#প্রিয়_তুমি❤
#মেঘা_আফরোজ
#পর্ব-৫
.
🍁
.
প্রিয়ন্তী আজ ভার্সিটিতে যাবে ২ দিন আগে আকাশ ওকে ভর্তি করে দিয়েছে। প্রিয়ন্তী ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে হিজাব বাধছিলো তখন আকাশ রুমে এলো,প্রিয়ন্তীর মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে মনে মনে বললো
__উফ এই মেয়েটা তো দেখছি আমার মাথাটা খারাপ করে দেবে। এতো সুন্দর লাগে কেনো ওকে? সিম্পল ভাবে থাকে তারপরে ও মনে হয় সব সময় নিজেকে গুছিয়ে পরিপাটি করে রাখে। এমন একটা মেয়েকে আমি দূরে ঠেলে দিতে চেয়েছিলাম! নাহ আমি আর ধনী গরীব বলে কাউকে আলাদা করে দেখবো না,এখন থেকে সবাই আমার চোখে সমান।
আমি আমার মায়াপরীকে অনেক ছোট করেছি ওর যোগ্যতার কথা বলে সত্যি আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।
__এইযে জিরো সাহেব কোথায় হারালেন আপনি? এতো বার ডাকছি কিছুই শুনছেন না?
আকাশ চমকে উঠে বললো
__কিছু বলছো?
__জ্বি বলছি। কি ভাবছিলেন হুম কতোবার ডাকলাম। আমি তো ভেবেছি আপনি হয়তো অন্য কোনো জগৎ এ হারিয়ে গিয়েছেন।
__হ্যা হারিয়েছিলাম তো আমার মায়াপরীর জগৎ এ।
__কিহ! এই মায়াপরীটা আবার কে?
__সময় হলেই জানতে পারবে। তুমি রেডি তো? আফিয়া হয়তো নিচে অপেক্ষা করছে।
__হ্যা আমি রেডি চলুন।
প্রিয়ন্তী আগে বেরিয়ে যেতে নিলে আকাশ নরম স্বরে পেছন থেকে ডাকলো
__প্রিয়ন্তী?
প্রিয়ন্তী চমকে উঠলো এই প্রথম আকাশের মুখে নিজের নাম শুনে। প্রিয়ন্তী আকাশের দিকে ঘুরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। আকাশ মৃদু হেসে বললো
__আমার একটা আবদার ছিলো,রাখবে?
__কি আবদার বলুন?
__তোমার হিজাবটা খুলে চুলগুলো ছেড়ে দাও। ঠিক আগে যেমন চুল ছেড়ে থাকতে।
__আগে চুল ছেড়ে থাকতাম আপনি কি করে জানলেন?
__আমি তো এমনি বলেছি হয়তো বা থাকতে তাই বললাম। প্লিজ আজকের মতো চুল ছেড়ে দাও কাল থেকে রেগুলার হিজাব পড়বে।
প্রিয়ন্তী কথা বাড়ালো না ওর খুব ইচ্ছে করছে আকাশের আবদারটা রাখতে। শুধু তো চুল গুলোই ছেড়ে দিতে বলেছে এটা তো কঠিন কিছু নয়। প্রিয়ন্তী বিয়ের আগে মাঝে মাঝে হিজাব পড়তো শখ করে। বিয়ের পরে নতুন মানুষ নতুন জায়গা এখানে তো নিজের মতো চলা যাবে না। তাছাড়া আফিয়া এ বাড়ির মেয়ে হয়ে হিজাব ছাড়া বের হয়না। প্রিয়ন্তী বাড়ির বউ হয়ে হিজাব ছাড়া বের হবে এটা ভালো দেখায় না। তাই প্রিয়ন্তী হিজাব পড়েতে শুরু করেছে।
প্রিয়ন্তী হিজাব খুলে বাধা চুল গুলো ছেড়ে দিতেই তার অবাধ্য চুলগুলো পিঠে কোমড়ে ছড়িয়ে পড়লো। আকাশ মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছে সেই চুলের দিকে। প্রিয়ন্তী আকাশের সামনে আসতেই আকাশ মুচকি হেসে বললো
__চুল ছেড়ে দিয়ে অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে।
প্রিয়ন্তী একটু লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বললো
__কেনো হিজাব পড়ে কি খারাপ দেখায় আমাকে?
__উহু একটুও খারাপ দেখায় না। হিজার পড়া অবস্থায় তোমাকে পবিত্র লাগে দেখতে। তুমি কাল থেকে আবারো হিজাব পরেই বের হবে।
.
🍁
.
আকাশ প্রিয়ন্তী আফিয়া একসাথেই ভার্সিটি যাচ্ছে। আফিয়া না থাকলে আকাশ প্রিয়ন্তীকে নিয়ে বাইকেই যেতো। তিনজন তো যাওয়া যাবে না তাই নিজেদের গাড়িতেই যাচ্ছে। আকাশ ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছে। প্রিয়ন্তী আর আফিয়া পেছনে,আফিয়া ও আজ হিজাব খুলে চুল ছেড়ে দিয়েছে। আফিয়াকেও খুব সুন্দর লাগছে চুল ছেড়ে। ওর চুলগুলো একদম সিল্কি তবে বেশি বড় নয়।
আকাশ একটু পর পর ঘার ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে তার মায়াপরীকে দেখছে। বাতাসে প্রিয়ন্তীর চুলগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সামনের কাটা চুলগুলো চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে। প্রিয়ন্তী বিরক্তির সাথে চোখ মুখের ওপর থেকে চুল সরিয়ে নিচ্ছে।
আকাশের খুব হাসি পাচ্ছিলো প্রিয়ন্তীর বিরক্তিমাখা মুখটা দেখে। ওর খুব ইচ্ছে করছিলো নিজের হাতে তার মায়াপরীর এলোমেলো অবাধ্য চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিতে।
ভার্সিটির সামনে নেমে আফিয়া প্রিয়ন্তী আর আকাশ ভেতরে ঢুকলো। একটু সামনে এগোতেই অনিক দৌড়ে এসে ওদের সামনে দাড়ালো। আকাশ হেসে বললো
__কিরে এভাবে দৌড়ো এলি কেনো?
__আমার তো উড়ে আসতে মন চাইছিলো। তোদের দেখে ডিপার্টমেন্টের ২ তলা থেকে দৌড়ে এলাম।
অনিক আড় চোখে আফিয়ার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলে হাপাচ্ছে। আকাশ বললো
__আমাদের কি আগে কখনো দেখিসনি যে ২ তলা থেকে তোর উড়ে আসতে মন চাইলো?
__দেখেছি রে দোস্ত তবে এমন রুপে আগে কখনো দেখি নি। আমার যে হার্টবিট সেকেন্ডে সেকেন্ডে কেঁপে উঠছে।
আকাশ অনিকের কথা বুঝতে না পেরে বললো
__তোর মাথা হয়তো ঠিক নেই কি বলছিস এসব! তোর মুখে তো আগে এ ধরনের কথা শুনিনি কখনো।
আফিয়া অনিকের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো
__ভাইয়া তুই তোর মাথা খারাপ বন্ধুকে সামলা আমরা গেলাম।
অনিক আফিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
__আমার মাথা ঠিক আছে হৃদয়টা ঠিক নেই,বুঝেছো। এ হৃদয়টা কোনো এক রমনীকে দেখে থমকে গেছে।
প্রিয়ন্তী কিছুই বলছে না নিরব দর্শক হয়ে ওদেরকে দেখছে। অনিকের চোখ প্রিয়ন্তীর দিকে পড়তে আফিয়াকে বললো
__এটা কি তোমার নিউ ফ্রেন্ড?
__হুম, কেনো ভালো লেগেছে,প্রোপোজ করবেন?
আকাশ প্রিয়ন্তী দুজনেই আফিয়ার দিকে তাকালো। অনিক মুচকি হেসে বললো
__আমার ভালো লাগাটা অন্য কেউ,অনেক আগে থেকেই তাকে ভালোলাগে,মেবি ভালোও বাসি তাকে। আর আজ তো তাকে দেখে আরো ভালোলেগে গেছে। সো আমি ডানে বামে না তাকিয়ে সামনের দিকেই শুধু তাকাতে চাই।
আকাশ একটু হলেও ভেবে নিয়েছিলো অনিক হয়তো প্রিয়ন্তীকে দেখে এসব বলছে কিন্তু এখন অনিকের কথা শুনে আকাশ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো
__অনিক তোর পাগলামো গুলো পরে দেখবো এখন থাম। আফিয়া তুই তোর ক্লাসে চলে যা আমি প্রিয়ন্তীকে ওর ডিপার্টমেন্ট দেখিয়ে দিবো।
প্রিয়ন্তী আফিয়ার হাত ধরে বললো
__না আপুও যাবে আমার সঙ্গে।
আকাশ বুঝতে পারছে প্রিয়ন্তীর কিছুটা নার্ভাস লাগছে। নতুন ভার্সিটি নতুন পরিবেশ একটু তো নার্ভাস লাগবেই। আকাশ প্রিয়ন্তীকে বললো
__প্রিয়ন্তী, আফিয়া তো ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে ওই সামনের বিল্ডিংটার ২ তলায় ওর ক্লাস হয়। আর তোমার ডিপার্টমেন্টটা আরো ভেতরে ওর ওদিকে যেতে হবেনা। আমি তোমাকে দেখিয়ে দিবো।
আকাশ প্রিয়ন্তীকে নিয়ে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের সামনে এলো সাথে অনিক ও এসেছে। আকাশ বললো
__৩ তলায় একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট যেতে পারবে তো নাকি দিয়ে আসতে হবে?
__আমি বাচ্চা নাকি যে হাত ধরে ক্লাসে দিয়ে আসবেন, আমি একাই যেতে পারবো।
__হুমম। আচ্ছা শোনো আমি ক্যাম্পাসেই আছি ক্লাস শেষ হলে ফোন দেবে আমাকে। আর শোনো একদম নার্ভাস হবে না কেমন।
প্রিয়ন্তী মুচকি হেসে বললো
__আমাকে নিয়ে এতো ভাবতে হবে না, আসছি।
.
🍁
.
প্রিয়ন্তী চলে যেতেই অনিক সন্দেহের দৃষ্টিতে বললো
__কাহিনি কিরে কে এই মেয়েটি?
__আমিও তো সেটাই জানতে চাই তোর কাহিনি কি কাকে দেখে তোর হার্টবিট সেকেন্ডে সেকেন্ডে কাঁপছিলো?
__আকাশ আমার কথা ছাড় আগে বল মেয়েটি কে,তুই এতো কেয়ার করছিলি কেনো ওকে?
আমি তো ভেবেছিলাম আফিয়ার বান্ধবী হয়তো পরে তো দেখলাম মেয়েটি ওকে আপু বললো। বলনা কে ও?
__বলবো? শুনে কোনো রকম রিয়েক্ট করবি নাতো?
__আরে বল তো আগে।
__ওর নাম প্রিয়ন্তী,ও সেই অচেনা মায়াপরী।ওই যে ক্যাফেতে যে মেয়েকে দেখে আমি তার চোখের মায়ায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। এটাই আমার সেই মায়াপরী।
__ওওও এই তাহলে তোর সেই মায়াপরী! তোর চয়েজ আছে বলতে হবে। যাক ভালো হয়েছে এতো খুজে অবশেষে ওকে পেয়েছিস তুই। বাট এটা তো খারাপ কিছু নয় তুই রিয়েক্ট করার কথা কেনো বললি?
__এর পরের কথাটা শুনলে চমকাবি তুই। যাই হোক কোনো রিয়েক্ট করিস না প্লিজ। আসলে তোদের কাউকে বলা হয়নি আমি গত সপ্তাহে বিয়ে করেছি আর এই মায়াপরীটাই আমার বউ।
অনিক চোখ বড় বড় করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ বললো
__এ নিয়ে কথা বাড়াস না দোস্ত সবকিছুই খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে। আমি তোকে সবটা বলছি।
আকাশ অনিককে সবটা খুলে বললো। অনিক সব শুনে বললো
__বুঝলাম, কিন্তু আকাশ তুই প্রিয়ন্তীকে এতোটা ছোট করে না দেখলেও পারতি। মেয়েটির মধ্যে একটা ইনোসেন্ট ভাব আছে তা ওর কথা শুনেই বোঝা যায়। তাছাড়া তুই বললি ওর মা বাবা ও ছোট থাকতেই মারা গিয়েছে তারপর থেকেই মামার কাছে বড় হয়েছে। মা বাবা ছাড়া একটা মেয়ে হয়ে এতো বড় হয়েছে কতোটা কষ্ট করতে হয়েছে ভাবতে পারছিস। আর তুই ওকে ওর যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেছিস। কাজটা না করলেও পারতি।
__আই নো অনিক,আমার ভুল হয়েছে আমি তো ওর সম্পর্কে কিছু না যেনে ওসব বলেছি। আমি আমার ভুলটা সুধরে নিতে চাই আমি প্রিয়ন্তীর কাছে ক্ষমা চাইবো।
.
🍁
.
প্রিয়ন্তীর ক্লাসে এসে নিঝুম নামের একটি মেয়ের সাথে পরিচিত হয়েছে। পাশাপাশি বসেছিলো দুজন ক্লাসে। নিঝুম খুব মিশুকে টাইপের মেয়ে মাত্র দুইঘন্টায় প্রিয়ন্তীর সাথে মিশে গিয়েছে।
প্রিয়ন্তীর ও মেয়েটিকে খারাপ বলে মনে হলো না। ওরা ক্লাস শেষ করে একসাথেই কথা বলতে বলতে নিচে এলো। নিচে এসে দেখলো আফিয়া ওদের দিকেই আসছে। আফিয়া প্রিয়ন্তীর সামনে এসে বললো
__ভাবি প্রথম দিন ক্লাস করতে কেমন লাগলো?
__ ভালো লেগেছে আপু তবে প্রথম দিন তো একটু বোরিং লাগছিলো।
নিঝুম আফিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
__আফিয়া আপু প্রিয়ন্তীকে তুমি ভাবি বলছো কেনো?
__আমার ভাইয়ার বউ তাই ভাবি বলেছি।
__ওমা! আকাশ ভাইয়া বিয়ে করেছে! কই ভাইয়া তো কিছুই বললো না।
__বিয়ের ব্যাপারটা কাউকে জানানো হয়নি। আচ্ছা নিঝুম আগে বলো আমার ভাবিকে কেমন লেগেছে হুম?
__খুব ভালো লেগেছে আপু।
প্রিয়ন্তী আফিয়াকে বললো
__আপু তোমরা দুজন দুজনকে চেনো?
__হ্যা,সকালে ক্যাম্পাসে আসার পর যে ছেলেটি আমাদের সামনে এসে পাগলামো করলো। উনার নাম অনিক, ভাইয়ার ফ্রেন্ড উনি।আর নিঝুম অনিক ভাইয়ার বোন।
নিঝুম আফিয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো
__আফিয়া আপু ভাইয়া কি পাগলামো করেছে?
__বাসায় গিয়ে তোমার ভাইয়ার থেকেই শুনে নিও।
প্রিয়ন্তীর ফোন বেজে উঠলে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখলো আকাশ কল দিয়েছে। প্রিয়ন্তী রিসিভ করলো
__হ্যালো..
__ক্লাস শেষ হয়নি এখনো?
__হয়েছে একটু আগেই।
__ওহ,আচ্ছা শোনো আমি ক্যাম্পাস থেকে বেড়িয়ে এসেছি তুমি আফিয়ার সঙ্গে বাড়িতে চলে যেও। আফিয়াকে আমি বলে দিয়েছি।
__হুমম আপু আমার পাশেই আছে।
প্রিয়ন্তী ফোন কাটতেই আফিয়া বললো
__কি ভাবি আমার কথাগুলো একটু হলেও মিলে যাচ্ছে তো? দেখেছো ভাইয়া কতো কেয়ার করে তোমার।
প্রিয়ন্তী কিছু বললো না নিঝুম হেসে বললো
__ভালোবাসা থাকলে কেয়ারটা আসবেই। আচ্ছা আপু তুমি তো আমাদের এক ইয়ার উপরে বয়সেও বড় তাহলে প্রিয়ন্তীকে ভাবি ডাকছো কেনো?
__তাতে কি আমার বড় ভাইয়ের বউকে নাম ধরে ডাকালে কেমন দেখায় না। আর এমন একটা মেয়েকে ভাবি ডাকতেই ভালো লাগে।
__হুমম আমার হবু ভাবিটাও কিন্তু অনেক কিউট আর আজ তাকে অন্য লুকে আরো বেশি কিউট লাগছে। হয়তো তাকে দেখেই আমার ভাইয়া আজ পাগলামো করেছে।
__নিঝুম তোমার হবু ভাবি মানে! অনিক ভাইয়া কাউকে ভালোবাসে?
__আমি যতোটা জানি ভাইয়া তাকে অনেক অনেক অনেক পছন্দ করতো হয়তো ভালোবেসেও ফেলেছে।
.
🍁
.
#চলবে…..