পদ্মপাতার জল পর্ব ২০

#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_২০
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি

ইয়াশ- বেকুব, ও চাইল আর তুই দিয়ে দিলি? জানিস না বিয়েতে বরের জুতা চুরি করে? এতো রীতিমতো ডাকাতি করেছে।

আদনান কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, এখন কি হবে ইয়াশ। বিয়ের টেনশানে একেবারেই খেয়াল ছিল না। ভুলেই গিয়েছিলাম পদ্ম যে এখন মেয়ে পক্ষ। এখন কি করব ভাই? পুরো বিয়ে কি খালি পায়ে করব?

ইয়াশ- দাঁড়া, দেখছি। রাফিটা কই?

আদনান- কে জানে। ভীড়ের মধ্যে কোনদিকে চলে গেছে।

ইয়াশ- তোরা একটাও কাজের না।
.
.
.
.
বরপক্ষকে খেতে ডাকা হল। বেচারা আদনান খালি পায়ের কারনে যেতে পারছে না। এদিকে ইয়াশও পদ্মকে খুঁজে পাচ্ছে না যে জুতাগুলো ফেরত নেবে। এসে থেকে একবারও দেখা হয়নি। কোথায় লুকিয়ে আছে তাও জানে না। শেষে প্লেটে খাবার সাজিয়ে স্টেজে নিয়ে গেল ইয়াশ। সেখানেই খেয়ে নিল আদনান। খাবার শেষে মুখ ভার করে বসে রইল। টেবিল পরিষ্কার শেষে আদনান ইয়াশকে বলল, কিরে, ভাই? এভাবে খালি পায়ে আর কতক্ষণ?

ইয়াশ- আমি কি করব? যে নিয়েছে তার দেখা নেই। কেউ জানেও না কোথায় লুকিয়ে আছে।

ইরিনা- কেমন আছিস ভাই?

মেয়ে বাহিনী হাজির। সবাই আছে। শুধু পদ্ম ছাড়া। ইয়াশ ইতিউতি করে খুঁজেও পদ্মকে দেখতে পেল না।

আদনান- ইরিনা আপু, প্লিজ জুতাজোড়া দিয়ে দাও।

ইরিনা- দিব, দিব। আগে আমাদের দাবি পূরন কর, তারপর।

আদনান- কি দাবি?

ইরিনা একটা বাটি এগিয়ে দিল আদনানের দিকে। সেখানে কতগুলো কাগজ ভাঁজ করে রাখা। ইরিনা বলল, এখান থেকে একটা কাগজ তুলে নাও।

আদনান- কি আছে এগুলোয়?

ইরিনা- নিলেই দেখতে পাবি।

আদনান একটা কাগজ তুলে নিল। ভাঁজ খুলতেই বুঝে গেল ব্যাপারটা। সে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল, এত টাকা! এখন কি করে পাবো?

ইরিনা- সেটা আমরা কি করে বলব? টাকা দিয়ে জুতা ফেরত নেবে। না হলে এভাবেই বসে থাকো। জুতা আর এই জন্মে পাবে না।

ইয়াশ- কত টাকা দেখি।

ইয়াশ কাগজটা আদনানের হাত থেকে নিয়ে বলল, এত টাকা কেন? আমরা কি এত টাকা নিয়ে ঘুরছি নাকি?

ইনু- এসব কথা তো শুনছি না ভাইয়া। তোমাদের কথা ভেবেই গেটে ধরিনি। এখনও যদি না দাও তো জুতা পাবে না।
ইয়াশ আদনানকে জিজ্ঞেস করল, তোর কাছে কত আছে?

আদনান- পনের এর মতো।

ইয়াশ- আমার কাছে আট আছে। বাকি সাত পাবো কই?

এমন সময় রাফি স্টেজে উঠে বলল, হাই গাইজ।

ইয়াশ- গাইজ টাইজ পরে বলিস, এতক্ষণ কোথায় ছিলি?

রাফি- একটু কাজ ছিল। আমি…
ইয়াশ- থাক আর ঐ কাহিনী বলা লাগবে না। আগে বল তোর কাছে এই মুহূর্তে কত টাকা আছে?

রাফি- দশ এর মতো।

ইয়াশ- এই তো হয়ে গেল। এখন আট হাজার দে।

রাফি- কেন?

ইয়াশ- আরে পরে বলছি। আগে দে।

রাফি আট হাজার টাকা বের করে ইয়াশকে দিল। ইয়াশ তার সাত হাজার আর আদনানের পনের হাজার টাকা রাফির টাকার সাথে একসাথে করে আদনানের হাতে দিল।

আদনান- এই নাও তোমাদের ত্রিশ হাজার টাকা। এবার জুতা দাও।

ইরিনা সবার দিকে তাকিয়ে হেসে নিয়ে বলল, বউয়ের রুমে আছে, খুঁজে নাও। বলেই মেয়ে বাহিনী স্টেজ থেকে নেমে গেল। তিন বন্ধু উত্তর শুনে বোকার মতো বসে রইল।

রাফি- ওরা আদনানের জুতা নিয়ে গেছে!

ইয়াশ- হুম।

আদনান- এবার?

ইয়াশ- তুই চিন্তা করিস না। আমি আর রাফি খুঁজে বের করছি। তুই ওয়েট কর।
.
.
.
.
ইয়াশ রাফিকে নিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেল। নিলার রুমে গিয়ে দেখল নিলা ইয়া বড়ো একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে বিছানার কিনারায়। রুমে আর কেউ নেই। ইয়াশ এসে বলল, নিলা, জানিস আদনানের জুতা কোথায়?

নিলা উপর নিচ মাথা নাড়ালো। রাফি বলল, কোথায় জুতা বল না। নিলা দুইপাশে মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিল যে ও বলবে না। ইয়াশ হতাশ হয়ে বলল, তুইও ওদের দলে যোগ দিলি।

দুই বন্ধু খোঁজার শুরু করল। পুরো রুম তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফেলল কিন্তু কোথাও জুতা জোড়া দেখতে পেল না। আবার খুঁজল। এভাবে তিন চারবার খুঁজেও পেল না। রাফি ক্লান্ত হয়ে রুমের ছোট সোফায় বসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, আমি আর পারব না।

ইয়াশ- বুঝেছি। চল যাই।

রাফি আর ইয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কনে গিয়ে দরজাটা মেরে দিয়ে ঘোমটা তুলে ফেলল।

পদ্ম- বাপরে বাপ, কি ভারি এই কাপড়। উফ্। হুহ্, কালকে আমাকে কিস করেছ না। এবার খুঁজে বের করো জুতা।

– কিরে নিলা, কি বলছিস বিড়বিড় করে?

পদ্ম দ্রুত ঘোমটা দিয়ে পিছন ফিরে দেখল ইয়াশ দাঁড়িয়ে আছে। পদ্ম মনে মনে বলল, এ আবার কোথা থেকে বের হল? আমি তো ওরা চলে যাওয়ার পর দরজা মেরে দিয়েছিলাম।

ইয়াশ ওর দিকে এগিয়ে এসে ওর খুব কাছে দাঁড়িয়ে বলল, কিরে, কথা বলছিস না কেন? বিয়ের ভয়ে বোবা হয়ে গেলি নাকি!

পদ্ম কি করবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ ইয়াশ ওর ঘোমটার ভেতর ঢুকে গেল। পদ্ম চমকে চোখ বড় বড় করে ইয়াশের দিকে তাকাল। ইয়াশ মুচকি হেসে বলল, কি ভেবেছিলে? আমি তোমাকে চিনতে পারব না? সব একই করতে পারলেও নাভির পাশের তিলটা লুকাতে ভুলে গেছো।

পদ্ম তাকিয়ে দেখল সত্যি তাই। সাথে সাথে ওর লেহেঙ্গার ওড়নাটা টেনে পেট ডেকে নিল। নিলার মতো সাজতে গিয়ে এইভাবে ধরা খাবে আন্দাজ করেনি। কখন যে ওড়নাটা পেট থেকে সরে গেছে তারও খেয়াল নেই। পদ্ম উপরের দিকে তাকাতেই ইয়াশের নিঃশ্বাস ওর মুখে পড়তে লাগল। এত কাছে দাঁড়ানোয় পদ্ম সরে যেতে গিয়ে একটা হোঁচট খেল। সাথে সাথে ইয়াশ ওর কোমর জড়িয়ে ধরল। ঘোমটা সরিয়ে নিয়ে বলল, ছেলেদের জুতা পরলে তো হোঁচট খাবেই। পদ্ম অবাক হয়ে ইয়াশের দিকে তাকাতেই ও আবার বলল, আদনানের জুতা তো আর তোমার পায়ের মাপে বানায়নি। তাহলে দিয়ে দাও।

পদ্ম- কি করে বুঝলেন?

ইয়াশ- যে জন্য আমি তোমার থেকে চার বছরের বড়ো।

পদ্ম- হুহ্। দেব না।

ইয়াশ- ভেবে বলছো?

পদ্ম- হ্যাঁ।

ইয়াশ- না দিলে কিন্তু ……

পদ্ম- কি করবেন?

ইয়াশ- কাল যা করেছি।

পদ্ম- কাল কি করেছেন? হুহ্। যাই করুন, জুতা দেবো না।

ইয়াশ- তাই?

ইয়াশ টান দিয়ে পদ্মকে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলল। শক্ত করে কোমর ধরতেই পদ্ম চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে উঠে বলল, দিচ্ছি জুতা, ছাড়ুন।

ইয়াশ- ওমা! এত সহজ নাকি? তুমিই তো বললে……

পদ্ম জুতা খুলে দিয়ে বলল, জুতা নিয়ে যান। ছাড়ুন আমাকে।

ইয়াশ হাসি মুখে ওকে ছেড়ে দিল। পদ্ম নিজের জুতা নিয়ে দৌঁড়ে পালাতে গেলে ইয়াশ ওর হাত ধরে বলল, তোমাকে কনের সাজে খুব সুন্দর লাগছে।

পদ্ম ইয়াশের দিকে তাকাল। মুখ লজ্জায় লাল হয়ে আছে। তার মাঝে একটু রাগিভাব নিয়ে বলল, ব্ল্যাকমেইলার। তারপর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কোনোমতে রুম ছেড়ে পালালো।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here