প্রণয়ের রং,পর্ব:৮

0
304

প্রণয়ের রং
পর্ব – ০৮

পরদিন ভোর ৬:৩০ এ নিতু ও মেধা আসে নিমিতার বাসায়। এসেই ধুপধাপ ধাক্কা দিতে লাগলো নিমিতার রুমের দরজায়। লাফিয়ে উঠে বসলো সে। হুড়মুড় করে ছুট লাগাল দরজা খুলতে না জানি কি হয়েছে। দরজা খুলেই ওদের দেখে নিমিতার মেজাজ বিগড়ে গেল।

___ ” এই ভোর বেলা কি ডাকাতি করতে গেছিলি দুজন?পুলিশ লাগছে পিছনে? ”
চোখ মুখ খিচে জিজ্ঞেসা করলো নিমিতা।

___” দুর.. সর তো। এই ছেমড়ি এমনিতেই ভোর ৫ টা থেকে দৌড়ের উপ্রে রাখছে আমারে। এখন আবার তুই প্রশ্নের ডালা নিয়া খাড়াইছোস। উফফ.. বিছানা ডাকতেছে আমারে। ”
বলেই দুহাত ছড়িয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরলো মেধা।

___” কেন? কই গেছিলি তোরা?”

___” ফুল মার্কেট। দেখ কী কী কিনেছি। ”

হাতে থাকা শপিং ব্যাগ থেকে সব বের করলো নিতু। চুড়ি, ফুল আর এক গাদা সেফটিপিন।

ওদের কান্ড দেখে নিমিতা অবাক না হয়ে পারলো না।

___” এগুলি কেন আনছিস? কি করবি তোরা?”

নিতু এবার সব দাঁত বের করে হেসে বললো __

___” কেন..সাজবো। ভুলে গেছিস আজ কি?”

___” সব মনে আছে। আমি শাড়ি পরবো না। তোরা পর। ”

___” আরেহ্… টেনশন নিস না। এই দেখ ৪ ডজন সেফটিপিন আনছি। ৩ ডজন তোরেই পরায়ে দিবো। বাকি ১ ডজন আমার আর নিতুর জন্যে।”
বিছানা ছেড়ে উঠে বসতে বসতে বললো মেধা।

নিতু গিয়ে আলমিরা থেকে নিমিতার শাড়ি বের করে আনলো। তারপর দুজনে মিলে জোর করেই নিমিতাকে শাড়ি পরালো। ওরাও তৈরি হয়ে নিলো। নিমিতা শাড়ি তো পরেছে, তবে মনে ভয় আছেই।

মেধা সত্যি সত্যিই পুরো ৩ ডজন সেফটিপিন পরিয়ে দিয়েছে নিমিতাকে।

___” তুই যে কোথায় কোথায় সেফটিপিন পরিয়ে দিছিস আল্লাহ্ মালুম। খুলতে গিয়ে শাড়ি ছিড়লে তোর চুল ছিড়বো আমি। ”
চোখ দুটো সরু করে মেধার দিকে তাকিয়ে বললো নিমিতা।

বাসন্তী পাড় সাদা শাড়ি পরেছে নিমিতা। আঁচল বাসন্তী – সাদা মিশেলে। দুহাত ভর্তি সাদা-বাসন্তী মিলিয়ে চুড়ি পরা। চুলগুলি খোপা করে কাঠগোলাপের মালা পরেছে। চোখে টানা করে কাজল পরা আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক পরেছে।

সাদা রং যেকোনো কিছুর সৌন্দর্য্য দ্বি-গুণ বেড়ে দেয়। তাইতো সাদার ছোঁয়ায় আজ নিমিতার সৌন্দর্য্য আরও বেড়ে গিয়েছে। অপরূপ মায়াবী লাগছে ওকে।

তিন বান্ধবী একসাথেই ভার্সিটিতে এসেছে। আবির আগেই এসেছে ওদের জন্যে অপেক্ষা করছিল গেটে। নিমিতাকে দেখে আরেকদফা প্রেমে পরলো ওর।

ভার্সিটির সবার চোখ যেন নিমিতাকেই দেখছে। সবার মাঝে ওকেই বেশি সুন্দর আর মায়াবী লাগছে।

শুভ্র আড়াল থেকে দেখছিলো নিমিতাকে। আর সবটাই খেয়াল করছিলো সে।

নিমিতারা হাঁটতে হাঁটতে মাঠের একপাশটায় আসতেই পেছন থেকে শুভ্র ডাকলো ওকে।

___” নিমপাতা। ”

নিমিতা পেছন ফিরে দেখলো শুভ্র দাড়িয়ে। বাসন্তী রঙের পান্জাবি ওর পরনে। দুজনকে কেউ একসাথে দেখলে “প্রেম- জুটি মনে করবে।

নিমিতার কাছে শুভ্রকে বেশ খুশি খুশি লাগছে। মনে মনে হাফ ছাড়লো সে। ভাবছে শুভ্র তার প্রশংসা করতে এসেছে।

___” শাড়ি, চুড়ি,ফুল,কাজল সব পরে এসেছো দেখছি আজ!!”
হাসি মুখে বললো শুভ্র।

নিমিতা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো। ভীষণ লজ্জা লাগছে ওর।

শুভ্রের চেহারা হঠাৎই গম্ভীর হয়ে গেল। কপালের রগ ভেসে উঠেছে।

___” রং – ঢং যে এত ভালো পারিস জানতাম না। ”

হঠাৎ এমন কথায় নিমিতা চোখ তুলে তাকালো ওর দিকে। নিতু ও মেধাও হঠাৎ এই ভাব বদলের কিছুই বুঝতে পারছে না। নিমিতা অবাক হওয়ার সীমা হারিয়েছে। সে প্রশ্ন করলো__

___” মানে? ”

___” খুব সরল সাজা হচ্ছে.. না? শাড়ি কেন পরেছিস? ”

নিমিতা চুপ করে আছে। সে খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছে এখন কি হবে।

___” নিষেধ করেছিলাম তোকে শাড়ি পরতে…করিনি? তবুও কেন? ছেলেদের শরীর দেখানোর শখ মিটেনি এখনো? ” হিসহিসিয়ে বললো সে।

নিমিতার চোখ দিয়ে টুপ টুপ করে পানি পরছে। মুখের ভাষা যেন সব মিলিয়ে গেছে ওর। শুভ্রের চিৎকারে আশেপাশে সবাই জড়ো হয়ে গেছে।

___” এখন কেন চুপ করে আছিস? উত্তর দে। ” আবারও চিৎকার দিলো সে।

নিমিতা ভয়ে কেঁপে উঠলো। আবিরও চলে এসেছে। এতক্ষণে। কাঁপা কাঁপা গলায় নিমিতা বলতে লাগলো __

___” আমি পরতে চাইনি।”

___” পরতে চাসনি মানে? এখন মিথ্যেও বলবি আমায়? ”

বলেই ওর কাছে এসে একটান দিয়ে খোপার ফুল ছিড়ে ফেললো।

নিমিতা হতবম্ব হয়ে গেল। সে মোটেও ভাবেনি যে এমন কিছু করবে শুভ্র। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চাচ্ছে ওর। এই মানুষটার জন্যে সেজেছিল সে!!

আর এক মুহুর্তও দেরি না করে দৌড়ে চলে গেল নিমিতা। আর এক সেকেন্ড ও এই লোকটাকে দেখার ইচ্ছে নেই ওর।

শুভ্র চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই নিতু ডাকলো ওকে।

___” ভাইয়া.. ও শাড়ি পরতে চায়নি আমরাই জোর করেছি। আর হ্যাঁ আপনার পছন্দের রং সাদা। তাই ও আপনার জন্যেই সাদা শাড়ি পরেছে। ”

শুভ্রের কানে শুধু একটা কথাই ভেসে আসছে ” ও আপনার জন্যেই সাদা শাড়ি পরেছে..”

চলবে…
নিমিতা আনাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here