পর্ব ২২+২৩
পারবো না ছাড়তে তোকে
পর্ব-২২
রোকসানা আক্তার
থরথর কাঁপা পায়ে হেঁটে ড্রাইনিং এর কাছে যাই।টেবিলের উপর থেকে গ্লাসটা হাতে নিয়ে জগ থেকে পানি ঢালতে থাকি।আর কানিয়ে কানিয়ে সোফার দিকে নজর দিই।
আহা,আমার শ্বশুর আব্বাজান পএিকার দিকে মাথা নুইয়ে তাকিয়ে আছেন।হু আমায় দেখেছেন বৈ-কি। একটু নাহয় ড্রামা করে পএিকা পড়ার ভানে আছেন।
আমি আল্লাহ আল্লাহ বলে ড্রাইনিং টার পাশ কেটে সামনের দিকে পা বাড়াতেই খালামণির মুখোমুখি হয়ে পড়ি।
উনি আমায় দেখামাএই আঙ্কেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
–রফিককে দিয়ে কি এমন হাইব্রিড গাছ লাগিয়েছ গাছে ফুল কেন কোনো মুকুলই দেখছি না!
আমি আর একমুহূর্ত না দাড়িয়ে থেকে এখান থেকে প্রস্থান করি।আর রুমের দরজা বন্ধ করে হাঁপাতে থাকি।নিলয় ভাইয়া এমন ভাবভঙ্গি দেখে ড্যারাচোখে তাকান আমারদিকে।আর মুচকি হেসে বলেন,
–ভয় পেলে নাকি??
আমি মুখে কাচুমাচু ভাব এনে মাথা নাড়ি।উনি এবার দাঁত ভেটকি মেরে হেসে উঠেন।হাসি থামিয়ে তারপর আবার বলেন,
–এভাবে জড়তাকে পাশ কেটে চলতে হবে।পারবে না?
–আপনি আবার আমার ট্রেনিং নিচ্ছেন নাতো?
–য়ু…ভেবে নাও তাই!!
–এতক্ষণ তো আমার প্রাণ অর্ধেক গেল গেল…এই নিন আপনার পানি।
উনি আমার কথার ভ্রুক্ষেপ না করে আমার দিকে সরু দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছেন।
–কি হলো আপনার পানি….!
–এখন আমার পানি চাই না,অন্যকিছু চাই!
–অন্যকিছু মানে??
উনি এবারও আমার কথার জবাব না তুলে আমার দিকে ধীরপায়ে এগুতে থাকেন।আর আমি পিছু হটতে হটতে দেয়ালের সাথে ঠেসে যাই।আর পিছু হটার উপায়ন্তর না পেয়ে বলি উঠি,
–এ-এই উল্টাপাল্টা কিছু করবেন না কিন্তু বলে দিলুম..
–নাথিং, জাস্ট লিপ সিপিং…দ্যাটস মাই ওয়াটার!
আমি যে মুখটা হা করে কিছু বলতে যাবো ওমনি উনি আমার দু’ঠোঁটের উপর আক্রমণ শুরু করে দেন।আমি উনাকে যতই সরাতে চাচ্ছি উনি ততবেশি আমার উপর আক্রমণের ছোবল মারতে থাকেন।এবার আমার পিঠে জোরে খামছে ধরতেই আমি”আআ”–বলে শব্দ করে উঠি।
উনি এবার আমায় একটু নিষ্কৃতি দিয়ে মুখটা সামনে এনে বলেন,
–কিছু হয়েছে মিথি?তুমি যে কাঁদছো?
সত্যি উনি এতটা জোরে আমায় খামচে ধরেছেন আমার পিঠটা হয়তো থেঁতলে দিয়েছেন।
–আরে মিথি কাঁদছো কেন?কোথায় ব্যথা পেয়েছ?এ-এই কাঁদবে না কিন্তু…তাহলে..
–তাহলে কি করবেন??
–তাহলে আরো বেশি আদর করবো।
এ বলে আমায় এক ঝটকায় ঘুরিয়ে নেন এবং জামার পেছনের চেইন খুলে ক্ষত স্থানে হাত বুলাতে থাকেন।
–সত্যিইতো মিথি,অনেক লাল হয়ে আছে স্থানটা!উফস,দেখছ?এত্ত জোরে কেন খামচে ধরলাম।
এ বলে আবারও পিঠে চুমু বসাতে থাকেন।আর বলা শুরু করেন,
–আমার বউটা এত্ত সুন্দর কেন?তুমি কি ফুল আমার?যার শরীরে আলতো স্পর্শের ছোয়ায় কাঁটার আঘাত লেগে যায়!
–য়ু…লজ্জা লাগছে কিন্তু!!
–ওয়েট…আমি মলম লাগিয়ে দিব।তবে এখন না।আরো অনেক আদরের বাকি আছে।এই আদরে আমার মন ভরে নি।
কথা শেষ করেই উনি আমায় কোলে নিয়েবিছানার উপর আধশোয়া রাখেন।আর ভালোবাসতে গেলেই ভালোবাসা হয়ে ওঠেনি।দরজায় কাজের লোকের করাঘাত পড়ে।
–সাহেব?সাহেব?আপনেরে ছ্যার ডাকছে?
–উফস… এই ছেমরি একটু ভালোভাবে আদর করতেই দিলো না।দাৎ!!!
আমার মুখে খিলখিল হাসি চলে আসে।
তারপর নিলয় ভাইয়া দরজা খুলেই বেরিয়ে যান।কাজের মহিলাটি আমার কাছে এসে বলেন,
–বাব্বাহ, সাবিলা থাইকাও আপনে অনেক সুন্দর।আমগো ছ্যারের চোখ কানা এই লিগ্গা আপনেরে মানতাছে না।আরে আপামণি ঠোঁডে কি কিছুর চোট পাইলা নাকি গো?
উনার কথায় আমি তড়িঘড়ি আয়নার সামনের মুখটা রাখি।হায় আল্লাহ…! এই বজ্জাত ছেলেটা আমার ঠোঁটের কি দষা করলো!ঠোঁট দিয়ে তো গড়গড়িয়ে রক্ত পড়ছে।উফস,কেউ এভাবে জানোয়ারের মতো লিপকিস দেয়!তারপর ইতস্ততা নিয়প উনাকে বলি,
–ন-না মানে দে-দেয়ালে..
–আইচ্ছা আইচ্ছা কওন লাগবো না আমি বুঝছি!এই সময়ে এগিন হয়-ই।
উনি আমায় বোকা বানিয়ে লজ্জামুখ করে মিটিমিটি হেসে চলে যান।ইস, তারমানে উনি বুঝে ফেলেছেন!দাৎ…!!
তারপর আমি পুরো রুমে চোখ বুলাতে থাকি।কি জঞ্জাল করে রেখেছে রুমটা।আমি ওড়না কোমরে গুঁজে রুমটা পরিষ্কার করতে থাকি।এরফাঁকে খালামণি “ছকিনা ছকিনা “-শব্দ তুলে সারাবাড়ি উনাকে খুঁজতে থাকেন।ছকিনা খালা বোধহয় এই বাড়িতে তরকারি কাটাকুটির কাজ করেন।খালামণি যখন আমার রুমের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন,তখনই আমি মাথায় ওড়না টেনে গলার হাঁক ছেড়ে খালামণিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠি,
–ছকিনা খালা বোধহয় ছাদের দিকে গিয়েছেন।
খালামণি আমার কথাশুনে আর কিছুটি না বলে হনহন করে চলে যান।আমার উপর উনার ক্রুদ্ধ মনোভাব কখন যে যাবে…ইয়া মাবুদ!!
আমি ভালোভাবে ওড়নাটা শরীরে এঁটে রুম থেকে বের হয়ে কিচেনের দিকে যাই।সেখানে গিয়ে দেখি পটল, লাউ,আলু একটা বোলে সাজানো। খালামণি এগুলো রান্নার জন্যেই বের করেছেন।আমি বডিটা খুঁজে নিয়ে সবজিগুলো কুটতে থাকি।কোথায় থেকে খালামণি এসে বলেন,
–তুমি এখানে আসছো কেন?তোমার কাটাকাটি করা লাগবে না।যাও এখান থেকে!!
আমি উনার কথায় কোনো উওর না করে নিঃশব্দে পটল কেটেই যাচ্ছি।
–কি হলো আমার কথা কানে যাচ্ছে না?আমাকে হ্যাল্পের জন্যে কাজের লোকই আছেন।
তারপরও উনি আমার কোনোরকম ভ্রুক্ষেপ না পেয়ে বসার ঘরে চোখ আউলে নেন।বসার রুমে আঙ্কেল এবং নিলয় ভাইয়া কি নিয়ে যেন কথা বলছেন।খালামণি
নিলয় ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠেন,
–নিলয়?তোর বউকে বল এখান থেকে চলে যেতে!আমার রান্না, কাটাকুটির করার অনেক লোক আছে!
নিলয় ভাইয়া হাই তুলতে তুলতে বলেন,
–কাটলেতো আর সমস্যা না!একজন কাটলেই হবে মা!
–খবরদার!তুই আমায় ওই মুখে আর মা বলে ডাকবি না।আমি তোর মুখে মা ডাক শুনতে চাইনা।ওকে এখান থেকে চলে যেতে বলছি,ব্যাস চলে যেতে।আর–নো এক্সকিউজ!
এ বলে খালামণি রাগ হয়ে অন্যএে চলে যান।তারপরও আমি সবজি কাটা বন্ধ করিনি।ছকিনা খালার থেকে রান্নার সবগুলো বিষয়ের ফাঁকফোকর জেনে নিই।আঙ্কেল কেমন খাবার পছন্দ করেন,খালামণি কেমন খাবার পছন্দ করেন ইত্যাদি। উনি আমায় সবটা ক্লিয়ার করে বলাতে আমার রান্না চড়াতে সমস্যা হয়নি।রান্নার মাঝে আর একবারও খালামণির কিচেনে ছায়া টুকু পর্যন্ত পড়েনি।এতটাই ক্ষ্যাপা আমার উপর!!
একে একে সবগুলো খাবার রান্না করা শেষে ছকিনা খালা খাবারগুলো বোলে করে নিয়ে টেবিলের জড়ো করেন।
পরে আমি রান্নাঘরের সবকিছু ঠিকঠাক আগের জায়গায় রেখে চলে আসি।ঘাম জড়ানো মুখটা ওড়না দিয়ে মুছতে মুছতে রুমের মধ্যে ঢুকি।রুমে ঢুকতেই
নিলয় ভাইয়াকে দেখতে পাই।উনি দু’হাত মুঠ করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছেন
আমি উনার পাশে গিয়ে আলতোভাবে বসি।আর বলি,
–আপনি কোনো কিছু নিয়ে খুব চিন্তিত।
আমার কথার শব্দে উনার ধ্যান ভাঙ্গে।আমার দিকে স্বাভাবিক দৃষ্টি দিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন,
–মিথি?আমি কি বাবার মনে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি!?
এ কথা শুনার সাথে সাথেই আমার চোখদুটো খাঁড়া হয়ে যায়।আমি কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে উঠি,
–কে-কেন হঠাৎ এমনটি বলছেন!!..
–বাবার সাথে আজ যে কথা বললাম।কথার মাঝে বাবার হৃদয়টাকে উপলব্ধি করতে পেরেছি।বাবার মনটা ভীষণ ভার হয়ে আছে।আমাকে কেন জানি তেমন বকাঝকা করেননি,জাস্ট এটুকুই বললেন–বাবারে,আমি তোকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারেনি,এটাই আমার ব্যর্থতা!তোর এখানে কোনো দোষ নেই দোষ আমাদের ভাগ্যের!!
–প-পরে আপনি কি বললেন!!!
–আমি আর কিছুই বলিনি মিথি।জাস্ট চুপ করে শুনে গিয়েছি।বাবাকে কেনজানি খুব অসুস্থ অসুস্থ মনে হচ্ছে।কিন্তু বাবা আমায় বলছেন না।দেখ,আমি সাবিলাকে কিভাবে বিয়ে করতাম,ওকে তো আমার দেখলেই বিরক্ত লাগতো!মা-বাবাকে এটাই বুঝাতে পারিনি!
–আপনি কি আমায় পেয়ে অসুখী?
একথা শুনে নিলয় ভাইয়া আমারদিকে কটু দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন।
–এটা কেমন কথা বললে,মিথি!?
–কিছু না!!
দম ছেড়ে নিলয় ভাইয়ার পাশ থেকে উঠে দাড়াই।নিজেও জানি না নিলয় ভাইয়ার ওই কথাতে কেনজানি একবুক কষ্ট পেয়েছি!কথাটা কানে বাঁজতেই বুকের মাঝখানে কেউ যেন ছুরি বসিয়ে দিয়েছে।।হুট করে উনি আমার পেছন থেকে হাতটা ধরে ফেলেন।আর আমার সামনে এসে বলেন,
–পাগলী একটা..!কেউ এভাবে রাগ করে??আমিতো জাস্ট কথার কথা বলেছি!
আমি বিরক্ত নিয়ে চুপ হয়ে থাকি।উনি আমার রেসপন্স না পেয়ে আমার গালে হাত রেখে আবার বলতে থাকেন,
–মিথি?এই মিথি?বাব্বাহ..আমার সোনা বউটার এত্ত রাগ!!?কইত্তে এত্ত রাগ উঠে দেখি..
এ বলে উনি আমার কপালে চুম্বন দিতে গেলেই আমি উনাকে এক ঝাটকায় আমার থেকে সরিয়ে নিই,আর বিড়বিড় করে বলি..
–আমাকে ছোঁবেন না!
তারপর তরতর করে ওয়ারড্রব থেকে একটা ড্রেস হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ি।
পারবো না ছাড়তে তোকে
পর্ব-২৩
রোকসানা আক্তার
রাত ১০টা বেজে ৩০ মিনিট,
আমি বিছানার উপর বসে বসে ফেইসবুকে নিউজফিড ঘাঁটাঘাঁটি করছি।নিলয় ভাইয়া কোথা থেকে এসে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলেন,
–মিথি?একটা গুড নিউজ আছে।
আমি উনার কথায় কোনোরকম ভ্রুক্ষেপ না করে ধীর মগ্নে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছি।উনি আমার রেসপন্স না পেয়ে আমার কাছে এসে বসেন।আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে গলায় খেচকি টেনে বলা শুরু করেন…
–লাল টুকটকি এখনো আমার উপর রাগ!এই, রাগ করলে কিন্তু তোমায় আরো অনেক বেশি ভালো লাগে!
এবার আমি মুখটা অন্যদিক ঘুরিয়ে নিই।উনি এবার আস্তে আস্তে আমার কাছে এসে কানে ফিসফিস ফিসফিস করে বলতে থাকেন,
–লাল শাড়ির উপর লাল টুকটুকে মুখখানার বার বার প্রেমে পড়ছি।একটু ভালো তো বাসবে!এভাবে আর কত্ত ইগনোর করবে,হু..?
আমি ভড়কে গিয়ে উনার দিকে আড়নয়নে তাকিয়ে মুখভার করে বলি,
–আমার ভালোবাসার কী দরকার!সাবিলার ভালোবাসা হলেই হবে!
উনি আমার কথা শুনে আওয়াজ তুলে হাসতে থাকেন।আর হেসে হেসে বলেন,
–শুনলাম,সাবিলা কাল আমাদের বাসায় আসবে।দেখি কাল থেকে ওর সাথে ভালোবাসা-টালোবাসা করতে পারি কি না!
এবার সত্যিই আমি কেঁদে দিই।আমার দু’চোখ বেয়ে গড়গড় করে অশ্রু ঝরতে থাকে।তারপরও উনি টিটকারি করে যাচ্ছেন।কান্নাটাকে ধামাচাপা দিয়ে বলি,
–ওকে ফাইন!
এ বলে বিছানা ছেড়ে ফ্লোরে পা ফেলতেই আমার শাড়ির আঁচলে টান লাগে।শাড়ির আঁচলে টানটা যে নিলয় ভাইয়ার তা বুঝতে পারছি!তারপর উনি মনের সুরে গান গাইতে গাইতে আমার কাছে এসে বলেন,
–ও ললনাবতী ললনাবতী, কেঁদো না গো তুমি!তোমায় আমি ভালোবাসি,কেন বুঝনা তুমি!
এ বলে চোখের পানি মুছে দেন।চিরল দু’ঠোঁটের কিণারায় একটা মৃদু হাসি টেনে আনতেই আমি দু’চোখ বন্ধ করে ফেলি।উফস,উনার ওই হাসি দু’চোখ দিয়ে দেখলে সত্যি আমি ঘায়েল হবো।নিজেকে মানাতে পারবো না।আল্লাহ, কেন উনাকে এত্ত বেশি সুন্দর করে বানালেন! নাহলে তো উনার সবকিছুর বারংবার প্রেমে পড়তাম না!
–মিথি?এই মিথি?চোখ বন্ধ করলে কেন?আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে এভাবে চোখ বন্ধ করে ফেলেছ!?
আমি বাচ্চামো ভঙ্গিতে বলে উঠি,
–আগে বলুন,এই ডাইনী সাবিলার কথা আমার সামনে আর তুলবেন না!
–আচ্ছা বাবা আর বলবো না!এবার হ্যাপী?
–য়ু-হু!.
উনি আমার না-বোধক উওর পেয়ে চোখে তীর্যকভাব এনে বলেন,
–কে-কেন?
–আপনার ওই দু’ঠোঁট দিয়ে আমার দু’গালে দু’টো চুমু দিবেন।
উনি হাত চেপে একটা মুঁচকি হাসি মুখে এঁটে আমার দু’গাল কামড়ে ধরেন।
–আহহ।
–ওকে ওকে চুমুই দিচ্ছি।তবে এখানে না!
আমি বন্ধ চোখেই বলে উঠি,
–তাহলে কোথায়??
উনি কিছু আর না বলে আমাকে আলতো বিছানার উপর শুইয়ে দেন।আর পেটের উপর থেকে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে চারটা চুমু বসান।আমি থরথরে কেঁপে উঠি।লজ্জায় লাল হয়ে আসে আমার মুখখানা।
তারপর উনি আস্তে আস্তে আমার গাঁ বেয়ে উনার মুখটা আমার মুখের সামনে এনে বলেন,
–এখানে!আজ মনে খুব ইচ্ছে জমেছিল এখানে চুমু দেওয়ার,এখন তা পূরণ হলো।আচ্ছা তুমি এখনো কি রাগ?নাকি তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ভালোবাসছি!
আমি উনার প্রশ্নের আর কোনো উওর না দিয়ে উনাকে জড়িয়ে নিই আমার দু’বাহুডোরে।আর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠি,
–স্ত্রীদের সব রাগ-অভিমান ধূলিসাৎ তার স্বামীর ভালোবাসায়!!
সকাল বেলা গোসলটা সেরে রুম থেকে বের হতেই ছকিনা খালা দৌড়ে আমার কাছে আসেন।আর, কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠেন,
–আপামণি,ছ্যার এহনো বিছানা থাইকা উঠবার পারসে না।গাঁয়ে মনে হইতাছে অনেক জ্বর!মেডামেরও প্রেসার বাইড়া গেসে।মেডাম সোফার উপর মাথা ফেলে শুয়ে আছে।সেজন্যে মেডামকে আর জ্বালাতন করিনি।
আমি তড়িঘড়ি আঙ্কেলের রুমে প্রবেশ করি।এমনিতে উনার রুমটা দেখলে অন্যসময় মনে খুব ভয় কাজ করতো,কিন্তু আজ ভয়-ডর সবকিছুকে হার মানিয়ে আঙ্কেলের সামনে গিয়ে দাড়াই।আঙ্কেলের চোখে-মুখে ছটফটানির ভাব, এবং কিছুক্ষণ পর পর কাতরে উঠছেন।বোধহয় ভীষণ কষ্ট হচ্ছে উনার।আর কেঁপে কেঁপে উনার সারা শরীর ঝাঁকানি দিয়ে উঠছে।পাশে রাখা কম্বলটি আমি আঙ্কেলের গায়ে এঁটে দিই।ছকিনা খালাকে দিয়ে একবালতি পানি এবং একটি প্লাস্টিক মগ আনিয়ে নিই।
আমি আঙ্কেলের পাশে বসে উনার মাথায় পানি ঢালতে থাকি।।নিলয় ভাইয়া আমায় কোথাও দেখতে না পেয়ে আঙ্কেলের রুমে উঁকি মারেন।এখানে আমায় দেখতে পেয়ে একটা মুঁচকি হাসি দিয়ে ইশারায় বলেন,
–আচ্ছা থাকো।আমি গেলাম…
এভাবে ১ ঘন্টা যাবৎ মাথায় পানি দিই।মাথায় পানি দেওয়া শেষ হলে আমি ছকিনা খালাকে দিয়ে বাবাকে একটা প্যারাসিটেমল খাইয়ে দিই।অতঃপর রুম থেকে বাহিরে পদার্পণ করতেই সাবিলাকে দেখতে পাই।
সে বোঁচকাবুচকি হাতে নিয়ে এই বাড়িতে এসে হাজির। বেড়ানোর প্রিপারেশন যেভাবে নিয়ে এ বাড়ি আসছে,দেখে মনে হচ্ছে বছরের পর বছর এ বাড়ি থাকতে এসছে।আজাইরা যত্তসব।আমায় দেখে সাবিলা হকচকিয়ে যায়।আর কড়া গলায় বলে উঠে,
–আউ মিথি,তুই!!বাব্বাহ,তোর সাহস দেখে আমি পঞ্চমুখ!চোর আবার মুখ দেখাতেও পারে।মাই গড,মাই গড…এই ভাবান্তর আগে আমার মাথায়ই ছিলনা।তো আঙ্কেল,আন্টি তোকে মেনে নিয়েছে তো?
–সে কৈফিয়ত তোমাকে দিতে যাবে কেন!?—পাশ থেকে নিলয় ভাইয়া বলে উঠেন।
–অউ! নিলয় ভাইয়া,আপনি আবার কই থেকে আসলেন!
–আকাশ থেকে!বেড়াতে এসছো,বেড়ানো মনোভাব নিয়ে থেকো।এখানে কে কি করে,কিভাবে থাকে এসব নিয়ে তোমাকে কেউ মাথা ঘামাতে বলেনি!!
–ভাইয়া,আপনি আমায় এসব বলতে পারলেন!?
এ বলেই সাবিলা হাউমাউ কান্না করে দেয়।সাবিলার কান্নার আওয়াজে খালামণির চোখখুলে যায়।তারপর চোখ কচলাতে কচলাতে সোফার উপর উঠে বসেন,আর বলেন,
–এখানে কিসের এত্ত হট্রগোল।কী হয়েছে?
–ওউউ আন্টি,আপনি ঘুম থেকে জেগেছেন ভালো হয়েছে!দেখেন,মাএ আমি এই বাসায় আসলাম! মিথিলা আমায় দেখামাএই উলটাপাল্টা বকাঝকা শুরু করে দিল!আআআআআআআ….
–মিথ্যে বলছিস কেন মিথি?আমি তোকে কখন বকাঝকা করলাম!
আন্টি আমার দিকে কটু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ধমকের সুরে বলে উঠেন,
–তুই চুপ কর!
আবার ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি রেখে কথার প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন,
আর,সাবিলা তুইও চুপ থাক!দেখতে ইতো পাচ্ছিস আমরা দু’দুটো মানুষ ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছি তারপর এমন কোলাহলে সুস্থ মানুষই তো অসুস্থ হয়ে যাবে।আর নিলয়?তুই তোর বউকে নিয়ে রুমে যা!
নিলয় ভাইয়া বেখেয়ালি একটা হাসি দিয়ে আমার ডানহাতটা টিপে ধরেন।আমায় ইশারা করেন রুমের দিকে যেতে।আমিও উনাকে সম্মতি দিয়ে রুমে চলে আসি।উনি রুমের দরজাটা বন্ধ করেই লাফ মেরে বলে উঠেন,
–দেখছ মিথি?মা এখন তোমাকে আমার বউ বলে সম্বোধন করেছেন।দেখবা,আস্তে আস্তে সবাই সবটা মেনে নিবেন।
–ক-কীভাবে!?আমিতো কিছুই বুঝলাম না!
–এই যে মাএ বললেন “নিলয়,তুই তোর বউকে নিয়ে রুমে যা!”
–ওহ এই কথা!উফস,এটাতো কথার কথা বলেছেন!গাধা আপনি??
–য়ু-হু!!মা যে জিনিসটা একদম মানেন না তার ধারেকাছেও ঘেঁষেন না।যেটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নেন,তা মুখ ফসকে বলে পেলেন।এটা মায়ের একটা আদি অভ্যেস!বুঝলে??
উনার কথায় মুখে নিরাশা একটা ভঙ্গি এনে বলি,
–তা জানি না।আল্লাহ যা করেন,সবটাই আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি।
এভাবে অনেকদিন যায়।আর আঙ্কেলও সুস্থ হয়ে উঠেন।তারপর থেকে উনি নিয়মিত অফিসে যাতায়াত করেন।এরমাঝে খালামণি,আঙ্কেল আমায় আর কিছুটি বলেননি।কথায় কথায় ধমক,দোষ ধরা,অন্যের উপর দিয়ে কিছু বলা এই অভ্যেসগুলো প্রায়ই বিলীন হয়ে যায়। রান্নাবান্না, টুকিটাকি কাজকর্মে আগে যেমন নাঁখোশ করতেন,এখন আর তেমনটি করেননা।
তবে,আমার সাথে তারা কেউই কথা বলতেন না এবং এখনও বলেন না।
আমায় দেখলে স্বাভাবিকভাবে নিজেরা নিজেরা কথা বলেন।আর আমায় দেখেও না দেখার ভানে থাকেন।
আর সাবিলা!!সে নিলয় ভাইয়ার জন্যে আমার উপর আঙ্গুল তুলে কথা বলার সাহস পায় না।
এখন এসব প্রাণোচ্ছল ভাবনা মনের মাঝে ভাবতে ভাবতে
আমি বাড়ির বাহিরে রোজগার্ডেনের দিকে পা ফেলে হেঁটে যাচ্ছি।আর হৃদয়ের কোণ কিছুক্ষণ পর পর একটা চাপাহাসি জোনাকির মতো জ্বলে উঠছে।জানি না– বিধাতা এই হাসিটুকুর কেন এত্ত আনন্দের দিয়েছেন।যে হাসির মাঝে নিজেকে সর্বসুখী মনে হচ্ছে।
এরইমধ্যে, একটা গোলাপ ফুলের কাঁটার আঘাত পাই।আর “” আআআআআ”করে শব্দ করে উঠি।আমার মাথায়ই ছিলনা আমি যে কখন রোজ গার্ডেনের ভেতর ঢুকে গেলাম।
হুট করে পেছন থেকে কারো আওয়াজ পাই।পেছনে মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি খালামণি দাড়িয়ে আছেন।
আমি ইতস্ততাবোধ নিয়ে এদিকওদিক তাকাতে থাকি।উনি গলার স্বর চিকন করে বলে উঠেন,
–এই ভরদুপুরে এসময় বাসা থেকে বের হওয়া উচিত না।আর নিলয় সেই কখন থেকে খুঁজতে খু্জতে একাকার । আর সে আসে কি না গার্ডেনে তাও অবেলায়!
এ বলেই উনি হনহন করে চলে যান।মনের অজান্তেই গোলাপ ফুলের মতো আমার মুখেও একটা হাসি ফুটে ওঠে।আর আমি হাসির রেখায় পেটের দিকে তাকায়।খালামণির বোধহয় আমার পেটের বাবুটির জন্যে ভীষণ মায়া জমেছে।এইজন্যে অবেলাতে বাসা থেকে বের হওয়ার কারণে রেগে গেছে।।সত্যি কি তাই??
য়ুয়ুয়ুয়ু–হুম তাই!!
আমি পেটে হাত বুলিয়ে বলি,
–সোনাবাবু,তুমি অনেক লক্ষী।এইযে তোমার দাদু তোমার প্রতি কেয়ারনেস হয়ে কঠোর নজরদারি রাখছেন।
চলবে….