#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_১৩
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি
গানের মাঝে ইয়াশ চেয়ার থেকে উঠে এল মাইক নিয়ে। এগিয়ে গেল পদ্মের দিকে। ও কাছে যাওয়ার আগেই পদ্ম গান গেয়ে স্টেজ থেকে নেমে গেল। মাইক দিয়ে দিল আদনানের হাতে। ইয়াশও গান শেষ করে নেমে গেল। চারদিক হাততালির শব্দে মুখরিত হয়ে গেল।
আদনান স্টেজে উঠে জিজ্ঞেস করল, গান কেমন লাগল?
সবাই- (চিৎকার করে) ভাল।
আদনান- আর শোনা লাগবে?
সবাই- হ্যাঁ…
আদনান- শুনব। তবে তার আগে আমার একটা ছোট এনাউন্স করার আছে। সেটার কি সুযোগ দেয়া যাবে?
সবাই- হ্যাঁ…
আদনান নিলাকে হাত ধরে স্টেজে নিয়ে এল। দুজনে ম্যাচিং করে পোশাক পরেছে। আদনান সাদা শার্টের উপর আকাশী রঙের কোর্ট, তারসাথে আকাশী প্যান্ট। নিলাও সাদা পাথরের হালকা কাজ করা আকাশী শাড়ি। আদনান নিলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, সবাই জানে আজকে আমার জন্মদিন। কিন্তু আজকে শুধু আমার জন্মদিন নয়। আরও একটা বিশেষ দিন। আজকের দিনে আমার সাথে নিলার পরিচয় হয়েছিল। পরের বছর এই একই দিনে আমি ওকে প্রপোজ করেছিলাম। আর আজ আমাদের ভালোবাসার তিনটা বছর পূর্ন হচ্ছে। আর আজকেই আমার আর নিলার এনগেজমেন্ট হবে।
শুনেই সবাই উল্লাসে চিৎকার করে উঠল। নিলা লজ্জায় হেসে আদনানের বুকে মুখ লুকাল। রাফি ইয়াশের পেটে একটা গুঁতা দিয়ে বলল, ব্যাটা তলে তলে এত প্ল্যান করল আর আমরা কিছুই জানলাম না।
ইয়াশ- তাই তো দেখছি।
রাফি- তুইও কি একই দলে নাম লেখাবি নাকি?
ইয়াশ- মানে?
রাফি ওর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, মনিকা আর তোর মাঝেও এমন কোনো সিক্রেট আছে নাকি?
ইয়াশ- তুই থামবি? হুদাই আলতু ফালতু কথা বলিস।
আদনানের ছোট বোন একটা ছোট লাল মখমলের বালিশে করে দুটো কাপল রিং নিয়ে এল। আদনান একজনকে মাইক দিয়ে একটা আংটি নিল। তারপর মাটিতে এক হাঁটু গেড়ে বসে আংটিটা নিলার দিকে বাড়িয়ে বলল, উইল ইউ ম্যারি মি, নিলা?
নিলা লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলল, আই উইল।
শুনেই সবাই হাততালি দিতে লাগল। ওদের বন্ধুরা কেউ কেউ চিৎকার করে তাদের আনন্দ প্রকাশ করতে লাগল। এর মাঝে আদনান নিলাকে আংটি পরিয়ে দিল। ইয়াশ কেন যেন পদ্মের দিকে তাকাল। ও দুই হাত দিয়ে গ্রাউন আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো দুইজনের মাঝে সীমাবদ্ধ। দেখতে দেখতে নিলাও আদনানকে আংটি পরিয়ে দিল। রাফি মাইক নিয়ে মঞ্চে উঠে বলল, আমরা তিনজন বেস্টফ্রেন্ডের একজনও জানলাম না এত বড় ব্যাপারটা। সবাই বলেন, এটা কি ঠিক হল?
সবাই- না…
রাফি- তাহলে কি ওদের শাস্তি প্রাপ্য নয়?
সবাই- হ্যাঁ।
রাফি- কিরে, দিব শাস্তি?
আদনান আর নিলা হেসে একে অপরের দিকে তাকাল। দুইজনই রাফিকে ভালো করে চেনে। ফাজিলের হাড্ডি। তবু দুজনেই রাজি হয়ে গেল। অনুমতি পেয়ে রাফি বলল, যেহেতু অনুমতি পাওয়া গেল। তবে শাস্তিটাও বলে দেই। যেহেতু আমাদের জানায়নি তাই শাস্তি হিসেবে এখন এক্সচেঞ্জ কাপল ডান্স হবে। কি বল সবাই?
সবাই- ইয়েস……
রাফি নিলার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, মে আই? নিলা হেসে রাফির হাত ধরল। মিউজিক শুরু হয়ে গেল। আদনান গিয়ে মনিকাকে বলল, ক্যান আই, মনিকা?
পদ্ম- কিন্তু ইয়াশ……
মনিকা ইয়াশকে নিয়ে উঠতে চাইল। কিন্তু ইয়াশের একটা ফোন আসায় ও একটু বাইরে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে আদনানের সাথে মঞ্চে উঠল।
এমন সময় একজন পদ্মের দিকে এগিয়ে বলল, ক্যান উই মিস পদ্ম?
পদ্ম- কিন্তু আমি তো নাচতে পারি না মিস্টার…
– আকাশ বলে ডাকতে পারো। আমি শিখিয়ে দেবো।
পদ্ম কয়েক বার আশেপাশে তাকাল। তারপর আকাশের হাত ধরে উঠে এল মঞ্চে।
.
.
.
.
ইয়াশ কথা শেষ করে ফিরে এসে দেখল পদ্ম আকাশের সাথে নাচছে। ইয়াশ আকাশকে ভালো করেই চেনে। মনিকার ফুফাতো ভাই। মনিকার মতোই জেদি এই আকাশ। একবার যা চায় তা যেকোনো মূল্যে কেড়ে নেয়। ওর পদ্মের দিকে তাকানো দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও কি চায়। এমনিতেই ওকে পছন্দ করে না ইয়াশ। তার উপর পদ্মের সাথে দেখে ওর মেজাজ গরম হয়ে গেল। কিন্তু কিছু বলল না।
– হাই মিস্টার ইয়াশ।
ইয়াশ- কে?
– রাহা। আকাশের বোন।
ইয়াশ- ও, হাই।
রাহা- ক্যান উই?
ইয়াশ রাজি হয়ে গেল। রাহাকে নিয়ে মঞ্চে উঠতেই ওদের দিকে পদ্মের চোখ পড়ল। খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে নাচছে দুইজন। এমনিতেও আকাশের তাকানোর ভঙ্গি কেমন খারাপ লাগছে, তার উপর ইয়াশকে রাহার সাথে দেখে মনটা কেন যেন আরও খারাপ হয়ে গেল।
.
.
.
.
কিছুক্ষণ নাচার পর পার্টনার এক্সচেন্জ হল। আদনানের সাথে নিলার জুটি মিলে গেল। রাহা চলে এল রাফির কাছে। আকাশের হাত থেকে ছাড়া পেয়েই মঞ্চ থেকে নেমে যাচ্ছিল পদ্ম। তার আগেই ওর হাত ধরে ইয়াশ নিজের কাছে টেনে আনল। ইয়াশ খুব শক্ত করে একহাত দিয়ে পদ্মের কোমর চেপে ধরে আছে। অপর হাতে পদ্মের বাম হাত। পদ্ম নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ইয়াশ আরো কাছে টেনে নিয়ে শক্ত করে ধরে রইল ওকে। পদ্ম শেষে থাকতে না পেরে বলল, কি হচ্ছে? এত শক্ত করে ধরে আছেন কেন?
ইয়াশ- কেন? আমাকে ভালো লাগছে না? আমার থেকে বুঝি ঐ আকাশকে ভালো লাগছিল?
পদ্ম- ঠিক তা নয়। আসলে এত কাছে …
পদ্মের কথা শেষ হওয়ার আগেই ইয়াশ ওকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলল। পদ্ম চমকে উঠল ইয়াশের এমন আচরণে। পদ্ম চোখ বড় বড় করে ইয়াশের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। ইয়াশের প্রত্যেকটা নিঃশ্বাস পদ্মের মুখ পড়তে লাগল। পদ্ম বলল, কি হয়েছে আপনার?
ইয়াশ- কিছু হয়নি। এরপর থেকে আর কোনো ছেলেকে যেন তোমার আশেপাশে না দেখি।
পদ্ম- কেন?
ইয়াশ- সেটা তোমার না জানলেও চলবে।
পদ্ম আর কিছু বলল না। মুখ নিচে নামিয়ে ফেলল। ইয়াশের বুকে মাথা রেখে নাচতে লাগল ধীরে ধীরে। ইয়াশের আচরণ আজকে অদ্ভুত লাগছে ওর।
এদিকে মনিকা আর আকাশ দুজন নাচছে তবে দুজনেরই নজর ইয়াশ আর পদ্মের দিকে। এক্সচেঞ্জের সময় চলে এল। কিন্তু ইয়াশ পদ্মকে ছাড়ল না। নিজের বুকে আঁকড়ে ধরে রাখল। পদ্মের সেদিকে খেয়াল নেই। ও চোখ বন্ধ করে এক মনে নাচতে লাগল ইয়াশের সাথে। ব্যাপারটা মনিকার মোটেও পছন্দ হল না। তাই সে মিউজিক বন্ধের ইশারা করল। সাথে সাথে মিউজিক বন্ধ হয়ে গেল। পদ্মও ইয়শের কাছ থেকে সরে এল। নাচ শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিল।
.
.
.
.
আদনান ছাড়া মঞ্চ থেকে নেমে এল সবাই। আকাশ তখনও পদ্মের দিকে কেমন করে তাকিয়ে রইল। ব্যাপারটা মনিকা খেয়াল করে বলল, কি রে, পছন্দ হয়েছে মনে হচ্ছে।
আকাশ- হুম। বেস্ট ওয়ান।
মনিকা- সুযোগ করে দেব নাকি?
আকাশ- পারবি?
মনিকা উত্তরে একটু হাসল। মনে মনে বলল, খুব পারব। আমার ইয়াশের দিকে যে ওর নজর পড়েছে।
.
.
.
.
মনিকা পদ্মের কাছে গিয়ে পেছন থেকে আস্তে করে গ্রাউনের চেইন খুলে দিল। তারপর পদ্মকে ডেকে বলল, পদ্ম, তোমার গ্রাউনের চেইন খুলে গেছে। পদ্ম ধরে দেখল সত্যিই চেইন খোলা। ও মনিকাকে বলল চেইনটা আটকে দিতে। মনিকা মিথ্যা চেষ্টা করে বলল, চেইন লাগাতে পারছি না, কোথাও আটকে গেছে। উপরে চলো। লাগিয়ে দেই। পদ্ম মনিকার কথায় রাজি হয়ে গেল। চলে গেল দোতলার একটা রুমে। সেখানে গিয়ে পদ্ম ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখল চেইনটা অনেকটাই খুলে গেছে। ও একা টান দিতেই গ্রাউনের চেইন উপরে চলে এল। মনিকা রুমে ঢুকতেই পদ্ম বলল, আমার হয়ে গেছে। চলো নিচে যাই।
মনিকা- তুমি একটু এখানে দাঁড়াও। আমার একটা জিনিস নিতে হবে। তোমার কাজলটা একটু ছড়িয়ে গেছে। তুমি ঠিক করো। আমি আসছি।
পদ্ম- আচ্ছা।
পদ্ম ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে ফিরে কাজলটা ঠিক করে নিল। হঠাৎ দরজা আটকানোর শব্দে পদ্ম বলল, আমার হয়ে গেছে। দরজা আটকাচ্ছো কেন মনিকা? তারপর পেছন ফিরে চমকে উঠল। কাঁপা গলায় বলল, আকাশ!!!
চলবে……