“আমি চাইলে এই মুহূর্তে তোমার সুযোগ নিতে পারি!”
রাগী কন্ঠে কথাটি বলে ওঠে আর্শ।তার সামনেই শাড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিয়ামি।ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে সে বলে ওঠে,
“তুমি চাইলে স্বেচ্ছায় আমি তোমার।সেখানে সুযোগ খুঁজতে হবে কেন?”
মিয়ামির কথায় রাগ আরো এক ধাপ বেড়ে যায় আর্শের।দাঁতে দাঁত চেপে সে কিছু বলে ওঠার আগেই মিয়ামি বিরক্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
-ভাইটু,তুমি কি আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিবা নাকি আমি চেঁচিয়ে সবাইকে বলবো তুমি আমার সাথে অসভ্যতা করছো?
-খুব শখ না আমার হাতে শাড়ি পড়ার?ফাইন!
কথাটি বলেই মিয়ামির হাত দিয়ে ছো মেরে শাড়িটি নিজ হাতে নিয়ে নেয় আর্শ।চেহারায় রাগী ভাব স্পষ্ট দৃশ্যমান।শাড়িটি খুলে এক পাশ নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আরেক হাত দিয়ে খামচে ধরে মিয়ামির কোমর।অপর হাত দিয়ে শাড়ি গুঁজার বাহানায় মিয়ামির কোমরে নিজের নখ বসিয়ে দেয়।
এতে যথেষ্ট ব্যথা পাওয়া সত্ত্বেও মিয়ামি কিচ্ছুটি বলে না।বরং নিজের চোখজোড়া বুজে ঠোঁটে আলতো হাসি নিয়ে সবটা সহ্য করে নিচ্ছে সে। মিয়ামির এমন প্রতিক্রিয়া আর্শের রাগ আরো বাড়িয়ে দেয়। সে শাড়ি গুঁজার বাহানায় বার বার মিয়ামির কোমরে নখ বসিয়ে এবং আঁচল ঠিক করার সময় ইচ্ছাকৃত মিয়ামির কাঁধ খামচে ধরে মিয়ামিকে ব্যথা দেওয়ার চেষ্টা করে। সেই সাথে সেফটি পিন ব্যবহার করার সময়ও ইচ্ছাকৃতই তা দিয়ে মিয়ামিকে ব্যথা দেওয়ার চেষ্টা করে।কিন্তু মিয়ামি এসব কিছুর পরও তার ঠোঁটের হাসিটি বজায়ে রেখেছে।এভাবেই শাড়ি পড়ানো শেষ করে মিয়ামির সামনে বরাবর দাঁড়িয়ে মিয়ামির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় আর্শ।
আর্শের স্পর্শ না পেয়ে চোখ মেলে তাকায় মিয়ামি আর ওমনি তার চোখের কোণ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। এই এক ফোঁটা জলই যেনো আর্শের বিজয় ঘোষণা করে দিলো।সাথে সাথেই আর্শের ঠোঁটে ফুটে উঠলো বাঁকা হাসি।ঠোঁটে এই হাসি নিয়েই সে মিয়ামিকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-সাধ মিটেছে আমার হাতে শাড়ি পড়ার?
উত্তরে মিয়ামি কিছু না বলে ধীরে ধীরে আর্শের অনেকটা কাছে এসে তার ওষ্ঠদ্বয় আর্শের কানের সাথে লাগিয়ে নিন্ম স্বরে বলে ওঠে,
-এ এক ফোঁটা জল প্রণয়ের,প্রিয়। ভেবে দেখো,আজ ঠিক কতবার ছুঁয়েছ আমায়!এই স্পর্শের জন্য হলেও আমি বারংবার তোমার হাতে শাড়ি পড়তে চাই।
কথাটি শেষ করে ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে আর্শের চোখে চোখ রাখে মিয়ামি। ৬ বছরের বড় হয়েও এই পিচ্চি মেয়েটির চোখের গভীরতা মাপতে ব্যর্থ হচ্ছে আর্শ।তাই তো পলকহীন তাকিয়ে আছে মায়া জড়ানো এই গভীর চোখজোড়ার পানে। কিন্তু এ আর বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। মিয়ামি ধীরে ধীরে তার থেকে নিজের দূরত্ব বাড়িয়ে ধীর কদমে কক্ষ ত্যাগ করলো।এদিকে এক ধ্যানে মিয়ামির যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে আর্শ।
!!
পুরো ছাঁদ জুড়ে ঠান্ডা বাতাস বইছে।বিকেল হওয়ায় রোদের তেজ তেমন একটা নেই বললেই চলে।এর ফলে ছাঁদে দাঁড়িয়ে বা বসে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় একের পর এক ছবি তুলতে তেমন অসুবিধে হচ্ছে না মিয়ামির।তার সামনেই আর্শি বিভিন্ন এঙ্গেলে ক্যামেরা ধরে একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছে।
আর্শির ছোটবেলা দিয়েই ফোটোগ্রাফির সখ।কলেজে ভর্তি হতেই বাবার কাছে বায়না ধরে একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনে নেয় সে।এরপর ফেসবুকে তার ফোটোগ্রাফির একটি ছোট পেজ ও খুলে নেয়।আজ পেজে ছবি দেওয়ার জন্যেই মূলত এত এত ছবি তোলা।আর ছবির মডেল হিসেবে আজ আর্শি মিয়ামিকে নির্বাচন করেছে।
উপন্যাসের বই,এক কাপ চা ও শাড়ি পরিহিত এক নারী একই ফ্রেমে বেশ লাগে দেখতে! তাই জন্যেই আজ মিয়ামির শাড়ি পড়া।
“কিরে, হইছে তোর মন মতো ছবি?”(মিয়ামি)
“দোস্ত, মাত্র ১ টা পছন্দ হইছে।পেজে অন্তত দুইটা ছবি তো আপলোড দেওয়া উচিৎ!”(আর্শি)
চোখ,মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে মিয়ামি বলে ওঠে,
“আমি আর পারবো না।অনেক হইছে।”
“আচ্ছা দোস্ত,ভাব তো আজ ভাই যখন তোরে শাড়ি পড়াইতেছিলো তোর তখন কেমন লাগতেছিলো?”
“প্রে……….”
“আরে আরে আমারে বলতে বলি নাই তো! তুই জাস্ট ঐ মোমেন্ট টা ইমাজিন কর।”
আর্শির বলতে দেরি হলেও মিয়ামির চোখজোড়া বুজতে দেরি হলো না। ছাঁদের এক কোণে হাঁটু ভাঁজ করে বসে ছিলো সে, হাতে উপন্যাসের বই এবং পাশেই চায়ের কাপ টা রাখা ছিলো।এবার চোখজোড়া বুজে ঐ মুহূর্তের কথা মনে করতেই মিয়ামির ঠোঁটে আপনাআপনিই হাসি ফুটে উঠলো।ঠিক এই সময়ই আর্শি বলে উঠলো,
“দোস্ত গালে হাত টা দিয়ে ইমাজিন কর তাইলে আরো ভালো লাগবে তোর”
চোখ না খুলেই নিজের এক হাতের উপর গাল রেখে ঐ মুহূর্ত টা মনে করায় ব্যস্ত হয়ে পরলো মিয়ামি।
কিছুটা সময় পাড় হতেই আর্শির চিল্লানোর আওয়াজ কানে এসে লাগাতে তড়িঘড়ি করেই চোখ মেলে তাকায় সে।
“ইয়াহুউউউউউ! দোস্ত, দেখ এই ছবি টা কত্তো সুন্দর হইছে।একদম রিয়েল ক্যান্ডিড প্লাস বিউটিফুল।”
মিয়ামি কিছু না বলে নিজের জায়গা দিয়ে উঠে এসে আর্শির এক কান জোরে টেনে ধরে বলে ওঠে,
“চালাকি করস আমার সাথে!!আমারে ইমাজিনে ব্যস্ত রেখে নিজের স্বার্থ হাসিল করা হচ্ছে!”
উত্তরে আর্শি একটি চোরা হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
“ভাইয়ের নাম নিলেই তো তুই অন্য জগতে হারায়ে যাস।তখন ক্লান্তি,ঘুম,কষ্ট কিচ্ছুই তোর মাথায় থাকে না।আমার ভাইর জন্য যে পাগল তুই তার একটু আধটু সুযোগ তো আমি নিতেই পারি।আফটার অল আমি তোর হবু ননদ।”
কথাটি শেষ করেই মিয়ামির দিকে তাকিয়ে চোখ মারে আর্শি আর ওমনি নিজের ২৯ টা দাঁত বের করে হেসে দেয় মিয়ামি।
এতোক্ষণ ধরে দুই বান্ধবীর কথোপকথন ৩য় একজনও শুনছিলো।তার ঠোঁটেও হাসি ফুটে আছে।ব্যথাময় হাসি।
!!
রাতে খাবার শেষে সবাই উঠে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেই আর্শের মা সানিয়া বেগম বলে ওঠেন,
-আর্শ, মিমিকে(মিয়ামি) একটু ওর বাসা অব্দি দিয়ে আয় তো।
চোখমুখে বিরক্তি নিয়ে আর্শ বলে ওঠে,
-মা আমার কাজ আছে। আমি পারবো না।
আর্শের কথা শুনে সাথে সাথেই মন খারাপ হয়ে যায় মিয়ামির। বিশেষ করে আর্শের বিরক্ত হওয়াটা তাকে বেশি কষ্ট দিচ্ছে। তার ব্যাপারেই কেনো আর্শের এতো বিরক্তি?অন্য সবার বেলায় তো আর্শ এমনটি নয়।
ছেলের কথায় রাগী কন্ঠে সানিয়া বেগম বলে ওঠেন,
-এই রাতে মেয়েটা একা একা যাবে?
-সেটা ওর আগে ভাবা উচিৎ ছিলো। রাতে একা যেতে পারবে না তাহলে বিকেলেই চলে গেলো না কেনো?
মিয়ামির দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই কথাটি বলে আর্শ।এবার মিয়ামির খারাপ লাগা টা কয়েকশো গুণ বৃদ্ধি পেলো।সানিয়া বেগমের কিছু বলার আগেই সে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-মামনি,বাসা তো এই সামনেই।দূর তো নাহ।আমি একাই চলে যেতে পারবো।
-কিন্তু……
সানিয়া বেগমের কথা শেষ হওয়ার আগেই মিয়ামি ঠোঁটে হাসি টেনে বলে ওঠে,
-পৌঁছে সাথে সাথেই তোমাকে কল দিবো,ঠিক আছে?
উত্তরে আলতো হাসলেন সানিয়া বেগম এবং নিজের ছেলের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন কিন্তু কিছু বললেন না।
রাস্তার পাশ দিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছে মিয়ামি।চোখ জোড়াও বারংবার ঝাপসা হয়ে আসছে তার।ছেলে টা তার সাথে এমন কেন করে বুঝে উঠতে পারে না সে।কি এমন হতো তাকে পৌঁছে দিতে এলে?
এসব ভাবনার মাঝেই হটাৎ মিয়ামির মনে হলো তার পেছনে কেউ একজন আছে।এমন জনমানব শূন্য এক গলিতে সে একা একটা মেয়ে!পেছনের মানুষটা যদি কোনো বখাটে ছেলে হয় তাহলে?ভাবতেই গা শিউরে ওঠে মিয়ামির।সে তার হাঁটার গতি বাড়াতেই অনুভব করে তার পেছনের মানুষটাও হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।এবার আরো ভয় লাগছে মিয়ামির।তার হাতে থাকা ছুড়ি টাকে শক্ত করে ধরে সে পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখে তার পেছনে একজন যুবক দাঁড়ানো। গম্ভীর মুখে এক ব্রু উঁচু করে ছেলেটি একবার তার হাতের ছুরিটির দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি উঠিয়ে তার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
“ভাইটু,তুমি?”
অবাক চোখে আর্শের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে ওঠে মিয়ামি।
-এমনি তো দুই দিন পর পরই আমাদের বাসায় এসে রাতে থাকো তাহলে আজ নিজের বাসায় যাওয়ার জন্য এতো পাগল হওয়ার কি হলো?(আর্শ)
-তুমি চাইছিলা, আমি তোমাদের বাসায় রাতে থাকি?
-হ্যা কারণ এখন আমার কাজ ফেলে তোমায় পাহারা দেওয়ার জন্য ফালতু সময় অপচয় করতে হতো না।
ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে মিয়ামি বলে ওঠে,
-How caring! [কত যত্নশীল!]
উত্তরে আর্শ কিছু না বলে চোখমুখে বিরক্তি ফুটিয়ে হাঁটতে আরম্ভ করে।তার এমন কথায়ও মেয়েটি যত্ন কিভাবে খুঁজে পায় তা বুঝে আসে না তার।
আর্শ হাঁটা আরম্ভ করতেই পেছন পেছন তাকে অনুসরণ করে মিয়ামিও হাঁটতে আরম্ভ করে।
চলবে।
#প্রণয়_আসক্তি
#লেখিকাঃমাহযাবীন
পর্বঃ০১