#প্রতিশোধ
#পার্ট_15
#জামিয়া_পারভীন
__ কেনো বিয়েটা হলে প্রব্লেম টা কি। সাইফ কে তো ভালো ই লেগেছে। তৃণা খুব হ্যাপি হবে বিয়েটা হলে। ( নিরা)
__ তুমি ভাবছো তৃণা হ্যাপি হবে কিন্তু আসলে সেটা হবার নয়। বাদ দাও এসব, তোমার এক্সাম খুব শীঘ্রই, কিছুদিন পড়াশোনা অন্তত করতে হবে, প্রেগন্যান্সির জন্য, বাবার জন্য, আরো অনেক কারণ এ তুমি একেবারে ভেঙে পড়েছো। এখন আবার সব কিছু ঠিক করতে হবে। আমি আছি তোমার পাশে সব সময়, সব ঠিক হয়ে যাবে।
( আবির)
__ দেখো আবির, আমি আমার কথা শুনতে চাচ্ছি না। আগে বলো সাইফের কি প্রব্লেম? ( নিরা)
__ হ্যাঁ বলবো, তার আগে তোমার এক্সাম টা শেষ হোক সব বলবো। এখন বলে তোমার পরীক্ষার খারাপ করতে চাইনা আমি। ( আবির)
__ ওকে, আমি পরে শুনতে চাই সব কিছু। ( নিরা)
,
,
,
২ মাস ভালো ভাবে পড়ে ওরা দুই বোনের এক্সাম শেষ হয়। নিরার ইচ্ছে করে আবির কে ভালোবাসতে কিন্তু ইগোর জন্য আবির কে ইগনোর করে। আবির অনেক হেল্প করেছে নিরা কে, সব সময় গাইড দিয়ে পড়াতো, আর আবির আর নিরার ছেলের জন্য একজন নার্স ঠিক করে রাখে। নিরার পরীক্ষার যেন কোন ক্ষতি না হয় তার সব ব্যবস্থা করেছিলো আবির।
,
সাইফ ও তৃণার পরীক্ষার জন্য সব রকম হেল্প করে। তৃণার সব এক্সাম ভালো হয়, তাই সাইফ কে ফোন করে তৃণা।
__ মিঃ ডক্টর, করছেন টা কি? ( তৃণা)
__ এইতো মিসেস ডক্টর, তোমার কথা ভাবছি। ( সাইফ)
__ কি যে বলেন না আপনি? যাই হোক অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার সব এক্সাম ভালো হয়েছে আর সব কিছুই সম্ভব আপনার জন্য। ( তৃণা)
__ তা আমার গিফট টা কোথায় ম্যাডাম ( সাইফ)
__ কিসের গিফট ( তৃণা)
__ বাহ রে, আমি এতো কষ্ট করলাম, আমার গিফট থাকবেনা, এ হয় নাকি। ( সাইফ)
__ ওকে কি চায় আপনার বলেন, আমি অবশ্যই দিবো।
__ তোমাকে
__ মানে? ( তৃণা)
__ দেখা করতে চাই একবার । ( সাইফ)
__ ওকে ডান, কোথায় আসবো বলেন।
__ মুক্তমঞ্চ এর পাশে যে রেস্টুরেন্ট সেখানে আসো। ( সাইফ)
__ ওকে ডক্টর ( তৃণা)
সাইফ এই প্রথম তৃণাকে দেখা করতে ডাকে। তৃণা মায়ের সাহায্য নিয়ে প্রথম বারের মতো শাড়ি পড়েছে। লাল শাড়ি পড়ে তৃণা কে অপ্সরীর মতো সুন্দর লাগছে। চোখে গাড় কাজল দিয়েছে, হাত ভর্তি লাল চুড়ি, ম্যাচিং গহনা পড়েছে আজ। চুল গুলি খোপা করে বেঁধেছে আর তৃণা। সাইফ একভাবে তাকিয়ে আছে তৃণার দিকে।
__ এইভাবে তাকালে তো নজর লেগে যাবে, তাহলে তো আমি কালো হয়ে যাবো, তখন কিন্তু আর তাকাবেন না আমার দিকে। ( তৃণা)
__ সসসরি ( সাইফ)
__ কেনো, ওওওও বুঝেছি যে ডক্টর সবার চিকিৎসা করে আজ বুঝি তার চিকিৎসা আমাকেই করা লাগবে। ( তৃণা)
__ সাইফ তৃণাকে চমকিয়ে দিয়ে সবার সামনে প্রপোজ করে আর একটা ডায়মন্ডের রিং তৃণার হাতে পড়িয়ে দেয় সাইফ। তৃণা এতো খুশি হয় যে আনন্দে চোখে পানি চলে আসে।
__ সাইফ তৃণার চোখের কাজল নিয়ে গলায় মাখিয়ে বলে আর কারোও নজর লাগবেনা। এখন থেকে শুধু তুমি আমার তৃণা।
__ তৃণা সাইফের বুকে শান্তি খুঁজে নেয়।
,
,
,
মাসুদ বাবা হতে চলেছে সেইই খুশির খবরে আনন্দে আছে। এরই মাঝে তুষার কে হুইলচেয়ারে করে বাসায় আনে। তুষার এখন অনেকটাই সুস্থ আগের চেয়ে। এরই মাঝে তৃণা ফিরে এসে সবাইকে খুশির সংবাদ টা জানায়। তুষার ব্রেইন ড্যামেজ হলেও মেয়েকে চিনতে পেরেছে সে তাই মেয়ের খুশির খবরে তুষার ও খুশি হয়। নিরাকে ফোন দিয়ে তৃণা সব টা জানায়, নিরাও বেশ খুশি হয় গুড নিউজ টা শুনে।
,
,
,
__ জানো আজ কি হয়েছে? ( নিরা)
__ বলো ( আবির)
__ তৃণাকে সাইফ আংটি পরিয়েছে আজ। ( নিরা)
__ কিহহহহহ ( আবির)
__ এমন করছো যেনো এটা হতেই পারেনা। ( নিরা)
__ হতে পারেনা, এটা সাইফের চাল, তোমার বোনকে শাস্তি দিতে চায় তারা। ( আবির)
__ কিসের শাস্তি ( নিরা)
__ অপমান এর, আমি সিউর সাইফের মনে প্রতিশোধ এর আগুন জ্বলছে, আর না হয় ওর বোন করাচ্ছে এইসব। এই পরিবার টাকে ওরা ধ্বংস করে দিতে চায়। ( আবির)
__ কিসের প্রতিশোধ এর কথা বলছো আবির ( নিরা)
__ আচ্ছা কাল বলবো। ( আবির)
__ এখন কি সমস্যা ( নিরা)
__ এখন একটা প্রব্লেম আছে
__ কি?
__ তোমার পিছনে একটা আরশোলা ( আবির)
___ আআআআ আ বলে দৌড়ে আসে আবিরের সাথে ধাক্কা লেগে দুইজনে বিছানায় পড়ে যায়। আবিরের উপরে নিরা কিছুক্ষণ ধ্যানের মতো পড়ে থাকে।
__ কি দেখছো ? ( আবির)
__ কিছুনা ( বলে উঠতে গিয়ে আবির আবারো টান দেয় নিরাকে)
নিরার কপালে, গালে অনেকগুলি কিস করে, এতে নিরাও পাগলের মতো হয়ে যায়। আবির এর থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পরে আর করে না। আবিরের আদর উপভোগ করতে থাকে। ক্লান্ত শরীরে নিরা কখন ঘুমিয়েছে জানেনা, সকালে উঠে দেখে আবিরের সাথে জড়িয়ে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর মনে পড়ে আবিরের সাথে কাটানো মুহুর্তের কথা। আবিরের কাছ থেকে উঠতে গিয়ে আবির ধরে ফেলে।
__ এখনি চলে যাবে ( ঘুমের ঘোরে আবির বলে)
__ না যাবোনা, কাজ আছেনা, নিশান কাঁদছে। ( আবিরের ছেলে নিশান, নিরার সাথে মিলিয়ে নাম রেখেছে)
__ এই একটা ই দোহাই, ও তো সব সময় কাঁদে আর আমার কান্না টা কি দেখতে পাও না। শুধু বাবুর কান্না দেখলে, আর বাবুর বাবার কান্না আর দেখলে না। ( আবির)
__ ওলেএএ ঢং ( নিরা)
নিরা শাওয়ার শেষ করে এসেও দেখছে আবির ঘুমাচ্ছে তখন ইচ্ছে করে ভেজা চুলের পানি আবিরের মুখে ছিটাই নিরা। আবির ঘুমের চোখে নিরার দুষ্টুমি দেখে নিরার হাত ধরে টান দিয়ে নিরা কে আবিরের বুকের উপর ফেলে।
__ এবার কি হবে ( আবির)
__ কি আবার হবে। ( নিরা)
__ একটু কাছে আসো।
__ আসবো ই তো বলে আবিরের গলাতে চিমটি কেটে পালিয়ে যায় নিরা।
,
,
,
সাইফ বাসায় গিয়ে বাবা মা আর আদরের বোন কে জানায় মেয়ে পছন্দ হয়েছে, সে এবার বিয়ে করতে চায়।
__ বাব্বাহ, এতো দিনে গড মুখ তুলে চাইছে আমার ভাই টা দিকে, নইলে তো কোন মেয়েই পছন্দ হতো না। আজ আবার মেয়ে জুটলো কোথা থেকে। ( সাইফের বোন)
__ তুই সব সময় আমাকে হেয় করে কথা বলিস। আচ্ছা বাদ দে, তুই দেখলে তুই ও প্রশংসা করবি এতো সুন্দর মেয়েটা। ( সাইফ)
__ তাই বুঝি, নাম কি বল।
__ তৃণা চৌধুরী, বাবা তুষার চৌধুরী, দেশের সব চেয়ে বড় কম্পানি গ্রুপ TTN গ্রুপের মালিকের মেয়ে। TTN মানে তৃণা, তুষার আর এন এ কিযে।
__ থাক ওতো বলা লাগবে না। তা মেয়েকে কবে দেখাবি সেটা বল ( সাইফের বোন)
__ তুই চাইলে এখনি দেখাতে পারি ফোনে। ( সাইফ)
সাইফ বোন কে একটা ছবি দেখালো, ছবিটা দেখে সাইফের বোন সাইফ কে এক চড় দেয়।
__ তুই বিবাহিতা মেয়েকে বিয়ে করবি তাইনা ( সাইফের বোন)
__ আরে তুই ভুল বুঝছিস, এটা তৃণার, মিসেস নিরার জমজ বোন। ( সাইফ)
__ সাথে সাথে আরক্টা চড় মেরে দেয় সাইফের বোন। তুই এই মেয়েকে ভালোবাসিস সত্যিই। ( সাইফের বোন)
__ হ্যাঁ, মেয়েটা অনেক ভালো কিন্তু তুই আমাকে মারছিস কিসের জন্য ( সাইফ)
সাইফের মম ড্যাড কে সাইফের বোন সাফ জানিয়ে দেয় যদি এই মেয়েকে সাইফ ঘরে তোলে তাহলে সে সুইসাইড করবে। এতে সাইফ ওর বোন কে বলে আচ্ছা ঠিক আছে এ বিয়ে ক্যান্সেল। আমি তোকে হারাতে পারবোনা, কিন্তু বল এই মেয়ের কি সমস্যা।
,
,
,
তৃণা সকাল সকাল বোনের বাড়ি এসে বোন কে জড়িয়ে খুশির ডান্স দিতে থাকে। আবির এসে দাঁড়াতেই তৃণা চুপসে যায়।
__ কি ব্যাপার শালিকা, এতো খুশি কিসের। ( আবির)
__ তৃণা আংটি দেখিয়ে বলে সাইফ পড়িয়ে দিয়েছে। এটা দেখে আবির একটু থেমে যায়। হয়তো সাইফ সত্যিই ভালোবাসে তৃণাকে তাই আর কথা না বাড়িয়ে বউ আর শালিকা কে নিয়ে নাস্তা করে। আবিরের ক্লাস থাকায় তাড়াতাড়ি বের হয়ে যায়।
,
,
,
আজ আবির আর নিরার বিবাহ বার্ষিকী। নিরা সেটা বেমালুম ভুলে গেছে আর আবির বিয়ের করুন স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে চায় না তাও নিরার জন্য অনেক সুন্দর ব্যবস্থা করে। পুরো ছাদ এ ডেকোরেশন করে নিরাকে লুকিয়ে। নিরাকে ক্লাসে পাঠিয়ে লোক দিয়ে পুরো ছাদে বেলুন আর কার্ড দিয়ে ভর্তি করে। আর উপর থেকে ফুলের ব্যবস্থা করেছে নিরাকে সারপ্রাইজ দিবে তাই। এছাড়া গোটা ছাদে প্রচুর গোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে ভরে ফেলে।
নিরা বাড়ি ফিরে এসে ফুলের সুবাস পায় কিন্তু এই সুবাস কোথা থেকে আসছে সেটা বুঝতে পারছে না। নিরাকে আবির একটা চিঠি লিখে বেড এ রেখেছে ফ্রেশ হয়ে আসো। নিরা চিঠির মানে না বুঝে ফ্রেশ হয়ে আসলো। নিরা ফ্রেশ হবার সময় নিরার বাবা মা বোন ভাই ভাবি সবাইকে ছাদে পাঠিয়ে দেয় আবির। আবির নিজেও নিরার সাথে আর দেখা করেনি। নিরা আবারো একটা চিঠি পেলো। নীল রঙ এর শাড়ি টা পড়বে আর সুন্দর করে সাজবে। নিরা এবার বেশ অবাক হলো তাও সুন্দর করে সাজলো আবিরের জন্য।
__ রেডি ( আবির)
__ হু, রেডি কিন্তু কেনো ( নিরা)
__ এসো বাইরে ( আবির)
আবির নিরার চোখ ধরে নিরাকে ছাদে নিয়ে গেলো। পুরো ছাদ আঁধার, নিরাকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে চোখ ছেড়ে দেয়। নিরা চারিদিকে আঁধার কিন্তু অনেক সুবাস পায়। আবির কে জিজ্ঞেস করে কোথায় এনেছে তাকে।
__ আবির মুখে একটু শিস বাজাতেই চারিদিকে আলোকিত হয়ে যায় লাইটিং এ। আর একটা একটা করে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয় নিরার পরিবার এর লোকজন। আবির সবার সামনে এক গুচ্ছ গোলাপ হাতে উইস করে…
Life is a journey, and nothing makes that adventure more thrilling than sharing it with the person you love most in life. Make your anniversary a memorable one.
__ নিরা আবিরের হাত থেকে ফুল গুলি নিয়ে আবির কে জড়িয়ে ধরে। এরপর আবির আর নিরা কেক কাটে আর সবাইকে খাইয়ে দেয়। সবাই চলে গেলে নিরা আর আবির একা আছে। আবির নিরাকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে আসে।
নিরা কে বিছানায় শুইয়ে দেয়, নিরা দেখে পুরো বেড ফুল দিয়ে সাজানো।
__ এতো সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য আমি সত্যিই অনেক হ্যাপি হয়েছি। ( নিরা)
__ আমার ভালোবাসার জন্য আমি সব কিছুই করতে পারি ( আবির)
__ আই লাভ ইউ আবির।
__ লাভ ইউ টু। সেদিন এর ফুলশয্যা টা তাহলে আজ ই হয়ে যাক। ( আবির)
__ সব সময় ইয়ার্কি ( নিরা)
__ ইয়ার্কি করছি বুঝি, আবির নিরার কাছে যেতে থাকে। নিরাও আবিরের মাঝে সব সুখ খুঁজে নেয়।
,
,
,
সাইফের বোনের সাথে কিছু ডিল হয় তাই সাইফ এখনো তৃণাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তৃণার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে।
সাইফ জানে আগামীকাল তৃণার বার্থডে। দুই বোনের বার্থডে এক সাথে পালিত হবে সেদিন ই সাইফ সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে বলে প্লান করে। সাইফের বোনের জন্য সাইফের মনে ও ঘৃণা জন্মে গেছে তৃণার প্রতি। তাও সাইফ তৃণার সাথে অভিনয় করে চলেছে।