#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_৫
খাবার টেবিলে বসে ভাবির বানানো বার্গার খাচ্ছিলো পুতুল!সস্ দিয়ে পুরো মুখ মাখামাখি,বার বার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ মুচ্ছে আবার বার্গারে কামর দিচ্ছে।সামনের চেয়ারে বসেই নিজের মার সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে পুতুলের ভাবি ‘শ্রেয়া’।
একে একে বাড়ির সকলেই এসে হাজির খাবার টেবিলে,প্রণয় এসে পুতুলের মাথায় একটা চাটি মারলো।কিন্তু আশ্চর্য বিষয় পুতুল কোনো প্রতিক্রিয়াই করলো না,অন্য সময় হলে তো সে উল্টো দু টো বসিয়ে দিতো কিন্তু আজকে চুপ!আর এই চুপ থাকারো অবশ্যই কারন আছে,আর সেটা হলো ‘ভয়’ কোনো কারণে যদি তার বাবা বা ভাই টের পায় সে চুরি করতে গিয়েছিলো এবং ধরা খেয়ে নিজের এই হাল করেছে তাহলে তো পুরো বাড়ি আগুন লেগে যাবে,তার চেয়ে চুপচাপ থাকাই ভালো।
পুতুলের এই চুপচাপ থাকা দেখে প্রণয় বেশ অবাক হলো,ইশারা দিয়ে শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে,শ্রেয়া কিছু না জানার ভান করে একি ইশারায় বলল ‘সে কিছু জানে না’, প্রণয় আর কিছু না বলে ঠোঁট উল্টিয়ে খাবার খেতে লাগলো যেনো পৃথিবীতে এরকম জঘন্য খাবার আর কোথাও নেই।প্রণয়ের এমন মুখের রিয়েকশন দেখে শ্রেয়া একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বাবাকে খাবার দিতে লাগলো।
খাবারের মাঝেই পুতুলের বাবা পুতুল কে জিজ্ঞেস করলো,
-রাতে কি এই বার্গার খেয়েই থাকবে পুতুল?
-হুম বাবা ভাবিপু এতো ভালো বার্গার বানায় যা না খেয়ে থাকাই যায় না,আর এটা খেয়েই আমার পেট ভরে যাবে আর কিছু খাবো না।
-কিন্তু সবসময় এগুলো খাওয়া তো শরীরের জন্য ক্ষতি রে মা..!
-আরে বাবা কিছু হবে না আমার ভাবিপুর হাতে জাদু আছে,উনি যেরকম আনহেলদি খাবার খুব পারফেক্ট ভাবে বানাতে পারে ঠিক সেরকমি সবাই হেলদিও খুব পারফেক্ট ভাবে করতে পারবে নো চিন্তা।
পাশ থেকে প্রণয় বিড়বিড় কম আস্তে বেশি স্বরে বলে উঠলো,,
-হু আসছে ভাবির গান গাইতে,,
পুতুল এইবারো কিছু বলল না,বার্গারের লাস্ট বাইটটা মুখে নিয়ে নেয়।পুতুলের বাবা ছেলে মেয়ের খুনসুটি দেখে হালকা হেসে পুতুলের হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-নে এটায় অনেক চকলেট আছে ফায়াজের ছেলে সামির বিদেশ থেকে এনেছে,তোর জন্য ফায়াজ আমার অফিসে এসে এগুলো দিয়ে গিয়েছে।ফায়াজের ছেলে সামিরও একদম তার মতো হয়েছে,আমি কালকে তাদের ইনভাইট করেছি তারা আসবে বলেছে।
পুতুল ব্যাগের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে,ফায়াজ হলো আব্বুর বন্ধু!সঙ্গে এখানকার এম পি যে বাসায় কালো গোলাপ আছে,আর ফায়াজ আঙ্কেলের ছেলে সামির!মানে সকালে যার কাছে ধরা খেলো তার নাম সামির,আর সেই এই চকলেট গুলো পাঠিয়েছে?
সকালে সামিরের সাথে ঘটা কাহিনী মনে পড়তেই পুতুলের মুখের বার্গার চিবুতে যেয়ে দাঁত জ্বিব্বার সাথে লেগে র’ক্ত বেড় হতে থাকে।আকস্মিক চিৎকারের শব্দে সবাই তাকায় পুতুলের দিকে,দেখে মুখ দিয়ে র’ক্ত বেড় হচ্ছে তা দেখে সবাই অস্থির হয়ে পরে,,পুতুলের বাবা খাবার ছেড়ে পুতুলকে গিয়ে ধরে।
বেসিনের সামনে নিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে বার বার কুলি করাচ্ছে,তাও র’ক্ত থামার নাম নেই।এক পর্যায়ে পুতুলের মা কান্না শুরু করে দেয়,তা দেখে পুতুলের বাবা তাকে ধমক দিয়ে বলে, ‘আগে মেয়েকে ধর তা বাদ দিয়ে ন্যাকা কান্না শুরু করে দিয়েছে’
এভাবেই অনেক্ক্ষণ পড় র’ক্ত পড়া বন্ধ হয়।একদিনেই এতো কাটা ছেড়া আর ভয়ের কারনে রাতে প্রচন্ড জ্বর আসে পুতুলের,শরীর পুড়ো আগুনের মতো গরম হয়ে যায়।সারা রাত পুতুলের মা আর তার ভাবি তার সেবা আরে একটু পর পর মাথায় পানি দেওয়া বার বার করে তেল দেওয়া হাতে পায়ে মালিশ করা সব করে,,কিছুক্ষণ পর পর পুতুলের বাবা এসে দেখে যায় তার অবস্থা। এই গ্রামে এতো রাতে কোনো ডাক্তারো পাওয়া যাবে না,খুব চিন্তায় পড়ে যায় তারা!
ভোরের আগে আগে পুতুলের জ্বর পুরোপুরি কমে যায় এ যেনো শুধু রাতের দেখাই দিয়েছে,ভরের আলো ফুটতেই উধাও..!
সকাল সাতটার দিকে পুতুল কফি হাতে নিয়ে বারান্দার দোলনায় বসে আছে পুতুল,পাশেই গালে হাত দিয়ে বসে আছে শ্রেয়া।হয়তো কোনো ভাবনায় মগ্ন!প্রণয় গেছে তার শশুর বাড়ি অর্থাৎ শ্রেয়ার বাবার বাড়ি,তাদের মেয়ে স্নিগ্ধাকে আনতে।এতোদিন নানু বাসায় ছিলো আজকে এ বাড়িতে আসার জন্য বায়না ধরেছে,তার নাকি আর ঘুরতে ভাললাগছে না তাই প্রণয় নিজেই গিয়েছে।
সেই সকাল থেকে বাড়ির গার্ড থেকে শুরু করে কাজের লোকগুলো লেগে পড়েছে কাজ করতে,এ বাড়িতে এমপি সাহেবরা আসবে বলে কথা।যত ধরনের রান্না আছে সব করা হচ্ছে বাড়িতে পুরাতন ডাইনিং টেবিল সরিয়ে নতুন আনা হয়েছে,পুরো বাড়ি চকচক করছে।
এগুলোই ঘুরে ঘুরে দেখছিলো পুতুল!”তার খুব ভয় করছে না জানি আজকে কি হয়,যদি ওই এমপির ছেলে সামির না বামি’র বাবাকে সব বলে দেয় তখন কি হবে?বাই দা ওয়ে সে তো আর জানেনা যে আমি চেয়ারম্যানের মেয়ে,আমি যদি লুকিয়ে থাকতে পারি তাহলেই তো আর ধরা খাবো না,ইয়েসস আল্লাহ বাচায়ছে”
এই কথা বলেই ধেই ধেই করে নাচতে থাকে পুতুল।তখন প্রণয় সামনে এসে বলে,
-কিরে রুগী,,এমন ধেই ধেই করে নাচছিস কেনো?মনে হচ্ছে পুরো বিশ্ব জয় করে ফেলেছিস।আর কি বস্তির মতো এখান দিয়ে ঘুড়ছিস চুলের অবস্থা দেখেছিস ফ্রিতে তেল পেয়ে কি সব ঢেলে দিয়েছিস নাকি?
পুতুল এইবার আগুনে ঘি ঢালার মতো ছ্যাত করে উঠে প্রণয়কে বল,
-আমি মাথায় তেল দেই না পাউডার অল্প দেই না বেশি তাতে তোর কিরেএএএএ?আর বস্তি আমি না তুই,তোর চোদ্দগুষ্টি বস্তি হু..!
-কিরে কাঠপুতলি আমার চোদ্দগুষ্টির মধ্যে কিন্তু তুই সবার আগে পড়িস।
-ধ্যাত ভাল্লাগেনা,,স্নিগ্ধা কই ওকে আনো নি?
-হ্যাঁ তোর ভাবির কাছে দিয়ে এসেছি।
-আচ্ছা.!
বলেই ধুপধাপ পা ফেলে রুমে চলে গেলো পুতুল।ওয়াশরুমে গিয়ে ইচ্ছে মতো শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করে তারপর বেড় হলো।আহহহ শান্তি…!
বাড়িতে মেহমানরা এসে পড়েছে,এই খবর পেতেই পুতুলের তাড়াহুড়ো শুরু হয়ে গিয়েছে,
আয়নার সামনে বসে আরামছে গান গেতে গেতে মুখে পাউডার লাগচ্ছিলো পুতুল,উদ্দেশ্য এমপিরা আসার আগেই বাসা থেকে বেড় হয়ে যাবে,মারজিয়াকে ফোন করে বলা শেষ।পেছনে থেকে স্নিগ্ধা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে তোতলা স্বরে বলে,
-ফুপি ফুপি মেহমানরা এতে পড়েছে,
কথাটা শুনে আঁতকে উঠে সে,,জলদি করে হাত দিয়ে পাউডার মুছতে থাকে কিন্তু কোনো কাজ হয় না তাই কোনো উপায় না পেয়ে নিজের পড়নের স্কার্ট দিয়ে মুখে মুছে ঠোঁটে লিম্বাম দিয়ে,দেয় দৌড়.! এক দৌড়ে রুমের বাহিরে এসে তার মনে পরে “হায়হায় এখন আমি বেড় হবো কিভাবে?” আবার এক দৌড়ে ঘরে চলে যায়,আর ভাবতে থাকে কিভাবে বেড় হতে হবে।যে ভাবে হোক তাকে তাদের সামনে আনা যাবে না, নাহলে তো আজকেই তার কেল্লাফতে,,,,
কোনো মতে ছাদের ঝুলানো মই দিয়ে নিচে নেমে,নিচের দিকে তাকিয়ে মেইন গেইটের দিকে দেয় দৌড়!কিন্তু সামনে আসতেই আবার প্রথম দিনের মতো কারো সাথে খুব বড়সড় ভাবে ধাক্কা খায়,,কিন্তু এইবার সে পড়ে না।’আবার কে’ এটা বলে সামনে তাকিয়ে পুতুল হা…!যার জন্য এ বাড়ি ছেড়ে কিছুক্ষণের জন্য পালাতে চেয়েছিলো সে শয়ং এখানে হাজির। ‘হ্যাঁ সামির’ পুতুল না দেখার ভান করে সাইড কাটিয়ে যেতে নিবে তার আগেই সামির পুতুলের হাতের কব্জি ধরে বলে,
-হেই ইউ!তুমি সেই চোর মেয়েটা না?এখানে কি করো আবার এ বাড়িতে চুরি করতে আসো নি তো?কি নির্লজ্জ মেয়েরে বাবা এক বাড়ি থেকে চুরি করতে এসে ধরা খেয়ে আবার আরেক বাড়িতে ঢুকেছো।কিন্তু এইবারো ধরা খেয়ে গেলে ম্যাডাম! তাও আবার আমার হাতে,চলো সবার সামনে এইবার তো তোমাকে আমি দড়ি দিয়ে বাঁধবোই।
বলেই পুতুলে হাত ধরে টানতে থাকে,পুতুল বার বার বলছে ছাড়ুন ছাড়ুন তবুও সামির তাকে সামনে নিয়ে যাচ্ছে।পুতুল কি করবে দিশেহারা হয়ে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সামিরের হাতে কামড় বসিয়ে দেয়।সামির মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠে,পুতুল আবার পালানোর জন্য দৌড় দিতে যাবে কিন্তু তার আগেই পেছনে কারো আওয়াজ শুনতে পায়,পুতুল পেছনে তাকিয়ে দেখে প্রণয় আর সামির কথা বলছে।সামিরের মুখে হাসি!পুতুল অবাক হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে,পালানোর কথা যেনো ভুলেই গেছে।তখন প্রণয়ের চোখ পড়ে পুতুলের দিকে,ভ্রু কুঁচকে বলে,
-কিরে পুতুল তুই এখানে কি করিস,তুই না ঘরে ছিলিস।এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস?
প্রণয়ের মুখের নামটা শুনে সামির অবাক হয়ে তাকায় পুতুলের দিকে,তাহলে সেই চেয়ারম্যানের এক মাত্র মেয়ে পুতুল?আরেকবার ভালো করে দেখে নিলো, ‘না এটাই তো সেই মেয়ে যে আমার গাছের ফুল চুরি করতে এসেছিলো
সামিরের ভাবনার মাঝেই প্রণয় পুতুলকে হালকা ধমকের স্বরে বলে,,
-এখন কোথাও যাওয়া চলবে না,আয় আমার সাথে বাসায় আয়।আর সামির তুমিও চলো।
পুতুল চোরের মতো মাথা নিচু করে প্রণয়ের পেছনে পেছনে যেতে থাকে,এদিকে সামির বার বার পুতুলের দিকে তাকাচ্ছে এই যদি চেয়ারম্যানের মেয়ে হয়ে থাকে তাহলে কেনো তাদের বাসায় চুরি করতে যাবে?
ভেতরে গিয়ে ফায়াজ এবং সামিরের সাথে পরিচয় হয়ে নেয় এবং খুব তাড়াতাড়ি মিশেও যায়।প্রথমে একটু লজ্জা পেলেও পরে সব ভুলে জীবনের সব আজাইরা গল্প জুরে দেয় তাদের সাথে।পাশেই সামির বসে বসে বিরক্ত হচ্ছে ‘এতো কথা কেও বলতে পারে?আর বাবা মাও কিভাবে এই মেয়ের বকবকানি সহ্য করছে’
কথার মাঝেই ফায়াজ পুতুলের গাল টেনে বলে,
-আমাদের পুতুল একদম পুতুলের মতো কিউট.!
তখন আবার সামিয়ার কোল থেকে স্নিগ্ধা বলে ওঠে,
-শুদু কিউত না আমার ফুপি হল কিউতি পাইই..!
সবাই এক সঙ্গে হেসে উঠলো..!এভাবে তারা সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত থেকে চলে যায়।যাওয়ার আগে সামির স্নিগ্ধাকে ডেকে দুই বক্স চকলেট দিয়ে বলে, ‘এক বক্স তুমি নিবে আরেক বক্স তোমার ফুপিকে দিবে’
স্নিগ্ধা তখন গাল ফুলিয়ে বলে,
-না না এতে হবে না তুমি নিজে গিয়ে ফুপিকে বলো এক বক্স আমার আরেক বক্স ফুপির,নাহলে দুটাই ফুপি নিয়ে নিবে আমাকে আর দিবে না।
-কেনো দিবে না?
-আলে ফুপি অনেক চককেট পছন্দ করে যখন বাবাই আমার জন্য চককেট আনে সব ফুপি খেয়ে পেলে আমাকে একটাও দেয় না।
-তাহলে একটা তোমার কাছে লুকিয়ে রেখে আরেকটা দিও কেমন।আর আমি তোমাকে পরে আরো চকলেট এনে দিবো তখন শুধু তুমি তোমার ফুপিকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাবা।
-ওকে,,
চলবে..!
(আজকের লেখাটা খুব অগোছালো হয়েছে,ভুল ক্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ.!)#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_৬
বাগানে ফুল দিয়ে বানানো দোলনায় বসে গালে হাত দিয়ে দুলছে পুতুল!মনটা আজ বিষন্নতার ছায়া,হঠাৎ করেই খুব মন খারাপ লাগছে কিছুই ভালো লাগছে না।
সময় তখন কেবল ভোরের আলো ফুটেছে,বাজে হয়তো ছয়টা বা তারো কম।ফজরের সময় ঘুমটা ভেঙে যায়,তাই আর শুয়ে না থেকে নামাজ পড়েই ফুলের বাগানে এসে পড়ে,,দু টো বড় কৃষ্ণচূড়া গাছের মধ্যে কাঠ আর প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে বানানো হয়েছে এই দোলনাটা,তবে একে আরো সুন্দর করার জন্য কিছু আসল ফুলও দেওয়া হয়েছে,তবে সেগুলো এখন পচন ধরেছে এখনি হয়তো ঝড়ে পড়ে যাবে,আবার গাছ থেকে ফুল পেরে এখানে লাগাবে পুতুল।এটা তার প্রতিদিনের কাজ,তবে আজ কেনো যেনো কিছু করতেই ভালো লাগছে না।ঘুমে চোখ লাল হয়ে গিয়েছে তাও ঘুমাতে যেতে ইচ্ছে করছে না।
কালকে স্নিগ্ধা পুতুলকে একটা চকলেটের বক্স দেয়!যেটা দিয়েছিলো সামির।তবে সেটা খুলে যে এমন কিছু পাবে তা কল্পনাও করে নি,সেখানে চকলেট তো ছিলোই তার মধ্যে ছিলো কালো গোলাপ।যা এখনো পুরোপুরি ফুটে নি,সদ্য কলি হওয়া ফুলটা তাকে দিয়েছে,
ভীষণ খুশি হয়েছিলো সে,কিন্তু প্যাকেটের সাথে লাগানো আরেকটা ছোট চিরকুট পায়,সেটা দেখে তার মন খারাপ হয়ে যায়।মুখে নেমে আসে আঁধারে কালো মেঘ।ফুলটা ডাস্টবিনে ফেলে সব চকলেট গুলো স্নিগ্ধাকে দিয়ে চলে আসে,,,সেই তখন থেকেই মন খারাপ এখনো কিছু ভালো লাগছে না।
সকাল সাতটা থেকে বাড়িতে তল্লাশী চলছে,এখন বাজতে চলল আটটার বেশি তবুও সেই হারিয়ে যাওয়া জিনিসটাকে পাওয়া যাচ্ছে না,জিনিস বললে ভুল হবে ওটা একটা আস্ত মানুষ! আর মানুষটা নিশ্চয়ই পুতুল।ছয়টার দিকে শ্রেয়া আর পুতুলের মা রান্না ঘরে যায় সব রান্নাবান্না করে বাড়ির পুরুষদের খাইয়ে শ্রেয়া পুতুলকে ডাকতে যায় স্কুলের জন্য রেডি হতে,কিন্তু ঘরে কেও নেই হয়তো ওয়াশরুমে গিয়েছে এটা ভেবে আর না ডেকে চলে যায়,অনেক সময় পার হওয়ার পর যখন পুতুলের দেখা মিলে তখন শ্রেয়া আবার পুতুলের রুমে যায়।গিয়ে সেই তখনকার মতো রুম ফাঁকা।বাড়ির পুরুষরা এতক্ষণে তাদের কাজের জন্য বেরিয়েও গিয়েছে।তারপর আস্তে আস্তে সব যায়গায় খোজা হয় পুতুলকে কিন্তু কোথাও পাওয়া যায় না।শাশুড়ীকে কথাটা বলতেই তিনি কান্না জুরে দেয়।গার্ডরা বাগানে গিয়েও খুজে দেখে কিন্তু পুতুলের কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না,,সবাই চিন্তায় পরে যায় কেও পুতুলের বাবাকে ফোন দিয়ে বলার সাহসটুকুও পায় না।স্নিগ্ধা ফুপি ফুপি করে সারা বাড়ি খুজছে কিন্তু পাচ্ছে না।
সবার মনে একটা ভয় ঢুকে যায়,তাদের ধারণা ইমন পুতুলকে কিডন্যাপ করেছে।আর কোনো উপায় না পেয়ে শ্রেয়া তার ফোন নিয়ে বাবার নাম্বার ডায়াল করতে যাবে,তখনি দেখে পুতুল চোখ ডলতে ডলতে আসছে,,পুতুলকে আসতে দেখে পুতুলের মা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে,,
এদিকে হুট করে কেও এসে জড়িয়ে ধরায় ভড়কে যায় পুতুল।হুট করেই ঘুমটা চোখ থেকে ছুটে যায়,চোখ বড় বড় করে একবার ভাবির দিকে তাকায় একবার মায়ের কান্নার দিকে।পুতুল বিরক্তি নিয়ে মাকে ছাড়িয়ে বলে,
-কি হয়েছে সাত সকাল বেলা হুদ্দাই এমন মরা কান্না শুরু করেছো কেনো,কি হয়েছে?কে মরছে?
পেছন থেকে শ্রেয়া সোফা থেকে উঠতে উঠতে বলল,
-এ বাড়িতে তুই থাকলে কি কেও হুদাই কাঁদবে?এমন কেও করে বল?আর কত জ্বালাবি আমাদের, আমাদের মধ্যেও তো ভয় আছে নাকি?
-ও মা আমি আবার কি করলাম?
-এতক্ষণ কোথায় ছিলিস তুই?
-এতক্ষণ!ওও আমি তো বাগানেই ছিলাম দোলনায় দুলছিলাম কখন যে দুলতে দুলতে ঘুমিয়ে গিয়েছি,খেয়ালি করি নি।
-তুই তা খেয়াল করবি কেনো?তুই তো শুধু কিভাবে আমাদের চিন্তায় ফেলা যায় সেই খেয়াল রাখবি,এখন যদি বাবাকে কল দিয়ে দিতাম তখন কি হতো?জানিস তো তোকে নিয়ে অনেক ভয় হয় আমাদের,, বুঝিস না বাসায় কেও নেই আজ।
-আচ্ছা যাই হোক মা এইযে আমি কোথায় হারিয়ে যাই নি এইবার তো কান্না থামাও,এতো ভয় পেলে চলে বলো তো?থামো!আমি আবার স্কুলে যাবো লেট হয়ে যাবে প্লিজ।
পুতুলের মা পুতুলকে ছেড়ে চোখ মুছতে মুছতে বলে,
-আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে নে,আর কখনো এমন করবিনা বুজেছিস।
পুতুল আর কিছু না বলে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে স্কুল ড্রেস পরে বের হয়।নাস্তার টেবিলে বসতে বসতে বলে,
-আজকে আমি গাড়ি নিয়ে যাবো স্কুলে।
-কিন্তু গাড়ি তো তোর বাবা নিয়ে গিয়েছে।
মার কথা শুনে টেবিলে চায়ের কাপটা ধুপ করে ফেলে বলে,
-কেন বাড়িতে কি গাড়ির অভাব পড়েছে,না ড্রাইভারের?দু টো ড্রাইফারকে তো এমনি এমনি বাড়িতে বসে খাওয়াচ্ছো।
মেয়ের হঠাৎ এমন আচরণে বেশ অবাক হোন পুতুলের আম্মু।এতো বলার পরো আজ পর্যন্ত পুতুলকে কখনো রাজি করাতে পারে নি গাড়ি যাওয়ার জন্য,আর আজ সে নিজেই বলছে।সে বুঝতে পারে পুতুলকে তার এ কথাটা বলা উচিত হয় নি। তাই মেয়েকে শান্ত করানোর জন্য বলে,
-না না গাড়ি ড্রাইভারের অভাব হবে কেনো,তুই তো কোনোদিন যাস না তাই বললাম।
-যাই না আজ যাবো,কারো কোনো সমস্যা?
-না না সমস্যা হতে যাবে কেনো আচ্ছা তুই খা আমি বলে দিচ্ছি গাড়ি বেড় করার জন্য।
পুতুল খাওয়া দাওয়া শেষ করে গাড়িতে উঠে চলে যায়।পুতুলের মা মেয়ের এমন মেজাজ দেখে শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে,
-কি হয়েছে পুতুলের হঠাৎ করে এতো রাগ দেখাচ্ছে কেনো?
-সেটা তো আমিও বুঝতে পারছিনা মা,,আর থাক স্কুল থেকে আসুক তারপর জিজ্ঞেস করবো নি।আপনি এখন রেস্ট নিন,বাবারা আজকে দুপুরে আর আসবে না,কালকে আবার কার জানি বিচার বসবে।
________
পুতুল গাড়িতে বসে ব্যাগ থেকে কলম নিয়ে নিজের হাতে আঁকা আঁকি করতে থাকে,সে মন মরা হয়ে ভাবতে থাকে,
‘তার নাম পুতুল কেনো হলো তার জীবনের সাথে পুতুল নামটা বেমানান,পুতুলদের তো কোনো কষ্ট নেই,তার কেনো এতো কষ্ট?পুতুলকে তো সবাই ভালোবাসে আমায় কেনো বাসে না?পুতুলরা তো কথা বলতে পারে না,তাও তাদের মুখ সবসময় হাসি খুশি থাকে,তার কেনো থাকে না?’
গাড়ি এইবার এমপিদের বাড়ি ওভারটেক করলো,এটা তাদের মেইন গেইট,যেখান দিয়ে শুধু এই বিশাল বাড়িটাই দেখা যায়,বাগানের একটা কোনাও দেখা যায় না।পুতুল একবার বাড়িটায় দৃষ্টি ফেলে আবার চোখ নামিয়ে নেয়,’কি লাভ নজর দিয়ে?কিছু জিনিস তো আর এই পুতুলের নিজের নয়’
স্কুলের গেইটের সামনে আসতেই ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দেয়,পুতুল ব্যাগ কাধে নিয়ে ভেতরে চলে যায়।এনেক্স ভবনে এসে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে,তখন পেছন থেকে মারজিয়া দৌড়াতে দৌড়াতে এসে পুতুলকে বলে,,
-কিরে আজকে এতো তাড়াতাড়ি আসলি?আজকে কি ওই দারোয়ানের সাথে কম ঝগড়া করেছিস নাকি এমপির ছেলের কাছে ধরা খেয়েছিস?আর কালকে আমাদের বাসায় যাবি বলে আসলিনা কেন,আমি কত অপেক্ষা করেছি তুই জানিস?আবার বাহিরে তোদের গাড়ি দেখলাম,আজকে কি গাড়ি নিয়ে এসেছিস নাকি?
এতো গুলো প্রশ্ন একসাথে শুনে পুতুলের মেজাজ আরো বিগরে যায় কিন্তু তার এখন রাগও দেখাতে মন চাচ্ছে না,তাই মারজিয়াকে শুধু ‘কিছু না’ বলে ক্লাসে চলে যায়।পর পর চারটা ক্লাস করে দুপুর বারটার দিকে বাড়ি যায় পুতুল,,এতো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরায় মার কাছে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।তার একটা কথারো উত্তর না দিয়ে সোজা রুমে চলে যায়।ভাবি আজকে বাসায় নাই,তার বাবার বাড়ি গিয়েছে কি একটা কাজে,সন্ধ্যায় এসে পড়বে।তাই এখন আর জেরা করার মানুষ নাই।ফ্রেশ হয়ে এসে টিনের একটা ছোট বক্স থেকে সেই চিরকুটটা বেড় করে,যা ওই চকলেট বক্সে ছিলো
এই তিন লাইনেট কথায় কি এমন ছিলো যা পড়ে পুতুলের মনে এতটা মেঘ জমে গেলো কে যানে?
মাগরিবের নামাজ পড়ে ভাবির সাথে কথা বলছিলো পুতুল,ভাবি মন খারাপের কথা জিজ্ঞেস করলে কিছু একটা বলে কাটিয়ে নেয়,সেই চিরকুটের কথাটা আর বলে না।সূর্যটা এখনো পুরোপুরি ডুব দেয় নি হালকা হলুদ ভাব আছে,,সেই আলোতেই উঠোনে বসে বসে ভাবিকে আলতা দিয়ে দিচ্ছে পুতুল।কাল তাদের বিবাহ বার্ষিকী, বিয়ের তিন বছর পূর্ণ হবে,ভাবি বার বার না করা সত্ত্বেও পুতুল তাকে জোর করে আলতা পড়িয়ে দিচ্ছে,তার সুন্দরী ভাবির পায়ে কতোই না সুন্দর লাগছে এই সিঁদুর লাল আলতা গুলো।স্নিগ্ধা সেখানে বসেই হা করে দেখছেএ ফুপি কিভাবে আলতা পড়ায় মাকে,,বাহিরে গাড়ির হর্ণ বাজতেই স্নিগ্ধা দৌড়ে বাইরে যেতে যেতে বলে “আব্বু এসেছে দাদু এসেছে”,
-আব্বুরা মনে হয় এসে পড়েছে,
-হুম তাই তো শুনছি,কিন্তু তারা না বলল আজকে আসতে দেরি হবে?
-আরে ভাবিপু বুঝো না তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য হয়তো ভাইয়া তাড়াতাড়ি এসেছে,,
পুতুলের কথা শুনে শ্রেয়া পুতুলের কাধে হালকা৷ চাপর মেরে বলে,
-যাহ কিযে বলিস না,এখন কি আর সেই সারপ্রাইজ পাওয়ার সময় আছে?বিয়ের তো তিন বছর হয়ে গেলো এখন আবার কিসের এতো উদযাপন রে?
-ইশশ বিয়ের তিন বছর হয়ে গিয়েছে দেখে কি এখন আর উদযাপন করা যাবে না নাকি?আমার ভাইয়াকে কি তোমার মতো আনরোমান্টিক ভাবো নাকি?দেখি তো তুমি ভাইয়াকে সবসময় এড়িয়ে চলো,,ভাইয়ার বুঝি কষ্ট হয় না?
-হয়েছে বুড়ি তোর এতো কষ্ট দেখতে হবে না,এখন ছাড় আমাকে দেখি উনাদের কি লাগে।
-হুম হুম যাও যাও
শ্রেয়া দৌড়ে বাহিরে যায়,কিন্তু গাড়ির সামনে আসতেই তার মুখ কালো হয়ে যায়,,বাবা গাড়ি থেকে বের হলো ঠিকি কিন্তু সে যার জন্য এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলো সে আর আসলো না।ড্রাইভার গাড়ি রাখার জন্য গেরেজে চলে গেলো।পুতুলের বাবা স্নিগ্ধাকে কলে নিয়ে বাড়ির ভেতর যায়,তার পেছন পেছন শ্রেয়া আর পুতুলো যায়।স্নিগ্ধা তার দাদার কোল থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,
-দাদু আব্বু কই,আব্বু আসে নি?
তখন আবার পুতুলের মা পেছন থেকে বলে উঠলো,
-হে গো প্রণয় কই তুমি ওকে আবার কোথায় রেখে আসলে?
-আরে আরে আমি কোথায় রেখে আসতে বলবো?লেক পাড়ে আসতেই তোমার ছেলে গাড়ি থামিয়ে কোথায় চলে গেলো,জিজ্ঞেস করলাম বলল ‘কি নাকি কাজ আছে’
পুতুল ভাবির কাছে গিয়ে কানে কানে বলে,
-ভাবি চিন্তা করিওনা তোমার বর তোমার জন্য গিফট আনতেই গিয়ে,,
-ধুর..!
সন্ধ্যা গড়িয়ে গভীর রাত নেমে এলো,পুতুলের বাবা সারা বাড়ি পায়চারী করছে,,পুতুল শ্রেয়ার কাধে এক হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে নখ কামরাচ্ছে।অন্য সোফায় পুতুলের মা বসে আছে তার কোলে স্নিগ্ধা ঘুম।
রাত তখন এগারোটার কাছাকাছি বাড়ির সবাই বেশ চিন্তিত।কিন্তু প্রণয়ের আসার কোনো খবর নেই,ফোন ও বন্ধ। পুতুলের বাবা আর অপেক্ষা করতে না পেরে পকেট থেকে ওয়ালেট নিয়ে দরজা দিয়ে বেরোতে যাবে তার আগেই বাড়ির দারোয়ান চিল্লিয়ে বলে উঠে,
“সাহেব ছোট সাহেব আয়ছে”
প্রণয় এসেছে কথাটা শুনে সবাই দৌড়ে বাহিরে যায়,,দারোয়ার আর কিছু লোক প্রণয়কে ধরে এখানেই আসছে,মাথা থেকে গল গল করে র’ক্ত পড়ছে,,র’ক্ত দেখেই পুতুল চোখ খিঁচে নেয়।শ্রেয়া দৌড়ে গিয়ে প্রণয়কে ধরে,ড্রয়িংরুমে প্রণয়কে বসিয়ে কপাল ভালো করে মুছে ব্যান্ডেজ করে দেয়,আর একটু পর পর ফুপিয়ে উঠছে শ্রেয়া।পুতুলের বাবা ফুস করে উঠে বলে,
-না এইবার কিছু একটা করতেই হবে,কত বড় সাহস ওই ইমনের এতো মার খেয়েও আমার ছেলের গায়ে হাত দিয়েছে।এইবারতো আমি তাত শেষ দেখেই ছাড়বো আজ যা হবার হবে,,
প্রণয় বাবাকে বাধা দিয়ে বলল,
-আহহ থাক বাবা এই টপিকটা আপাতত বাদ দাও,সামনে ইলেকশন এখন কিছু করলে আমাদের জন্যই খারাপ হবে।পরে ব্যবস্থা করা যাবে,আর এইযে মহারানী ভিক্টোরিয়া আপনি কি এইবার কান্না থামাবেন?আমি ঘুমাবো দোয়া করে একটু আমাকে ঘরে নিয়ে চলুন।আর তোমরা সবাই যাও অনেক রাত হয়েছে,
শ্রেয়া তার চোখের পানি মুছে প্রণয়ের হাত ধরে ঘরে নিয়ে যায়।বাকি সবাই যার যার রুমে চলে যায়,পুতুল স্নিগ্ধাকে নিয়ে তার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
শ্রেয়া প্রণয়কে চকিতে নিয়ে শুয়ে দেয়,প্রণয় চোখ বন্ধ করে আছে।শ্রেয়া কিছু একটা ভেবে আবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করে দেয়,প্রণয় বিরক্ততে ‘চ’ উচ্চারণ করে বলে,
-কি এরকম বাচ্চাদের মতো কান্না জুরে দিয়েছো আমি আছি তো মরে যাই নি।
শ্রেয়া সেই একিভাবে ফুপাতে ফুপাতে বলল,
-কি দরকার ছিলো একা একা সেখানে যাওয়ার?
-দরকার ছিলো বলেই তো গিয়েছিলাম আমার মহারানী, এই দেখো আমার কিচ্ছু হয় নি এইবার তো কান্না থামাও।
শ্রেয়া তার চোখ মুছে নিজের হালকা একটু ভর প্রণয়ের বুকে দিয়ে শুয়ে থাকে,প্রণয়ও এক হাত দিয়ে শ্রেয়াকে আলিঙ্গন করে নেয়।
চলবে..!
(রিচেক দেই নি,প্লিজ ভুল ক্রুটি হলে ক্ষমা করবেন)