পূর্ণা পর্ব -০৪ ও শেষ

#পূর্ণা

পর্বঃ৪ (অন্তিম পর্ব)

“এই মেয়ে তোমার মাথা ঠিক আছে? এতোদিন আমার বাবার ভালোমানুষির সুযোগ নিয়ে মা মেয়ে মিলে তার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেয়েছো। এখন তো আর তা চলবে না। এই বাড়ি ভাঙা হবে। তোমার মা কে খবর দাও। এসে নিয়ে যাক তোমাকে।”
একটু গলা খাঁকারি দিয়ে সাকিব বললো,”চিন্তা করো না। তোমাকে আমরা বেশ কিছু টাকা দিবো। আফটার অল আমার বাবাকে সেবাযত্ন করেছো তুমি। একটা নার্স রাখলেও তো তাকে টাকা দিতে হতো।”
পূর্ণা অবাক হয়ে তাকালো তার দিকে। ভাঙা গলায় বললো,”নার্স?”
বিরক্ত হয়ে জয়িতা বললো,”তা নয়তো কি? তুমি কি ভেবেছো তুমি আমাদের পরিবারের সদস্য হয়ে গেছো? নার্স নয়তো কি? এই জালালকে ডেকে পাঠাও তো কেউ। ওর মা কে যেয়ে খবর দিক। এসে নিয়ে যাক এই আপদকে তাড়াতাড়ি।”
কাঁপা কাঁপা গলায় পূর্ণা বললো,”আমার মা মা*রা গিয়েছে ছয় মাস আগে। ছোট বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে কেউ নেই এখন। বাড়িটাই নেই, চাচারা বেচে দিয়েছে। কোথায় যাবো আমি?”
সবাই একটু থতমত খেয়ে যায়। পূর্ণার মা যে আর নেই তা কেউ জানতো না। খানিক বাদে প্রিয়তা বললো,”ওহ এমন ভিখারি দশা? তো আর কি করা। আমার সাথে আমার বাসায় চলো কিছুদিন। আমার একটা কাজের লোক দরকার। তুমি নাহয় ওখানে থেকো।”
“তুই কি পাগল হলি প্রিয়তা? এসব মেয়েকে চিনিস? বাড়িতে প্রায়ই জামাই একা থাকে। এরা সূচ হয়ে ঢোকে আর ফাল হয়ে বের হয়।” চিত্রার কথায় খানিকটা কেঁপে ওঠে পূর্ণা। তার দেওয়া ইঙ্গিত বুঝতে একটুও দেরী হয়না তার। পূর্ণার খুব অস্থির লাগে। মবিন সাহেবের মতো একজন ফেরেশতাসম মানুষের একটা ছেলেমেয়েও তার মতো কেনো হলো না?

হঠাৎ পূর্ণা শক্ত গলায় সামনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বলে,”এই বাড়ি ছেড়ে এক পাও নড়বো না আমি। দেখি কি করতে পারেন আপনারা।”
সারাঘরে পিনপতন নীরবতা। কেউ যেনো হজম করতে পারলো না পূর্ণার এই কথা। সাতজোড়া হতভম্ব চোখ গোল গোল হয়ে তাকিয়ে আছে পূর্ণার দিকে। কিন্তু পূর্ণার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। ঠিক আগে যেমন বসে ছিলো শক্ত অবিচল হয়ে তেমনি ঠাঁয় বসে থাকলো শুধু একটা মানুষের ঠোঁটের কোণে মুচকি একটা হাসি ফুটে উঠলো, সে হলো উকিল রেজাউল। সে এক্ষুনি পারে এই সাতটা নিমকহারামের মুখ বন্ধ করে দিতে। কিন্তু না, সে নিজেও এর শেষ দেখতে চায়।

সর্বপ্রথম নিজেকে সামলে মুখ খুললো বড় ছেলে সাব্বির। কোনোমতে তোতলাতে তোতলাতে বললো,”এই কি বললে তুমি? আবার বলো তো?”
পূর্ণার চোখ টকটকে লাল। ঝাঁঝের সাথে বললো,”কি বলছি শুনতে পান নি? আমি এই বাড়ি ছেড়ে এক চুলও নড়বো না। এই বাড়িতে আমার অধিকার আছে। এই বাড়ি আমার স্বামীর বাড়ি।”
মুহূর্তের মধ্যে সবাই আঁৎকে উঠে চিৎকার করে উঠলো। মবিন সাহেবের বাড়িতে যেনো বাজ পড়লো হঠাৎ। জয়িতার হাতে কাঁচের গ্লাস ছিলো। হাত থেকে পড়ে যেয়ে কয়েক টুকরো হয়ে গেলো।
“স্বামীর বাড়ি? মানে?”
“জ্বি ঠিক শুনেছেন। আপনাদের বাবা বছর খানিক আগে আমাকে বিয়ে করেছে। সম্মানের সাথে এই বাড়িতে আমাকে এই বাড়ির বউ করে স্বীকৃতি দিয়েছে। হ্যা ঠিক এই ভয়টাই তিনি করেছিলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর আপনারা এইভাবে আমাকে বিড়াল কুকুরের মতো দূর দূর করে তাড়িয়ে দিবেন। তাই তিনি এমন স্বীকৃতি আমাকে দিয়ে গিয়েছেন যাতে এই বাড়িতে আপনাদের মতো আমারও সমান অধিকার থাকে।”
“তুমি মিথ্যা বলছো। আমাদের বাবা আমাদের না জানিয়ে কখনো এই কাজ করতে পারেন না।”
“আচ্ছা তাই নাকি? শেষ কবে নিজের বাবার ফোন ধরেছেন আপনাদের মধ্যে কেউ? তার সাতটা ছেলেমেয়ের মধ্যে একজনও তার ফোন ধরেননি। জালালকে আপনাদের বাড়ি খবর দিয়ে পাঠালে তার সাথে দেখা পর্যন্ত করেননি আপনারা কেউ। শেষমেশ মানু্ষটা জালালের হাতে চিঠি পর্যন্ত পাঠিয়েছে। আপনারা সেই চিঠি জালালের সামনেই ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেছেন। কি দোষ ছিলো আপনাদের বাবার? নিজের দেখাশোনার জন্য একটা মানুষকে রেখেছিলো তার কাছে, এটাই?”
পূর্ণা শ্বাস ফেলার জন্য একটু থামে, জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। ওদের মধ্যে কেউ পূর্ণার এই রূপের সাথে পরিচিত না। ভেবেছিলো অল্প কিছু টাকা দিয়ে এই ভিখিরিটাকে বের করে দেওয়া যাবে এই বাড়ি থেকে। কিন্তু এ কি শুনলো তারা?
“আমরা বিশ্বাস করিনা তোমার কথা। তুমি এই বাড়িতে থাকার জন্য আমাদের বাবার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছো।”
পূর্ণা তখনো জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। সাব্বিরের কথায় একছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো সে। সবাই হতভম্ব হয়ে বসে আছে।
পূর্ণা ফিরলো হাতে কিছু কাগজপত্র নিয়ে। এসেই কাগজ গুলো ছুড়ে দিলো সবার সামনে।
“দেখুন, এগুলো তার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার প্রমাণ। আমাদের বিয়ের কাবিন। আপনাদের কাছে আমার প্রমাণ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। যে ছেলেমেয়েরা বাবা চলে যাওয়ার দুইদিনের মাথায় এভাবে সম্পত্তির জন্য বৈঠক বসাতে পারে, তাদের কাছে নিজেকে প্রমাণ দিতে রুচিতে বাঁধে আমার।”
“অসভ্য মেয়ে, আমার বাবার ভালোমানুষির সু্যোগ নিয়ে তাকে জোর করে বিয়ে করেছো। এখন আবার বড় বড় ভাষণ দিচ্ছো।”
“চুপ, একদম চুপ।” পূর্ণার টকটকে লাল চোখের দিকে তাকিয়ে ভড়কে যায় সবাই। থতমত খেয়ে চুপ করে যায়।
“আমি ভাষণ দিচ্ছি? নাকি আপনারাই তখন থেকে ছোটলোকের মতো কার্যকলাপ করে যাচ্ছেন? কোথায় ছিলো বাবার প্রতি আপনাদের এতো ভালোবাসা? নিজের নাতিনাত্নীগুলোকে দেখার জন্য যখন মানুষটা ছোট বাচ্চাদের মতো কেঁদে বেড়াতো, নিজের ছেলেমেয়েদের গলার স্বর একটা বার শোনার জন্য ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত হেঁটে বেড়াতো, কই একবারও তো তখন কেউ ফোনটা ধরেননি। অসুস্থ হলে বিছানায় শুয়ে কাতরাতেন আর প্রলাপ বকতেন, আমার ছেলেমেয়েদের এনে দাও পূর্ণা, আমার ছেলেমেয়েদের এনে দাও। কোথায় ছিলেন তখন আপনারা? একটাবারের জন্যও কেউ নিজের কাছে নিয়ে দুইটা দিন রাখতে পারেননি তাকে। যখনই সে ডুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটো আঁকড়ে ধরে, তেমনি আমাকে আঁকড়ে ধরেছিলো ঠিক তখন নিজের বাবার চরিত্র নিয়ে কথা বলতেও দ্বিধাবোধ করেননি আপনারা। আর যখন মানুষটা চলে গেলো, আপনারা আমাকে বের করে দিয়ে তার সম্পত্তি ভাগ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।”
সবাই রাগে ফোসফোস করছে। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলতে পারছে না। কারণ পূর্ণার বলা একটা কথাও মিথ্যা না। কিন্তু তাই বলে এই মেয়েটাকে এই বাড়িতে থাকতে দিতে হবে এটাও তারা মানতে পারছে না।
“এই দুইটা বছর ওই মানুষটা আমাকে স্নেহের পরশে আগলে রেখেছে এই নিষ্ঠুর সমাজের আড়ালে, আমার যাতে সমাজের কাছে অপমানিত হতে না হয় তাই আমাকে দিয়েছে তার মতো মানুষের স্ত্রীর সম্মান। সেই মানুষটার স্মৃতি ঘেরা এই বাড়ি। না তো এই বাড়ি ছেড়ে আমি যাবো, আর না তো এই বাড়ি আমি ভাঙতে দিবো। আপনাদের বাবার আরো অনেক সম্পত্তি আছে। প্রজেক্টের কাজ, নতুন বাড়ি, শপিং মল যা বানান সেখানে যেয়ে বানাবেন। এই বাড়ি যেমন আছে তেমন থাকবে। এটা মবিন উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রীর আদেশ।”

পূর্ণার কথায় হা করে তাকিয়ে আছে মবিন সাহেবের সাত ছেলেমেয়ে। তারা কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি সামান্য দুই পয়সার একটা কাজের লোকের মতো মেয়েকে তাদের বাবা এতোটা প্রশ্রয় দিতে পারে যে তাকে বিয়ে পর্যন্ত করেছে আর সেই মেয়ে কিনা তাদের মুখের উপর এতো কথা বলছে।
ডুকরে কেঁদে উঠলো মেয়েরা,”দ্যাখ ভাই দ্যাখ। আমাদের বাবা কি ভুলটা করে গেছে দ্যাখ। কি একটা কাবিন দেখিয়ে আমাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের নিজের বাড়ির থেকে।”
পূর্ণা আগুনের মতো জ্বলছিলো, আস্তে আস্তে নিজেকে শান্ত করে বলে,”এটা আপনাদের বাবার বাড়ি। এই বাড়ি থেকে আপনাদের তাড়ানোর কোনো অধিকার আমার নেই। এখানে আপনারা যখন খুশি আসবেন, থাকবেন। এটা আপনাদের নিজেদের বাড়ি। কিন্তু এই বাড়ি ভাঙবে না। এটা যেমন আছে তেমন থাকবে। এই বাড়ির প্রতিটা আনাচে কানাচে ওই মানুষটার স্মৃতি আছে। তাই বাড়ি ভাঙার কোনো প্রশ্নই আর উঠবে না।”
“এই মেয়ে এই, তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে আমাদের? হ্যা বাবা তোমাকে বিয়ে করেছে, তো তাতে কি হয়েছে? তুমি বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। আমরা প্রথম। মাত্র এক বছর হয় তোমাকে বাবা বিয়ে করেছে, তাই বলে তুমি যা বলবে তাই হবে নাকি? তোমাকে আমরা অন্য জায়গা থেকে জমিজমা লিখে দিবো। এই বাড়ির ভাগ থেকে কিছু টাকাও দিবো। কিন্তু তোমার এতো কথা আমরা শুনবো না।”
পূর্ণা কিছু বলতে যাবে তার আগেই উকিল রেজাউল সবাইকে থামিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। পূর্ণা চোখের ইশারায় তাকে চুপ করতে বললো, কিন্তু সে সেদিকে পাত্তা দিয়ে একটু কেশে সবার মাঝে দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করলো।

“দেখুন, অনেকক্ষণ ধরেই আপনাদের সব কথা শুনলাম আমি। আপনাদের পারিবারিক বিষয়ে প্রবেশ করার কোনো ইচ্ছা আমার ছিলো না। আপনারাই আমাকে ডেকে এনেছেন। তাই এখন আমি কিছু কথা বলতে চাই।”
পূর্ণা মাথা নিচু করে বললো,”রেজাউল সাহেব, মবিন সাহেবের ছেলেমেয়েরা ছোট নয় কেউ, সবাই শিক্ষিতও বটে। তাই তাদের অন্য কিছু না বলার অনুরোধ থাকবে।”
“না পূর্ণা ম্যাডাম, স্যার আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সে দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হবে।”
“কি দায়িত্ব রেজাউল ভাই?” সাব্বির সাকিব সহ সব ভাই চোখ কুঁচকে তাকায়।
“হুম বলছি। পূর্ণা ম্যাডাম আমাকে মানা করেছিলেন বলতে। কারণ তিনি চান না সত্যিটা আপনারা সবাই জানুন।”
ফোস করে একটা শব্দ করে চিত্রা। রাগে তার শরীর কাঁপছে।
“ও কে যে ওর নিষেধ শুনতে হবে? আপনি আমাদের বাবা যা বলেছেন তাই বলুন। ও তো চাইবেই আমরা সত্যি না জানি। যাতে এই বাড়ির ভাগ ও একা পায়।”
মুচকি হাসলেন রেজাউল। হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়েই বললেন,”জ্বি ভাগ উনি একাই পাবেন এই বাড়ির। আর কারণেই বলতে মানা করেছিলেন যাতে নিজের বাবার বাড়ি আসতে আপনাদের কখনো কোনো বাঁধা না থাকে।”
সবাই সমস্বরে চিৎকার করে উঠলো,”তার মানে? কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?”
“জ্বি ঠিক শুনেছেন। আপনাদের বাবা মৃ*ত্যুর ছয়মাস আগেই এই বাড়ি তার দ্বিতীয় স্ত্রী মানে পূর্ণা ম্যাডামের নামে উইল করে দিয়েছেন। সমমূল্যের সম্পত্তি আপনাদের প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে, তবে এই বাড়ির ভাগ আপনাদের কারো নেই। এই বাড়ি একান্তই পূর্ণা ম্যাডামের।”
মবিন সাহেবের সাত ছেলেমেয়ের একসঙ্গে এতোগুলো খবর হজম করতে কষ্ট হয়। মেয়েরা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। ছেলেরাও স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে থাকে রেজাউলের দিকে।
“কি বলছেন কি আপনি রেজাউল ভাই? আপনার মাথা ঠিক আছে? বাবা এই ভিখিরি মেয়েটাকে এতো বড় বাড়ি লিখে দিয়েছে? নিশ্চয়ই কোনো ভুল হচ্ছে আপনার।”
হাসতে হাসতে রেজাউল বলেন,”জ্বি ভাই আমার মাথা ঠিক আছে। কোনো ভুল হচ্ছে না। আর যাকে ভিখিরি মেয়ে বলছেন তিনি আপনাদের বাবার লিগ্যাল ওয়াইফ এবং একইসাথে এই বাড়ির মালকিন।”
“না না, এটা কোনোদিন সম্ভব না। না না অসম্ভব কথা।”
মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে সবাই। পূর্ণা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এক কোণে। এই কিছুক্ষণ আগেই এই মানুষগুলোই তাকে বের করে দিতে চেয়েছিলো এই বাড়ি থেকে, আর এখন নিজেরাই এই বাড়ির আশ্রিত।
“দেখুন, এটা আপনাদের বাবার বাড়ি। উনি আমার নামে লিখে দিয়েছেন বলে এই নয় যে, আপনাদের এখান থেকে তাড়িয়ে দিবো আমি বা আপনাদের অধিকার কেড়ে নিবো। এটা আগেও যেমন আপনাদের বাবার বাড়ি ছিলো এখনো তাই আছে। এটা আপনাদেরই বাড়ি। শুধু আমার আদেশ, এই বাড়ি ভাঙবে না। এটা যেমন আছে তেমন থাকবে। আমি চাইনি সত্যিটা আপনারা জানুন। কারণ আমি চাইনা আমার মতো একটা ভিখিরি বাড়ির মেয়ের নামে এতো বড় সম্পত্তি এটা আপনাদের হজম করতে কষ্ট হোক। আমি এই সম্পত্তি চাইনা, কোনো লোভ নেই আমার এই বাড়ির উপর। আমি সত্যিই এক অসম বয়সের সঙ্গীকে ভালোবেসেছিলাম, ভালোবেসেছিলাম তার সরলতাকে, সততাকে। যদি পরকালে কখনো তার সাথে দেখা হয় আমার আমি এই স্নেহের অধিকার নিয়েই তার কাছে যাবো। প্রথম স্ত্রী আর ছেলেমেয়ে হিসেবে আপনারাই থাকবেন তার আপন। আমার শুধু একটাই চাওয়া এই অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করবেন না।”
সাতজোড়া নির্লিপ্ত চোখ উপেক্ষা করে ঘরের বাইরে পা রাখে পূর্ণা। আকাশে খুব মেঘ করেছে। একটু পরেই দুইকূল ছাপিয়ে বর্ষা নামবে। পূর্ণা তার আলুথালু খোঁপাটা খুলে দেয়। আজ সে ভিজবে বৃষ্টিতে। আজ সে চিৎকার করে কাঁদবে। বৃষ্টির পানির সাথে আজ এক হয়ে যাবে তার অসম বয়সের সঙ্গী হারানোর যন্ত্রণা।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here