#প্রণয়
#পর্বঃ৩৫
#তানিশা সুলতানা
রাতে বেঁধে গেছে আরেক বিপত্তি। সূচক কড়া গলায় তানহাকে বলছে বই খাতা নিয়ে সূচকের রুমে যেতে। আর বড়বাবা বলছে তানহার রুমে যেতে। তানহা এখন কি করবে? বড়বাবার কথা অমান্য করার সাহস ওর নেই। এদিকে সূচকের ভয়ংকর চোখ মুখ দেখে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কি করবে এখন?
সূচক তানহার আর তোহার জন্য আনা কয়েকটা গাউন বোরকা হিজাব কসমেটিক সব কিছু দুজনকে ভাগ করে নিতে বলে খেয়ে চলে যায়। ইরা খাবার গরম করে সেটা টেবিলে সাজিয়ে ফেলেছে। সূচক যেতেই খাবার বেরে দেয়। পরপর বৃষ্টি ইভা তানহা তোহাও চলে আসে। সূচকের পাশের চেয়ারে বৃষ্টি বসে। সূচক আড়চোখে একবার তাকিয়ে নিজের খাওয়ায় মন দেয়।
সবার খাওয়া শেষ হতেই বাড়িতে বড় রা চলে আসে। তাহের ঢাকা গেছে দোকানের মা আনার জন্য। আজকে ফিরবে না। তমা বেগম বাবার বাড়ি গেছে। কাছেই ওনার বাবার বাড়ি। সকালে আসবে।
এখন বাড়িতে এসেছে শুধু তমাল আর সাদিয়া।
খাওয়া শেষে সবাই টিভি দেখতে বসে। তমালও বসে। মিঠাই সিরিয়াল ওনার বেশ লাগে। মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলেই দেখেন। আর সাদিয়া বেগম তো মিঠাই বলতে অঙ্গান।
তাও আবার আজকে মিঠাইয়ের বেবি হবে। কোনো ভাবেই মিস করা যাবে না
সূচক নিজের রুমে গিয়ে আবার ফিরে আসে।
“তানহা বড় খাতা নিয়ে আমার রুমে চলে আয়।
তানহার পেছনে দাঁড়িয়ে বলে সূচক। চমকে ওঠে তানহা সহ সবাই। তমাল দাঁতে দাঁত চাপে।
” তানহা তোহা নিজেদের রুমে যাও।
তমাল শক্ত গলায় বলে।
“আজকে থেকে তানহা আমার রুমে থাকবে।
সূচকের স্পষ্ট ভাষা। কথায় না আছে সংকোচ আর না আছে লজ্জা। এদিকে তানহার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে মাটি ফাঁকা করে ঢুকে পড়তে। সাদিয়া বেগমও বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
অবুঝের মতো তাকিয়ে আছে ইরা ইভা আর বৃষ্টি। কি হচ্ছে ওরা বুঝতে পারছে না।
” তানহা শুনতে পেলি না কি বললাম?
সূচক ধমক দিয়ে বলে। কেঁপে ওঠে তানহা। তমাল শুকনো কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নেয়।
“তানহা রুমে যাও।
এবারেও শক্ত গলায় বলে তমাল।
সাদিয়া বেগম ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না
” যাবে না।
তানহা মাথা নিচু করে উঠে দাঁড়িয়ে রুমের দিকে যেতে নেয়। সূচক শক্ত করে হাত ধরে বলে।
এবার বেশ বাড়াবাড়ি করছে সূচক। রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে তমাল।
“দুই টাকা রোজগার করে এনেছো বলে মাথা কিনে নিয়েছো না কি তুমি? বড়দের মুখে মুৈ তর্ক করতে লজ্জা করে না।
উঠে দাঁড়ায় রাতে ফুসফুস করতে করতে বলেন উনি। সাথে সাথে সাদিয়া বেগমও উঠে দাঁড়ায়। স্বামীর পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বলে।
বৃষ্টির চোখে পানি চিকচিক করছে। তবে কি সব আশা শেষ?
” ভাইয়া ছেড়ে দে না।
তোহা সূচকের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা গলায় বলে। তানহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ রাগ হচ্ছে সূচকের ওপর। লোকটা এতো খারাপ কেনো? সব সময় শুধু হম্বিতম্বি।
“বিয়ে করেছি। টাকাও রোজগার করছি। এখন ছাড়াছাড়ির প্রশ্নই ওঠে না।
সূচকের আবারও স্পষ্ট গলা। আরেকদরফা অবাক হয় সবাই। বৃষ্টির চোখের পানি এবার গড়িয়েই পড়ে। ইভাও বেশ হার্ট হয়। ইরা মনে মনে খুশি হয়।
” তোমার ছেলেকে মুখে লাগাম দিতে বলে সাদিয়া।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তমাল।
সূচক বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে। তানহা হাত ছাড়ানোর জন্য মোচরামুচরি শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু তবুও ছাড়াতে পারছে না।
“বাবু কি হচ্ছে এসব? বাবার সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?
সাদিয়া বেগম সূচকের সামনে দাঁড়িয়ে বলে।
” উনি তাহলে আমার কাজে বাঁধা কেনো দিচ্ছে? দাদু যদি ওনাকে বলতো তোমাদের আলাদা রুমে থাকতে। তাহলে ওনিও আমার মতো বড়দের সাথে এভাবেই কথা বলতো।
লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে সাদিয়া বেগম। থমথমে খেয়ে যায় তমাল। তানহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। তোহা দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে চলে যায়। ইরাও তোহার পেছন পেছন চলে যায়। বৃষ্টি স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। ইভাও শকের মধ্যে আছে।
তমাল কোনো কথা ছাড়াই চলে যায়। সাদিয়া বেগম ছেলের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে স্বামীর পেছনে ছোঁটে।
এবার সূচক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
তানহা কটমট চাহনিতে তাকায় সূচকের দিকে।
“এতোটা অভদ্রতা না করলে চলছিলো না আপনার?
চোখ পাকিয়ে বলে তানহা। সূচক এক পলক তাকায় তানহার দিকে।
” মুখে মুখে পটর পটর করলে থাপ্পড়ে গাল লাল করে দেবো আমি তোর।
একটা ধমক দিয়ে বলে সূচক। তানহা আর একটা কথাও বলে না। চুপচাপ সূচকের সাথে পা মিলিয়ে রুমে ঢোকে।
রুমে এসে হাত ছেড়ে দেয় তানহার। তারপর আবার দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায়। তানহা জানে না কোথায় গেলো।
চুপচাপ খাটে বসে থাকে। এখনো বিছানায় সূচকের কিনে আনা শপিং ব্যাগ গুলো রয়েছে। তখন দেখেছে ঠিকই কিন্তু নেয় নি। তারাহুরোয় ভুলেই গেছিলো নেওয়ার কথা।
আবার সূচক রুমে ঢোকে। বেশ শব্দ করেই দরজা আটকে দেয়। তানহা শপিং ব্যাগের দিক তাকিয়ে ছিলো। দরজা বন্ধের শব্দে চমকে তাকায় সূচকের দিকে।
সূচকের হাতে রয়েছে তানহার বই।
সূচক খাটের ওপর বই রেখে টেবিল থেকে নিজের বই গুলো নিয়ে খাটের মাঝখানে গোল হয়ে বসে।
তানহা তাকিয়ে তাকিয়ে ওর কান্ড দেখছে।
“আমার মতো করে বস।
আইসিটি বইটা খুলে তাতে নজর বুলিয়ে বলে সূচক।
” আপনি কি যুদ্ধ করে আমাকে পড়ালেখা করানোর জন্য এঘরে এনেছেন?
তানহা কপাল কুচকে সূচকের সামনা সামনি বসে দুই গালে হাত দিয়ে বলে।
“চুপচাপ পড়তে থাক। ডিস্টার্ব করবি না একদম।
সূচক এক পলল তানহার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে।
তানহা ভেংচি কেটে বই খোলে।
” শা*লা হনুমান। কয়েক মিনিটে কতো কিছুই চিন্তা করে ফেলছিলাম আমি। এই হনুমান আমার সব আশায় পানি ঢেলে দিলো? ভাইরে ভাই ভাবা যায় আমার নতুন জামাই আমাকে তার রুমে আনছে পড়ালেখা করানোর জন্য?
এমন অন রোমান্টিক জামাই যেনো কারো কপালে না জোটে।
তানহা বিরবির করছে আর বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে। সূচক সেদিকে মন না দিয়ে নিজের কাজ করতে থাকে।
এখন নিজের পড়ায় মন না দিলে কাল স্টুডেন্টদের পড়াতে পারবে না।
🥀🥀
বৃষ্টি এই রাত বিরোতেই বেরিয়ে পড়েছে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য। কেউ আটকাতে পারে নি ওকে। শেষে বাধ্য হয়ে ছোট ভাইকে কল করে দিয়েছে। সে এগিয়ে নিয়ে যাবে ওকে।
ইভা সাদিয়া বেগমের সাথে থালা বাসন মাজছে।
ইরা তোহাকে টেনে রুমে নিয়ে যায়।
“আপু কিছু বলবে?
তোহা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে ইরাকে।
” ইমনের পিছু ছেড়ে দে তোহা। আমি ওকে ভীষণ ভালোবাসি।
ইরা চোখ মুখ শক্ত করল বলে। তোহার কুঁচকানো ভ্রুটা আরও কুঁচকে যায়।
“আপু আমি ওনাকে ধরে রাখি নি।
তোহার সোজা সাপ্টা জবাবটা।
“তোহা দেখ বোইন। আমি ইমনকে ভীষণ ভালোবাসি। তুই আমাদের মাঝে থাকিস না প্লিজ।
ইরা তোহার হাত ধরে বলে।
” তোমার ইমন আমার পেছনে পড়ে নেই। আর আমিও তার পেছনপ পড়ে নেয়। আমাদের যোগাযোগ ই হয় না। তাহলে তোমাদের মাঝে থাকার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?
তোহা আর ইরাকে একটা কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হনহনিয়ে চলে যায় রুম থেকে।
🥀🥀
পড়তে পড়তে বিরক্ত হয়ে গেছে তানহা। সূচক এখনো গভীর মনোযোগ দিয়েই বই পড়ছে।
তানহা মুখ বাঁকিয়ে সূচকের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
“তানহা সোজা হয়ে বসে পড়।
সূচক বলে ওঠে। তানহা সে কথার পাত্তা না দিয়ে দুই হাতে গলা জড়িয়ে ধরে মুখটা আরও একটু উঁচু করে আরাম করে মাথা রাখে।
চলবে