প্রহর শেষে আলোয় রাঙা পর্ব -০৬

#পর্ব_৬
#প্রহর_শেষে_আলোয়_রাঙা
লেখিকাঃ #নুুরুন্নাহার_তিথী
দুপুরের রান্নাবান্না ও খাওয়া শেষে প্রহর আলোকে কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে বলে বেরিয়েছে। গতকাল রাতে প্রহর ওই লোকটাকে অজ্ঞান অবস্থায় এক জায়গায় নিয়ে রেখেছে। তাকে হাই ডোজের ঘুমের ইনজেকশনও দিয়ে এসেছে সাথে নজরদারীর জন্য সেনাবাহিনীর ফোর্স রেখে এসেছে। লোকটা ঘুম থেকে জাগবে না বলে প্রহরের ধারনা কারণ এই ঘুমের ইনজেকশনের ডোজটা একজন সাধারণ মানুষের শরীরে তিনদিন পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে। যদিও লোকটা ড্রা*গ অ্যাডিক্টেড বলে জানে প্রহর কিন্তু তাতেও অন্তত চব্বিশঘণ্টা তো কাজে দিবেই। ভয় হচ্ছে লোকটার সহযোগী ও মূলহোতা যদি লোকটির অবস্থান জানতে পারে তবে লোকটিকে যেকোনোভাবে বের করে নিয়ে যাবে। তাই জন্য নজরদারীর বিশেষ প্রয়েজন ও মাস্ক মাথায় হেলমেট পড়ে নিতে বলেছে সবাইকে। আলোকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে গেছে। দুপুরে খাবারের জন্য ডাল ভুনা ও চিকেন সবজি করতে পেরেছিল তাও ইউটিউব দেখে।

লোকটিকে একটা চেয়ারের সাথে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছে। সামনে একটা টেবিল ও টেবিলের উপরে ছাদে ঝুলছে সোডিয়াম বাতি। প্রহর লোকটির সামনে চেয়ার নিয়ে বসলো। টেবিলের উপর হাতে রেখে তাতে মুখ ভর দিয়ে ঘুমন্ত লোকটাকে দেখছে। কিয়ৎক্ষণ অবলোকন করে তার এই নিশ্চিন্তের ঘুম প্রহরের সহ্য হলো না। কলস থেকে পানি ঢেলে লোকটার ঘুম ভাঙাতে চাইল। পানি ঢাকার কারণে লোকটা হড়বড়িয়ে ঘাবড়ে উঠল। ঘোলাটে দৃষ্টিতে সামনের ব্যাক্তিটিকে দেখতে অসক্ষম হলে হাত দিয়ে চোখ কঁচলিয়ে সামনে বসা প্রহরকে দেখতে পায় অতঃপর রাগে খিটখিটিয়ে ওঠে।

“তুই! তুই আমার পিছু ছাড়ছিস না কেনো?”

“তোমার পিছু তো আমি আমার মৃত্যু পর্যন্ত ছাড়ব না আমির মামা!”

প্রহরের ‘মামা’ সম্বোধনে লোকটি যেনো আরও ক্ষিপ্ত হলো।
“আমি তোর মামা নই প্রহর। তুই শুধুই আমার শত্রু ও শত্রুর সন্তান।”

প্রহর উচ্চস্বরে হাসে অতঃপর হিসহিসিয়ে বলে,
“তাই নাকি? তোমার শত্রুর সন্তান নাকি বেস্টফ্রেন্ডের?”

লোকটি আ*গুন চোখে চাইল। চাহনিতে লা*ভা ছিটকে পরছে।
“তোর বাপ প্রান্তিক কখনোই আমার বন্ধু ছিল না। বন্ধু কখনও পিঠ পিছে ছুঁ*ড়িকা*ঘাত করেনা। আমার থেকে সব কেঁড়ে নিয়েছে। সে আমার বন্ধু কী! শ*ত্রু হওয়ারও যোগ্যতা রাখে না।”

প্রহর মাথা নুইয়ে আফসোসের সুরে বলে,
“আফসোস মামা! আফসোস! তোমার টাকার নেশা ও বিকৃত মনমানসিকতাই তোমাকে তোমার সবকিছু থেকে দূর করেছে। তুমি দারুন মেধাবী একজন। চাইলেই দেশের ও বিশ্বের উন্নতিতে নিজের মেধাশক্তি কাজে লাগাতে পারতে কিন্তু তুমি যুক্ত হলে বিজ্ঞানের অন্ধকার জগতের সাথে। তৈরি করতে শুরু করলে মানবজাতির জন্য হা*নিকারক কিছু। যাতে তুমি এখনও সফল হওনি। ইনশাআল্লাহ্‌ কখনও হবেও না।”

লোকটি খিটখিটিয়ে হেসে বলে,
“আমি সফল না হলেও কেউ না কেউ ঠিক হবে। এমন এক ভা*ইরা*স ছড়িয়ে পরবে যা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া সব অ্যান্টিডোটের র‍্যাসিসট্যান্ট! ওটা মানবদেহে সুপ্ত অবস্থায় থাকবে অনেকটা সময়।”

(এখানে লেখা তথ্য কাল্পনিক)

প্রহর তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
“পারবে না তুমি। কারণ ওটা এক্টিভ করতেই পারবে নন। ডঃ আরমান শেখ জানে কিভাবে আর্টিফিশিয়ালি ওটা এক্টিভ করা যায়। সে কখনোই মুখ খুলবে না। তাকে তো তোমরা বাঁচিয়ে রেখেছই এই কারণে তাই না?”

আমির নামের লোকটা রেগে চেয়ার ছেড়ে উঠে যেতে চাইল। তাদের পরিকল্পনা টাকা কামানোর। ওই ভাইরাসটা এক্টিভ করে ছেড়ে দিতে পারলেই কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে এর চুরি করা অ্যান্টিডোটটা বিক্রি করতে পারবে।

প্রহর এবার টেবিলে জোরে শব্দ করে বলে,
“অ্যান্টিডোটটা আমাকে ফেরত দেও আমির মামা।”

“কখনোই না। ওটা ফেরত দেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই তোর অসচেতনতার সুযোগ নেইনি! আরমানকে কি*ডন্যাপ করিনি!”

প্রহরের নিজের অসচেতনতার জন্য আফসোস হলো। বাঁকা হেসে গা ছাড়া ভাব এনে বলে,
“তোমাকে যদি আমি এখনি এই মুহূর্তে মে*রে ফেলি?”

আমির নামের লোকটি উচ্চস্বরে হেসে উঠে বলে,
“তুই আমাকে মা*রবি না জানি। আমাকে মা*রলে তো তোর অনেক কিছু জানা হবে না। ভাইরাস, অ্যান্টিডোট এসব তো সামান্য মাত্র। আমি এমন অনেককিছু জানি যা তুই জানিস না। তোর সবচেয়ে বড়ো শ*ত্রু তোর আশেপাশেই থাকে অথচ তুই জানিসও না।”

প্রহর নিজেকে সংযত রাখতে চাইল। তার এখন রেগে গেলে চলবে না। তাকে সব জানতে হবে। প্রহরের কেনো জানি মনে হচ্ছে ভা*ইরাস, অ্যান্টিডোট এসব দিয়ে প্রহরকে ভুলিয়ে রাখছে। প্রহর বুঝে গেছে আমিরের হুঁশে থাকা অবস্থায় কোনো কথা বের করা যাবে না। প্রায় চার মাস আগে আমিরের খোঁজ পেয়েছে প্রহর। তার সব ডকুমেন্ট বাজেয়াপ্ত করতে পারলেও তার থেকে এখনও কোনো তথ্য পায়নি। প্রহর পকেট থেকে হাই ডোজের ড্রা*গ ইনজে*কশন বের করে আমিরকে ইনজেক্ট করল। কিছুক্ষণের মধ্যে আমির নিজের হুঁশ হারালেও প্রহর তার থেকে কোনো সঠিক তথ্য যোগাড় করতে অসমর্থ হয়। শুধু বলেছে, একজন আছে যে প্রহরের খুব কাছের কিন্তু সে সবসময় প্রহরের ক্ষতি চায়। তার এসব ভা*ইরাস, অ্যান্টিডোটের প্রতি কোনো লোভ নেই। ভাইরাসটি আদোও কখনও সংক্রিয়ভাবে এক্টিভ হবে কীনা জানা নেই। সে তো চায় প্রহরের ক্ষতি। প্রহরের ধ্বং*স।

__________

রাত আটটা নাগাদ প্রহর বাড়ি ফিরল। সাথে করে আলোর পছন্দের ফ্রোজেন করা চিকেনের সমুচা নিয়ে এসেছ। শুধু তেলে ভেজে নিলেই হবে। বাড়ি ফিরে বেডরুমে গিয়ে আলোকে না দেখে ওর ভ্রুঁ কুঁচকে আসে। আশেপাশে কোথাও রিও ও পিকুকেও দেখছে না। প্রহরের সন্দেহ হলো আলো হয়তো রান্নাঘরে আছে। হাতের জিনিসপত্র টেবিলের উপর রেখে সে রান্নাঘরের দিকে অগ্রসর হয়। যা সন্দেহ ঠিক তাই। আলো এখন পেঁয়াজ ও রসুন কা*টছে। প্রহর দরজার কাছে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ালো। বাহিরে যাওয়ার সময় আলোকে বলে গিয়েছিল যাতে বিছানা থেকে না ওঠে। রেস্ট করে। কিন্তু এমন ঘারত্যা*ড়া এই মেয়ে! শুধু কি বিছানা থেকে উঠেছে! রান্নাঘরে এসে একা হাতে রান্নাও করছে।

হুট করে পিকু ডেকে উঠলে আলো পেঁয়াজ কা*টা থেকে নজর হটায় আর সাথে সাথে অসাবধানতা বশত আঙুলে ছুঁ*ড়ির মা’থা লেগে কে*টে যায়। আলো আহ্! করে উঠলে প্রহর আঁতকে উঠে তড়িঘড়ি করে আলোর কাছে গিয়ে ওর হাতটা নিজের মুখে পুরে নেয়। আলো হতভম্ব হয়ে যায়। ভয় পেতে থাকে প্রহরের রুদ্ররূপের। আঙুল মুখে থাকা অবস্থায়ই প্রহর আলোর দিকে রুষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়েছে। আলো ভয়ে হাত ছিটকে ছাড়িয়ে এনে বোকার মতো হাসার চেষ্টা করে বলে,

“একটু লেগেছে শুধু। দেখো র*ক্তও কিন্তু বেরোয়নি। খামাখা চিন্তা করো না।”

প্রহর গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“হুম। তোমাকে মানা করেছিলাম না? একদিন শান্তিতে থাকতে ইচ্ছে করে না? কাল তোমার কি অবস্থা হয়েছিল কোনো আইডিয়া আছে তোমার? আরে মেয়ে তুমি হিট স্ট্রোক করতে! আমি কি তোমাকে দুপুরে রান্না করে খাওয়ায় নাই? নাকি আমি খুব বাজে রান্না করেছি যার কারণে তোমাকে এই দুর্বল শরীরে উঠে আসতে হলো?”

আলো হতবাক হয়ে বিমূঢ় হয়ে চাইল। সে তো প্রহরের কষ্ট হবে বলে এসেছিল। কাল সারারাত আবার দুপুর পর্যন্ত কতো ধকল গেছে ওর উপর দিয়ে। আলো আমতা আমতা করে বলে,

“আমি এখন সুস্থ আছি প্রহর। তুমি কাল থেকে কতোকিছু করলে। পরে তুমিও অসুস্থ হয়ে যাবে। ঘরে-বাহিরে দুই দিকে সামলাচ্ছ তুমি। আর কে বলেছে তোমার রান্না খারাপ? তুমি তো আমার থেকেও ভালো রান্না করো। আমি তো তোমার….”

প্রহর ক্ষিপ্র কণ্ঠে বলে,
“বলেছি আমি? আগে নিজের শরীরের চিন্তা করো তারপর আমারটা করবে। তোমাকে সবসময় সবার চিন্তা করতে হবে না। আমার মানুষিক চিন্তা করো ওটাই অনেক। তারপরেও তোমাকে আমি আবারও কালকের মতো অবস্থায় কাস্মিনকালেও দেখতে চাই না।”

এই বলে প্রহর ছুঁ*ড়িটা ছুঁড়ে ফেলে রেগে গটগটিয়ে রান্নাঘর ত্যাগ করে। আলো অসহায় দৃষ্টিতে প্রহরের যাওয়ার পানে চেয়ে রইল।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রেসপন্স করবেন প্লিজ।🥺

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here