পিচ্চিদের সংসার পর্ব ১

“সারাদিন তোমার উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে এখন ঘুমিয়ে পরো৷ আর এই ভারী শাড়ি খুলে পাতলা কাপড় পরে নাও৷ টেবিলে তোমার লাগেজ রাখা আছে”, রুমে ঢুকেই সোজা অপরিচিতার সামনে গিয়ে কথাটা বলল রকিব।

স্বামীর আচরণে অবাক হয়ে গেল নববিবাহিতা অপরিচিতা। সারাদিন কত টেনশনে ছিল সে৷ স্বামী নামক পুরুষ টা কেমন হবে৷ সে কি তাকে বুঝতে পারবে! ছোট মেয়ে হিসাবে ছাড় দিয়ে চলবে! নাকি সর্বদা পুরুষত্ব দেখাতে গিয়ে গম্ভীর হয়ে থাকবে।

অপরিচিতা সবে মাত্র নবম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা-মা আর একটা বড় ভাই নিয়ে মধ্যবিত্ত্য একটা পরিবারে বসবাস করত অপরিচিতা। আর রকিব এখনো অনার্স শেষ করেনি কিন্তু কম্পিউটার এ ভালো দক্ষতা থাকাতে একটা ছোট চাকরি করে। এ বছরই একটা কোম্পানিতে চাকরিটা পেয়েছে। পরিবার মধ্যবিত্ত, বাবা -মা আর একটা ছোট বোন আছে কেবল। মা-বাবার বয়স তেমন হয়নি। তবে এখন আর মানুষ কয় বছর বাঁচে!

আর রকিবের বাবা এলাকায় বেশ পরিচিত মুখ। তিনিও কিনা শেষ পর্যন্ত একটা বাল্যবিবাহ দিল। তা দেখে সমাজের লোকের মাথায় হাত। এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি হয়ে কিনা শেষ পর্যন্ত একটা বাচ্চা মেয়েকে ছেলের বউ করে আনল! মানলাম ছেলের বয়স ২১ ছুঁইছুঁই। আর ক’দিন পরেই বয়স ঠিক মতো হয়ে যাবে। কিন্তু মেয়েটার বয়স তো মাত্র ১৫ বছর৷ তার কি হবে! সমাজের “চা স্টল” বিসিএস ক্যাডার দের সবার একই চিন্তা।

রকিব নিজেই টেবিল থেকে অপরিচিতার বড় লাগেজটা খাটের উপরে রেখে বলল, “শাড়ি খুলে পাতলা কাপড় পরে নাও।”

কথাটা বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল সে।
নিজেই দরজাটা চাপিয়ে দিল বাইরে থেকে। অপরিচিতা শাড়ি চেঞ্জ করে মিষ্টি রঙের একটা থ্রী পিছ পরে নিল৷ তারপর লাগেজটা আগের জায়গায় রেখে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পরল৷

কতক্ষণ হয়ে গেল তবুও রকিব ঘরে আসছে না দেখে বুঝতে পারল। হয়তো তার এখনও কাপড় চেঞ্জ করা হয়নি ভেবে সে ঘরে ঢুকছেন না। তাই সে বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় গেল৷ বারান্দার এক পাশে দাড়িয়ে আছে রকিব। অপরিচিতা বুঝতে পারে না কিভাবে ডাক দিবে। তাই একটু শব্দ করে হাঁটল। এতেই রকিব পিছনে তাকায়ে অপরিচিতাকে দেখতে পেল।
অপরিচিতা আবার ঘরে চলে এলো। রকিবও অপরিচিতার পিছুপিছু ঘরে চলে এলো।

পরদিন সকাল বেলা অপরিচিতা সাজগোজ করার ব্যস্ত তখনই ঘরে ঢুকে রকিব। অপরিচিতা মাথা নিচু করে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রকিব অপরিচিতার কাছে এগিয়ে আসতেই সে পিছিয়ে যায়৷ রকিব আর সামনে না গিয়ে বলে, “তুমি কি আগের স্কুলেই পড়বে, নাকি আমাদের এখানের স্কুলে ভর্তি হবে?”

— “এখানের স্কুলেই ভর্তি হব।

— “আচ্ছা ঠিক আছে। আর শোন একটু পরেই মেহমান সবাই আসতে শুরু করবে।রেডি যা হবার তাড়াতাড়ি হয়ে যাও৷ আর কেউ কোন আত্মীয় যদি অতিরিক্ত কিছু জিজ্ঞেস করে তবে কিছু বলবে না চুপ থাকবে৷ আর যদি বলে যে চুপ করে আছ কেন উত্তর দেনও না কোন৷ তবে বলে দিবে আমি না করেছি। প্রয়োজন পরলে আমাকে জিজ্ঞেস করে নিতে।”

অপরিচিতা শান্ত মেয়ের মতো মাথা নাড়ল। বাঁকা হাসি দিয়ে বিদায় নেয় রকিব।

বৌভাত এর অনুষ্ঠান রকিবদের বাড়িতেই হয়েছে৷ অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে বিকাল। আসরের নামাজের পরেই রকিব তার নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে রীতিমতো শশুড়বাড়ি চলে যায়।

সন্ধ্যার আগেই সকল মেহমান বিদায় নিল। সবাইকে বিদায় দেয়া শেষ করতে করতেই মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে গেল৷ রকিবের বাবা এলাকার মসজিদে নামাজ পড়তে গেল। নামাজ পড়া শেষ করে বের হতেই এলাকার লোকদের দৃষ্টি কেন্দ্রে পরিনত হলেন তিনি৷ কেউ বা তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিচ্ছেন।কেউবা মুখ ঘুড়িয়েই একটা বি-তৃষ্ণার নিশ্বাস ফেলছেন৷ কেউবা মুখটা মোচড় দিয়ে ব্যাঙ্গ করছেন৷

প্রতিদিন এর রুটিন মতো সন্ধ্যায় চা খেতে বাজারে গেলেন। চা স্টলে সবাই উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাঁসছে। বাল্যবন্ধু রফিক সাহেবের হাসিটা তিনার নজরে পরল৷

চা খেয়ে বের হলেন দুজন একই সাথে।
— “ কি ব্যপার রফিক মিয়া মুচকি মুচকি হাসলে কেন? রান্না কি বেশী ভালো হয়নাই নাকি”, বললেন রকিবের বাবা।

— “ না ভাই রান্না খারাপ হয়নি রান্না ভালোই হয়েছে”, উত্তর দেন রফিক মিয়া।
— “ তাহলে মুচকি মুচকি হাসলে যে। ”
— “না তেমন কিছু না”।

— “আরে মিয়া সরমাও(লজ্জা পাও) কেন বলে ফেল। ”
— ‘ কি আর বলমু তুমি এলাকার মাতব্বর মানুষ, তুমি কি না শেষ পর্যন্ত পোলাডারে বাল্যবিবাহ দিলা, কামডা কি ঠিক হইল।”

— “শোন রফিক মিয়া, শোনলাম তোমার পোলা উত্তর পাড়ার শামসুর মাইয়ার লগে কি ইটিস পিটিস করে সেইটার উত্তর দাও তো আগে। ”

— ‘“আরে কি কও এইসব, এই বয়সে পোলাপান এই সব একটু আকটু করে। এখন পোলা মানুষ কি আর ঘরে বাইন্ধা রাখতে পারুম?”

— “ তা তোমার পোলা বাইন্ধা(বেঁধে) রাখতে পারো না তো আমার পোলারে বাইন্ধা রাহাতে(বেঁধে রাখার কারনে) এমন করলা কেন?” পাল্টা প্রশ্ন করে রকিবের বাবা।

— “ বুঝলাম না তোমার পোলা বাইন্ধা রাখলা মানে? বুঝলাম না বিষয় টা! ”

— “ বুঝবা কেমনে চায়ের দোকানের বুদ্ধিজীবী হলে তো এমনই হওয়ার কথা। শোন আমার পোলাডারে যে এখন বিয়ে করাইলাম এখন কি ওরে কোন দিন উত্তর পাড়া আর দক্ষিণ পাড়াতে দেখার সুযোগ আছে কারো! ”

— ‘ আরে এতো পেঁচাইয়া কথা কও কেন সিধা (সোজা) ভাবে কও। ”

— ‘শোন তাইলে, এই বয়সে পোলাপান এমন করে কথাটাতো ঠিকই কইছ কিন্তু সেইটা থেকে বাঁচতে হইলে কি করতে হইব তাতো বুঝলা না। এই বয়সে ছেলেপেলে উল্টো পাল্টা কাজ করে বাবা মার মানসম্মান ডুবায়। কিন্তু এখন যে আমার রকিবরে বিয়ে করাইলাম এখন কি ওয় আমার মান সম্মান ঢুবানোর কোন সুযোগ আছে? নাকি নিজের সংসার চালানোর চিন্তা করব সব সময়।”

— ‘ তা ঠিক কইছ, কিন্তু এই বয়সের ছেলে মেয়ে সংসারের কি বুঝব?”

— “ বছর খানেক আগে যে সজীবের বড় মাইয়াডা দক্ষিণ পাড়ার জুয়েলের ক্লাস ১২-র পোলার লগে পলাইয়া গেলো বাপের মুখে চুন কালি দিয়া, ঐ মাইয়া যে কয়দিন আগে পোলাপান লইয়া বাড়িতে আইছে তা কি দেখছ না! ক্লাস এইট এর মাইয়া একবছর পরে পোলাপান নিয়া বাড়িতে আসছে আর তুমি কও মিয়া ওরা সংসারের কি বুঝব৷”

— “ কিন্তু ভাই তা হয় বুঝলাম কিন্তু এই বয়সে পোলাপান হইলে তোমার পোলার বউটায় কেমনে কি করব কও। আর যদি অল্প বয়সে পোলাপান হইতে গিয়ে মইরা যায়৷”

— ”শোন রফিক মিয়া, এখন কার বই খাতা কি কিছু ঘাটো(পড়?)। এখনকার ক্লাস এইট নাইনের বইয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ এর (৮-১০) টা নিয়ম শিখাইয়া দেয় তা তো মনে হয় দেখ নাই। আর এখন কার পোলাপান এই সব আমগো থেইকা ভালোই বুঝে৷ আর হোন (শোন) জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে। ১২-১৩ বছরের একটা মেয়েকে আল্লাহ গর্ভধারন করার ক্ষমতা যেহেতু দিছে সেহেতু ১৫-১৬ বছরের একটা মেয়েকে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার যোগ্যতা ও দিছে। বাচ্চা হওয়ার সময় মরে না। মরে হায়াত শেষ হইলে। আর অসুস্থ হয় আমাদের মানুষেরই অবহেলার কারনে। প্রয়োজন মতো সব কিছু একটা মা-কে দিলে তার ক্ষতি হয় বলে আমার মনে হয় না।” বলেন রকিবের বাবা।

— “তা না হয় মানলাম কিন্তু দেশের একটা আইন তো আছে তুমি একটা মাতবর মানুষ দেশের আইন ভঙ্গ করলে কেমন দেখা যায়।”

— “ আচ্ছা সেই উত্তর দিব তার আগে তুমিই বলো আল্লাহ আগে না দেশ আগে?”

— ” অবশ্যই আল্লাহ আগে আল্লাহর উপরে আর কে। সবার উপরে স্রস্টা তারপর অন্য”।

— “হ্যাঁ ঠিক কইছ, এখন তোমারে উত্তর দেই। আল্লাহ তা’য়ালা বলতেছেন, (ইসলামের সকল নীতিমালা প্রতক্ষ বা পরোক্ষভাবে আল্লাহর কথা) তোমার সন্তানকে বিয়ের বয়স হলেই বিয়ে দেও। নয়ত তার দ্বারা যদি কোন গুনাহ হয় তবে সেই গুনাহের জন্য তুমি দ্বায়ী।(কথাটা সরাসরি এমন নয়,কিন্তু মুলত এমনই)। আর একটা পোলাপান পরিপূর্ণ হয়ে যায় ১২ বছরেই। এখন কার পোলাপান তো আরো পাকনা। সেই জায়গায় দেশের আইন বলে ছেলেরা ২১ বছরের আগে বিয়ে করতে পারবে না। আর আমরা বাবা মা ও সেই টা মেনে বিয়ে করাই না। তারপর ছেলে বিয়ে করে গিয়ে সেই ২৭-২৮ বছর বয়সে। তা এই যে মাঝখানে ১৫-১৬ বছরের বিশাল ব্যবধান এর মাঝে যদি তার দ্বারা কোন গুনাহ হয় তবে তারজন্য তো আমরাই দ্বায়ী হব নাকি কও! কেউ যদি বলে তার ছেলে কোন গুনাহ করে না৷ তবে তার সন্তান ছেলে’ই না। অবশ্যই গুনাহ করে। কেউ ছোট কেউ বড়৷ তা আমি যে আমার ছেলেরে ২০ বছরের মাথায় বিয়ে করাইলাম এর মানে কি আমি আমার উপর থেকে গুনাহের বোঝা কমাইয়া নিলাম৷ পোলাডারে ও আগে আগে সংসারী কইরা দিলাম।”বলে রকিবের বাবা।

— ” বুঝলাম কিন্তু তার পরেও তো দেশের আইন বলে একটা কথা আছে।”

— “আরে মিয়া কিসের আবার সেই এক কথা। দেশের আইন কি। কিসের আইন। দেশের আইনের দোহাই দিয়ে ইসলামে চলা যায় না৷ বরং ইসলামের আইনের দোহাই দিয়ে দেশ চালাতে হয়। আজকে আমরা দেশের আইন দিয়ে ইসলাম চালাতে যাই৷ তাই আমাগো এই দু্রবস্থা৷ আজকে দেশের হাজার হাজার হাসপাতালে দৈনিক একটা না একটা মেয়ে যাচ্ছে এবরেশন করার জন্য। কেন! কারন একটাই৷ বাবা মা ঠিক বয়সে বিয়ে দেয় নাই৷ এখন অবাধে চলাফেরা কইরা পোলাপান জন্ম দিতেছে৷ আর লোক চক্ষুর আড়াল হওয়ার জন্য সেই বাচ্চা নষ্ট করতেছে৷ ১৪ বছরের মেয়ে হোস্টেলের রুমে বাচ্চা জন্ম দিয়ে আবার সেটা ফেলে দিয়ে চলে আসতেছে৷ কেউ বা সন্তান জন্ম দিয়ে বিল্ডিং থেকে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে। কেউবা ডাস্টবিনে ফেলতেছে৷ আর সেটা কুকুর মুখে নিয়ে দৌড়াচ্ছে। কেউবা বাঁশঝাড়ে ফেলে আসতেছে বৃষ্টির মধ্যে কাকে সেটা খাওয়ার চেষ্টা করতেছে।(এটা আমি আরো ৯-১০ বছর আগে নিজ চোখে দেখছি)। প্রতিদিন পেপার হাতে নিতেই শুনি এখানে ধর্ষন সেখানে ধর্ষন। পুলিশে ধর্ষনকারী শিক্ষক ধর্ষনকারী৷ এখন বলবে আবার ওরা তো বিবাহিত ই।বিবাহিত তো কি হইছে৷ বলা হয়েছে হজ্জে যাওয়ার সময়েও মুহরিম পুরুষ না থাকলে দরকার নেই হজ্জের৷ আর সেখানে তোমার আমার মেয়ে অর্ধউলঙ্গ হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাতের বেলায় একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন আবার হয়তো বলবে তাই বলে কি ধর্ষন করতে হবে? আরে আমি সে কথা বলিনি। আমি বলেছি সব কিছুই ইসলামি আইনের অভাব। ইসলাম বলে মেয়ে তুমি ঢেকে রাখো৷ ছেলে তুমি নিচে তাকিয়ে থাক। আর এখন শয়তান বলে, ঐ দেখ সে খুলে রেখেছে , তো তুই কেন নিচে তাকিয়ে আছস দেখ না কত সুন্দর।তাও এতো রাতে একা একা৷ সব টাই তো ইসলামের বরখেলাপ। তো ধর্ষন আর খুন তো হবেই। সব ইসলামের বরখেলাপ করে বিচার পরে ইসলামি চাইবে। কিন্তু তা কি এতই সস্তা? চলেছে যেমন বিচার ও হয় তেমন। আর আমরা নিরব দর্শক। তাই বলি শোনো মিয়া। আমার পোলারে বিয়ে করায়া ফেলছি এখন তো অন্তত তোমার ছেলের মতো উত্তর পাড়া যাবে না৷ আর কেউ আঙ্গুল তুলে বলবে না তোমার ছেলে এই করে ঐ করে। আমার ছেলের দ্বারা আর ২-৪ টা মেয়ের জীবন ও নষ্ট হবে না। বরং একটা মেয়ের জীবন সুন্দর হবে।” এক শ্বাসে রাগের সহিত কথা গুলো বলে রকিবের বাবা।

— ” ভাই তোমার কথায় যুক্তি আছে৷ আসলেই আমরা ইসলামি আইন না মেনেই এই অবস্থা।”

— “ হো এইতো বুঝলা। আর শোন এই বয়সটা হলো ফুরফুরে বয়স৷ সুন্দর মতো হাসি ঠাট্টা দুষ্টামি করে চলার বয়স। এখন যদি সে সংসারী হয় তবে দুজন ছেলে মেয়ে উঠতি বয়সের একসাথে দুষ্টামি খেলাধুলা,চলাফেরা সব মেচিং করে চলতে পারবে সুন্দর ভাবে৷ আর যদি সেই ২৮-৩০ বছর বয়সে একটা ১৭-১৮ বছরের মেয়ে বিয়ে করে তবে কি হবে৷ সেই বয়স হলো তার জীবনের অর্ধেক পার করে ফেলা বয়স৷ তখন আর কোন তার মাঝে খেলাধুলা, হাসি ঠাট্টা, দুষ্টামি ওই সবের কোন আমেজ নাই৷ কিন্তু ঐ ১৭-১৮ বছর বয়সের মেয়েটা তো সদ্য যুবতী হলো। সে তো এখনো ৩-৪ জনকে একসাথে পেলেই লুডু খেলতে বসার মতো৷ বৃষ্টি আসলেই দৌড়ে ভিজতে যাওয়ার মতো৷ কিন্তু তার স্বামী তো এখন গুরুগম্ভীর। তো কি হবে শেষ পর্যন্ত। দেখা যাবে মেয়েটা সারাদিন বসে বসে শুধু চিন্তা করবে মা বাবা আমাকে এটা কেমন জায়গায় বিয়ে দিল আমার জীবন টা শেষ করে দিল৷ এই এক চিন্তা সব সময়৷ কিন্তু যখন তাদের মধ্যে বয়সের সময়টা মিল থাকবে তখনই তারা তাদের জীবন টাকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে নিতে পারবে। এই জন্য তোমাকেও বলি রফিক মিয়া, মানুষ আঙুল তুলে কথা বলার আগেই ছেলেটাকে একটা বিয়ে করিয়ে দাও। তার যদি পছন্দ থাকে তো পরিবারের সাথে কথা বলে বিয়ে দিয়ে দাও৷ এতে আল্লাহর কাছে ও দায় মুক্ত হলে। আবার সমাজের মানুষের নজর থেকেও।” বলেন রকিবের বাবা।

— “ ভাই বিয়ে যে করামু, পোলায় বউরে খাওয়াইবো কি? কোন চাকরি ও তো করে না।”

— “ আরে মিয়া চাকরি করে না তো কি হইছে।আর বউ কি হাতি না রাক্ষস যে খালি খাওন ওই লাগব তার৷ রিজিক কি তোমারে তোমার চাকরি দেয় না আল্লাহ দেয়৷ আল্লাহ যেমন ভাবে এখন রিজিক দেয় তেমন ভাবেই দিব৷ চাকরিকে যেমন আল্লাহ উসিলা করে নিছে৷ তেমনই তোমার পোলার ও দুদিন পরে একটা না একটা উসিলা ঠিক ই হয়ে যাবে৷ আর তুমি যদি আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে তার একটা হুকুম ভালো করে পালন করো তবে আল্লাহ কে সেইটার উছিলায় একটা ব্যবস্থা করতে পারে না?”

— “তা তো পারে অবশ্যই তারপরে ও তো ভাই৷ কেউ কি একটা বেকার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিব?”

— “ শোন বেকার ছেলের কাছে যারা বিয়ে দিতে পারে না৷ তারা কি চাকরি আর ব্যবসার কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়! দেয় না৷ দেয় কোন না কোন ছেলের কাছেই৷ আর সে যে চাকরি আর ব্যবসা দেখে বিয়ে দিল দুদিন পরে যদি চাকরি চলে যায়৷ ব্যবসায় লস খায়(ক্ষতি হয়) তখন কি মেয়ে ফিরিয়ে নেয় নাকি?”

— “ তা তো নেয় না ভাই কিন্তু আবার বেকার ছেলের কাছে বিয়ে ও দেয় না।”

— “ আরে শোন মিয়া, তোমার এখন ১ ছেলে এক মেয়ে। তোমার ভাইয়ের ২ ছেলে এক দুই মেয়ে৷ সে তো তোমার চেয়ে কম বেতনের চাকরি করে সে কি চলতে সমস্যা হচ্ছে! তোমার আরেকটা মেয়ে থাকলে তুমি তার ভরনপোষণ করতে না৷ তেমন ই মনে করবা যে তোমার আরেকটা মেয়ে আছে, আর তুমি তার খরচ চালাইতেছ শেষ কথা৷ আগে থেকে নাহয় এখন এক মুঠ চাউলের ভাত বেশী রান্না করবা৷ কিন্তু নিজের সম্মান তো বেঁচে গেলো৷ নিজে তো জাহান্নাম থেকে বেঁচে গেলা৷ ছেলেটা ও বেঁচে গেল৷”

— “কিন্তু ভাই কেউ কি আর আমার উপরে ভরসায় মেয়ে বিয়ে দিবে৷ সবাই তো এখন খালি টাকা ওয়ালা খোঁজে”।

— “ আরে তারা তো বেকুব এই জন্যই করে এ-ই কাজ৷ বিদেশি টাকা ওয়ালা দেখে বিয়ে একটা দিয়ে দেয়৷ মনে করে ছেলের অনেক টাকা। আমার মেয়েটা অনেক সুখে থাকবে৷ কিন্তু দেখা যায় কি৷ বিয়ের ২ মাস পরে ছেলে চলে যায় বিদেশে। দিনে ২ -১ বার খোঁজ নিলে নেয়। আর নিবেও বা কি করে সারাদিন কাজ করতে হয়৷ আবার কোন সময় খোঁজ নেয়াই ছেড়ে দেয়৷ তখন মেয়ে এই দেশে বসে বসে কান্নাকাটি করে৷ স্ত্রী চায় স্বামীর সাথে কথা বলতে সময় কাটাতে। আর স্বামী থাকে আরেক দেশে। আবার কেউ কেউ কি করে দশ-বারো বছর বিদেশ করে আসা এক ছেলের কাছে নিজের ১৬-১৭ বছরের মেয়েটা বিয়ে দিয়ে দেয় ভাবে আমার মেয়েটা কত না সুখে থাকব। কিন্তু সুখ কি টাকা থাকলেই হয়? তাদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ১৭-১৮ বছরের।১৪-১৫ বছরের। তখন তাদের মধ্যে আর কোন মিল হয় না।মেয়ে মাত্র যখন ২৫-৩০ বছরের হয় তখন স্বামী হয়ে যায় ৪৫-৫০ বছরের বুড়া। সব খানে যারা টাকা খোঁজে তারাই পরে শেষ পর্যন্ত পস্তায়। শোনে মেয়ে জামাই রেখে আরেক জনের সাথে চলে গেছে।”

— ” তা ঠিক কইছ ভাই। কিন্তু এখন এই সব বললেই কি হবে কেউ কি আর একথা শুনবে? উল্টো আরো রাজাকার উপাধি মেরে দিবে”।

— “সত্য বললে যদি রাজাকার উপাধি দিয়ে দেয় তবে দেক সমস্যা নাই৷ পরপারেতো দেখা হবে ঐ দিন না হয় মিমাংসা করে নিব। এখন ঐ সব কথা বাদ দাও। এশার নামাযের সময় হইয়া যাইতাছে৷ আমার ও বাড়িতে যাইতে হইব। তুমিও বাড়িতে যাও। আর ছেলেটাকে একটু দেখে রাখো,একটু বুঝাও। তুমি বন্ধু মানুষ তাই এমনে কইলাম। কষ্ট নিও না মনে। ভালোর জন্যই বলছি আজ পর্যন্ত কেউ আমাগোর উপরে চোখ তুইলা কথা কইবার পারে নাই। আর যেন কইতেও না পারে সেই ব্যপারে খেয়াল রেখো।” কথাটা বলেই বিদায় নিলেন রকিবের বাবা।

বাড়িতে আসতেই রকিবের মা এক বোঝা কথা বলতে লাগল, “সেই যে বের হলেন আর কোন খোঁজ আছে আপনার। বাড়িতে এতো কাজ আর আপনি চলে গেছেন কোথায়। খাবার যে এতো গুলো বেশী হলো এই গুলো কি করবেন কিছু ভাবছেন?”

— ” সে নিয়ে নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না বেগম। আমি ইমাম সাহেবকে কল দিয়ে বলে দিতেছি। যেন রাতের রান্না না করে। খাবার যা আছে সব মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দিব। তা তুমি কি বলো।” উত্তর দেয় রকিবের বাবা।

— ‘ আমি আর কি বলব। এটাই ভালো হয় এমনিতেই অনেক দিন হলো মাদ্রাসায় কিছু দেয়া হয়না৷ আজকে যখন সুযোগ হইছে তাতো ভালোই হয়৷” বলেন রকিবের মা।

— “ হ্যা তা ঠিক৷ আর একটা কথা, ছেলেকে আর ফোন দিছিলা ঠিক মতো গেল নাকি?”

— “ সে আমি কখন কল দিব, বাড়িতে এতো লোক আসছে। আমি তো এই জিনিসপত্র গোছাতে গোছাতেই শেষ। আপনি যে এতোক্ষণ ধরে বাইরে বাইরে ঘুরলেন একবার কল দিতে পারলেন না।”রাগ দেখিয়ে কথা বলে রকিবের মা।

তার বিনিময়ে রকিবের বাবা মুচকি হাঁসে কেবল।
রকিবের বাবার হাসি দেখে রকিবের মা এবার রাগে ফুলতে ফুলতে বলেন, “এই হাসিতেছেন কেন? অপরাধ একটা করেছেন এখন আবার দাঁত বের করে হাসতেছেন। লজ্জা করে না নাকি।”

রকিবের মায়ের কথা শুনে আবার ও হাসতে থাকে রকিবের বাবা। পরক্ষণে হাসি থামিয়ে বলে, “বেগম তুমি এখনো সেই আগের মতোই কথা বলো৷ মাঝে মাঝে এমন করে শাসন করবা তবেই তো ভালো লাগে।”

রকিবের মা একটা লজ্জা রাঙা হাসি দিয়ে বলে, “ওলে বাবালে বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরেছে। কালকে যে ছেলে বিয়ে করিয়েছেন তা কি ভুলে গেছেন! এখানে আসছেন ফাজলামো করতে?”

— “ কি যে বলো না তুমি বেগম, ছেলে বিয়ে করাইছি তো কি হইছে। আমি না হয় বুড়া হইছি তাতে কি। তুমি তো আর বুড়া হওনাই। এখন ও আগের মতোই কথা গুলো যখন বলো মনে হয় এইতো কয়দিন আগে মাত্র বিয়ে হলো আমাদের।”

রকিবের মা লজ্জা পায় কথা শুনে। লজ্জা কাটিয়ে কোন রকমে বলেন,
— “হয়েছে হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না। ঘরে আজ কেউ তাই তো তাই এমন টোপ দেয়া হচ্ছে তা ভালোই বুঝি। যান যান কাজে যান। আমার ও কাজ আছে আপনি থাকলে আমার কাজ করা হবে না আর। আর ছেলেকে ফোন দেন ঠিক মতো গেল নাকি। আর মেয়েটাও হয়েছে আপনার মতো। খালি এক ভাইয়া ভাইয়া।
ভাইয়ের সাথে তার শশুড়বাড়ি ও যেতে হবে ওনার৷ সেই যে গেলো এখন পর্যন্ত একটা কল ও দিল না৷”

— “ আচ্ছা হয়েছে এবার আমার মেয়ের দোষ দেখতে হবে না৷ যাও তোমার কাজ করো আমিই কল দিচ্ছি।”বলেই ঘরের বাইরে চলে গেলেন রকিবের বাবা।

রকিবের মা রান্না ঘরে যাওয়ার সময় সামনে আয়না পড়তেই আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকলেন৷ আবার পরক্ষনেই নিজের মাথায় থাপ্পড় মরে মনে মনে বলতে লাগলেন, “আমাকেও কি ভুতে ধরল নাকি এই বুড়া বয়সে কি চিন্তা করি।”

রকিবের বাবা রকিবের ফোনে ২ বার কল দেয়ার পরে ফোন রিসিভ করল তার বোন।
— “ আসসালামু আলাইকুম আব্বু।”

— ” ওয়ালাইকুমুস্সালাম, তা আম্মু তুমি যে ভাইয়ের সাথে গেলা এখন পর্যন্ত একটা কল ও দিলে না কেন”?

— “ আব্বু সরি, আসলে বাড়িতে আসার পরে দুষ্টামি করতে করতে আর খেয়াল ছিল না৷ ভাইয়ার ফোন আমার সাথে ছিল তাই ভাইয়া ও তোমাকে ফোন দিতে পারেনি৷”

— “আচ্ছা ঠিক আাছে মামনি ভাইয়ার কাছে দেও ফোন।”
— “দিতেছি আব্বু, এই ভাইয়া এই ভাইয়া এইযে আব্বু ফোন দিছে।”

…. (বিঃদ্রঃ- গল্পের সব পর্বের লিংক পোস্টের শেষে দেওয়া আছে।)

— “ হ্যা আব্বু, আমিই কল দিতাম কিন্তু নিশি ফোন নিয়ে কোথায় চলে গেছে তাই দিতে পারিনি।” ফোন হাতে নিয়েই বলল রকিব।

— ‘ আচ্ছা ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই৷ তা কখন পৌঁছালে?”

— “ এই তো আব্বু আঁধা ঘন্টার মতো হবে।”
— “ তা রাস্তায় কোন সমস্যা হয়নিতো?”

— “ না আব্বু রাস্তায় তেমন কোন সমস্যা হয়নি। কিন্ত! ”
— “কিন্তু কি আবার? ”

— “ না তেমন কিছু না বাড়িতে আসার পরে একটু সমস্যা হচ্ছে আরকি।”

( চলবে….) (

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here