নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-৫৫+৫৬

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৫

বিকেলের দিকে হঠাৎ করেই আইরাতের শরীর প্রচুর খারাপ লাগতে শুরু করে। এতো টাই খারাপ যে অবশেষে তাকে দ্রুত হস্পিটালে যেতে হয়েছে। আব্রাহাম তো বাসায় ছিলো না তাই আইরাত অনামিকা আর অবনির সাথে হস্পিটালে গিয়েছিলো চেকাপের জন্য। সেখানে ডক্টর কিছু টেস্ট দিলে আইরাত সব টেস্ট গুলো করে নেয়। রিপোর্ট আসতে একদিন সময় লাগবে। আর আব্রাহাম যদি শুনে যে আইরাত হস্পিটালে গিয়েছিলো মানে আইরাতের শরীর খারাপ তাহলে সে অযথাই হাইপার হয়ে যাবে। আর তেমন কিছু সিরিয়াস ম্যাটারও না। তাই আইরাত আব্রাহাম কে এই কথা বলতে সবাই কেই বারণ করে দেয়। তবে আইরাতের মন টা কেমন একটু ভার ভার। যেনো কিছু নিয়ে চিন্তিত সে। রাতে আব্রাহাম বাড়ি ফিরে আসে। অন্যান্য দিন আব্রাহাম এসেই দেখে আইরাত হলরুমেই সবার সাথে রয়েছে কিন্তু আজ আইরাত এখানে নেই। আব্রাহাম ইলা কে জিজ্ঞেস করলে ইলা বলে আইরাত নাকি বেশ সময় যাবত নিচেই নামে নি। ওপরে রুমেই রয়েছে। আব্রাহামও আর কিছু না বলে দ্রুত পায়ে রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত বিছানার ওপর থেকে ওরনা নিজের ওপর জড়াচ্ছে। আব্রাহাম কে দেখে আইরাতের মাঝে তেমন কোন হাবভাব দেখা যায় না। আব্রাহাম হয়তো কিছুটা টের পেয়েছে। জেকেট টা নিজের ওপর থেকে খুলে ফেলে। শার্টের হাতা গুটাচ্ছে আর সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আইরাতের দিকে।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!

আইরাত;; ____________________

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!

আইরাত;; হুমম

আব্রাহাম;; হলরুমে সবাই তুমি এখানে একা একা কি করো?

আইরাত;; না এমনি। আমার ভালো লাগছিলো না তো তাই আরকি নিচে যাই নি।

আব্রাহাম যেনো এটা মেনে নিতে পারলো না। আইরাত চলে যেতে ধরলে আব্রাহাম তার বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। বিছানার ওপর আইরাত কে বসিয়ে দেয়। আর সে আইরাতের সামনে এক হাটু ভাজ করে বসে পরে। সামান্য উঁচু হয়ে আইরাতের কপালে আর ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে আবার বসে। বেশ নরম সুরেই বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; কি হয়েছে?

আইরাত;; কিছু না।

আব্রাহাম;; বলো আমায় কি হয়েছে?

আইরাত;; আব্রাহাম আমার ভালো লাগে না। (কিছুটা জোরেই)

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!

আইরাত;; আব্রাহাম মানলাম আমি একটু চঞ্চল, মাঝে মাঝে একটু বেশিই বাচ্চামো করি কিন্তু আমি অবুঝ নই। অবুঝ নই, আমি বুঝি।

আব্রাহাম;; হয়েছে কি?

আইরাত;; আপনি কি এগুলো ছাড়বেন না। এইসব মারপিট, ঝামেলা। এইসব খুন-খারাবি কবে ছাড়বেন আপনি!?

আব্রাহাম;; আইরাত ত……

আইরাত এবার উঠে আব্রাহামের সামনে থেকে এসে পরে।

আইরাত;; আমি দেখেছি আজ অফিসে সব। আপনি ওই লোকটাকে মেরেছেন। আমি সেখান থেকে এসেই পরতাম। বাইরেও এসে পরেছিলাম কিন্তু আপনার কেবিনে আমি আমার ফোন রেখে এসে পরেছিলাম। তাই সেটা নিয়ে আসার জন্য আবার ঘুরে যাই। আর গিয়েই দেখি আপনি লোকটাকে মেরে বসেছেন।

আইরাত রাগ-ক্ষোভ নিয়ে কপাল কুচকে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।
আব্রাহাম এবার উঠে আইরাতের কাছে যায়। আইরাতের গালে নিজের দুহাত রেখে দেয়।

আব্রাহাম;; ভয় পাও আমাকে?

আইরাত;; ____________________

আব্রাহাম;; বলো। ভয় পাও আমাকে তুমি?

আইরাত;; নাহ।

আব্রাহাম;; আমার ওপর বিশ্বাস আছে?

আইরাত;; অনেক টাই বেশি। নিজের থেকেও বেশি।

আব্রাহাম;; তাহলে তো তুমি এও জানো যে আমি বিনা কারণে কাউকে মারি না।

আইরাত;; কিন্তু মেরে ফেলার কি দরকার। কথা বলে বুঝিয়েও তো মিটমাট করা যায় নাকি!

আব্রাহাম;; আইরাত শুনো আমি তোমায় ভালোবাসি বুঝলে তুমি। ঠিক ততো টাই ভালো আমি আমার প্রফেশন কেও বাসি। এন্ড ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমার প্রফেশন খুন করা নয়, মানুষ কে মেরে ফেলা নয়। সাধে মারি না আমি। না আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো আর না ই আমি আমার প্রফেশন কে। আমি বলছি না যে আমি এইসব বারবার করবো। তবে হ্যাঁ আর কখনো এইসব তোমার চোখের সামনে পরবে না। কখনোই না।

আইরাত কে জড়িয়ে ধরে আব্রাহাম নিজের বুকের সাথে। বুঝলো যে অফিসে সেই কান্ড টা দেখার পরই আইরাতের মন খারাপ। তবে আইরাত কে নিজের বুকে নিয়ে আব্রাহাম বুঝলো যে আইরাতের শরীর অনেক পরিমাণে গরম। আব্রাহাম তার মুখ তুলে ধরে। তার গালে, কপালে ভালো করে হাত রেখে দেয়। কপাল কুচকে বলে…

আব্রাহাম;; বডির টেম্প্রেচার এতো বেশি কেনো! জ্বর এসেছে নাকি তোমার?

আইরাত;; কৈ না তো।

আব্রাহাম;; শরীর খারাপ লাগছে?

আইরাত;; হ্যাঁ কিছুটা।

আব্রাহাম;; তুমি, তুমি এখানে বসো।

আইরাত তার মাথার পাশে হাত রেখে দেয়। মাথা টা কেমন ঘুরিয়ে উঠলো। আব্রাহাম আইরাত কে শুইয়ে দেয়। তারপর ফ্রেশ হয়ে আসে। নিজে খায় সাথে আইরাত কেও খাইয়ে দেয়। সারাটা রাত আইরাতের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়েই পার করে দিয়েছে আব্রাহাম।


দিয়া তো জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। প্রায় কয়েক দিন যাবত অয়ন তার সাথে ভালোভাবে কথা বলছে না, দেখছে না অব্দি। যদিও আগে এইসবে দিয়ার কিছুই আসিতো-যেতো না। তবে ইদানীং কেনো যেনো দিয়ার বেশ খারাপ লাগে অয়নের এমন কান্ডে। না পারে মুখ ফুটে তাকে কিছু বলতে আর না পারে সহ্য করতে। দিয়া নিজেও জানে না যে তার এমন কেনো লাগছে। অয়নের সাথে তো তার বনেই না তাহলে কেনো জ্বলছে সে। দিয়া চেয়েও নিজেকে নরমাল রাখতে পারে না। এবার আর না পেরে দিয়া ঠিক করলো যে যাই হয়ে যাক না কেনো দিয়াই সবকিছু বলে দিবে অয়ন কে আর অয়নের মনে আসলে কি খিচুড়ি পাকছে তাও জানবে। সবাই হলরুমে বসেই ছিলো। ছেলেরা সবাই অফিসে। দিয়া ভেবেছিলো অয়নও হয়তো অফিসেই। কিন্তু দেখে অয়ন তার রুম থেকে নামছে। এতোক্ষন সে তার রুমেই খাপটি মেরে বসে ছিলো। অয়ন ছাদের দিকে যেতে ধরে, আইরাত তাকে দেখে দিয়া কে ইশারা দেয়। অয়ন যাওয়ার পর দিয়াও উঠে ছাদের দিকে যেতে লাগে। ছাদে তীব্র বাতাস, তার সাথে প্রখর রোদও। দিয়া ছাদের আশেপাশে তাকাতাকি করে দেখতে লাগে। অবশেষে দেখে ছাদের এক কিণারে রেলিং এর ওপরে হাত রেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। কানে এখনো ফোন রয়েছে। হেসে হেসে কথা বলছেই। এটা দেখেই তো দিয়ার মাথা খারাপ হয়ে যায়। দিয়া তেড়ে অয়নের কাছে যায়। রাগ আর সামলাতে না পেরে অয়ন কে নিজের দিকে জোরে ঘুরিয়ে আনে। তারপর তার কান থেকে ফোন নিয়ে সোজা একটা আছাড় মারে নিচে। ফোন ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে যায়। অয়ন তো হাবলাকান্তের মতো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আর দিয়া সোজা কথা রাগে ফুসছে।

অয়ন;; কি হলো এটা?

দিয়া;; আপনার মুন্ডু টা হয়েছে।

অয়ন;; মানে কি! বলা নেই কওয়া নেই। এভাবে এসে ফোন ভেঙে ফাললে কেনো! আজব।

দিয়া;; আজব তাই না আজব! আর এই কয়েকটা দিন যাবত আপনি যা করে আসছেন এগুলো কি হ্যাঁ? এগুলো কি? ফোন একটা মুহুর্তের জন্যও হাত ছাড়া করেন না, সারাদিন কানের সাথে ফোন কে চিপকেই রাখেন। এতো হেসে হেসে কিসের কথা, এতো কিসের কথা! নিজে সামনে গিয়ে দাঁড়ালেও কথা বলেন না। আজকে সব বলবেন আমায় সব। তা নাহলে গালি দিবো, ভয়ংকর গালি। সব আইরাতের কাছ থেকে শিখে এসেছি।

অয়ন;; কুল কুল কুল।

দিয়া;; রাখেন আপনার কুল।

অয়ন;; আরে এভাবে রাগ করলে তো ফেটে যাবে।

দিয়া;; কিইইই!

অয়ন;; চুপ চুপ।

দিয়া এবার চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নেয়। নিজেকে যথেষ্ট ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু হয় উল্টো টা। নিজেকে শান্ত করতে গিয়ে দিয়ার চোখই ভিজে আসে। যেনো সব রাগ চোখের জল হয়ে বের হয়ে এলো। তবুও চোখ বন্ধ রেখেই অয়নের পাশ কেটে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। বাতাসে দিয়ার চুলগুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছে। অন্য পাশে মাথা ঘুরিয়ে চোখের কার্ণিশে আশা অশ্রু ফোটা গুলো মুছে ফেলে। বার কয়েক নাক টান দেয়। অয়ন দিয়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। সে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই দিয়া কিছুটা ভরাট কন্ঠে বলে ওঠে….

দিয়া;; দেখুন অয়ন আমি জানি না আপনার মনে কি আছে বা আপনি আসলে কি চান। কি এক্সপেক্ট করেন। আমি জানি যে আপনি আর আমি একসাথে থাকলেই শুধু ঝগড়া বেধে যায়। কিন্তু ঝগড়া গুলোও যে আমার বড্ড বেশি ভালো লাগে। জানি না কীভাবে ভালো লাগতে শুধু করলো। ভালো লাগতে শুরু করলো আপনার নামকে, আপনার করা সব কাজ কে, আপনাকে। আমি জানি না আপনি অন্য কাউকে পছন্দ না আসলে ভালোবাসেন কিনা। আপনার মনে অন্য কেউ রয়েছে কিনা। আমি চাই নি এভাবে বলতে তবে আর পারছি না। অয়ন আমি…

অয়ন;; তোমাকে ভালোবাসি।

অয়নের কথায় অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে দিয়া ফট করে পেছন ঘুরে তাকায়। দিয়ার মাঝে বিচলতা স্পষ্ট। যেনো সে বিশ্বাসই করতে পারছে না। কিন্তু অয়নের মাঝে এমন বিচলতার ছিটেফোটাও নেই। সে তার মতো করেই শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দিয়ার দিকে। অয়ন কয়েক কদম এগিয়ে যায় তার দিকে।

অয়ন;; আমি তোমাকে ভালোবাসি দিয়া।

দিয়া;; ক ক কিন্তু আ আপনি তো…

অয়ন;; হুমম এবার বুঝলাম সব ক্লিয়ার করে। শোন ফোনে বেশিক্ষণ যাবত কারো সাথে কথা বলা বা হেসে হেসে বলার মানেই এই না যে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি বা চুটিয়ে প্রেম করছি। এমন টা না। আর হ্যাঁ কয়েক দিন ধরে আমি ফোনে একটু বেশি টাইম দেই। জানি আমি। মিথ্যে বলবো না আমি। হ্যাঁ যার সাথে কথা বলতাম সে একজন মেয়েই।

দিয়া চোখ তুলে তাকায়।

অয়ন;; মেয়েটা আমার কাজিন লাগে। তাও আবার বিবাহিত। আমার থেকে বড়োও। উনার হাসবেন্ড আর্মিতে রয়েছেন। বাসায় এসেছেন প্রায় দু বছর পর। তাই আমাকে জোর দাবি জানাচ্ছে সেখানে বেড়াতে যেতে। সবার সাথেই কথা হয়। তাই একটু বেশিই টাইম দিচ্ছিলাম। আমি ভাবি নি যে তুমি এটাকে অন্য কিছু ভেবে বসবে।

এটা বলেই অয়ন হেসে দেয় ফিক করে। কিন্তু দিয়া তো নিজেই ‘ব’ তে বলদ হয়ে গেলো। যাহ বাবা, কি ভাবলো আর কি হলো।

অয়ন;; তবে একটা দিক দিয়ে ভালোই হলো বলো। তোমাকে জ্যালাস তো ফিল করাতে পেরেছি। এই অনেক। তবে পরিশেষে এই বলবো যে আমি আমার না বলা কথা বলতে পেরেছি। ভালোবাসি আমি তোমায়।

অয়ন দিয়ার দিকে নিজের দুহাত মেলে দাড়ালে দিয়া ছুটে এসে অয়নের বুকে আচড়ে পরে। জড়িয়ে ধরে। এভাবে তারা দুজন কতোক্ষন ছিলো জানা নেই। তখনই ছাদের দরজাতে আইরাত আর অবনি আসে। এসেই দেখে ছাদে দুই প্রেমিক-প্রেমিকা একে ওপর কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দেখেই আইরাত-অবনি হেসে দেয়। হঠাৎ করেই তাদের দুই প্রেমিক-প্রেমিকার পাশ দিয়ে কারো গলা খাকাড়ির আওয়াজ আসে।

দিয়া;; অয়ন!

অয়ন;; হুমম।

দিয়া;; আপনার কি গলা খারাপ হয়েছে?

অয়ন;; না তো।

আইরাত;; হায়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য় আমার লায়লি-মজনু রে।

আইরাতের কন্ঠ পেয়েও অয়ন আর দিয়া দুজন দুজন কে তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দেয়। দুজনেই ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়ায়।

অবনি;; হয়েছে যা দেখার তা দেখে ফেলেছি আর লুকিয়ে লাভ নেই।

আইরাত;; যাক একটা রোমান্টিক সিন তো নজরে পরলো।

অয়ন;; না মানে বউমনি আসলে ইয়ে মানে….

আইরাত;; হয়েছে থাক। দুজনেই নিচে যাও এবার সবাই ডাকছে।

অয়ন-দিয়া জলদি করে চলে যায়। আইরাত আর অবনি হাসছিলো কিন্তু তার মাঝেই আইরাত হঠাৎ তার মুখ টা একেবারে কুচকে দিয়ে একহাত পেটে চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে দ্রুত নিচে ছুটে যেতে লাগে। অববি আগামাথা কিছুই না বুঝে সেও সোজা আইরাতের পিছে পিছে ভৌ দৌড় লাগায়।

।#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৬

আব্রাহাম দৌড়িয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। যেনো সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে, সবকিছু ভুলে নিজের প্রাণপণে ছুটে যাচ্ছে। টেনশনে মূহুর্তেই সে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। দমও যেনো তার বেশ ভারি হয়ে এসেছে। আব্রাহাম তার কেবিন রুমেই ছিলো হুট করেই তখন বাড়ি থেকে ফোন আসে। আর ফোনের ওপর পাশ থেকে দিয়া বেশ ঘাবড়িয়েই আব্রাহাম কে দ্রুত বাসায় আসতে বলে। আব্রাহাম ‘কি হয়েছে’ জিজ্ঞেস করলে দিয়া বলে ‘ তা ফোনে বলা সম্ভব নয়’। দ্রুত আব্রাহাম কে বাসায় আসতে বলে। আর দিয়া যেভাবে বলেছে তাতে মনে হয় না কোন কিছু ভালো হয়েছে। আইরাতের চিন্তাই আব্রাহামের মাথায় সবার আগে আসে। অয়ন-কৌশল আর রাশেদ-রোদেলা কে অফিসের দিকটা সামলাতে বলে সে এক দৌড় লাগায়। দ্রুত গতিতে সিড়ি বেয়ে নেমে বাইরে এসেই গাড়িতে বসে পরে। একহাত দিয়ে কপাল ধরে আরেক হাত দিয়ে ড্রাইভ করে যাচ্ছে। ত্রিশ মিনিট পর বাসার গেইটের সামনে এসে পরে। গাড়ির দরজা ঠাস করে লাগিয়ে নেমে পরে। ছুটে বাসার ভেতরে গেলে দেখে হলরুমে সবাই বসে আছে। সবার মুখেই কেমন এক ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। আইরাত বাদে সবাই হলরুমে বসা। সবার গালে-কপালে হাত রাখা। সবার মুখমণ্ডলের দিকে এক নজর দিয়ে আব্রাহাম এগিয়ে যায়। অনামিকার সামনে বসে নরম সুরেই বলে….

আব্রাহাম;; মা আইরাত কোথায়? কি হয়েছে সবকিছু ঠিক আছে তো? তোমরা সবাই এভাবে বসে আছো কেনো? আইরাত কোথায়?

অনামিকা কিছু না বলে শুধু ওপরে আইরাতের রুমের দিকে নজর দেয়। আব্রাহাম অনামিকার নজর লক্ষ্য করে সেদিকে তাকায়। বুঝলো আইরাত ওপরে রুমেই রয়েছে। আব্রাহাম আর কিছু না বলে সোজা ওপরে রুমের দিকে যায়। সে চলে গেলেই দিয়া আর অবনি একগাল হেসে দিয়ে হাই ফাইভ করে। ইলাও ফিক করে হেসে দেয়। আর ওদিকে আব্রাহাম তার রুমে গিয়ে দরজা খুলে ভেতরে যায়। আর ভেতরে গিয়েই একটা ছোটখাটো ঝটকা খায়।

কেননা ভেতরে অর্থাৎ রুমের পুরো হুলিয়া পালটে গেছে। তাদের রুম তো এমনিতেই সাদা ধবধবে শুধু মাঝে মাঝে কিছু ডার্ক এশ কালারের আসবাবপত্র রাখা কিন্তু এখন সবকিছুই সাজানো। করিডর টা পুরো টাই সাদা গোলাপ দিয়ে সাজানো। কোণায় কোণায় থোকা থোকা ফুল রয়েছে। তার মাঝে আবার নরম সাদা নেট কাপড় দিয়ে সাজানো। আশেপাশে ছোট গোল লাইট বল রয়েছে, বলগুলোর মাঝে টিমটিমিয়ে বাতি জ্বলছে। সামনে একটা কাচের টেবিল রয়েছে সেখানে ছোট ছোট মোমবাতি রাখা আর ফুলের পাপড়ি বিছানো। তার মাঝে একটা কেক রাখা। সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখেও আব্রাহাম কিছুই বুঝে না। এই এতোকিছুও যেনো আব্রাহামের চিন্তাকে দূর করতে পারছে না। নিচে হলরুমে তো সবাই কেই দেখলো। সেখানে সবাই ঠিকই ছিলো শুধু আইরাত ছিলো না। তার মানে অবশ্যই কিছু না কিছু একটা তো আইরাতেরই হয়েছে। কিন্তু রুমে এসে আইরাত কে না পেয়ে তার বদলে পেলো এইসব গোছগাছ। এইসব কিছু যেনো এখন আব্রাহামের ভালো লাগছে না। সে সামনে এগিয়ে গিয়ে ডাকতে লাগলো….

আব্রাহাম;; আইরাত! আইরাত!

_________________________

আব্রাহাম;; আইরাত দেখো আমার ভালো লাগছে না বেবিগার্ল। কোথায় তুমি, প্লিজ কাম আউট। বাইরে এসো। আইরাত!

আব্রাহাম আরো বার কয়েক ডাক দেয়। আর আব্রাহামের এতো ডাকা ডাকির পর আইরাত অবশেষে বের হয়ে আসে। আব্রাহাম দেখে আইরাত কে। সে একটা ব্রাউন আর সাদার কম্বিনেশনে গাউন পরেছে। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। কানে ছোট ছোট ঝুমকো, চোখে হালকা আভায় কাজল দেওয়া, ঠোঁট রাঙানো তার মিষ্টি রঙে। আব্রাহাম খুটিয়ে খুটিয়ে আইরাত কে আপাদমস্তক দেখে নেয়। আজ কেনো যেনো আইরাত কে দেখে তার সেই একদম আগের কথা মনে পরছে। অর্থাৎ যখন তার আর আইরাতের প্রথম প্রেম হয়। আইরাত এগিয়ে এসে ঠোঁটের কোণায় মুচকি হাসি রেখে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকায় আব্রাহামের দিকে। আব্রাহাম ক্ষীণ একটা দম ছেড়ে দ্রুত এসে আইরাত কে সোজা জড়িয়ে ধরে। এতক্ষণে গিয়ে যেনো আব্রাহামের বুকে শান্তি পরলো। বেশ সময় আইরাত কে জড়িয়ে ধরে তার কোমড়ে হাত রেখে দেয়, আরেক হাত তার মাথার পেছনে চুলে এলিয়ে দিয়ে তার কপালে চুমু এঁকে দেয়। আইরাত মাথা তুলে তাকায়।

আইরাত;; ভয় পান?

আব্রাহাম;; তোমার জন্য, শুধু একমাত্র তোমার জন্য।

আইরাত;; ভয় টা যে এখন দ্বিগুণ হয়ে গেলো।

আব্রাহাম আবার আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম তো এতোক্ষন চিন্তার মাঝেই ডুবে ছিলো। আর তা তার চেহারাতেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু আইরাত তো শয়তানি হাসি দিচ্ছে। আব্রাহাম চোখ তুলে আইরাতের দিকে তাকালে দেখে সে হাসছে।

আব্রাহাম;; কি! হাসছো কেনো?

আইরাত;; হিহিহিহিহিহিহি।

আব্রাহাম;; আরে কি?

আব্রাহাম এবার নিজও হেসে দেয়।

আইরাত;; আরে কাহিনী আছে, অনেক বড়ো কাহিনী আছে।

আব্রাহাম;; কি?


ফ্ল্যাশব্যাক~~

আইরাত তো মুখে হাত রেখে সোজা দৌড়িয়েই যাচ্ছে। আইরাতের পেছন পেছন আবার অবনি দৌড়াচ্ছে। কোথাও না থেমে আইরাত সোজা তার রুমে গিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। গিয়েই বেসিং-এ গরগরিয়ে বমি করে দেয়। আইরাতের কাশি একদম নাকে মুখে হয়ে গেছে। অনেক জোরে জোরে কাশি উঠলে অবনি সবাই কে জোরে ডাক দেয়। আওয়াজ পেয়ে ইলা ছুটে যায়। বেশ কিছুক্ষন পর আইরাত কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে রুমে এসে বিছানার ওপর বসে। মূহুর্তেই নাক-মুখ সব লাল হয়ে গেছে। ইলা এসে আইরাতের পিঠে বুলিয়ে দিতে লাগে। অনামিকা পাশে বসে আছে। এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে যে কিছু উল্টা-পাল্টা খেয়েছে নাকি! যার ফলে ফুড পয়জন হয়ে গেছে। আইরাত মানা করে। আস্তে আস্তে দম নিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে কিন্তু তখনই আবার ভেতর থেকে সব উল্টে আসে। আবার ছুটে ওয়াসরুমে দৌড় লাগায়। আবার বমি। তারপর আইরাত এসে একটু স্বস্তি নিয়ে বসে। জোরে জোরে দম ছাড়ছে।

অনামিকা;; হ্যাঁ রে কি হয়েছে কি? এভাবে বমি করছিস। পরে তো শরীর খারাপ হয়ে যাবে। পেট টা তো ফাকা হয়ে গেলো। কিছু খাইয়ে দেই এনে?

আইরাত;; নাহ, ভালো লাগছে না আমার।

দিয়া;; এই নে এটা খা।

অবনি;; আচার?

দিয়া;; না মানে বমি করলো তো দু-দুবার, আচার টা খেলে একটু ভালো লাগবে।

আইরাত আচারের বয়াম নিয়ে বসে পরলো। কিন্তু কিছুতেই ভালো লাগছে না। দুদিন যাবত শুধু ভনভন করে মাথা ঘুরাচ্ছে আর আজ এভাবে বমি।

ইলা;; আচ্ছা শোন তোর না রিপোর্ট আসার কথা হস্পিটাল থেকে! এসেছে?

আইরাত;; আসার তো কথা।

ইলা;; ওহহ।

এভাবেই কয়েক ঘন্টা পার হয়। আইরাত কে হলরুমে সবার সাথে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ শরীর তার খারাপ। যদিও ইলা আর অনামিকা আইরাত কে আগে থেকেই সন্দেহের খাতায় রেখে দিয়েছে। কিছু তো একটা গরবর আছেই। ইলা স্যুপ বানিয়ে নিয়ে আইরাতের সামনে ধরে। আইরাত তো বহু তাল-বাহানা করছে খাবে না বলে। তখনই দরজা তে কলিং বেল এর শব্দ হয়। অনামিকা গিয়ে দরজা মেলে দাঁড়ায়। দেখে একজন এসেছে। সে হস্পিটাল থেকে।
মিসেস. আইরাত আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী এর জন্য রিপোর্ট এসেছে। অনামিকা তা নিয়ে নেয়। আর আইরাত এসে একটা সাইন করে দেয়। আইরাত রিপোর্ট টা হাতে নেয়। এক এক করে সবকিছু চেক কর‍তে লাগে।

কিন্তু রিপোর্ট দেখে তো আইরাতের পুরো আক্কেলগুড়ুম অবস্থা। মানে কি থেকে কি! সব যেনো মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আইরাতের মাথা পুরো ফাকা হয়ে গেছে। কিছু না বুঝেই টিমটিম করে সামনে তাকায়। অতঃপর চোখ দেয় আবার রিপোর্টের দিকে। আইরাত স্বপ্নেও ভাবে যে রিপোর্টে এই খবর আসবে। আইরাত কিছু বলে না দেখে অনামিকা বলে ওঠে…

অনামিকা;; কিরে কিছু বলিস না কেনো?

দিয়া;; কি এসেছে রিপোর্টে?

ইলা;; কিছু তো বল।

দিয়া আইরাতের হাত থেকে রিপোর্ট টা নিয়ে নেয় আর আইরাত ধুপ করে সোফার ওপরে বসে পরে। দিয়া কিছু সময় নিজেও আহাম্মক হয়ে রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে থেকে দেয় এক চিৎকার। ছুটে গিয়ে আইরাতের কাছে যায়। আর অনামিকা রিপোর্ট হায়ে নিয়ে দেখে “প্রেগন্যান্ট” লিখাটা স্পষ্ট।

দিয়া;; আইরুউউউউউ প্রেগন্যান্ট 🥳।

ইলা অবনি সবাই এবার বুঝতে পারে ব্যাপার টা। এক একজনের খুশির সীমা নেই। ইলার খুশি শেষ নেই। সে নাতির বাচ্চা-কাচ্চা পর্যন্ত দেখতে পারবে বলে। অর্থাৎ বড়ো দাদি। অনামিকা তো কেদেই দিয়েছে। অবনি আর দিয়া সোজা কথা নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে। কেউ ভাবে নি আজ এতো বড়ো একটা সারপ্রাইজ পাবে। এতো বড়ো একটা সুখবর পাবে সবাই। সবার খুশি আর বাধ মানছে না। তবে এতোকিছুর মাঝে, এতো মাতামাতির মাঝে আইরাতের কোন খেয়াল নেই। সে চুপটি মেরে বসে আছে। যেনো সে ভাবেও নি এমনটা।

অনামিকা;; আইরাত!

আইরাত;; মা মানে আম, আ আমি আমি প্রেগন্যান্ট। মানে আম আমার আ আমার বাচ্চা। আমার বাচ্চা।

আইরাতের চোখের পানি গড়গড়িয়ে পরছে। চোখের পানিতে তার বুকের দিকের কাপড় অর্ধেক ভিজে গেছে। কান্নার বেগ এতো টাই বেশি যে সে ঠিক ভাবে কথাই বলতে পারছে না। পানি চোখে টলমল করছে। আইরাত আর থাকতে না পেরে অনামিকা কে কেদে জড়িয়েই ধরে। এভাবেই সময় টুকু যায়। আইরাত তো এই মুহুর্তে এটাই ভেবে পাচ্ছে না যে সে আব্রাহাম কে কি করে জানাবে। কিভাবে তাকে বলা যায়। না জানি সব জানার পর আব্রাহামের রিয়েকশন কেমন হবে। সে কি বলবে। অবশেষে গিয়ে আইরাত প্ল্যান করে যে আব্রাহাম কে সারপ্রাইজ দিয়ে জানাবে। আর সবাই কে এই ব্যাপারে আব্রাহাম কে কিছু বলতে সম্পূর্ণ বারণ করে। তারপর গিয়ে আইরাত সবার হেল্প নিয়ে রুমটা ডেকোরেট করে। আর আব্রাহাম তো এখন অফিসে। তাকে কি করে বাসায় ডাকা যায়। তাই দিয়া কে দিয়ে আইরাত জোর করিয়েই তেমন ভাবে ঘাবড়িয়ে কথা বলিয়েছে। আর আব্রাহামও চট জলদি এসে পরেছে অফিস থেকে। বাড়ির মেইন গেইটে আব্রাহামের গাড়ি আসার শব্দ পেয়েই সবাই সবকিছু রেখে দ্রুত হলরুমে গালে হাত দিয়ে বসে। আর আব্রাহাম এসেই দেখে সবার এমন একটা অবস্থা। আর এখন সে আইরাতের রুমে।


বর্তমান~~

আইরাত আব্রাহাম কে বিছানাতে বসিয়ে দেয়। তারপর সে গিয়ে একটা মিডিয়াম সাইজের বক্স নিয়ে আসে। বক্স টাও অনেক সুন্দর করে র‍্যাপার দিয়ে মোড়ানো। লাইক এ গিফট বক্স। আইরাত সেটা এনে আব্রাহামের সামনে ধরে।

আইরাত;; হুমমমম।

আব্রাহাম;; কি এটা?

আইরাত;; খুলে তো দেখুন।

আব্রাহাম আইরাতের কথা মতো বক্স টা আস্তে আস্তে খুলতে লাগে। কিন্তু বক্স যেনো আর শেষই হচ্ছে না। বক্সের ভেতরে আরেক বক্স, বক্সের ভেতরে আরেক বক্স। আব্রাহাম একটা সময় হেসে দেয়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল, তুমি কি গিফট করেছো আমায়! শুধু এই বক্সই?

আইরাত;; আহা, কিছু না কিছু তো একটা গিফট করেছিই। দেখুন খুলে।

আব্রাহাম আবার বক্স খুলতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। একটা সময় একদম শেষের বক্সে এসে পরে। আর সেই বক্স টা খুলে আব্রাহাম ভেতরে দেখে বেবি পিংক আর সাদা কালারের কম্বিনেশনে এক জোড়া জুতো রয়েছে। একদম ছোট বাচ্চার জুতো। কিযে কিউট জুতো গুলো। আব্রাহাম কপাল কুচকে তাকিয়ে থাকে। একবার আইরাতের দিকে আরেকবার হাতে থাকা জুতো গুলোর দিকে তাকায়। আব্রাহাম যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তার দুনিয়াই পুরো উল্টে গেছে। বুক টা কেমন ছাত করে ওঠে। শুকনো কিছু ঢোক গিলে আবার আইরাতের দিকে তাকায়। আব্রাহাম যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।

আব্রাহাম;; আ আ আই.. আইরাত!

আইরাত;; হুম।

আব্রাহাম;; বে ব বেবি!

আইরাত;; হুম হুম।

আব্রাহাম;; You mean we, we are gonna be parents!?

আইরাত;; Yeah…

আব্রাহাম এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখতে পারে না। জোরে একটা দম নিয়ে সোজা উঠে দাঁড়ায়।

আব্রাহাম;; আইরাত বেবিগার্ল মানে মানে তুম তুমি প্রেগন্যান্ট? আম আই ব ব বাবা হ হবো। মানে আল্লাহ কোথায় তুমি! মানে সত্যি? আমি পাগল হয়ে যাবো আইরাত আমি সত্যি পাগল হয়ে যাবো।

আব্রাহাম সোজা কথা চিল্লাচ্ছে খুশিতে। হাতে ছোট্ট জুতো গুলো নিয়ে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে এগুলো প্রলাপ বকছে। আব্রাহামের চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে। ওপরে রুমে আব্রাহামের চিল্লানোর আওয়াজ শুনে সবাই ওপরে যায়। গিয়ে দেখে আব্রাহামের সত্যিই খুশিতে পাগল হওয়ার উপক্রম। সে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে রাখে। আইরাত অনুভব করলো তার কাধের অংশ টুকু ভেজা ভেজা। তার মানে আব্রাহাম ইমোশনাল হয়ে গেছে।

আব্রাহাম;; আমি ভাবি নি আমাকে এতো সুন্দর জিনিস টা উপহার দিবে তুমি। আমি সত্যি ভাবি নি জানপাখি।

আইরাত;; আপনি খুশি তো?

আব্রাহাম;; বলার বাইরে। এই দিনটা আমার জীবনে এভাবে আসবে আমি কল্পনাও করি নি। কিন্তু তুমি?

আইরাত;; আমি কি?

আব্রাহাম;; তোমার তো কষ্ট হবে! তুমি সামলাতে পারবে না। বেবিগার্ল তুমি খুব ইম্পর্ট্যান্ট আমার কাছে। তোমার তো কষ্ট হবে।

আইরাত মাথা তুলে তাকায়।

আইরাত;; আব্রাহাম! আমার চাই এই বাচ্চা।

আব্রাহাম নিজের মাথার সাথে তার মাথা ঠেকিয়ে দেয়। একটা হাত নিয়ে আইরাতের পেটের ওপর রেখে দেয়।

আইরাত;; আপনি বাবাই হবেন আব্রাহাম।

আব্রাহাম;; আর তুমি মাম্মাম।

আইরাত;; ইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই।

আব্রাহাম;; এখন তো আমাকে দুটো বাচ্চা সামলাতে হবে।

আইরাত;; মানে?

আব্রাহাম;; এইযে একটা তুমি আরেকজন আসছে।

আইরাত হেসে দেয়।

আব্রাহাম;; Wait, what?

আইরাত;; What?

আব্রাহাম;; আচ্ছা দিয়া কোথায়?

আইরাত;; দিয়া তো…..

দিয়া;; জিজু…

আব্রাহাম;; আচ্ছা জ্বি! শালিকা তো আপনি আমাকে মিথ্যে বলে এখানে নিয়ে এসেছেন তাই না!

দিয়া;; ভাইয়া আমার কোন দোষ নেই। সবই আইরাতের প্ল্যান ছিলো।

আইরাত;; হিহিহি। কি করবো সারপ্রাইজ যে দেওয়ার ছিলো।

আব্রাহাম;; এতো বড়ো সারপ্রাইজ দিবে জীবনে ভাবি নি। পুরো ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেয়েছি আমি।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; কিন্তু তুমি…

আইরাত;; আ”ম সরি। আসলে আমি হস্পিটালে গিয়েছিলাম সেখানে চেকাপ করাই। আপনাকে জানালে তো অযথা হাইপার হয়ে যেতেন তাই আর বলি নি। আর আজ রিপোর্ট এসেছিলো। বাসায় দিয়ে গেছে। এখন সিওর হলাম।

আব্রাহাম আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। বাড়ির সবাই কে জানানো হয় এই মহা খুশির সংবাদ। সবাই বেশ খুশি। শুরু হয় আইরাতের কেয়ারিং। কখন কি লাগছে না লাগছে সব খেয়াল রাখে। তার কোন কিছুর অভাব নেই। আব্রাহাম এটা ওটা হাজারো অযুহাত দিয়ে অফিসে যায় না। আর গেলেও কয়েক ঘন্টা পরই এসে পরে। আর এটাই তো স্বাভাবিক তাই না! একজন গর্ভবতী নারী তার এই সময়ে নিজের স্বামী কেই তো সবসময় নিজের পাশে চায়। নিজের কাছে চায়। শুধু দেড় মাস হয়েছে আইরাতের প্রেগ্ন্যাসির সময় এখনই কতো কিছু। একটা মুহুর্তের জন্যও আব্রাহাম তার আইরাত কে একা ছাড়ে না।





চলবে~~



চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here