#পর্ব_২
#প্রহর_শেষে_আলোয়_রাঙা
লেখিকাঃ #নুুরুন্নাহার_তিথী
চয়নিকা রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের কেটলিতে দেখল ছোটো ছোটো তিনটে সাদা এলাচ পরে আছে চা-পাতির সাথে। কোনো বড়ো কালো এলাচ নেই। চয়নিকার পিছু পিছু বাকিরাও আসে। প্রহর এগিয়ে গিয়ে দেখে কেটলিতে কোনো বড়ো কালো এলাচ নেই। তখন প্রহর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“এখন বিশ্বাস হলো তো? আলো শুধু শুধু কেনো তোমার ক্ষতি করতে যাবে বলো? তাছাড়া আলো তেমন মেয়েই না।”
রাত্রি প্রহরকে সমর্থন করে বলে,
“আমারও তাই মনে হয় চয়নি। তখন দুপুরে খাবারের সময়ও তোর এ*লার্জি হয়েছিল। হয়তো ছোটো এলাচেও তোর এ*লার্জি শুরু হয়েছে। হয় অনেক সময়।”
চয়নিকা রেগে চায়ের কেটলিটা মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। চিৎকার করে বলে,
“ওটা বড়ো কালো এলাচই ছিল! আমি স্মেল চিনি। দেখো আলো আবার কেটলি থেকে উঠিয়ে ফেলে দিয়েছে নাকি!”
চয়নিকার চিৎকারে আলো প্রহরের হাত শক্ত করে ধরে। প্রহর আলোর হাতের উপর হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে শান্ত স্বরে চয়নিকাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আমরা সবাই চা খেয়েছি। আমরা তো স্মেল পেলাম না। তুমি একাই পেলে? এমনকি তুমি যেই কাপটাতে খেয়েছ সেটা প্রথমে আমি নিজের জন্য নিয়েছিলাম তারপর তোমার কাপটা পছন্দ হওয়াতে নিয়ে নিলে। এখন কি তুমি বলবে? আলো শুধু তোমার চায়ে কালো বড়ো এলাচ দিয়েছে? এটা জাস্ট একটা অ্যা*কসি*ডেন্ট মনে করে ভুলে যাও।”
চয়নিকা রা*গে ফুঁসছে। প্রহর আলোর দুই গালে হাত রেখে বলে,
“মন খারাপ করো না। আর কেউ মানুক বা না মানুক আমি মানি তুমি কোনো অন্যায় করোনি। নাউ স্মাইল প্লিজ। কুইনের মুখশ্রীতে সর্বদা প্রাণখোলা হাসি মানায়। সূর্যের মতো জ্বলমলে হাসি দিয়ে আমার হৃদয়ের সকল অন্ধকার দূর করে দেয়।”
আলো চমৎকার হাসে। প্রহর সেই হাসির পানে অপলক তাকিয়ে রয়। ওদের এই সুন্দর মুহূর্ত যাতে নষ্ট না হয় তাই বাকিরা আস্তে আস্তে স্থান ত্যাগ করল। চয়নিকা রে*গে নাক ফুলিয়ে ফল কা*টা*র চা*-কু*টা হাতের মুঠোয় চেপে ধরে যখনি হাতে ব্যা*থা অনুভূত হয় তখনি ছুঁ*ড়ে ফেলে দিয়ে গটগটিয়ে চলে যায়।
হঠাৎ শব্দে আলো প্রহরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেখে চয়নিকা চলে যাচ্ছে আর মেঝেতে ঈষৎ রক্তিম বর্ণ ধারন করা চা*কু*টা পরে আছে। আলো চমকে উঠে হড়বড়িয়ে বলে,
“প্রহর! র**ক্ত! চা*-কুতে র**ক্ত লেগে আছে।”
প্রহর আলোর দেখানো স্থানে তাকিয়ে দেখে সত্যি তাই। আলোকে বলে,
“কাম ডাউন। তুমি রুমে যাও আমি আসছি। সবাই এখনি চলে যাবে। এতো ঘা*বড়ানোর কিছু হয়নি।”
“চয়নিকা আপুর তো হাত কে*টে গেছে। এমনিতে উনার এ*লার্জির কারণে অনেকটাই ভু*গতে হয়েছে। ফার্স্টএইড করতে হবে তো।”
প্রহর আলোকে নিজের কাছে টেনে কপালে ঠোঁ*টের উষ্ণ স্পর্শ এঁকে বলে,
“সে নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারে। তোমাকে তাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। চয়নিকা সবসময় একটু জে*দি টাইপের। এসব ওর হারহামেশাই চলতে থাকে। তাই এসবে পাত্তা না দিয়ে তুমি রুমে গিয়ে রেস্ট করো। সারাদিনে অনেক খাটা-খাটুনি গিয়েছে। চাইলে একটু হট শাওয়ার নিতে পারো। আমার জন্য অপেক্ষা করলেও আমি মাইন্ড করবো না! বরং দুজনে মিলে এক উপভোগ্য হট শাওয়ার নিয়ে নিবো!”
আলোর মুখশ্রীতে ব্রীড়ামিশ্রিত রক্তিম আভা ফুটে উঠলো। প্রহরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ছুটে নিজেদের বেডরুমে চলে গেল। প্রহর আলোর ছুটে পালিয়ে যাওয়া দেখে হাসলো অতঃপর কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই তার মুখাবয়বে ফুটে উঠল রহস্যময় হাসি। ঘুরে মেঝেতে পরে থেকে র**ক্ত লাগা চা-*কু*টা তুলে নিলো।
___________
চয়নিকা রে*গে সবাইকে রেখে একাই চলে গেছে। প্রহর সবাইকে বিদায় দিতে বাড়ির এড়িয়া পেরিয়ে এসেছে। শিতল প্রহরকে বলে,
“দেখ প্রহর, চয়নিকা আজ একটু বেশি বা*ড়াবা*ড়ি করল। সে সাফার করেছে অ্যাই এগ্রি বাট আলোকে এভাবে হা*র্ট না করলেই পারত। তুই আলোকে একটু ইজি করে নিস। তুই ল্যাবে চলে গেলে মেয়েটা সারাদিন তো একা একাই থাকে।”
পরশ বলে উঠে,
“চয়নিকা এমনি তাতো জানিসই। তবে যাই বলিস না কেনো, এতোটা খারাপ অবস্থা হলে রাগ হবেই। তাও দুই-দুইবার! অ্যাই থিংক সামথিং ইজ ফি’শি। ছোটো এলাচে তো ওর এ*লার্জি না কারণ ও খাবারে এলাচ খায়। কিছু তো একটা আছেই।”
শিতল পরশকে বলে,
“সব এলাচ তো একই রিজিয়ন থেকে আসে না। কিছু ডিফরেন্ট থাকে। হয়তো সেজন্য হয়েছে।”
নিয়াজ ধ*ম*ক দিয়ে শিতলকে থামিয়ে বলে,
“তুমি হার্ভস নিয়ে রিসার্চ করছ বলে নিজের জ্ঞান এখানে ঝা*ড়*তে আসবে না। এতোটাও এ*লার্জি হয় না। হলে সামান্য হবে।”
প্রহর দেখল কথা বাড়ছে তাই বলল,
“ওকে গাইস কুল। সন্ধ্যা নামছে। গ্রাম্য এলাকা সাথে বনজ*ঙ্গল বেশি। তাই বেশি রাত করা ঠিক হবেনা তাছাড়া এদিকে বসতিও কম। অ্যাই থিংক তোরা হয় এখানে নাইট স্টে কর নয়তো জলদি ফিরে যা। পথে ব*ন্য প্রা*ণী আসতে পারে।”
শিতল আফসোস করে বলে,
“আমি রাতটা থাকতে চেয়েছিলাম। ইশ! এমন বাদশাহী বাড়িতে নাইট স্টে করাটা অসাম হতো।”
কিয়া ও রাতও আগ্রহ দেখায় কিন্তু একজন যেহেতু চলে গেছে তাই থাকবে না। অতঃপর প্রহর ওর বন্ধুদের বিদায় দিয়ে বাগানে যায়। বাগানে অনেক ফুলের কলি আজ রাতে ফুটবে তখন সে তার প্রিয়তমার জন্য নিয়ে যাবে।
__________
বাড়ি ফিরে চয়নিকা রে*গে নিজের ঘরে ভা*ঙচু*র করছে। তার বিছানো জাল কে কে*টে দিলো সে বুঝতেই পারছে না। এতো মেহনত করে সবটা গুঁছিয়েছিল। সব ভেস্তে গেলো তারউপর ফিরেও আসলো। চয়নিকা চি’ৎকার করে উঠে তারপর বলতে থাকে,
“আমি নিজের ক্ষ*তি করে সবকিছু করলাম কিন্তু তাও আলোটা বেঁচে গেলো। কে সরালো সবকিছু? আলো নয়তো? আলো আবার দেখে ফেলেনিতো? উফ! আরেকটু সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আলোকে দেখে তো মনে হয়না সে এসব ঘুণাক্ষরেও টের পেয়েছে। মেয়েটা খুব সাদাসিধে। সাদাসিধে বলেই তো ফেঁ*সেছে! আজ অনেক কিছু করা যেত। কিন্তু কিন্তু কিন্তু! আমার ক্ষতি কে চায়? আলো? আমি তো এতো র্যা*শ হওয়ার মতো এলাচ দেইনি। সবার জন্য বানানো চায়ের কেটলিতে দুটো বড়ো কালো এলাচ তো অতোও না।”
অতঃপর চয়নিকা নিজের রক্তিম শুভ্র কায়াতে নজর বুলালো। র্যা*শের কারণে এখন ভ*য়ংক*র কু*ৎসিত লাগছে তার নিজের কাছেই। আবারও চিৎকার করে নিজের চু’ল টা*নতে থাকে। দরজার বাহির থেকে চয়নিকার মা নক করেন। চয়নিকা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে,
“এখন না। আমি একা থাকতে চাই।”
“তোমার জন্য তোমার পছন্দের কাঠবাদাম ও জাফরান দেওয়া দুধ এনেছি। সাথে একটু হলুদ দিয়েছি। তুমি সুস্থ বোধ করবে।”
চয়নিকা চোখ মুখ খিঁ*চে নাক ফুলিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে উঠে তারপর দরজা খুলে বলে,
“মিসেস রেহমান! আপনাকে আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি একাই যথেষ্ঠ নিজের জন্য। সো প্লিজ এসব করবেন না।”
মিসেস রেহমান ব্যাথিত হন।
“তুমি ভুল বুঝছো চয়নিকা। আমি সত্যি তোমাকে অনেক স্নেহ করি। তুমি ছাড়া আর কে আছে আমার বলো?”
চয়নিকা জোরপূর্বক হেসে বলে,
“সেটাই। তাইতো এখনও আপনাকে আমি সহ্য করছি। আমার বাবার করা ভুল আপনি। আপনাকে আমি আপনার সত্য বারবার মনে করাতে চাইনা কিন্তু আপনি নিজে যেচে এসে মনে করাতে বাধ্য করেন।”
মিসেস রেহমান মলিন হেসে বলেন,
“যা হয়েছিল সব তোমার কথা ভেবেই হয়েছিল। আমি আমার কথার বরখেলাফ করিনি।”
চয়নিকা মিসেস রেহমানের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয়।
__________
রাত এগারোটা। প্রহর ও আলো দুজনে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে। আলো তোয়ালে দিয়ে নিজের দীঘল কালচে বাদামী কেশাগ্রে জমে থাকা পানি মুছছে। ওর পায়ের কাছে রিও ঘুরঘুর করছে আর তা দেখে আলো হাসছে। প্রহর আলোর সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ভেজা চুলগুলোর পানি আলোর মুখের উপর ঝাড়ে। আলো চোখ বন্ধ করে নিলে প্রহর ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
“অ্যাই হ্যাভ অ্যা ভেরি স্পেশাল সারপ্রাইজ ফর ইউ মাই মুনলাইট।”