#পূর্ণতার_মাঝেও_অপূর্ণতার_ছোয়া
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৯
আদিল আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো শুভ্রা নেই। ও অভ্র আর নুসরাতের কাছে গিয়ে বলল, -” কিরে শুভ্রতা কোথায়। আশেপাশে তো দেখছি না কোথাও।”
অভ্র আর নুসরাত ও দেখলো তাই তো শুভ্রা কোথায়। অভ্র বলল, -“ও হয় ওয়াশরুমে গেছে।”
বলতে বলতে শুভ্রা আসলো আর বলল, -“ধুরু আমি আমার নুপুরটা খুজে পাচ্ছিনা। এমনি ওইটার একটা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল মনে নেই। এখন আবার এইটাও।”
আদিল মাথায় হাত দিয়ে বলল, -“এই মেয়ে নুপুর খুজতে ব্যস্ত আর আমি এতোক্ষণে চিন্তায় পরে গেছিলাম।” ওই চলো অনেক রাত হয়েছে। অভ্র আর নুসরাত হাসছে ওদের অবস্থা দেখে।
শুভ্রা বলল, -” কিন্তু আমার নুপুর।”
আদিল বলল আরে আমি তোমাকে কিনে দিবো নি এখন আমাকে ক্ষমা দে এখন চল দয়া করে। সারাদিন অনেক খাটনি গেছে চল।”
শুভ্রা মুখ বাংলার পাঁচের মতো করে বলল, -“ওটা আমার সবচেয়ে প্রিয় নুপুর ছিলো।”
আদিল আর কিছু না বলে শুভ্রাকে কোলে তুলে নিলো আর নুসরাতকে ইশারায় ওদের সঙ্গে যেতে বলল।
——————
লুভা রাজিবের রুমে এসে দেখলো রাজিব রকিং চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
লুভা ধীরগতিতে রাজিবের সামনে দাড়িয়ে দুইবার ডাকলো রাজিবকে। কিন্তু রাজিব আগের মতোই। এবার লুভা আলতো হাতে রাজিবের কাধে হাত রাখলো। সাথে সাথে রাজিব চোখ খুললো। ওর চোখ লাল হয়ে আছে। হঠাৎ, করে রাজিব লুভাকে জরিয়ে ধরলো। লুভা কিছুটা ঘাবড়ে গেলো কিন্তু ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না। রাজিবের হয় তো এমন কাউকেই দরকার ছিলো।
কিছুক্ষণ পর লুভা তার পিঠে উষ্ণ পানি অস্তিত্ব অনুভব করলো। সে রাজিবকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু সে কিছুতেই ছাড়াতে পারলো না। রাজিব আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরছে যেনো।
একটু পর রাজিব নিজেই লুভাকে ছেড়ে দিয়ে লুভার হাত ধরে বলল, -“আচ্ছা আমি অনেক খারাপ তাই না। আজকে শুধু আমার জন্য আব্বু এই অবস্থা। আমি যদি সবকিছু ঠিক মতো মন দিয়ে করতাম আব্বু আমাকে নিয়ে কোনো চিন্তাও করতো না আর এমনটা হতোও না।”
লুভা রাজিবের চোখে পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,
-“ধুরু আপনি এমন বাচ্চাদের মতো কান্না করছেন কেন? কিছু হয় নি,আর এখন তো আঙ্কেল ঠিক আছে তাই না। এখন চলেন কিছু খেয়ে নিবেন।
রাজিব বলল, -“না আমি এখন কিছু খাবো না।”
রাজিবকে পাত্তা না দিয়ে লুভা রুম থেকে চলে গেলো। রাজিব ডাকলো কিন্তু লুভা শুনলো না। সে খাবার প্লেট নিয়ে এসে জোর করে রাজিবকে খাইয়ে দিলো।
খাওয়ানো শেষে লুভা রাজিবকে ঘুমাতে বলল। রাজিব বলল,”আমি কি তোমার কোলো মাথা রেখে ঘুমাতে পারি প্লীজ না করো না।” লুভা কিছু বলল না। ও আধশোয়া হয়ে রাজিবের মাথায় হাত বোলাতে লাগলো।
————————-
আদিল বাসায় পৌঁছে শুভ্রাকে নিয়ে সোজা রুমে চলে গেলো ওকে রুমে বসিয়ে কোথায় যেন চলে গেলো? শুভ্রা মন খারাপ করে বসে রইলো ওর খুব পছন্দের নুপুর ছিলো ওইটা। হঠাৎ, শুভ্রা খেয়াল আদিল তার পায়ে কিছু একটা পরিয়ে দিচ্ছে। একি এটা তো সেই নুপুর। কিন্তু এটা অন্য পার্টটা। এটা আদিলের কাছে কিভাবে! শুভ্রা আদিলের দিকে তাকাতেই আদিল বলল, -” আজকে সব বলবো কিন্তু তার আগে খেয়ে নিবে চলো।অনেক ক্ষুধা লেগেছে।”
শুভ্রা বলল,-“আচ্ছা চলেন।”
—————–
খাবার টেবিলে বসে শুভ্রা পরেছে মহা বিপদে। আদিল জেদ করে বসে আছে ওর হাতে খাবে এই দিকে বাড়ির কাজে লোকরাও আছে নুসরাত ও আছে। লজ্জায় শুভ্রার যায় যায় অবস্থা। অনেক কষ্টে আদিলকে খাইয়ে শুভ্রা উঠে যেতে নিবে। তখন আদিল ওর হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে শুভ্রাকে খাইয়ে দিলো। খাওয়াদাওয়া শেষে আদিল শুভ্রাকে কফি আনতে বলে রুমে চলে গেলো।
শুভ্রা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে তিনটা বাজে। ও দুই মগ কফি দিয়ে রুমে গিয়ে দেখে আদিল বারান্দায় বসে আছে। শুভ্রা আদিলের কাছে গিয়ে আদিলের পাশে দোলনায় বসলো। কফির মগ আদিলের দিকে দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। আদিল কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বলতে লাগলো,
ফ্লাশ ব্যাক
পাঁচ বছর আগে……..
আদিল, অভ্র, অনিক, অনুভব, রাজিব ওরা খুব ভালো বন্ধু। তাদের আড্ডার একমাএ জায়গা ছিলো নদীর পাড়। প্রতিদিন ওখানে গিয়ে আড্ডা না দিলে তাদের চলতই না। তারা পাঁচজনই ছিলো প্রাণের বন্ধু একজন আরেকজনকে ছাড়া একদম অচল ছিলো। ঘুরাঘুরি আড্ডা এগুলো নিয়েই দিন কাটতো।
তো একদিন বিকেলে আদিলের মন তেমন ভালো ছিলো না। সামনেই পরীক্ষা ওটা নিয়ে কিছুটা টেনশনে ছিলো ও। নদীর পানির দিকে তাকিয়ে ছিলো তখন হঠাৎ করে কারো মনোমুগ্ধকর হাসির শব্দ শুনে আশেপাশের চোখ রাখতেই এক বোরখা পরিহিত নারীতে তার চোখ আটকে যায়। কিন্তু সে অন্যপাশে থাকার কারণে আদিল তাকে দেখতে পারছিলো না। আদিল উঠে ওর সামনে যেতে নিবে তখনই ওর আম্মু কল দেয়। ও কথা বলতে একটু দূরে যায়। কথা বলা শেষে আবার ওখানে ওকে দেখতে যায় আদিল।
কিন্তু ততক্ষণে সেখান থেকে ও চলে গিয়েছিলো। এই গেলো ওইদিন বিকেলের কথা। আদিল ওইদিন কোনো রকম শান্তি পাই নি যেখানেই যায় সেখানেই শুধু মনে হচ্ছিলো ওই মেয়েটা তার পাশে বসে হাসছে। এর পরে সব কথা অনুভবকে বললে ও বলে ” ভাই তুই প্রেমে পরেছিস।”
আদিল ওতো মাথায় নেই নি। তারপর পরীক্ষা শেষে ওরা সবাই মিলে দূরে কোথাও ঘুরতে যাবো বলে সিদ্ধান্ত নেয়। তো অভ্র বলে “ওর বোনকে নিয়ে যাবে।”
তখন আদিল ওকে বলে “তোর বোন তো সারাদিন আমাদের চোখের আড়ালেই থাকে ও কিভাবে আমাদের সঙ্গে ঘুরতে যাবে। তুই পাগল হলি নাকি।”
অভ্র তখন বলে “যাবে আসলে ওর অনেক দিন যাবত দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি।”
আদিল আর অভ্রের বন্ধুত্ব ছিলো কলেজ থেকে তারপরেও একদিনও আদিল ওর বোনকে দেখেনি। ও নাকি ছেলেদের সঙ্গে দেখা করে না।
অভ্রের বোনের যাওয়ার কথা শুনে আদিল ও নুসরাত কে ওদের সঙ্গে যাওয়ার কথা বলে। নুসরাত ও এককথায় রাজি হয়ে যায়।
ওরা ঠিক করি পরের দিন সকালবেলায় নিজেদের গাড়ি করেই কক্সবাজার যাবে ঘুরতে। অভ্রের বোনের নাম শুভ্রা ও ওর এক বান্ধুবিকে ও নিয়ে যাবে আদিলদের সঙ্গে।
সবাইকে আদিলদের বাসার সামনে আসতে বলা হয় । সবাই ঠিক সময় একদম চলে আসে।
কেন যেন আদিলের শুভ্রাকে চেনাচেনা লাগে। কিন্তু কিছুতেই সে মনে করতে পারছিলো না যে কোথায় দেখেছে। হঠাৎ, ওর হাতের দিকে চোখ পরতেই একটা আংটি তার নজরে আসে। এই আংটি সে ওই নদীর পাড়ের মেয়ের হাতেও দেখেছিলাম। সে ভাবনায় পরে যায়।আদিলের ভাবনায় ছেদ পরে অনুভবের ডাকে কিরে উঠে আয় দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তো। আদিল ও আর কিছু না ভেবে উঠে পরে গাড়িতে।
ওরা দুই গাড়িতে করে যাবে কক্সবাজার একটায় মেয়েরা আর ড্রাইভার আঙ্কেল যাবে আর আরেকটায় আদিলরা যাবে।
(চলবে)
[ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]