পরিণীতা পর্ব -০২

#পরিণীতা
#পর্ব_২
#লেখনীতে_সাবরিনা_সিদ্দিকা_তাবাচ্ছুম

লিজা কী করতে চাইছে এটা ভাবতে ভাবতে রুমে আসছিলাম হঠাৎ দরজা খুলে বেরিয়ে এলো সাদাফ ভাই। এসেই আমার সামনে এসে বললো,

“তুই আমার রুমে উঁকি দিচ্ছিলি কেন?”

“আ..মি কখন তোমার রুমে উঁকি দিলাম”

“একটু আগেই তুই রুমের সামনে ছিলি না?”

“আমি তো রুমে যাচ্ছিলাম তখন তোমার রুমের পাশ দিয়ে আসছি। আমি এমন না যে কারো রুমে উঁকি দিবো। তোমার বউকে নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই।”

বলে ঘুরে রুমে এসে গেলাম।

আমার রুমটা এক পাশে হওয়ায় রুমে আলো বাতাস বেশি। সাদাফ ভাইয়া বাড়িতে থাকাকালীন বলতো, “তোর রুমটা খুবই বড় রে। আমি এটাতে শিফট হয়ে যাবো চিন্তা করছি।”

তার মতে এটা খুব বড় রুম আমার রুমের উপর নজর দিয়েছিল। ভেবেছিলাম এমনিই। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদের বিয়ের পর এই রুমে শিফট হবে। আমি অবশ্য আপত্তি করিনি। কিন্তু এখন ভয় হচ্ছে আমার রুম ছেড়ে দিতে বলবে কিনা কিন্তু না এটা আমি মানবো না। অবশ্য এটা বাড়ির কেউই মানবে না।

রাতে সবাইকে নিচে ডাকলো সাদাফ ভাই। আমার সকালের কথা মনে পড়লো। লিজা যে বললো আলাদা হতে! সাদাফ ভাই কী পরিবার ভাঙার পরিকল্পনা করছে নাকি?! আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।

“সাদাফ যা বলবি তাড়াতাড়ি বল। কেউ তোর মতো বেকার বসে নেই।”(বড় আব্বু)

“আব্বু, আমি চাইছিলাম। আমি বিয়ে করেছি কিন্তু আমার রুমটা ছোটো হয়ে গেলো আমাদের জন্য।”

আমি সাথে সাথে বুঝে ফেললাম কী বলবে। যা ভয় পাচ্ছিলাম তাই হচ্ছে।

“তো এখন তুমি কী বলতে চাচ্ছো?”

“আম্মু আসলে বিহির রুমটা তো অনেকটাই বড়। আর ও একা মানুষ এতো বড় রুম ওর লাগতেছে না যদি রুমটা…”

মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আব্বু বললো,

“আমার মেয়ের রুম কে তোমাকে দেবে? তোমার জন্য ও সব কেন স্যাক্রিফাইস করবে?”

“আর বিহির রুম কোনো বড় না। সবার বেডরুম সমান। তোমার চোখে অন্যের জিনিস বেশি বড়!”(বড় আব্বু)

এর মাঝে লিজা বলে উঠলো,

“না! আমি দেখেছি বিহির রুমটা যেমন আলো বাতাস বেশি তেমনই বড়। এতো জিনিসপত্র রেখেও এতো জায়গা খালি হয় নাকি? কই সাদাফের রুম তো এতো বড় না।”

“তুমি আমার রুমে গিয়েছো? সকালে সাদাফ ভাই আমাকে বলছিল আমি তোমাদের রুমে উঁকি দিচ্ছিলাম এখন তো দেখি অন্য কেউ আমার পারমিশন ছাড়া আমার পুরো রুমে ডিটেইলস জেনে এসেছে।”

লিজা থতমত খেয়ে গেল। সাদাফ ভাইয়াও চুপ করে আছে।

“বুঝেছি তোর মাথায় এইসব কথা কে ঢুকিয়েছে!”(বড় আম্মু)

আমি উঠে সোজা রুমে চলে আসলাম। এইসব ভালো লাগছে না। পুরো পরিবার ভাঙার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে!

——–

এভাবে দিন কেটে যাচ্ছে। আমার রুমের কথাটাও আর উঠেনি। অবশ্য উঠলে আমি ছাড় দিতাম না। এখন সবাই অনেকটা স্বাভাবিক। কিন্তু লিজাকে মানতে সবার একটু সমস্যা হচ্ছে। আমার পরিবারের সবাই আন্তরিকতার দিকে এগিয়ে কিন্তু লিজা এর বিপরীত। বিভিন্ন ব্যবহারে এসব বুঝিয়ে দিয়েছে।

এক রাতে সাদাফ ভাইয়া আমাকে বলেছিল,

“তোর মধ্যে এমন কিছুই নেই যে তুই আমার যোগ্য হবি। তুই বল তোর কী যোগ্যতা আছে? কোনো লজিক আছে তোকে যে আমি বিয়ে করবো?”

“তাহলে তখন আমাকে রাজি করিয়েছিলে কেন? আমি তো চাইনি!”

“তখন আমার আবেগ এবং মোহ কাজ করছিল তাই।”

“ওহ!”(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)

“লিজাকে দেখ ও যেমন সুন্দর তেমন ও ভালো একটা চাকরি করে”

“হ্যাঁ সেটাই আমি তোমার অযোগ্য। সুখে থাকো তোমরা”(হেসে)
বলে চলে এলাম।

এখন সাদাফ ভাইয়া ও আর ঝামেলা করেনা। আমি এখন উচ্চপদস্থ একটা চাকরি করি। আমার পরিচয়ে বাবা মাকে পরিচিত করেছি। এখন বিয়ের জন্য বিভিন্ন পাত্র আসে। মনে পড়ে সাদাফ ভাইয়ের সেই কথাগুলো আমি তার যোগ্য নই। আমার মধ্যে এমন কিছু নেই। এসব নিয়ে আমি এখন ভাবি না।

—————————————–

আজ বাড়িতে নতুন পাত্র আসছে। নাম হলো আদিব সাদমান। তিনি ব্যবসায়ী। আমি রেডি হচ্ছিলাম; বড় আম্মু ও ছিলেন আমার সাথে। হঠাৎ লিজা রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে নাক ছিটকালো। আমরা আওয়াজ শুনে দরজার দিকে তাকালাম। সে হেসে বললো,

“যতই সাজো ওই রঙ সাদা হবে না”

আমি হেসে বললাম,
“আমার সাদা হওয়ার তো প্রয়োজন নেই। তোমার ইচ্ছে হলে তুমি ডিটার্জেন্ট নিয়ে ডলতে পারো।”

“হাহ! এজন্যই তো সাদাফ তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে আর আমাকে ধরেছে।”

বলে চলে গেল। বড় আম্মু কিছু বলতে গেলে আমি আটকে দিলাম। ওকে বলা আর না বলা সমান। সে যতই উপরে উপরে এমন দেখাক না কেন, তাদের মাঝে অনেক সময়ই ঝামেলা হয় যেটা আমরা সবাই জানি। মাঝে মাঝেই তাদের রুম থেকে ঝগড়াঝাঁটির আওয়াজ আসে।

আমি রেডি হয়ে বাইরে গেলাম। দেখা সাক্ষাৎ শেষে বলা হলো দুই পক্ষের রাজির কথা।

দুইদিন পর বিয়ের কথাবার্তা ডেট ফিক্সড করা হলো। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো পাত্র একবারের জন্যও আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেনি। উনি পছন্দ করেছেন তো? সাদাফ ভাইয়া যা করেছে তাতে আমার ভয় হয় বিয়ের পর কেউ এমন করলে কী হবে!! আমার ভাবলেই বুক কেঁপে উঠে!
দিন যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে ততই ভয় করছে কারণ এখন পর্যন্ত ছেলে কোনোরকম কথা বলেননি। তবুও নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছি। হয়তো হুট করে এমন কথা বলতে পারছে না।
বিয়ের আর মাত্র ১২ দিন বাকি। বিয়ের কেনাকাটা সব করা হয়ে গেল। দিন কমতে কমতে আর দুইদিন বাকি। সেদিন রাতে সবাই মেহেদী দেওয়ায় ব্যস্ত। আমার দুই হাত ভর্তি করে মেহেদী দিয়েছে। আমি হাত লম্বা করে বসে আছি। হঠাৎ রুমের সামনে সাদাফ ভাইকে দেখা গেল। আমি চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকালাম। হঠাৎ দেখি সাদাফ ভাইয়া হাতে কিছু একটা ইশারা করছে। আমি ভাবলাম আমাকে না। তাই আমার মতো অন্য দিকে চেয়ে আছি। হঠাৎ এসে আমাকে বললো,

“একটু ছাদে আয়”

আমি তাকিয়ে বললাম,

“আমি?”

“নয়তো কাকে বলছি??”

আমি চিন্তা করলাম আমাকে হঠাৎ ছাদে ডাকছে কেন? তবুও স্বাভাবিকভাবেই বললাম;

“কেন?”

“আসতে বলছি আয়। পাঁচ মিনিটের মধ্যে যেন ছাদে দেখি”(দাঁতে দাঁত চেপে)

বলে চলে গেল। আমিও চুপচাপ চলে আসলাম। আসার সময় দেখলাম বড় আম্মু তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই আমাকে চোখের ইশারায় যেতে বললেন। আমি বের হওয়ার পর দেখি বড় আম্মু ও এসেছে,

“কীরে হঠাৎ ছাদে কেন?”

“বুঝতে পারছি না যাওয়া কী ঠিক হবে?”

“তুই যা আমি ছাদের বাইরে থাকবো”

“ঠিক আছে”

বলে আমি আগে আগে চলে গেলাম। কারণ সময়সীমা পাঁচ মিনিট। আমি অলরেডি দুই মিনিট খেয়ে নিয়েছি।
আমি গিয়ে দেখি সাদাফ ভাইয়া দেয়ালে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদের আলো পড়ে মুখটা ঝলঝল করছে। কিন্তু আমি গলার পাত্রী নয়! যে আমাকে ঠকিয়েছে সে যতই ভালো সাজুক আমি তো গলবো না। আমি ভেতরে গিয়ে বললাম,

“কী বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন, নিচে সবাই ওয়েট করছে”

“তুই তো আগে তুমি করে বলতি! এখন আপনি কেন? বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এজন্য? জামাই রাগ করবে?”

আমি চুপ করে আছি।

সাদাফ ভাই ঘুরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন,

“তোর এই বিয়েতে মত আছে?”

“মানে?”

সাদাফ ভাইয়া সাথে সাথে ঘুরে যা দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

“স্পষ্ট করেই বলেছি বাংলা বুঝিস না?”

রাগ লাগলো আমার।

“আমাকে ডেকে এনেছেন এই জন্য??”

“তোকে যা জিজ্ঞাসা করছি তার উত্তর দে”

“রাজি না থাকলে নিশ্চয়ই বিয়েটা হতো না!”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“জানিস তোকে হারিয়ে আমি বড় একটা ভুল করেছি!”

কথাটা শুনে আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। হঠাৎই কাছে এসে হাত ধরে বলল,

“তুই যদি রাজি না থাকিস তাহলে বল আমি বিয়ে ভেঙে দিবো। আমি ভুল শুধরাতে চাই!”

চলবে…..?

(১০৬৫ শব্দের)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here