#প্রেমসাগরের_উত্তাল_ঢেউ
লেখিকা-লাবিবা নুসরত
||পর্ব-৪||
সেইদিনের ওই ক্যাবলা মার্কা হাসি দেয়া ছেলেটাই আয়ুস ছিল। প্রাচী পুরোই অবাক৷ কারন সে যে আয়ুসকে পছন্দ করতো তা মা বা বাবাকে জানায় নি। তাহলে কি কাকতালীয় ভাবেই এটা হচ্ছে? নাকি আয়ুসের কথা ভাবতে ভাবতে এই ছেলের মধ্যে আয়ুসকে দেখছে?
না এটা চোখে ভুল না। আসলেই আয়ুস। প্রাচী প্রচুর অবাক হলো। সাথে অনেক বেশি খুশি। নিজেকে সামলাতে না পেরে আগেই বলে দিল যে সে রাজি৷ আয়ুসরা চলে যেতেই প্রাচী ওর বাবাকে বলল,
“বাবা? হঠাৎ করে এসব?”
মিস্টার ইজাজ ~”বাহ! তুই রাজি হয়ে গেলি! ভালোই হলো। তোর বিয়ে অনেক ধুমধামে দিব।”
প্রাচী~”তুমি তাদের পেলে কোথায়?”
মিস্টার ইজাজ ~”আয়ুসের বাবা এসেছিল প্রস্তাব নিয়ে৷ পরে দেখলাম ছেলেটাও ভালো। ফ্যামিলিতে লোকও কম। কোনো মেয়ে নেই। আমিও রাজি হয়ে গেলাম।”
প্রাচী একটু গম্ভীর হয়ে আছে। কিন্তু মনে মনে সে খুশি। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!
এভাবেই দিন কাটছিল। আয়ুসের সাথে বেশ ভালো একটা বন্ডিং তৈরি হয়েছে প্রাচীর। মাঝে মাঝে তারা ঘুরতে যায়৷ আয়ুসের কাছ থেকে সে জানতে পারে যে আয়ুস তাকে পছন্দ করতো৷ তাই সরাসরি বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল। তবে প্রাচীও নিজের মনের কথা বলে দিয়েছিল। বেশ ভালোই কাটছিল তাদের সময়। বাগদানের তারিখ ঠিক হয়েছিল। তবে কাউকে বলা হয়ে ওঠেনি। বাগদানের ঠিক এক মাস আগে আয়ুস প্রাচীকে কল দিয়ে শুধু বলে,
“তুমি একটু বাসার নিচে আসো।”
কল কেটে যায়। প্রাচী কিছুটা অবাক হয়। আবার ভাবে হয়তো বাগদান নিয়ে কিছু বলবে। সে নিচে যায়। কিছুক্ষণ পরেই আয়ুস আসে। অবাক করার মতো বিষয় হলো তার সাথে আরোহি ছিল। প্রাচী আয়ুসের সাথে আরোহিকে দেখে অবাক হয়। কারন আরোহিদের সাথে তাদের সম্পর্ক ভালো না। হঠাৎ প্রাচী দেখে আরোহি আয়ুসের হাত ধরে আছে। এতে প্রাচী প্রচন্ড রেগে যায়। সে আরোহিকে বলে,
“কি ব্যাপার? তুমি ওর হাত ধরে আছো কেন?”
আয়ুস আরোহিকে কিছু বলতে না দিয়ে হাত ছাড়িয়ে প্রাচীর সামনে যায়। আয়ুসের এমন আচরন দেখে মিসেস লারা আর মিস্টার ইজাজ বুঝতে পারছেন না যে এসবের কারন কি!
কিছুক্ষণ প্রাচীর দিকে তাকিয়ে থেকে সবাইকে অবাক করে দিয়ে আয়ুস প্রাচীকে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়।
আর থাপ্পড়টা এতো জোরে মেরেছিল যে প্রাচী পিছনের দিকে পরে যায়। মিসেস লারা এসে প্রাচীকে ধরে বসে। ইজাজ আয়ুসের কলার ধরে বলেন,
“তোমার সাহস কিভাবে হলো আমার মেয়েকে মারার?”
আয়ুস রেগে গিয়ে বলে,
“ওর মতো চরিত্রহীনা মেয়ে এটাই ডিজার্ভ করে।”
মিস্টার ইজাজের মন চাচ্ছে আয়ুসকে মেরে ফেলতে। তাও নিজেকে সামলে তিনি বললেন,
“এসব কি ধরনের কথা? কোন সাহসে আমার মেয়েকে চরিত্র হীনা বলছো তুমি?”
আরোহি এগিয়ে এসে কয়েকটি ছবি দেখিয়ে বলে,
“দেখুন আপনার গুনধন মেয়ে কান্ড! আয়ুসের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে এরপরেও কিভাবে পারে আরেকটা ছেলের সাথে এমন অবস্থায় থাকতে?”
মিস্টার ইজাজ ছবি গুলো নিয়ে দেখেন যে একটা ছেলের সাথে কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি। ছেলেটাকে দেখা যাচ্ছে না কিন্তু মেয়েটার মুখ প্রাচীর।
প্রাচী ফ্লোর থেকে লারার সাহায্যে উঠে দাঁড়ায়। তার বাবার হাত থেকে ছবি গুলো নিয়ে দেখে। সে ভাবতে পারছে না এমন ছবি কে তুলল! তার তো কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক নেই! প্রাচী আয়ুসকে কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে,
“আয়ুস? তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না? তোমার মনে হয় আমি তোমাকে ধোকা দিব?”
আয়ুস তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,
“বিশ্বাস? হুহ! এটার মানে তোমার মতো মেয়ে জানে না। তোমাকে ভালোবেসেছিলাম! চাইলে সবার সামনে অপমান করতে পারতাম। কিন্তু করলাম না। তোমার থেকে আরোহি মেয়েটা কতো ভালো দেখেছো? গত পাঁচ বছর যাবত আমাকে ভালোবাসে। কতোগুলো বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল শুধু আমার জন্য। আর যখন আমার বিয়ে ঠিক হলো তোমার সাথে তখন ও সুইসাইড করার চেষ্টাও করেছিল। ভালোই হয়েছে এসব আগে জেনে। আমাদের পরিবারের হয়তো তোমাদের মতো টাকা বা ক্ষমতা নেই৷ কিন্তু একটা সম্মান আছে। সরি টু সে আঙ্কেল এই বিয়ে আমি করতে পারবো না। আর প্রাচী, তোমাকে আমি মাফ করবো না। তোমাদের মতো মেয়ের জন্যই সত্যিকারের ভালোবাসা বিলুপ্ত!”
আয়ুস আরোহিকে নিয়ে চলে গেল। আর পিছনে ফিরে তাকালো না। প্রাচী কান্না করেই যাচ্ছে। মিসেস লারা তাকে থামাতে পারছে না।
ইজাজ প্রাচীকে ধরে সোফায় বসালেন।
“দেখ মা, আমরা তোকে বিশ্বাস করি৷ আয়ুসের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে বাড়ির বাইরে কোথাও একা যাস নি তুই। এই ছবিগুলো যে তোর না সেটা আমি একশো ভাগ নিশ্চিত। আমার মেয়েকে আমি এমন শিক্ষা দেই নি। তুই চিন্তা করিস না। তোকে যতটা কষ্ট দিয়ে আমি তার থেকেও বেশি দেব।”
প্রাচী কান্নারত অবস্থায় বলে,
“না বাবা। ও যদি আমাকে ছাড়া ভালো থাকে তাহলে থাকুক। ওর কোনো ক্ষতি যেন আমাদের দ্বারা না হয়।”
মিসেস লারা~”আর তুমি শোনো আজ আমাদের জন্য মেয়েটা অপমানিত হলো! ওর সাথে বিয়ে না দিয়েই ভালো হয়েছে। যেই সম্পর্কে বিশ্বাস নেই সেটা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে এটাই অনেক।”
প্রাচী কিছু বলছে না। ইজাজ বললেন,
“চিন্তা করিস না। নিজেকে শক্ত রাখ। তুই না আমার স্ট্রং মেয়ে?”
প্রাচী ইজাজকে জরিয়ে ধরে।
“কিন্তু বাবা ও আমাকে বিশ্বাস করলো না কেন? ওকে কি আমার বোঝানো উচিৎ?”
ইজাজ~”না! ও নিজ থেকে যতদিন না বোঝে তুইও যাবি না। ভালোবাসার মূল মন্ত্র হলো বিশ্বাস। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম! তোর কোনো কথাই শুনলো না! আর তার থেকে বড় কথা ওই ছবিগুলো কিভাবে আসলো?”
প্রাচী~”জানি না আমি! এই ছবির ব্যাপারে কিছুই বলতে পারবো না। তাছাড়া ছেলেটা কে ছিল?”
মিসেস লারা~”আমি বলি কি এসবের শেষ পর্যন্ত যাও তুমি। আমার মেয়েকে অপমান করেছে।”
প্রাচী দাঁড়িয়ে পরে।
“এই বিষয় নিয়ে কোনো কথা হবে না। আর যে যাওয়ার চলে গিয়েছে। বাবা আমি যেন তোমাদের আর না দেখি এসব নিয়ে কথা বলতে।”
প্রাচী নিজের ঘরে চলে আসে। এখনো কান্না পাচ্ছে তার।
“এমন কেন করলে আয়ুস? তোমার কি আমার উপর একটুও বিশ্বাস ছিল না? আমি নিজেও জানি না ছবি গুলো কিভাবে এলো! আর তুমি আমার সাথে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে? আচ্ছা! তুমি যতদিন নিজের ভুল না বুঝবে আমিও তোমার কাছে যাব না।”
_____________________
____________________________
সকালে মায়ের ডাকে প্রাচীর ঘুম ভাঙে। মিসেস লারা প্রাচীর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
“কিরে মা? ওঠ! ফারহানের মা-বাবা এসেছেন। আয় জলদি। ওরা চলে যাবে।”
প্রাচী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
“মা মাত্র নয়টা বাজে! এখন যাবে কেন?”
মিসেস লারা~”দুপুরের পরে যাবে। আমি গেলাম। তুই নিচে আয়।”
লারা চলে যেতেই প্রাচী ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল। ফারহানা আফরোজ আর আনোয়ার এসেছেন। ফারহানের মা-বাবা৷ মানুষ হিসেবে বেশ সহজ-সরল। তারা খুলনা থাকেন৷ সেখানে আনোয়ার নিজের বিজনেস সামলাম। তাদের বেশ নামডাক আছে। আর ফারহানের সাথে থাকেন না কারন এখানে ফারহান একটা কম্পানির ওনার। এখানেই থাকতে হয়৷ ছেলেকে নিতে পারেন নি৷ এখানেই কম্পানি খুলেছে। আলাদা শহরে থাকলেও অনেক যোগাযোগ করেন। প্রহরকে তারা চোখে হারান। কোনো মেয়ে নেই। তাই প্রহরকে মেয়ের চোখে দেখেন তারা।
প্রাচী নিচে এসে দুজনকে সালাম দিলো। তারা কথা বলছিল তখনই ফারহান বলল,
“মা? তোমার ছোট সাহেব কবে আসবে?”
প্রহর~”আসলেই! কোথায় সে? আজ না আসার কথা?
ফারহানা~”হুম সে আজকেই আসবে। আরে ও তো খুশিতে আটখানা সুসংবাদ শুনে।”
প্রাচী বুঝতে পারলো না যে কার কথা বলা হচ্ছে। তাই সে বলল,
“কে আসবে আপুনি?”
প্রহর~”আসলেই দেখতে পারবি। আচ্ছা মা আপনি ওকে বলেছেন যে এখানে যেন আসে?”
ফারহান~”হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম।”
হঠাৎ করেই কলিংবেল বাজে। প্রাচী গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,,,,,
(আশা করি অতিত জেনেছেন। এখনো অনেক রহস্য বাকি৷ সেগুলো আস্তে আস্তে জানবেন। আর অতির পর্ব বেশি বড় করতে চাই নি। তাই আজই শেষ করে দিয়েছি। ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং!)