#পদ্ম_ফুলের_অভিমান (পর্ব 4)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
ফুপির সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলতেই পেছনে কারো আসার শব্দ পেলাম। ঘুরে দেখি অভ্র ভাইয়া। ফোন কেটে দিয়ে সামনে তাকালাম।কিছু বলতে যাবো তার আগেই,
উনি সোজা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বলতে শুরু করলো,
আটকাতে চেয়েও আটকালাম না। কারন কথাগুলো শুনতে হবে,আমার দোষটা কি ছিলো সেটা অন্তত আমার জানা প্রয়োজন। তাই চুপচাপ ওনার কথা শুনতে লাগলাম।
দেখ পদ্ম তোকে আমার অনেক কথা বলার আছে। আমি জানি আমি দোষ করেছি,তাই আজ নিজে জ্বলে পূড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি। আমি সত্যি চাই নি এমনটা হোক। আমি তোকে সত্যি ভালোবেসেছিলাম। এটা ঠিক যে আমি অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলতাম। কিন্তু নিজে থেকে না। মানে মেয়েরা আমাকে দেখে ইমপ্রেস হয়ে যেতো,নিজে থেকেই আমার সাথে কথা বলতে চাইতো। ফেসবুকে,ফোনে মেয়েরাই আমাকে কল করতো,ম্যাসেস দিতো তাই আমি এমনি মজা করার জন্য কথা বলতাম।
কথাগুলো চোখঁ বন্ধ করে হজম করে নিলাম। এই মানোষটাকে ভালোবেসেছি আমি।ছিহ, এখন তো নিজের প্রতি ঘে*ন্না হচ্ছে আমার। এতো নিচু মন*মা*নসিকতা সম্পন্ন একটা মানুষ। কতোটা নিচু মনের হলে এভাবে একসাথে একাধিক মেয়েদের সাথে কথা বলে শুধু মাত্র মজা নেওয়ার জন্য।
উনি আবারো বলতে লাগলেন,
পদ্ম আমি ওদের অনেককেই বলেছিলাম যে আমি রিলেশন করি,কিন্তু ওরা আমার কথা গায়ে মাখতো না। তাই আমিও আর জোর করতাম না।কারন মেয়েরা যদি সুযোগ দেয়,আমার হাতছাড়া করার কি দরকার।তাই ওরা যেভাবে কথা বলতো আমিও ওদের সাথে সেভাবেই কথা বলতাম।
একের পর এক কথাগুলো শুনে আমার কান লাল হয়ে আসছে,কি বলতেছে এই মানুষটা,মেয়েদের সাথে এভাবে কথা বলেছে। বিবেক বলতে কি কিছুই ছিলো না।আমার কথা একবারো মনে হয় নি। এসব মনে মনেই ভাবলাম। অন্যদিকে ঘুরে চোখেঁর পানিটুকু মুছে নিলাম,এনার সামনে নিজেকে দূর্বল প্রকাশ করা যাবে না।
উনি আবারো বললেন, হটাৎ একদিন শুপ্তি নামের এক আইডি থেকে ম্যাসেস আসে,
শুপ্তির কথা উঠতেই পুরো মনোযোগ কথার দিকে দিলাম। যে দেখি এই মেয়ের মাঝে কি আছে যা আমার মধ্যে নেই। কেনো আমাকে ছেড়ে এই মেয়েকে বউ করলো।
সবার মতো শুপ্তি ও আমাকে ম্যাসেস দিতো,অন্য কারো সাথে কথা না হলেও শুপ্তির সাথে কথা হতো। আসতে আসতে এমন হলো যে শুপ্তির সাথে কথা না বললে ভালো লাগতো না।শুপ্তির বাবা মা অনেক বড়লোক ছিলো,শুপ্তি আমাকে প্রায় টাকা দিতো,গিফ্ট করতো, যেখানে আমি ছেলে হয়ে ওকে কিছু দেই নি,ও মেয়ে হয়ে আমাকে দিতো।আমি যে চাকরির এপ্লাই করছিলাম সেটাতে শুপ্তির বাবাই আমাকে সাহায্য করেছে। শুপ্তি কথা বলে দিয়েছিলো ওর বাবার সাথে। টাকা লেগেছিলো সেটাও শুপ্তি দিয়ে দেয় আমার কথা বলে। তারপর থেকে শুপ্তির ওপর আরো মন গলে গেলো। দিন রাতে প্রায় দশ ঘন্টা ওর সাথে কথা হতো। তারপর আমাদের দেখা করতে ইচ্ছে করলো,
তারমানে আপনি,,
না না আমি আগে বলি নি,শুপ্তি এমন ধরনের কথা বলতো আমার মনে হতো ও চায় দেখা করতে,আমি একদিন সাহস করে বলতেই রাজী হয়ে গেলো,আমার আর কি করার, কিন্তু আমাদের বাড়ি থেকে ওর বাড়ি অনেক দূরে এজন্য দেখা করার সুযোগ পাচ্ছিলাম না।
ওকে বলি কোনো হোটেল এ দুদিন থাকতে পারবে কি না। আমার এক কথাতেই ও রাজি হয়ে যায় । কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন যেনো লাগে,যে মেয়ে অন্য একটা ছেলের সাথে একা হোটেলে দুদিন থাকবে এ কেমন মেয়ে।তারপরো কিছু মনে করলাম না। যে ভালোবাসে আর আমাকে বিশ্বাস করে এজন্যই হয়তো দেখা করতে আপত্তি করলো না।
দেখা করার আগেরদিন শুপ্তি আমাকে ফোন করে বলে ওর বান্ধবীর বাস নাকি ফাঁকা আছে,হোটেলে থাকার চেয়ে সেখানে থাকাই সেভ।আমিও হ্যাঁ বলে দেই, না বলার কারন ছিলো না,যেখানে মেয়েটার সমস্যা নেই সেখানে আমার কি সমস্যা হবে।
বাড়ি থেকে চাকরির কথা বলে আমি শুপ্তির বান্ধবীর বাসায় যাই।প্রথমদিন থাকার পর শুপ্তিকে আমার একদম ভালো মেয়ে মনে হয় নি,একদম মন উঠে গেছে আমার। ভেবেছি আমি আর কখনোই যোগাযোগ করবো না এর সাথে।তাই আমি সেদিন চলে আসতে চাই কিন্তু শুপ্তি আসতে দেয় নি।আমিও ভাবলাম বাসা থেকে তো জব এর কথা বলেই বের হইছি আজ আবার ফেরত গেলে অনেক প্রশ্ন করবে তাই আজকের রাতটা থেকেই যাই।
এই বলে কিছুক্ষণ থামলেন,,
আমার চোখঁ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরছে,বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমি এতোটা বোঁ*কা ছিলাম। এসব কখনো ভেবেও দেখি নি আমি, যে আমার অজান্তেই এতোকিছু হয়ে গেছে,আর আমি পাগলের মতো খোঁজ নিয়ে গেছি। প্রথম তিনমাস তো কথা না বলতে পারলেও শান্তনা দিয়েছিলাম নিজেকে যে আমার অভ্র আমার আছে। আমার জন্যই চাকরি করতে গেছে। ফিরে আসলেই একদম আমার হয়ে যাবে। কিন্তু কে জানতো এই সুন্দর মানুষটার মন এতো কু*ৎ*সি*ত। টাকা দেখে সবকিছু ভূলে গেলো।
আর শুপ্তি ও মেয়েটাই বা কেমন,জানতোই যে ছেলেটা রিলেশক করে তারপরো কিভাবে একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ালো। আর বিয়ের আগেই একসাথে এক ঘরে , ছিহ।
সেই রাতটাই ছিলো আমার জীবনের অভি*সপ্ত একটা রাত। আমি আর শুপ্তি বাহিরে থেকে এসে মাত্র ঘরে ঢুকেছি এর মধ্যে শুপ্তির বাবা মা,আরো কয়েকজন সহ কাজী নিয়ে এসেছে। আমি যেনো হতবাক হয়ে গেছি। আগে জানলে কিছুতেই বিয়ে করতাম না আমি ওকে,আর নাতো ওর বান্ধবীর বাড়িতে আসতাম। সেদিনি আমাদের বিয়ে হয়ে যায়। তারপর আমি চাকরিতে চলে যাই। এই তিনবছরে একবারো বাড়িতে আসি নি আমি। কারন আমি প্রকাশ করতে চাই নি ওসব,শুপ্তিদের বাড়িতেও প্রথম দিকে আসতে চাই নি,কিন্তু ওর বাবা চাকরি চলে যাওয়ার ভয় দেখায়।তাই বাদ্ধ হয়ে আসতে হয়েছে। আমার বাবা মা কে অনেকবার ডেকেছে কিন্তু ভয়ে কিছু বলতে পারি নি। এখন বাচ্চা পেটে আসার কারনে আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয় নি। আর এখন আমিও চাই নি লুকিয়ে রাখতে। যা হবার হয়ে গেছে।আমি না চাইলেও শুপ্তিকে নিয়েই আমার সারাজীবন কাটাতে হবে। আমি দোষ করেছি আর তার শা&স্তি ও পাচ্ছি।
তাই আমি চাই তুই ভালো থাক,ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নে।
আমার ভেতরটা ফেঁটে যাচ্ছে,আর এই মানুষটা বলছে ভালো থাকতে। অন্য কাউকে বিয়ে করে নিতে।বাহ কি ভালোবাসা। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বে*হায়া*র মতো জিজ্ঞেস করলাম,
আমাকে কি একটুও ভালোবাসো নি অভ্র ভাইয়া
বেসেছি,আমি তোকেই ভালোবেসেছি,তোর দিকে আমি কখনোই খা*রা*প নজরে তাকাই নি।
মনে মনে ভাবলাম,কেনো মিথ্যে বলছো,যদি সত্যি ভালোবাসতে তাহলে আমাকে ঠকাতে পারতে না।কিন্তু আমার মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বের হলো না।মুখ চেপে ধরে দৌড়ে ঘরে আসলাম।
অভ্র ভাইয়া নির্বাক চাহনিতে আমার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
রুমে এসে দরজা লাগিয়ে কাঁদতে লাগলাম, আমি কেনো এই বেই*মান মানুষটাকে ভালোবাসলাম। আর আমি চাইলেও ওনার মূখের ওপর উচিৎ জবাব দিতে পারি না,একা থাকলে ভাবি এবার সামনে আসলে অনেক কিছু বলে অপ*মান করবো
কিন্তু সামনে আসলে আমার কথা গলাতেই আটকে যায়। কেনো এমন হয়,ভালোবাসি বলে কি এতো নিখুঁত ভাবে ঠকার পরো কিছু বলতে পারি না,,
আসলে মূখে বলা সহজ কিন্তু করা খুব কঠিন, আমি যতো চেষ্টা করি এসব ভূলে থাকার ততো আমার সামনে চলে আসে। যে মন থেকে ভালোবাসবে সে কখনোই ভালোবাসার মানুষটার ক*ষ্ট সহ্য করতে পারবে না। আমার জন্য যদি অভ্র ভাইয়া কষ্ট পায় ওনার থেকে বেশি আমি কষ্ট পাই। মনে হয় কেনো আমার জন্য ক*ষ্ট পাচ্ছে উনি।
হটাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো,,
চোখঁ মুছে জিজ্ঞেস করলাম কে,,
আমি শুপ্তি, পদ্ম তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,,
এই মেয়েটার ওপর প্রচন্ড রা*গ আর ঘে*ন্না জমা আছে। মেয়ে জাতির কলঙ্ক এই মেয়ে। এই ধরনের মেয়েদের জন্য সমস্ত মেয়ে জাতীকে কথা শুনতে হয়। এরা অন্যের সুখ কেড়ে নিতে দুবার ভাবে না।
দেখো পদ্ম আমি জানি তুমি কি ভাবতেছো, আমার ওপর তোমার রাগ হচ্ছে,কিন্তু তোমার সাথে আমার কথা বলা জরুরি,,প্লিজ দরজা খোলো আমি দাড়িয়ে থাকতে পারছি না আর।
কি আর করার ইচ্ছে না থাকলেও বাদ্ধ হয়ে দরজা খুলে দিলাম। ও এসে বিছানায় বসলো। তারপর যা যা বললো তা শুনে প্রচন্ড হাসিঁ পেলো,,
চলবে,,
ভূল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।❌কপি করা নিষেধ ❌