#প্রণয়_আসক্তি
#লেখিকাঃমাহযাবীন
পর্বঃ১৪
আর্শের শরীর মৃদু কাঁপছে।ছেলেটি একটু পর পর নিজের নিচের ওষ্ঠ কামড়ে ধরছে,নিঃশ্বাস টাও ঘন হয়ে আছে তার।সেই সাথে নিজের দু’হাত ডলে চলছে সে।
আর্শের এমন অস্বাভাবিক আচারণ অবাক চোখে দেখে চলছে মিয়ামি।এর আগে কখনো আর্শের এমন অবস্থার প্রত্যক্ষদর্শী হয়নি সে।নিজের দৃষ্টির সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে হৃদয়ে এক অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে মিয়ামির।না সে এটি সহ্য করতে পারছে আর না আর্শকে এ যন্ত্রণা দিয়ে মুক্ত হতে সাহায্য করতে পারছে।শুধু তার অসহায় দু’নয়ন নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে চলছে।
আর্শ জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতেই মিয়ামিকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-কেনো এসেছে, মিয়ু?প্লিজ চলে যাও এখান থেকে।
আর্শের কন্ঠও স্বাভাবিক নয়।তার কথার উত্তরে কিছু বলার মতো অবস্থাতে নেই মিয়ামি।সে অপলক তাকিয়ে আছে আর্শের দিকে।আর্শ আবারও বলে ওঠে,
-চলে যাও,প্লিজ।
আর্শের ঠোঁট জোড়া মিয়ামিকে চলে যেতে বললেও ছেলেটির চোখ জোড়া যেনো তার কাছে সাহায্য চাইছে।চাইছে একটি প্রশান্তির স্থান যেখানে তার অস্থির হৃদয়ে দুদণ্ড স্বস্তি মিলবে।মিয়ামি,আর্শের চোখের এ আবদার দূরে ঠেলে দিতে অক্ষম।মেয়েটি আর্শকে একটু স্বস্তি দেওয়ার প্রচেষ্টায় ছেলেটির কাছে এগিয়ে গিয়ে তাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়।যতটা নিবিড়ভাবে আঁকড়ে ধরলে মানুষটকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেওয়া যায় ঠিক ততোটাই নিবিড়ভাবে নিজের ভালোবাসাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে সে।
আর্শ তার শরীরের ভেতর যন্ত্রণা অনুভব করছে।তার বুকে মিয়ামির উপস্থিতিও এ যন্ত্রণা লাঘবে সফল নয়।আর্শ অনুভব করছে,ঠিক এই মুহূর্তে ড্রাগস না নিলে তার নিঃশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে যাবে।সে মিয়ামিকে জড়িয়ে না ধরেই অস্থির কন্ঠে বলে ওঠে,
-আমি না পারছি না,মিয়ু।একটু খাই?প্লিজ?অল্প একটু?
আর্শের করুন স্বরের এমন মিনতি শুনে মিয়ামির যন্ত্রণা যেনো আরো বেড়ে গেলো।যার বহিঃপ্রকাশ তার চোখের অশ্রু কণা।মিয়ামির কোনো উত্তর না পেয়ে আর্শের অস্থিরতা আগের তুলনায় আরো বৃদ্ধি পেলো।সে অস্থির কন্ঠস্বরে দ্রুত বেগে বলে উঠলো,
-প্লিজ মিয়ু,প্লিজ।একটু খাবো,শুধু একটু।প্লিজ একটু?
কথাগুলো বলতে বলতেই অধৈর্য্য হয়ে আর্শ তার ঠিক সামনে বরাবর অবস্থিত দেওয়াটায় স্বজোরে একটি ঘুষি মারে।হটাৎ আর্শের এমন কাজে ভয়ে কেঁপে ওঠে মিয়ামি।তখনই আর্শকে ছেড়ে একটু সরে দাঁড়িয়ে আর্শের হাতের দিকে তাকাতেই আঁতকে ওঠে সে।ছেলেটির হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। মিয়ামি দেরি না করে আর্শের হাতটি ধরতে যায় কিন্তু আর্শ নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে নেয়।কেমন যেনো দিশেহারার ন্যায় আচারণ করছে ছেলেটি।মিয়ামি আবারও আর্শের কাছে যেতেই আর্শ হাঁটু গেরে তার সামনে বসে পরে।টলমলে চোখ মাটিতে আবদ্ধ করে ঘন নিঃশ্বাস নিতে নিতেই বলে ওঠে,
-আমি আর পারছি না,মিয়ু।আমি সত্যিই পারছি না।
আর্শকে এতোটা কষ্ট পেতে দেখে,তার এতোটা অসহায়ত্ব দেখে মিয়ামি ভেতরে ভেতরেই ভেঙে টুকরো হয়ে যাচ্ছে।সব কিছু ভুলে আর্শ তার কাছে যা আবদার করছে সেটির অনুমতি দিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু এর অনুমতি দিলে তো আর্শ হেরে যাবে তার শত্রুর কাছে,হেরে যাবে তাদের প্রণয়,আর্শের শত্রু তার ড্রাগ আসক্তি জিতে যাবে আর মিয়ামির আর্শ আসক্তি হেরে যাবে।এটি তো কখনোই হতে দিবে না মিয়ামি।
পৃথিবীর সব কিছু ভুলে,দূরে ঠেলে দিয়ে নিজের মনের কথায় সায় দিয়ে আর্শের ঠিক সামনে বরাবর হাঁটু গেরে বসে পরে মিয়ামি।আর্শের কম্পিত শরীর,টলমলে চোখ, অস্বাভাবিক চাহনি সবটিতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে আর একটি মুহূর্তও দেরি না করে দু’হাতে আর্শের গাল আঁকড়ে ধরে তার ঠোঁট জোড়া নিজ আয়ত্তে নিয়ে নেয় মিয়ামি।তার আনাড়ি ওষ্ঠদ্বয় যেনো আর্শের কষ্ট গুলোকে নিজের মাঝে টেনে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
মিয়ামির প্রণয়ের স্পর্শে ধীরে ধীরে আর্শ যেনো এক অন্য দুনিয়ায় প্রবেশ করছে।এক ঘোরের দুনিয়ায়।যে দুনিয়ায় শুধু সে,মিয়ামি এবং তাদের মধ্যবর্তী এক তীব্র অনুভূতি।আর্শ সময়ের সাথে সাথে পুরোপুরি মিয়ামির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে।নিজের দু’হাতে আলতো করে মিয়ামির কোমর আঁকড়ে ধরেছে সে।চোখজোড়া বুজে নিয়ে সেও যেনো মিয়ামি নামক ঘোরে বিলীন হয়ে নিজের কষ্টগুলোকে সমাধি দিয়ে প্রিয় মানুষটির মাঝে প্রশান্তি খোঁজায় মত্ত হয়ে গিয়েছে।
!!
বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ল্যাপটপে ফেসবুক চালাচ্ছে বিহান।আর্শি সেই যে আইডি ডিএক্টিভ করে গেলো তারপর ২-৩ দিন হয়ে গিয়েছে এখন অব্দি একবারও আইডিতে এক্টিভ হয়নি।বিহানের খুব মনে পরছে মেয়েটির কথা।
যথেষ্ট ভালো বন্ধু ছিলো তারা।সকালের গুড মর্নিং দিয়ে রাতের গুড নাইট অব্দি কথা হতো তাদের।প্রতিদিনই কিছু না কিছুর ছবি দিতো সে মেয়েটিকে।যেমন-নিজের গার্ডেনের বা নিজের রান্না করা কোনো খাবারের বা নিজেরই।কোথাও ঘুরতে গেলে তো অসংখ্য ছবি পাঠাতো সে,মেয়েটিকে।আর মেয়েটিও ছবি পেয়ে খুশি হয়ে যেতো।যা তার টেক্সটেই বুঝতো বিহান।আর্শির সাথে কথা বলতেও ভালো লাগতো তার।মেয়েটিকে সামনাসামনি কখনো না দেখলেও তাদের দু’জনের বন্ধুত্বটা যথেষ্ট মজবুত ছিলো।মেয়েটির সাথে কতশত গল্প করতো সে,কত গেম ও তো খেলেছে তারা একসাথে।এমন সব স্মৃতিচারণে ব্যস্ত হয়ে পরলো বিহান।
স্মৃতিচারণ করতে করতেই বিহান ফেসবুকের একটি অপশনে ঢোকে।যেখান থেকে দেখা যায় কে কে তার প্রোফাইল ভিজিট করেছিলো।এই অপশনটিতে প্রায়ই ঢোকে সে বিনা কারণে।
এখন এ অপশনটিতে ঢুকে ভিজিটর লিস্টে চোখ পরতেই চমকে ওঠে বিহান।আর্শির মায়ের আইডি থেকে কেউ একজন এই ২-৩ দিনে ৪-৫ বার তার প্রোফাইলে ভিজিট করেছে।বুঝতে আর বাকি থাকে না যে এই কেউ একজন টা অবশ্যই আর্শিই।
মুহূর্তেই ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে বিহানের।মেয়েটি রাগ করে আইডি ডিএক্টিভ করলেও তার চিন্তা করা এখনো ছাড়েনি মেয়েটি।সে যেমন আর্শিকে মিস করছে ঠিক তেমনই মেয়েটিও তাকে মিস করছে।
এদিকে,মিয়ামিকে সবার অগোচরে গৃহে প্রবেশ করিয়ে আর্শি সোজা নিজ কক্ষে চলে আসে।কাবাবে হাড্ডি হওয়ার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে তার নেই।
নিজ কক্ষে এসে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় সে।ঠোঁটে একটু হাসি ফুটে আছে তার।এ হাসিটির কারণ মিয়ামি ও তার বাচ্চামি।একটু আগে ফোন কলে মিয়ামির বলা কথা আবার এতো রাতে প্রিয় মানুষটিকে এক নজর দেখতে এতোটা ঝুঁকি নিয়ে ও বাসা থেকে এ বাসা অব্দি চলে আসা,এসব নিয়ে ভাবছে সে।আর্শ আর মিয়ামিকে দেখে বেশ ভালো লাগে তার।এদের মাঝের ভালোবাসা টা দেখে আর্শির মনেও প্রশান্তি জায়গা করে নেয়।
কিন্তু মনে মনে প্রশ্নও জাগে মিয়ামি,আর্শকে যতটা ভালোবাসে তার থেকে কোনো অংশে কি কম ভালোবেসেছিলো সে বিহানকে?কেনো মিয়ামির ভালোবাসায় পরিপূর্ণতা আর তার ভালোবাসায় মাঝ পথে বিচ্ছেদ!
এসব ভাবতে ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যায় তার।সেই সাথে বিহানকে খুব করে মিস করতে আরম্ভ করে সে।অতঃপর বিহানকে এক নজর দেখার মনোবাসনা নিয়ে নিজের মায়ের আইডিতে লগ ইন করে আর্শি।
!!
মিয়ামির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আর্শ।পেটে মুখ গুঁজে দু’হাতে মিয়ামির কোমর আঁকড়ে ধরে আছে সে।মিয়ামি ধীরে ধীরে আর্শের মাথায় হাত বুলিয়ে চলছে।তার হাতের আলতো স্পর্শে এক প্রশান্তিময় ঘুমে বিভোর হয়ে গিয়েছে আর্শ।
কিন্তু মিয়ামির চোখে এক বিন্দু পরিমাণ ঘুম নেই।তার চোখের সামনে ঐ সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত ভেসে চলছে।আর্শের ওমন অস্বাভাবিক আচারণ, অস্থিরতা, অসহায়ত্ব কোনোটিই ভুলতে পারছে না সে।
তখন,ছেলেটি তার ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে ধীরে ধীরে শান্ত হয়।প্রায় অনেকটা সময় পর সে মিয়ামির থেকে সরে এসে বিনা বাক্য ব্যয়ে মিয়ামির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।ও সময়,কয়েক ফোঁটা অশ্রু কণাও আর্শের চোখ হতে গাল গড়িয়ে মিয়ামির কোলে সমাধিত হয়েছিলো।এ প্রথম আর্শের চোখের পানি দেখে মিয়ামির ভেতরের যন্ত্রণা টা যেনো কয়েকশো গুণ বৃদ্ধি পেয়ে যায়।আর্শের কয়েক ফোঁটা চোখের জলের সমাধি দেখে মিয়ামির কয়েকশো অশ্রু কণা সমাধিত হয় তখন।সে আলতো হাতে আর্শের চোখের জল মুছে দিয়ে মাথা ঝুকিয়ে আর্শের চোখের উপর চুমু একেঁ দেয়।এতে আর্শ আরো নিবিড়ভাবে তাকে আঁকড়ে ধরে।
ঘুমন্ত আর্শের চেহারা পানে তাকিয়ে তার মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতেই বিভিন্ন চিন্তেরা এসে জায়গা করে নিচ্ছে মিয়ামির মনে।এখন যখন সে এ আসক্তির ভয়াবহতা নিজ চোখে দেখে উপলব্ধি করেছে তখন সে অনতিবিলম্বে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার গুরুত্ব টা অনুভব করছে।সেই সাথে আরো একটি বিষয়ে অনুশোচনা কাজ করছে মিয়ামির মাঝে।এখন অব্দি আর্শ ও তার বিয়ে সম্পন্ন হয়নি তবে এতোটা কাছে আসা টা কি অনুচিত নয়!অবশ্যই অনুচিত কিন্তু কি করতো সে তখন!আর কোনো উপায় তো খুঁজে পাচ্ছিলো না সে।হয় ড্রাগস এর কাছে হেরে যাওয়া নাহয় একটি অনুচিত কদম।এ দু’য়ের মাঝে মিয়ামি দ্বিতীয় টি বেছে নিয়েছিলো।কারণ সে ওয়াদা করেছিলো তার প্রিয়কে,তার আর্শ আসক্তি জিতবেই।
#প্রণয়_আসক্তি
#লেখিকাঃমাহযাবীন
পর্বঃ১৫
আকাশ কালো মেঘে পরিপূর্ণ।ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ গর্জে উঠছে।ঠান্ডা বাতাস প্রবাহের ফলে পরিবেশ টা শীতল হয়ে আছে।সেই সাথে রহমত নিয়ে সহস্র বৃষ্টি ফোঁটা আসমান হতে পাতালে আছড়ে পড়ছে।
বারান্দায় পাতানো একটি চেয়ারে বসে মুগ্ধ নয়নে বৃষ্টি ভেজা শহর পানে তাকিয়ে আছে মিয়ামি।ঠান্ডা বাতাসের বেগে অল্প স্বল্প বৃষ্টি কণা বারান্দায় ভেতরে প্রবেশ করে আলতো করে তার শরীর স্পর্শ করে যাচ্ছে।বৃষ্টির মন মাতানো ঘ্রাণ ও আলতো স্পর্শে মিয়ামির হৃদয় মুগ্ধতায় ভরে উঠছে।ঠিক এমন সময়ই ফোনটি বেজে ওঠে তার।বিরক্তি নিয়ে ফোনটি হাতে নিলেও স্ক্রিনে চোখ পরতেই বিরক্তিরা বিদায় জানায় এবং একরাশ আনন্দে যেনো নেচে উঠে তার মন।সে অনতিবিলম্বে কলটি রিসিভ করে কানে ধরে বলে ওঠে,
-তুমি অফিসে যাওনি?
-অফিসেই তো।
-অফিসে বসে তো তুমি কক্ষনো খুব জরুরী কিছু না হলে ফোন হাতেই নেও না।আর আজ নিজে কল দিলে যে!কিছু কি হয়েছে?
চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্নটি করে মিয়ামি।আর্শ স্বাভাবিক কন্ঠেই বলে ওঠে,
-কাজ তেমন নেই আজ তাই।
-আচ্ছা।
-গত রাতে নিজের বাসায় কখন গিয়েছো?
-তুমি ঘুমাবার ১ ঘন্টা হতে না হতেই আর্শি দরজায় কড়া নাড়ে।তাই আর দেরি না করে তোমার মাথার নিচে বালিশ পেতে দিয়ে আমি আর্শির রুমে যাই।তারপর আর্শিই আমাকে সাহায্য করে সাবধানে সবার দৃষ্টির আড়ালে বাসা থেকে বের হতে।
-আমার হাতে ব্যান্ডেজ কখন করেছো?
-তখন রুম থেকে বেরোনোর আগ মুহূর্তে।
ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে আর্শের।এতো সব কাহিনির মাঝেও মেয়েটি তার হাতের ক্ষত টাকে ভোলেনি।তাড়াহুড়ো বা ধরা পরার ভয়ের মাঝেও যাবার আগে ঠিকই তার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে কক্ষ ত্যাগ করেছিলো।
এতোটুকু একটা মেয়ে কতোটা দায়িত্ব নিতে,যত্ন নিতে জানে!এ মেয়েটিতে বারংবার, সহস্র বার মুগ্ধ হয় সে।কিন্তু সে তো প্রকাশ করতে জানে না।তাই এবারও মিয়ামির প্রসংশায় একটিও বাক্য ব্যয় করলো না সে।আর না নিজের অনুভূতি কোনো শব্দে প্রকাশ করলো।সদা সর্বদার ন্যায় এবারও নিজের মুগ্ধতাগুলোকে নিজের মাঝে অতি যত্নে চেপে রেখে সে বলে ওঠে,
-কি করছো?
-বৃষ্টি দেখছি।ভাইটু,আমার না খুব খুব খুব ইচ্ছে করছে তোমার সাথে বৃষ্টি বিলাস করতে।কিভাবে জানো?আমি সাদা শাড়ি পরবো,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক ও তার সাথে চোখে হালকা কাজল লাগাবো।আর তুমি একটা সাদা শার্ট ও জিন্স প্যান্ট পড়বা।ঠিক এমন সাজেই নদীর মাঝে একটি নৌকায় আমি ও তুমি অর্থাৎ আমরা একসাথে বৃষ্টি বিলাস করবো।খুব খুব ইচ্ছে করছে।করবা প্লিজ?
উৎফুল্ল কন্ঠে কথা গুলো বলে ওঠে মিয়ামি।তার কথা গুলো কানে আসতেই ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে আর্শের।সে নিজেও তো মেয়েটিকে নিয়ে কতশত বৃষ্টি বিলাসের স্বপ্ন বুনে রেখেছে।তার হৃদয় ও তো ব্যাকুল হয়ে আছে সে সকল স্বপ্ন পূরণের জন্যে।কিন্তু সব কিছুর একটি সঠিক সময় আছে।তাদের এ সকল অপূর্ণ, অব্যক্ত স্বপ্ন গুলো পূরণের সঠিক সময় আজ থেকে ঠিক ঠিক ৫ দিন পর থেকে।যখন তারা সঠিক অর্থে একে-অপরের হয়ে যাবে।
আর্শ তার ঠোঁটে হাসিটি নিয়েই মিয়ামির প্রশ্নের উত্তরে বলে ওঠে,
-করবো তো।কিন্তু সে দিনটি আজ নয়।
-কেনো?আজ খুব ব্যস্ত?
উত্তরে আর্শ নিন্ম স্বরে বলে ওঠে,
-হু।
আর্শের কথায় মন একটু খারাপ হলেও তা উপেক্ষা করে মিয়ামি নিন্ম স্বরে বলে ওঠে,
-ড্রাগস নিয়েছিলা?
-নিয়েছি।
-ওহ।সে যাই হোক,আমি এতেই খুব খুশি যে তুমি তোমার প্রথম চ্যালেন্জে হারোনি।
-তুমি হারতে দেওনি।
ঠোঁটে ভরসামাখা হাসি টেনে নিয়ে মিয়ামি বলে ওঠে,
-আর দিবোও না।ভাইটু শোনো,আমি ভেবে নিয়েছি।আগামী এক-দু’দিনের মাঝেই আমরা ডাক্তারের কাছে যাবো।একজন ডাক্তারের পরামর্শ খুব প্রয়োজন।
-বিয়ের আগে নয়,মিয়ু।আগামীকালই আমার সব কাজিনরা চলে আসবে।আর শুনেছি তোমার খালারাও কাল তোমাদের বাসায় আসবেন।আগামী ক’দিনের ব্যস্ততা শেষ হোক।
আর্শের কথায় সম্মতি দেওয়ার ইচ্ছে বিন্দু পরিমাণ নেই মিয়ামির।ছেলেটি কেনো বুঝতে চাইছে না যে,সে তার প্রিয়কে দ্রুতই সুস্থ করতে চায়।প্রিয় মানুষটির কষ্ট টা যে বড্ড অসহনীয়।নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আর্শের সাথে সম্মতিজ্ঞাপন করে মিয়ামি বলে ওঠে,
-আচ্ছা।
উত্তরে মিয়ামির সম্মতি পাবার পর আর্শও আর কথা বাড়ায় না।ড্রাগসের বিষয়ে কথা হলেই তার মাঝে প্রচন্ড অপরাধবোধ কাজ করে।নিজেকে মিয়ামির অযোগ্য মনে হতে আরম্ভ করে।তখন,মিয়ামিকে বিয়ে করার সাহসটিও হারিয়ে ফেলে সে।কিন্তু মেয়েটিকে হারানোর সামর্থ্য তো তার নেই।সেই সাথে আর্শ এ ও খুব ভালোই জানে যে,মিয়ামি তাকে না পেলে কোনো দিনও অন্য কোনো পুরুষের সাথে ভালো থাকবে না।হয়তো বাস্তবতার কবলে পড়ে মেয়েটি অন্য কারো সংসার করবে কিন্তু তার কিশোরী বয়সের সবটুকু আবেগ,অনুভূতি দিয়ে কল্পনার জগতে গড়া সংসার টা তো হতে হতেও না হওয়াই রয়ে যাবে।এই ক্ষত টা কি আদৌও কখনো পূরণ হওয়া সম্ভব?
একটু ঝুঁকি নিয়ে যদি ভালোবাসায় পূর্ণ দুটি মন এক হয় তাহলে ঝুঁকি নেওয়াটাই উচিৎ নয় কি?একটু ঝুঁকি নাহয় তারা নিয়েই নিলো।
!!
অভিমান হলো রাগ ও কষ্টের মিশ্র রূপ।অনেকে অভিমানকে রাগের নাম দেয়।বোকা তারা! রাগ তো পর মানুষের প্রতি তৈরি হয়।আর অভিমান আপন মানুষের প্রতি।কারণ অতি প্রিয় মানুষগুলোই কষ্ট দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।এ ক্ষমতা টি তো অপ্রিয় মানুষদের নেই।
আবার,ভালোবাসার একটি বাজে বৈশিষ্ট্য হলো মানুষ চাইলেও তার প্রিয় মানুষটির প্রতি দীর্ঘ সময় অভিমান ধরে রাখতে পারে না।শত চেষ্টা চালাবার পরও ব্যর্থ হয় তারা।যেমনটি ব্যর্থ হচ্ছে আর্শি।অভিমান গলে প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলার ইচ্ছে জাগছে তার।তাই আজ ৫ম দিনের দিন সে নিজের আইডি তে লগ ইন করে।
এক মন বলছে বিহানকে ম্যাসেজ দিতে তো অপর মন বলছে,”খবরদার!বেহায়ামির ও একটি সীমা থাকা অতি প্রয়োজন”।
ম্যাসেন্জারে ঢুকতেই আর্শির চোখে পরে ছেলেটি এক্টিভ আছে।ওমনি হৃৎস্পন্দন ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে আরম্ভ করে তার।মনে দ্বিধা,সংকোচ নিয়ে সে বিহানের ইনবক্সে ঢোকে।ঢুকতেই তাদের হওয়া শেষ কথোপকথন গুলোয় চোখ পরে আর্শির।তাতে চোখ বুলিয়ে নিয়েই আর এক মুহূর্ত সময় অপচয় করে না সে।বিহানের ইনবক্স দিয়ে বেরিয়ে আবারও নিজের আইডি টি ডিএক্টিভ করে দেয়।তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে বিহানের বলা শেষ কথাটি,
“ভালোবাসার বয়স হইছে তোমার?এইসব ভূত মাথা দিয়ে নামায়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দেও।এখনো কলেজ শেষ করলো না আসছে প্রেম করতে!”।
চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে আর্শির।গলে যাওয়া অভিমান আবারও আগের ন্যায় কাঠিন্যতা লাভ করেছে।নাহ!সে আর ফিরবে না বিহানের কাছে।
এ ক’দিনে আর্শির কথা বেশ মনে পরেছে বিহানের।একটি মানুষের সাথে এতো মাস ধরে নিয়মিত কথা বলে আসলে খুব স্বাভাবিক যে,মানুষটি অভ্যেসে পরিণত হবে।আর্শিও বিহানের অভ্যাস।প্রতিদিনই সে আর্শির সাথে হওয়া কথোপকথনগুলোকে মনে করে, একটি শূন্যতাও অনুভব করে সে।
আজ হটাৎই আর্শির আইডিটি এক্টিভ দেখে বেশ খুশি হয় বিহান।ভেবে নেয়,মেয়েটি ফিরে এসেছে। কিন্তু তার এই ভাবনাটি মুহূর্তেই ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়।কারণ আর্শির ইনবক্সে ঢুকতেই সে দেখতে পায় মেয়েটি আবারও নিজের আইডি ডিএক্টিভ করে দিয়েছে।
!!
দু’বাড়িতেই বিয়ের আয়োজন শুরু।আর্শের বাড়ির নিরাবতা ধীরে ধীরে তার অস্তিত্ব হারিয়ে এখন কাজিনদের আগমনে ঘরে জমজমাট পরিবেশ।মামাতো দুই ভাই,চাচাতো এক ভাই ও এক বোন, খালাতো এক বোন সব মিলিয়ে পাঁচ জন কাজিনই পুরো ঘর আনন্দে মাতিয়ে রাখছে।হাজারো পরিকল্পনা তাদের,আর্শের বিয়ে নিয়ে।আর হবেও বা না কেন! কাজিনদের মাঝে প্রথম বিয়ে এটি।আর্শের অন্যান্য ভাই-বোন কারো এখনো বিয়ে হয়নি।
মিয়ামির বাড়িতেই তার খালা,খালু ও দুই বোন এসে পরেছে।যেহেতু মিয়ামির চাচা,মামা,ফুপু কেউই নেই তাই তার তরফ থেকে শুধু তার খালাই বিয়েতে উপস্থিত হবেন।
দাদা-দাদি,নানা-নানির দোয়া পাবার ভাগ্য টা আর্শ ও মিয়ামি উভয়ের কারোরই নেই।নানা-নানি,দাদা-দাদি প্রচুর আদর ও ভালোবাসার অপর নাম।এদের জীবিত পাওয়াটা চরম সৌভাগ্য।আর এমন সৌভাগ্য লাভ হওয়া টা সবার নসিবে থাকে না,যাদের থাকে তাদের উচিৎ এই মানুষগুলোকে ভালোবাসা ও যত্নে মুড়িয়ে রাখা।
আর্শিসহ পরিবারের বাকি সবার পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ তারা বিয়ের কেনাকাটা করতে যাবে।সাথে যাবে মিয়ামিও।বিয়ে প্রতিটি মানুষের জীবনেই একটি বিশেষ দিন।সবারই এই দিন নিয়ে প্রচুর জল্পনা-কল্পনা থাকে।ছেলেদের থেকে মেয়েদের একটু বেশিই থাকে।মেয়েরা ছোট বয়স থেকেই মনে স্বপ্ন বুনে রাখে যে,সে তার বিয়ের দিনে কেমন কাপড় পরবে,কি রঙ এ তাকে বেশি ভালো লাগবে ইত্যাদি ইত্যাদি।তাই ছেলে পক্ষের অবশ্যই উচিৎ,বিয়ের কেনাকাটায় পাত্রীর কাপড়,গহনা কিনার ক্ষেত্রে সব কিছুতেই পাত্রীর পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া।
চলবে।