প্রহর শেষে আলোয় রাঙা পর্ব -০১

স্বামীর ফ্রেন্ডের মুখে নিজের নামে মিথ্যা অ*পবা*দ শুনে স্তব্ধ, বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আলো। এই মুহূর্তে কী প্রতিক্রিয়া করা উচিত সে বুঝে উঠতে পারছে না। বারবার নিজের স্বামী প্রহরের মুখের ভাব বোঝার চেষ্টা করছে। কেমন শক্ত ও গম্ভীর্যতা পূর্ণ মুখাবয়ব। আলোর মনে ভয়ের সঞ্চার ঘটে। দোয়া-দুরুদ পড়ে খুব করে চাইছে প্রহর এসব বিশ্বাস না করুক। প্রহরের ফ্রেন্ড চয়নিকা এবার করুণ স্বরে বলে ওঠলো,

“আমার কী অন্যায় ছিল আলো? কেনো তুমি আমার সাথে এসব করো? অ*পমান করো কেনো? আমাকে কি তুমি পছন্দ করো না? আজ তো আমার লাইফ রি*স্কে ফেলে দিয়েছিলে! ফরচুনেটলি প্রহর টাইম মতো আমাকে সেভ করলো বলে। কেনো করছো? আমি তোমার কী ক্ষতি করেছি? প্রহর? তোমার বউকে জিজ্ঞেস করো সে আমার সাথে এরকম ব্যাবহার কেনো করে?”

আলো অবাক হলো। চয়নিকার এরূপ খারাপ অবস্থা কী করে হলো তা সে নিজেই বুঝতে পারছেনা কী থেকে কী হলো! তাছাড়া অ*পমানটাই বা করলো কখন? সব কেমন তালগোল পাঁকিয়ে যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ আগে,,
প্রহরের ফ্রেন্ডরা ওর বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। উদ্দেশ্য একটা ছোটোখাটো গেট টুগেদার করবে। প্রহরের কয়েকজন ফ্রেন্ড ইংল্যান্ড থেকে গত সপ্তাহে দেশে এসেছে। বহুদিন পর বন্ধুরা একসাথে হয়েছে তাই গেট টুগেদারটা সবাই প্রহরদের বাড়িতে করতে চাইলো। অবশ্য সিদ্ধান্তটা চয়নিকার! প্রহরদের বাড়িটি অনেক পুরোনো। প্রহরের দাদার তৈরি করা ডুপ্লেক্স বাড়ি। বিশাল বড়ো বাড়িটিতে একা প্রহর, আলো ও তাদের পোষা কু*কু*র ও বি*ড়া*ল নিয়ে থাকে। প্রহরের পরিবারের সবাই বেঁচে আছে নাকি মৃ*ত তা আলো সঠিক জানেনা। কয়েকবার প্রশ্ন করেও প্রহরের থেকে কোনো সঠিক জবাব মেলেনি। পরিবারের কথা জিজ্ঞেস করলেই গম্ভীর্যতা ধারন করে নয়তো বলে,
“তুমিই আমার পরিবার। আমার আর কাউকে লাগবে না।”

আলো বুঝে উঠতে পারেনা প্রহর কেনো তার পরিবার সম্পর্কে কিছু বলতে চায় না। শুধু জানে এই বাড়িটা প্রহরের দাদার বানানো ও তার দাদার বাবা এককালে জমিদার ছিলেন। উনার মৃত্যুর পর প্রহরের দাদা পুরোনো ক্ষয়ে যাওয়া জমিদার বাড়িটি ভেঙে এই ডুপ্লেক্স বিশাল বাড়িটি বানিয়েছিলেন। বাড়িটি অনেকটাই পুরোনো জমিদার বাড়ির ধাঁচে গড়া কিন্তু ভেতরে আধুনিকতার ছোঁয়া আছে। আলো নিজের মতো ভেবেই নিয়েছে প্রহরের পরিবারের কেউ বেঁচে নেই।

বন্ধুরা আসবে বলে প্রহর ও আলো মিলে গতকাল থেকে অনেককিছু ঠিকঠাক করে গুঁছিয়ে এগিয়ে রেখেছিল। সকাল সকাল সবাই চলে এসেছে। আলো ওদের শরবত, নাস্তা দিয়ে রান্নাঘরে রান্না একা হাতে সামলাচ্ছে। চয়নিকা ও শিতল রান্নাঘরে আসে আলোর সাথে দেখা করতে। কুশল বিনিময় শেষে শিতল আলোকে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে,
“তোমার একা সব সামলাতে কষ্ট হয়না? এতো বড়ো বাড়ি একা হাতে সামলাও।”

আলো মিষ্টি হেসে বলে,
“না আপু। এতো বড়ো বাড়ি হলেও মানুষ তো আমরা দুইজন মাত্র। প্রহর আমায় সবকিছুতে অনেক সাহায্য করে। রিও(বি*ড়া*ল) আর পিকুকে(কু*কু*র) নিয়ে অবসর সময় ভালোই কে*টে যায়। আপনারা মাঝেমাঝে আসেন তখন অনেক ভালো লাগে।”

শিতল রান্নাঘরটা ঘুরে দেখতে দেখতে বলল,
“আমি অবশ্য আজই প্রথম আসলাম। কী করব বলো নিয়াজ মাঝেমধ্যে কাজের সূত্রে দেশে আসলেও আমাকে নিয়ে আসেনা। এবার আমি জোড় করে এসেছি।”

আলো হালকা হেসে তরকারি নাড়তে থাকে। শিতল আলোর রুচির প্রশংসা করে বলে,
“বাই দ্যা ওয়ে আলো, রান্নাঘরটা খুব নজরকারা। এনটিক জিনিসপত্র দিয়ে সাঁজানো। তোমার পছন্দের তারিফ করতে হয়।”

“আমার ও প্রহরের দুজনেরই এনটিক জিনিসপত্র পছন্দের। পুরোনো ধাঁচের জিনিসপত্র দিয়ে সাঁজালে অন্যরকম সুন্দর লাগে।”

আলোর কথার বিপরীতে শিতল রান্নাঘরে চোখ বুলাতে বুলাতে চয়নিকার দিকে চেয়ে বলে,

“চয়নিকারও এনটিক জিনিসপত্র পছন্দের। তাই না চয়নিকা?”

চয়নিকা ফোন স্ক্রোল করছিল। আলোকে সে কিছু কারণবশত পছন্দ করেনা তাই চুপ করে আছে। রান্নাঘরেও সে আসতে চায়নি কিন্তু বান্ধুবী একটু ঘুরে দেখতে চাইল বলে সাথে আসা। হুট করে শিতল তার নাম নিলে চোখ তুলে তাকায়। আলো চয়নিকার দিকে চেয়ে হেসে বলে,

“এটা আপুকে দেখলেই বুঝা যায়। আপু ড্রেসআপও পুরোনো ধাঁচের করে। একটা শাহী ভাব আছে। এমনটা সচরাচর দেখা যায় না অবশ্য।”

চয়নিকা বিরক্ত হলো। বাঁকা নজরে তাকিয়ে আলোকে বলে,
“বি*ফ রান্না করছ নাকি?”

“হ্যাঁ আপু। বি*ফ কালাভু*না। রান্না শুরুই হলো মাত্র। বেশি সময় লাগবে না। আমি ও প্রহর কাল রাতে সব গুঁছিয়ে নিয়েছি।”

চয়নিকা দাঁতে দাঁত কা*ট*লো। বলল,
“খাবারে বড়ো কালো এলাচ দিওনা যেন। জানোই তো আমার এলাচে এ*লার্জি। আগেরবার তোমার জন্য আমি খুব ভু*গেছি।”

চয়নিকার কথায় আলো খানিক লজ্জিত হলো। মাস চারেক আগে যখন চয়নিকা ও কয়েকজন বেড়াতে এসেছিল তখন আলো জানতো না চয়নিকার বড়ো কালো এলাচে এ*লার্জি। তাই চয়নিকাকে কিছুটা ভু*গতে হয়েছিল। কিন্তু এবার আর আলো সেই ভুল করেনি। গড়মশলা গুঁ*ড়া করার সময় বড়ো কালো এলাচ দেয়নি।

“আপনি চিন্তা করবেন না আপু। আমি এবার বড়ো কালো এলাচ রান্নায় দেইনি।”

চয়নিকা মুখ বাঁকিয়ে মোবাইল স্ক্রল করতে থাকে। শিতল আলোর সাথে আরও কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলে বসার ঘরে সবার সাথে যোগ দিলো। আলো দ্রততার সাথে সব রান্না সারতে লাগলো।

দুপুরের খাবারের সময় চয়নিকা বলে ওঠে,
“আমার না গা গরম করছে।”

রিহাব জিজ্ঞেস করে,
“হঠাৎ তোর গা গরম করবে কেনো? এখানে তো যথেষ্ঠ ঠান্ডা। এসি অন করাতো।”

চয়নিকা এবার করুণ স্বরে আলোকে জিজ্ঞেস করে,
“আলো, তুমি কি খাবারে কালো বড়ো এলাচ দিয়েছ?”

আলো অবাক হয়ে বলে,
“না তো আপু। আমি তো জানি আপনার কালো বড়ো এলাচে এ*লার্জি আছে। আগেরবার ভুল করে দিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু এবার আর সেই ভুল করিনি। কালো বড়ো এলাচের বয়াম হাতের কাছেই রাখিনি।”

প্রহর চয়নিকাকে বলে,
“হয়তো তোমার ছোটো এলাচেও কিছুটা সামান্য এ*লার্জি হচ্ছে। অনেক সময় এমন হয়। বেশি খারাপ লাগছে?”

চয়নিকা হাসার চেষ্টা করে বলে,
“আরে না না। আমারও তাই মনে হচ্ছে। হয়তো ছোটো এলাচেও কিছুটা এ*লার্জি আছে। ব্যাপার না। এখন এলাচ ছাড়াতো রান্নাও হবে না! আমার একার জন্য সবার টেস্ট কেনো খারাপ করব?”

আলো উদ্ধিগ্ন হয়ে বলে,
“আপু আপনি লেবু নিন। ভালো লাগবে।”

চয়নিকা জোরপূর্বক হেসে লেবুর টু*করো তুলে নেয়। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে আলো ফ্রিজ থেকে নিজের হাতে বানানো রসমালাই সবাইকে দেয়। বিকেলের আড্ডার জন্য ফ্রোজেন করা কিছু স্ন্যাক্স আছে তা ভে*জে দিবে সাথে মালাই চা।

বিপত্তি ঘটলো বিকেলে! চা খেয়ে চয়নিকার হাত-মুখে, গলায় দৃশ্যমান স্থানগুলোতে বড়ো বড়ো র*ক্ত বর্ণের র‍্যা*শ উঠা শুরু হয়েছে। সবাই ঘাবড়ে যায়। দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় গা গরম করছিল আর এখন র‍্যা*শ সাথে শ্বা*সক*ষ্ট! প্রহর এ*লার্জির ঔষুধ দেওয়ার পর আধঘণ্টার মধ্যে চয়নিকা কিছুটা সুস্থ বোধ করলে আলোকে উদ্দেশ্য করে রেগে বলে,

“তুমি ইচ্ছে করে চায়ে বড়ো কালো এলাচ দিয়েছ তাইনা? যাতে আমি অসুস্থ হয়ে পরি?”

আলো এসবের কিছুই জানেনা। নিজের নামে এসব শুনে সে হতবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
____________

প্রহর শান্ত স্বরে বলে,
“তুমি সত্যি কালো বড়ো এলাচ দিয়েছ? তুমি তো জানতে এতে চয়নিকার এ*লার্জি আছে।”

আলো ঘাবড়ানো স্বরে বলে,
“আমি সত্যি দেইনি। আমি তো জানি উনার এ*লার্জি আছে। তুমি রান্নাঘরে এসে দেখে যাও।”

চয়নিকা ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলে,
“প্রহর দেখুক বা না দেখুক আমি তো দেখবই। তোমার আমার উপর এতো কিসের রাগ বুঝি না। আজকে এর একটা বিহিত করেই ছাড়বো।”

চয়নিকা প্রহর ও আলোকে ধা*ক্কা দিয়ে একে অপরের থেকে দূরে সরিয়ে মাঝ দিয়ে হনহনিয়ে রান্নাঘরে গেলো। রান্নাঘরে গিয়ে দেখল…..

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,

#প্রহর_শেষে_আলোয়_রাঙা
লেখিকাঃ #নুুরুন্নাহার_তিথী
#সূচনা_পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here