পরীজান পর্ব -৪৫+৪৬+৪৭

#পরীজান
#পর্ব ৪৫
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌

কুসুম আর শেফালি মিলে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে। দুজনেই ভয়ে জীর্ণশীর্ণ হয়ে আছে। কথা বলতেও তাদের গলা কাঁপছে। ওরাও জমিদার বাড়ির এই পরিণতি মানতে পারছে না। কখনও ভাবেও নি এসব ব্যাপারে। যেদিন আফতাব জেসমিনের গায়ে হাত তোলে ওইদিনই সব পরিষ্কার হয় ওদের কাছে। আফতাবের মুখোশ উন্মোচন হয় সকলের সামনে। কিন্ত ওদের তো করার কিছু নেই। ওদেরও প্রাণ সং*শয়ে। কখন জানি আবার মৃ*ত্যুর খেলা শুরু হয়ে যায়!
পরী জেসমিনের ঘর থেকে বের হয়ে নিজ ঘরে যাচ্ছিল। পথে কুসুম আর শেফালির কথোপকথনে থেমে যায়। এগিয়ে যায় ওদের কাছে,’কি হয়েছে কুসুম?’
কুসুম চট করেই জবাব দিলো,’কিছুনা আপা।’

-‘আমার থেকে কিছু লুকাবি না। তাহলে তোদেরই বিপদ। এই বাড়িতে একমাত্র আমিই তোদের সুরক্ষা দিতে পারব। বল কি হয়েছে?’
শেফালি বলা শুরু করে,’সবাই সবার আসল রূপ দেখাইছে আপা। ওই নচ্ছার বেটা এহন সুযোগ লইয়া আমার গায়ে হাত দেয়। আমি ডরে কিছু কইতে পারিনা আপা।’

-‘কে নওশাদ?’
-‘হ আপা।’
রাগ হওয়ার পরিবর্তে পরীর মুখে হাসি ফুটল। মাথায় যেন মুহূর্তেই বুদ্ধি খেলে গেল। পরীকে এভাবে হাসতে
দেখে চমকে গেল ওরা দুজনে। কুসুম জিজ্ঞেস করে, ‘কি হইলো আপা আপনের?’

-‘তোরা দুজনেই পারবি আমার উদ্দেশ্য সফল করতে। পারবি তো?’
দুজনের একজনও কিছু বলে না এমনকি কিছু বোঝেও নি পরীর কথা। পরী আবার বলে,’কুসুম শেফালি তোদের যা বলব তোরা তাই করবি। ওই নর*পিশাচদের দুনিয়া থেকে বিদায় করার জন্য তোরা থাকবি না আমার সাথে?’

-‘আপনে সাহসি আপা। ত*লো*য়া*র চালাইতে আপনে পারবেন কিন্ত আমরা তো পারমু না। ওগো সামনে গেলেই ডর করে।’
পরী কুসুমের বাহু ধরে বলে,’মৃ*ত্যু*র ভয় করলে ওরা বারবার মৃ*ত্যু*র ভয় দেখাবে। তোকে দূর্বল করে দেবে। সাহস রাখতে হবে কুসুম। তোকে ত*লো*য়া*র
চালাতে হবে না। শুধু আমার কথামতো কাজ করবি।’

দুজনেই রাজি হলো পরীর কথায়। পরীও খুশি হলো। দৌড়ে চলে গেল নিজ ঘরে। সোনালীর ঘরের চাবি নিয়ে সেদিকে ছুটলো। বহুদিন পর সোনালীর ঘরের তালা খুলল পরী। ঘরের আনাচে কানাচে মাকড়সার জালে ভর্তি হয়ে গেছে। বন্ধ থাকার কারণে ভ্যাপসা গন্ধ বের হচ্ছে। পুরো ঘরে চোখ বুলায় পরী। বিশাল বড় পালঙ্ক ঘরের অর্ধেক দখল করে আছে। আলমারি,টেবিল চেয়ার একপাশে পড়ে আছে। ধুলো
জমে আছে প্রতিটা আসবাবপত্রে। নিজের ঘরটা বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতো সোনালী। ব্যক্তিগত কিছুতেই কাউকে হাত দিতে দিতো না সে। আজ সেই ঘরটার এই অবস্থা। পরী আলমারি খুলে দেখলো বোনের পোশাক গুলোতে ইঁদুরের বাচ্চারা ছুটোছুটি করছে। ওরা যেন উঠে পড়ে লেগেছে সোনালীর স্মৃতি নিশ্চিহ্ন করতে। পরী বন্ধ করে দিলো আলমারি। তারপর উঁকি দিলো পালঙ্কের নিচে। বড় একটা টিনের বাক্স বের করলো। ঢাকনা খুলতেই বাতাসে তার ভেতরের কাগজগুলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। লেখাগুলো সোনালীর নয় রাখালের। তার দেওয়া চিঠিগুলো যত্ন করে রেখেছে সোনালী। কিন্ত চিঠির প্রায় জায়গা কেটে ফেলেছে ইঁদুরগুলো। পরী বাক্স হাতড়ে কাপড় পেচানো একটা বস্তু বেরে করলো। সপ্তবর্ণে কাপড় সরাতেই সেটি মৃদু আলোয় চকচক করে ওঠে। হাতের ত*লো*য়া*র খানা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভাল করে দেখে। বহুদিনের পুরনো ত*লো*য়া*রে থেকে থেকে মরিচা ধরেছে। তাই পরী তাতে শান দিতে নিচে নিয়ে গেল। পাথরে ঘষে ঘষে ত*লো*য়া*রে ধার দিচ্ছে পরী। সেই শব্দে মালা আর রুপালি ঘর থেকে বের হয়ে এলো। এমতাবস্থায় মেয়েকে দেখে মালা এগিয়ে গিয়ে বললেন,’কি করস পরী তুই?’

-‘শত্রু থেকে রক্ষা পেতে হলে অ*স্ত্র প্রয়োজন।’

মালা বসে পড়ল মেয়ের পাশে। আতঙ্কিত হয়ে বলে, ‘আমি বড় মাইয়াডারে হারাইছি। তুই কি চাস তোরেও হারাই আমি?’

পরীর হাত থেমে গেল,চোখ তুলে সে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,’আপনার মেয়ে শহীদ হলে আপনার মাথা সবার সামনে উঁচু হবে আম্মা। এতে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই।’
-‘তুই একটু থাম পরী।’

-‘ভয় পাবেন না আম্মা। শয়তানের শাস্তি না দিয়ে আমি মরব না।’

মালা চোখের জল ফেলেন। অন্দরের দরজা খোলার আওয়াজে পরীসহ সবাই সেদিকে তাকায়। আফতাব কে ভেতরে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ায় পরী। পা চালিয়ে উঠোনে এসে বলে,’কোন সাহসে অন্দরে এসেছেন?’
-‘সাহস আছে বলেই এসেছি। আমার বাড়ি আমি যখন খুশি তখন আসবো।’

পরী হাসল বলল,’ভেতরে আসলে প্রাণ নিয়ে ফেরা মুশকিল হবে আপনার পক্ষে। তাই যেভাবে এসেছেন ঠিক সেভাবেই ফিরে যান।’

আফতাব গর্জন করে বলে,’এতো সাহস আসে কোথা থেকে তোর? আমার মুখের উপর কথা বলিস? মালা!!’
কেঁপে উঠলেন মালা। আফতাব এবার তার উপর অত্যাচার করবেন নিশ্চিত হলো মালা। আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলেন তিনি। আফতাব বলল,’তোমার মেয়ের সাহস বেড়েছে বুঝলাম। ওর কি জানের মায়া নাই? না নিজের মায়ের প্রতি ভালবাসা নাই?’

-‘খবরদার আমার আম্মার গায়ে হাত দিবেন না। এক আম্মাকে ঘরে ফেলে রেখেছেন কিছু বলিনি। এবার চুপ থাকব না। আপনার হাত হাতের জায়গাতে থাকবে না বলে দিলাম। ত*লো*য়া*র চালাতে আমি জানি!!’

-‘চুপ থাক পরী। অনেক হয়েছে,শুধু শায়েরের জন্য তোকে বাঁচিয়ে রেখেছি। তোকে তো তাড়াতাড়ি শেষ করে দেব।’

পরী গলা উচিয়ে বলে,’বের হন অন্দর থেকে নয়তো লা*শ পড়ে যাবে।’
পরীর চিৎকারে শায়ের সেখানে উপস্থিত হয়েছে। তবে পরীকে সে থামালো না। আফতাব শায়ের কে বকতে লাগল। কারণ শায়েরের জন্যই পরী বেঁচে আছে। আর এখন বাঘিনী হয়ে উঠেছে পরী। যখন তখন থাবা মারতে পারে। পরী বলল,’সবাই শুনে রাখো আজকের পর থেকে আমার অনুমতি ব্যতীত অন্দরে পুরুষ প্রবেশ নিষেধ। কোন পুরুষ আসতে পারবে না। সে যদি আমার স্বামীও হয় তাও না।’

কথাটা বলে আফতাবের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকালো পরী। সে দৃষ্টি এতোটাই ধারালো ছিল যে আফতাবের সর্বাঙ্গে অদৃশ্য ক্ষতের দেখা দিলো। কিছু না বলে সে অন্দর থেকে প্রস্থান করে। শায়ের কিছু পল পরীকে দেখে চলে গেল। পরীর হুকুমে কুসুম দরজা বন্ধ করে দিলো।
প্রথম পরিকল্পনা সম্পন্ন হলো। পরী এটাই চেয়েছিল।পরীর আসল উদ্দেশ্য শায়ের কে অন্দর থেকে সরানো। অতি চতুর শায়ের পরীর পরিকল্পনা বুঝতে সময় নেবে না। তাই আফতাবের সাথে সাথে শায়েরের আসাও বন্ধ করে দিয়েছে। পরী শেফালিকে ডাকল। শেফালি আসতেই সে বলল,’যা বলেছি মনে আছে তো?’
মাথা নাড়ে শেফালি। পরী আবারও নিজের কাজে মন দেয়। ঘষে ঘষে চকচকে করে ত*লো*য়া*র টা।
যেটা সূর্যের আলোতে চিকচিক করে ওঠে। এটাই পরীর শেষ হাতিয়ার যেটা দিয়ে পরী শত্রুদের দমন করতে পারবে।

সিরাজ আর নওশাদ বসে আছে বৈঠকে। আফতাব রেগে আখিরের সাথে বের হয়ে গেছে। শায়েরের দেখাও নেই। আপাতত ওরা দুজন বসে আছে। নওশাদ বলে উঠল,’অনেক দিনের সফর শেষে আসলে। তা ব্যবসা কতদূর?’

সিরাজ আড়মোড়া ভেঙে বলে,’আরে ভাই কত কিছু দেখলাম কিন্ত সোনালীর মতো কাউকেই পেলাম না।’

দুজনে একসাথেই হাসলো। নওশাদ বলল,’আমি কিন্ত ভাই তোমার নাম পরীকে বলিনি। সব চেপে গেছি। যাতে তোমার উপর পরীর একটু বিশ্বাস থাকে।’

-‘আরে আস্তে বলো। পরীর কানে গেলে সব শেষ। যাই হোক আমার এখানে বেশিক্ষণ থাকা চলবে না। পরীর সন্দেহ হবে।’

ওদের কথার মাঝখানে শেফালির আগমন ঘটলো। সিরাজের জন্য নাস্তা এনেছে সে। শেফালিকে দেখে ওরা চুপ করে যায়। চোখের ইশারায় একে অপরকে সতর্ক করে। শেফালি চলে যেতে গিয়েও থেমে যায়। নওশাদ কে দেখে ঘৃণা হচ্ছে ওর। আজ সকালেই কু প্রস্তাব রাখে নওশাদ। শেফালি পরিমরি করে নওশাদের থেকে পালায়। ভয় করছে শেফালির কিন্ত পরীর কথা মনে আসতেই সাহস পেল সে। হঠাৎই নওশাদের পা ধরে বসে পড়ল শেফালি। কাঁদতে কাঁদতে বলল,’আমারে মারবেন না ভাই!! আমি আপনের সব কথা শুনব। দরকার পড়লে অন্দরের সব খবর দিমু। তাও আমারে মারবেন না। আমার ডর
করে অনেক। মারবেন না আমারে!’

শেফালির কান্না দেখে ভড়কে গেল নওশাদ। বোঝার চেষ্টা করল শেফালির মতলব। নওশাদ পা ঝারা দিয়ে বলে,’পা ছাড় আমার। তোর মতলব আমি বুঝি না ভেবেছিস? আমি জানি এসব পরী তোকে শিখিয়ে পাঠিয়েছে।’

-‘আল্লাহ গো ভাই কন কি?? আমার কি পরী আপার মতো সাহস আছে? জানের মায়া হের না থাকলেও আমার আছে। আমি বাঁচতে চাই ভাই। আপনে বড় কর্তারে কইলেই হেয় হুনব। ভাই আমারে রক্ষা করেন। তার লাইগা আমারে যা কইবেন তাই করমু।’

নওশাদ সন্দেহের দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ শেফালির দিকে তাকিয়ে রইল তার পর বলল,’আচ্ছা তুই এখন যা। যখন বলব তখন আসবি। পরী কি করে না করে সব বলবি এসে!!’

শেফালি দৌড়ে চলে গেল। নওশাদ বিশ্রী গালি দিলো শেফালিকে। সে বিশ্বাস করেনি শেফালির কথা। সে সিরাজ কে উদ্দেশ্য করে বলে,’মা** ঢেমনা আছে। ভেবেছে ওর কথা বিশ্বাস করে বসে আছি। যতসব ফকিরের দল।’

সিরাজ মাথা ঝুকে আস্তে করে বলে,’ওদের থেকেও সাবধান থেকো। কখন কি করে বসে কে জানে? আমি আসি আজ। সময় হলে ঠিকই আসব।’

সিরাজ চলে গেল। নওশাদ রয়ে গেল। এখানে পরী ওকে কিছু করতে আসবে না। বৈঠকে কয়েক জন রক্ষি আছে। পরী এখানে আ*ক্র*ম*ণ করতে পারবে না। তবুও আতঙ্কে থাকে নওশাদ। ভয়ে ঘুমাতে পারে না। কবিরকে সে বারবার স্বপ্নে দেখে। বিভৎস সেই চেহারাটা চোখের সামনে ভাসে ওর। এতদিন কোন ভয় ছিল না ওর। সেদিন পরীর হ*ত্যা*কাণ্ড দেখে ভয়ে আছে সে। তাই সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করে। এমনিতেই সে পঙ্গু। ওকে মা*রতে পরীর এতটুকু শক্তির প্রয়োজন হবে না। তাই সর্বদা রক্ষী দের সাথে রাখে সে।

শেফালি অন্দরে ফিরে গিয়ে সব বলে দিল পরীকে। পরী জানতো নওশাদ এতো সহজে শেফালির কথা বিশ্বাস করবে না। তাই কীভাবে নওশাদ কে সব বিশ্বাস করাবে তাও ভেবে নিয়েছে পরী। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এমন সময় রুপালির কন্ঠস্বর ভেসে আসে। সে ডাকছে পরীকে। তাই শেফালির সাথে দ্রুত কথা শেষ করে পরী রুপালির কাছে গেল।
বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে আছে রুপালি। দেখে মনে হচ্ছে বহুক্ষণ অশ্রু বিসর্জন দেওয়ার জন্যই এই অবস্থা হয়েছে মেয়েটার। পরী নিঃশব্দে বোনের পাশে বসে বলল,’কি হয়েছে আপা?’

মুহূর্তেই চোখমুখ শক্ত করে নিল রুপালি। রাগে লাল হয়ে এলো ফর্সা চেহারাখানা। বোনের হঠাৎ রেগে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারে না পরী। তবে কিছু জিজ্ঞেস ও করে না। যা বলার রুপালি নিজ থেকেই বলবে। নিজেকে যথাসম্ভব ধাতস্থ করে রুপালি বলে,’অনেক হয়েছে পরী আর না। আমি একজনকে নিজ হাতে খু*ন করতে চাই। তুই দিবি তোর ত*লো*য়া*র টা? আমি তাকে মে*রে আবার তোকে ফিরিয়ে দেব!’

-‘কাকে মা*র*বে আপা? কি হয়েছে তোমার?’

-‘বড় আপার আরেক খু*নি যার নাম তোর অজানা পরী।’
-‘কে সে?’
-‘সিরাজ!! আমাকে ঠকিয়েছে সিরাজ। ভালোবাসার ছলনায় আমাকে ফেলেছে পরী। সেইদিন কাকার সাথে হাত মিলিয়ে সিরাজই আমাকে শশীলের হাতে তুলে দিয়েছিল। সিরাজ বড় আপাকে পছন্দ করতো। তাই আপা মরার পর নওশাদ আর কবিরের সাথে সেও,,,’
কথা শেষ না করে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে রুপালি। ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসছে ওর। পরী অবাক হলো। তাহলে নওশাদ ওকে একটা মিথ্যা কথা বলেছে। ওদের সাথে সিরাজ ও ছিলো। সে বোনকে বলে,’কেঁদো না আপা শক্ত হও। আমার ভালো লাগছে তোমার কথা শুনে। সিরাজ কে আমি তোমার হাতে ছেড়ে দিলাম। নিজের ক্ষোভ মেটাও। তবে আমি ঠিক যেভাবে বলব সেভাবেই করবে সব।’

-‘কিন্তু পরী আমার পিকুলের কি হবে? এতটুকু বাচ্চা!
আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে ওকে কে দেখবে?’

-‘সেই চিন্তা তুমি করো না। আমি শীঘ্রই ওর একটা ব্যবস্থা করব। তুমি শুধু তোমার ভেতরে রাগ জন্ম দাও। দেখবে শত্রুদের প্রতিহত করতে পারবে। আর ভয় পাবে না।’

রুপালির ঘর ত্যাগ করে পরী। ওর ভিশন খুশি লাগছে আজ। পরী ভেবেছিল সিরাজের আসল চেহারা সামনে এলে রুপালি নিজেকে সামলে নিতে পারবে না। কিন্ত রুপালি যে এভাবে নিজেকে সামলে নিবে তা পরী কল্পনাও করেনি। সবাই মিলে একসাথে কাজ করলে সফল হওয়া সম্ভব।

পরেরদিন সকাল বেলা। কুসুম ভয়ে ভয়ে পা রাখে বৈঠকে। পিঠা আর শরবত দিয়ে আসে সবাইকে। ওই
খারাপ লোকগুলোর সামনে গেলে মনে হয় এই বুঝি ঝাঁপিয়ে পড়বে ওদের উপর। তাই সে দৌড়ে পালিয়েছে। শায়ের বাদে সকলেই উপস্থিত সেখানে। নওশাদ যেই না শরবত খেতে যাবে তখনই শেফালি চিৎকার করে বলে,’শরবতে বিষ মেশানো আছে কেউ খাইয়েন না!!’
#পরীজান
#পর্ব ৪৬
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌

স্টিলের গ্লাসটা সশব্দে পড়ে গেল হাত থেকে। নড়েচড়ে ভিত চোখে তাকালো শেফালির পানে। তারপর পড়ে যাওয়া গ্লাসের দিকে তাকালো। তখনই একটা বিড়াল মিঁয়াও বলে সামনে দিয়ে দৌড় দিলো। ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠল নওশাদের। সে খেয়াল করলো তার গলা শুকিয়ে এসেছে আর ঘামছে। শেফালি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। উপস্থিত সবাই তার দিকে তাকিয়ে। আফতাব বললেন,’শরবতে বিষ!! কে বলল তোকে?’

শেফালি কাচুমাচু করে সামনে এসে দাঁড়াল,’বড় কর্তা আমি কুসুম রে দেখছি বিষ মিশাইতে।’

-‘দেখছেন ভাই আপনার মেয়ে এখনই আমাদের মা*রার পরিকল্পনা সেরে ফেলছে। শেফালি না বললে তো আমরা শরবত খেয়েই ম*রে যেতাম।’

আখির কথাটা আফতাব কে উদ্দেশ্য করে বলে। এতে চুপ থাকে আফতাব। কিছুক্ষণ ভেবে বলে,’সত্যি তো শরবতে বিষ মেশানো আছে?’

শেফালি চটপচ উত্তর দিলো,’হ,আমি নিজের চোক্ষে দেখছি। পরী আপার কথায় তো কুসুম এই কাম করছে। আপার যেই রাগ। কথা না হুনলে আমাগো মা*ইরা ফালাইতে পারে। কি করমু কন?’

-‘তুই এখন যা।’
-‘বড় কর্তা আমি আপনাগো কইছি আপা যেন না জানে। তাইলে আমারে জানে মাইরা ফালাইব।’

-‘আচ্ছা বলব না। তুই যা,আর পরী যা করে সব এসে আমাদের বলবি।’

শেফালি মাথা নেড়ে চলে গেল। আফতাবের মুখ গম্ভীর। সে একজন রক্ষিকে দিয়ে শায়েরের কাছে খবর পাঠালো।

-‘ভাই তাড়াতাড়ি পরীর একটা ব্যবস্থা না করলে হবে না।’

-‘ভুলটা আমারই হয়েছে। সেদিন সোনালীকে না মা*রলে এসব হতো না। পরীও এত ভয়ানক হয়ে উঠতো না।’

-‘কিন্ত ভাই সোনালী তো আপনাকেও মারতে চাইতো।
তাহলে আজ পরী আর সোনালী এক হয়ে আমাদের আ*ক্র*ম*ণ করতো।’

আফতাবের মাথা কাজ করছে না। সত্য লুকানো খুবই কঠিন। দশ হাত মাটির নিচেও যদি সত্য কে লুকিয়ে রাখা হয় একদিন না একদিন সবার সামনে আসবেই। সে চেয়েছিল নিজের সব অপকর্ম লুকিয়ে রাখতে। কিন্ত লুকাতে পারে না। সর্বপ্রথম জানতে পারে মালা। তখন সোনালী দুই বছরের শিশু। স্বামীর অপকর্মের কথা জানতে পেরে ভেঙে পড়েন তিনি। অনুরোধ করে আফতাব যেন এই অপকর্ম থেকে ফিরে আসে। কিন্ত খারাপ মানুষের ভালো হওয়া কি সহজ? যেখানে আফতাবের পূর্ব পুরুষদের রক্তে মিশে আছে খা*রাপ কাজ। আফতাব ও পারেনি ফিরে আসতে। তাকে কালো ব্যবসা শিখিয়েছিলেন তার দাদা। ছোট থেকেই হাতে ধরে ধরে সব শেখাতেন। ছোট বয়সেই নর্তকিদের সামনে হাজির করাতো। তখন থেকেই লালসা আফতাবের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। তবে পরিবার পরিচালনার জন্য বিয়ে করতে হয় তাকে। মালার সৌন্দর্য দেখেই আফতাব মুগ্ধ হয়েছিল। তারপর বিয়ে। ভালোই কাটছিল সব, কিন্ত যখন মালা সব জেনে গেল তখনই আফতাবের অবহেলা দেখতে পেল মালা। একে একে মুখোশ উন্মোচন হলো সবার। তখন মালার পাশে দাঁড়িয়েছিল আবেরজান। তিনি মালাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন।
কিন্ত কেউই প্রতিবাদ করেনি। বহুবছর পর সোনালী বাবার করা অ*ন্যায়ের প্রতিবাদ করে। বাবা হলেও সে অ*প*রা*ধী। শাস্তি তার প্রাপ্য। তবুও সে বাবাকে বারণ করে। ফিরে আসতে বলে এসব অপকর্ম থেকে।
আফতাবের কোন হেলদোল নেই। তবুও সোনালী চুপ ছিল। কিন্ত আফতাব যখন রাখালের সাথে তার সম্পর্ক জানতে পেরে রাখালের দিকে হাত বাড়ায়। তখন সোনালী হুমকি দেয় আফতাব কে,যে সে সব সত্য সবাইকে বলে দেবে। মূলত সোনালী রাখালের সাথে আগে পুলিশের কাছে যেতে চেয়েছিল তারপর ওরা পালিয়ে যেতো। কিন্ত বিপত্তি ঘটে যায় পথেই।

এখন আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করছে পরী। কিন্ত পরী সোনালীর থেকেও ভয়ানক। র*ক্ত যেন ওর নেশা। শায়ের আসতেই সবার দৃষ্টি সেদিকে গেল। আফতাব বললেন,’তোমার কথা রাখা কঠিন শায়ের। পরী আজ আমাদের মারতে চেয়েছিল। এখন তুমিই বলো কি করবে?’

শক্ত কন্ঠে শায়ের জবাব দিলো,’আমার পরীজানের কিছু করতে আপনারা পারবেন না। যতক্ষণ আমার দেহে প্রাণ আছে।’

-‘তাহলে আমরা মরব নাকি?’
-‘আল্লাহ যেভাবে যার মৃ*ত্যু লিখেছেন তার মৃ*ত্যু সেভাবেই হবে। এতে ঘাবড়ানোর কি আছে? নিজেদের রক্ষা করতে শিখুন।’

-‘তোমার যুক্তি তোমার কাছেই রাখ শায়ের। আমরা আর বসে থাকব না। দেখি পরীকে তুমি কীভাবে বাঁচাও?’
আফতাব উঠে চলে গেল। শায়ের কিছু না বলে বৈঠকে নিজের বরাদ্দ ঘরটাতে চলে গেল। তার একটুও ভাল লাগছে না। কাল সারারাত সে ঘুমাতে পারেনি। পরীকে ছাড়া এই প্রথম রাত তার। শ্বাস রুদ্ধকর লাগছে ওর। কারো সাথে কথা বলতেও ইচ্ছা করে না। সকাল থেকে তাই শায়ের চুপচাপ ছিল। বুকের তৃষ্ণা বাড়ছে,পরীকে একবার সে চোখভরে দেখতে চায়। খোদা যেন ওর কথা শুনেছে। শেফালি এসে বলে গেছে পরী তাকে অন্দরে যেতে বলেছে।
দেরি করে না শায়ের। বহুক্ষণের তৃষ্ণা মেটাতে ছুটে যায় অন্দরে। পরীর ঘরে গিয়ে হাপাতে লাগলো সে। শায়ের কে দেখে পরী পালঙ্ক থেকে নেমে পড়ল। সম্মুখীন হলো স্বামীর। এক রাতেই কেমন শুকিয়ে গেছে শায়ের। পরী এটা হঠাৎই আবিষ্কার করে। আলতো করে গালে হাত বুলায় শায়েরের। চোখের পলক ফেলে না শায়ের। পরী বলল,’আমার খুব ঘুম পাচ্ছে মালি সাহেব আপনার বুকে একটু জায়গা দিবেন? কাল রাতে ঘুমাতে পারিনি।’

করুন কন্ঠ পরীর। শায়ের আরও কাছে এগিয়ে আসে পরীর,’আপনি চোখ বন্ধ রাখবেন পরীজান? আপনাকে মন ভরে দেখব। কেন জানি আপনার চোখের দিকে তাকালে নিজেকে আরো বড় অ*পরাধী মনে হয়।’

তাই করে পরী। আর শায়ের তার পরীজান কে চোখ ভরে দেখে। তার এ দেখার শেষ নেই। চক্ষু মুদন করার ইচ্ছা নেই শায়েরের। পরীর কপালে গাঢ় চুম্বন করে সে। পরী চোখ মেলে তাকায়,’আপনি কেন এতো নিষ্ঠুর হলেন? কেন এতো পাপ করলেন? কি দরকার ছিলো? একটু ভালো হলে কি হতো? যুদ্ধ তো হতো না!! র*ক্তা*র*ক্তি ও হতো না। তাহলে আপনি এমন হলেন কেন? আর যদি খারাপই হতেন তাহলে আমাকে কেন এতো ভালোবাসলেন?’

-‘আমি কি আপনাকে কলঙ্কিত করলাম পরীজান?’

কথা বলে না পরী। শায়ের আবার বলে,’আপনি চাঁদ আর আমি কলঙ্ক। কলঙ্ক ছাড়া চাঁদ যেমন অসুন্দর তেমনি আমি ছাড়া আপনিও বেমানান। সেহরান নামক কলঙ্ক পরীজানের গায়ে আজীবন থাকবে।’

শায়েরের বুকে মাথা রাখে পরী। কালবিলম্ব না করে শক্ত করে পরীকে জড়িয়ে ধরে সে। বলে,’আপনার আমার ভালোবাসা হয়তো কোন ইতিহাস গড়বে না পরীজান। পৃথিবীর কেউ জানবে না আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি। তবে এই ভালোবাসা এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারবেন না।’

-‘আমি কেন আপনাকে চেয়েও শাস্তি দিতে পারছি না? কেন বারবার আপনার কাছে আসতে ইচ্ছা করে?’

এর জবাব শায়ের ও জানে না। সে গভীর আলিঙ্গনে ব্যস্ত তার পরীজান কে। সারা রাত্রি দুজনেই বিনা নিদ্রায় পার করেছে। এখন কাছাকাছি হয়ে দুজনেই একটুখানি শান্তির নিদ্রায় যেতে চায়। তাই শায়ের পরীকে নিজ বক্ষে নিয়ে শুয়ে পড়ল।

রুপালি রন্ধনশালায় গিয়ে দেখল মালা খাবার বাড়ছে জেসমিনের জন্য। আজ কতদিন হলো সে বিছানায় পড়ে আছে। নড়াচড়া করতে পারে না। পুরো শরীর প্রচন্ড ব্যথা। একটু নড়লেই ব্যথায় কাতরায়। এই কষ্ট দেখতে পারে না রুপালি তাই জেসমিনের ঘরে সে যায় না। মালা খাবার নিয়ে চলে যেতেই রুপালি কুসুম কে বলে,’আজকের কাজটা ঠিকমতো করেছিস কুসুম?’

-‘হ আপা। পরী আপা যা কইছে তাই করছি।’

-‘ঠিক আছে। অন্দর থেকে তুই বের হবি না। শেফালি কোথায়?’
-‘পরের কাম করতে গেছে।’
-‘আমার মনে হয় ওরা শেফালিকে বিশ্বাস করেছে। তবে এই বিশ্বাস আরো জোরালো করতে হবে। পরী কি নিজের ঘরে?’

কুসুম মাথা নাড়ে। রুপালি পরীর ঘরে যায় কিন্ত ওদের দুজনকে একসাথে ঘুমাতে থেকে বের হয়ে আসে। মনে মনে হাসে রুপালি। পরী শায়ের কে অনেক বেশি ভালোবাসে। কিন্ত ওর জীবনটা ভিন্ন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। সিরাজ ওর সাথে বেঈমানি করেছে। তা সে মালার কাছ থেকেই জেনেছে। সব জানার পর চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে মনটা। তবে রুপালি নিজেকে সামলে নিয়েছে। পরীকে দেখে শক্ত হতে শিখেছে সে।
অনেক ধোঁকা খেয়েছে। আর পারছে না। এবার সময় এসেছে রুখে দাঁড়ানোর। এবার চুপ থাকলে অন্যায় হবে ভেবেই রুপালি রুখে দাঁড়িয়েছে। ওদের প্রথম পরিকল্পনা হলো সবার বিশ্বাস অর্জন করবে শেফালি। তারপর পরবর্তী পরিকল্পনা করবে।

সেই অনুযায়ী শেফালি ওদের গিয়ে বলেছে যে রুপালি সিরাজের সম্পর্কে সব জেনে গেছে। আর সিরাজকে সে শীঘ্রই হ*ত্যা করবে। এবং সেটা খুব তাড়াতাড়ি করবে। ওনারা সবাই যেন সতর্ক হয়ে যায়। এই কথা শুনে সিরাজ সহ সবাই সতর্ক হয়ে গেল। পরীর জন্য অন্দরে ঢুকতে পারছে না কেউ। শুধু শায়ের কেই পরী ঢুকতে দিচ্ছে। কিন্ত শায়ের তো
ওদের কথা শুনবে না। এজন্য আফতাব বেশ চিন্তায় আছে। শায়ের ওনার কথা শুনলে এতদিনে পরীকে শেষ করে দিতো। কিন্ত এখন সব উল্টো হয়ে গেল।

নওশাদ ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে। কাউকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। কারণ টা তার পঙ্গুত্ব। এর আগে যখন সে সুস্থ ছিল তখন এতো ভয় ওর করেনি। এখন অনেক বেশিই ভয় করছে ওর। এমন সময় শেফালি ওর সামনে এলো। এক গ্লাস পানি ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,’পানি নেন ভাই! দেইখা মনে হইতাছে আপনে ভয় পাইতাছেন।’

নওশাদ ছোঁ মেরে পানির গ্লাসটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে শেষ করে দিল। সত্যিই তার খুব ভয় লাগছে।

-‘আমি একখান কথা কই ভাই। পরী আপা আপনেরে আগে মারব কইছে।’
কথাটা নওশাদের ভয় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলো। সে কপালের ঘাম মুছতে লাগল।

-‘আপনে যদি বাঁচতে চান তো পরী আপারে আগে মা*রেন। তাইলেই হইব। আমি আপনেরে সাহায্য করমু আপারে মা*রার।’
বাঁচার তাড়নায় সে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে।সে বলল,’তুই কীভাবে সাহায্য করবি?’

-‘আমি কমু না। আগে আপনে কন আমারে মা*রবেন না তাইলে কমু।’

রাগন্বিত হলো নওশাদ,’তুই বল,আমি তোকে বাঁচাব।শুধু তাই না অনেক টাকাও দেব।’
শেফালি এমন ভান করলো যেন সে ভিশন খুশি, ‘তাইলে তো তো আরও ভালা। হুনেন তাইলে,আপনে আমারে ঘুমের ওষুধ আইনা দেন। পরী আপারে খাওয়াই দিমুনে। আপা আমারে মেলা বিশ্বাস করে। তারপর রাইতে আপনে অন্দরে যাইয়া আপারে মা*ইরা ফালাবেন। তয় একটা কথা কই,আপনের আমার কথা কাউরে কইবেন না। তাইলে এক কান দুই কান কইরা পরী আপার কানে চইলা যাইবো। আর আপনে যদি কাজটা করতে পারেন তাইলে বড় কর্তা খুব খুশি হইব।’

-‘ঠিক বলেছিস তুই। কাউকে বলা যাবে না। তাহলে শায়েরের কানেও কথাটা চলে যেতে পারে। আচ্ছা তোকে আমি ঘুমের ওষুধ এনে দেব।’

নিজের কথা শেষ করে চলে গেল শেফালি। মনে মনে হাসল ও। কারণ নওশাদ ওর জালে ফেসে গেছে। এখন শুধু অন্দরে আসার পালা। সে দৌড়ে গিয়ে পরীকে সব বলে দিল। পরী হেসে বলে,’শিকার ফাঁদের দিকে এগোচ্ছে এখন শুধু ফাঁদে পড়ার পালা।’

নওশাদ শেফালিকে ঘুমের ওষুধ এনে দিলো। সন্ধ্যার পর শেফালি নওশাদ কে জানালো যে সে পরীকে ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে। রুপালিকেও খাইয়ে দিয়েছে যাতে সে টের না পায়। শেফালির বুদ্ধির তারিফ করলো নওশাদ। রাত যখন গভীর হয় তখন সবার চোখের আড়ালে নওশাদ টোকা দিল অন্দরের দরজায়। শেফালি যেন ওর অপেক্ষাতেই ছিল। দরজা খুলে তাড়াতাড়ি নওশাদ কে ভেতরে ঢোকালো। নওশাদ তার লাঠির সাহায্য দোতলায় উঠতে লাগল। শেফালি সোনালীর ঘরটা দেখিয়ে বলেছে ওখানেই পরী থাকে। তাই নওশাদ সেদিকেই যাচ্ছে। শেফালি নওশাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,’আইজ তোর এমন মরণ হইব যা তুই চিন্তাও করস নাই।’
#পরীজান
#পর্ব ৪৭
#Ishita_Rahman_Sanjida(Simran)

❌কপি করা নিষিদ্ধ ❌

একজন নারী যোদ্ধার সাজ যেমন হয় ঠিক তেমনি করেই সেজেছে পরী। চোখ গাঢ় কাজলে ঢেকে ফেলেছে আর মুখটা কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরিপাটি করলো নিজেকে। তারপর পালঙ্কের নিচ থেকে ধারালো সেই ত*লো*য়া*র খানা বের করল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তা দেখতে লাগল বারংবার। ঠিক সেই মুহূর্তে কুসুম খবর দিলো শি*কার চলে এসেছে বাঘিনীর গুহায়। মুচকি হেসে পরী সোনালীর ঘরের দিকে পা বাড়াল। নওশাদ নিজের খোড়া পা নিয়ে আস্তে আস্তে সোনালীর ঘরে ঢুকে পড়ল। বিছানায় সে কাউকে শুয়ে থাকতে দেখে নিঃশব্দে হাসে। কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,’বাঁচার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে পরী। আমাকে বাঁচতে হলে তোমাকে যে ম*রতে হবে।’

ছু*রি*টা নিয়ে পালঙ্কের দিকে এগিয়ে গেল নওশাদ। ইচ্ছামতো ছু*রি চালালো শুয়ে থাকা ব্যক্তির শরীরে। নওশাদ ভাবছে নিশ্চয়ই পরীর শরীর এতক্ষণে ক্ষ*ত বি*ক্ষ*ত হয়ে গেছে। অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারছে না। সে নিজে নিজেকে সুধালো,’র*ক্ত ছিটকে আসছে না কেন?’

-‘তুই র*ক্ত দেখতে চাস? আমি তোকে আজ র*ক্ত দেখাব। তোর শরীরের যত র*ক্ত আছে আজ তুই সব দেখবি।’

নওশাদ ফিরে তাকায়। কুসুম হারিকেনের আঁচটা বাড়িয়ে দিতেই পরীর বদনখানা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রক্তিমা কালো অশ্রুতে টলমল চোখ দেখে নওশাদের আত্মা যেন বেরিয়ে গেল। সে চিৎকার দিতে চাইল মুহূর্তেই কিন্ত ভারি কিছু মাথায় পড়ায় চোখ বন্ধ হয়ে এলো যেন। তবে সম্পূর্ণ জ্ঞান সে হারালো না। মেঝেতে বসে পড়ল সে। আ*ঘাতটা পেছন থেকে রুপালি করেছে। সে এতক্ষণ এই ঘরেই লুকিয়ে ছিল। নওশাদ যাকে পরী ভেবে আঘাত করেছে তা বালিশ ছিল যা চাদরে ঢাকা ছিল।

রুপালি রুষ্ঠচিত্ত কন্ঠে বলল,’ওর গলার আওয়াজ বন্ধ কর কুসুম।’

তৎক্ষণাৎ শেফালির আগমন ঘটে সে বলে,’ওর আওয়াজ আমি বন্ধ করতাছি।’

নওশাদ অবাক হয়ে গেল কিন্ত কথা বলার আগেই কুসুম ওর হাত দুটো পিছমোড়া করে ধরে। নিজেকে ছাড়ানোর সেই শক্তিটুকু কেড়ে নিয়েছে রুপালি। তাই নড়তে পারছে না। শেফালি হাতের গামছা টা নওশাদের মুখে ঢো*কানোর চেষ্টা করছে কিন্ত নওশাদ মুখ খুলছে না। শেষে উপায়ন্তর না পেয়ে নাক টিপে ধরে। শ্বাস নিতে পারে না নওশাদ। তাই শ্বাস নেওয়ার জন্য মুখ খুলতেই শেফালি ওর মুখে গামছা ঢু*কিয়ে দেয়। নওশাদের লাঠি দিয়ে গুতো মেরে মেরে অর্ধেক গামছা গলা দিয়ে নামিয়ে দিলো সে। পরী এগিয়ে একটা চেয়ার আনলো। ওরা ধরে নওশাদ কে চেয়ারের সাথে হাত পা বেঁধে ফেলে। ছুটোছুটি করছে নওশাদ কিন্ত পারছে না। পরী ত*লো*য়াবর হাতে নিয়ে নওশাদের মুখোমুখি বসে।ত*লো*য়া*র দেখে ভয়ে নওশাদের আত্মা যেন বেরিয়ে আসছিল। পরী বলে,’তোর চোখে আমি ভয় দেখতে পাচ্ছি। আমার এতে খুব আনন্দ হচ্ছে।
আরো ভয় পাবি তুই।’

-‘এতো কথা বলিস না পরী। ওকে শেষ করে দে।’

পরী ঘাড় কাত করে নওশাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এতো সহজে?? তাহলে তো আসল মজাটাই মাটি হয়ে যাবে।’

পরী একটানে নওশাদের মুখ থেকে গামছা বের করে আনলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে নওশাদের। তৃষ্ণায় পানি পানি করতে লাগল। গামছা মুখে থাকায় দম প্রায় বেরিয়ে আসছিল। পরী জিজ্ঞেস করল, ‘পানি খাবি?’
মাথা নাড়ে নওশাদ। কুসুম কে ইশারা করতেই সে একটা ছোট বাটি নিয়ে আসে পরী বাটিটা দেখিয়ে বলে,’পানি তো নেই। তোর মতো পি*শাচের তৃষ্ণায় পানিও মুখ ফিরিয়ে নেয়। এখন কি করি?’

একটু ভাবল পরী। হাতের তলোয়ার মেঝেতে রেখে কোমড়ে গোঁজা ছোট্ট ছু*রিটা বের করে। পরপর তিন চারটা দা*গ কেটে দেয় নওশাদের হাতে। ব্যথায় নওশাদ আ*র্তনাদ করে উঠলেও মুখ দিয়ে শব্দ বের হলো না। ওর হাত দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে র*ক্ত ঝরছে আর পরী তা বাটিতে সংগ্রহ করছে। কিছুটা র*ক্ত নিয়ে সে নওশাদের মুখের সামনে ধরে বলে,’নে তোর পিপাসা মেটা।’

এবার নওশাদ তার বাক শক্তি কিছুটা ফিরে পেল। র*ক্ত দেখে ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,’আমাকে ছেড়ে দাও পরী। আমি অনেক দূরে চলে যাব।’

-‘আমার আপাকে ছেড়েছিস তোরা? আপাও তো অনেক দূরে যেতে চেয়েছিল ছেড়েছিস কি?’

নওশাদের গাল দুটো চেপে ধরে রক্ত ওর মুখে ঢেলে দিল পরী। সাথে সাথেই বমি করে দিল নওশাদ। এটা দেখে কুসুম আর শেফালির ও বমি পেল। মুখে কাপড় দিয়ে বমি আটকালো ওরা।পরী তাতেও ক্ষ্যান্ত হলো না। বাকি রক্ত টুকু আবারও মুখে ঢেলে দিলো। এবারও তা ফেলে দিল নওশাদ।

-‘এই হাত দিয়ে আমার আপাকে স্পর্শ করেছিলি তাই না?’
বলতে বলতেই নওশাদের তর্জনী আঙুল টা কে*টে নিলো পরী। এবার চিৎকার করে উঠলো নওশাদ কিন্ত ওর চিৎকার কারো কানে পৌঁছায় না তার আগেই পরী আবার ওর মুখে গামছা ঢুকিয়ে দিয়েছে।
কুসুম আ শেফালি মৃদু চিৎকার করে উঠল। ভয়ে কাঁপতে লাগল দুজনেই। পরী যে এতটা ভয়ানক হয়ে উঠবে তা ওরা চিন্তাও করেনি। ওরা দুজন বাইরে চলে যেতে চাইলে পরী বলে ওঠে,’কোথায় যাচ্ছিস তোরা? এখানেই থাক। ওর যন্ত্রণা তোদের দেখতে হবে।’

কুসুম ভয়ে ভয়ে বলে,’আমার ডর করতাছে আপা আমি যাই। আর এইহানে থাকতে পারমু না।’

বলতে বলতে কুসুম দৌড়ে চলে গেল। ওর দেখাদেখি শেফালিও পালালো। বাকি আছে রুপালি। ওর ভয় লাগলেও শক্ত চোখে সবটা দেখছে। ও বলল,’আমি দেখতে চাই পরী। আমার আপার হ*ত্যা*কারীদের শাস্তি কেমন তা আমি নিজ চোখে দেখতে চাই। ভয় আমি পাব না।’

পরী মুখোশের আড়ালে হাসে। তারপর ছু*রি দিয়ে নওশাদের পরনের শার্ট টা কেটে খুলে ফেলে। বুকে ছু*রি চালিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ওর কলিজাটা আজ কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে। নওশাদের বুকের ক্ষ*তটা বেশ গাঢ় ফলে র*ক্তের বন্যা বয়ে গেল মুহূর্তেই। রুপালি খানিকটা শুকনো মরিচের গুড়া সেখানে লাগিয়ে দিতেই ছটফট শুরু করে নওশাদ। গ*লা কা*টা মুরগির মতো ছুটো ছুটি করছে সে। এর থেকে বুঝি আর কোন যন্ত্রণা হয় না। পরী প্রশান্তির স্বরে বলে,’সারা শরীরের যন্ত্রণা সহ্য করা যায় কিন্ত বুকের যন্ত্রণা সহ্য করা খুবই কঠিন নওশাদ। আজ তোকে আমি ভ*য়া*নক মৃ*ত্যু দেব। তুই হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার সময়ও পাবি না। তোকে আমি জীবিত দা*ফন করব। জানাযা ও হবে না তোর। শশীলের লা*শ তো তোরা পেয়েছিলি কিন্ত তোর লা*শ কেউ পাবে না।’

ব্যথায় ভয়ে কাঁপছে নওশাদ। শরীরে জ্বলন হলেও নড়ার শক্তি নেই। এরই মধ্যে পরী ওর আরেকটা আঙুল কে*টে নিল। এবার আর রুপালি থাকতে পারে না। অনেক সাহস দেখালেও আর সাহসে কুলায় না ওর। তাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। পরী রুপালিকে বাঁধা দিলো না। শুধু বলে কুসুম আর শেফালি যেন গরম পানি দিয়ে যায়।
পরী নওশাদের দিকে তাকিয়ে বলে,’দেখ মৃ*ত্যু যন্ত্রণা কতটা কষ্টের!! তুই চিন্তা করিস না! তোর দাফন খুব ভাল করেই হবে। তোকে গোসল করাব,আগরবাতি জ্বলবে,গোলাপ জল দেওয়া হবে,কবর খোড়া হবে।
কিন্ত তোকে সাড়ে তিন হাত জায়গা দেওয়া হবে না। তুই তো মানুষের মধ্যেই পড়স না। তাহলে তোকে মানুষের মতো দাফন করাটা উচিত হবে না।’

নওশাদ গোঙ্গাচ্ছে, দেখে মনে হচ্ছে সে কিছু বলছে।পরী নওশাদের আরেকটু কাছে এগিয়ে তা শোনার চেষ্টা করে,’আমাকে তাড়াতাড়ি মেরে ফেল। আমার আর সহ্য হচ্ছে না।’
ভাঙা ভাঙা গলায় নওশাদ বলছে। কুসুম আর শেফালি তখন গরম পানির পাতিল নিয়ে ঘরে এলো। পরী ওদের দেখে বলল,’তুই কি নওশাদের একটা আঙুল কা*টবি কুসুম?’
মুখে না বলে মাথা নেড়ে না বলে কুসুম। ভয়ে সে কাঁপছে এখনও। শেফালিকেও একই কথা জিজ্ঞেস করে পরী সেও না বলে দেয়। ওদের ভয় দেখাতে পরীর ভিশন ভাল লাগছে। সে বলে,’গোসল করানোর পর কিন্ত ওর গায়ে আর হাত দেওয়া যাবে না।’

-‘না আপা থাক। আমরা অহন কি করমু?’

-‘গোসল করা।’
কুসুম পাতিলের সব পানি নওশাদের গায়ে ঢেলে দিল। পানি এতটাই গরম ছিল যে সাথে সাথে ফোসকা পড়ে গেল নওশাদের শরীরে। শেফালি আগরবাতি জ্বালিয়ে ঘরে গোলাপ জল ছিটিয়ে দিল। পরী নাক টেনে গোলাপ জলের সুগন্ধিটা নিল। খুব ভাল লাগছে ওর। ওরা তিনজন ঘর ত্যাগ করে নওশাদ কে একা রেখে। উঠোনের এক কোণায় খড়ের গাদা সরিয়ে সেখানে গর্ত খুড়ছে। পরীও সাথে যোগ দিয়েছে। তিনজন নারী মিলে কবর খুড়ছে। কবর বললে ভুল হবে গর্ত খুঁড়ছে। রুপালি পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় সেখানে মালা চলে আসে। ওদের গর্ত খুঁড়তে দেখে বলেন,’কি করস পরী? সবাই এইহানে ক্যান?’

পরী কো*দাল ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়াল। লাফ দিয়ে উপরে উঠে এসে বলে,’আপনি ঘরে যান আম্মা। পিকুলের কাছে যান।’

-‘নওশাদরে ধইরা আনছোস তাই না?’
-‘হুমম।’
-‘তোর বাপ জানি এইসব জানতে না পারে। তাইলে কিন্ত হেয় খারাপ কিছু করব।’
পরী অবাক হলো মায়ের কথায়। তবে সে বুঝতে পারল মালাও ওকে সমর্থন করছে। মালা এতদিনে এটা বেশ বুঝেছে যে সে যতই বলুক না কেন। পরী তার সিদ্ধান্ত বদলাবে না। এখন মালা সাবধান করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। তাই মালা চলে গেল।
মাটি মেখে তিনজন বড় একটা গর্ত খোঁড়ে। তারপর সোনালীর ঘরে যায়। পরী নওশাদকে ভাল করে দেখে। এখনও বেঁচে আছে। শরীরের অনেক র*ক্ত বের হয়ে গেছে। যার ফলে নেতিয়ে পড়েছে। ওর প্রতিটি নিঃশ্বাস এখন শেষ নিঃশ্বাসের প্রহর গুণছে। বড় একটা চাদরে শুইয়ে সেটা ধরে চারজন মিলে নওশাদ কে গর্তের কাছে নিয়ে এল। নওশাদ তখনও নিভু নিভু দৃষ্টিতে ওদের দেখছে আর মনে মনে প্রাণ ভিক্ষা চাইছে। তারপর জীবিত পুঁতে ফেলে নওশাদ কে। মাটির নিচে শ্বাস নেওয়া যায় না। সেখানে অক্সিজেন ও পৌঁছায় না। কাজ শেষ করে পরী কলপাড়ের দিকে এগোয়।

মধ্য প্রহরের কিছুটা সময় পর যখন পুরো গ্রাম ঘুমানো। এমনকি ঝিঁ ঝিঁ পোকা গুলো ও ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন শুধু আকাশের চাঁদ খানা জেগে আছে। পুরো গ্রামটাতে নজর বুলাচ্ছে। তবে কিছু না দেখলেও নওশাদের শেষ পরিণতি গাছের ফাঁক দিয়ে ঠিকই দেখেছে। সম্পূর্ণ কালো রঙের শাড়ি গায়ে জড়িয়েছে পরী। গোসল সেরে শরীর মুছেনি এমনকি মাথাও না। পরনের শাড়িটা অর্ধেক ভিজে আছে। সেই অবস্থাতেই ঘরে গেল পরী। সেখানে শায়ের ওর জন্য অপেক্ষা করছে। পরীই তাকে খবর পাঠিয়েছে।
এমতাবস্থায় পরীকে দেখে বেশ ঘাবড়ে গেল শায়ের। তবে কথা বলল না। পরীর এমন সৌন্দর্য শায়ের কে আটকে দিল। হাসল পরী যা শায়েরের কাছে ভয়ংকর লাগল। নিজের শীতল হাতটা শায়েরের গালে রাখে পরী। যার দরুন হালকা কেঁপে ওঠে সে।
তা দেখে আবারও হাসে পরী। দ্বিতীয় হাত অপর গালে রেখে টেনে তাকে নিচু করে। তারপর পায়ের পাতা উঁচু করে চুম্বন করে স্বামীর কপালে। আদুরে গলায় বলে,’আমি ছাড়া অন্য কোন নারীকে ছুঁয়েছেন কখনো?’

-‘জীবনে দুজন নারীকে আমি গভীর ভাবে ছুঁয়েছি। তার মধ্যে আপনি দ্বিতীয়। প্রথমত আমি আমার মা’কে ছুঁয়েছি আর দ্বিতীয়ত আপনাকে। আর কোন নারীকে চোখ দিয়েও স্পর্শ করিনি।’

-‘এজন্যই কি আপনার স্পর্শে জাদু আছে? যার জন্য আমি এত উতলা হয়ে উঠি?’

-‘আপনার শরীর ঠান্ডা অনেক। কাথাটা গায়ে জড়িয়ে বসুন। নাহলে জ্বর আসবে।’
পরীর হাত ধরে ওকে পালঙ্কে বসায় শায়ের। কাথাটা গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলে,’আপনি দিন দিন আরও অদ্ভুত আচরণ করছেন। এরকম করলে আপনার শরীর খারাপ করবে।’

জবাব না দিয়ে পরী শায়ের কেও টেনে নিলো কাথার ভেতরে। শায়েরের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে।
ভিশন শান্তি লাগছে পরীর। শায়ের বলে উঠল, ‘আপনি ভালোবাসা বিশ্বাস করেন?’

-‘শুধু আপনার ভালোবাসা বিশ্বাস করি। বাকি সব মিথ্যা।’

-‘সম্পানের ভালোবাসা কিন্ত মিথ্যা ছিল না পরীজান। ও সত্যিই বিন্দুকে ভালোবাসতো। শুধু আপনাকে মারতে চেয়েছিল বলে কি ওর ভালোবাসা মিথ্যা?’

পরী মাথা তুলে শান্ত চাহনিতে শায়েরের দিকে তাকালো। শায়ের নিজেও পরীর দিকে তাকিয়ে আছে। স্বামীর চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনের অভিব্যক্ত পড়ার বৃথা চেষ্টা করছে পরী। তা উপলব্ধি করতে পারে শায়ের। সে বলে,’সম্পান কিন্ত খারাপ হয়ে জন্ম নেয়নি পরীজান। তাকে খারাপ বানানো হয়েছে। টাকা এমন একটা বস্তু যার নেশায় ধনী গরীব সবাই পড়ে। এবং এই নেশাই সম্পান আর আমার মতো শত পুরুষ খারাপ কাজে লিপ্ত হয় আর ধনীরা পাপ করেও সকলের আড়ালে থেকে যায়।’

#চলবে,,,,,
#চলবে,,,,
#চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here