#প্রণয়
#পর্বঃ৭
#তানিশা সুলতানা
দুই দিন হয়ে গেছে সূচক আর বড়মা চলে গেছে। তানহার দিন যায় উদাসীন ভাবে। কিচ্ছু ভালো লাগে না। মনটা সারাক্ষণ সূচককে দেখতে ইচ্ছে করে। বড় বাবা স্পষ্ট বলে দিয়েছে ওদের সাথে কথা না বলতে।
তবুও লুকিয়ে লুকিয়ে ফোন করেছে তানহা। বড়মার সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু সূচকের সাথে কথা হয় নি।
শুক্র শনি দুই দিন স্কুল বন্ধ ছিলো বলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় খুঁজে পায় নি।
তোহাকে নিয়ে যেতে চাইছিলো সূচক। কিন্তু তোহা যাবে না। বাবার কাছে থাকবে। তমাল খানও তোহাকে যেতে দেবে না।
বাধ্য হয়েই রেখে গেছে।
“তানহা শোন না
উদাসীন হয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো তানহা। তোহা কাঁধের ওপর হাত রেখে বলে।
” বল
তোহার দিকে না তাকিয়েই বলে তানহা।
“ব্যাগে বই না ঢুকিয়ে জামাকাপড় ঢুকিয়ে নিস। স্কুলে না গিয়ে মায়ের কাছে যাবো। আর কয়েকদিন থাকবো।
তানহার কানে ফিসফিস করে বলে তোহা। খুশিতে মুখটা হা হয়ে যায় তানহা। তোহা দুই হাতে তানহার ঠোঁট চেপে ধরে। কারণ এই মুহুর্তেই ও লাফিয়ে উঠবে।
” লাফাবি না। বাবা বাড়িতেই।
আবারও ফিসফিস করে বলে তোহা। তানহা মাথা নারায়। তোহা হাত সরিয়ে নেয়।
হাতটা ছিপছিপ করছে তোহার। না সিঁটকায় তোহা। তানহার হাত থেকে টিস্যু নিয়ে মুছতে থাকে।
“একটু আগেই নাক মুছছি আমি। তোর হাতে কিছুই লাগে নি।
তানহা মুখ বাঁকিয়ে বলে। তোহাও মুখ বাঁ কায়।
“চল তাহলে এখুনি রেডি হয়ে নি।
তানহা ফিসফিস করে বলে
” হুম চল।
আজকে তানহার একটু সাজুগুজু করার সাধ জেগেছে। নিজে নিজে সাজতে পারে না। তোহাও সাজতে পারে না।
নাকটা আগে ভালো করে পরিষ্কার করে নেয়। যাতে দুই এক ঘন্টার মধ্যে টিস্যু না লাগে।
স্কুল ড্রেস পড়ে ইরার কাছে চলে যায়। ইরা তানহার মায়ের সাথে সাথে রান্নায় সাহায্য করছিলো। মমতা বেগমও রান্না ঘরেই বসে আছে।
তানহা হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসে
“এখানে কেনো আনলি তানহা?
ইরা নরম গলায় বলে।
” আমায় একটু সাজিয়ে দাও না আপি।
তানহা একে একে নিজের সাজু গুজুর জিনিস খাটের ওপর রাখতে রাখতে বলে৷ ইরা মলিন হাসে।
সাজাতে থাকে তানহাকে। চোখে চিকন করে আয়লেনার। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। চুলগুলো গুছিয়ে বিনুনি। ব্যাস তানহার সাজ শেষ।
স্কুল ড্রেসের সাথে এই সাজটাই পারফেক্ট।
ইরা তানহাকে সাজিয়ে দিয়ে আবারও চলে যায়। তোহাও ততখনে রেডি হয়ে গেছে।
“চল তানহা।
কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বলে তোহা। তানহাও নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে তোহার দিকে ঘুরে। সাথে সাথে তোহার মুখটা হা হয়ে যায়।
” এই তুই সাজলি আর আমাকে বললি না?
গাল ফুলিয়ে বলে তোহা।
“বোইন পরে সাজিস। এখন চল। প্লিজ
রাস্তায় যেতে যেতে আমি তোকে সাজিয়ে দেবো।
তানহা তোহার হাত ধরে টানতে টানতে বলে।
ওদের জানা আছে সূচক ইমনদের বাসায়ই গেছে বড়মাকে নিয়ে। ওখানেই বাসা নিয়ে থাকছে।
তাই ওরা ওই দিকেই ছোটে।
ভাড়ি ব্যাগ হওয়াতে আধঘন্টার রাস্তা এক ঘন্টায় পাড়ি দেয় ওরা।
বাড়ির গেইটের কাছে আজকেও সেই দারোয়ান। তানহা দারোয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে লম্বা করে সালাম দেয়। দারোয়ান কাচুমাচু হয়ে সালামের জবাব দেয়।
” ম্যাম স্যার এখন তার মাকে নিয়ে এসেছে।
আমতা আমতা করে বলে দারোয়ান।
“হুমম জানি জানি
গেইট খুলুন।
দারোয়ান এদিক সেদিক তাকায়৷ গেইট খোলার সাহস হচ্ছে না।
তোহা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সেদিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। যত চাইছে সবটা ভুলতে ততই সবটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয় তোহা।
” তাড়াতাড়ি গেইট খুলুন। দেখছেন না এখানে রোদ। কালো হয়ে যাচ্ছি আমরা।
তোহা গেইট শক্ত করে ধরে ধমকে বলে। দারোয়ান শুকনো ঢোক গিলে। সেই দিন গেইট খোলার জন্য খুব বকেছে ইমন। আজকে খুললে তো চাকরি খেয়ে নেবে।
“ওনাদের আসতে দাও
দুই তালার ওপর থেকে ইমন চিল্লায়ে বলে। তানহা তোহা দুজনই ওই দিকে তাকায়। তোহার মুখটা চুপসে যায়। মাথা নিচু করে ফেলে। তানহা এক গাল হেসে ইমনকে হাই দেয়। ইমনও একটু হেসে হাত নারায়।
দারোয়ান গেইট খুলে দেয় দুজন ঢুকে পড়ে। তোহা আর দ্বিতীয় বার ওই দিকে তাকায় না।
তানহা দারোয়ানকে ভেংচি দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। নিচ তালার বাম পাশের বাসাটা সূচকের।
তোহা হনহনিয়ে সেদিকে গিয়ে কলিং বেল চাপে। তানহা ব্যাগ থেকে আয়না বের করে নিজেকে একবার দেখে নেয়। সবটা ঠিকঠাক আছে কিনা?
কিচ্ছু ঠিক নেই। কাজল লেপ্টে গেছে লিপস্টিক ছড়িয়ে গেছে ঠোঁটের আশেপাশে। নাকটা আবারও পিটপিট করছে।
কাজল ঠিক করতে করতে নিজেকে কয়েকশ গালি দেয়। আগে সাজটা ভালোভাবে শিখতে হবে। তারপর ভালো ডাক্তারকে নাক দেখাতে হবে। নিশ্বাস নিতে না পারলেও চলবে। কিন্তু পানি পড়া থামাতেই হবে। নাক কেটে ফেললেও আফসোস নেই। তারপর অন্য কিছু।
সাদিয়া বেগম দরজা খুলে দেয়। তোহাকে দরজার কাছে দেখে খুশি হয়। দুই দিন পর দেখছে মেয়েটাকে। আলতো করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়। তোহা মুচকি হাসে।
” তানহা আসে নি?
আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বলেন উনি।
“এই তো বড় মা চলে এসেছি।
ব্যাগের কান ধরে দৌড়ে এসে এক গাল হেসে বলে তানহা। সাদিয়া বেগমও মুচকি হাসে। হাত বুলিয়ে দেয় তানহার মাথার।
ভেতরে ঢুকে তানহার মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ সাদিয়া বেগমের ভাইয়ের মেয়ে এসেছে। মেয়েটার নাম বৃষ্টি। দারুণ দেখতে। একদম পুতুলের মতো। সূচককে ভীষণ পছন্দ করে।
সূচক মেয়েটাকে ল্যাপটপে কিছু একটা দেখাচ্ছে। মেয়েটাও মনোযোগ দিয়ে দেখছে।
সূচকের পরনে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর হাতাকাটা গেঞ্জি।
তানহার রাগ হয় প্রচুর। বাইরের একটা মেয়ের সামনে এভাবে কেনো থাকবে?
সাদিয়া বেগম দরজা আটকে রান্না ঘরে চলে গেছে।
দুটো রুম এই বাসায়। আর একটা কিচেন। কিচেনের সামনে ড্রয়িং রুম। সেখানেই বসে আছে সূচক আর মেয়েটা।
“বৃষ্টি আপু তুমি?
তোহা খুশি হয়ে এক ছুটে বৃষ্টির পাশে ধাপ করে বসে পড়ে। জাপ্টে ধরে বৃষ্টিকে। মেয়েটাও আলতো হাসে।সাথে সাথে দুই গালে টোল পড়ে। হাসলে আরও বেশি কিউট দেখায়।
তানহা তো এই মেয়ের কাছে কিছুই না।
গাল দুটো ফুলিয়ে ফেলে তানহা। কান্না পাচ্ছে খুব। চোখে পানি চলে আসার আগেই নাকে পানি চলে আসে।
বিরক্ত হয়ে কাঁধের ব্যাগটা সোফায় ছুঁড়ে মারে তানহা। সবাই তাকায় তানহার দিকে।
সূচক ভ্রু কুচকে তাকায়।
তানহার অসয্য লাগছে।
কোনো দিকে না তাকিয়ে এক দৌড়ে ডান পাশের রুমটাকে চলে যায়।
” ওর আবার কি হলো?
বৃষ্টি গালে হাত দিয়ে বলে।
“ওর কথা ছাড়ো আপি। ও এরকমই।
তোহা কথা ঘুরাতে বলে।
” তুমি বরং আমার সাথে গল্প করো।
“তোরা কথা বল। আমি ল্যাপটপ রেখে আসি।
সূচক উঠে পড়ে। তানহা যে রুমে গেছে সেই রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। সাজুগুজু করা বের করবে আজ।
চলবে