#প্রেমসাগরের_উত্তাল_ঢেউ
লেখিকা-লাবিবা নুসরত
||পর্ব-১৪||
আয়ুস নিজের অফিসে বসে ছিল। তখনই তার কাছে একটা কল আসে। সে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জাহিন বলে,
“কেমন আছেন?”
আয়ুস~”আমি আপনাকে চিনতে পারলাম না।”
জাহিন~”আমি জাহিন। এবার চিনতে পেরেছেন? সেদিন প্রাচীর সাথে ছিলাম যে?”
আয়ুস শক্ত গলায় বলে,
“ওহ! তা আমাকে কল করার মানে কি?”
জাহিন~”কিছু কথা ছিল৷ যা আপনার জানা উচিৎ। আমি একটা জায়গার নাম বলছি আপনি একবার দেখা করুন প্লিজ!”
আয়ুস~”আপনি কি প্রাচীর হয়ে কথা বলবেন? তাহলে বলবো সরি! ওর ব্যাপারে কোনো কথা শুনতে আমি আগ্রহী নই।”
জাহিন~”ব্যাপারটা কিন্তু জরুরি। আপনি যত জলদি জানতে পারবেন আপনারই লাভ। আমি ঠিকানা মেসেজ করে দিচ্ছি। ইচ্ছা হলে আসতে পারেন।”
জাহিন কল কেটে দিয়ে প্রাচীর কেবিনে ঢুকলো। বিকাল হয়ে গিয়েছে। প্রাচীর কাছে লারা আছেন৷ ইজাজের একটা জরুরি কাজ ছিল সেটাই করতে গিয়েছেন। সব মিলিয়ে বাইরে গিয়ে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। কতো মানুষ কতো প্রশ্ন করছে৷ আর মিডিয়া তো একটা খবর পেলেই হয়! ব্যাস না জেনেই শুরু হবে গবেষণা।
জাহিন কেবিনে ঢুকেই আবার বের হয়ে গেলো। একটা কল করে আবার আসলো প্রাচীর কাছে। জাহিন আসতেই লারা চলে গেলেন। যতক্ষন তিনি ছিলেন শুধু মুখ ঢেকে কান্না করেই গেছেন। প্রাচীর এসব আর ভালো লাগছে না। এখন বাসায়ও যেতে পারবে না। পুরো দুইটা দিন এখানে। যদিও জাহিন নিজের বেশিরভাগ কাজ বাদ দিয়ে তার সাথেই ছিল। তাও এখন ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে সে।
জাহিন প্রাচীর কাছে এসে ওর পাশে বসে।
“প্রাচী? জানি তুমি অসুস্থ। এখন কোথাও যাওয়াটা তোমার জন্য কষ্টকর। কিন্তু তাও একটা জরুরি কাজে যে যেতেই হবে!”
প্রাচী~”কিন্তু কোথায় যাবো?”
জাহিন~”আছে একটা জায়গা। সমস্যা নেই হুইলচেয়ার আছে।”
প্রাচী~”আচ্ছা যাবো। কিন্তু জাহিন? ফারহান ভাইয়াকে দেখছিনা!”
জাহিন~”সবাইকে দেখতে পাবে ওখানে গেলে।”
এইবলে জাহিন প্রাচীকে কোলে নিয়ে একটা হুইলচেয়ারে বসিয়ে দিলো। এরপর গাড়ি করে একটা বাসার সামনে এলো। গাড়িতে পুরোটা সময় জাহিন প্রাচীর খেয়াল রেখেছে। এমনকি গাড়ি থেকে নামার সময়ও প্রাচী যাতে ব্যাথা না পায় সেভাবে নামিয়েছে।
বাড়ির ভিতর গিয়ে প্রাচী পুরোই অবাক। কারন সেখানে সবাই ছিল। ইজাজ,লারা,ফারহানা,আনোয়ার এমনকি প্রহরও। প্রাচী সবাইকে একসাথে দেখে বলল,
“তোমরা এখানে কেন? জাহিন? কি হয়েছে?”
জাহিন~”বলছি প্রাচী।”
ইজাজ~”আসলেই জাহিন? কি হয়েছে? আমাদের এখানে কেন ডাকলে?”
জাহিন~”খুবই জরুরি কথা জানাতে। আর একজন আসা বাকি।”
আনোয়ার~”কে আসা বাকি? আর জাহিন জানোই তো এখন কারো মন-মেজাজ ভালো নেই। সুতরাং এটা না করলেও পারতে।”
হঠাৎ সেখানে আয়ুস আসলো। প্রাচী আয়ুসকে দেখে জাহিনের হাত শক্ত করে ধরে বসলো। আয়ুস একবার প্রাচীর দিকে তাকিয়ে জাহিনকে বলল,
“এখানে কেন আসতে বলেছেন?”
জাহিন~”ওয়েট! ভাইয়া? কোথায় তুই? আয় জলদি।”
একটা ঘর থেকে ফারহান বেরিয়ে আসলো। সাথে একটা ছেলে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক মারা হয়েছে। সবাই ফারহানকে দেখে রাগ হয়েছে কিন্তু কিছু বলছে না।
প্রহর ফারহানের দিকে একবার তাকিয়েছে শুধু৷ এরপর ফারহানার হাত ধরে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। শুধু মাত্র জাহিনের কথায় সে এখনো এখানে আছে।
আনোয়ার বললেন,
“ফারহান এখানে কি করে? জাহিন জলদি য্ব বলার বল। ওকে আমি দেখতে চাই না।”
প্রাচী কিছুই বুঝতে পারছে না।
“আংকেল? আপনি ফারহান ভাইয়াকে দেখে রেগে যাচ্ছেন কেন?”
আনোয়ার~”প্রাচী মা তুমি জানো না? ও তোমাকে সেদিন কিডন্যাপ করেছিল। তোমাকে নাকি ভালোবাসে!”
প্রাচী বড়সড় একটা ধাক্কা খায়। সেদিন কয়েকটা লোক তাকে জোর করে গাড়িতে তুলেছিলো। কিন্তু ফারহানকে দেখে নি। আর যেই ছেলেটা তার সাথে এমন করেছে তার মুখ ঢাকা ছিল৷ তাই দেখতে পারে নি।
জাহিন সবাইকে চুপ থাকতে বলে নিজে ওই ছেলের সামনে গেলো। ওকে সবার মাঝে নিয়ে আসলো।
“তো মিস্টার রুদ্র শেখ! নিজে থেকে সব বলবে? নাকি আমি শুরু করবো?”
আনোয়ার ছেলেটাকে ভালো করে দেখে বলল,
“ও না একজন ডক্টর? তোর হস্পিটালেরই তো তাই না?”
জাহিন~”হুম! ডক্টর! একই সাথে মাস্টার প্ল্যান করতে পারে! তো রুদ্র নিজের থেক্র বলুন তো সব!”
লারা~”এখানে কি হচ্ছে? কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।”
জাহিন~”জানতে পারবেন আন্টি! রুদ্র নিজে বলবে! শুরু কর। নিজের স্বিকারক্তি দে জলদি। নিজের বোনকে বাঁচাতে চাইলে এখন সব বলবি।”
রুদ্র~”আমি বলছি। জাহিনের সাথে আমার পরিচয় কিছু বছর আগে থেকে। জাহিন আমার থেকে সব দিক দিয়ে বেস্ট ছিল। আমি শুরু থেকেই ওকে হিংসা করতাম। ওকে হারাতে চাইতাম। কিন্তু পারতাম না৷ একবার আমি লুকিয়ে দেখেছিলাম প্রাচীর ছবি নিয়ে একা একা কথা বলছিল ও। তখন জানতে পারি প্রাচীকে জাহিন ভালোবাসে আর প্রাচীর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।
এরপর একটা প্ল্যান করি। প্রাচীর বিয়ে ভেঙে নিজে ওকে বিয়ে করবো। তাই প্রাচীর হবু স্বামি আর প্রাচী দুজনের দিকেই আমি নজর রাখি। এরপর আমার পরিচয় হয় আরোহির সাথে। জানতে পারি আরোহি প্রাচীর চাচাতো বোন। ওর সাথে কথা বলার পর বুঝতে পেরেছিলাম যে প্রাচী বা ওর পরিবারকে ও পছন্দ করে না। তাই আমরা দুজনে মিলে কিছু ছবি তুলি। ইডিট করে প্রাচীকে আরোহির জায়গায় আনি। আমাদের প্রথম প্ল্যান সাক্সেস্ফুল হয়৷ কারন আয়ুস আরোহিকে অবিস্বাস করে বিয়েটা ভেঙে দেয়৷ এরপর আমার দ্বিতীয় প্ল্যান। সেটা ছিল প্রাচীকে বিয়ে করে জাহিনকে আরও বেশি কষ্ট দেয়া। কিন্তু তার আগেই জাহিন বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেয়। আর জাহিনের সাথে প্রাচীকে মাঝে মাঝে দেখতাম। তখন আমি প্রাচীকে কিডন্যাপ করার প্ল্যান করি।”
এইটুকু বলে থেমে যায় রুদ্র। জাহিন বলে উঠে,
“এরপরেরটুকু নাহয় আমিই বলি? আমি যখন খবর পাই যে প্রাচীর বিয়ে ভেঙে গিয়েছে তখন খুশি হওয়ার সাথে সাথে শক পেয়েছিলাম। কারন প্রাচীর বিরুদ্ধে একটা অপবাদ এসেছিল। এরপর আরোহির আয়ুসের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আমার আরোহি মেয়েটাকে সন্দেহ হয়। ফারহানের সাহায্যে আমি আরোহির উপর নজর রাখি৷ এরপর জানতে পারি রুদ্র আর আরোহির প্ল্যান সম্পর্কে। যদিও পুরোপুরি কিছু জানতে পারি নি। একই সাথে রুদ্রর কিছু অনৈতিক কর্মকান্ডের ব্যাপারে জানতে পারি। রুদ্র আসলে মেয়েদের দেশের বাইরে পাচার করতো৷ যেটাকে বলে নারী পাচার। প্রাচীকেও কিডন্যাপ করে পাচার করে দেয়ার প্ল্যান করেছিল। এছাড়াও কিছু ড্রাগ ব্যাবসায়ীদের সাথে ওর সম্পর্ক ছিল। এগুলোর প্রমান আমার কাছে ছিল। এরপর আমি আর ফারহান একটা প্ল্যান করি। ফারহানকে আমি বলি রুদ্রের সাথে ডিল করতে। কারন আমাদের হাতে রুদ্রর বিরুদ্ধে সব প্রমান ছিল। সেই মোতাবেক ফারহান আমাদের বিরুদ্ধে আছে এমন ভাবে রুদ্রর সাথে প্ল্যান করে। রুদ্র প্রথমে ফারহানকে সন্দেহ করলে। কারন ফারহান নিজের ঘাড়ে সব দোষ নিতে চেয়েছিল। আবার এটা নিয়েও সন্দেহ করেছে যে ফারহান আসলেই প্রাচীকে ভালোবাসে কিনা। কিন্তু পরে আমাদের হাতের প্রমান দেখে রাজি হয়ে যায়। তাছাড়া ফারহানের অভিনয়টা কিন্তু আসলেই টপ ক্লাস ছিল। একদম রিয়েল ভিলেনের মতো। কিন্তু একটা জায়গায় রুদ্র ভুল করে ফেলে। সেটা হলো ইজাজ আংকেলকে জানিয়ে দেয়। যদিও আমি সব সামলে নিয়েছিলাম। তাছাড়া ওর কাছে আমি নুরুলকে পাঠিয়েছি। সে রুদ্রর সব খবর আমার কাছে দিতো। আর গোডাউনে রুদ্রর একটা লোক লুকিয়ে ছিল। তাই আমাদের আরও সাবধান থাকতে হয়েছে। আর প্রাচীকে একা পেয়ে ওই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছিল ও। যার কারনে কয়েকদিন পালিয়ে থাকতে চেয়েছিল। কারন ও সত্যি ভেবেছিল যে প্রাচীকে নিয়ে ফারহান দেশের বাইরে চলে যাবে। কিন্তু পালানোর আগেই ধরে ফেলেছি।”
একবারে সব কথা বলে দম নিল জাহিন। আবারও বলল,
“আশা করি সবাই সব কিছু বুঝতে পেরেছেন। এখন যদি জিজ্ঞেস করেন আমি কেন এসব করেছি তাহলে বলবো শুধু মাত্র প্রাচীর জন্য। আমার একমাত্র ইনটেনশন ছিল প্রাচীকে এই জঘন্য অপবাদ থেকে মুক্তি দেয়া। এইজন্য আমি আয়ুসকেও এখানে ডেকেছি। আমি জানি না প্রাচীকে কতোটা ভালোবাসি কিন্তু ওর অপমান সহ্য করার মতো ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা আমাকে দেয় নি।”
জাহিনের কথা শুনে সবাই হতবাক। একটা বিয়ে ভাঙার পিছনে এতো বড় রহস্য!
প্রাচীর চোখ বেয়ে এক ফোটা পানি গরিয়ে পরে। সে নিজেও জানে না কেন।
ইজাজ ফারহানের কাছে গেলেন। ওকে জরিয়ে ধরে বললেন,
“মাফ করে দিস বাবা। না বুঝে কি বলে ফেলেছি!”
ফারহান~”আহা! আব্বু! কি বলছেন!”
জাহিন~”তোমরা একটা কথা শুনে রাখো। এখানে কোনো পুলিশ ডাকা হবে না। এই ছেলেকে আমি নিজ হাতে শাস্তি দিব।”
রুদ্র~”আমার বোনকে ছেড়ে দে প্লিজ!”
জাহিন~”আমাকে কি নিজের মতো মনে করিস? তোর বোন আমার কাছে না। যেখানে থাকার সেখানেই আছে। তুই তো সাইকো হয়ে গিয়েছিস। আমাকে হারানোর জন্য নিজের বোনের সাথে কি করেছিস মনে নেই? ও তোকে আটকাতে চেয়েছিল বলে রাগ দেখিয়ে ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে চলে এসেছিলি। ওকে হস্পিটালে ভর্তি করেছিলাম।মেমোরি লস হয়েছে ওর। ভালোই হলো। তোর মতো ভাইয়ের কাছে না থাকাই ভালো। ও তোদের এক খালার কাছে আছে।”
ফারহান~”জাহিন তুই সবাইকে নিয়ে যা। ওকে আমি দেখছি।”
তখনই প্রাচী জাহিনকে বলল,
“জাহিন? আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন প্লিজ!”
জাহিন~”ওকে! নিয়ে যাবো। ভাইয়া ওকে তুই রাখ।”
ফারহান~”এটার চিন্তা করিস না। যা তুই।”
__________________
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে প্রাচী। জাহিন পাশে বসা। হঠাৎ সেখানে আয়ুস আসে। মাথা নিচু করা। প্রাচীকে বলে,
“আমি তোমার সাথে কিছু কথা আছে!”
প্রাচী~”বলো?”
আয়ুস~”একা বলতে চাই।”
প্রাচী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“জাহিন আপনি একটু বাইরে যান।”
জাহিন রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। আয়ুস প্রাচীর একটু কাছে এসে দাড়ালো। দুজনেই নিরব।
প্রাচী নিরবতা কাটিয়ে বলল,
“আমি আসলে তোমার কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না আয়ুস। তুমি আমার বিষাক্ত অতিত। জানো তো আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছু হয় যার কারনে আমাদের আফসোস করতে হয়। আমার জীবনে তেমন একটা ঘটনা হচ্ছে তোমাকে ভালোবাসা। আসলে ভালোবাসার মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। যা আমার প্রতি তোমার ছিল না। তবে তোমাকে ধন্যবাদ! আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য। তুমি ছেড়ে গিয়েছিলে বলে আমি আজ সুখের দেখা পাওয়ার দিন গুনতে পারছি। তুমি বিবাহিত। নিজের জীবন নিয়ে সুখি থাকো। আমি তোমার সাথে নিজের লাইফ জরানোর কথা মাথায়ও আনতে পারবো না।”
আয়ুস~”আ’ম সরি! আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গিয়েছে প্রাচী। আমাকে মাফ করে দাও। একটা সুযোগ দাও!”
প্রাচী~”আমার সামনে থেকে চলে যাও আয়ুস। আমি তোমাকে আর দেখতে চাই না।”
আয়ুস চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে জাহিন এসে প্রাচীকে মেডিসিন দিলো। মুখটা ভার করে রেখেছে সে। মেডিসিন দিয়ে জাহিন যখন চলে যাবে তখনই প্রাচী ডাক দিল।
“জাহিন?”
জাহিন মুখটা গোমড়া করে প্রাচীর কাছে এসে বলল,
“কি হয়েছে?”
প্রাচী~”চলে যাচ্ছেন কেন?”
জাহিন~”আমি থাকলেও কি না থাকলেও কি? তা আয়ুসের সাথে সব ঠিক হয়েছে?”
প্রাচী মুচকি হাসলো।
“হুম বসুন এখানে।”
জাহিন প্রাচীর পাশে বসলো। প্রাচী বলল,
“আমি ওকে বলেছি আমার আর কাউকে দরকার নেই। বুঝেছেন? চলে গিয়েছে। আর আসবে না।”
জাহিন~”তোমার কাউকে দরকার নেই?”
প্রাচী~”না তো!”
জাহিন~”আচ্ছা প্রাচী সেদিন তুমি নিজের সিদ্ধান্ত জানাতে এসেছিলে আমাকে। তো কি বলতে তখন? আমাকে বিয়ে করতে রাজি ছিলে?
প্রাচী~”আমি না বলতে যাচ্ছিলাম।”
জাহিন ছোট্ট করে “ওহ” বলে মন খারাপ করে বসে রইলো। প্রাচী হাসি দিয়ে আবারও বলল,
“আমি ভেবেছিলাম আমাদের মধ্যে কিছুই হওয়া সম্ভব না। ইনফ্যাক্ট আমি নিজের জীবন নিয়ে উদাসীন ছিলাম। কিন্তু যখন ওই ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো তখন আমার সামনে আপনার মুখটা ভেসে উঠেছিল! বিশ্বাস করুন মরে যেতাম। কিন্তু নাম না জানা কোনো এক অনুভূতির কারনে আমি আপনার জন্য বেঁচে থাকার শেষ শক্তিটুকু পেয়েছি! সেইসময় আমার মনে হচ্ছিল যে আপনার কাছে গিয়ে ‘না’ বলার থেকে এটাই বেটার হয়েছে। আমার সিদ্ধান্ত ভুল মনে হচ্ছিল আমার কাছে। আর সেই নাম না জানা অনুভূতি যদি ভালোবাসা হয় তবে আমি বলবো ভালোবাসি আপনাকে। আল্লাহ আমাকে দ্বিতীয় বার বেঁচে থাকার সুযোগ দিয়েছেন। আর আপনাকে পেয়ে আমি খুশি!”
জাহিনের মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না। সে পুরো হতভম্ব হয়ে বসে আছে। শেষ আশাটুকুও ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ তার ইচ্ছা বাস্তবতার রূপ নিয়েছে ভেবেই আলাদা এক ভালোলাগা কাজ করছে তার মনের ভিতরে।
____________________
খোলা আকাশের নিচে বসে আছে ফারহান আর প্রহর।
ফারহানের বুকে মাথা রেখে রাতের আকাশ উপভোগ করছে সে।
“ফারহান?”
ফারহান গম্ভীর ভাবে বলে,
“হুম?”
প্রহর~”রাগ করে আছো?”
ফারহান~”রাগ করবো না? কিভাবে একটা চর মেরেছিলে? এখনো ব্যাথা করছে!”
প্রহর~”শুধু এটাই দেখলে? আর দুইদিন আমার উপর দিয়ে কি গিয়েছে তা জানো? বেঁচে থাকার কারন হারিয়ে ফেলেছিলাম। দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার। আর কোনোদিন এমন করবে না।”
ফারহান~”করবো না জানেমান।”
এইবলে ফারহান প্রহরের কপালে আর পেটে চুমু খায়।
প্রহর~”আমাদের কিন্তু ছেলে হবে।”
ফারহান~”তাই নাকি? তাহলে তো ভালোই। আরেকজন পাবা আমার জীবনটা আরও তেজপাতা হবে!”
প্রহর ফারহানের বুকে একটা ঘুষি দিয়ে আবারও মাথা রেখে আকাশ দেখায় মনোযোগ দেয়।
_________________
আয়ুস বাসায় এসে দেখে দেখে আরোহি পরে আছে ফ্লোরে। আর আলতাফ বাসায় ছিলেন না। আয়ুস আসার কিছুক্ষণ পরেই এসেছেন। তিনি আর আয়ুস মিলে দ্রুত আরোহিকে হসপিটালে নিয়ে যান।
ডক্টর জানায় আরীহির মিসক্যারেজ হয়েছে। আর দ্বিতীয়বার মা হওয়ার সম্ভব নেই বললেই চলে।
আরোহির জ্ঞান ফেরার পর সে বলে যে অসাবধানতার কারনে পরে গিয়েছিল। সেদিনই আয়ুস জোর করে আরোহিকে বাসায় নিয়ে আসে। আলতাফ নিষেধ করেছিলেন কিন্তু আয়ুস শোনে নি।
বাসায় এসে আয়ুস আরোহিকে সব কিছু বলে। আরোহি অনেক অনুরোধ করে বাসায় থাকতে দেয়ার জন্য। কিন্তু আয়ুস শোনে নি। আরোহিকে বাসার থেকে বের করে দেয়৷ রাস্তায় দিশা না পেয়ে হাটার কারনে আরোহির এক্সসিডেন্ট হয়। আরিফ আর নীলিমা অনেক চেষ্টা করেছেন কিন্তু মেয়েকে বাঁচাতে পারে নি। পরে আয়ুসকে তারা জিজ্ঞেস করলে মেয়ের করা এই অপকর্মের কারনে নিজেরাই লজ্জিত হয়।
মেয়ের শোক আর এই অপকর্ম মিলে তাদের জীবন বেশ যন্ত্রণাময় হয়ে উঠেছে।
আর অন্যদিকে আয়ুস নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখে। আলতাফ অনেক বুঝিয়েও ওকে ঘর থেকে বের করতে পারেন না।
নিজের করা ভুলের জন্য আয়ুস প্রতিনিয়ত পস্তাতে থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,,,,
(আজ নিশ্চয়ই সবাই সব রহস্য আর প্যাচ বুঝতে পেরেছেন? আর কোনো সমস্যা আশা করি নেই! আর প্রাচী-জাহিনের বিয়ের দাওয়াত রইলো আপনাদের!
হ্যাপি রিডিং!)