প্রণয়াসক্ত পর্ব -০৬

#প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_০৬
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

“কালকে রাতে ওসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছি বুঝতেই পারি নি৷ ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দে ঘুম ভে’ঙে গেলো। ঘুমের মধ্যেই বিছানা থেকে ফোনটা নিয়ে নাম না দেখেই ফোনটা কানে ধরলাম”। ফোন’টা কানে ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো….

‘কিরে কই তুই’?

‘বিছানায়’?

‘বিছানায় কি করিস’?

‘নাচতেছি’।

‘কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে তুই ঘুমাচ্ছিস’?

‘বিছানায় মানুষ না ঘুমিয়ে আর কি করে’?

‘আর কিছু করে না’?

‘রিমু তুই কি ফাজলামো করতে এই সাত-সকালে আমার ঘুম’টা নষ্ট করলি’?

‘এই যে ম্যাডাম এখন আর সাত-সকাল নেই। অলরেডি ৭.৩০ এর বেশি বাজে আর ৪.১৫ তে ক্লাস। তুই কলেজ আসবি না’?

‘কি বলিস? এতো বেজে গেছে’?

‘হ্যা ম্যডাম। এখন তাড়াতাড়ি উঠেন’।

‘তুই কই? কলেজে’?

‘হ্যা’।

‘আরাফ আসছে কলেজে’?

‘হ্যা আসছে তো। কেন’?

‘না এমনি’।

‘ব্যাপার’….

‘তোর ব্যাপারের গু’ষ্টি কি’লা’ই’।

‘তুই তো আমারে পুরা কথাটাও কইতে দিলি না’।

‘চুপ থাক। আমি কলেজ আসতেছি’।

‘আচ্ছা আয়’।

“রিমির সাথে কথা বলা শেষ করে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম। না খেয়েই আম্মুকে বলে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলাম। আম্মু আমাকে পিছন থেকে অনেকবার ডেকেছে খেয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু এখন খেতে গেলে আরও দেরি হয়ে যাবে। আর ক্লাসও মিস হয়ে যাবে। তার থেকে বড় কথা আরাফের উপর নজর রাখতে হবে।
আমাকে এই রহস্য উন্মোচন করতেই হবে”।

“কলেজে পৌঁছে আশে-পাশে তাকিয়ে দেখি আরাফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর বন্ধুদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আজকে ওকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলাম। বেশি ফর্সা না মানে আমরা যাকে শ্যামলা বলি আর কি। উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের, চাপ দাড়ি, চুলগুলো সিল্কি হয়ে কপালের এক পাশে পড়ে আছে, ডার্ক ব্লু শার্ট, কালো জিন্স প্যান্ট, হাতে কালো রঙের ঘড়ি, আর কালো জুতা। বেশ ভালোই মানিয়েছে। আরেকটা জিনিস হচ্ছে ওর হাসি। ওর হাসির জন্য ওকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। ছেলেদের হাসিও বুঝি এতো সুন্দর হয়? আমার জানা’ই ছিলো না। ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ওকে নিয়ে ভাবনায় বিভোর হয়ে গেছি বুঝতেই পারি নি। হঠাৎ কারো ধা’ক্কায় ভাবনায় ছেদ পড়লো। ঘাড় ঘুড়িয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি রিমি ঠোঁটে রহস্যজনক হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে”। আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম…

‘কি হয়েছে’?

‘কি হবে’?

‘এভাবে হাসছিস কেন’?

‘কই হাসছি’?

‘ধুরর ভাল্লাগে না কিন্তু’।

‘আচ্ছা তুই এখানে দাঁড়িয়ে এতো কি ভাবছিলি’?

‘ক…কই কিছু না তো’।

‘আরাফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আবার বলছিস কিছু ভাবিস না’?

‘আমি কেনো আরাফের কথা ভাবতে যাবো হুহ্’?

‘তাই? তুই আরাফ ভাইয়ের কথা ভাবছিস না’?

‘না’?

‘তাহলে বল তো আমি কখন তোর পাশে এসে দাঁড়িয়েছি’?

‘এই তো এখন’।

‘আপনার মন্ডু। আপনি যতক্ষণ ধরে ভাবনায় বিভোর হয়েছিলেন আমি ততক্ষণ ধরে আপনার পাশে এসে দাঁড়িয়েছি আর আপনার আপনি ভাবনায় এতোই মশগুল ছিলেন যে কখন আপনার সামনে থেকে আরাফ ভাইয়া চলে গেছে সেটা আপনি বুঝতেই পারেন নি’।

“আমি অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি সত্যি আরাফ নেই। আমি কিছু না বলে একটু কাঁচুমাচু করে রিমির দিকে তাকালাম। রিমি ফিক করে হেসে দিলো”। বললো….

‘হয়েছে বুঝেছি। এবার বল তো ব্যাপার’টা কি’?

‘কালকে রাতে এই মেসেজ’টা এসেছে দেখ’।(ফোন থেকে বের করে মেসেজ’টা দেখালাম)

‘বাব্বাহ্ এতো ভালোবাসা। আমার নিরামিষ বন্ধুও কি তাহলে প্রেমে পড়ে গেলো’?

‘উফফ তুই চুপ কর মেরি মা। আমি এখনো বুঝতে পারছি না কে এগুলো পাঠাচ্ছে আর তুই প্রেম নিয়ে পড়ে আছিস’।

‘কে হতে পারে এটা’?

‘সেটাই তো বুঝতে পারছি না’।

‘তবে আমি যেটুকু বুঝলাম তোকে আড়াল থেকে কেউ একজন বড্ড বেশি ভালোবাসে’।

‘আমি কিছু বললাম না’।

‘কিরে আবার কি ভাবছিস’?

‘কিছু না’।

‘আচ্ছা শোন এসব নিয়ে টেনশন করিস না, তোকে বলেছেই তো সময় হলে ধরা দিবে ততদিন একটু ধৈর্য্য ধর’।

‘হুম’।

‘তবে আমার কেন যেনো মনে হচ্ছে এটা আরাফ ভাইয়া হলেও হতে পারে’?

‘কি যে বলিস? উনার মতো এতো বড়লোকের ছেলে আমার৷ মতো মেয়েকে ভালোবাসবে’?

‘আরাফ ভাইয়ের মধ্যে অহংকার নেই। উনি ধনি-গরিব বিচার করে কাজ করেন বলে আমার মনে হয় না। আর একটা কথা কি জানিস, ভালোবাসা কখন, কিভাবে, কার প্রতি হয়ে যায় সেটা কেউ জানে না। অপর মানুষ’টা গবির নাকি বড়লোক এসব মাথায় থাকে না। ফ্যামিলি মানবে কি মানবে না, ওকে পাবো কি পাবো না এগুলো ভাবনায় আসে না। তখন শুধু মনে হয় অপর মানুষ’টাকে না পেলে নিজের বেঁচে থাকাটাই কষ্টের হয়ে যাবে। যে করেই হোক মানুষ’টাকে পেতে হবে। এই আমাকেই দেখ না, কখনো কি ভেবেছিলাম কাউকে ভালোবেসে ফেলবো তবুও তো একজনকে ভালোবেসে ফেললাম’।

‘আমি মন দিয়ে রিমির কথাগুলো শুনছিলাম। রিমির কথাগুলো যত শুনছি তত যেনো আরাফের কথা আমার মনে পড়ছে। এমন হচ্ছে কেন? আমার অজানা। এই অদ্ভুদ অনুভুতির কোনো নাম আছে কি? এসব ভাবছিলাম আর হাতের নখ কা’ম’ড়া’চ্ছি’লা’ম। এটা আমার একটা বদ অভ্যাস বলতে পারেন৷ যখনই কোনো কিছু ভাবি তখন নখ কা’ম’ড়া’ই। হঠাৎ কারো কথায় ভাবনায় ছেদ পড়লো। সামনে তাকিয়ে দেখি আরাফ দাঁড়িয়ে আছে”।

‘আপনার কি ক্ষুধা লাগছে মিস’? কিছু খাবেন’?

‘না তো। কেন’?

‘যেভাবে হাতের নখ কা’ম’ড়া’চ্ছেন তাতে মনে হলো আপনার ক্ষুধা লাগছে। ক্ষুধা লাগলে বলুন আমি কিছু কিনে নিয়ে আসি। তবুও এই বেচারা নখ গুলোকে ছেড়ে দিন। ওরাও আপনার দাঁতের নিচে গিয়ে বাঁচাও, বাঁচাও করে কান্না করছে’।

‘আমি কিছুক্ষণ চোখ ছোট ছোট করে আরাফের দিকে তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিলাম। মানুষ’টা অনেক মজার তো’।

‘বাব্বাহ্ ঝ’গ’ড়ু’টে রানী আবার হাসতেও পারে নাকি’?

‘হ্যা, হ্যা অবশ্যই পারি’।

‘তাহলে সারাক্ষণ ঝ’গ’ড়া করেন কেন’?

‘আপনি ঝ’গ’ড়া শুরু করেন তাই আমি করি’।

‘এ্যাহ্’।

‘এ্যাহ্ না হ্যা’।

‘বললেই হলো নাকি? আমি মোটেও ঝ’গ’ড়া করি না’।

‘করেন’।

‘করেন না’।

‘১০০ বার করেন’।

‘১০০০ বার করি না’।

“আমি কিছু না বলে আবার হেসে দিলাম। আমার দেখা-দেখি আরাফও হেসে দিলো। মানুষটার সাথে যতক্ষণ ততক্ষণ যেনো আমার সব টেনশন চলে যায়। আমিও যেনো একটা বাচ্চা হয়ে যাই। কি অদ্ভুদ ব্যাপার”!

‘আচ্ছা মিস আবার পরে কথা হবে। এখন আসি’।

‘ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ’।

‘আল্লাহ হাফেজ’।

“আরাফ বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আমি আর রিমিও একটা রিক্সা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বের হলাম। ইদানীং আমাদের কলেজের রাস্তা’টায় প্রচুর জ্যাম লেগে থাকে আজও তার ব্যাতিক্রম নয়। জ্যামে আটকে আছি, প্রচুর বিরক্ত লাগছে। আশে-পাশে তাকাতে তাকাতে হঠাৎ এক জায়গায় আমার চোখ আটকে গেলো। আরাফ কিছু গরিব ছেলে-মেয়েদের খাবার কিনে দিচ্ছে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি মুগ্ধ চোখে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ জ্যাম ছুটে যাওয়ায় রিক্সা তার আপন গতিতে চলতে লাগলো। যতক্ষণ না আরাফ আমার চোখের আড়াল হচ্ছে ততক্ষণ তাকিয়েই ছিলাম আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম,বড়লোকরাও বুঝি এতো ভালো হয়”?

“বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া করে নিলাম। সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই কে’টে গেলো। সন্ধ্যের সময় পড়তে বসলাম কিন্তু আজকে আর কোনো মেসেজ টোন বাজছে না। কিন্তু কেন? সন্ধ্যে হতে দেরি উনার মেসেজ পাঠাতে তো দেরি না। বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি। ৭ টা, ৮ টা, ৯ টার বেশি বেজে গেলো কিন্তু কোনো মেসেজ আসলো না। আমি ভিতরে ভিতরে খুব অস্থির হয়ে আছি। কিন্তু কেন? আমি মেসেজের জন্য’ই বা কেন অপেক্ষা করছি? উত্তর’টা আমার অজানা। আমার এমন অনুভুতি হচ্ছে কেন? এসব ভাবছিলাম হঠাৎ মেসেজ টোনের আওয়াজে আমার ধ্যান ভা’ঙ’লো। আমি একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১০.১৩ বাজে। তারপর ফোনের দিকে তাকালাম সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ। আমার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি উঁকি দিলো। আমি মেসেজ’টা ওপেন করলাম….

‘কি ম্যাডাম আমাকে মিস করছিলেন বুঝি? হিহিহি আমি জানি আপনি আমাকে মিস করছিলেন। আমার মেসেজের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বারবার ঘড়ি আর ফোনের দিকে তাকাচ্ছিলেন যে মেসেজ আসলো কি না। এই যে এখন আমার মেসেজ পেলেন তাতে আপনার অজান্তেই ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি উঁকি দিয়েছে। এই হাসিতেই তো আমি বারবার ম’র’তে চাই। এখন আপনি ভাবছেন, আপনার এসব কান্ডকারখানার কথা আমি জানলাম কিভাবে? কি তাই তো? প্রিয়তমা কখন কি করতে পারে সেগুলা যদি আমি নাই জানি তাহলে কেমন প্রেমিক পুরুষ হলাম? আজকে ইচ্ছে করেই কোনো মেসেজ দেই নি। দেখতে চেয়েছি আপনি আমাকে কতটুকু মিস করেন। তারপর তো দেখলাম যে….না থাক আর কিছু বলবো না। আপনি এখন আমাকে নিয়ে ভাবুন, আমার নাম্বারে কল দিয়ে নাম্বার বন্ধ পেয়ে হতাশার নিশ্বাস ছাড়ুন সেগুলো আমি একটু অনুভব করি কেমন? এখন আপনি মনে করতে পারেন যে, ‘আমি কোন পা’গ’লে’র পাল্লায় পড়লাম রে বাবা’। কিন্তু আসল কথা হলো, আপনাকে ভালোবেসেই আমি পা’গ’ল হয়েছি। আগে কখনো কোনো মেয়ের জন্য এতোটা পা’গ’লা’মো করি নি। আমার নিজের কাছেই মাঝে মাঝে অবাক লাগে। তবে যাই হোক, আপনাকে আমি অসম্ভব ভালোবাসি’।

‘মেসেজ’টা পড়ে আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আর কত চমকে উঠবো? প্রতিদিনই এমন কিছু কথা বলে আমি চমকে উঠি। এটা আরাফ নয় তো? আর যদি আরাফ’ই হয় তাহলে ও কি সত্যি আমাকে এতো’টা ভালোবাসে’?

#চলবে…

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here