প্রণয়ের রং
পর্ব – ০৯
নিমিতা বাড়ি চলে যাচ্ছিল তখনি আবির এসে আটকায় ওকে। লেকের ধারে এসে বসে দুজন। নিমিতা নিঃশব্দে কাঁদছে তখনও। আবির বলে উঠলো__
___ ” এই জন্যেই ঐ ছেলের সাথে তোর কথা বলা পছন্দ করি না আমি। আজ দেখলি তো কতো নিচু মস্তিষ্কের মানুষ ও। ”
___” আমায় একটা রিক্সা করে দিবি প্লীজ। ”
___ ” আমি যা বলছি, তোর ভালোর জন্যই….”
___ ” থাক.. আমি একাই যেতে পারবো। ”
বলেই নিঃশব্দে লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেল নিমিতা। আবির দাড়িয়ে চুপচাপ ওর চলে যাওয়া দেখছে।
বেলকনিতে এলোমেলো হয়ে বসে আছে নিমিতা। ওর মাথা শূণ্য হয়ে আছে। সকল ভালোলাগা, সকল অনুভূতি মাথায় যেন জটলা পেকে আছে। একটু একটু করে গড়া স্বপ্নগুলো, অনুভূতিগুলো মুহুর্তেই যেন ভেঙে গেছে।
ভার্সিটি থেকে এসেই বসে আছে বেলকনিতে। শাড়িও বদলায় নি সে। পুরো শরীর অসার হয়ে আসছে ওর। উঠে দাড়ানোর শক্তিটুকুও যেন নেই ওর।
শুভ্র ছাদের রেলিং ঘেসে দাড়িয়ে আছে।
___ ” রাগ কন্ট্রোল কেন করতে পারি না আমি? আজ অনেক বাড়াবাড়ি করেছি। ও আমার জন্যে সেজেছিল! আর আমি! উফফ্… ”
পরেরদিন শুভ্র জলদি জলদি ভার্সিটি যায়। নিমিতার সাথে কথা বলতেই হবে ওর। অনেক কষ্ট দিয়েছে ওর নিমপাতাকে।
সেদিন ভার্সিটিতে যায় নি নিমিতা। পরপর চারদিন যায় নি সে। আজ নিতু ফোন দিয়েছে ওকে। সে যাবে না বলেছে।
বিকেলে নিমিতা ছাদে এসে বসে আছে। এমন সময় নিতু ফোন করলো ওকে।
___ ” হ্যালো। হ্যাঁ বল। ”
___ ” আজ শুভ্র ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিল। তোর কথা জিজ্ঞেস করলো। ”
___ ” ওহ্.. ”
___” তোর সাথে কথা বলতে চায় নিম্মি। ”
___ ” আমি উনার সাথে কথা বলতে চাই না। ”
___ ” তোর ফোন নাম্বার নিয়েছে। ”
___ ” কেন দিছিস নিতু?”
___ ” কারণ আমি চাই তুই উনার সাথে কথা বল। প্লিজ দোস্ত। ”
নিমিতা আর কিছু না বলেই ফোন রেখে দিল। শুভ্রের সাথে কথা বলতে চায় না সে।
রাতে সবে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে নিমিতা। এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। নিমিতা ফোন হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার। ফোন উঠালো সে।
___” আসসালমু আলাইকুম। হ্যালো। ”
___ ” ওয়ালাইকুমুসসালাম। ”
___ ” জ্বী। কে বলছেন? ”
___ ” সরি নিমপাতা। আমায় মাফ করে দাও। ”
নিমিতা বুঝলো শুভ্র ফোন দিয়েছে। চুপ করে রইল সে। অভিমানগুলো আবারও কান্না হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
___ ” কিছু বলো প্লীজ। আমি সেদিন অনেক বেশি রিয়্যাক্ট করে ফেলেছি। সরি নিমপাতা। কি করবো বলো। ছেলেগুলো সবাই তোমায় দেখছিল। আমার সহ্য হয় নি। তোমায় কেউ মুগ্ধ নয়নে দেখবে আমি কিভাবে সহ্য করবো বলো?”
___ ” কেন? আমায় কেউ দেখলে আপনার তাতে কি? ”
___ ” আমার কিছুই না? ”
___ ” জানি না। ”
___ ” তুমি আমার জন্য সেজেছিলে। তাহলে অন্যদের কেন দেখতে দিবো তোমায়। ”
নিমিতার বুকের মাঝে ধক করে উঠলো।
___ ” উনি কি করে বু্ঝলেন আমি উনার জন্য সেজেছি। ”
নিজেকেই প্রশ্ন করে যাচ্ছে নিমিতা।
___ ” আমি আপনার জন্য কেন সাজতে যাব? ”
___ ” তবে কার জন্য সেজেছিলে? ”
___ ” নিজের জন্য। ”
___ ” মিথ্যে কেন বলছো নিমপাতা। আমি জানি তো। ”
___ ” উহু। মোটেও মিথ্যে বলছি না। ”
___ ” নিমপাতা..”
ওপাশে নিমিতা আবারও নিরব হয়ে আছে।
___ ” আমায় মাফ করা যায় না?”
___ ” আপনি ফোন রাখুন। ”
___ ” আর কোনোদিনও কষ্ট দিবো না তোমায়। একটাবার সুযোগ দাও। প্লীজ… সরি তো।”
___ ” আমায় আর ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেন না। আমি ঘুমাবো। ভালো থাকবেন। ”
ফোন কেটে দিয়ে চুপচাপ সুয়ে রইল নিমিতা। বড্ড কষ্ট হচ্ছে ওর। কি করে মাফ করবে উনাকে?
এত সহজে ভুলতে পারবে সব? চোখে ঐ দৃশ্য এখনও ভেসে বেড়ায় ওর। নাহ্.. এত জলদি সব মেনে নেওয়া সম্ভব নয় ওর পক্ষে। একটা মানুষ বারবার ওকে ছোট করবে আর ও নতুন করে সুযোগ দিয়েই যাবে!!
সাতদিন হতে চললো সেদিনের। শুভ্র এর মাঝে অনেকবার ফোন দিয়েছে, অসংখ্য মেসেজ করেছে। কোনোকিছুরই উত্তর দেয়নি নিমিতা। অভিমানের মেঘ এবার হয়তো সহজেই ঝরে যাবে না।
আজ দশদিন পর ভার্সিটিতে এসেছে নিমিতা। আবির কি এক দরকারে ডেকেছে ওকে। একটুও ইচ্ছে ছিল না আসার। আবির অনেক জোর করাতে এসেছে।
নিমিতা আবিরকে ফোন দিয়ে শুনে নিলো সে কোথায়। জলদি জলদি কথা বলেই চলে যাবে বাসায়। আবিরের কাছে আসতেই সে বললো __
___ ” কেমন আছিস? ”
___ ” ভালো.. তুই?”
___ ” তোকে দেখেই ভালো হয়ে গেছি। ”
___ ” কি হয়েছে বলতো। কেন ডাকলি এভাবে?”
___ ” কিছু না বলা কথা বলতে চাই আজ তোকে। ”
___ ” হ্যা বল। ”
___ ” আগে চোখ বন্ধ কর। ”
___ ” ও মা। কেন? ”
___ ” আহা। চোখ বন্ধ করতে বলেছি আরও বড় করতে বলিনি। ”
___ ” আচ্ছা। ”
চোখ বন্ধ করে নিলো নিমিতা।
___ ” এবার খোল। ”
চোখ মেলেই আবিরকে দেখে শকড্ হয়ে গেছে নিমিতা। ওর সামনে আবির হাঁটু গেড়ে ফুল হাতে বসে আছে।
___ ” নিমিতা.. আমি ভালোবাসি তোকে। তোর মনে একটু জায়গা দিবি আমায়? ”
চলবে….
নিমিতা আনাম