প্রিয়োসিনী পর্ব – ১৩ | লেখক ~ নীরা আক্তার

#প্রিয়োসিনী
#নীরা_আক্তার
#পর্ব_১৩
“এই সিকদার বাড়ি আর সিকদার বাড়ির পুরুষমানুষগুলো আমার জন্য অভিশাপ। এই অভিশাপ নিয়ে আমি বাঁচতে পারবো না..”নওরিন কথাগুলো ইসরাককে উদ্দেশ্য করে বলে বিছানায় গিয়ে উঠে বসে,
চেয়ারে বসে টেবিলে মাথাগুজে বসে আছে ইসরাক।
-খুব তারাতারি আপনাকে আমি এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দেবো।
ইসরাক টেবিল থেকে মুখ তুলে তাকায় নওরিনে দিকে।ইসরাকে চোখ দুটো লালটুকটুকে হয়ে আছে।যেন শরীর সব রক্ত চোখে এসে জমা হয়েছে।ঐখুনি অশ্রুর ন্যায় ঝড়ে পরবে

-আমাকে তালাক দেবেন?দিয়ে দিন!
ইসরাক পূর্বের ন্যায় আবার টেবিলে মাথা ঠ্যাকায়….কিছু বলে না!

-আপনি এক্ষুনি আমাকে তালাক দিন আমি এক্ষুনি বেরিয়ে যাবো।
-কোথায় যাবে?
-জাহান্নামে….ইসরাক ইমতিয়াজ সিকদার আপনার চেয়ে আমি জীবনটাকে কয়েকগুণ বেশি দেখেছি।প্রতি পদে পদে জ্বলেছি আমি।আপনার ভাই আমাকে জ্বলন্ত চুল্লীতে নিক্ষেপ করেছে,আমি প্রতি মুহূর্তে আগুনে জ্বলছি, আপনি আমাকে তালাক দিলে শুধু মাত্র সেই আগুনের প্রখরতা বারবে….এর চেয়ে বেশি কিছুই হবে না!হয়তো শেষ হয়ে যাবো নয় তো সব কিছু জ্বালিয়ে পুরিয়ে ছারখার করে দেবো!

-একটা সত্যি কথা বলবে?
-(…)
–আমানের সাথে কি সত্যিই তুমি সম্পর্কে গিয়েছিলে?
নওরিন হাসে।জোরে জোরে হাসে….
-কেন? কিছু জানেন না আপনি?

ইসরাক মোবাইলে ছবিগুলো বার করে নওরিনের সামনে ছুড়ে দেয়,
-এগুলো কি?
নওরিন ছবিগুলো দেখে না।দেখার প্রয়োজন নেই….মোবাইলের পাওয়ার অফ করে বিছানায় রেখে দেয়,

-ধরুন সম্পর্ক ছিলো,ধরুন আমি আপনার ভাইকে ফাঁসিয়েছি, দামি উপহার নিয়েছি, ধরুন আমি আপনার ভাইয়ের ক্ষতি করেছি…..তাতে কার কি যায় আসে?আপনার ভাই আমার ক্ষতি করেনি?এরকম সময়ে আমার সাগর ভাইয়ের সাথে সুইজারল্যান্ডে হানিমুন করার কথা ছিলো অথচ দেখুন আমি এখানে পরে পরে আপনার কাছে কাছে মার খাচ্ছি। আপনার বাড়ির লোকের কাছে অপমানিত হচ্ছি…আমার ক্ষতি কি কিছু কম হয়েছে….
-খুব শখ না সাগরের সাথে হানিমুনে যাওয়ার?
নওরিন আবারও হাসে।সে হাসিতে আনন্দ নেই হাসির আড়ালে রেয়েছে এক বুক অভিমান দুঃখ কষ্ট আর ইসরাকের প্রতি ধিক্কার,তাছিল্য আর,ব্যাঙ্গ…
যেটা ইসরাক বেশ বুঝতে পারছে।

-হুম্ম খুব শখ ছিলো।বিয়ে করবো।সুন্দর করে ঘর সাজাবো।দশ বারোটা বাচ্চা কাচ্চা হবে।কিচ্ছু হলো না।জানেন আমি সাগর ভাইকে খুব ভালোবাসতাম।

ইসরাকের চোখ দুটো দপ করে জ্বলে উঠে,
-তুমি স্বীকার করলে আমানের সাথে তোমার সম্পর্ক ছিলো?
-ধরুন করলাম….তাতে আপনার কি?
-জ্বলে ভীষণ জ্বলে।কষ্ট হয়।নিতে পারছিনা এইসব….
নওরিন একটু থেমে বলে উঠে…
–আমি শপথ করে বলতে পারি…আমি স্বজ্ঞানে কখনো কোনো অন্যায় করি নি।কারো সাথে কোনো অবিচার করিনি!কিন্তু আপনি আমার সাথে যেটা করলেন সেটা অন্যায়।ধরুন এটা প্রমান হলো আপনি ভুল আপনার ধারনাগুলো ভুল,তখন পারবেন তো আমার সামনে মাথা উঁচু করে দাড়াতে
-তাহলে ছবিগুলো….?
-(….)
–আমি মনে প্রানে চাই আমি ভুল প্রমানিত হই…প্রয়োজনে সারা জীবন তোমার সামনে মাথা নিচু করে থাকবো!

নওরিন কোনো উওর দেয় না….

-ফিরে এলে কেন?বললাম না আমার চোখের সামনে আসবা না!
নওরিন বেশ উচ্চ স্বরে বলে উঠে,
-প্রথমত সন্মান দিয়ে কথা বলুন আমি আপনার স্ত্রী।তার চেয়ে বড় কথা আমি একজন নারী। দ্বিতীয়ত আমি নিজে আসতে চাই নি আপনার আম্মা জোর করে দিয়ে গিয়েছে।বাড়ি ভর্তি মানুষ এখানে ঝামেলা করলে আপনাদেরই মুখ ছোট হবে।দরকার পরলে গাছ তলায় রাত কাটাতাম তবুও আপনার সাথে না।

[নোহা আর নওরিন পুকুর পাড়ে বসে ছিলো।তখন মোটামুটি মাঝ রাত পেরিয়ে গেছে।মেহেন্দির অনুষ্টান তখনো চলছে।জিনাত সিকদার জ্বানালা দিয়ে দুজনকে দেখে ফেলে…..তিনি বেরিয়ে গিয়ে নওরিন আর নোহাকে টেনে ভেতরে নিয়ে আসেন।রাত বিরাতে এইসব জায়গায় ভূত পিশাচ থাকে…একজন তো নতুন বউ আর এক অবিয়াত্তা মেয়ে মানুষ…..তেনাদের নজর পড়তে পারে।মনে মনে দোয়া পড়ে দুজনকে ফু দেয়।

নওরিনের চোখ মুখ ফোলা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে কান্না কাটি করেছে…..।তিনি বেশ বুঝতে পারছেন ছেলে আর ছেলের বউয়ের মাঝে ঝামেলা হয়েছে কিন্তু তিনি কাউকে কোনো প্রশ্ন করেন না।
শক্ত কন্ঠে বলে উঠে,
-নোহা তুই তোর ঘরে যা আর নওরিনকে নওরিনের ঘরে দিয়ে আয়।
নওরিন দুম করে বলে দেয়,
-আমি ওনার কাছে যাবো না!
তিনি কন্ঠে একটা দৃঢ়তা এনে বলে উঠে,
-এই বাড়িতে তুমি অতিথি এটা তোমার নিজের বাড়ি নয়।বাড়ি ভর্তি মানুষ তামাশা করো না।নিজের ঘরে যাও।

আর কিছু বলে না নওরিন।গুটি গুটি পায়ে ঘরে চলে আসে।ঘরে এসে দেখে ইসরাক টেবিলে মাথা রেখে উবু হয়ে আছে।নওরিন ঘরে এসে আলোটা নিভিয়ে দিতেই ইসরাক চোখ মেলে তাকায়।]]]

-হ্যা তা তো থাকবেই…আমি কে হই তোমার?
–আপনি আমার আসলেই কেউ হন কি না সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে তবে আপনার অসভ্য আচরন এটা বলে দিচ্ছে আপনি আমান সিকদারের বড় ভাই।রক্ত কথা বলে…আপনি মুখোশের আড়ালে থাকেন আর আমান মুখোশ হীন।

নওরিন কথাটা বলে গায়ে কাথা টেনে দিয়ে শুয়ে পড়ে।অসভ্য লোকটার সাথে আর মুখ লাগাতে ইচ্ছে করছে না তার।

প্রায় ভোর হতে চললো…এখন এমনিতেও ঘুম আসবে না।তবুও নওরিন চোখ বুজে থাকে।ইসরাকের সাথে তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।শুধু ইসরাক নয় পৃথিবীর কারো সাথেই তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।আপাতোতো সে পৃথিবীর সব থেকে দুঃখী মানুষ। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এই খান থেকে ছুটে পালিয়ে যেতে কিন্তু কোথায় যাবো?মনে মনে নওরিন নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে,যাওয়ার যে কোনো জায়গা নেই
মা বলে দিয়েছে…. “বাঁচলেও যেন শ্বশুর ঘরে বাঁচি মরলেও যেন শ্বশুর ঘরেই মরি।আমার বোঝা আর টানবে না।”

নওরিন একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।সময়ের ব্যবধানে নিজেকে তার পৃথিবীর সবচেয়ে মেরুদণ্ডহীন নিকৃষ্ট মানুষ বলে মনে হচ্ছে।তবে সে বাধ্য সব কিছু মেনে নিতে।কারন নিজেকে নির্দোষ প্রমান করার মতো কোনো শক্ত পোক্ত দলিল তার কাছে নেই।আবার হুংকার দিয়ে মাথা চারা দেওয়ার মতন ক্ষমতাও এমুহূর্তে তার নেই।
………..

এতো শত চিন্তার মাঝে নওরিনের একটু চোখ লেগে গিয়েছিলো।ফজরের আজানের শব্দে তন্দ্রা কেটে যায়।নওরিন উঠে বসে।নামাজের সময় হয়েছে। নামাজই একমাত্র শান্তির উৎস,যা মন আত্মা দু্টোকেই শান্ত করতে পারবে।
নওরিন উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নেয়।
নামাজ শেষ করে ইসরাকের কাছ এসে দাড়ায়।ইসরাকের কোনো সাড়া শব্দ নেই।অন্যদিন হলে ইসরাক আগে উঠে পরে নওরিনকে নামাজের জন্য ডাকে দেয়।

নওরিন উকি দেয় ইসরাকের দিকে।
ইসরাক টেবিলে মাথা লাগিয়ে আগের মতোই শুয়ে আছে।বোধহয় ঘুমিয়ে গিয়েছে।নওরিন কিছু একটা মনে করে ইসরাকে ডাক দেয়,
-এই যে শুনছেন।বিছানায় শুয়ে পড়ুন আমি উঠে যাচ্ছি….আর কতক্ষন এভাবে থাকবেন

ইসরাকের কোনো সাড়া নেই।নওরিন একবার ভাবে এভাবেই থাক।কষ্ট পাক আমার তাতে কি?….কিন্তু পরোক্ষনে কিছু একটা মনে করে ফিরে আসে।ইসরাককে ধাক্কা দেয়।
-উঠুন বিছানায় শোবেন চলুন

ইসরাক ঢুলু ঢুলু চোখে তাকায় নওরিনের দিকে….মাথা তুলতে কষ্ট হচ্ছে তার।
ইসরাক মৃদুস্বরে নওরিনকে কাছে ডাকে। বলে উঠে,
-খুব মাথা যন্ত্রণা করছে।উঠতে পারছিনা।আমাকে একটু ধরো বিছানায় যাবো….

নওরিন আলো জ্বালায়।ইসরাক মাথা সোজা করতেই নাক দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত পরতে থাকে,
নওরিন ভয় পেয়ে যায়।ইসরাক উঠতে গিয়ে নওরিনের গায়ে ঢলে পড়ে। নওরিন ইসরাকের ভার সামলাতে পারে না দুজনই মেঝে পড়ে যায়।নওনির জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে।গোটা বাড়িটা যেন নওরিনের চিৎকারে রিন রিনিয়ে উঠেছে।

___________________

আজকে রূপসী আপার গায়ে হলুদ।কিন্তু নব বধুর মন খারাপ।মুখে হাসি নেই বিয়ের আনন্দও নেই।তার আদরের ভাই অসুস্থ।রূপসী ইসরাকের চেয়ে বয়সে চার দিনের বড়।তাই হিসেবে সে ইসরাকের বড় বোন।ইসরাক ছোট বলে তার উপর কম প্রভাব খাটায়নি সে।ইচ্ছে মতো খাটিয়েছে।রূপসীর ইচ্ছে ছিলো আজকেও ইসরাককে জ্বালিয়ে মারবে।কিন্তু…. রূপসীর মনটা আরো খারাপ হয়ে যায়।

বাড়িতে গায়ে হলুদের আয়োজন চলছে।তবে বিয়ে বাড়ির পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে আছে।ইসরাক অসুস্থতা নিয়ে সবাই চিন্তায় আছে।
গ্রামের একজন ডাক্তার দেখানো হয়েছে এসে চেক করে গেছেন।প্রশারটা বেড়েছে।ইসরাকের ঘুমের প্রয়োজন।এক ডোজ ঘুমের ঔষধ দিয়ে গিয়েছেন।

জিনাত সিকদার ছেলের মাথার কাছে বসে আছে।তিনি চাইছেন ইসরাককে এক্ষুনি বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।কিন্তু এভাবে আধমরা ছেলেকে তো আর টেনে নিয়ে যাওয়া যায় না তাই বাধ্য হয়ে এখানেই অপেক্ষা করছেন। ইসরাক কিছুটা সুস্থ হলে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন।এলাকাটা শহর থেকে বেশ ভেতরে হওয়ায় তেমন ডাক্তার বৈদ্য নেই বললেই চলে।

নওরিন বার কয়েক ঘরে উকি দিয়ে দেখে গেছে ইসরাক কে। ইসরাক ঘুমিয়ে আছে।বেলা ১২ টা বেজে ইসরাকের ঘুম ভাঙ্গে।নওরিন বলে লাফিয়ে উঠে।সারা শরীর বেয়ে দর দর করে ঘাম দিচ্ছে।

ইসরাক জোরে জোরে নওরিনকে ডাকতে থাকে।
নওরিন ছুটে আসে…
-কি হয়েছে?
-ঠিক আছো তুমি?
-হু।কেন?
-কিছু না
বলেই ইসরাক আবারও বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছে সে।
“বিশাল একটা পুকুর।ভোর রাতে।সবে পুকুরে সোনালী আলো পড়েছে, তার মাঝখানে লালটুকটুকে শাড়ি পড়ে উবু হয়ে নওরিন ভাসছে….কি ভয়ংকর স্বপ্ন ”

ইসরাক চোখ বুজে আছে….
-আমি একটু দূরে যাবো।ডাকলে হয়তো শুনতে পাবো না।কিছু প্রয়োজন পরলে অন্যদের ডেকে নিয়েন আমি আসছি।

কথাটা বলেই নওরিন ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
ইসরাক চোখ খুলে তাকায় ফোনটা হাতে নেই।
কালকের সেই আননোন নাম্বার থেকে ৬ টা মিসড কল উঠে আছে।
________________

এ বাড়ির উঠান পেড়িয়ে ছোট পুকুর যেটার নাম রাখা হয়েছে আলতাদীঘি।বাড়ির সমস্ত ধোয়াধুয়ি থেকে গোসল সব কাজ কর্মে এই পুকুরই ব্যবহার করা হয়….আলতাদিঘীর পাশ কাটিয়ে একটু এগিয়ে গেলেই সামনে বিশাল এক জোড়া পুকুর আছে।পুকুর দুটো যেমন বড় তেমন গভীর।মাঝখানে গেলে পায়ের নিচে মাটি ঠাওর করা কঠিন।

নওরিন ইশা আর নোহা সেই পুকুরেই যাচ্ছিলো।পুকুরের ধারে বিশাল এক তেঁতুল গাছ আছে।সেই গাছের তেঁতুল ভীষন মিষ্টি।তারা মূলত তেতুল পারতেই সেখানে যাচ্ছে….আজকে গায়ে হলুদের ডেকোরেশনে নোহা তেঁতুল দিয়ে কিছু একটা বানাবে।

ইশা মুখটা থমথমে করে রেখেছে।নোহা বার কয়েক তাকে প্রশ্ন করে,
” কাল দাভাই তাকে কেন ঘরে থাকতে বলেছিলো?দাভাই তাকে আলাদা করে কি বলেছে?কেন দাভাই নওরিনের উপর এতো রাগ করেছে?আরো কতো প্রশ্ন”…ইশা একটা প্রশ্নেরও উওর দিচ্ছে না।

তিনজন রমনি পুকুরের পারে পা ভিজিয়ে বসে পরে….উদ্দেশ্য সুখ দুঃখের গল্প করা।নোহা তো ইশাকে চেপে ধরে রেখেছে…যতোক্ষন পর্যন্ত সে না বলবে “দাভাইয়ের সাথে কি কথা হয়েছে ততোক্ষণ তাকে ছাড়বে না”।দরকার পরলে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দেবে ইশাকে।ইশা ভয়ে চেচিয়ে উঠছে।সে সাঁতার জানে না।নোহাও জানে না।তারা এনিয়ে বেশ ঝগড়া বাঁধিছে।ইশা বলবে না আর নোহা ছাড়বে না।

হটাৎ করে তাদের অবাক করে দিয়ে নওরিন পুকুরে ঝাপ দেয়।দুইজন বিস্ফোরক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পানির দিকে…..

চলবে…..

(দয়া করে একটু কষ্ট করে পড়েনিন আজকে রিচেক দেওয়ার একদম সময় পাই নি।কালকে পরীক্ষা আছে দোয়া করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here