প্রেমময় বিষ পর্ব ১৩+১৪+১৫

#প্রেমময়_বিষ
#মাহিমা_রেহমান
#পর্ব_১৩

__

কেটে গেছে এক সপ্তাহ।এই এক সপ্তাহে আভ্র নিজ দায়িত্ব ঠিক ভাবেই পালন করেছে।প্রতিদিন একবেলা করে হলেও বেলির পিছন পিছন সব জায়গাতে সে উপস্থিত ছিল।তবে আজকাল রুহাশাকে কেমন ভিন্নরূপে আবিষ্কার করছে সকলে।যেখানে যে একের পর এক মেয়ে নিয়ে পড়ে থাকে,, সেখানে আজকাল তাকে মেয়েদের আশেপাশে দেখাই যায় না! সে আজকাল আভ্রর সাথেই চলে আসে,,বেলা যখন তার সম্মুখ হয়ে প্রস্থান করে তখন সে একধ্যানে খুবই গভীর চোখে তাকিয়ে থাকে তার পানে।এতে বেলি অনেক বেশি আড়ষ্টতায় পড়ে গেলেও সে তার চোখ ফেরাতে নারাজ। আভ্রকে নিজের আশেপাশে দেখলেই ইচ্ছামত বকে দেয় বেলি।কিন্তু কে শুনে কার কথা?,,,তারা দুভাই যেন আঠার মত লেগে আছে তাদের দুবোনের পিছন।

___

বসন্তকে বিদায় জানিয়ে পৃথিবীতে আগমন ঘটেছে বরষার।আজকে বৃষ্টির দিন হওয়ায় স্কুলে আসতে হয়নি বেলা-বেলি কে।তাই বেলির মতামত,, ধরায় গোধূলির আগমন ঘটলেই তারা দুজন মিলে ঘুরতে বের হবে। বেলা নাকচ করল না,,কারণ আজকাল তারও গোধূলি লগ্নে বেশ লাগে ঘোরাফেরা করতে।তাই দুজন বের হয় ঘুরবার উদ্দ্যেশে।প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ব্যস্ত দুজন।তখনই তাদের সামনে এসে দাঁড়ায় একটি গাড়ি আর কয়েকটি বাইক।ললাট কুঁচকে নেয় বেলি। প্রতিদিন তাদের দুইভাইয়ের এসব মলোড্রামা সহ্য হচ্ছে না আর। আকস্মাৎ আভ্র বলিষ্ঠ হাতে চেপে ধরে বেলির নরম হাত।বেলি ঈষৎ চমকে আভ্রর মুখপানে তাকায় সহসা আভ্র বেলিকে টেনে নামায় বাইক থেকে।বেলি রেগে কিছু বলতে অগ্রসর হতেই আভ্র মুখ চেপে ধরে বেলির। হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে যেতে লাগে বেলিকে। আভ্রর এহেন কাজে অবাক নয়নে তাকিয়ে রয় সেদিকে।সহসা সংবিৎ শক্তি ফিরে আসতেই এক ভয়াবহ চিৎকার করে উঠে বেলা। আচম্বিতে বেলার এহেন কাজে হকচকিয়ে যায় রুশান। গটগট পা ফেলে বেলার সান্নিধ্যে এসে সহসা বেলার হাতের কব্জি টেনে ধরে রুহাশ।বেলা শঙ্কিত দৃষ্টিতে রুহাশের পানে তাকায়।রুহাশ বেলাকে টানতে টানতে সামনের দিকে নিয়ে যেতে লাগে।বেলা ঈষৎ ঘাবড়ে আতঙ্কিত কণ্ঠে বলে উঠে,

— কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি আমাকে? আর বেলি কোথায়?? বেলিকে কোথায় নিয়ে গেছে তারা? কথা বলছেন না কেনো? আর ছাড়ুন বলছি আমাকে।

রুহাশ নির্নিমেষ বেলার পানে তাকিয়ে নিজ কার্যে মনোনিবেশ করে।গাড়ির সান্নিধ্যে এসে বেলাকে ভিতরে বসিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অজানায় হারিয়ে যায় রুশান।

বেলা তখন থেকে জিজ্ঞেস করে চলছে তারা কোথায় যাচ্ছে? তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে রুশান? কিন্তু পুরো সময় মুখ বন্ধ করে বসে রয়েছিল রুশান।

আঁধার নেমেছে ক্ষণিক কাল পূর্বে। বেলাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টেনে কোথাও একটা নিয়ে যেতে লাগল রুহাশ।ভরপুর আলোর সমাহারে এনে বেলার হাত ছেড়ে দিল সে। বেলা কিঞ্চিৎ রেগে কিছু বললে,, সহসা তার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল রুহাশ।চমকিত নয়নে তার সম্মুখে অবস্থিত ব্যক্তির পানে তাকাল বেলা। আকস্মাৎ বেলার হাত দুটো চেপে ধরল রুহাশ।তার এহেন কাজে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল বেলা।রুহাশ বেলার হাত দুটো চেপে ধরে বলতে লাগে,

— তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি, সেদিন থেকেই আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়।বারংবার তোমার কথা স্মরণে আসত।ঠিক মত খেতে পারতাম না।ঠিক মত ঘুমাতে পারতাম না।দেখ এখনই ঠিক মত ঘুমাতে, খেতে পারিনা আমি।জানিনা এটা ভালোবাসা নাকি অন্যকিছু? তবে জানি! তোমাকে আমার লাগবে। আমার হয়ে যাও। আমার প্রতি বেলা ,,তুমি নামক বেলা দিয়ে শুরু হবে আর তুমিতেই শেষ! তোমাকে আমার চাই বেলা।

নিজ কক্ষে বসে রাগে ফুঁসছে বেলি।বেলিকে সেই তখন থেকে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে বেলা।সর্বশেষ নিজের রাগকে দমন করে বেলার পানে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করল,

— রুহাইশায় তোর সাথে কি করেছে’রে বেলা?

বেলা অকপটে উত্তর দিল,

— প্রপোজ করেছিল।

বেলি রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে ব্যক্ত করল,

— আর বলিস না! এই রুহাইশায় যা লুইচ্চা! এলাকার এমন কোনো মেয়ে নেই যার সাথে ওর ‘লুতুপু*তু প্রেম ছিল না।আমাদের স্কুলের একটা মেয়েকে তো ব্যাটা প্রেগনেন্ট ও করে দিয়েছিল।পরবর্তীতে অস্বীকার করায় মেয়েটা সুসাইড করে।কত বড় মাপের লুইচ্চা! তুই একবার চিন্তা করতে পারছ? যাক তুই কি বলেছিস ব্যাটাকে?

বেলা কিঞ্চিৎ শঙ্কিত কণ্ঠে বলে উঠল,

— বলেছি আমার দ্বারা এসব হবে না।কিন্তু সে বলেছে সে আমাকে সময় দিবে।যত সময় লাগুক।কিন্তু তার নাকি আমাকে চাই!

বেলার বলা বাক্য কর্ণগোচর হতেই কাঠখোট্টা কণ্ঠে বলে উঠে বেলি,

— আর রাখ তোর চাওয়া-চাওয়ি! তুই চিন্তা করিস না।বুঝছিস ব্যাটা তোকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ট্রেপ্রে ফেলতে চাচ্ছে। তোর সাথেও লুতুপুতু প্রেমের সম্পর্ক গড়তে চাইছে। খবরদার! তুই কিন্তু গলবি না।

অকস্মাৎ বেলা ডুকরে কেঁদে উঠেন বেলি কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বেলাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে কপোল আলগোছে স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করল,

— কি হয়ছে? এভাবে কাঁদছিস কেনো? আমি কি তোকে কোনো প্রকার কষ্ট দিয়ে ফেলেছি?

বেলা দুদিকে মাথা নেড়ে না বোঝায়। বেলি স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে পুনরায় জিজ্ঞেস করে,

— তাহলে কি জন্য কাঁদছিস?

বেলা রায়ায সম্পর্কিত সকল ঘটনা তুলে ধরে বেলির পানে।সকল ঘটনা কর্নকুহর অব্দি পৌঁছতেই বেলাকে নিজ বক্ষঃস্থলে জাপটে ধরল বেলি।কথার খেই হারিয়ে ফেলল যেন বেলি তবুও সান্ত্বনা স্বরূপ বলে উঠল,

— তুই এভাবে কাঁদিস না।নিজেকে শক্ত কর। সকল অপমানের জবাব তুই একদিন ঠিকই দিবি বেলা। তবে নিরবে।নিজেকে প্রস্তুত কর আগে।

বেলা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।

____

দেখতে দেখতে কেটে গেল পুরো একটি বছর।আজ রবিবার।শিকদার বাড়িতে একপ্রকার তোড়জোড় পড়ে গেছে।শিকদার বাড়ির বড় ছেলে তাহিন শিকদার তার লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরছে আজ।আপন মানুষগুলোর কাছে ফিরে আসছে।আনন্দের যেন সমাপ্তি নেই আজ শিকদার বাড়িতে।

সোফায় বসে একের পর এক মুখের মধ্যে বাদাম পুরে সকলের কার্যক্রম দেখে চলছে বেলা আর বেলি। পুরো বাড়ি সুস্বাদু খাবার ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে। বেলির আর সহ্য হল না। সন্তর্পনে বেলি পা টিপে রান্নাঘরে গেল একবাটি মাংসের আশায়। সহসা তার কান কেউ সজোরে মুচড়ে দিল।পিছুমুখী হয়ে তার দৃষ্টিতে তার দাদিয়ার মুখটি ধরা দিল।
.
.
চলবে ইনশাল্লাহ,,#প্রেমময়_বিষ
#মাহিমা_রেহমান
#পর্ব_১৪

___

বিকেল গড়িয়ে গোধূলির লগ্ন পড়েছে আকাশের বুকে।শিকদার বাড়িতে আজ বিয়ের আমোদ লেগেছে।কিন্তু না আজ করো বিয়ে নয়। বরং বাড়ির বড় ছেলের চরণ পড়েছে সবেমাত্র বাড়ির আঙিনায়।খুশিতে হইহই করে উঠছে বাড়িতে অবস্থানরত প্রতিটি মানুন। ‘হ্যা’ তাহিনের অধমাঙ্গ পড়েছে শিকদার বাড়িতে।সদর দরজায় সম্মুখে ছেলের মুখখানা দর্শন হতেই অমি বেগম ছুটে ছেলের সম্মুখে দাড়িয়ে ছেলের বক্ষপটে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তাহিন নিজ বক্ষে মাকে জায়গা দিয়ে আদর সহিত মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মায়ের।অমি বেগম আদরের ছেলেকে এতকাল পর সম্মুখে দেখতে পেয়ে আবেগে-আটখানা হয়ে একদম ভেঙে পড়লেন।ফলস্বরূপ তখন থেকে তিনি অশ্রু বিসর্জন দিয়েই যাচ্ছেন।এই কান্না কোনো বিষন্নতার কান্না নয়। বরং এই কান্না সুখের কান্না,, হৃষ্টোতার কান্না।মায়ের এহেন বাচ্চামো দেখে তাহিন ওষ্ঠের কার্নিশে হাসি ফুটিয়ে তুলে মায়ের উদ্দেশ্যে বাক্য ব্যক্ত করল,

— মা তুমি তখন থেকে কেমন বাচ্চাদের মত কেঁদে চলছ বলতো?আর কেঁদো না! তুমি কাঁদলে আমার কত কষ্ট হয় জানো না?তাহলে কেনো কাদঁছো? এখনই চোখ মুছে ফেল।

কথাটার সমাপ্তি ঘটিয়ে তাহিন নিজ হাতে মায়ের আঁখির কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়া জল গুলো মুছে দেয়। আকস্মাৎ কোথা থেকে বেলি দৌড়ে এসে ভাইয়ের বক্ষপটে ঝাঁপিয়ে পড়ে।ভাইকে জাপটে ধরে বলে উঠে,

— ভাই আমি তোমাকে যে ব্যান্ডের মেকআপ আর যে যে চকলেট গুলো আনতে বলেছিলাম এনেছো?

বোনের এহেন বাচ্ছাসুলভ কথা কর্ণকুহরে পৌঁছতেই কিঞ্চিৎ হেসে উঠে সে।বোনের মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে বলে উঠে,

— এনেছি সবই এনেছি।এখন ভিতরে চল কেমন?

বেলি ভাইকে ছেড়ে ভাইয়ের হাত ধরে ভিতরে চলে আসে।তাহিনকে পেয়ে সবাই আহ্লাদে-আটখানা হয়ে পড়ে।সকলের আহ্লাদের সমাপ্তি ঘটতে অমি বেগম ছেলেকে উপরে পাঠিয়ে দেয় রেস্ট করার জন্য।

বেলি দৌড়ে বেলাকে জাপটে ধরে বলে উঠে,

— ভাই এসেছে বেলা। তুই দেখা করলি না?

নিজ কাজে মত্ত বেলা উত্তর দেয়,

— আমি দেখা করে কি করব?উনি হয়তো আমাকে এখন চিনতে পারবে না।

বেলি অবাক নয়নে বেলার পানে দৃষ্টিপাত করে বলে উঠে,

— তো কি হয়েছে? তাই বলে দেখা করবি না?।

বেলা কাঠখোট্টা স্বরে বলে উঠে,

— না

বেলি নিরাশ হয়ে বেলার হাত থামিয়ে দিয়ে,, নিজ সন্মুখে বেলাকে বসিয়ে বলে,

— কি হয়েছে তোর? মন খারাপ।

বেলা নিবিড় চোখে বেলিকে পর্যবেক্ষণ করে বলে উঠে,

— কি হবে? কিছুই হয়নি।তুই না বললি নিজেকে শক্ত করতে? তাই করছি।

বেলি রুদ্ধশ্বাস ত্যাগ করে বলে উঠে,

— আচ্ছা ঠিক আছে চল দুজন কফি খাই।

বেলা ঘাড় কাৎ করে সম্মতি জানায়।বেলি তৎক্ষণাৎ বেলাকে টেনে নিচে নিয়ে আসে।অতঃপর দুজন মিলে কফি আর কিছু স্ন্যাক্স বানিয়ে নিজ কক্ষের বেলকনিতে চলে যায়।দোলনায় অবস্থানরত দুই তরণী আপন চিত্তে বকবক করে চলে।

____

রাত নয়টা বেজে ত্রিশ মিনিট।খাবার টেলিকে সকলে উপস্থিত।অনুপুস্থিতি কেবল তাহিনের।ক্ষনকাল অবিহিত হতেই তার আগমন ঘটে।চেয়ার টেনে হাসি মুখে বোনের পাশ্ববর্তী চেয়ারে আসন পাতে সে।খাবার সময় তাকে সকলে এটা-সেটা জিজ্ঞেস করতে থাকে।এসে হু, হা করে জবাব দেয়।রাতের খাবারের পর্ব সমাপ্তি ঘটলে,,সহসা তাহিন বেলির উদ্দেশ্যে ভরাট কন্ঠে বলে উঠে,

— খাওয়া শেষে তাড়াতাড়ি আমার রুমে আসবি।সাথে করে একেও (বেলার উদ্দেশ্যে) সাথে করে নিয়ে আসবি,,কুইক।

বেলি ঘাড় কাৎ করে সায় জানালে সহসা তাহিন নিজের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে উদ্যত হয়। খাওয়া শেষে বেলি বেলার মুখপানে তাকিয়ে চপলা কণ্ঠে বলে উঠে,

— বেলা! বেলা তাড়াতাড়ি চল।ভাইয়া নিশ্চয়ই আমাদের চকলেট দিবে এখন। আয় আয়।

কথাটা শেষ করে বেলি সময় ব্যয় করল না।বেলাকে ধেনুর মত টেনে নিয়ে যেতে লাগল।আকস্মাৎ এমন হওয়ায় বেলা কিছুটা হকচকিয়ে গেল।

তাহিনের রুমের দ্ধারের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে দুই চপলা চিত্তের তরণী।সহসা ভিতর থেকে রাশভারি কণ্ঠে কেউ বলে উঠল,

— ভিতরে আয়।

ভাইয়ের কথা শেষ হতেই ত্বরান্বিত পায়ে রুমে প্রবেশ করে বেলি সাথে বেলাকে টেনে ভিতরে নিয়ে আসে।রুমে অবস্থানরত বেলি ভাইয়ের অভিমুখে দাঁড়িয়ে একটা মিষ্টি হাসি হাসে।বিছানায় আয়েশি ভঙ্গিতে বসে তাহিন দুজনের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

— দুজন এখানে এসে বস।

সত্বর গতিতে বেলি গিয়ে ভাইয়ের পাশে বসে বেলাকে টেনে বসিয়ে দেয়।বেলা আড়ষ্টতায় জড়িয়ে যাচ্ছিল ক্ষনকাল।তাহিন নির্নিমেষ বেলাকে দেখে নিয়ে বেলার উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

— আমি তোমায় বড় ভাই হই।বেলি যেমন আমার
বোন ঠিক তুমিও আমার বোন। সো রিকেক্স!এতো অস্থির হওয়ার কিছুই নেই।

বেলা মাথা নেড়ে সায় জানাল।পুনরায় তাহিন নিজ চিত্তের বাক্য ব্যক্ত করে

— ফুপিয়ার সাথে কিছুক্ষন আগে আমার কথা হয়েছিল। ওদিকটায় প্রচুর গ্যাঞ্জাম থাকায় আপাদত তিনি আসতে পারবে না।তবে তোমার সম্পর্কে আমাকে তিনি সব বলেছেন।তোমাকে এখানে পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো উনি চায় তুমি বাস্তবতায় সম্মুখীন হও। আর সেই সূত্র ধরেই তুমি নিজেকে গড়ে তুলো।তাই আজ থেকে আমি তোমার ট্রেইনার।এখন থেকে আমার কথা মত চলতে হবে তোমায় বুঝেছো? আর বেলি আর তুমি আমার কাছে একদম এক।তাই ভাই হিসেবে বোনের ভালোটাই চাইব আমি।

মায়ের কথা কর্ণপাত হতেই অভিমানে মুখ ভারী হয়েছিল বেলার।সহসা তাহিনের পরবর্তী বলা বাক্য গুলো শুনে কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে ঘাড় কাৎ করে সায় জানায় বেলা।তাহিন বেলার মাথায় ভরসার হাত বুলিয়ে দেয়।বেলার মনেও এক প্রকার ভালোলাগা দোল খেয়ে যায়।কারণ তার যে বড়ভাই নেই।আজ কেমন তাহিনকে নিজ বড়ভাই রূপে আবিষ্কার করছে।সহসা বেলি চাপা আর্তনাদ করে উঠে।হকচকিয়ে যায় বেলা, হচকায় তাহিন।বেলি দুজনের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

— আরে এসব পড়ে হবে।আগে ভাইয়া তুমি চকলেট গুলো তো দাও।আমার জিভে জল চলে এসেছে অলরেডি।

তাহিন কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে বোনের পানে তাকিয়ে,, সত্বর উঠে দাঁড়িয়ে এক গাদা চকলেট বোনের হতে ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠে,

— যা এবার বিদেয় হ। আর অবশ্যই অর্ধেক ভাগের চকলেট বেলাকে দিবি।

বেলির পড়ে যাওয়ায় উপক্রম হতেই চকলেটের বেশ কিছু প্যাকেট বেলার হাতে ধরিয়ে দেয়।বেলি খুশিতে গদগদ করতে করতে বেলাকে নিয়ে ভাইয়ের কক্ষ প্রস্থান করে।

দুজন চকলেট খেতে খেতে খেজুরে আলাপ লাগিয়ে দিয়েছে।সহসা বেলি বলে উঠে,

— জানিস আমার ভাইয়ার মনের ভিতর অনেক কষ্ট!

বেলা চমকে বেলির পানে তাকায়।বেলি পূনরায় বলতে লাগে,

— শুনেছি ভাইয়া নাকি একটা মেয়েকে ভালোবাসতো।কিন্তু মেয়েটা নাকি ভাইয়াকে ধোঁকা দিয়েছে।জানিস আজও ভাইয়ার চোখে সেই বেদনা দেখা যায়।ভাইয়া মেয়েটাকে ভুলতেই দেশ ছেড়েছিল।

বেলা বিষন্ন মনে নিবিড় শ্বাস ত্যাগ করে আপন চিত্তে আওড়াতে লাগল,

— আর আমি শহর।

___

আজ বেলার জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।আর এই অধ্যায়ের সূচনাকারী বেলার রিসেন্ট ট্রেইনার ওরফে তাহিন শিকদার।

বেলা-বেলি, ইন্নি-পিন্নি আর পিন্টু সব কটা’কে প্রতিদিন ভোর চারটার দিকে ঘুম থেকে তুলে পড়াতে বসায় তাহিন।পড়া শেষে সকলের সহিত নামায আদায় করে ছয়টার দিকে বেলা আর বেলাকে নিয়ে জিমের উদ্দেশ্যে বের হয়।বেলার উসিলায় এখন মধ্যিখানে বেলি ফেসে যায়।ফলস্বরূপ তাকেও ভাইয়ের সাথে জিমে যেতে হয়।এই নিয়ে বেলির আক্ষেপের সমাপ্তি নেই।ক্ষানিক পূর্বেই ফিরেছে তারা।তাহিন সরাসরি নিজ কক্ষের দিকে পা বাড়াল।বেলি সোফায় নিজ গ্ৰীবাদেশ বাঁকিয়ে ক্রন্দনরত মুখ বানিয়ে শুয়ে আছে।আর ক্ষানিক পর পর নিজ চিত্তের ক্রোধ ঝরছে। সে বারংবার ভাইকে বলেছে তার জিমে কাজ নেই।কিন্তু তার ভাই তাকে টেনে-হিচরে সঙ্গে করে নিয়ে গেল।

__

নাস্তা করে বেলাকে সাথে নিয়ে কোথাও একটা রওনা হয় তাহিন।লেজ স্বরূপ তাদের পিছন পিছন ছুটে যায় বেলি।
.
.
চলবে ইনশাল্লাহ,,#প্রেমময়_বিষ
#মাহিমা_রেহমান
#পর্ব_১৫

___

প্রায় তিন বছর পর নিজ গৃহে পা রাখছে বেলা।তিনবছর! প্রায় তিন-তিনটা বছর সে নিজের আপন মানুষগুলোর থেকে দূরে ছিল।দূরে ছিল নিজ পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের কাছ থেকে।নিজ গর্ভধারিণীর উপর ক্ষণকাল কিঞ্চিৎ পরিমাণ চাপা অভিমান থাকলেও সময়ের সহিত তা সমীরের বেগে মিলিয়ে তা জলে পরিণত হয়েছে।মায়ের সেদিনের কঠোরতার মানে আজ বুঝতে সক্ষম বেলা।মায়ের সেদিনকার সিদ্ধান্তের জন্যই সে বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছে।নিজের সংবিৎ শক্তি ফিরে পেয়েছে।নিজেকে গড়ে তুলতে পেরেছে এক অন্য বেলায়।তাই হয়তো বলে,, মেয়েরা যা করে সন্তানের ভালোর জনই করে। এই তিন বছর করো সাথেই তার কোন প্রকার যোগাযোগ ছিল না।ফলস্বরূপ এতো বছর পর আকস্মাৎ নিজ বাড়ির মেয়েকে নিজ আঁখির সম্মুখে দেখেবার জন্য সকলে অস্থির হয়ে রয়। এই তিন বছর পরিবারের প্রতিটি সদস্য প্রতিনিয়ত রুমি বেগমকে বেলার কথা জিজ্ঞেস করে চলেছে।প্রতিদিন একবার করে হলে প্রতিটি সদস্য রুমি বেগমের শিয়রে এসেছে কেবল বেলার হাল-চাল জানতে, কোথায় আছে জানতে? কিন্তু রুমি বেগমের সেই এক কথা,, যেখানে আছে ভালো আছে।চিন্তার কোনো কারণ নেই। অগত্যা সকলে হতাশ হয়ে ফিরে যেত।সেদিন প্রভাত বেলা বেলির নিখোঁজ হওয়ার খবরটা যখন কিয়ারার কর্ণকুহরে পৌঁছাল,, সেদিন মেয়েটা বাড়ি ফেরার মুহূর্তে প্রচুর কেঁদেছিল।আদিব বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাকে নিয়ে গিয়েছিল বাড়ি।তাই আজ বোনের বাড়ি ফেরার খুশিতে সে সকলকে নিয়ে গতকালই নানুর বাড়িতে হাজির হয়েছে।কেবল আসতে পারেনি তাদের বাবা।উনার নাকি খুব ইম্পর্টেন্ট কাজ রয়েছে।

__

বেলার আসায় অপেক্ষায় অপেক্ষারত বাড়ির প্রতিটি মানুষ।মাথা ব্যথা নেই কেবল একটি মানুষের। হ্যা! ঠিকই ধরেছেন সে আর কেউ না রায়ায। অবশ্য তার মাথা না ঘামানোর কারণ ও বিদ্যমান।বর্তমানে সে খুব ব্যস্ত সময় পার করছে।বছর দুয়েক হলো সে পূর্ণরূপে ব্যবস্যায় মনোনিবেশ করেছে তার সহিত রয়েছে তার রাজনৈতিক কোলাহল। আজকাল সব কিছুই সে দৃঢ়চিত্তে সামলাচ্ছে।অবশ্য সে শুনেছিল আজকে কেউ বিশেষ একজন তাদের বাড়িতে আসতে চলছে।তবে ব্যক্তিটা কে? সে সম্পর্কে অবগত নয় সে। প্রভাত বেলা থেকে দেখে চলছে মা-চাচিদের তোড়জোড় কিন্তু সে জিজ্ঞেস করেনি কিছুই।তার এসবে আপাদত কোনো ইন্টারেস্ নেই। তবে সে এটা বুঝতে সক্ষম যে বিশেষ কেউও আসছে।

আজ এতদিন পর বেলাকে দেখার তৃষ্ণায় সকলের অন্তঃকরণের অন্তরালে কেমন হুহু করে উঠছে।বাড়ির প্রতিটি মহিলা সদস্য সদর দ্বারের সম্মুখে অশ্রুসিক্ত নয়নে বেলার পথ চেয়ে।তাদের সহিত টিনা-মিনা, কিয়ারা আর টায়রা ও উপস্থিত।টায়রা মেয়েটা কেমন এই তিনটি বছর প্রাণহীন ভাবে কাটিয়েছে।প্রিয় বান্ধবী/বোনের প্রয়োজনীয়তা সে এই কয়টি বছর হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।ফলস্বরূপ প্রিয় সঙ্গীকে বারংবার বড্ড মনে করেছে। কবে ফিরবে সে? এই আশায় বুক বেঁধে বসে ছিল সে।অবশেষে তার অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটতে চলেছে।

আকস্মাৎ বাড়ির মেইন গেটের সম্মুখে একটা গাড়ি এসে থমকাশ।গাড়ির ডোর খুলে সহসা বেরিয়ে এলো একজন সুঠমদেহি যুবক।তার পাশ্ববর্তী দ্বার উন্মোচন করে বেরিয়ে এলো এক সুশ্রী চেহারার তরুণী।সর্বশেষ গাড়ি হতে বের হল সকলের চেনা সেই মুখ।যাকে দেখে সকলের অন্তঃকরণে তুফান বইতে লাগল।সকলের চোখের কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।সকলে কেমন গোলগোল নয়নে তাকিয়ে আছে রমণীর পানে।কোথায় সকলের ছুটে এগিয়ে যাওয়ায় কথা,, সেখানে তারা স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।সকলের অন্তঃকরণে কেবল একটা প্রশ্নই ঘুরছে।আর তা হলো,, কে এই মেয়ে? এটা কি সত্যি সত্যি বেলা? নাকি অন্যকেউ?সকলের চিত্তে কেবল একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

___

রায়ায় সকলের এমন অদ্ভুত ব্যবহার দেখে কিঞ্চিৎ বিরক্তি প্রকাশ করে নিজ খাওয়ায় মনোনিবেশ করেছিল তখন।বর্তমানে তার খাওয়া শেষে সে অফিসে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে নিলে সকলের বিস্ময়কর মুখমণ্ডল দেখে হকচকিয়ে যায়।কাউকে যে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার কোন উপায় নেই অগত্যা সে সকলের দৃষ্টি অনুসরণ করে সে নিজে থমকে যায়।

এতসময় ধরে নির্নিমেষে একমাত্র মেয়ের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিল রুমি বেগম। সংবিৎ শক্তি ফিরে আসতেই তিনি ছুটে চলল মেয়ের সান্নিধ্যে। এতো বছর পর মেয়েকে নিজের সান্নিধ্যে পেয়ে হিয়ার মাঝে চেপে ধরে নিজের একমাত্র আদরের মেয়েকে।এতগুলো বছর কেবল নিজ মেয়ের ভালোর আশায় নিজের থেকে এতো দূর রেখেছিলেন তিনি।ঠিক কতটা কষ্ট নিজের মধ্যে চেপে রেখেছিল তা কেবল তিনিই জানেন! রুমি বেগমকে বেলার দিকে ছুটতে দেখে চেতনা ফিরে আসে সকলের।রুমি বেগমের পিছন পিছন সকলে ছুটে যায়।রুমি বেগম মেয়েকে নিজের অভিমুখে দাঁড় করিয়ে সর্বমুখে চুম্বনে ভরিয়ে তুলে।মায়ের এহেন ভালোবাসা পেয়ে আঁখি জোড়া টলটল করে উঠে।সত্বর গতিতে সকলে এসে বেলাকে জাপটে ধরে। কিযারা আর টায়রা এরপ্রকার কেঁদেই দেয়।বাড়ির সকলে আদর সহিত হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বেলার মাথায়।টিনা-মিনা এবার বলেই উঠল,

— বেলা আপু তুমি কত পরিবর্তন হয়ে গেছো? এখন দেখি কেমন শার্ট-পেন্ট পড়ে আছো।তোমাকে কিন্তু সেই সুন্দর লাগছে।আগের থেকে আবার কিছুটা মোটা ও হয়েছো বেলা আপু।আগের থেকে অনেক বেশি সুন্দর ও হয়ে গেছ তুমি বেলা আপু!!

টিনা-মিনার কন্ঠে অত্যাধিক বিস্ময়।বেলার পরিধানে রয়েছে লেডির শার্ট যা হাঁটুর একটু উপরে, রয়েছে লেডিস জিন্স, পায়ে রয়েছে ব্র্যান্ডেড হোয়াইট ক্যাডস।বেলা দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে অধর কোণে মুচকি হাসি ঝুলায়

রায়ায বেলার এহেন নবরূপ দর্শন করে কেমন সৎবিৎ শক্তি হারিয়ে ফেলে।পরমুহুর্তে ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে বেলার সর্বাঙ্গে নির্নিমেষ চোখ বুলিয়ে পরিধেয় বস্র দেখে দুহাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে নেয় রায়ায়।এই মেয়েকে তো সে পরে মজা বুঝবে। তিনবছরে কি কোনো সুশিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছে?নাকি উগ্র হয়ে এসেছে?কি ধরনের বস্ত্র পরিধান করে নিলজ্জের মত ধেই ধৈই করে যাচ্ছে।মুখ ঘুরিয়ে নিল রায়ায।ঠায় দাঁড়িয়ে সকলের মলোড্রামা দৃঢ় দৃষ্টিতে দেখতে লাগল।
.
.

সহসা বেলি বেলার সান্নিধ্যে এসে তার শ্রবণ পথে কিছু বাক্য ব্যক্ত করতেই সে নির্নিমেষ রায়াযের মুখপানে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে,, সকলকে থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগে,

— তোমরা এবার থামো সবাই।আমাদের এবার ভিতরে যেতে দাও।আমরা খুব টায়ার্ড তাইনা?(তাহিনের মুখপানে তাকিয়ে)

কথাটা বলেই বেলা তাহিনের বাহু আকড়ে ধরে,, পিছনে অবস্থানরত বেলির মুখপানে তাকিয়ে একটা চোখ মেরে সম্মুখে পা বাড়ায়।তাহিন হাসিমুখে বেলার সহিত ভিতরে যেতে থাকে।যাওয়ার আগে রুমি বেগমকে বলে যায় গাড়ির ভিতরে থাকা জিনিসপত্রের ব্যাপারে।রুমি বেগম আশ্বাস দেয় সে কাউকে দিয়ে বের করে নিবে।

যখন বেলা তাহিনের বাহু চেপে ধরেছিল সহসা
রায়াযের অন্তঃকরণে যেন ধাও ধাও করে অগ্নি জ্বলে উঠল।তার মনে হলো,, তার পুরো দেহে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।তার পুরো দেহ কেমন জ্বলে জ্বলে উঠছে।তার হৃৎপিণ্ড আজ কেমন বেসামাল হয়ে পড়েছে।ক্ষণকাল পর পর কেমন জ্বলে পরে যাচ্ছে তার বক্ষ।

.
.

রায়ায কম্পন দুটি অধমাঙ্গ বাড়িয়ে অফিস যাওয়ার উদ্যেশে রওনা হলো সহসা রাজিয়া বেগম ছেলের হাত আঁকড়ে ধরে বলে উঠল,

— রায়ায কোথায় যাচ্ছিস তুই? আজকের দিন অন্তত কোথাও যাস না।মেয়েটা এতগুলো বছর পর বাড়ি ফিরেছে।অন্তত আজকে থেকে যা!

রায়ায জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।নিজেকে শান্ত করে
মায়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

— মা আমি এখানে থেকে কি করব? তার চেয়ে বরং অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে,,কাজগুলো আগে কমপ্লিট করি গিয়ে।

রাজিয়া বেগম ছেলের পানে অসহায় মুখ বানিয়ে চেয়ে রইল।মায়ের এহেন চাহনি দেখে রায়াযের আর কিছু বলার সাহস পেল না।

___

ড্রইংরুমে বসে আছে বাড়িয়ে সকল পুরুষেরা।তখনই বাড়ির অন্দরে প্রবেশ করল বেলা।এতবছর বাদে মেয়েকে দেখে নিজেকে আর দমাতে পারলেন না জিসান সাহেব। আকস্মাৎ উঠে মেয়েকে নিজ বক্ষপটে চেপে ধরলেন।বাবার এহেন ভালোবাসা পেয়ে নয়ন জোড়া টলটল করে উঠল বেলার।

বাবা-মেয়ের ভালোবাসায় পর্ব সমাপ্তি ঘটলে,,বেলা এক-এক করে সকলের অদূরবর্তী হয়ে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করতে লাগল।রায়ায় ততক্ষণে নিজ আসন পেতেছে ড্রইংরুমে।সহসা রায়াযের পাশবর্তী হয়ে বসে পড়ে আদিব।বেলা সেদিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে অধর কার্নিশে ক্রুস হাসি ঝুলিয়ে সেদিন এগিয়ে যায়।

বেলাকে এদিকে এগিয়ে আসতে দেখে রায়ায আঁখি পল্লব না ফেলে তাকিয়ে থাকে একমনে।আকস্মাৎ বেলা রায়াযকে উপেক্ষা করে আদিবের সান্নিধ্যে এসে তার সহিত খেজুরে আলাপ জুড়ে দেয়।বেলা খুব হাস্যজ্বল মুখে আদিবের সহিত কথা বলছে।রায়ায বেলার মুখপানে ভ্রু কিঞ্চিৎ উচুঁ করে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।রায়াযের মনে হচ্ছে,, বেলা এবার হাসতে হাসতে আদিবের কোলে উঠে যাবে। সে সেদিন থেকে চোখ সরিয়ে ত্বরিত উঠে দাঁড়ায়।জোরে জোড়ে উত্তপ্ত শ্বাস ত্যাগ করে নিজেকে শীতল করার প্রয়াস চালায়।কিয়ৎ কাল অবহিত হওয়ার পর বেলা রায়াযের সমীপে এসে তাকে পূনরায় উপেক্ষা করে নিজ কক্ষের দিকে অগ্রসর হয়।যাওয়ার আগে রুমি বেগমকে বলে যায় তাহিনের থাকার ব্যবস্থা করতে।বেলার সহিত বেলি ও ছুটে চলে উপরে।তারা দুজন একই কক্ষে অবস্থান করবে তাই।

___

রায়াযের মধ্যে আজ অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে বেলা। এই যেমন,,মুখ ভর্তি করে দাড়ি রেখেছে।আগের থেকে সাস্থ্যটা অনেকটা ভালো হয়েছে।দেখতেও আগের থেকে অনেক সুদর্শন হয়ে গেছে।তবে চুলগুলো কেবল উস্কোখুস্কো ছিল।বেলার ভাবনায় মাঝে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেলি বের হয়ে আসে।

.

.
চলবে ইনশাল্লাহ,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here