#প্রিয়তার_প্রণয়সন্ধ্যা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০২
দুপুরে খাওয়া শেষ করে প্রিয়তা, অবনী বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। পাশের রুমেই মিসেস বেলা নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ শেষ করে মেয়ের রুমে আসেন।
মাথা থেকে কাপড় নামিয়ে শুকনো কাপড় দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে চেয়ার এগিয়ে নিয়ে বসে প্রিয়তাকে জিজ্ঞেস করেন-
” বাসায় কল দিয়েছিলি, জানিয়েছিস যে তুই এখানে?”
প্রিয়তা ফোনটা হাতে থেকে নামিয়ে পাশে রেখে বলল-
” না ফুপি বলার কথা মনে নেই। দাঁড়াও বলছি।”
” হ্যাঁ তোর বাবাকে কল দে, আমারও কিছু কথা আছে।”
” বাবার সাথে তোমার কি কথা শুনি? ”
” ওই যে ইয়াশ ঈশিতার ব্যাপারে কথা বলব। ”
দুজনের নাম একসাথে শুনে প্রিয়তার কেমন যেন একটা খটকা লাগে, ভেতরে একটু ভয়েরও সৃষ্টি হয়। ইয়াশ ভাই আর তার বড় বোনকে নিয়ে কি ব্যাপারে কথা বলবে তার ফুপি!
” বুঝলাম না ফুপি, ইয়াশ ভাই আর ঈশিতা আপুকে নিয়ে কথা বলবে মানে?”
অবনী তার মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে –
” ঈশিতা আপু আর ভাইয়ার বিয়ের কথা। আম্মু তো কালকেই মামাকে জানিয়েছে মামাও রাজি।” (অবনী)
” হ্যাঁ রে মা আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল ঈশিতাকে আমার ঘরের বউ করে নিয়ে আসবো আর সে কথা আমি তোর বাবাকে গতরাতেই জানিয়েছি তোর বাবাও সম্মতি জানিয়েছে আমাকে তাই আমরা চাচ্ছিলাম এই সপ্তাহের মধ্যেই ঘরোয়া ভাবে ঈশিতা আর ইয়াশের বিয়ে দিয়ে দিতে।”
” কই আমাকে বাবা তো কিছু বলে নি! সকালেও তো কল দিয়েছিলাম বাড়িতে, কেউ কিছু বলল না তো।” (প্রিয়তা)
” হয়তো খেয়াল নেই, আচ্ছা বাদ দে ওসব। তুই তোর বাবার নম্বরে কল দে আমি একটু কথা বলি।”
মিসেস বেলার কথা শুনে প্রিয়তার যেন চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে। কি সব শুনছে সে! তার প্রিয় মানুষের বিয়ে কি না তারই বড় বোনের সাথে! এটা কীভাবে সম্ভব! তার এত বছরের ভালোবাসা, অনুভূতি সব কি তবে বৃথা যাবে!
প্রিয়তা কললিস্ট থেকে বাবার নম্বর বের করে ফুপির হাতে ধরিয়ে দেয়।
” কি রে কল দিয়ে দিবি না তাহলে!”
” ওহ হ্যাঁ। ”
প্রিয়তা আবার ফোনটা নিয়ে বাবার নম্বরে কল দেয়। রিং হলেই ফোনটা মিসেস বেলার হাতে ধরিয়ে দেয়। প্রিয়তা মাথা নিচু করে বসে আছে। প্রিয় মানুষকে দেখার উছিলায় এসেছিল সে, ভেবেছিল কয়েকদিন থাকবে আর ইয়াশকে সময় সুযোগ বুঝে বলে দেবে যে সে তাকে ভালোবাসে। কিন্তু এখন যা শুনছে তাতে নিজের সুখ দুঃখ জলাঞ্জলি দিতে হবে।
ফোন রিং হওয়ার সাথে সাথে বেলাল সাহেব কল রিসিভ করেন। মিসেস বেলা খুব উৎসাহের সাথে সালাম দেন।
” আসসালামু আলাইকুম ভাই।”
” ওয়ালাইকুমুস সালাম, কেমন আছিস বোন?”
” জি ভাইয়া ভালো আছি আপনি কেমন আছেন আর ভাবি কেমন আছে? ”
” হ্যাঁ বাসার সবাই ভালো আছে, প্রিয়তা তোদের ওখানে গেছে? না মানে ওর ফোন নাম্বার যে এটা! ”
” হ্যাঁ ভাই, কিছুক্ষণ আগেই এসেছে। রাতের ওই ব্যাপারটায় কথা বলার জন্য আবার ফোন দিয়েছিলাম। ”
” তুই একদম চিন্তা করিস না, মেয়েটাও বড় হয়ে গেছে আর আমিও চাচ্ছি খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার জন্য। ইয়াশের মতো ভালো ছেলে তো আর হয়ই না। ”
” যাক আলহামদুলিল্লাহ, ঈশিতার কি খবর? ”
” তার তো না রাজি হওয়ার কিছু নাই তোর এসব নিয়ে একদমই চিন্তা করতে হবে না। সব ব্যাপারগুলো আমি দেখে নেব তুই শুধু বল তাদের দুজনের আলাদা আলাদা হাতগুলো আমরা কবে একসাথে করে দেব? ”
” ভাই, আমি ভাবছিলাম যে ওদের দুজনের বিয়ে এই সপ্তাহের মধ্যেই দিয়ে দিলে হয় না? তুমি তো জানোই ইয়াশ কেমন! ও কোনোভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠান করতে দেবে না। ও তো এখন বিয়েই করতে চাইছিল না কিন্তু ওর বয়সী ছেলেদের দুই একটা করে বাচ্চা হয়ে গেছে অথচ সে বিয়েই করতে চায় না। অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি। আমি জানি আমার ছেলের আলাদা কোন পছন্দ নেই তবুও জিজ্ঞেস করেছিলাম তার কোন পছন্দ আছে কি না সে বলেছে তার কোন পছন্দ নেই আমরা যা করব তাতেই সে রাজি। ”
” অনেকদিন হলো আমাদের বাড়ি আসা হয় না তো তোদের, এসে ঘুরে যা আর ঈশিতাকেও দেখে যা।”
” নিজেদের মেয়েকে আবার দেখার কি আছে বলো তো! একেবারেই বিয়ের জন্যই যাব। রাতে ইয়াশের বাবা বাড়ি ফিরলে ফোন দিয়ে কথা বলতে বলব। তুমি উনার সাথে কথা বলে আজকেই বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলো তাহলে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাতে কল দেব তাহলে।”
” ঠিক আছে। নাও প্রিয়তার সাথে কথা বলো।”
মিসেস বেলা ফোনটা প্রিয়তার দিকে এগিয়ে দেয়। প্রিয়তা ফোনটা নিয়ে ফুপির দিকে তাকিয়ে মিথ্যা একটা হাসি দেয়।
” হ্যাঁ বাবা বলো, কেমন আছো?”
” হ্যাঁ রে মা ভালো আছি তুই কেমন আছিস বল তো? পরিক্ষা কেমন হলো?”
” আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আর আমার পরিক্ষাও ভালো হয়েছে কিন্তু তুমি আমার সাথে এটা ভালো করলে না।”
” কি ভালো করলাম না আমার মেয়ের সাথে?”
” এই আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে এই কথাটা আমি মাত্র জানলাম কেন?”
” ওহ আচ্ছা এই কথা! তোর ফুপি তো রাতে বলেছে আমাকে, তখন তো তুই হয়তো ঘুমাচ্ছিলি তাই আর বলি নি।”
” সকালে যে কথা হলো?”
” একটুও মনে নেই রে মা। তুই বাসায় আসবি কখন? বাসায় এলে সব বলব।”
” আর বলতে হবে না থাক।”
” রাগ করে না মা, আগামীকালই চলে আয়। বাবা আর মেয়ের অনেক কথা আছে তো।”
” এভাবে ভুলিয়েভালিয়েই পরিস্থিতি সামলে নাও তুমি সবসময়। ”
” তোর বাবা বলে কথা!”
” হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি বুঝেছি। ”
” আচ্ছা মা এখন রাখছি, পরে কল দেব।”
” ঠিক আছে।”
প্রিয়তা ফোন রেখে দেয়, মিসেস বেলা ও চলে যান রুম থেকে। অবনী ফোন ঘাটাঘাটি করতে ব্যস্ত সেই সুযোগে প্রিয়তা রুম থেকে বেরিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকে। হঠাৎ করে পাওয়া এতটা বিষণ্নতা হয়তো জোরে চিৎকার করে কান্না করে উদযাপন করতে হতো কিন্তু সে উপায় ও তো নেই। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অধৈর্য্য হয়ে কান্না করতে থাকে প্রিয়তা। আজ যেন তার কান্নারই দিন, সবকিছু উপেক্ষা করে তাকে হারানোর কান্না কাঁদতে হবে।
__________
রাতে চা বানিয়ে সবাইকে দিয়ে প্রিয়তা এক কাপ চা ইয়াশের জন্য নিয়ে যায় তার রুমে। ইয়াশ ল্যাপটপে কিছু একটা করছিল। প্রিয়তা চা রেখে বাহিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
” কারও রুমে প্রবেশের আগে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হয়।”
ইয়াশের কথা শুনে দাঁড়িয়ে যায় প্রিয়তা। একেই তো মন খারাপের জন্মদিন, তার ওপর প্রিয় মানুষের এমন কথা, সবমিলিয়ে যেন অন্ধকার নেমে আসে প্রিয়তার জীবনে। প্রিয়তার কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছিল না, কেমন যেন অভিমান হচ্ছিলো ইয়াশের ওপর, সে কি কিছুই বোঝে নি এতদিনে তার ব্যবহারে! এখন যেহেতু নিজের বোনের সাথে বিয়ের কথা চলছে এখানে নিজের বিষয়ে কথা বলা স্বার্থপরের পরিচয় দেওয়া সমান কথা। তাই আর কথা বাড়াবে না বলে ঠিক করে। আজকে থেকে যেন এই পুরুষটি তার জন্য একেবারে নিষিদ্ধ হয়ে গেল।
” কি হলো কিছু না বলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? পুরুষ মানুষের রুমে একা ঢুকতে নেই জানিস না?”
” স্যরি।”
প্রিয়তার সব মেনে নেওয়া সামান্য স্যরিতে অবাক হয়ে যায় ইয়াশ। ল্যাপটপ থেকে এবার চোখ উঠিয়ে তাকে দেখে নেয়, বিষন্নতা ভর করেছে সেটা স্পষ্ট। আবার কাজে মন দেয় সে।
” পর্দা কাউকে দেখানোর জন্য না করে আল্লাহকে ভয় করে করবি। তোর বোনের সাথে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে তাকে নাহয় আমি ঠিক করে নেব কিন্তু তুই? ”
” আমার বিষয় আপনাকে ভাবতে হবে না।”
” বিয়েটা হয়ে নিক তারপর আমিই একটা ভালো ছেলে খুঁজে তোর ও বিয়ে দেব। মেয়েদের বেশিদিন ঘরে রাখতে নেই।”
” নিজের বোনকে রেখেছেন কেন? অবনীকে বিয়ে দেন আমার ব্যাপারে আপনার ভাবতে হবে না।”
” দুজনকে নিয়ে ভাববো। বিয়েটা হতে দে আগে।”
” খুব লাফিয়ে লাফিয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছেন দেখছি।”
” যাব না? বিয়ে তো একবারই করব।”
” আমি আসছি।”
প্রিয়তা জানে ইয়াশের কোন কথাই এখন সে মেনে নিতে পারবে না। সব কথায় তার রাগ হয়ে যাবে। সবচেয়ে ভালো হয় সে এখন থেকে আর ইয়াশের সামনেই যাবে না।
চলবে……
(গল্পটা একদম কাল্পনিক, কেউ প্লিজ বাস্তবতার সাথে মেলাবেন না, অনেক ঘটনা পরে আসতে পারে যেটা বাংলাদেশে সম্ভব নয় তাই আগে থেকে বলে রাখলাম। তবে হয়তো কোনদিন সম্ভব হতেও পারে, ভবিষ্যৎ তো জানি না।)