#পরিণীতা
#পর্ব_১০
#লেখনীতে_সাবরিনা_সিদ্দিকা_তাবাচ্ছুম
আদিব বাড়িতে ফিরে এসে বিহির বাবার বাড়ি চলে গেল। সবাইকে সব জানাতে হবে।
এইসব শুনে দুই পরিবারে যেন শোকের ছায়া নেমে এলো। ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে। আদিবের চেহারা দেখে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। ছেলেটা এমনি ভেঙে পড়েছে। আদিবের মা আদিবকে কখনো এইভাবে ভেঙে পড়তে দেখেনি! তিনি নিজেকে সামলে রেখেছেন শুধু ছেলের জন্য। হঠাৎ লিজা বলে উঠলো,
“আপনাদের সাথে তো আর কেউ ছিলো না!”
“না”
“তাহলে এসব কীভাবে হলো? আমার তো মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘা”বলা আছে!”
“কী বলতে চাইছো তুমি লিজা?”(সাদাফ)
“তোমরা কী সত্যিই বুঝতে পারছো না?”
“মানে?”
“বিহি তো কয়েকদিন থাকার জন্য এখানে এসেছিল কিন্তু একদিন পরই ওকে নিয়ে যাওয়ার কারণ কী? তারপরই ট্যুরে যেতে হলো? এখানে কোনো প্ল্যান নেই তো?”
আদিব র’ক্তচক্ষু নিয়ে লিজার দিকে তাকালো।
“এভাবে তাকানোর কিছু নেই। আমি যা বলছি সেটা তো সত্যি হতেই পারে! নাহলে বিহি তো কখনো এতো কম সময়ে জন্য এখানে আসে না!”
আদিব কিছু না বলে চুপ করে রইলো। তার এই মুহূর্তে কারো সাথে তর্কে জড়াতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
“দেখছো? ঠিক বলেছি না? ধরে ফেলেছি তাই তো চুপ করে আছে”
আদিব আর না পেরে উঠে দাঁড়ালো।
“আপনার মতো মানুষের সাথে তর্কে জড়ানোর ইচ্ছে আমার নেই। নিজের সংসার নিয়ে ভাবুন। আমার সংসারে আগুন লাগাতে আসবেন না।”
“আর আগুন লাগিয়ে কী হবে? বিহি তো আর নেই”
“চুপপপপ! বিহিকে আমি খুঁজে বের করবো”
“এখন তো এইসব বলবেই! নাহলে বলো তো সেদিন বিহিকে কেন নিয়ে গেছিলে?’
“আপনার কেন এতো দরদ লাগছে ওর জন্য?”
“এই এই একদম কথা ঘুরাবে না!”
এবার বিহির আম্মু জোরে বলে উঠলো,
“থামো লিজা। আমার মেয়ে আর জামাই সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছো। কী পরিস্থিতিতে কী বলতে হয় এটাও তুমি জানো না। বিহি সেদিন কেন চলে গিয়েছিল আমি বলছি। সেদিন তোমাদের পুরো রাত ঝগড়া দেখে বিহি আগের বাড়ির কথা মনে করেছিল। তোমরা মেয়েটাকে এখানে শান্তিতে থাকতে দাও নি। এখন পর্যন্ত আদিব ওর সাথে উঁচু স্বরে কথা পর্যন্ত বলেনি! তাই ও এই সিচুয়েশনে পরিচিত নয়। তোমাদের এসব দেখে ও থাকতে পারলো না। সবাই না জানলেও এসব আমি জানি।
তোমার কারণেই ও এখান থেকে চলে গেছে আর তুমি আদিবকে দো’ষারো’প করছো! ছি! তোমার এই স্বভাবগুলো না এই বাড়ির বউয়ের মতো না। আর এমনি তুমি আর এই বাড়ির বউ থাকবে ও না।”
সবাই কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। চারিদিকে পিনপিন নীরবতা। সাদাফ মাথা নিচু করে বসে আছে। আদিব উঠে চলে গেলো। আজকে বিহির এমন অবস্থার জন্য তাকে দো’ষ দেওয়া হচ্ছে! এইদিন টাও ওকে দেখতে হলো।
আদিব বাড়ি এসে রাতে ছাদে চলে গেলো। ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। চারিদিকে চাঁদের আলো ঝলমল করছে। এরকম একটা মুহূর্তেই তো বিহিকে পাশে চেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ বিহি তার পাশে নেই। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজে নিজে বলতে লাগলো,
“বিহি কোথায় চলে গেলে তুমি? আমি জানি তুমি বেঁচে আছো। সবাই যাই মনে করুক আমি কখনোই বিশ্বাস করবো না তুমি বেঁচে নেই। কেউ আমাকে বিশ্বাস করতে চাইছে না! দেখেছো! আজ তোমার পরিণতির জন্য আমাকে দায়ি করা হচ্ছে! আমি নাকি তোমার মা’রতে পারি তুমিই বলো আমি তোমাকে মারতে পারি? আমি নাকি প্ল্যান করেই তোমাকে নিয়ে গিয়েছি। এইসব না আমি সহ্য করতে পারছি না। তোমাকে যেখান থেকেই হোক খুঁজে আমি বের করবোই! সেটা যেই প্রান্তেই হোক না কেন। ইনশাআল্লাহ!”
শেষ কথাটা চোখমুখ শক্ত করে বলল আদিব। একটু পর আবার বলতে শুরু করলো,
“তুমি আমার জীবনের #পরিণীতা । কী করে এভাবে হারিয়ে যেতে দিই? তোমার সাথে সাগর দেখা বাকি। একসাথে আরো অনেক দিন কাটানো বাকি। আরো অনেক এমন চাঁদের আলোয় আলোকিত হওয়া রাত কাটানো বাকি! এসব রেখে তুমি কী করে চলে যাবে বলো তো?”
এসব বলতে বলতে আদিবের চোখে পানি চলে এলো। ছেলেদের আল্লাহ্ এমন এক শক্তি দিয়েছেন যে সর্বক্ষণ কঠোর হয়ে চলা যায়। এজন্যই বোধহয় প্রিয়জনের খা^টিয়া টাও ছেলেরা বহন করে। মা বাবা হোক আর অন্য কেউ! তাদের কব!রটাও তারাই জিয়ারত করতে পারে। আল্লাহ্ তায়ালার সৃষ্টির ভেতর রয়েছে হাজারো সুন্দর রহস্য! মা বাবা কিংবা কোনো প্রিয়জন মা/রা গেলে মেয়েরা অনায়াসে কেঁদে ফেলতে পারে। তাদের কোনো সংকোচ নেই। কারণ আল্লাহ্ মেয়েদের এতোটাই নরম তৈরি করেছে। কিন্তু ছেলেদের বুকফাটা কান্না আসলেও তারা সামলে নিতে পারে। ছেলেদের আমরা কঠোর হৃদয় বলি কিন্তু এই কঠোর হৃদয়ের আড়ালে কী আছে সেটা কী কেউ জানতে চেষ্টা করি?
আদিব চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালো কারণ ছাদের দরজা খোলার আওয়াজ হয়েছে। পেছনে কেউ একজন এসেছে। সে নিজেকে স্বাভাবিক করে শক্ত মুখে পেছনে ঘুরে তাকালো। তার মা এসেছে।
“আদিব! তোর সাথে কেউ একজন দেখা করতে এসেছে”
“আচ্ছা আমি আসছি”
তার মা চলে গেলো আদিব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো। ড্রয়িং রুমে বসে আছে এসিপি আব্রাহাম আহমেদ। আদিবের বাবার পরিচিত হওয়ায় তাকে নিয়ে বিহিকে খোঁজার চেষ্টা চলছিল। হয়তো নতুন কোনো খবরের জন্য এখানে এসেছে।
“আরে আদিব কী অবস্থা হয়েছে তোমার?”
“আঙ্কেল কোনো খবর পেলেন?”
“আপাতত এটা বলতে পারি ওখানে খা’দের আশেপাশের ছোটোখাটো কিছু বাড়ি আছে ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যা বুঝলাম এমন কোনো ঘটনা ওখানে ঘটেনি।”
“আঙ্কেল খা’দের একটু দূরে কিছু বাড়ি ছিল না? ওগুলো?”
“ওখানে এখনো লোক পাঠাই নি। ওখানে এখন তদ’ন্ত করা সম্ভব না। কারণ খা’দে কেউ পড়লে ওরা জানতে পারবে না। অনেকটাই দূরে আছে।”
“তাহলে বিহি কোথায় যাবি আঙ্কেল?”
“সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আচ্ছা একটু মনে করার চেষ্টা করো তো যখন তুমি উঠেছিলে? তখন আশে পাশে বিহি ছিল না? যদি অন্য হাসপাতালেও নিতে পারে”
“না আঙ্কেল আমি দেখিনি ওকে। ও ছাড়া সবাই ছিল। আর নার্স বলেছিল সবাইকেই এখানে এসেছে অন্য কোনো হাসপাতালে নেয়নি!”
“আচ্ছা! ঠিক আছে আজ উঠি। আমি খবর পেলে জানাবো। নিজের খেয়াল রেখো। এতো ভে”ঙে পড়লে হবে না ইয়াংম্যান!”
উনি চলে গেলেন।
এরপর আরো দুইমাস কেটে গেলো। কিন্তু এখনো কোনো খবর পেলাম না। তিন মাস হতে চলল সবাই এখন ধরে নিয়েছে বিহি আর নেই। কিন্তু আমার মন মানছে না। এর মাঝে আমি একদিন সাদাফকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম
“আচ্ছা সাদাফ? বিহির এই দুর্ঘটনার সাথে লিজার কোনো কানেকশন থাকতে পারে? তোমার কী মনে হয়?”
“আদিব, লিজা খা”রাপ হতে পারে কিন্তু এতোটা না যে ও বিহিকে মারবে। আর ওর মুখে কোনোদিন বিহিকে নিয়ে আজেবাজে কথা শুনিনি। ওর সমস্যা সব আমার সাথেই ছিল।”
ততদিনে অবশ্য ওদের ডি’ভো-র্স হয়ে গিয়েছে। তারা তাদের আলাদা পথ বেছে নিয়েছে।
এখন আমার উপর চাপ আসছে বিয়ে করার। সবার মতে বিহি যেহেতু নেই বাকি জীবন কী একা কাটাবো? বিহি থাকলে তো এতোদিন এসে যেতো! আমি বুঝতে পারছি না কী করবো আমি। বিহির জায়গা অন্য কেউ নিতে পারবে না। কিন্তু কখনো যদি বিহি ফিরে আসে! কী জবাব দিবো ওকে আমি! কেউ এসব শুনতেই চাইছে না। মা তো এক কথায় দাঁড়িয়ে যে তার দুঃস’ম্পর্কীয় এক বোনের মেয়ের সাথে আমাকে বিয়ে দিবেন। আমি অনেক বলেও এসব থামাতে পারছি না। কেউ আমার কথা শুনছে না। আমিও এসবে যোগ দিই না। বিয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়।
একদিন সকালে আমি অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিলাম। আমার বোন এসে বলল,
“আদিব তোর সাথে দেখা করতে এসেছে”।
“কে?”
“আমি চিনি না তোর নাম নিয়ে তোকে খুঁজছে। আদিব সাদমানের বাড়ি কিনা!”
“আচ্ছা আমি আসছি বসতে বল”
বোন নিচে চলে গেলো। গিয়ে দেখলাম একজন মেয়ে। ২৫/২৬ বছর বয়সী হবে হয়তো। আমি যেতেই দাঁড়িয়ে গেলো।
“আসসালামু আলাইকুম”
“ওয়াআলাইকুমুস সালাম”
“আপনি আদিব সাদমান?”
“জ্বী আপনি কে?”
“আপনি আমাকে চিনবেন না। আপনাকে একটু আমার সাথে যেতে হবে”
“কেন? চিনি না জানি না কেন যাবো আপনার সাথে?”
“সময় খুব কম দেরি করবেন না প্লিজ চলুন।”
“আরে আজব তো!”
তারপর মেয়েটা এমন কিছু কথা বলল আমাকে যেতেই হলো!
চলবে….?
(1146 শব্দের)
[হঠাৎ রেসপন্স অনেক কমে যাচ্ছে। ভালো লাগছে না গল্পটা?]