প্রহর শেষে আলোয় রাঙা পর্ব -১৬

#পর্ব_১৬
#প্রহর_শেষে_আলোয়_রাঙা
লেখিকাঃ #নুুরুন্নাহার_তিথী
ভোর চারটায় প্রহর অপেক্ষা করছে হেড আর্মি অফিসারের জন্য। তিনি আসলেই ও বর্ডার ক্রস করবে। সবকিছু ব্যাবস্থা করে রেখেছে। আলোকে এই অবস্থায় রেখে আসতে খারাপ লাগলেও শত্রুপক্ষকে ঘোল খাইয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করার এটাই মুক্ষোম সময়। অফিসার এসে প্রহরের কাঁধ চাঁ*পড়ে বলে,

“আমি আশা করিনি তুমি তোমার অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে রিস্ক নিবে। তাকে রেখে নিজের রেসপনসিবিলিটিকে প্রায়োরিটি দিবে। তোমার কল পেয়ে আমি ইমিডিয়েটলি সব অ্যারেঞ্জ করেছি। সো মাচ প্রাউড অফ ইউ প্রহর। বেস্ট অফ লাক ফর ইউর মিশন।”

“থ্যাংকিউ স্যার। এন্ড প্লিজ কিপ ইট সিক্রেট। কেউ যেনো না জানে আমি দেশে নেই।”

“অফকোর্স। কেউ জানতে পারবে না। যেকোনো হেল্পে নেপালের আ*র্মি তোমাকে সাহায্য করবে। ওদের ডিপার্টমেন্ট থেকে তোমাকে একজন সুযোগ্য অফিসার ও তার ফোর্স দিবে।”

“ঠিক আছে স্যার। থ্যাংকিউ।”

প্রহর বিদায় নিয়ে বর্ডার ক্রস করে ইন্ডিয়া যায়। সেখান থেকে নেপাল যাবে।
__________
ভোরের সূর্য এখনও ধরাকে আলোকিত করেনি। কেউ একজন তার সহচরীকে কলে বলছে,
“ডাক্তার চেকআপ করে গিয়েছে?”

“ইয়েস ডার্ক বাটারফ্লাই।”

“কি বলল?”

“মিস চয়নিকার কোমা লং টাইমের জন্য না। মাথায় আঘা*তটা গুরুতর কিন্তু সেটা ডান সাইডে কানের উপরে ও মি*সক্যা*রেজের জন্য শ’কডে কোমা। সি উইল বি ওয়েকআপ সুন।”

ডার্ক বাটারফ্লাই হিসহিসিয়ে বলে,
“সি হ্যাভ টু ওয়েকআপ। আমার হিসেব তো বাকি আছে। ওকে প্রাণে মা*রার ইচ্ছে আমার কখনওই ছিল না কিন্তু প্রচণ্ড যন্ত্রনা দিবো। পদ্মলিকার মেয়ে তো ও। নিজের ও সাথে ওর মায়ের কৃতকর্ম দুটোই ভোগ করবে।”

সহচরী বলে,
“শিতল ম্যাম এসেছিল।”

ডার্ক বাটারফ্লাই বলে,
“মৃত ভ্রুণের টিস্যু স্যাম্পল নিতে?”

“উনি স্যাম্পল নিয়ে গিয়েছে।”

“আমিই বলেছিলাম। ডিএনএ স্যাম্পল এক্সট্রাক্ট করে পিসিআর করে একটা ডাটাবেজে সেভ করতে। চয়নিকার সেলফোন থেকে কোনো ডাটা পেয়েছ?”

“সেলফোনটা টোটালি ডিসট্রয় হয়ে গিয়েছে। সিম কার্ড উদ্ধার করে অপারেটররে মাধ্যমে জানা গিয়েছে একটা নাম্বার থেকে একাধিক কল আসে কিন্তু নাম্বারটার কোনো রোজিস্ট্রেশন নেই এবং কলটা সিলেট থেকেই আসে তবে মাঝেমধ্যে চট্টগ্রাম থেকেও।”

“ফাইন। খেয়াল রেখো।”

ডার্ক বাটারফ্লাই ভাবতে থাকে অজ্ঞাত ব্যাক্তিটি সম্পর্কে।

___________

“স্যার, প্রফেসর ডঃ আরমান শেখকে কি ট্রান্সফার করবেন?”

অচেনা ব্যাক্তিটি ব্র্যান্ডি সিগেরেটের ধোঁয়া উড়িয়ে বলে,
“উমম না। যেখানে আছে থাক।”

“কিন্তু স্যার প্রহর শেহমাত যদি খুঁজে পেয়ে যায়?”

অচেনা ব্যাক্তিটি অট্টস্বরে হেসে তাচ্ছিল্য করে বলে,
“প্রহরের প্রিয়তমা বউয়ের প্রাণ সঙ্কটে। আরমান শেখ তার মেয়েকে প্রহরের কাছে পাত্রস্থ করেছে। সেই সাথে তার এতো বছর আড়ালে রাখা মেয়েকে খেয়াল রাখার গুরুদায়িত্ব সপে গেছে। সেই মেয়ে এখন কোমাতে। কারণটা কি? প্রহরের হেলাফেলা! বউয়ের সুরক্ষা না করে আমার পিছে লেগেছে। বেচারা প্রহরের জন্য মায়া হচ্ছে। এখন সে রাত-দিন এক করে বউয়ের সেবা করবে। এইযে দেখো না? আমাদের আরেকটা জাহাজ সেন্টমার্টিনে রাতে নোঙর ফেলেছে অথচ কেউ ধরতেই পারেনি। প্রহরের নিষ্ক্রিয়তা মানে আমাদের জয়। তাই আরমান শেখকে এখনি সরাতে হবে না। আমি আমার কাজটা শেষ করি তারপর করব। তাছাড়া আরমান শেখ নিজেও এখন কিচ্ছু করতে পারবে না।”

অচেনা ব্যাক্তিটির কথায় তার অনুচর চলে যেতে নিলে কিযেনো ভেবে বলে,
“চয়নিকার নিঃখোঁজ হওয়া নিয়ে ওর সৎমা থা*নায় নিঃখোঁজ ডায়েরি করেছে কিন্তু ওর ব*ডিটা কোথায়? পেয়েছিলে?”

“না স্যার। রাত দশটার পর ওই রাস্তায় হাঁটার ভান করে গিয়েছিলাম। রাস্তায় র*ক্ত লেগে থাকলেও চয়নিকা মেমের ব*ডি পাইনি। কোথায় যে গেলো? চয়নিকা ম্যামের মায়ের নিঃখোঁজ ডায়েরিতে পু*লিশ ধারণা করছে এখানে হয়তো চয়নিকা ম্যামের অ্যা*কসিডেন্ট হয়েছে। খাদে ফোর্স নামাবে আজ। পানিতে পরলে তো স্রোতে ভেসে যাবে সেই ধারণাও করছে। আমার মনে হয় পানিতে পরে স্রোতে ভেসে গেছে। পু*লিশ রাস্তা থেকে ব্লা*ড স্যাম্পলও তারা কালেক্ট করে নিয়েছে।”

অচেনা ব্যাক্তিটি তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
“ব্লা*ড স্যাম্পল দিয়ে কি করবে? চয়নিকার সৎ মায়ের কাছে ডিএনএ টেস্ট করার এমাউন্ট থাকলেও সেটা করে কোনো লাভ নেই। কার সাথে ডিএনএ ম্যাচ করবে? ওর সৎ মা ওর দুঃসম্পর্কের খালা হলেও ডিএনএ তো মিলবে না। আর ফেস এজাম্পশন করতে মোটা অংকের এমাউন্ট লাগবে। তার থেকে পু*লিশ কে*সটাকে বহুদিন ঝুলাবে।”

“জি স্যার।”

“তুমি খেয়াল রেখো পুলিশ চয়নিকার ব*ডি পায় কিনা?”

“জি স্যার আমি খেয়াল রাখছি।”

সাহায্যকারী লোকটা চলে গেলে অচেনা ব্যাক্তিটি সিগরেট ফুঁকতে ফুঁকতে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকে। হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠলে কাজের মনোযোগ নষ্ট হওয়ায় বিরক্তই হয় বটে কিন্তু ফোনের স্ক্রিনে প্রিয়তমার ছবি সহ নাম জ্বলজ্বল করতে দেখে খুশি হয়ে কল রিসিভ করে বলে,
“মাই কুইন!”

অপরপাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠস্বরে কেউ বলে ওঠে,
“শোনো, আজ আমি মায়ের বাসায় যাব।”

লোকটি মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারল না। জিজ্ঞেসা করে,
“কেনো?”

মেয়েটি কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
“কেনো মানে? তুমি তোমার বিজনেস নিয়ে সিলেট টু চট্টগ্রাম দৌঁড়াদৌঁড়ি করো তারউপর চট্টগ্রামেই বেশি সময় থাকো। আমাকে সময় কম দেও। আমার একা একা লাগে তাই মা এসেছে আমাকে নিয়ে যেতে। আমি তো যাবোই। তুমি প্রত্যেকবার আমাকে আটকে দেও। এবার আমি শুনব না।”

লোকটি কণ্ঠে নমনিয়তা এনে বলে,
“আমি আগামীকালই তো সিলেটে ফিরে আসব সুইটহার্ট।”

“সে আসলে আসো। আমি তো যাবোই। ব্যাগ প্যাকিং করে ফেলেছি। সপ্তাহ খানেক তো কমপক্ষে থাকবই।”

লোকটি কপালে হাত ঘষে বিরক্তিতে রূঢ় শব্দে বলে ওঠে,
“তুমি কোথাও যাচ্ছ না। দরকার পরলে তোমার মা-বাবা, ভাই-বোন, সবাইকে এনে রাখো। তাও তোমার যাওয়া হবে না। মাইন্ড ইট।”

লোকটি রাগে ফোন কে*টে দেয়। মেয়ে কণ্ঠেস্বরের মালকিন মেয়েটি ঠোঁট উলটে তার মায়ের দিকে দৃষ্টি হটিয়ে বলে,
“যাওয়া হবে না। সবাইকে তবে এখানেই আসতে বলো। তোমাদের জামাই আস্ত একটা সা*ইকো। এতো ভালোবাসে যে আমায় একা কোথাও যেতেই দেয় না।”

মেয়েটির মা প্রশান্ত মনে বলেন,
“কপাল করে এমন বর পায় মেয়েরা। কিন্তু তোকে এতো রেস্ট্রিকশনে রাখে যে বিষয়টা ভালো না। সন্দেহও হয়।”

মেয়েটি ওর মায়ের কথায় হেসেই উড়িয়ে দেয়।
__________

দীর্ঘ ভ্রমন শেষে নেপাল পৌঁছায় প্রহর। দুইদিন থেমে থেমে প্লেন, ট্রেন, বাস সব জার্নি করেছে। মনোরোম শুভ্র সকালে শীতের আমেজ বেশ নেপালে। হীমশিতল আবহাওয়াতে সকালের সময়টা খুব মনোরোম ও আলসেমির। নেপাল বর্ডারেই সেখানকার এক আ*র্মি অফিসার আসেন প্রহরকে রিসিভ করতে। তিনি আবার জন্মগত কলকাতার তাই বাংলা তার ভালোই আয়ত্তে আছে।

“হ্যালো মিস্টার প্রহর শেহমাত। হাউ আর ইউ?”

“হ্যালো সুদিপ্ত চ্যাটার্জি। আই অ্যাম ফাইন। ইউ?”

“ফাইন এন্ড এক্সাইটেড টু হেল্প ইউ।”

প্রহর সৌজন্য হেসে বলে,
“আপনি তো বাঙালি। আমার সাথে ফর্মালিটি করতে হবে না। বি ইজি।”

“একদম। তবে চলুন আর সময় নষ্ট না করে নাস্তা সেরে নেই।”
প্রহর সুদিপ্তর সাথে যেতে থাকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
একসাথে পাণ্ডুলিপি ও পর্ব লিখা সাথে ল্যাবগুলোর ভাইবা, কুইজ, ল্যাব ফাইনাল নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি পাঠকমহল। রিচেক ছাড়া পর্ব। ভুল ক্রটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here