প্রহেলিকা পর্ব ৩৬+৩৭

#প্রহেলিকা
#পর্ব_৩৬
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)
———————–

-“আপনার প্ল্যান কী?”

ইনশিতার প্রশ্নটি খুবই অপ্রয়োজনীয় ঠেকল জিহাদের কাছে। সে হো হো করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতেই বলল,

-“প্ল্যান? তাও আবার আমার! কী যে বলো না ইনশিতা!”

-“খবরদার ঐ মুখে আমার নামটাও নেবেন না।”

ইনশিতা ঝাঁঝাল গলায় বলল কথাটা। হাসি থামায় জিহাদ। ঘাড়টাকে হালকা কাত করে তাকায় সে। জিহাদের এমন কাজে ইনশিতার বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠল। ছয় সাত মাস আগের জেহেরকে দেখছে যেন সে। ভয়ে ইনশিতা সামনের গ্লাসটির অবশিষ্ট পানি ঢকঢক করে পান করল। জিহাদ ঘাড় কাত করেই হাসল। তার এঁটো পানি খেয়েছে ইনশিতা! এই মুহুর্তে সত্যি জিহাদকে মারাত্মক ভয়ানক লাগছে। ইনশিতার ঘাম ছুটানো ভয়ে চুপসে যাওয়া মুখটা দেখল কতক্ষণ জিহাদ। তারপর বলে উঠল,

-“আমাকে দেখে জেহেরকে মনে পড়ে গেল তাই না?”

ইনশিতা তৎক্ষণাৎ তাকাল জিহাদের দিকে। জিহাদ কী করে জানল?

-“তোমাকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে কতটা ভয় পাচ্ছ। বাট চিন্তা নেই। আমি জেহেরের মতো না।”

-“আজেবাজে কথা রাখুন আর বলুন আপনি এমন কেন করেছেন?”

জিহাদ অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,

-“আমি আবার কী করলাম?”

বিরক্তিতে ইনশিতা মুখ দিয়ে চ কারান্ত শব্দ তুলল।

-“জানেন না কী করেছেন? এই যে জেহেরকে মারা, আমাকে জোর করে তুলে নেওয়া এইসব আপনি কেন করেছেন? বাবাকে কেন মারতে চেয়েছিলেন?”

-“একটু আগে তো শুনলেই জেহেরকে কেন মারতে চেয়েছি। তাহলে এক প্রশ্ন বারবার করছ কেন?”

-“মা জেহেরকে একটু বেশিই নাহয় ভালোবেসেছিল। এই সামান্য কারণেই আপনি জেহেরকে মারতে চেয়েছেন?”

জিহাদ শক্ত গলায় বলল,

-“এটা মোটেও সামান্য কারণ নয় ইনশিতা। তুমি তো মা বাবার সঙ্গ পেয়েছ ছোট থেকেই, তাই তুমি বুঝছ না। আমি তো ছোট থেকেই বাবার আদর পাইনি, মায়ের আদর যতটুকু পেয়েছি পরবর্তীতে সব জেহের ছিনিয়ে নিলো।”

-“এতে জেহেরের কী দোষ? জেহের তো তখন মা’কে দেখতে পারেনি, এখনো না। জেহের অসুস্থ থাকায় মা শুধু ওর প্রতি একটু বেশি অ্যাটেনশন দিয়েছে ব্যস। তো জেহের কী দোষ করল?”

-“ওর দোষ ও কেন জন্ম নিলো পৃথিবীতে! ও আসার পর থেকে সবকিছুই ছিনিয়ে নেয় আমার থেকে। প্রথমে আমার আপন মাকে, তারপর সৎ মা আর তারপর…আমার ভালোবাসার তুমিকে।”

ইনশিতা তাচ্ছিল্য সহকারে বলল,

-“ভালোবাসা! সিরিয়াসলি! আপনি আমাকে ভালোবাসেন? আপনার কাছে মনে হচ্ছে না এটা পৃথিবীর সেরা জোক? আমাকে যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকতেন তাহলে নোংরামো করতে চেয়েছিলেন কেন?”

-“আমি এটা করতে চাইনি ইনশিতা। আমি সত্যি তোমাকে ভালোবেসেছি, ইভেন এখনো বাসি।”

-“ওহ প্লিজ! দয়া করে নোংরামোকে ভালোবাসার রূপ দেবেন না।”

জিহাদ অস্থির হয়ে বলল,

-“ইনশিতা, বিশ্বাস করো। তখন আমার মাথায় পাগল ভর করছিল, আ-আমি সত্যি এমনটা করতে চাইনি। নয়নিকার কথায় আমার যে কী হলো, ব্রেইন ওয়াশ হয়ে গিয়েছিল একদম…তোমাকে পাওয়াটা মুখ্য হয়েছিল তখন। যে করেই হোক, রেপ…”

জিহাদকে থামিয়ে ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকায় ইনশিতা।

-“এক মিনিট। নয়নিকা মানে? নয়নিকা কেন এমন আইডিয়া দেবে? ও কখনোই এমনটা চাইবে না। সব আপনার প্ল্যান আমি বুঝি।”

-“সত্যি বলছি আমি, জেবাকেও জিজ্ঞেস করে দেখো। নয়নিকাই এসব করতে বলেছিল, আমি প্রথমে সায় দেইনি, ও-ই আমাকে বার বার বলত। পরে ভেবে দেখলাম এমন করলে তোমাকে পাওয়াটা আরো সহজ হবে। তাই এমন করেছিলাম।”

-“তাহলে নয়নিকাকে মারলেন কেন? নয়নিকা যেহেতু আপনার সাহায্য করতে চেয়েছিল তাহলে ওকে কেন এত নৃশংস ভাবে হত্যা করলেন? আর জেবা কোথায়?”

-“ও একজন বিশ্বাসঘাতক তাই। জেবার খবর জানি না।”

-“আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি নিজেই নয়নিকাকে ফুসলিয়েছেন। নাহলে নয়নিকা কখনোই আমার ক্ষতি করতে চাইতো না। কী বলে ফুসলিয়েছেন ও’কে? বলুন, কী এমন বলেছিলেন যে নয়নিকা তার বেস্টফ্রেন্ডের এত বড় ক্ষতি করতে চাইল?”

জিহাদ চোখ বন্ধ করে বিরক্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল।

-“তোমাকেও পুরো ঘটনা বলতে হয় তাহলে।”

-“হ্যাঁ হ্যাঁ, বলুন। শুনতেই তো এসেছি।”

জিহাদ সরাসরি ইনশিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,

-“তোমাকে দু’বছর ধরে ভালোবাসি। যখন থেকে ভালোবাসি তখন থেকেই তোমাকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে চাইতাম।”

ইনশিতা থামিয়ে দিয়ে বললল,

-“লাইফ পার্টনার না বলে বেড পার্টনারই বলতে পারতেন।”

-“ইনশিতা প্লিজ, আমার ভালোবাসাকে খারাপভাবে দেখবে না।”

-“খারাপ কাজ করলে খারাপভাবে দেখা অস্বাভাবিক কিছু নয়।”

জিহাদ ঐ প্রসঙ্গে কথা বাড়াল না।

-“তোমাকে যখন জেহের বিয়ে করতে চায় তখন আমার রাগ হয় খুব। তোমার বাবাকে জেহেরের নামে উল্টাপাল্টা বলি, যাতে তোমাকে বিয়ে না দেয়। তবে তোমার বাবা পরে উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করে। তাতেই আমার রাগ হয়। এই জন্য সুযোগ খুঁজছিলাম তোমার বাবাকে শাস্তি দেওয়ার। কেউ যদি আমার পছন্দের বাহিরে কাজ করে তাকে আমি ছাড় দেই না কখনোই। তাই যেদিন নয়নিকাকে মা‌রি সেদিন তোমার বাবাকেও মারতে বাসায় যাই। তবে পুরোপুরি মারতে পারিনি আশেপাশের মানুষ এসে যাওয়ায়। ঐদিন আমি জেহেরের সাথে মিলিয়েই ড্রেস আর লেন্স পরেছিলাম যার কারণে তোমার মা আমাকে জেহের ভেবে নেয়।”

-“জঘন্য আপনি।”

জিহাদ বাঁকা হাসে তাতে।

-“তোমাকে না পেয়ে যখন আমি পাগল হয়ে যাই তখন নয়নিকা এসে হাত মেলায় আমাদের সাথে। জেবা আগে থেকেই আমার সাথে ছিল। রাফিদকে জেবা ভালোবাসে। রাফিদকে মারাটা জেবা সহ্য করতে পারেনি, তাই সেও রেগে ছিল জেহেরের উপর। জেহেরকে কোনোভাবে কষ্ট দিতে পারলে সেও খুশি। নয়নিকা আমাদের হেল্প করতে চায় তোমাকে পেতে। আমরা প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। নয়নিকা যে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড সেটা জানি। তাই ওর প্রতি তেমন বিশ্বাস হচ্ছিল না। ও বলেছে ও নাকি তোমার ক্ষতি চায়। তোমাকে দেখতে পারত না নয়নিকা।”

-“কেন?”

-“তোমার মনে আছে জেহের তোমাকে পাওয়ার জন্য কলেজে গিয়েছিল একবার। আর তখন নয়নিকাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল?”

-“হ্যাঁ।”

-“সেইদিন রাতেই আমি নয়নিকাকে পৌঁছে দেই। নয়নিকার অবস্থা কিন্তু তখন ভালো ছিল না। হাত কাটা আর এমনিতেও সে ভয়ে অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা। নয়নিকাকে আমি তার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েই চলে যাই। নয়নিকা বাড়ির সামনেই অজ্ঞান হয়ে যায়। আর আশেপাশের মানুষ ব্যাপারটাকে খারাপভাবে নিয়েছে। ভেবেছে ওকে রেপ করে ফেলে রেখে গেছে। সমাজকে চিনো তো? তিল কে তাল বানিয়ে দিতে ন্যানো সেকেন্ডও সময় লাগে না। নয়নিকা কিছু না করেও তার বদনাম তুলে ফেলল আশেপাশের লোকেরা। আর সেই থেকেই নয়নিকার রাগ তোমার প্রতি। তার নামে এত বড় কলঙ্কের দাগের জন্য সে তোমাকে দায়ী করে। ভাবে তোমার জন্যই তো জেহের ও’কে তুলে নিয়েছিল। তোমার জন্যই তার এই অবস্থা। সে জন্যই তোমার কোনোরকম ক্ষতি করতে পারলেই তার শান্তি। জেহেরের কাছে যে তুমি ভালো থাকবে নয়নিকা তা সহ্য করতে পারতো না। হিংসা করতো সে। আমার ইচ্ছে হয়েছিল নয়নিকাকে তখনই পুঁতে ফেলি। তোমার ক্ষতি করতে চায় এমন মানুষকে দুনিয়া থেকে মুছে ফেলতে আমার সময় লাগতো না। কিন্তু তখন আমি শুধু তোমাকে পেতে চাইতাম তা যেভাবেই হোক না কেন। নয়নিকা আমাকে বুদ্ধি দিয়েছিল যে তোমাকে তুলে এনে রেপ করি। এতে তুমি সম্মানের ভয়ে আমাকে বিয়ে করবে। জেবা না করে দিয়েছিল। আমারও ঐ প্রস্তাব ভালো লাগেনি। তোমার কোনো ক্ষতি ছাড়াই তোমাকে পেতে চাইতাম। কিন্তু নয়নিকা প্রতিদিন এই ব্যাপারটা নিয়েই ঘ্যানঘ্যান করতো। তা আমার মাথায় সেট হয়ে গেলে আমি ভাবতে থাকি যে ওটাই হয়তো ঠিক হবে। আসলে তোমাকে কীভাবে নিজের করে পাবো সেটাই আসল লক্ষ্য হয়েছিল আমার। যার কারণে এমন নীচু কাজ করতেও দ্বিধাবোধ হয়নি। জেবা চাইছিল না কিছুতেই। পরে নয়নিকাও ওর ব্রেইন ওয়াশ করিয়েছে। সে বলেছে তোমাকে রেপ করলে জেহের কষ্ট পেয়ে পেয়ে মরবে। আর জেহেরের কষ্টই যেহেতু জেবা চায় সেহেতু এই পথটাই বেস্ট। জেবাও পরে সায় জানিয়েছে। তারপর নয়নিকাই প্ল্যান করল তোমাকে কোনোভাবে জেহেরের বাগানবাড়ি থেকে বের করে আনবে। সেটাও হলো। তারপর তোমাকে কোনো জোর করা ছাড়াই তুলে নিয়ে যাই। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম ঐদিনই বিয়ে করে নিই তোমায়। তাহলে কোনো কষ্ট পেতে হবে না তোমার। কিন্তু তুমি যখন বিয়ে করতে চাইছিলে না আর বারবার জেহেরের কাছে যেতে চাইছিলে তখন আমার রক্ত গরম হয়ে গিয়েছিল। তাই তোমায়…”

ইনশিতা শুধু হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। নয়নিকা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমন একটা জঘন্য কাজ করতে চেয়েছিল!

-“ও’কে মেরেছিলেন কেন?”

-“যখন দেখলাম তোমাকে পাইনি তখন নয়নিকার উপরই রাগ চেপে গেল আমার। আর এমনিতেও তখন নয়নিকার প্রয়োজন ফুরিয়ে এসেছিল। নয়নিকা বেঁচে থাকলে তোমার আরও কোনো বড় ধরনের ক্ষতি করে বসতো। আর যে তোমার ক্ষতি করবে তাকে মেরে ফেলব না তা কি হয়? তাই নয়নিকাকে কষ্ট দিয়ে দিয়ে মেরেছি। আর সেই খুনটা জেহেরের উপর চাপাতে চেয়েছি। ভেবেছি জেহের জেলে গেলে তোমাকে পাওয়া যাবে কোনো বাঁধা ছাড়াই। কিন্তু…”

-“পেলেন না তাই তো? আরে আপনি যদি আমাকে জোর করেও নিয়ে যেতেন না, তাও আপনাকে কোনোদিন মানতাম না আমি। ভালোবাসা তো দূর!”

-“তুমি শুধু সবসময় আমার কাছে থাকলেই হতো। তোমার ভালোবাসা লাগবে না, আমার ভালোবাসা দিয়েই সবটুকু পূরণ করতাম।”

কথাটি খুব ধীরস্বরে মাতাল চাহনিতে তাকিয়ে বলল জিহাদ। এই কথার পর ইনশিতার বসে থাকতে অস্বস্তি হচ্ছিল খুব।

-“ইনশিতা!”

জিহাদের মাদকতা ভরা কন্ঠে ইনশিতার নাম শুনে তার বসে থাকতে আর ইচ্ছা হলো না। ইনশিতা ওঠার আগেই জিহাদ বলল,

-“খুব ভালোবাসি তোমায় ইনশিতা। আমাকে আপন করে নাও। আমাকে একটু ভালোবাসা প্লিজ। একটু ভালবাসা চাই আমার ইনশিতা।”

ইনশিতার কোনো ফিল হলো না এই কথা শুনে। জিহাদ তাকে ভালোবাসে ঠিক। এটা ইনশিতা নিজেও বুঝতে পারছে। তবে ভালোবাসার ধরণটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। ভালোবাসা পাওয়ার জন্য জিহাদ খুব নোংরা উপায় বেছে নিয়েছে। সে তো পারতো রাফিদের মতোই ভালোবাসাকে মুক্ত করে দিতে। কিন্তু না, ভালোবাসাটা যেন তার জেদে পরিণত হয়েছে। আর সে জেদ মেটাতে যেকোনো কিছুই করতে চাইত। ইনশিতার এটাই ভালো লাগলো না। কেন সে রাফিদের মতো পরিস্থিতিকে মেনে নিতে পারেনি? কেন এত বিকৃত উপায় বেছে নেওয়া?

ইনশিতা উঠে পড়ল যাওয়ার জন্য। জিহাদ যেন এতে আরও অস্থির হয়ে পড়ল।

-“ই-ইনশিতা। আর একটু বোসো না প্লিজ, আমি কিছু বলবো না আর। শুধু একটু বসো…ইনশিতা…”

ইনশিতা এবার কন্ঠে তেজ ঢেলে বলল,

-“কেন? বসিয়ে রেখে কী করবেন? চোখের ক্ষুধা মেটাবেন? চোখ দিয়ে গিলে খাবেন তাই তো?”

-“ভুল ভাবছ ইনশিতা। আমি এমনটা ভাবতেও পারি না…ইনশিতা প্লিজ…”

জিহাদের চোখের কোণে জল টলমল করছে। যেকোনো মুহূর্তে গড়িয়ে পড়তে পারে। ইনশিতা ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। জিহাদ চেষ্টা করছে চোখের পানিটুকু আড়াল করতে। সে চাইছে না কোনোভাবেই ইনশিতা তার দুর্বলতা দেখুক। ঘাড় এদিক ওদিক নাড়িয়েও চোখের পানি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। বেহায়া জল উল্টো এতে আরো বাড়ছেই। জিহাদ তখন রাগ নিয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে দারোগার উদ্দেশ্যে বলতে লাগল,

-“হাত খুলে দিলে কী আমি পালিয়ে যেতাম? তোকে কাছে পাই, বাপের নাম ভুলিয়ে দেবো। শালা…”

বলতে বলতে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল তার চোখের কোল ঘেঁষে। মুহুর্তেই মাথা নিচু করে ফেলল জিহাদ। এবার তার সত্যিই খুব দুর্বল লাগছে। ইনশিতা ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে জিহাদের কাছে এগিয়ে আসলো। ইনশিতার উপস্থিতি টের পেয়েও জিহাদ মাথা তুলল না। তার ভাবনা ছিল ইনশিতা রুমাল দিয়ে তার চোখের জল মুছে দিবে। কিন্তু তার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে ইনশিতা রুমালটা টেবিলের উপর রেখে দেয়।

-“ছাড়া পেলে মুছে নিবেন।”

বলেই চলে যেতে নেয় ইনশিতা। জিহাদ এবার মাথা তুলে অসহায় চোখে তাকায়। কাতর গলায় বলে,

-“যেও না জান। প্লিজ…”

ইনশিতা পেছন ফিরে তার দিকে তাকিয়ে বলে,

-“পরবর্তীতে কাউকে ভালোবাসলে ভালোবাসাকে মুক্ত করে দিতে শিখবেন। খারাপ পথ বেছে নেবেন না।”

-“তুমি ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসার কথা ভাবনাতেও আসে না ইনশিতা। আমি সত্যি তোমায় খুব ভালোবাসি।”

-“ভালোবাসার পদ্ধতিটা ভুল ছিল।”

জিহাদ কান্না আসা গলায় চেঁচিয়ে বলল,

-“আমার দু’বছরের ভালোবাসাটাকে কেন দেখছো না? আমার ভালোবাসা নোংরা ছিল না ইনশিতা। এমন ভাবে বলো না। প্লিজ ইনশিতা, একটু বসো। ছেড়ে যেও না, দোহাই তোমার…”

ইনশিতার ঠোঁটে একটু হাসি ফুটে উঠল। তাচ্ছিল্যের হাসি। এমনভাবেই সে একদিন জিহাদের পায়ে পড়ে দোহাই দিয়ে বলেছিল ছেড়ে দিতে। আজ সেই জিহাদ দোহাই দিচ্ছে ছেড়ে না যাওয়ার? অদ্ভুত!

ইনশিতা দ্রুত পায়ে চলে আসলো। তার কলেজে যেতে হবে এখন। জেহেরকে তখন ফোন করে জানাতেও ভুলে গিয়েছিল। ফোন বের করে জেহেরকে ফোন দিয়ে বলে সে একটু আগেই কলেজে পৌঁছেছে। চিন্তা না করতে। ওপাশ থেকে জেহেরের কোনো আওয়াজ না পেয়ে ইনশিতা কেটে দেয়। ট্যাক্সি নিয়ে চলে কলেজের পথে। বিষাদে ছেয়ে আছে তার মনটা। নয়নিকার কাজে সে একটুও সন্তুষ্ট নয়। তবুও দোয়া করে যাচ্ছে মৃত নয়নিকার জন্য। যতই হোক, সে তো নয়নিকাকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবেছিল।

জিহাদ ইনশিতার গমন পথে অসহায় দৃষ্টি মেলে শুধু তাকিয়ে ছিল। তার কিছুই করার নেই। ভালোবাসা সে হারিয়েছে। সারা জীবনের জন্য। এখন আর চোখের জল ঢাকতে ইচ্ছা হচ্ছে না। তাদের কী দোষ? আপন মনে গড়িয়ে পড়ুক তারা। কোনো বাঁধা নেই।

.
ইনশিতা ট্যাক্সি থেকে নেমে কলেজের গেটের কাছে আসতেই থমকে গেল। গেটের সামনে জেহেরের গাড়ি দাঁড় করানো। আর তার সামনে জেহের ঠেস দিয়ে দু’হাত বুকের সাথে ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে ইনশিতার মেরুদন্ড দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। সে তো জেহেরকে মিথ্যা বলেছিল। এখন যদি জেহের জিজ্ঞেস করে তাহলে কী উত্তর দিবে?

ইনশিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জেহের এগিয়ে আসে। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে সে কিছুই বলল না। উল্টো ইনশিতার কপালে লম্বা চুমু দিয়ে বলল,

-“মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করবে কেমন? আমি আসবো নিতে।”

ইনশিতা অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ইনশিতা খেয়াল করল জেহেরের শরীর মৃদু কাঁপছে। তার চোখে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে যেন। এই আগুন ক্রোধের। যেন সে নিজেকে ঠান্ডা রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। জেহের চলে গেল সঙ্গে সঙ্গেই। আর ইনশিতা থম মেরে রইল।

.#প্রহেলিকা
#পর্ব_৩৭
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)
———————–

কলেজ শেষে ইনশিতা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে দশ মিনিট। জেহেরের আসার খবর নেই। ইনশিতা ভাবল সে ট্যাক্সি করে চলে যাবে। ঠিক সেই মুহুর্তে জেহেরের গাড়ি এসে থামে তার সামনে। ইনশিতা উঠে পড়ে। ইনশিতা দেখে জেহের গাড়ি না চালিয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তার দিকে। জেহেরকে এবার সে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে। তাকে খুব অগোছালো লাগছে। চোখমুখ কেমন যেন দেখাচ্ছে। বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলছে বারবার। ঘোলাটে নীল চোখ।

-“আপনার কী হয়েছে? দেখতে কেমন যেন লাগছে।”

ইনশিতার কথা শেষ হতে না হতেই জেহের তাকে জড়িয়ে ধরল। হতবাক ইনশিতা। জেহের শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইনশিতাকে নিজের কোলে এনে ফেলল।

-“কী করছেন? ব্যথা পাচ্ছি।”

জেহেরের হাতের বাঁধন আরো শক্ত হলো। বলতে লাগে,

-“আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না, কোনদিন না।”

-“আরে কোথায় যাবো? কী সব যা তা বলছেন? মাথাটা পুরো গেছে নাকি?”

ইনশিতার মুখটা জেহের দুহাতে তুলে বলল,

-“বলো, আমাকে ছেড়ে কোনোদিন যাবে না। আমাকে সবসময় ভালোবাসবে। আ-আমাকে খুব ভালোবাসবে রোজ।”

সবকিছু ইনশিতার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ইন‌শিতাকে চুপ দেখে জেহের জোরে ধমকে উঠল,

-“কী হলো বলো?”

জেহেরের ধমকে কেঁপে ওঠে ইনশিতা। সামলে উঠে মিনমিন করে বলল,

-“আপনাকে ছেড়ে কেন যাবো? আপনাকে আমি ভালোবাসি জেহের। আপনাকে ছাড়ার কথা এ জন্মেও ভাবতে পারি না।”

জেহের স্বস্তি পেল এই কথায়। ইনশিতার মাথা বুকে চেপে একা একা বিড়বিড় করতে লাগে সে,

-“আমিও তোমাকে ভালোবাসি রোজ। খুব বেশি ভালোবাসি। তোমাকে আর কেউ ভালোবাসতে পারবে না, যে বাসবে তাকে শেষ করে দেবো আমি। সব শেষ করে দেবো…”

বিড়বিড় করতে করতেই সে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

-“ছাড়ুন। বসবো।”

জেহের ছাড়ল না। এক হাতে ইনশিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের কোলে বসিয়েই গাড়ি চালাল বাড়ির রাস্তায়।

.

.

রাতে জেসমিন চৌধুরীকে দেখা গেল প্রায় উদ্ভ্রান্তের মতোই কোথাও একটা ছুটে যেতে। একটু আগেই ল্যান্ড লাইনে কল এসেছিল। সেই কল পেয়েই ঘরের পোশাকে চলে গেলেন কোথাও। ইনশিতা তখন রান্নাঘরে রাতের খাবার তৈরি করছিল। জেসমিন চৌধুরীকে এভাবে যেতে দেখে সে বিস্মিত। কিছু বলার সুযোগই পেল না। রান্না রেখে সে আফজাল চৌধুরীকে ফোন করে জানাল জেসমিন চৌধুরীর যাওয়ার ব্যাপারটা। তার এক ঘন্টা বাদে আফজাল ফোন দিয়ে জানালেন জিহাদকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। অবস্থা খুবই শোচনীয়। পায়ের হাড় ভেঙে গেছে, ঘাড় মচকে গেছে কিছুটা। জানা যায় দুপুরেই নাকি জিহাদকে জেহের এসে হকিস্টিক দিয়ে মারা শুরু করে। পুলিশ কিছু করার আগেই সে ভেতর থেকে লোহার গেট বন্ধ করে দেয়। পরে কষ্টে দরজা খুলে জিহাদকে উদ্ধার করে হসপিটালে নেওয়া হয়। আর জেহের পুলিশকে হুমকিও দেয়। এখন জেসমিন খবর পেয়ে হসপিটালেই ছুটে গেছেন।

সবটা শুনে ইনশিতা থ। তার মানে জেহের তখন আলুথালু বেশে জেল থেকেই এসেছিল! তখনই জেহের শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে নেমে আসে। রোজকে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে।

-“হোয়াট হ্যাপেন? স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

ইনশিতা বিস্ময় কাটিয়ে প্রশ্ন করল,

-“আপনি তখন জিহাদকেই মেরে এসেছিলেন তাই না?”

জেহেরকে নির্বিকার দেখাল। ভাবলেশহীন সুরে বলল,

-“হ্যাঁ তো?”

জেহেরকে নির্বিকার দেখে ইনশিতা আরো বিস্মিত হলো।

-“আপনার কাছে এটা স্বাভাবিক লাগছে? মারতে গেলেন কেন?”

-“ও তোমাকে কী বলেছিল মনে নেই? তোমাকে নাকি ভালোবাসে, তোমাকে থেকে যেতে বলেছে, আপন করে নিতে বলেছে, হাউ রিডিকিওলাস! এসব আমার সহ্য হয়নি, তাই মেরেছি ব্যস!”

ইনশিতা বড় বড় চোখ করে তাকাল।

-“আ-আপনি কী করে জানলেন এসব?”

-“তোমার কলেজে খোঁজ নিলে জানতে পারি তুমি যাওনি। পরে গার্ডসদের বললে তারা জানায় তুমি মি. অ্যান্ড মিসেস চৌধুরীর সাথে জিহাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছ। অফিসের পথে না গিয়ে আমি ওখানে যাই আর তোমার আর জিহাদের সব কথা শুনতে পাই। দ্যান তুমি চলে আসার আগেই তোমার কলেজে এসে পড়ি।”

-“আমাকে যখন কলেজে দেখেছিলেন তখন কিছু বলেননি কেন?”

এই প্রশ্নে জেহের ইনশিতার কাছে এগিয়ে আসলো। খুব কাছে।

-“আমি তখন খুব রেগেছিলাম। সেই রাগ চাইনি তোমার উপর দেখাতে। আমার বাজে রাগটা তোমাকে খুব কষ্ট দেয় রোজ। যার কারণে তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাও। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি, চাইনি তুমি দূরে সরে যাও। তাই আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছি।”

ইনশিতা চোখ বন্ধ করে রইল শুধু। জেহেরের তপ্ত নিঃশ্বাসে তার সারা শরীর রোমাঞ্চিত হচ্ছে বারংবার। তার ভালো লাগলো এই ভেবে যে, জেহের তাকে কষ্ট না দিতে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে চাইছে। তবে…সেই রাগের শিকার যে অন্য কাউকে হতে হয়। যেমনটা এখন জিহাদ হলো। চোখ খুলল ইনশিতা। এক কদম পিছু হটে সে।

-“জিহাদকে মেরে মোটেও ভালো কাজ করেননি।”

জেহেরের চোখে রাগের আভাস ঝিলিক দিলো। তা বুঝতে পারল ইনশিতা। আর এটাও বুঝতে পারল যে জেহের অন্য কিছু মিন করছে এটাকে। তাই জেহের কিছু বলার পূর্বেই সে বলল,

-“আসলে বলতে চেয়ছিলাম, ও তো ওর শাস্তি পাচ্ছেই তাই না! ওর রায় হতো তো কিছুদিন পর। বাবা সেই ব্যবস্থা করে রেখেছিল। তাহলে ওকে মারার কী দরকার ছিল? আপনিও তো ঝামেলায় ফেঁসে যেতে পারেন।”

-“তার কোনো সুযোগই নেই। আর ওর শাস্তি আরো কঠিন হওয়া দরকার। আমি তো চেয়েছিলাম মেরেই ফেলব। ওই ডাম্বঅ্যাস পুলিশগুলোর জন্য পারলাম না।”

জেহের চোখ মুখ খিঁচে বলল কথাটা। যেন জিহাদকে মারতে না পেরে তার দুনিয়ার আফসোস হচ্ছে। ইনশিতা চেয়েছিল হাসপাতালে যাবে। জিহাদকে দেখতে নয়, জেসমিন চৌধুরীকে সামলাতে। মহিলাটা এত ভাবে সন্তানের জন্য! এই ভাবনাটা যদি জিহাদের ছোটবেলার সময়ে থাকত! তাহলে আর জিহাদের এমন দিন দেখতে হতো না।

হসপিটালে যাওয়ার প্ল্যান ক্যান্সেল করে দিলো ইনশিতা। জেহের মারাত্মক পরিমাণে রেগে আছে। এখন আবার এই কথা বলে রাগাতে চায় না। ঘরের পরিচারিকা একজনকে পাঠিয়ে দিলো হাসপাতালে জেসমিন চৌধুরীকে দেখার জন্য।

কেটে গেল প্রায় দুটো মাস…

এই দুটো মাসে জিহাদকে হসপিটালেই থাকতে হয়েছে। অবশ্যই পুলিশের নজরবন্দী হয়ে। অবস্থার তেমন একটা উন্নতি হয়নি। জেসমিন চৌধুরী রোজ গিয়েছেন ছেলেকে দেখতে। সাথে হরেকরকমের খাবার। জিহাদ তাকে দেখে কোনো ধরনের উচ্ছাস প্রকাশ করত না। বেডে শুয়ে থেকে সবসময় নজর রাখতো দরজার দিকে আর ভাবতো, এই বুঝি তার প্রিয় মানুষটি তাকে এক ঝলক জন্য আসবে। তার ভাবনাগুলো ছিল বৃথা। তবুও, নিজ মনে ভাবনা বুনতে তো কোনো বাঁধা নেই!

ইনশিতা আর জেহেরের দিন কাটছে ভালোই। তবে ইনশিতা ভয়ে ভয়ে থাকত। জিহাদের ভয় কাটেনি। আবার যদি আগের মতো হঠাৎ হামলে পড়ে? বিপদের তো কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।

তার একদিন সকলেই একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। জেবা আসলো হুট করেই। তখন সকলে ড্রয়িংরুমে বসে ছিল। জেবাকে দেখে ইনশিতা চমকে দাঁড়িয়ে গেল। আজ তার কলেজ নেই, আর জেহের অফিসে। জেহের যদি এখন জেবাকে দেখত তাহলে নিশ্চিত জেবাকে জবাই করে ফেলত। জেবা কাঁদতে কাঁদতে এসে হঠাৎ করে ইন‌শিতার পায়ে পড়ল।

-“আমাকে ক্ষমা করে দাও ইনশিতা, আমি ভুল করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।”

ইনশিতা দ্রুত পা সরিয়ে জেবাকে তুলল। জেসমিন চৌধুরী জেবাকে দেখে খুব রেগে গিয়েছেন। রাগের মাথায় জেবাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে পর পর দুবার চড় মেরে দেন।

-“মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের এত বড় ক্ষতি করতে বিবেকে বাঁধল না? তোমাকেও উচিত ছিল নয়নিকার মতো মেরে ফেলা। তোমাকে পেটে ধরাটাই আমার ভুল ছিল।”

জেবা জেসমিন চৌধুরীর পায়ে পড়ল।

-“মা, ও মা, আমাকে ক্ষমা করে দাও মা। আমি অনেক বড় ভুল করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও গো মা।”

জেসমিন চৌধুরী পা ছাড়িয়ে দূরে গেল,

-“আগে মনে ছিল না নিজের করা অপরাধের কথা? তা এখন কী মনে করে ক্ষমা চাইছ? এটাও কোনো প্ল্যান নয়তো তোমাদের?”

জেবা জোরে জোরে মাথা নাড়াল।

-“মা, বিশ্বাস করো। আমি মন থেকে ক্ষমা চাইছি। আমার অপরাধ আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল এতদিন। কিছুতেই শান্তি পেতাম না। এতদিন আমি রংপুরের বাসায় ছিলাম। সব কিছু থেকেও যেন কিছুই ছিল না আমার। ঘুম হারাম হয়ে যেত। আমি প্রায়শ্চিত্ত আমার ভুলের জন্য। আমাকে ক্ষমা করে দাও মা।”

-“যার সাথে অন্যায় করেছ তার কাছে ক্ষমা চাও।”

জেবা বসা থেকেই ইনশিতার পা ধরল। আর বারবার বলতে লাগল ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য। ইনশিতা অপ্রস্তুতবোধ করল। জেবাকে ছাড়িয়ে তাকে সোফায় বসিয়ে দিলো। একগ্লাস পানি এনে তাকে খাইয়ে দিলো। তার পাশে বসে বলে,

-“তুমি মন থেকে ক্ষমা চেয়েছ এটাই অনেক। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। উনি নিশ্চয়ই ক্ষমা করে দেবেন।”

জেসমিন চৌধুরী ইনশিতাকে সাবধান করার গলায় বললেন,

-“একে একদম সুযোগ দিবে না ইনশিতা। লাই পেয়ে পেয়ে দেখবে আরো ক্ষতি করার সুযোগ পাবে।”

জেবা মাথা নিচু করে কাঁদছে। ইনশিতা ইশারায় মা’কে শান্ত হতে বলে। জেসমিন চৌধুরীকে এক পাশে নিয়ে বলে,

-“ও আপনার মেয়ে মা। ভুল করেছে, এখন ক্ষমাও চেয়েছে। ক্ষমা করে দিন না। আমার বিশ্বাস ও আর এমন ভুল করবে না।”

-“ইনশিতা দেখো…”

-“আপনি তো ওর মা। একবার ক্ষমা করে দেখুন। একবার ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিন। এতটা মাস অপরাধবোধ মাথায় নিয়ে মেয়েটা বেঁচে ছিল এটাই অনেক। যান মা, একবার ওর পাশে বসে ওকে কাছে টেনে নিন।”

জেসমিন চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন জেবার দিকে। এই মেয়েটা তো তার পেটের। একবার ক্ষমা করে দেওয়াই যায়। কিন্তু যা অপরাধ করেছে তাতে সময়ও লাগবে ক্ষমা করতে। জেবার পাশে বসে তার হাত ধরতেই জেবা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে জেসমিনকে জড়িয়ে ধরে। ইনশিতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

একটু বাদেই কলিংবেল বেজে উঠে। ইনশিতা গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে রাফিদ দাঁড়ানো। সে অস্থির গলায় বলল,

-“কোনো সমস্যা ইতু? জরুরী তলব করলে? কিছু হয়েছে?”

ইনশিতা উত্তর না দিয়ে তাকে ভেতরে আসতে বলে। রাফিদ ভেতরে ঢুকেই দেখে জেবা বসা। তার চোখমুখ শক্ত হয়ে আসে। যেন এক্ষুনি জেবাকে সে মেরে ফেলবে। সেদিন সে ইনশিতার করুণ অবস্থা নিজ চোখে দেখেছিল। আর তার জন্য এই সামনে বসে মেয়েটাই দায়ী। হাত মুঠ করে সে সামনের সোফায় বসে। জেবা তাকে দেখে আরো ডুকরে কেঁদে ওঠে। রাফিদের কাছে এসব ন্যাকামি লাগল। ইনশিতাকে তাড়া গলায় বলল,

-“কী বলবে বলো ইনশিতা। আমার যেতে হবে আবার।”

ইনশিতা রাফিদের পাশে বসেই বলতে লাগে,

-“জেবাকে ক্ষমা করে দাও ভাইয়া। আমি জানি তুমিও রেগে আছো জেবার উপর। ওকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় না?”

রাফিদ চাপাস্বরে বলল,

-“তোমার কত বড় ক্ষতি করতে চেয়েছে ও সেটা কী ভুলে গেলে? তুমি ক্ষমা করতে পারলেও আমি পারব না। নেভার।”

ইনশিতা কিছু সময় চুপ থেকে বলল।

-“ভাইয়া। তুমি আমার একটা কথা রাখবে?”

-“বলো।”

-“আগে বলো রাখবে?”

-“আগে শুনে নিই।”

-“জেবাকে বিয়ে করে নাও।

এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই রাফিদ উঠে দাঁড়াল।

-“তা কখনোই সম্ভব না ইনশিতা।”

-“কেন ভাইয়া? জানো মেয়েটা তোমাকে কত ভালোবাসে? তাহলে আপত্তি কিসের?”

-“আচ্ছা, মানলাম ও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি কি ভালোবাসতে পারবো ও’কে? হয়তো ও’কে ভালো না বেসেও সংসার করতে পারতাম। তবে জেবা যা করেছে তাতে আমি ও’কে বেঁচে থাকতেও ক্ষমা করব না। সারাটাদিন ও’কে আমার ঘৃণা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে। আর আমার মা বাবাও জেবাকে প্রচুর ঘৃণা করে।”

জেবা এবার রাফিদের কাছে এসে হাত করে বলতে লাগে,

-“এভাবে বলো না রাফিদ। আমি তোমাকে ভালোবাসি। ঘৃণা নিয়েও সংসার করতে পারব আমি। তাও আমায় দূরে ঠেলে দিও না।”

-“তা কখনোই সম্ভব নয়।”

জেবা চেঁচিয়ে উঠল,

-“কিন্তু কেন?”

রাফিদ ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

-“কারণ আমি অলরেডি বিয়ে করে ফেলেছি।”

ইনশিতা আর জেবা দুজনেই সমস্বরে বলল,

-“কীহ!”

-“হ্যাঁ। ছয়দিন আগেই আকদ হয়ে গেছে আমার। সামনের সপ্তাহে তুলে নিবো।”

জেবা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। চোখ দিয়ে পানি পড়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে তার। ইনশিতা এখনো বিস্ময় কাটাতে পারছে না।

-“কবে হলো? কখন? আমাকে জানালে না কেন?”

-“ইতু আসলে, হঠাৎ করেই হয়ে গিয়েছে। তোমাকে জানানোর সুযোগ পাইনি।”

-“পাত্রী কে?”

-“শিফা।”

আরেক দফা চমকালো ইনশিতা। জেবা এসে ক্রোধান্বিত হয়ে রাফিদকে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল,

-“শিফা একটা লোভী মেয়ে রাফিদ। ও আগে জেহের ভাইয়ের পিছু পিছু ঘুরত। একটা লোভী মেয়েকে কী করে বিয়ে করতে পারলে?”

রাফিদ জেবার হাত ছাড়িয়ে ধাক্কা দিলো তাকে।

-“ছিল। লোভী মেয়ে ছিল। তবে সেটা আরো এক বছর আগের কথা। এখন সে না লোভী আর না অশ্লীল। তার সাথেই আমার সংসার শুরু হবে। দোয়া করিও।”

জেবা রাগে থরথর করে কাঁপছে তখন। চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলল,

-“ঐ মেয়েটাকে আমি মেরে ফেলব। আমার ভালোবাসা ছিনিয়ে নিয়েছে তাকে আমি শেষ করে ফেলব।”

বলেই সে বেরিয়ে যেতে নেয়। রাফিদ জেবার হাত ধরে আটকায়। ছুঁড়ে মারে সোফার উপর।

-“সেদিন কিন্তু তুমিও একই ভাবে আমা…জেহেরের ভালোবাসাকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিলে। তাও কত খারাপ উপায়ে। ভালোবাসার মানুষ অন্য কারো হলে কতটা কষ্ট লাগে দেখলে তো? ভালো হবে নিজের জীবন নতুন ভাবে শুরু করো। তুমি যেই ভুলটা করেছ তা তোমার কাছে সামান্য হলেও সেটা সামান্য নয়। একজন মেয়ের সম্ভ্রমহানি করতে সাহায্য করেছ তুমি। ভাবতে পারো তোমার মানসিকতা কতটা নীচ? আমি তোমাকে কোনোদিনও ক্ষমা করব না। তবে তুমি যদি আমার, শিফার, ইনশিতার ক্ষতি না করার মানসিকতা নিয়ে জীবন কাটাও তাহলে হয়তো ক্ষমা করতেও পারি। এবার তুমিই ভাবো, সকলের ক্ষতি করে আমার কাছে আরো খারাপ হতে চাও, নাকি যা হয়েছে তা মেনে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে চাও? নাও ডিসিশন ইজ ইওর’স। চলি। ভালো থেকো।”

রাফিদ চলে গেলে জেবা হাত পা ছুঁড়ে কাঁদতে থাকে। ইনশিতা গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। ইনশিতাকে জড়িয়ে জেবা কাঁদতে কাঁদতে বলে,

-“কেন ইনশিতা? আমার সাথেই কেন এমন হলো? কেন রাফিদ আমাকে ক্ষমা করে বিয়ে করতে চাইছে না? কেন?”

ইনশিতা জেবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

-“যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে জেবা। এখন তোমার আমার কারোরই সাধ্য নেই ভাগ্য বদলানোর। মেনে নাও জেবা। হতে পারে পরবর্তীতে রাফিদের থেকেও ভালো কোনো জীবন সঙ্গী পেয়ে যাবে। আচ্ছা, তুমিই ভাবো, রাফিদ তোমাকে ভালোবাসে না। উল্টো তোমাকে ঘৃণা করে। এখন যদি সেই ঘৃণা নিয়েই রাফিদের সাথে সংসার করো তাহলে তুমি ভালো থাকতে পারবে তো। তুমি হয়তো আবেগের বশে বলবে তুমি পারবে। আবেগ দিয়ে কিন্তু এই জগত চলে না। ভাবতে হয় বাস্তবতা দিয়ে। সংসারের কয়েকদিন পর যখন দেখবে রাফিদ তোমাকে আগের চেয়েও বেশি ঘৃণা করবে তখন তুমি নিজেই অতিষ্ঠ হয়ে যাবে। তোমার কাছে সব বিষাক্ত লাগবে। সংসার তো হবেই না বরং তুমি তখন আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে।”

ইনশিতা জেবাকে সামনে এনে আবার বলল,

-“তাহলে তুমিই ভাবো, দিনে দিনে মরণ যন্ত্রণার সাথে বসবাস করার চেয়ে উত্তম নয় কি সেই যন্ত্রণা থেকে দূরে থাকা? তাহলে তুমিও রাফিদের থেকে দূরে থাকবে। ঘৃণ্য কাজ করে শুধু শুধু দরকার কী পাপের বোঝা বাড়ানোর? নিজের জীবন শুরু করো নতুন ভাবে। বলা তো যায় না, কখন তোমার জীবনেও নতুন কারো আগমনে রাফিদকেও ভুলে যাবে। পেছনের সব কষ্ট ছুঁড়ে মারো আর ভবিষ্যত ভেবে কাজ করো। ইন শা আল্লাহ, সফল হবে।”

জেবা এতক্ষণ নীরব থেকে ইনশিতার কথা গুলো শ্রবণ করল শুধু।

-“বাবাকে টিকিট কাটতে বলো। আমি চলে যাবো এখান থেকে। এখানে থাকলে আমি দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো। দূরে গিয়ে নতুন করে সব শুরু করব। সব।”

ইনশিতা মৃদু হেসে বলে,

-“আচ্ছা।”

জেবা তার পাপের শাস্তি ভোগ করেছে। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছে সে। ইনশিতাকে বিপদে ফেলার জন্য সে শুধু হেল্প করে ছিল। অথচ তার শাস্তি কতটাই না ভয়ানক। কখনো ক্ষুদ্র পাপ কাজের শাস্তিও হতে পারে বৃহৎ। এখন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে জেবা। ইনশিতার কথায় নতুন করে জীবন শুরু করবে। নতুন করে বাঁচতে শিখবে সে।

জেবাকে রুমে দিয়ে ইনশিতা নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। আবার কিছুর আওয়াজ শুনল। পিছনে ফিরতেই দেখলে কেমন হুড়মুড়িয়ে জেহের ঘরে ঢুকল।

-“একি! আপনি অসময়ে?”

জেহের উত্তর না দিয়ে দৌড়ে এসে ইনশিতার বাহু ধরে কাছে আনলো। চুল উশকোখুশকো। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে,

-“রাফিদ এসেছিল?”

-“হ্যাঁ।”

-“কেন এসেছে? তুমি ওর সামনে ছিলে? তোমার সাথে কথা বলেছে ও? কী কথা বলেছিলে? ওকে এখানে আসতে বলেছে সে?”

-“কি আশ্চর্য! কয়টা প্রশ্নের উত্তর দিবো?”

-“যা বলেছি সব বলো।”

-“আচ্ছা, আপনি একটু রেস্ট নিন। ঘেমে গেছেন তো। লাইম জুস আনছি আমি।”

-“কিচ্ছু লাগবে না আমার। বলো তুমি।”

জেহের ইনশিতাকে কাঁধে তুলে রুমে নিয়ে গেল। বিছানার সামনে দাঁড় করিয়ে ইনশিতাকে দুহাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে বলে,

-“কী বলেছে তোমায়? আবার নতুন করে ভালোবাসার কথা বলেছে? আমাকে তোমার থেকে কেড়ে নেওয়ার কথা বলেছে?”

-“নারে বাবা। আপনি শান্ত হোন, আমি বলছি।”

-“তোমাকে বলেছিলাম কোনো ছেলের সামনে না যেতে। আর রাফিদের সামনে তো নয়ই। আমার সহ্য হয় না। রুমে বন্দী করে রাখবো একদম।”

জেহের কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। সে একাধারে বলেই যাচ্ছে এক কথা।

-“রোজ, আমি কিন্তু রাফিদকে মেরে ফেলব রোজ। ও’কে যেন তোমার আশেপাশেও না দেখি।”

ইনশিতা হঠাৎ জেহেরের মুখ চেপে ধরল। হাত দিয়ে না, অন্যভাবে। কিছুক্ষণ পর ছাড়ল জেহেরকে। জেহের এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। রোজ তাকে ছাড়ার পর আবার সে রোজের দিকে এগিয়ে গেল। ইনশিতা মুখের কাছে হাত এনে বলল,

-“আগে পুরো কথাটা শুনুন। বলছি।”

জেহের যেন তাও শুনতে চাইছে না। ইনশিতাকে চেপে ধরে ঠোঁটের দিকে এগোতে চাইছে বারবার। ইনশিতা জেহেরের মুখ চেপে সবটা বলে ফেলল হড়বড় করে। জেবা আসার কথা শুনেই জেহেরের নেশা চোখে আগুনের ঝলকানি দেখা দিলো। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তার। সে উঠে দাঁড়াল। ইনশিতা জেহেরকে বাঁধা দিলো।

-“এখন আর কিছু করবেন না। এমনিতেই অনেক বড় ধাক্কা গেছে আজ ওর উপর। প্লিজ এখন আর কোনো হাঙ্গামা করবেন না। আর ও এই দেশ ছেড়ে দেবে কয়েকদিন পর।”

জেহের তাও শুনল না। রাগে তার কপালের রগ ফুলে উঠেছে। মাথায় দপদপ করছে আগুন। ইনশিতা জেহেরের হাত ধরে নিজের দিকে ফিরালো। জেহেরের হাত তার কোমড়ে রেখে জেহেরের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াল। জেহেরের বুকে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো হালকা করে। সে টের পেল জেহের বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলছে। রাগ উধাও হচ্ছে ধীরে ধীরে। এই একটাই অস্ত্র জেহেরকে রাগ থেকে বের করার। ইনশিতা জেহের ঠোঁটে হাত ছোঁয়ালো। জেহের নিজেকে সামলাতে না পেরে রোজের ঠোঁটে ডুবে। উষ্ণ স্পর্শে ভরিয়ে দিতে থাকে তাকে।

পরদিন সকালে আরকেটা চমক দেওয়া খবর তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। জিহাদকে হসপিটালের কোত্থাও পাওয়া যায়নি। গত রাত থেকেই হাওয়া। অথচ চারিদিকে পুলিশের কড়া নজরদারি। তাহলে কীভাবেই বা পালাল সে। জেবাকে বলা হলেও সে জানে না বলে জানায়। খবরটা শুনে ভয়ে ইনশিতার বুক কামড়ে ধরল। জিহাদ কী নতুন কোনো ফাঁদ পেতেছে? এটা কী তার নতুন কোনো চাল ইনশিতাকে পাওয়ার? ইনশিতা সেই খবর শুনে আজ কলেজ যায়নি। জেহেরকে অফিস যেতে বারণ করেছে। জেহের সেই কথা শুনে রেগে গিয়ে বলে,

-“জিহাদের ভয়ে আমি কেন অফিস যাওয়া বন্ধ করবো? এত ভয়ের কী আছে? ও কিছুই করতে পারবে না। রেডি হও তাড়াতাড়ি। তোমাকে কলেজ দিয়েই আমি যাব।”

ইনশিতা মিনতি করে বলল,

-“দুটো দিন অফিস কামাই দিলে কিছুই হবে না। জিহাদকে আগে ধরে নিক। প্লিজ জেহের, আমার ভালো লাগছে না কিছুই। যদি কোনো কিছু হয়ে যায়? রিস্ক নেওয়ার প্রয়োজনটা কী? আমি আপনাকে হারাতে চাই না জেহের। প্লিজ আজকে না যান।”

ইনশিতার চোখে মুখে জেহেরকে হারানোর আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ইনশিতার কান্নামাখা মুখ দেখতে জেহেরের ভালো লাগছে না। আবার এদিকে বিরক্তও লাগছে কেন রোজ জিহাদকে ভয় পাবে? রোজকে আর কোনো টেনশনে না ফেলতে সে অফিস যাওয়া বন্ধ করল। শুধু আজকের জন্যই।

-“ওকে, যাবো না। তার বদলে আমার কিছু চাই।”

-“কী?”

জেহের গভীর দৃষ্টি মেলে তাকাল ইনশিতার পানে। ইনশিতা ভড়কে গেল। সে জেহেরের এই দৃষ্টির মানে বুঝল। তা দেখে জেহের ঠোঁট কামড়ে হাসল,

-“ডোন্ট ওয়ারি। যা ভাবছ এমন কিছুই করব না। আমি শুধু চাই…উমম…একসাথে মুভি দেখব।”

ইনশিতা হাঁপ ছাড়ল। মৃদু হাসল সে। জেহের মুভি দেখার প্রস্তুতি নিয়েই বসল। জানালার পর্দা টেনে রুমটাকে অন্ধকার বানিয়ে পপকর্ণ নিয়ে বসে। বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বুকের উপর রোজের মাথা টেনে আনে। তবে মুভি দেখতে গিয়ে ইনশিতা দুনিয়ার সবচেয়ে বড় লজ্জার সম্মুখীন হলো। জেহের ইচ্ছে করেই এমন মুভি ছাড়ল! মুভির প্রায় বেশ কয়েকটি সিনেই প্রচুর আপত্তিকর সিন আসলে ইনশিতা লজ্জায় উঠে পড়তে চায়। জেহের তা দেখে ইনশিতাকে কোলের উপর এনে জোর করে চেপে ধরে। তার পুরো দৃষ্টি রোজের লাজরাঙা রক্তিম গালের উপর। ঘোর লেগে আসছে তার। লজ্জায় ইনশিতার কান দিয়ে যেন গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। কোনোমতে বলল,

-“ইস! এসব কী? আমি দেখব না এসব, ছাড়ুন। ছিঃ কী অসভ্য আপনি!”

-“অসভ্য কাজ করতে পারো আর অসভ্য কিছু দেখলেই দোষ!”

ইনশিতার কথা বন্ধ হয়ে গেল লজ্জায়। তার উপর জেহেরের হাত বিচরণ করছে ইনশিতার জামার ভেতর। ইনশিতার ইচ্ছে হলো মাটি ফাঁক হয়ে যাক আর সে লাফিয়ে পড়ে। এত লজ্জা! এত লজ্জা!

.
.
চলবে…

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here