#প্রেমাধিকার💝[ The_Egoistic_Love ]
#Written By: Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr[ Mêhèr ]
Part: 16….
আরিয়া: সেটাই করব। শেষ করে দিব নিজেকে। [ প্রচন্ড রেগে ]
আর ঠিক তখনি হাসপাতাল থেকে ফোন আসে। আরিয়া ফোনের দিকে তাকাতেই স্ক্রিনে আঞ্জুম ভাইয়ের নামটা ভেসে উঠে। আরিয়া নিজের চোখটা মুছে দ্রুত ফোনটা হাতে নেয়।
আরিয়া: হ্যালো…. হ্যালো ইশাদ কেমন আছে???
আঞ্জুম শুধু কাদছে।
আরিয়া: কি হয়েছে কথা বলছ না কেন???
আঞ্জুম: বনু….. [ কাদছে ]
আরিয়া: প্লিজ কি হয়েছে বলো। আমি আর নিতে পারছিনা।
আঞ্জুম: ইশাদের জ্ঞান ফিরেছিল। কিন্তু উঠে এতটাই পাগলামী করছিল যে বাধ্য হয়ে ওকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে। আর তাই তোমাকে খবর দিতে পারিনি। প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসো। ইশাদ আবার উঠে তোমাকে খুজবে।
কথাটা শুনে আরিয়া স্তব্ধ লেগে গেল। ও খুশি নাকি ভয় কিছুই বুঝতে পারছে না। সবকিছু এতটাই তাড়াতাড়ি ঘটে যাচ্ছে তা আরিয়ার ধারনার বাইরে চলে গেছে।
আঞ্জুম: আরিয়া বনু কথা বলছ না যে…..
আরিয়া খুব করুনভাবে নিজের দিকে তাকায়। তারপর একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে….
আঞ্জুম: বনু…..
আরিয়া: আমি আসছি। আমার একটু দেরি হবে আসতে। তুমি ওর খেয়াল রাখ….
আঞ্জুম: কেন দেরি হবে???
আরিয়া: নিজেকে শুদ্ধ করতে হবে।
আঞ্জুম: মানে…..
আরিয়া: আমি আসছি….. [ বলে ফোনটা রেখে বসে পরে। আরিয়ার মাথা কাজ করছে না। ইশাদকে কি বলবে। আদো কি বলতে পারবে রাজের সাথে ওর বিয়ে না আজ যা ঘটে গেল তা ]
,
,
,
,
,
,
,
,
,
এদিকে সাদ কিছু বলার আগেই রাজ ওখান থেকে বেড়িয়ে নিজের বাড়ি ফিরে যায়। তাই সাদ ওর পিছে পিছে যায়….. রাজ গিয়েই ড্রিংক করছে।
সাদ: স্যার….. আপনি পার্টি থেকে কোথায় গিয়েছিলেন??? আপনাকে খুজলাম কিন্তু….
রাজ আর সাদকে কোনো কথা বলার ভুল সুযোগ দেয় না। ওকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়……
সাদ: স্যার কি হয়েছে.।।।
রাজ: পাপ করেছি আমি। নির্দোষ জেনেও আমি শুধু নিজের আবেগটাকে কন্ট্রোল করতে না পেরে…….
সাদ: কি বলছেন???? আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
রাজ: আমি….. [ কান্নার বেগ বাড়িয়ে ]
সাদ: কি হয়েছে.।।।
রাজ: আমি আরিয়াকে……
সাদ: কি করেছেন আপনি ওনার সাথে….
রাজ: আমি জোর করে নিজের অধিকার জাহির করেছি। আর যেই দোষে দোষী করে আমি এটা করেছি আমি জানি ও সেটা করেনি।
সাদ: মানে……. [ বেশ অবাক হয়ে ]
রাজ: হ্যা সাদ…. ওর করা এতদিনের অপমান, রাগ ক্ষোভ মনের মধ্যে এমন একটা রুপ নিয়েছিল যে এমন একটা জঘন্য কাজ আমি করেছি। নিজের আবেগটাকে কন্ট্রোল করতে না পেরে……. তার চেয়ে বড় কথা আমি নিজের দোষ ঢাকতে এসবের দায় ওর উপর দিয়েছি।
রাজ তারপর রাজ ওকে সবটা বলে।
রাজ: আমি ওয়াসরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। যার কারনে ভিতরে কি কথা হয়েছে সবটাই আমি শুনেছি। আর চেয়ে বড় কথা আমি জানতাম ও যা করছে সবটা আমাকে দেখানোর জন্য।
সাদ:…….. [ নির্বাক হয়ে ]
রাজ: আমি ইচ্ছে করে এমনটা করেছি৷ কিন্তু ওর সামনে এটা বলার সাহস হয়নি আমার। তাই দোষটা ওর উপর……
সাদ স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রাজ: অন্যায় করেছি আমি…..
সাদ: না স্যার আপনি কোনো অন্যায় করেনি।
রাজ: সাদ…..
সাদ: সত্যি বলছি স্যার। আমাদের সমাজে মেয়েদের কোনো ইচ্ছে থাকতে নেই। কিন্তু পরিস্থিতি চাপে তাদের সবটা করতে বাধ্য হয়। পুরুষের শাসিত এই সমাজে সব মেয়েরা বড় হওয়ার পর নিজেদের সবটা বির্সজন দিয়ে সবটা মেনে নেয়। তার মাঝে কিছু আরিয়ার মত মেয়েও থাকে যারা নিজেদের মত করে বাচতে চায়। কিন্তু কি বলুন তো স্যার এটা তো আমরা পুরুষেরা মেনে নিতে পারি না।
রাজ:………
,সাদ: কেন মেনে নেব বলতে পারেন। আপনার বিয়ে করা বউ। অধিকার আছে আপনার। বিয়েটা আপনি যেভাবেই করুন না কেন সেটা তো আপনার সাথেই হয়েছে। ইশাদকে ছোট থেকে ভালোবাসলে কি হবে স্বামী তো আপনি। অবশ্যই অধিকার আছে আপনার। এখন ও ইচ্ছে করে না দিলে জোর তো আপনাকে করতেই হত তাই না। এখন করুন বা পরে।
রাজ: সাদ …… [ মাথা নিচু করে ]
সাদ: ছোট বেলা একটা গল্প পরেছিলাম। যে একটা বাঘ হরিনকে খেতে চেয়েছিল কিন্তু বিনা দোষে হত্যা করতে পারত না। তাই সে বলেছে হরিন নাকি তার জল নষ্ট করে দিয়েছে। যখন হরিন ওকে বলে জল বাঘের নয় প্রকৃতির দান কিন্তু বাঘ তখন মানে না। কারন বাঘটার উদ্দেশ্য ছিল হরিনটাকে খাওয়া।
রাজ:…….
সাদ: আপনার কোনো দোষ দিচ্ছি না। এটাই হওয়ার ছিল। একটা মেয়ে কিভাবে নিজের স্বাধীন মত চলতে পারে। কোনো অধিকার নেই। তাকেও যে সেই হরিনের মত বাঘের থাবায় হার মানতেই হবে। এটাই যে তার নিয়তি।
রাজ:…….
সাদ: আমি আপনাকে বলছি কেন স্যার। [ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ] আমি যদি আপনার জায়গায় থাকতাম তাহলেও হয়তো এমনটাই করতাম৷
রাজ: প্লিজ সাদ তুমি অন্তত এটা বলো না।
সাদ: আমি এতদিন আপনার সাথে দেখেছি ।মেয়েদের প্রতি যথেষ্ট সন্মান করতে দেখেছি আমি। কোনোদিন কোনো মেয়ের সাথে খারাপ আচরন করতে আমি দেখেনি। তাই আরিয়া মেমকে যখন আপনার ভালো লাগে আমি অন্যায় জেনেও আপনাকে সাহায্য করেছি। কিন্তু আপনি আজ যা করলেন তাতে….. হ্যা যদি ওনার দোষ থাকত তাহলে হয়ত এমনটা করলে মনকে মানাতে পারতাম। কিন্তু কি বলুনতো আপনি নিজের প্রয়োজন মেটাতে একটা মেয়েকে ইউস করেছেন তাও তার উপর মিথ্যে কালিমার দোষ চাপিয়ে কারন আপনি নিজেকে নির্দোষ রাখতে চেয়েছেন।
রাজ:…….
সাদ: স্যার মেমতো কোনো অপরাধ করেনি। না আপনার সাথে আর না অন্যকারো সাথে। না কোনো লোভ। শুধু ইশাদকে নিয়ে থাকতে চেয়েছিল। হয়তো এটাই তার দোষ……..
রাজ:…….
সাদ: জানেন তো সময় প্রতিটি জিনিসের মুল্য মানুষকে ফিরিয়ে দেয়। আপনি যেমন আরেকজনের ভালোবাসা আলাদা করেছেন আপনার ক্ষেত্রেও না তাই হয়।
রাজ: সাদ.
সাদ: সরি স্যার। খারাপ লাগলে মাফ করে দিবেন। আমি আপনার স্নেহে এতদিন আপনাকে নিজের বড় ভাই ভেবেছি। এটা ভুলে আপনি আমার মনিব। তাই হয়তো বড় বড় কথা বলে ফেলেছি। কিন্তু কি করব ওই মেয়ে টাও যে আমাকে নিজের ভাই বলেছিল। [ সাদ আর কিছু না বলে চোখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে যায় ]
রাজ: সাদ.. আজ তুমিও ছেড়ে গেলে। আসলেই কি আমি সত্যি কোনো দোষ করেছি। নাকি পাপ করেছি। কিন্তু করব কি? আমি না চেয়েও এটা করে ফেলেছি। কারন আমি যে আরিয়াকে চাই।
আরিয়া বাসায় ফিরে ওয়াসরুমে যায়। তারপর শাওয়ারের নিচে বসে ভাবতে থাকে। কোন মুখে যাবে ও ইশাদের সামনে। কিভাবে নেবে ইশাদ এটা৷ আজ যা হল তাতে যদি এসব ইশাদকে না জানানো হয় তবে ওকে ধোকা দেওয়া হবে৷ কিন্তু……… আর কিছু ভাবতে পারল না আরিয়া। আজ ওর রাগ লাগছে না নিজের উপর করুনা হচ্ছে। কিন্তু যা হয়ে যাক না কেন আরিয়াকে তো যেতে হবে৷ কারন ইশাদ……….
,
,
,
,
,
,
,
,
,
তারপর আরিয়া তৈরি হয়ে হাসপাতালে যায়। গিয়ে দেখে ইশাদকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। আরিয়া গিয়ে ওর মাথার কাছে বসে ওর কপালে হাত বুলায়। এই হাতটাই সারাজিবন ওর মাথায় বিলি কেটেছে আর আজ এই মানুষের মাথায় হাত বুলাতে। বুলাতে বুলাতে আরিয়ার কোনা বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে থাকে।
কিন্তু এই পানির দাম কি আদো কারো কাছে আছে। ইশাদকে ওকে মেনে নিবে। না রাজ ওকে ছেড়ে দেবে। কি অন্যায় ওর। কিছুতো চাইনি ও। কোনো লোভ ছিল না। শুধু একটাই লোভ ছিল নিজের রাগ ভরা জীবনে ইশাদকে নিজের রাগের মাপকাঠি হিসেবে চেয়ে কি ভুল করেছে। কেনই বা রাজ সেদিন ওর জিবনে আসে। আর সাজানো জীবনকে কেনই বা ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেল…….
ভাবতে ভাবতে ওখানেই চোখ লেগে গেল আরিয়ার…….. সকালে ঘুম থেকে উঠে ইশাদ নিজের মাথার সামনে আরিয়ার ঘুমন্ত মুখটাকে দেখতে পায়। এক গালে হাত দিয়ে ও দেখতে থাকে আরিয়াকে।
ইশাদ: ঠিক হয়েছে। 😁😁😁 এতদিন আমার চিনতে হয়েছে তোমার জন্য এখন তুমি চিন্তা করছ আমার জন্য। [ ইশাদ আরিয়ার হাতটা নিজের গালে নিয়ে শুয়ে পরে। ]
কিছুক্ষন পর আরিয়ার ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠে আরিয়া হাতে টান খায়। দেখে ইশাদ ওর হাত নিজের গালে নিয়ে শুয়ে আছে। এটা দেখে আরিয়া ইশাদকে আস্তে আস্তে ডাকে।
আরিয়া: ইশাদ…. এই ইশাদ… । আরে এই কুম্ভকর্ণ 😡😡😡 জোরে ধাক্কা দিয়ে।
ইশাদ: আরে হাসপাতালেও কি একটু ঘুমাতে দিবা না নাকি😡😡😡
আরিয়া: না দিব না। এবার উঠ…. 😡😡
ইশাদ: ধুর এখনি এই অবস্তা বউ হলে কি করব কে জানে….??? যা করব না তোকে বিয়ে…… 😡😡😡
এতক্ষনে আরিয়া বাস্তবে ফিরে আসে। আরিয়া দ্রুত ইশাদের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। তারপর করুন চোখে ইশাদের দিকে তাকায় তারপর পিছতে থাকে……. ইশাদ বেশ অবাক হয়। কারন আগে এই কথা বললে আরিয়া রেগে ওকে মারত কিন্তু এবার ও ভয় পেয়ে দুরে চলে গেল…….
ইশাদ: কি হয়েছে আরিয়া……
আরিয়া:…… ( কিছু বলতে পারছে না। শুধু কাপছে।)
ইশাদ: আরিয়া….. [ কিছুটা অবাক হয়ে। ] আরিয়া…..
আরিয়া:…… [ হঠাৎ আরিয়ার শ্বাস বেড়ে গেছে ভয় পেলে এমনটা হয়। ইশাদের বুঝতে বাকি রইল না আরিয়া ভয় পেয়েছে। কিন্তু কেন বুঝতে পারল না। ]
ইশাদ: আরিয়া কি হয়েছে??? [ আরিয়ার শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে আর হাত পা কাপছে। ইশাদ দেরি না করে খুব শক্ত করে আরিয়াকে জড়িয়ে ধরে। ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু আরিয়ার কাপুনি থামছে না। ওর মানুষিক বোধটাই চলে গেছে। কিছুক্ষন পর আরিয়া নিজের ভরটা ইশাদের উপর ছেড়ে দিয়ে জ্ঞান হারায়। ইশাদ এতদিন কোমায় থাকার কারনে শরীর বেশ দুর্বল। তবুও অনেক কষ্টে আরিয়াকে কোলে তুলে ওর বেডে শুইয়ে দেয়।
তার কিছুক্ষন পর ইশাদ আরিয়াকে আলত করে ডাক দেয়। মুখে হালকা পানির ছিটা দিতেই ওর জ্ঞান ফেরে। ইশাদকে সামনে দেখে ও নিজেরকে সামলাতে পারেনা। ওকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেদে দেয়। এই কটা মাসের জমানো একাকিত্ব আর নিরাপত্তাহীনতা আরিয়ার মাঝে ফুটে উঠেছে।
ইইশাদ: আজব পাগলির পাল্লায় পরা গেল দেখি। আরে নানী আমি কি মরে গেছি নাকি।কয়েকদিন আপনার থাপ্পড়ের হাত থেকে বাচার জন্য ঘুমিয়ে ছিলাম। যদিও থাপ্পড় গুলো অনেক মিস করেছি…..
কিন্তু আরিয়া কোনো কথার জবাব দিল না। ইশাদকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে কাদতে লাগল।
ইশাদ: এবার কিন্তু মেজাজ খারাপ হচ্ছে😡😡 আমার বাঘিনীর চোখে পানি ভালো লাগে না।
আরিয়া:………
ইশাদ: ধুর ভালো লাগেনা। আমি তো এখন সুস্থ হয়ে গেছি এখন কেন কাদছিস….. [ আরিয়াকে জড়িয়ে ধরে একটা প্রশান্তির হাসি দিল। ]
আরিয়া: [ আমি তোকে এখন কি করে বলব ইশাদ আমি এই জন্য কাদছি না। তুই যখন জানতে পারবি আমার রাজের সাথে বিয়ে হয়েছে তখন কি হবে??? কি করে মুখ দেখাব আমি তোর সামনে যখন যানবি তোর আরিয়া আর তোর নেই। অন্য কারো জেদের স্বীকার হয়েছে। কি করবি তুই তখন। ]
কথা গুলো ভেবে আরো জোরে কেদে উঠে আরিয়া।
ইশাদ: ভয় পেয়েছিস??? কি নিয়ে ভয় পেয়েছিস। আচ্ছা বলতে হবে না। আমি এসে গেছি আমার আরিয়াকে এখন আর কেউ ভয় দেখাবে না। আমার আরিয়া এখন একদম নিরাপদ……… ]
আরিয়া: [ জানিনা ইশাদ এতোদিন অনিরাপদ মনে করতাম কিন্তু আজ যে তোকে নিয়ে ভয় হচ্ছে কারন আমার আর কিছুর ভয় নেই। ]
ঠিক তখনি রাজ কেবিনের সামনে আসে। রাজ এতক্ষনে ইশাদের জ্ঞান ফেরার খবর পেয়ে গেছে। কিন্তু রাজ এসে যা দেখল তাতে প্রস্তুত ছিল না। আরিয়া ইশাদের বুকে পরে কাদছে। যদিও এরকম কিছু হবে সেটা অস্বাভাবিক নয় কিন্তু তবুও রাজ মেনে নিতে পারল না। আরিয়ার সাথে এভাবে কাউকে দেখে ওর মাথায় রক্ত উঠে গেল…..
রাজ কেবিনে ডুকতেই…………….
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,[