#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৬
-”যা করছেন ভেবে করুন। আমি কিন্তু আজ পিছ পা হবো না। কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিবো আমার পাওনা।”
একথা বলে তিতাস ফিক করে হেসে দিলো। এতক্ষণ গম্ভীর ভাবটা ধরে রাখলেও সেটা আর অটুট রাখতে পারল না সে।
ভোরের মুখটা দেখে তার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। সিনিয়র বউটা আজ ভীষণ ক্ষে’ পে’ ছে। তাতে এই রুপে তাকে মন্দ লাগছে না বরং বউ বউ রুপ ফুটে উঠেছে। তবে পরীক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সে সত্যিই নিয়েছে। কারণ পিয়াসের মৃ/ত্যু/র পর সে না পেয়েছে একদন্ড শান্তি আর না একটু স্বস্তি। ঝামেলা পোহাতে পোহাতে সে অতিষ্ঠ। ওর মনে সর্বদা যুদ্ধ চলছে সুখ এবং স্বস্তির। রোজকার এসব ঝামেলায় আদৌও পড়াশোনা হয়? এটা কী ক্লাস ওয়ানের পড়া? তাছাড়া, নিজের কথায় ভাবার সময় নেই সেখানে পড়াশোনা কীভাবে হবে?কতদিন বা চলবে এভাবে? গতকাল তার কানে পৌঁছেছে ওর বাবা সবদিক থেকে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। উনার ব্যবসার অবস্থাও বেগতিক। এমন চলতে থাকে ওদের পথে বসতে হবে। সবটা স্বাভাবিক করলে হলে তাকেই হাল ধরতে হবে। যদিও এখন সে নিজেকে বড্ড বেশি পরিশ্রান্ত অনুভব করে। এসব থেকে মুক্তি পেতে তার প্রাণটা আয় চায় করে। গা ঢাকা দিতে ইচ্ছে করে, রোজকার ঝামেলা থেকে। কিন্তু পারে কই, দায়িত্বের বোঝা এখন তার কাঁধে। এই দায়িত্ব তাকে এক পাও সামনে এগোতে দেয় না। শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখে একই স্থানে।
এজন্য নিরুপায় হয়েই মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছে পরিস্থিতির নির্মম কড়াঘাত। ভেতরে ভেতরে হচ্ছে দ/গ্ধ। এসব ভেবে সে একদম নিশ্চুপ হয়ে গেল। ওকে হঠাৎ নিশ্চুপ দেখে ভোর ভ্রু
কুঁচকে তাকিয়ে রইল। তিতাসের মতি-গতি বোঝার আপ্রাণ
চেষ্টা চালাচ্ছে সে। কিন্তু ভোরের প্রয়াসে বিঘ্ন ঘটিয়ে তিতাস চটজলদি তার শাড়ির আঁচলটা তুলে কাতুকুতু দিতে লাগল।
অকস্মাৎ এহেন আক্রমণে ভোরও হতবাক। তাৎক্ষণিক খুব শক্তি প্রয়োগ করেও সে ব্যর্থ। ততক্ষণে তিতাস স্বজোরে এক ধাক্কা দিয়েছে বিছানায়। সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে উঠার আগেই
তিতাস পুনরায় তাকে কাতুকুতু দিতে থাকল। ভোর থামাতে চায়লেও পারল না। একপর্যায়ে কাতুকুতুর চোটে সেও হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগল বিছানার মধ্যেখানে। তাদের হাসির কলবরে মুখোরিত হলো বদ্ধ রুমের চারিপাশ। খানিকবাদেই তিতাস ভোরকে নিজের খুব কাছে টেনে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলল,
-”রাগের বশে আদরের তাল টানলাম না। হিতে বিপরীত হতে পারে তাই ছাড় দিলাম। ”
-”আসলেই কী তাই? নাকি অন্যকিছু?”
তিতাস জবাব না দিয়ে কেবল হাসল।ভোর জবাবের আশায় তার মুখ পানে চেয়ে আছে। আজকাল তিতাসকে তার বড্ড অচেনা মনে হয়। হয়তো পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে। সেও মানুষ। তার উপর আজকাল খুব বেশি চাপ যাচ্ছে এটা সেও বুঝে। কিন্তু পরিস্থিতির লাগাম যে তার হাতেও নেই। সেও যে নিরুপায়। ভোরের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিতাস মৃদু স্বরে ডাকল,
-”ভোর!”
-”হুম।”
-”আপনি আমার মানসিক প্রশান্তি হবেন?”
-”না, আমি তোর সুখ হবো। তোর কষ্ট নিবারণের মুখ্য কারণ হবো। তোর ঠোঁটের হাসি হবো।পরিশেষে তোর রাজ্যের রাণী হবো।”
-”তবে আমি কাছে আসলে কেন অস্বস্তি ফুটে ওঠে আপনার
অঙ্গভঙ্গিতে?ওই চোখজোড়া কেন জানান দেয় অন্য কথা? আপনার দুই হাত কেন ব্যস্ত হয়ে পড়ে আমাকে ধাক্কা দিতে।
যেন দূরে সরার নীরব আহ্বাণ। আমি বয়সে ছোট বলেই কি এত অস্থিরতা, নাকি অন্যকিছু চাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা?”
-”ব্যাপারটা তা নয়। আসলে..!”
-”শাড়ির আঁচল ফেলে শরীরের প্রতি আকৃষ্ট করানো একটা
ভালো বউয়ের গুরু দায়িত্ব হতে পারে না। যদি মনে সামান্য ভালোবাসাও থাকে তাহলে ওই চোখ বলে দেয় অনেক কথা। আমি এতটাও বোকা নই ভোর, বুঝি অনেক কিছুই। এজন্য আপনাকে আরো সহজ হতে সময় দিচ্ছি। তারমানে এই না, আমি একজন দূর্বল পুরুষ।”
-”আসলে তুই কাছে আসলে আমার মনে হয় কেউ আমাদের দেখছে। আমার ষষ্ঠী ইন্দ্রীয় জানান দেয়, কোন পুরুষ মানুষ আমাকে তীক্ষ্ণ নজরে গিলে খাচ্ছে। আমার শরীরের প্রতিটা ভাঁজে কারো দৃষ্টি ঘুরছে। কেউ আমাদের একান্ত মুহূর্তটাকে
নজরবন্দি করছে। ঠিক এই কারণেই আমি চায়লেও সহজ হতে পারি না। অস্বস্তিতে ডুবে মরি, নিজের অজান্তে তোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলি।”
-”আপনার ধারণা সঠিক। আর সত্যি সত্যি আমাদের উপরে কেউ নজর রাখত। আমার রুমে আপনার প্রতিরক্ষার সকল ব্যবস্থা সেইই নষ্ট করেছিল। তবে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি আমার রুমে প্রবেশও করেছিল। অথচ এটা কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ অজ্ঞাত কেউ রুমে প্রবেশ করলেই সাইরেন বেজে উঠবে। এমনকি সঙ্গে সঙ্গেই আমার কাছে একটা পর একটা এলার্ট মেসেজ আসতেই থাকবে। আমি সেভাবেই আপনাকে
দূর থেকেও নিরাপত্তা দিতাম।কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে সেটাতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমি ঠিকও করেছিলাম। কিন্তু কেউ
সেটা পুনরায় নষ্ট করার ফন্দি এঁটেছিল।যদিও আমি এখনো জানতে পারি নি, সে কে? জেনে যাবো যথাশীঘ্রই। তবে হ্যাঁ, এই বাসায় এমন কিছু ঘটবে না নিশ্চিন্তে থাকুন।”
এসব শুনে ভোর আর একটা টু শব্দও করল না। শুধু চোখ বন্ধ করে ওর বালিশে মাথা রাখল। আজকাল তার বড্ড ইচ্ছে করে, আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই বরের কাছে আহ্লাদী আবদার করতে। কারণে অকারণে তিতাসকে প্রচন্ড জ্বালাতে, রাগিয়ে দিতে। ‘ভালোবাসি’ বলে জড়িয়ে ধরে তার
প্রশস্ত বুকে মাথা রাখতে। পুরুষালি শক্ত হাতের আঙুলে ওর আঙুল গুঁজে রাতের সোডিয়ামের নিয়ন আলোয় হাঁটতে।
নদীর পাড়ে বসে কাঁধে মাথা রেখে ঢেউয়ের নাচন উপভোগ করতে। বেলাশেষে তার ক্লান্ত মুখের ঘামার্ত কপালে স্বযত্নে
চুমু এঁকে দিতে। জোছনা বিলাস করতে করতে একই মগে দু’জন কফির স্বাদ নিতে। ঘুমানোর আগে চুলে বিলি কেটে দেওয়ার আবদার জুড়তে। এমনকি তিতাসের নিষিদ্ধ স্পর্শে বারংবার শিহরিত হতে। এসব চাওয়া তার অপূর্ণ রয়ে গেছে।
তিতাস বয়সে ছোট বলেই হয়তো এসব সংকোচ কাজ করে।
আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে। আচ্ছা তিতাসের
জায়গায় পিয়াস হলে কী এমন মনে হতো? বোধহয় না। সে হয়তো বুঝতো ওর গোপন কিছু আকাঙ্খার কথা। যেমনটা করেছিল বিয়ের দিন গাড়িতে বসে। যদিও এখন মাঝে মাঝে তার মন বলে এসব আবদারগুলো তিতাসের সামনে প্রকাশ করতে। তাকে আকার ইঙ্গিতে বোঝাতে।কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়, তিতাস যদি ভুল বোঝে। যদি মুখের উপরেই বলে বসে, “এসব আপনাকে মানায় না ভোর।। এসব ছেলেমানুষী এই
বয়সে বেমানান।” আচ্ছা তার চাহিদা কী খুব বেশি? ডাক্তার বলে কী সব শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিতে হবে? দুইবার বিয়ে হয়েছে বলে কি শখ পূরণ করতে পারবে না? বয়সে ছোট ছেলেকে বিয়ে করার অপরাধে কী সারাজীবন ভুগতে হবে?
কখনো কী পারবে না তিতাসের সঙ্গে সহজ হতে? ওর নারী সত্তা তো বাকিদের মতোই চায় স্বাভাবিক জীবন, সংসার।
এত অপূর্ণতা কী কখনো পূর্ণতার রুপ পাবে না? তিতাস কী কখনো তাকে বুঝবে না? সে মেয়ে, আগ বাড়িয়ে কীভাবেই বা বলবে, ”চল তিতাস আমরা প্রণয়ের বি/ষ পান করি। এই
প্রেমসুধা গ্রহন করে হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটায়। মরিয়ে হয়ে যায় একে অপরের প্রতি।”
একান্ত নিজের ভাবনায় বিভোর থাকতে থাকতে ভোর কখন ঘুমিয়ে গেছে। তিতাস পাশে নেই, ভোরকে ঘুমাতে দেখে উঠে চলে গেছে। রাত এখন বারোটা সাত। তিতাস আগের বাসায়
এসেছে তাও চুপিচুপি। ঘন আঁধারে ডুবে আছে চারিপাশ। বাসায় কারো অস্তিত্ব নেই, শূন্যতা বিরাজ করছে পুরো বাসা জুড়ে। তিতাস সময় নিয়ে নিজের পরিকল্পনা মাফিক কাজ সেরে বেরিয়ে এলো। মোড়ের দিকে তার গাড়ি দাঁড় করানো।
পাশেই গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছে রবিন। ছেলেটাকে ঘুম থেকে টেনে তুলে এখানে এনেছে সে। কারণ তারা এখন যাবে শাহিনার অবস্থানরত বাসায়। রোজাকে সে তার কাছে এনে রাখবে নয়তো শাহিনা তাকে অযত্নেই মেরে ফেলবে। তিতাস আর রবিন সেখানে গিয়ে বাসার পেছনের দিকে যেয়ে প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করে। অতঃপর তারা যখন ভেতরে প্রবেশ করতে উদ্যত হয় তখন পরিচিত এক কন্ঠস্বর শুনে থমকে যায়। তারা দ্রুত নিজেদের বাঁচাতে থামের পেছনে লুকিয়ে যায়। আর থামের আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখে খুব পরিচিত এত বেইমানের চেহারা। তখন রবিন অতি সন্তর্পণে ফিসফিস করে বলে,
-”নিশান স্যার এখানে কেন? উনি না দেশের বাইরে ছিলেন?”
-”প্রাক্তন প্রেমিকার টানে ফিরে এসেছে।”
-”উনার প্রাক্তন প্রেমিকাটা আবার কে?”
-”আমার চাচী শাহিনা সুলতানা।”
(বিঃদ্রঃ- আজকের এই পর্বে আপনাদের রেসপন্স আশা করছি।)
To be continue……………!!#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৭
-”আমার চাচী শাহিনা সুলতানা।”
-”মানে? উনি নিশান স্যারের প্রাক্তন? এটা কীভাবে সম্ভব?”
-”অসম্ভবের কী হলো?”
-”আমার হিসাব মিলছে না স্যার।”
-”মিলানোর চেষ্টা করো মিলে যাবে। ”
-”নিশান স্যার দেশে কবে ফিরলেন? ভোর ম্যাম জানেন?”
-”ফিরেছে মাস দেড়েক হবে। না ভোর এখনো কিছু জানে না। কারণ নিশান এসে গা ঢাকা দিয়ে আছে।”
একথা শুনে রবিন হাঁপানি রোগীর মতো হাঁপাতে লাগল। সে এটাও ভাবছে, তিতাস তার সঙ্গে মজা করছে কী না। কিন্তু ওর মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে না সে মজা করছে। বরং চাপা ক্ষোপে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে নিশানের দিকে। এই দৃষ্টি মোটেও মঙ্গলজনক নয়। বরং এটা ধ্বংসের দ্বার-প্রান্তরে পোঁছানোর নীরব হুমকি। রবিন তিতাসের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো ড্রয়িংরুমের দিকে। সেদিকে তাকিয়েই সে
ভাবগ্রাহী, সে ভোরের সহকারী হয়ে আছে বছর দুয়েক হতে যাচ্ছে। ভোরের বাসায় প্রত্যেকটা সদস্যকে সে চিনে, জানে। কার ব্যবহার কেমন সুক্ষভাবে স্মরণেও রেখেছে। নিশানকে তার কখনোই খারাপ মনে হয় নি। বরং মিশান (ভোরের বড় ভাই) এর চেয়ে নিশানকে অনেক নম্রভদ্র বলে জানে। কারণ এই নম্রতা ওর চলনবলনে সুস্পষ্ট।নিরহংকারী নিশান বাসার সকলের স্নেহের পাত্রও বটে।মিশান ও নিশান দুই ভাই হলেও তাদের বনিবনা খুব একটা সুবিধার নয়। কেমন যেন লাগাম ছাড়া মনে হলেও বাকিদের সাথে ঠিকঠাক। এতদিনের এত পরিচিত কারো এমন রুপ দেখে রবিন হতবাক। তাই সে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-”স্যার বোধহয় আমাদের কোথাও বুঝতে ভুল হচ্ছে। আমার জানামতে, নিশান স্যার এমন ধরনের ছেলে নয়।”
-”আমি কি বলেছি নিশান খারাপ? ”
-”না।”
-”তবে?”
রবিনের এবার নিজেকেই পাগল পাগল লাগছে। তিতাসের কথার মর্ম বুঝতে সে অক্ষম। প্রাক্তন হলেই খারাপ হবে এর কোনো মানে নেই। বরং এটা অযৌক্তিক অবান্তর এক যুক্তি।
কারণ প্রাক্তন মানে একটি ব্য/থা। ক্ষেত্রবিশেষ এই ব্য/থাটা কারো ক্ষেত্রে গভীর তো কারো কাছে অতি নগন্য। কেউ বা এই ব্য/থাটা আজীবন বুকের অভ্যন্তরে পুষে রাখে তো কেউ
স্মরণেও আনতে চায় না। কারো প্রাক্তনের অভিজ্ঞতা সুমিষ্ট তো কারো ক্ষেত্রে জঘন্য। যদিও বেলাশেষে ব্যর্থ প্রেমের গল্প
রচিত হয় অহরহ। আর এ পৃথিবীর বুকে প্রণয়ের ছলে কেউ হাসি মুখে ঠকায় তো কেউ হাসিমুখে জেনে বুঝে মেনে নেয়। তবুও তিতাসের পাল্টা প্রশ্নে রবিন চিন্তিত। তার মস্তিষ্ক জুড়ে এখন একটা কথায় ঘুপরপাক খাচ্ছে, শাহিনার সঙ্গে নিশান সম্পর্কে জড়িয়ে কবে এবং কীভাবে?কী এমন ঘটল যে এক
বাচ্চার মা হয়েও প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে শাহিনা।
তবে মহিলা প্রচুর ধূর্ত নিশ্চয়ই অন্য কোনো কাহিনি লুকিয়ে আছে। তাছাড়া, শাহিনা অজপাড়াগাঁয়ের আর নিশান শহুরে
শিক্ষিত ছেলে।ওরা দু’জন দুই মেরুর পথিক তাহলে কীভাবে কী? এছাড়াও,নিশান তো অবগত এটা তার বোনের সংসার। কেনই বা সে যেচে বোনের সংসারে আ/গু/ন লাগাচ্ছে? এর ফলে ভোর কত কষ্ট পাবে সে কী ভাবছে না? নাকি ভোরকে কষ্ট দেওয়া তার মূল উদ্দেশ্যে। রবিন এসব ভাবনার ক/র্তন
ঘটিয়ে বিরক্তমাখা দৃষ্টিতে শাহিনাকে দেখল। অদূরের থাকা এক সোফায় সে কফির মগ হাতে বসে আছে। নিশান তাকে
কিছু বলছে আর সে বিরক্তমাখা মুখে তাকিয়ে আছে। তখন উপর থেকে রোজার ডাক শোনা গেল।শাহিনা তখন চেঁচিয়ে
বললেন,
-”আর একটা টু শব্দ করলে তোর ডাকাডাকি জন্মের মতো ঘুচিয়ে দিবো, বেয়া/দব একটা। এত মার খেয়েও লজ্জা হয় না ,ম/রে গিয়ে শান্তিও দেয় না। কতদিন বললাম বৈদ্যুতিক সুইচে চেপে তার মধ্যে আঙুল দিয়ে আমাকে চিরতরে মুক্তি দে। সবাই যেনো ভাবে দূঘর্টনা। কিন্তু না তা করবে কেন, সে তো বেঁচে থাকবে আমার হাঁড় মাংস জ্বালিয়ে খেতে। মন চায়
সারার মতো শ্বাসরোধ করে মা/রি।”
বাসায় কেউ নেই ভেবে শাহিনা তার মনের কথাগুলো বলেই যাচ্ছেন। নিশান নীরব শ্রোতা। রবিন আর তিতাস এসব শুনে হতবাক। তখন রোজা কাঁদতে কাঁদতে উত্তর দিলো,
-” আম্মু আমি ওয়াশরুমে যাবো। প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো।”
-”পারব না, তুই একা একা যা।”
-”আর ডাকব না আমি এবারই শেষ। বিছানা থেকে নামতে পারছি না আমি, আমার হুইলচেয়ার দূরে রাখা। তুমি এসো আম্মু, প্রমিস আজ রাতে খাইয়ে দিতে বলব না।”
একথা শুনে শাহিনা রাগে গজগজ করে রোজার কাছে চলে গেলেন। তারপর দু’ ঘা বসিয়ে দিলেন রোজার পিঠে। রোজা ছটফটিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে দিলো। কারণ শব্দ করলেও আম্মু আবার মারবে। সেদিনের মতো করে জোরপূর্বক মুখে ওড়না ঢুকিয়ে চিৎকার করে কান্না করার শা/স্তি দিবে। তারপর এক হ্যাঁচকা টানে রোজাকে উঠিয়ে শাহিনা ওকে ধরে ওয়াশরুমে রেখে আসল। অতঃপর হুইলচেয়ারটাও সেখানে রেখে উনি
হনহন করে বেরিয়ে গেলেন। এখন বাকি কাজ রোজা একা একা সামলে নিতে পারবে, তার অভ্যাস আছে। ড্রয়িংরুমে এখন শুনসান নীরাবতা। নিশান কিছুক্ষণ আগে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছে আর শাহিনা তার রুমে। এই সুযোগেই তিতাস রবিনকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে পনেরো মিনিটের মধ্যেই রোজাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। তিতাসের বুকের সঙ্গে লেপ্টে আছে ছোট্ট রোজা। তার গলা জড়িয়ে ধরে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে তিতাসের মুখপানে। তিতাস আর কালবিলম্ব না করে গাড়ি নিয়ে ওদের ফ্ল্যাটে চলে এলো। তিতাসের মা- বাবা রোজাকে দেখে বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন। রোজা উনাদের দেখে কেঁদে ওর আম্মুর নামে বেশ কয়েকটা অভিযোগ করল। একে একে বলেও দিলো শাহিনা ওর সঙ্গে কী কী করেছে, কতবার মেরে/ছে। পিয়াস, তিতাস আর সারাকে দেখে ছোট্ট রোজাও তিতাসের বাবাকে ‘ বাবা’ ডাকে আর মাকে বড় মা। উনারাও খুব ভালোবাসেন বাঁচাল রোজাকে। তোতাপাখির মতো বকবক করে বাসাটা মাতিয়ে রাখা ছোট্ট পাখিটাকে। পিয়াসও নেই, সারাও নেই, বর্তমানে
তিতাস আর রোজায় হচ্ছে উনাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।
এই বাসায় জ্বলতে থাকা জ্বলন্ত প্রদীপ। উনাদের চাওয়া এই প্রদীপ দুটো যেন চিরকাল এই বাসা আলোকিত করে রাখে।
রোজা বাবা ও বড় মাকে পেয়ে গল্প জুড়ে দিয়েছে। তিতাসের মা রোজার পিঠে মলম লাগিয়ে দিচ্ছেন। পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে মেয়েটার ফর্সা পিঠে।শাহিনা ওর ব্যবহারে বুঝিয়ে দিচ্ছে, সে মা নামের কলঙ্ক। নয়তো এমন ফুলের গায়ে কেউ এভাবে হাত তুলে, কষ্ট দেয়। তখন তিতাস রোজাকে রেখেই রবিনকে সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিল। এখন খাবারের প্লেট হাতে
বাবা- মায়ের রুমে প্রবেশ করল। তারপর রোজার পাশে বসে
ইয়া বড় হা করে বলল,
-”আম্মু খবরদার বলছি ওই টেপিকে একটুও দিবা না। এখন চটজলদি আমাকে খাইয়ে দাও। আহা, স্পেশাল বিরিয়ানি।”
-”আমাকেও একটু দাও ছোট মিয়া।”
-” তোর মাকে গিয়ে বল কিনে দিতে, এখন যা ভাগ।”
-”আম্মু কিনে দিবে না বরং বললেই মারবে।”
-”একটা শর্তে দিবো যদি তুই রাজি থাকিস।”
-”কি শর্ত?”
-”তুই এখন থেকে আমাদের সঙ্গে থাকবি, ভুলে তোর আম্মুর কাছে যাওয়ার আবদার করতে পারবি না, রাজি?”
-”আচ্ছা, এমনিতেই আম্মু আমাকে ভালোবাসে না। বারবার মরে যেতে বলে। আমি না থাকলেই নাকি আম্মু খুব ভালো থাকবে।”
-”যদি এই শর্তের নড়চড় করিস তোকে সিলিংয়ের সঙ্গে বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখব, মনে রাখিস।”
-”আচ্ছা।”
তিতাসের আম্মু হেসে প্রথম লোকমা রোজার মুখেই দিলেন।
তা দেখে তিতাস মুখ ভেংচি দিয়ে পরের লোকমা মুখে পুরে ওর আম্মুকে বলল,
-”আম্মু বাকিটুকু তোমার স্বামী আর রোজাকে খাইয়ে দাও।
ভদ্রলোক যেভাবে তাকিয়ে আছে পেট খারাপ হবে নিশ্চিত।
আর আমি আমার বউয়ের কাছে গেলাম। তোমাদের এসব ঝামেলায় বউটাকেও সময় দিতে পারি না, কবে যে আমাকে ছেড়ে চলে যায়, কে জানে।”
তিতাসের বাবা জবাবে কিছু বলতে গেলে তিতাস হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে হাঁটা ধরল। আর ওর মা সত্যি সত্যিই ওর বাবার মুখে খাবার পুরে রোজার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাসিতে ফেটে পড়লেন। একপর্যায়ে মুখে খাবার নিয়ে ওর বাবা হেসে ফেললেন। কারণ তিতাস যাওয়ার আগে উনাকে ইশারায় বলে গেছে” খুশি তো? এবার হাসো।” তার এহেন কান্ডে উনি সত্যিই না হেসে পারলেন না। ততক্ষণে তিতাস শিষ বাজিয়ে রুমে ঢুকে দেখে ভোর আধশোয়া হয়ে বসে বই পড়ছে। ঘুরে বসার কারণে তিতাসকে দেখতে পায় নি। তিতাস নিঃশব্দে পা টিপে ভোরকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে গিয়ে বলল,
-“ম্যাও।”
-”ঢং করা হয়ে গেলে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়।”
-”না ঘুমিয়ে জেগে কেন শুনি?”
-”আগামীকাল থেকে হসপিটালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন ছাড় আমায় উঠব।”
-”উহুম না, ছুটিতে আছেন তাহলে হসপিটালে কেন?”
-”ছুটি ক্যান্সেল করেছি।”
-”কেন?”
-”সেই কৈফিয়ত তোকে দিবো না। আর তোর ঢং আমার সহ্য হচ্ছে না, ছাড় বলছি, ছাড়!”
-”আশ্চর্য, আমি আবার কি করলাম?”
-”আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গিস না, আমার থেকে দূর সর। ঘৃনা হচ্ছে তোকে দেখে। তোর ছোঁয়া আমার শরীরে কাঁটার মতো বিঁধছে। যার শরীরের টানে বার বার ছুটে যাস সেখানেই যা।”
একথা শুনে তিতাসের শক্ত বাঁধন আপনাআপনিই ঢিলে হয়ে গেল। সে বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ভোরের দিকে। এসব বলার কারণ তিতাসের বোধগম্য হচ্ছে না। তাই সে জিজ্ঞাসা করতে উদ্যত হলেই ভোর তাকে ঠেলে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। আর তিতাস সেভাবেই শুয়েই হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
To be continue………………..!!#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৮
তিতাস সেভাবে শুয়েই হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এসবের মানে হয়? মেয়েদের এই এক সমস্যা কোথায় কী শুনে এসে যাচাই বাছাই না করে রিমান্ড শুরু করবে। রিমান্ডে নিতে তো বাঁধা নেই। অ’ ন্যা/য় করলে রিমান্ড নয় ফাঁ/সি দিলেও মঞ্চুর করা যাবে। কিন্তু অপরাধী জানেই না তার কী অপরাধ? সে আসলে করেছেটা কি? বলা নেই কওয়া নেই হুট করে তাকে ফাঁ/সি/র মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। না বলার সুযোগ দিচ্ছে; আর না ভোর নিজে বোঝার করছে।এ আবার কেমন ধারার বিচার? বিচার শব্দটা ব্যবহার করাও তার ভুল হচ্ছে। কারণ ভোর তার বিচার করছে না বরং ”ডাইরেক্ট একশান” নিচ্ছে।
যাচাই-বাছাই না করে অপরাধী বানিয়ে কঠিন শা/স্তি জারি করেছে। আর ভোরের আচানক এহেন আচরণ সে মানতেও
পারছে না। তাছাড়া সে কী কী যেন বললো, “ওর ঘৃণা হচ্ছে, তার ছোঁয়া ওর শরীরে কাঁটার মতো বিঁধছে। আর সে রোজ যার শরীরের টানে ছুটে যায়, সেখানে যেতে।”
এসব অবান্তর কথা বলার মানে হয়! মেয়েটা নিশ্চিত পাগল হয়ে গেছে। সব পাগল তার কপালেই কেন জুটে, কে জানে।
কিন্তু কথা হচ্ছে, সে কারো শরীরের টানে ছুটে যায় একথাটা ভোরকে জানাল কে? কে বুঝিয়ে এসব কথা? হুম, তারমানে
এখানে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির হাত আছে। সেই ধূর্ততার সঙ্গে কলকাঠি নেড়েছে। না, তার এই জীবনে স্বস্তি পাওয়ার আর হবে না।একটার পর অন্য ঝামেলার আর্বিভাব হতেই আছে। মুখ্য কথা, সিনিয়র বউটাও যদি অবুজের মতো করে তাহলে কীভাবে হবে। তার তো একটু বোঝা উচিত। এসব ভেবে সে শার্টের বোতাম খুলে একদিকে ছুঁড়ে মারল। ঘার্মে ভেজা শার্ট মেঝেতে লুটোপুটি খেতে লাগল।তারপর সে দুই হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে ভোরের অপেক্ষা করতে লাগল।প্রায় মিনিট দশেক পরে ভোর চোখ মুখ লাল করে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। ভীষণ কেঁদেছে চেহারাতে তা স্পষ্ট। তিতাস চটজলদি উঠে তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে মুখ কাঁচুমাচু করে বলল,
-“নুডলস খাবেন, রান্না করে দেই?”
ভোর জবাব না দিয়ে পাশ কাটিয়ে তোয়ালে না নিয়ে আঁচলে মুখ মুছল। ভাবখানা এমন যেন তিতাসকে দেখতেই পায় নি।
তিতাস পুনরায় ওর পথ আঁটকে জোরপূর্বক হেসে বলল,
-”আমি কি করেছি? কেউ কিছু বলেছে? বলুন আমাকে, না বললে বুঝবো কীভাবে?”
ভোর ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে দেখে রাত তিনটা বাজে।
সে অহেতুক তর্কে না জড়িয়ে ওপর পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। ওর নীরবতা তিতাসের সহ্য হলো না। সে ফ্রেশ না হয়েই তার সিনিয়র বউয়ের রাগ ভাঙাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ভোর জবাব দিচ্ছে না দেখে আরো উতলা হয়ে উঠল। বসে থেকেই গলার স্বরে মধু ঢেলে কয়েকবার ডাকল,
-”ভোর শুনছেন? এই সিনিয়র বউ এদিকে তাকান না প্লিজ।”
ভোর নেত্রজোড়া বন্ধ করে অনড় হয়ে শুয়ে আছে। যেন তার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। অথচ সে জেগে থেকে ঘুমের ভান করছে। তার মুখ থমথমে। ভাবভঙ্গি প্রকাশে অনিচ্ছুক। তার চোখের কোণে অশ্রুফোটাঁ চিহ্ন রেখে নিমিষেই বালিশের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। শব্দহীন সেই কান্না। ওকে কাঁদতে দেখে তিতাস উঠে ভোরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদুরে কন্ঠে বলল,
-”সিনিয়র বউদের এত রাগতে নেয় জুনিয়র বর’রা এতে কষ্ট পায়। তাদের বুকের মধ্যে যন্ত্রণা হয়, নিঃশ্বাস আঁটকে আসে। জুনিয়র বররা তাদের বউকে খুব ভালোবাসে, সন্মান করে। অন্যের শরীরের প্রতি তাদের টান নেই। তারা দু’মুখো হতেও পারে না। কারণ তাদের মস্তিষ্কে সর্বদা গেঁথে থাকে বউ নামক ভাইরাসের কথা। যে ভাইরাস তাদের দেহ ও মনে বিশাল স্তর জুড়ে জায়গা দখল করে আছে। আর নানান ঝামেলায় ওরা সময় দিতে না পারলেও বউকে তারা হেলা করে না, তুচ্ছ’ও ভাবে না। প্লিজ এভাবে কাঁদবেন না,আমাকের মারুন, বকুন, যা ইচ্ছে করুণ তাও কান্না বন্ধ করুন প্লিজ।”
-” ঘুমা নয়তো পাশের রুমে চলে যাবো।”
-”বউ কাঁদলে ঘুম আসে?”
একথা বলে সে ভোরকে আরো শক্ত করে বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো। ঘাড়ে মুখ ঘষে চুমু একেঁ দিলো পরপর।তার এক হাত বিচরণ করছে ভোরের পেটে। আজকে তিতাস তার অজান্তে ভোরের একটু বেশিই কাছে চলে এসেছে। হয়তো ঘনিষ্ঠ হতে চাচ্ছে, নিষিদ্ধ কোনো চাওয়াতে। তার রাগান্বিত বউয়ের রাগ
মোচন করতে চাচ্ছে, আদরের তাল টেনে।ভেসে যেতে চাচ্ছে
অচিন এক সুখরাজ্যে। তিতাস যখন ধীরে ধীরে তার বাসনা পূরণের পথে অগ্রসর হচ্ছিল ঠিক তখনই ভোর পায়ের নখ বিঁধে দিলো তিতাসের পায়ের পাতায়। একই সঙ্গে স্বজোরে এক ধাক্কা দিলো তিতাসের প্রশস্ত বুকে।তিতাস ব্যথাতুর শব্দ করে উঠে বসল। তাৎক্ষণিক ঘোর কেটে সে ভোরের দিকেই তাকিয়ে আছে। ভোর পূর্বের মতোই পাশ ফিরে শুয়ে আছে।
তখন তিতাস রাগ না করে মনে মনে বলল,
-”তুই আমার একমাত্র বউ, কোথায় আমাকে জড়িয়ে ধরবি, ভালোবাসবি। এমন রোমাঞ্চকর প্রহরে আমাকে সঙ্গী করে রোমান্টিকতার সাগরে ভেসে বেড়াবি। আদরে আদরে উন্মাদ করে তুলবি আমায়। তা না করে তুই কেন রাগ করবি, খামচি দিবি, ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবি?”
এসব ভেবে তিতাস মুখটা করুণ করে বসে রইল।কয়েকবার
জিজ্ঞাসা করলেও ভোর টু শব্দ করল না। এভাবেই কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর, ভোর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে উঠল,
-”বাইরে থেকে শূন্য হাতে ফিরেছিস বোধহয় তাই না?এতদিন তো ভুলেই বসেছিল তোর বউ আছে?আজ হঠাৎ এত কাছে
টানছিস, ওহ হো শরীরে টান পড়েছে বুঝি?”
ভোরের কথা শুনে তিতাস নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইল। এমন খোঁচা মারা কথা সে সহ্য করতে পারে না। রাগে গা নিশপিশ করে। এখন ভোরের স্থানে অন্য কেউ হলে এতক্ষণে থাপ্পড় বসিয়ে দিতো। শুধু ভোরের উপর রাগ দেখাতে পারে না বলে নিজেকে সামলে সুন্দরভাবে জিজ্ঞাসা করল,
-”আপনার সমস্যা কী বলবেন আমায়?”
-”আমার কোনো সমস্যা নেই তো।”
-”তাহলে কাছে গেলে দূরে সরান দূরে গেলে কাছে টানেন, কেন? আমাকে মানুষ মনে হয় না? আমার অনুভূতির মূল্য নেই, এত তুচ্ছ আমি?
-”তোর জীবনে প্রেমিকা আর প্রেম কোনোটার অভাব আছে নাকি? তা কতজনের উপর অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছিস?”
-”তা ঘটাব কেন? তাছাড়া এই যুগে প্রেম করে না কে দেখান আমায়? সেই হিসেবে আমিও করেছি বিয়ের আগে। প্রেমের ছলে ইন্টিমেন্ট হয়ে কাউকে অবৈধভাবে প্রেগনেন্ট তো আর করি নি। আপনি নাহয় বিশ্বের সবচেয়ে নম্রভদ্র এবং পড়াকু এক মেয়ে। বরের জন্য জীবনের সবটুকু প্রীতি সৌহার্দ্য তুলে রেখেছেন। অথচ বর কাছে গেলে উশখুশানি আরম্ভ করেন।
যত রকমের রং ঢং আছে নিজের মধ্যে জাহির করেন। সেই
আপনিই আবার সুন্দরভাবে আমার দিকে আঙুল তুলে এক মনগড়া গল্প সাজিয়ে দোষী সাবস্তও করলেন। বিনাঅপরাধে
কথা দিয়ে আমাকে হিট করছেন, দূর্বল পয়েন্ট আঘাত করে মজা নিচ্ছেন। যত অপরাধই করি না কেন আপনি জিজ্ঞাসা করলে আমি সত্যিটাই বলি, ভবিষ্যতেও বলবো। আজকেও এর ব্যতিক্রম হতো না। তবে না জেনে দোষ দিয়ে অকারণেই আমাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তিটা আপনাকে পেতেই হবে ভোর, পেতেই হবে। যে কারণে আমাকে এভাবে ধাক্কা দিলেন আমি ঠিক সেই কাজেরই পূর্ণতা চাই, আর সেটা এই মুহূর্তে।”
-”আম আমার কথা শোন।”
-”উহুম না, আর কত? এবার যে দূরত্ব কাটানোর সময় এসে গেছে। রাগ বা জেদের বশে প্রাপ্য অধিকার চাচ্ছি না আমি। স্বজ্ঞানে স্বেচ্ছায় আমি আপনাকে কাছে পেতে চাচ্ছি ভোর, খুব কাছে। প্লিজ আমার আর ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিবেন না।”
একথা বলে তিতাস ভোরকে নিজের খুব কাছে টেনে নিলো।
আর ভোর হতভম্ব হয়ে নত মস্তকে বসে রইল। ততক্ষণে তার
ওষ্ঠে তিতাসের ওষ্ঠজোড়া রাজত্ব শুরু করছে। ভোর ভুলেও আজ বাঁধা সৃষ্টি করল না। বরং বিনাবিঘ্নে মেনে নিলো তার জুনিয়র বরের আবদার। অতঃপর তিতাসের স্পর্শে শিহরণ বয়ে আনল তার সর্বাঙ্গে। তারপর….তারপর…..তারপর…!
_____________________
পরেরদিন সকালে কানের কাছে তিতাসের ফোনটা ভাইব্রেট হতে লাগল। ফোন দেখে তিতাসের স্মরণে আসল, সে রাতে ফোনটা বাসায় ফেলে গিয়েছিল। তিতাস পাশ ফিরে ভোরের বন্ধ চোখজোড়ায় চুমু এঁকে, মিটিমিটি হাসল। বেশ আদুরে লাগছে ভোরকে দেখতে। ওর আদরে আদরে আদুরে ভাবটা ফুটে উঠেছে। এসব ভেবে হেসে সে ফোন হাতে নিয়ে বিরক্তই হলো। ফোনের স্ক্রিন জুড়ে জ্বলজ্বল করছে তার এক্স গফের (রুম্পার) নাম। ততক্ষণে কল কেটে যাওয়াতে তার এটাতেও
দৃষ্টি গেল, গতরাতে এই নাম্বারেই কথা হয়েছে তিন মিনিটের মতো। অথচ ফোন তার কাছেই ছিলো না। তিতাসের বুঝতে আর বাকি রইল না প্যাঁচ ঠিক কোথায় বেঁধেছে। সে ভোরের উপরে তার শরীরের সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে স্পিকার দিয়ে কলটা রিসিভ করল। হঠাৎ নিজের উপরে ভারি কিছু অনুভব করে
ভোরের ঘুমটা ভেঙে গেল। কিছু বলতে গেলে তিতাস ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে চুপ থাকার ইশারা করে একটা চুমুও খেলো।তখন শোনা গেল রুম্পার ন্যাকামিযুক্ত কন্ঠস্বর,
-” তিতাস, আমার জানপাখিটা কি করছো তুমি?”
-” এভারেস্টের চূড়ায় উঠে তোমার কথায় ভাবছিলাম সোনা পাখিটা।”
-” ওয়াও সো কিউট। রাতে কল রিসিভ করে কথা বলছিলে না কেন বাবু? আমি ভেবেছিলাম আমার কথা ভুলে গেছো। এজন্য আমাদের প্রথম মিট থেকে শুরু করে লং ড্রাইভের ঘটনা বলে মনে করাচ্ছিলাম। ওমা পরে দেখি সব না শুনেই কল কেটে দিয়েছো। জানো আমি ভয় পেয়েছিলাম, তোমার কিছু হলো ভেবে।”
-”তখন আমি না আমার দুষ্টু বউ টা কল রিসিভ করেছিলো। যাইহোক, আমাকে কল দিও না আমার বউ পছন্দ করে না। সে আবার মারাত্মক রাগী, পরে গালি টালি দিলেও আমার কিছু করার থাকবে না তাই সাবধান। এখন বাইই।”
কল কেটে তিতাস ভোরকে বলল এই মেয়েটা ওর এক্স গফ। বড় লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া ললনা। এদের পাখি ধরতে যেমন সময় লাগে না তেমনি ছাড়তেও।তার সঙ্গে ওর গভীর সম্পর্ক ছিলো না, আর না এখন আছে। শুধু সে কেনো, তার ছাব্বিশটা গফের কারো সঙ্গেই তার গভীর সম্পর্ক ছিল না। এরা শুধু টাইম পাসের মাধ্যম। তবে বর্তমানে ভোর এবং ওর মা ছাড়া সে কোনো মেয়েকে ওর জীবনে ঠাঁই দেয় নি, আর দিবেও না। কারণ এরাই তার মুখে হাসি, বাঁচার অবলম্বন।
To be continue………!!#প্রিয়_তুই
#নূরজাহান_আক্তার_আলো
#পর্ব_২৯
এখন সকাল আটটা বেজে চার মিনিট। ব্যস্তমুখর এ জীবনে সবাই যে যার কর্মে ব্যস্ত। তিতাসের বাবা নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়েছেন। গতরাতে উনি অনেক বড় ডিল সাইন করেছেন।
এবার আশা করা যাচ্ছে ভালো কিছু’ই ঘটবে। সব বাঁধা বিঘ্ন
পেরিয়ে নতুনভাবে সবটা শুরু করতে পারবেন। এতদিন উনি জানতেন, বাবারা ছেলেদেরকে অনুপ্রেরণা জোগান। ছেলের কাঁধে হাত রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দেন।একবার
ব্যর্থ হলে পুনরায় উঠে দাঁড়াতে সহায়তা করেন। কিন্তু তিতাস সেটা উল্টো করে দেখিয়ে। উনি সত্যি সত্যি মনোবল হারিয়ে ফেলেছিলেন, এসব ঝামেলায় সবকিছুকে হেলাও করতেন। কিন্তু তিতাসের একটা মেসেজ উনাকে নতুন উদ্যোগে চেষ্টা করার ইচ্ছে জাগিয়েছে। উনি বুঝেছেন উনার ছোট ছেলেটা উনার পাশে আছে, শক্তি রুপে। এতে যেমন নিজের কাজের প্রতি উনি মনোবল ফিরে পেয়েছেন, তেমনি মনের জোরও।
উনি চলে যাওয়ার পরে ভোর আর রোজা মিলে ফলের জুস
বানিয়ে গ্লাসে রাখল। দু’জন গল্প করতে করতে সিদ্ধ ডিমের
খোসা ছাড়াল। তিতাসের আম্মু রান্নাঘরে পরোটা ভাজছেন।
রোজা আর ভোর খাবার টেবিল সাজিয়ে ফেলেছে। এবার তিতাস আসলেই তারা খেতে বসবে। ইতিমধ্যেই ভোর গিয়ে তিতাসকে দুইবার ডেকেও এসেছে। কিন্তু তিতাস গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টার গুলোতে নজর বুলাচ্ছে, বিরবির করে পড়ছে। হাতে কলম তুলে নিয়ে খাতায় অগোছালোভাবে কীসব লিখছেও।
বেশ কিছুক্ষণ পর ঘড়িতে সময় দেখে একেবারেই রেডি হয়ে নিলো। এবার নিচে গিয়ে নাস্তা সেরেই বেরিয়ে পড়বে। এসব ভেবে সে শরীরে পারফিউম স্প্রে করে চুলগুলো ব্রাশ করল।
নিজেকে পরিপাটি দেখে ঘুরতেই দেখে ভোর দাঁড়িয়ে আছে।
তিতাসের মা তাকে পুনরায় পাঠিয়েছেন। তিতাস ওকে দেখে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কপালের মাঝখানে চুমু এঁকে মৃদু হাসল।
তারপর ভোরের নাক টেনে বলল,
-”’বেস্ট অফ লাক’ সিনিয়র বউ। শুভ হোক আপনার জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত।'”
-”একথা তো আপনাকে বলা উচিত ডাক্তার সাহেব।”
-”তো বলুন নিষেধ করেছে কে?”
ভোর জবাব না দিয়ে তিতাসের শার্টের কলার ঠিকঠাক করে পকেটে এক হাজার টাকা গুঁজে বলল,
-”সাবধানে যাবি, সাবধানে ফিরবি, অপেক্ষায় থাকব আমি।”
তিতাস তৃপ্তির হাসির হেসে সম্মতি সূচক মাথা নাড়াল। আজ সে ভীষণ খুশি। অনেকদিন পর নিজেকে কেমন হালকা মনে হচ্ছে। শরীর জুড়ে অন্যরকম অনুভূতির আভাস পাচ্ছে। সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে। চারপাশের সবকিছু রঙিন লাগছে। নব্য রুপে জীবনটাকে রংধনুর মতো রাঙাতে বড্ড ইচ্ছে জাগছে।
এসব ভেবে তিতাসের ওষ্ঠের কোণে হাসি ফুটল। সেই সঙ্গে দেখা গেল তার চোখে তৃপ্তির চাহনি। ভোর এবার তিতাসকে তাড়া দিয়ে নাস্তা করতে যেতে বলল। অতঃপর দু’জনে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়েছে, তখন ভোর থেমে গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল,
-”সত্যিই কি তোর ছাব্বিশটা গফ ছিলো?”
-”হুম, মিথ্যে বলতে যাবো কেন?”
-”এতগুলোকে সামলাতে পারতি?”
-”আমি সামলাতে যাবো কেন, আজিব।”
-”তো তোর গফদের অন্য কেউ সামলে দিতো?”
-”ওরে হিংসুটে বউ রে আপনি যা ভাবছেন তা নয়।”
-” তাহলে? ”
-”গফ মানে কি শুধু প্রেমিকাকেই বোঝায়?”
-”তা নয় তো কি?”
-”আমি সেই গফের কথা বলি নি। গফ মানে গার্ল ফ্রেন্ডকে বুঝিয়েছে। যাদেরকে খাঁটি বাংলায় বলে বান্ধবী, সহপাঠী। আপনারা মেয়েরা আসলেই একটু বেশিই বুঝেন। বারংবার প্রমাণ দেন, আপনাদের বুদ্ধি হাঁটুর নিচে। নিজে থেকে কিছু বোঝার চেষ্টা তো করবেনই না।আবার কেউ সঠিক বোঝাতে চায়লে তা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে উল্টো বুঝে বসে থাকেন।আপনিই
ভাবুন,সত্যি সত্যিই ছাব্বিশটা প্রেমিকা থাকলে ডাক্তারী পড়া হতো আমার? মেডিকেলের বই কী আসলেই এতটা সোজা?
তাছাড়া এসব করে বেড়ালে বাবা আমাকে আস্ত রাখত?গফ মানে আমি বান্ধবীকে বুঝি। তাই কেউ জিজ্ঞাসা করলে গফ বলে তাদের পরিচয় করায়। আমরা গফ’রা একথা জানেও।
এছাড়া চিপায় গিয়ে হাতাহাতি করার সম্পর্ক এদের কারোর সঙ্গে গড়া হয় নি আমার। যদি এমন করতাম ভাইয়া চাপকে সোজা করে দিতো।কারণ ভাইয়া এসব করত না আমাকেও
নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তবে মজা করে দু’একজনকে ডেয়ার টেয়ার নিয়ে ফুল দিয়েছি, চিঠি দিয়েছি। এসব কথা
আমার বাবা-মাও জানে। উনাদের রাগাতে ইচ্ছে করে এমন করতাম। এসব ছাড়া আমি খুব ভদ্র ছেলে। এমনকি আমার
বউটাকে পোড়া ঠোঁটে চুমু খাবো না ভেবে রেগুলার সিগারেট খাই না। তবে টেষ্ট মনে রাখতে মাঝেমধ্যেই দু’চার টান দিয়ে ফেলি। আর হ্যাঁ, গতরাতে যেসব কথা বলেছেন ভুলেও আর উচ্চারণ করবেন না। শুধু একটা কথা স্মরণে রাখবেন, এই তিতাস আপনাকে কখনো মিথ্যা বলবে না, কখনো না। তাই কিছু জানার অথবা বলার থাকলে সোজা-সাপ্টা বলবেন।”
-”হুম।”
-”এক কাজ করুন আপনিও চটজলদি রেডি হয়ে আসুন। দু’জন এক সঙ্গে বের হই।”
ভোর তিতাসের দিকে একবার তাকিয়ে হেসে দ্রুত রেডি হতে গেল। তারপর দু’জনে নাস্তা সেরে একসঙ্গেই বেরিয়ে পড়ল। আজ থেকে ভোরও হসপিটালে যাবে, রোগী দেখবে। তিতাস নিজেই একথা গতপরশু জানিয়েছে। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের কারণ ভোরের অজানা। এ ছেলেটার কখন কী মনে হয় তার বোধগম্য হয় না। তবে রবিনের পরিবর্তে তার জন্য সহকারী হিসেবে রেখেছে মিজানকে।সে তিতাসের খুব কাছের বিশ্বস্ত একজন। রবিনের কথা জিজ্ঞাসা করাতে বলেছে, সে নাকি কিছুদিন বাবার সঙ্গে থাকবে। অফিসে খুব চাপ তাই বাবাকে সাহায্য করবে। তাই এই ব্যাপারে ভোরও আর কিছু বলে নি। কারণ ওর বাবার পরে বর্তমানে তিতাসই তার জন্য নিরাপদ কেউ। আর যায় হোক তিতাসের দ্বারা তার কোনো ক্ষতি হবে না, একথা সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। আর ওর জুনিয়র বর একজন দায়িত্বশীল পুরুষ। সে জানে পরিবারটাকে কীভাবে
আগলে রাখতে হয়।
এসব ভেবে ভোর ওর রোগী দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।রোগীর চাপ বেশি থাকায় সময়ও অতিবাহিত হতে থাকল। ভোরের
হসপিটালে আসার কথা জানতে আয়মানেরও সময় লাগল নি। একথা শুনেই সে তাৎক্ষণিক ছুটে এসেছে।রোগীর চাপ রেখে ভোর এখন তার সঙ্গে খেজুরে আলাপ জুড়ে দিবে না নিশ্চিত। এজন্য একগুচ্ছ গোলাপ হাতে এসি গাড়িতে বসে ভোরের অপেক্ষায় সে। সেই সঙ্গে নানান পরিকল্পনা করে সে
কিছু ভাবছে আর কুটিল হাসছে। এই ভোর মেয়েটা সত্যিই বড্ড বোকা। সে আপনজনদের খুব বেশি ভরসা করে, ফলে ঠকেও বেশি। এই যেমন, ওর বাবার থেকে কিছু ইঙ্গিত পেয়ে
তিতাসদের বাসায় এসেছিল। এবং পিয়াসের মৃ/ত্যু/র জন্য তিতাসকে সর্বপ্রথম সন্দেহ করেছিল। তবে তিতাস যে ধূর্ত, ভোরের পরিকল্পনা বুঝে ফেলেছিল। পরে ভোরের অজান্তেই বাসার সকলকে যেভাবেই হোক বিয়ের জন্য রাজি করাতে বলে। তখন উছিলা হিসেবে সারাও নোংরা কথা বলে সুযোগ করে দেয় তিতাসের মাকে। আর ভোর তিতাসের মায়ের এত
ইমোশনাল কথা শুনে আবেগী হয়ে নিজে তিতাসকে বিয়ের কথা বলে। আর তিতাসও তখন লুফে নেয় ভোরের প্রস্তাব।
আর এখানে সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় ভোরের বাবা। উনাকে প্রায় দেখা যেতো, তিতাসের সঙ্গে আলোচনায় বসতে। হোক সেটা, কোনো রেস্টুরেন্ট অথবা নিরিবিলি কোনো স্থান। উনি
কীভাবে যেন তার উদ্দেশ্যে ধরে ফেলেছিলেন। এজন্য উনি নিজেই তিতাসকে তাড়া দিতেন ভোরকে বিয়ে করার জন্য।
পরিশেষে মেয়ের বিয়ে দিয়ে যাওয়ার পথে সে নিজেই গাড়ি
এক্সিডেন্ট করিয়েছিল। ইচ্ছে ছিল পিচ ঢালা রাস্তায় উনাকে পি/ষে ফেলতে। কিন্তু তা আর সম্ভব হয় নি। কিন্তু পরে যখন ভোরের বাবার বাঁচার সম্ভবণা দেখা দিলো, তখন সে নার্সকে টাকা খাইয়ে উনার অক্সিজেন মাক্সটা খুলে মৃ/ত্যু/র দুয়ারে পাঠিয়ে দিলো। আর ভোরের মা ধকল সামলাতে না পেরেই অক্কা পেয়েছে। আর উনার মৃ/ত্যুে/র পর সে মিশানকে এটা বুঝিয়েছে, ভোরের জন্যই এমন হয়েছে। কী দরকার ওখানে গিয়ে তিতাসকে বিয়ে করার, সে বিয়ের কথা না বললে ওর বাবা-মা নিশ্চয়ই ওখানে যেতেন না। আর এমন মর্মান্তিক কিছু ঘটতোও না। একথা শুনেই সে রেগে ভোরকে শেষবার তাকে মাকে দেখতেও দিয়েছিল না। এমনকি তিতাসকেও ওর মৃত ভাইয়ের কসম দিয়ে আঁটকে দিয়েছিল। হাস্যকর হলো, ভোর এবং তিতাসের বাসার সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে সে অবগত। তিতাসের চাচীর কাহিনীতেও সে ভীষণ মজা পায়,
ওই মহিলা আসলেই ধূরন্ধর। আহারে গো বেচারা তিতাস।
বোনটা মান সন্মানের ছিঁটেফোঁটা তো রাখেই নি। এখন চাচী
নিজের রুপ দেখাচ্ছে। শাহিনা যেহেতু তিতাসকে প্যারাতে রেখেছেই তাই এই কয়েকদিন সে বিশ্রামেই ছিল। বসে বসে তিতাসের বেগতিক অবস্থা দেখছিল, মজা নিচ্ছিল। বেচারা তিতাস আসলেই একটা চিজ বটে নয়তো এতদিনে সবছেড়ে ছুঁড়ে পালিয়ে যেতো। তিতাস উচ্ছন্নে যাক, ভোরকে পেলেই হবে তার। আর ভোর যেহেতু বাইরে বেরিয়ে এসেছে এবার খপ করে ধরে উড়াল দিবে দেশের বাইরে। তবে আজই এটা করা যাবে না, পাখি কেবল বের হয়েছে, একটু ডানা ঝাঁপটে উড়ুক। তারপর নাহয়..!!
রোগী দেখে ভোর তিতাসের অপেক্ষা বসে আছে। এতক্ষণে তিতাসের চলে আসার কথা। ওর কথা ভুলে আবার কোথাও চলে গেছে নাকি কে জানে। সে তো আবার চঞ্চল পুরুষ।এক স্থানে মন বসে না তার।এসব ভেবে ভোর আর কিছুক্ষণ বসে কল দিলো তিতাসের নাম্বারে।তিতাস ওর কল কেটে মেসেজ করেছে, ‘বাইরে আসুন।’
ভোর হ্যান্ড নিয়ে বেরিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়াল। মিনিট দুয়েক পরেই তিতাসকে হেঁটে আসতে দেখা গেল। সে মুখভর্তি হাসি নিয়ে ভোরের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসছে। তার বাম হাতে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা। ফুল দেখে ভোরের ঠোঁটে হাসি ফুটল। রজনীগন্ধার সুভাষ তার ভীষণ প্রিয়। তাও যদি হয় জুনিয়র বরের থেকে তাহলে তো কথায় নেই। ভোরের তিতাসের দিক তাকিয়ে কেন জানি আজ মনে মনে বলেই ফেলল,
-”এই পাগল প্রেমিকটা শুধু আমার, একান্তই আমার।”
একথা বলতেই তার মুখশ্রী লাজুক রাঙা হয়ে উঠল। তখনই তিতাসের পাশ দিয়ে ছুটে গেল চলন্ত একটা বাইক। তিতাস ততক্ষণে গলায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। সে গলা থেকে ওর হাত নামাতেই দেখে র/ক্ত গড়িয়ে যাচ্ছে গলা বেয়ে। ভোরের জন্য আনা শুভ্র রজনীগন্ধার উপরে লাল র/ক্তে/র ফোঁটা।
তিতাস হাত থেকে তার হতবাক দৃষ্টি সরিয়ে ভোরের দিকে তাকাতেই দেখে ভোর জ্ঞান হারিয়ে রাস্তার লুটে পড়েছে।
To be continue…………!!