাকলে সেটা ব্রিটিশ গভর্নরের রেসপন্সিবিলিটি!
মোমের গা গুলাচ্ছে! বিয়ে নিয়ে এটা কি ধরনের খেলা?
ব্রিটিশ দেশ হলো সভ্য নামের অসভ্য দেশ। কোন আবেগ, স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নেই মানুষের মধ্যে এখানে। কোন রকম পবিত্রতা ছিটেফোঁটাও নেই! মোমের খুব দুঃখ হলো!
.
ছুটির দিনে মোম তার বান্ধবীদের নিয়ে লন্ডনের বিখ্যাত মসজিদ প্রাঙ্গণে গেলো। দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো। মোম মসজিদের আজান শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। কতদিন সে আজান শুনেনা বাংলাদেশ থেকে আসার পর।মসজিদের বাহিরে অসহায়দের দান করার সময় অদ্ভুত এক জিনিস দেখতে পেলো মোম। আগুন কম্বল দিচ্ছে মসজিদের প্রাঙ্গণে থাকা অসহায় লোকেদের। আগুনের পায়ে কোন জুতো ছিলো না। যাইহোক আগুনের একটু ধর্মীয় মনোভাব রয়েছে। সে তাহলে মুসলিম?
.
রাতে ডাইনিংয়ে একটা সমস্যা হলো। মুসলিম বলে মোম কে তার ধর্মাবলম্বীদের সাথে সর্বশেষ সিরিয়ালে ডাইনিংয়ে ঢুকতে দেওয়া হলো।খাবারের মেনুও ছিলো আলাদা। মোম হোস্টেল কর্তৃপক্ষদের কাছে জানতে পারলো এটাই এখানকার নীতি। এমনকি সকল ক্ষেত্রেই এরকম নিয়ম। সর্বপ্রথম খৃস্টান তারপর অন্যান্য ধর্মাবলম্বী! তার মধ্যে সর্বশেষ সিরিয়াল মুসলিমদের।এক্সাম ফী দেওয়ার সময়ও মোম কে সর্বশেষ মুসলিম সিরিয়ালে দিতে হলো।ফর্ম পূরণের সময়ও সবার শেষে।
এখানকার সবাই মুসলিম মানেই নাক ছিটকানো। যেন মুসলিমদের কোন অধিকার নেই অক্সফোর্ডে! বিষয়টা এমন মনে হয় যেন মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের দয়া করা হচ্ছে! ডিপার্টমেন্টের একদল খৃষ্টান স্টুডেন্ট অন্য ধর্মালম্বীদের সাথে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভাবে বিহেভিয়ার করে। তারা-ই যেন একমাত্র স্টুডেন্ট অক্সফোর্ডে। বাকিরা দয়ার পাত্রী!
ফার্স্টে সিট থাকা সত্বেও মোম কে পেছনে বসতে হয় মাঝে মধ্যে! মোম নিজের অধিকার আদায় করতে জানে।
মোম আজ ফার্স্টে বসেছে।
হঠাৎ একদল স্টুডেন্ট এসে বলল- (অনুবাদ) তুমি এখান থেকে উঠে যাও। এটা আমাদের সিট।
মোম শান্ত ভাবে বলল- আগে যে আসবে সে আগে বসবে!
-কোন জায়গার নিয়ম?
– সব জায়গার নিয়ম।
-মানিনা।
-তোমাদের ইচ্ছে।
মোম কে সবাই চিনে নিয়েছে প্রথম থেকেই। মোম কে আর না ঘাটিয়ে মোমের পাশে বসে থাকা কাশফিয়ার বুকস গুলো ফ্লোরে ছূরে মারলো একজন।
মোম শান্ত ভাবে খৃষ্টান ছেলেটি কে বলল- বই গুলো তুলে মুছে যথা স্থানে রাখ! রাইট নাও! এবং পেছনে বসো যেহেতু সবার পরে এসেছো।

– কখনো না। এটা আমাদের দেশ! তোমরা ভীনদেশী। তোমরা আমাদের নিয়মে চলবে এবং থাকবে।
– বাংলাদেশ নাম কখনো শুনোনি তোমরা! শোন, আমি বাংলাদেশের মেয়ে। দেশটি মুসলিম দেশ! আমরা কখনো আমাদের দেশে ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদ করিনা। সবাই সমান ভাবে নিজেদের অধিকার ভোগ করি! এমনকি আমরা মুসলিম জাহান রা অন্য ধর্মালম্বীদের তাদের ন্যায্য অধিকার দিই! কখনো তাদের অবহেলা করিনা। অত্যাচার করিনা। আমরা তো তোমাদের অধিকার ক্ষুন্ন করিনা। তাহলে তোমরা কেন তোমাদের মতো আমাদের মানুষ ভাব না? সব জায়গায় কেন আমাদের পেছনে রাখ? তোমাদের রাষ্ট্র কেন আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে?
মহানুভব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর প্রতিষ্ঠিত মদিনা কেন্দ্রীক ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছিল একটি মৌলিক নাগরিক অধিকার পূর্ণ-সাম্যের সমাজ। প্রেমের নবী হযরত মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর প্রদর্শিত জীবন ব্যবস্থার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গান্ধী বলেছিলেন, “প্রতীচ্য যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত, প্রাচ্যের আকাশে তখন উদিত হলো এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং আর্ত পৃথিবীকে তা দিলো আলো ও স্বস্তি। ইসলাম একটা মিথ্যা ধর্ম নয়। শ্রদ্ধার সঙ্গে হিন্দুরা তা অধ্যয়ন করুক, তাহলে আমার মতই তারা একে অপরকে ভালোবাসবে। ”
মহানবী (সঃ) বলেছেন, “কোন অমুসলিম নাগরিককে যে অত্যাচার করলো বা তার অধিকার ক্ষুন্ন করলো বা তাকে সাধ্যাতীত পরিশ্রম করালো বা তার অমতে তার থেকে কিছু নিয়ে নিলো কিয়ামতের দিন আমি হব তার বিপক্ষে মামলা দায়েরকারী।” তিনি আরো বলেন, “যেকোন অমুসলিম নাগরিককে কষ্ট দিলো আমি তার বাদী হব। আর আমি যার বিরুদ্ধে বাদী হবো কিয়ামতের দিনে আমি হবো বিজয়ী।” তিনি অন্যত্র বলেন, “যে সংখ্যালঘুকে উত্যক্ত করলো সে আমাকে উত্যক্ত করলো, আর যে আমাকে উত্যক্ত করলো আল্লাহকেই সে উত্যক্ত করলো।” অমুসলিম নাগারিককে হত্যা করা সম্পর্কে রাসুলে মকবুল (সঃ) বলেছেন, “যে কোন সংখ্যালঘুকে হত্যা করবে সে বেহেশতের ঘ্রাণও উপভোগ করতে পারবেনা। অথচ বেহেশতের সুঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব হতেও অনুভব করা যাবে।” (অমুসলিমের প্রতি ইসলামের উদারতা- ডাঃ ইউসুফ আল-কারযাভী-অনুবাদক, মাহমুদুল হাসান-পৃ ২১-২২)!
বিশ্ব মানবতার নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সুস্পষ্ট ভাষায় অমুসলিমদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য ঘোষণা দিয়েছেন, “তাঁদের রক্ত আমাদের রক্তের মত এবং তাঁদের ধন সম্পদ আমাদের ধন সম্পদের মত।” অমুসলিমদের জান-মাল মুসলমানদের নিজের জানমালের ন্যায় পবিত্র ও নিরাপত্তাযোগ্য। রাসুল (সঃ) এর এ ঘোষণার পর যারা অ-মুসলিমদের ধন সম্পদ লুন্ঠন করে, অর্পিত কিংবা ন্যস্ত সম্পত্তি জবরদস্তিমূলকভাবে দখল করে রাখে, তারা কি নিজেদেরকে মুসলমান পরিচয় দিতে পারে? এ ব্যাপারে স্পষ্ট ফতোয়া আসলে এদেশের বহু অমুসলিম ইসলামের সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হতো। এ প্রসঙ্গে রাসুলের (সঃ) এবং সাহাবাদের (রাঃ) জীবন থেকে আরো দু-একটা উদ্ধৃতি দেয়া সংগত মনে করছি। মহানবী (সঃ) একদিন মসজিদে নববীতে কতিপয় সাথীদের নিয়ে আলোচনায় মশগুল ছিলেন। এমন সময় একজন বেদুইন এসে মসজিদের ভিতরে এক কোনে প্রস্রাব করছিলো। রাসুল (সঃ) এর সাথীরা ওকে প্রহার করতে উদ্যত হলে মহানবী (সঃ) তাদেরকে নিবৃত্ত করলেন। প্রস্রাব করা শেষ হলে শান্তির দূত মুহাম্মদ (সঃ) তাকে বুঝিয়ে বললেন যে, “ওটা মুসলমানদের ইবাদতখানা, প্রস্রাবের স্থান এটা নয়।” এ-বলে তিনি তাকে বিদায় দিয়ে সাথীদের নিয়ে মসজিদের প্রস্রাব ধুয়ে দিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বয়ং কোরানে বলেছেন, “তোমার ধর্মের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেনি, তোমার বসতি থেকে তোমাকে উচ্ছেদ করেনি, তাদের প্রতি তোমার দয়ালু হওয়া উচিৎ এবং তাদের সাথে ন্যায়ানুগ আচরণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায় ভালোবাসেন।” (আল কোরআন)
দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রাঃ) এর খেলাফতকালে যখন মিসরের শাসনকর্তা হিসেবে হযরত আমর ইবনুল আ’ স (রাঃ) দায়িত্ব পালন করছিলেন, সে সময় একদিন আলেক জান্দ্রিয়ার খ্রীষ্টান পল্লীতে হৈ – চৈ পড়ে গেলো। কেউ একজন যিশু খ্রীষ্টের প্রস্তরনির্মিত মূর্তির নাক ভেঙ্গে ফেলছে। খ্রীষ্টানরা ধরে নিল যে এটা মুসলমানদের কাজ। তারা উত্তেজিত হয়ে উঠলো। খ্রীষ্টান বিশপ অভিযোগ নিয়ে আসলেন আমর ইবনুল আ’ স এর কাছে। আমর শুনে অত্যন্ত দুঃখিত হলেন। তিনি ক্ষতিপূরণ স্বরূপ মূর্তিটি নতুনভাবে তৈরি করে দিতে চাইলেন। কিন্তু খ্রীষ্টান নেতাদের প্রতিশোধ স্পৃহা ছিলো অন্যরকম। তারা চাইলো মুহাম্মদ (সাঃ) এর মূর্তি তৈরি করে অনুরূপভাবে নাক ভেঙ্গে দিতে। খ্রীষ্টানদের এ মতামত ব্যক্ত করার মধ্যে দিয়ে যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেয়েছে, তাতে তাদের কতটুকু বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিলো তার প্রমাণ পাওয়া যায়। যে নবী (সঃ) আজীবন পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, সে নবীর মূর্তি তৈরীকে মুসলমানরা কিভাবে মেনে নিতে পারে? হযরত আমর কিছুক্ষণ নীরব থেকে খ্রীষ্টান বিশপকে বললেন, “ আমার অনুরোধ, এ প্রস্তাব ছাড়া অন্য যে কোন প্রস্তাব করুন আমি রাজি আছি। আমাদের যে কোন একজনের নাক কেটে আমি আপনাদের দিতে প্রস্তুত, যার নাক আপনারা চান।” খ্রীষ্টান নেতারা সকলে এ প্রস্তাবে সম্মত হলো। পরদিন খ্রীষ্টান ও মুসলমান বিরাট এক ময়দানে জমায়েত হলো। মিসরের শাসক সেনাপতি আমর (রাঃ) সবার সামনে হাজির হয়ে বিশপকে বললেন, “এদেশ শাসনের দায়িত্ব আমার। যে অপমান আজ আপনাদের, তাতে আমার শাসন এর দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই তরবারী গ্রহণ করুন এবং আপনিই আমার নাসিকা ছেদন করুন।” একথা বলেই তিনি বিশপকে একখানি তীক্ষèধার তরবারী হাতে দিলেন। জনতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, খ্রীষ্টানেরা স্থম্বিত। চারদিকে থমথমে ভাব। সে নীরবতায় নিঃশ্বাসের শব্দ করতেও যেন ভয় হয়। সহসা সেই নীরবতা ভংগ করে একজন মুসলিম সৈন্য এগিয়ে এলো। চিৎকার করে বললো, “আমিই দোষী, সিপাহসালারের কোন অপরাধ নেই। আমিই মূর্তির নাক ভেঙ্গেছি, এই, তা আমার হাতেই আছে। তবে মূর্তি ভাঙ্গার কোন ইচ্ছা আমার ছিলোনা। মূর্তির মাথায় বসা একটি পাখির দিকে তীর নিক্ষেপ করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।” সৈন্যটি এগিয়ে এসে বিশপের তরবারীর নীচে নিজের নাসিকা পেতে দিলো। স্তম্ভিত বিশপ। নির্বাক সকলে। বিশপের অন্তরাত্মা রোমাঞ্চিত হয়ে উঠলো। তরবারী ছুঁড়ে দিয়ে বিশপ বললেন, “ধন্য সেনাপতি, ধন্য এই বীর সৈনিক, আর ধন্য আপনাদের মুহাম্মদ (সঃ), যাঁর মহান আদর্শে আপনাদের মতো মহৎ উদার নির্ভিক ও শক্তিমান ব্যক্তি গড়ে উঠেছে। যিশু খ্রীষ্টের প্রতিমূর্তির অসম্মান করা হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তার চাইতেও অন্যায় হবে যদি অঙ্গহানি করি। সেই মহান ও আদর্শ নবীকেও আমার সালাম জানাই।” পরধর্ম সহিষ্ণুতার এ জলন্ত উদাহরণ আজো বিশ্ববাসিকে হতবাক করে।
হযরত আলী (রাঃ) যখন মুসলিম জাহানের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সে সময়ে একবার তাঁর ঢাল চুরি হলো। চুরি করলো একজন ইহুদী। হযরত আলী (রাঃ) আদালতের শরণাপন্ন হলেন। কাজী (বিচারপতি) খলিফা হযরত আলী (রাঃ) এর কাছে সাক্ষী চাইলেন। সাক্ষী হিসেবে খলিফা হাজির করলেন তাঁর এক ছেলে এবং চাকরকে। কিন্তু আইনের দৃষ্টিতে আপন সন্তান ও চাকরের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় বিধায় কাজী খলিফার অভিযোগ নাকচ করে দিলেন। মুসলিম জাহানের অধিপতি হয়েও তিনি কোন বিশেষ বিবেচনা পেলেন না। ইসলামী আইনে শাসক-শাসিত, উঁচু-নীচু, শত্রু-মিত্র সকলেই সমান। ইহুদী বিচার দেখে অবাক বিস্ময়ে বলে উঠলো, অপূর্ব এই বিচার, ধন্য সেই বিধান যা খলিফাকে পর্যন্ত খাতির করেনা আর ধন্য সেই নবী যার প্রেরণায় এরূপ মহৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ জীবনের সৃষ্টি হতে পারে। হে খলিফাতুল মুসলিমীন, ঢালাটি সত্যই আপনার। আমিই তো চুরি করেছিলাম। এই নিন আপনার ঢাল। শুধু ঢাল নয় তার সাথে আমার জান-মাল, আমার সবকিছু ইসলামের খেদমতে পেশ করলাম।”
ইসলামী সমাজে অমুসলিমদের জীবনযাত্রা, ধন-প্রাণের নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা মুসলিম নাগরিকদের সমতুল্য। এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নায়ক মহানবী (সঃ) এর মহানুভব অসাম্প্রদায়িক মতাদর্শের অনুসারীদের আরো কিছু ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ-
(ক) হযরত আলী (রাঃ) খেলাফত কালে জনৈক মুসলিম কর্তৃক একজন ‘জিম্মা’ নিহত হয়। হযরত আলী আততায়ী মুসলমানের প্রাণদন্ডের আদেশ দেন। হযরত আলী (রাঃ) সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, “আমরা যাদের ‘জিম্মি’ বা দায়িত্ব নিয়েছি, তাদের রক্ত আমাদের রক্ত তুল্য। তাদের রক্ততুল্য আমাদের রক্তমূল্য।
(খ) উমাইয়া বংশের প্রবল প্রতাপান্বিত খলিফা হিশাম ইবনে আবদুল মালিকের বিরুদ্ধে জনৈক খ্রীষ্টান নাগরিক হযরত উমর ইবনে আবদুল আজীজের আদালতে অভিযোগ উখাপন করে। অভিযোগ সম্বন্ধে নিজের বক্তব্য পেশ করার জন্য নির্র্দিষ্ট সময়ে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য খলিফাকে নির্দেশ দেয়া হয়। একজন সাধারণ লোকের অভিযোগের উত্তরে সাধারণেরই মত আদালতে হাজির হতে, আরও পাঁচজনের মত আসামীর নির্দিষ্ট আসনে দাঁড়াতে ও জবাবদিহি করতে খলিফা সংকোচ করেন। তাই তিনি উকিল নিযুক্ত করতে চান। কিন্তু উমর তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “তোমার নিজের হাজির হতে হবে, নিজেকেই বলতে হবে নিজের কথা।” অগত্যা তাঁকে আদালতে হাজির হতে হয়। বিচারে খলিফা হিশামের বিরুদ্ধে ডিক্রী প্রদান করা হয়।
(গ) মুসলিম সেনাবাহিনী সিরিয়ায় জনৈক অমুসলিম চাষীর ফসল নষ্ট করেছে বলে সে খলিফা উমর (রাঃ) কে জানায়। ক্ষতিপূরণ স্বরূপ খলিফা তাকে দশ সহস্র মুদ্রা প্রদান করেন। (হাদিস শরীফ)
এছাড়াও আরও দৃষ্টান্ত রয়েছে মুসলিম অমুসলিমদের সম্পর্ক নিয়ে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। আমরা ভ্রাতৃপ্রেমী।সর্বদা ভ্রাতৃত্ব এবং শান্তি বজায় রাখি। আমার প্রশ্ন হলো আমরা যদি তোমাদের অধিকার দিই, সম্মান দিই,প্রাপ্য দিই তাহলে তোমরা কেন দাওনা? আমরা তো তোমাদের ক্ষতি করিনা।

অক্সফোর্ড আমরা নিজেদের যোগ্যতায় এসেছি।তোমাদের যতটা অধিকার ততটা আমাদেরও অধিকার।
মোম কিছু নোটস নিয়ে বলল- তোমরা উপস্থিত না থাকায় লেকচারের নোটস গুলো পাওনি। এই নাও নোটস!
ডিপার্টমেন্ট একদম নিরব স্তব্ধ হয়ে গেলো।কেমন যেন শান্তির একটা পরিবেশ হয়ে গেলো।
ছেলেটি হঠাৎ মোমের আবরণে ঘেরা আবছা চোখের চাহুনিতে একটু দমে গেলো।মাথা নিচু করে নোটস গুলো নিলো।
সে বইগুলো তুলে নিজের রুমাল দিয়ে মুছে কাশফিয়া কে দিয়ে বলল-আই এম সরি! মোম কে বলল- উই আর সরি!
তারপর পেছনে বসলো। ছেলেটির সাথে সাথে তার দলের সবাই পেছনে বসলো!
.
মোম একটা জিনিস লক্ষ্য করলো। লাইব্রেরিতে সে আসার পর থেকেই সবাই কেমন যেন তাকে আরচোখে দেখছে। কারণ কি? সে কি বাঘ না ভাল্লুক? নাকি সপ্তাশ্চর্য কোন স্থাপত্য?
মোম কয়েকটা বই সংগ্রহ করার পর বের হওয়ার সময় দেখলো পুরো লাইব্রেরি খালি।
সবাই কখন বের হলো!
-হাই! হোয়াটসঅ্যাপ!
আগুন কে দেখে মোম শান্ত ভাবে টেবিলে বসলো। এই হচ্ছে কাহিনি।
সামনে এক্সাম মোম স্বাভাবিক ভাবে চেয়ারে বসে পড়তে লাগলো।
আগুন এসে মোমের সামনের চেয়ারে বসলো!
এক দৃষ্টিতে মোমের দিকে তাকিয়ে আছে আগুন!
তাতে মোমের ভ্রূক্ষেপ নেই।
অনেক্ক্ষণ হয়ে গেলো দু-জনের মধ্যে নিরবতা চলছে!

আগুন বলল (অনুবাদ)- তোমার কি আমাকে ভয় লাগে না?
-আপনি বাঘ নাকি সিংহ?
আগুন বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লো। তার মাথা এতো গরম হয়েছে যে কয়েকশো মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদন হয়ে যাবে।
টেবিলে দুই হাত রেখে আগুন বলল- খালি লাইব্রেরি!
-তো!
-বাহির থেকে লাইব্রেরির দরজা বন্ধ হয়ে আছে।
-তো!
-আমি আর তুমি ছাড়া লাইব্রেরি তে আর কেউ নেই। তোমার কি আমাকে ভয় লাগছে না?
মোম না তাকিয়ে বইয়ের দিকে মুখ গুজে থেকেই বলল- আপনি কি ডাইনোসর? ভয় লাগবে কেন?
উওর শুনে আগুন চোখ বন্ধ করে ফেললো।
এতোটা ভয়াবহ পরিবেশ লাইব্রেরিতে। একজন ভয়ংকর লোকের সাথে মোম আঁটকে আছে! যে কোন সময় অঘটন ঘটতে পারে।
আর এই মেয়ে কিনা সবকিছু সহজ ভাবে নিচ্ছে।
আগুন কে একটু ভয় পাচ্ছে না! হাউ ইজ ইম্পসিবল?
আগুনের ইচ্ছে করছে মোমের জায়গায় নিজেই নিজেকে আছাড় মারতে।
আছাড়া মেরে টেরেস থেকে লাফিয়ে পড়তে।
মোম কেন আগুন কে ভয় পায় না? যেখানে সবাই ওর ভয়ে কাপে?
আগুন কি করতে পারে সেটা তো ঐ দিন রাতেই দেখিয়েছে মোম কে। তাহলে মোম তাকে ভয় না পেয়ে সহজ ভাবে নিচ্ছে কেন!
.
আগুন মোমের মধ্যে ভয় অনুভব করাতে চায় তাকে নিয়ে৷ ভয়ে যেন সে হার মেনে নেয় আগুনের কাছে।
মোম কে তীব্র যন্ত্রণা দিতে চায় সে যেন সে যন্ত্রণায় সারাক্ষণ ছটফট করতে থাকে।
এমন অপমান করতে চায় যেটা সারাজীবন মোম চাইলেও মুছতে পারবেনা৷
অপমান যেন মোমের উপর ছিলের মতো লেগে থাকে৷ আর সেটা সারাজীবন।
.
আগুন মোমের বই নিয়ে দূরে ছূরে মারলো।
তারপর আগুন মোমের কাছে গিয়ে তাকে স্পর্শ করলো।
-ডোন্ট টাচ মি! স্কাউনড্রেল! লিভ মাই হ্যান্ডস! ইডিয়ট! আই উইল বেট ইউ!
আগুন মোমের দুই কাঁধ শক্ত করে ঝাঁকিয়ে বলল- তোমাকে এখন থেকে আমি-ই স্পর্শ করব। এই বাক্য গুলে তোমাকে কষ্ট করে আর বলতে হবে না। বলতে হবে না ডোন্ট টাচ মি!লিভ মাই হ্যান্ডস! হা! হা!হা!।
মোম মনে মনে ভাবলো লোকটা পাগল হয়ে গেলো নাকি? হতেপারে!
সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। মনে হচ্ছে গায়ে কোন ককাঁটা যুক্ত বিছা স্পর্শ করে আছে। ঘৃনায় গা গুলিয়ে আসলো মোমের।
-ডার্লিং নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করোনা বৃথা! খামাকা এনার্জি নষ্ট হবে! সো ডোন্ট দিজ ডার্লিং!
.
-বাজে লোক ছাড় আমাকে। ছাড় বলছি।
আগুন আরও শক্ত করে মোমের দুই হাত নিজের মুষ্টি বদ্ধ করলো।।
– বাজে কথা না বলে আসল কথা বলো।
তোমার কি বিয়ে হয়েছে?
মনে হয় না।
মোম রেগে তাকালো!
আগুন মোমের কানে ফিসফিস করে বলল- আমি বিয়ে করব বলে ঠিক করেছি। আশেপাশে মেয়েদের মধ্যে চোখ বুলিয়ে দেখলাম তুমি-ই সবচেয়ে এক্সপার্ট! কঠিন চিজ। হরিণী বাঘিনী! তোমার মতো শিকারের জন্য আমার মতো শিকারী দরকার।
তোমার মতো শিকার কে শিকার করার মধ্যে তৃপ্তি রয়েছে ডার্লিং।
– ডোন্ট কলড মি ডার্লিং!
লিভ মি!
আগুন একটানে মোম কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল- তোমাকে চিরতরে অপমানের তীব্র যন্ত্রণা দেওয়ার রাস্তা আমি পেয়েছি।
সারাজীবন তোমাকে আমার অপমানের যন্ত্রণা অনুভব করতে হবে ডার্লিং।
টেনশন করোনা তোমার যন্ত্রণা প্রতিনিয়ত বাড়ানোর জন্য সারাজীবন আমিও থাকব তোমার পাশে।
-মানে?
আগুন এক দমে বলল- খুব সিম্পল! একজন ধার্মিক অধার্মিকের সাথে থাকার সমতুল্য অপমান এই ভুবনে ২য়টি নেই।
তোমাকে এই অপমান সারাজীবন অনুভব করতে হবে। এটাই তোমার শাস্তি।
কিছু বুঝতে পারলে?
-ঠিক বুঝতে পারলাম না৷
-শোন, তোমাকে এমনিতেই আমার কাছে রেখে দিতে পারি। তুমি বাধ্য হবে আমার সাথে থাকতে।সোসাইটি বা আইনের কোন পরোয়া বা ভয় নেই আমার৷বাট আইন হলো আইন। কোন রিস্ক নিতে চাইনা। আমি কন্ট্রাক্ট ম্যারেজে যেতে চাই তোমার সাথে৷
মোম শুধু একবার উচ্চারণ করলো -কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ?
আগুন কানে ফিসফিস করে বলল- এই কন্ট্রাক্টের মেয়াদ জানো কত? আইডিয়া আছে?
মোম মাথা নাড়ালো না সূচক।
-সারাজীবন! মৃত্যুর আগ পর্যন্ত!
-না।
-হ্যাঁ! এটাই তোমার শাস্তি!
আর হ্যাঁ এখনই না বললে চলবে? তোমার আসল শাস্তির কথা শুনবে না?
আমার সম্পর্কে আসল কথা শুনলে আই এম শিউর তোমার লাইফের শ্রেষ্ঠ সারপ্রাইজ হবে। আর কখনো এমন সারপ্রাইজ তুমি পাবেনা লাইফে।
মোম একটু ইতস্তত হয়ে বলল- আসল কথা?
আগুন মোমের হাত দুটো আরও শক্ত করে ধরে কানে কানে বলল-তোমার একটা ধর্ম আছে। আমার কোন ধর্ম নেই।তুমি ধার্মিক,একজন আস্তিক,আর আমি একজন নাস্তিক।
মোম আসলেই বড়সড় সারপ্রাইজড হলো৷ মোমের বমি করতে ইচ্ছে করছে। গা গুলাচ্ছে নাস্তিক কথাটা শুনে।
-না…নাস্তিক!
-হ্যাঁ ঠিক শুনেছো ডার্লিং।
আমি ধর্মে বিশ্বাস করিনা। জোর যার মুল্লুক তার নীতিতে বিশ্বাসী। শুধু ইহকালে একবার জন্ম নিয়ে সুখে থাকতে হবে এক জীবনে এটা বিশ্বাস করি৷ পরকাল বলতে আসলে কিছুই নেই।
ডোন্ট ওয়ারী ডার্লিং! আমার সাথে থাকতে থাকতে তুমিও সত্যিটা অনুভব করবে।
.
মোম এই প্রথম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না তার সামনে একজন নাস্তিক! যে মিথ্যে বরাই করছে। আর তাকে কি সব কন্ট্রাক্ট ম্যারেজে যেতে চাচ্ছে এই নাস্তিক সেটা বোধগম্য হচ্ছে না তার।
-কি ব্যাপার? কি ভাবছো?
আমার বিষয়ে তো?
মোম তাকালো আগুনের দিকে ঘৃণ্য চোখে।
-ভাবছো নাস্তিকরা তো কিছু বিশ্বাস করেনা তাহলে বিয়ে বিশ্বাস করলো কি করে?
আরে বাবা বিয়ে তো একটা ধার্মিক বিষয়, আমি তো নাস্তিক তাই বিয়েতে বিশ্বাস করিনা। আবার দেখ, আমি একজন যুবক, আমার নানা রকম চাহিদা আছে, আমার প্রোপার্টির একজন ওয়ারিশ থাকতে হবেই! সেজন্য আইনত বৈধতা থাকা দরকার। ঠিক সেজন্য আমি কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করতে আগ্রহী! আমাদের মতো নাস্তিকদের জন্য এটা একটা আইনত ব্যবস্থা স্রেফ নিজেদের সকল প্রয়োজন মেটানোর। কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ আইনত ভাবে বসবাস এবং ওয়ারিশ পাওয়ার একটা আইনত বৈধ ডিল।
মোমের এবার সত্যি সত্যি বমি এসে গেলো।
লুক এট মি! আমার মতো হ্যান্ডসাম, স্মার্ট, ডেসিং পার্সোনালিটি, রিচ হাসব্যান্ড তুমি এক পিস পাবে কোথাও?
দুনিয়ার সমস্ত দৌলত তোমার পায়ের কাছে লুটিয়ে দেব! কি রাজি তো কন্ট্রাক্ট ম্যারেজে? হবে আমার কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের আইনত ওয়াইফ ?

.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here