প্রেমাধিকার💝[ The_Egoistic_Love ]
[ 2nd capter ]
#Written By: Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr[ Mêhèr ]
Part: 19…….
লোকটা: তবে যাওয়ার আগে একটা কথা শুনে যাও। [ আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে ]
আরিয়া: দেখুন আমি বলছি……
[ আরিয়া লোকটাকে দেখে থমকে যায়। কারন সে আর অন্য কেউ নয় রাজ নিজেই ]
আরিয়া: আপনি…. এসবের মানে কি??? 😡😡😡 আপনি কি আমার সাথে মজা করছিলেন???
রাজ: না… দেখলাম এখনো কি আগের আরিয়া আছে নাকি আমার সামনে নাটক করছিলে।
আরিয়া: আপনার কাছে সবটা মজা মনে হচ্ছে তাই না।
রাজ: মজা তো তুমি করেছ তাও আবার আমার সাথে৷
আরিয়া: আপনার সাথে বাজে কথা বলার সময় নেই আমার।
রাজ: টাকাটা কি নেবে না।
আরিয়া: চাই না আমার। [ চলে আসতে ধরে ]
রাজ: [ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় ] এটা তুমিও জানো আর আমিও যদি তোমার কাছে কোনো স্কোপ থাকত তাহলে তুমি আর যাই হোক আমার কাছে আসতে না।
আরিয়া:…….
রাজ: কিহল চুপ হয়ে গেলে যে???
আরিয়া:……
রাজ: টাকাটা তোমাকে আমি দিব কিন্তু তার বদলে আমার একটা শর্ত আছে। কারন যেহেতু তুমি টাকাটা ধার হিসেবে চাইছ তাই তার জন্য আমানত হিসেবে আমাকে কিছু দিতে হবে তোমার…….
আরিয়া: জানেন কিছু কিছু মানুষ কখনো ভালো হতে পারে না। সবকিছুতে নিজেদের স্বার্থ খুজে বেড়ায়। আজ আমার প্রয়োজন তার সুযোগ নিতে চাইছেন।
রাজ: যদি এটা ভাব তবে তাই।
আরিয়া: কি চাই আপনার….???
রাজ: তেমন কিছু না শুধু তোমার হার….
আরিয়া: মানে…..
রাজ: নিজের জেদের কারনে তুমি আমাকে একটা বার ও নিজেকে প্রুভ করার সুযোগ দেওনি অন্য কারো হাত ধরে চলে গেছ। সে যাই হোক আমি জানতে চাইব না। ইশাদ কোথায়??? আর তোমাদের মাঝে কি হয়েছে??? আমার চাওয়া হলো তোমাকে আমার সমস্ত কথা শুনতে হবে। আমি যেভাবে বলব সেভাবে চলতে হবে। রাজি আছো……
আরিয়া:…….
রাজ: ভেব না এতে তোমার সন্মানে ঘা লাগবে না। কারন তুমি হয়ত ভুলে গেছ আমাদের ডির্বোস এখনো হয়নি। এতদিন যদি তুমি ইশাদের সাথে থাক তাহলে সেটা অবৈধ সম্পর্কের বৈধতা হবে বিয়ে তো করেছিলে নিশ্চয়ই । এবার না হয় বৈধ সম্পর্কে থাকলে। চিন্তা করো না স্ত্রী অধিকার আর চাইব না। তবে…..
আরিয়া:……
রাজ: রাজি……
আরিয়া: [ আমার কাছে আর কোনো অপশন নেই। আমি নিজের কাছে আজ দায়বদ্ধ তাও তোমার জন্য। ]…
রাজ: কিহল…
আরিয়া: হুমম…..
রাজ: That’s like a good girl…… সাদ ওকে টাকা গুলো দিয়ে দেও।
সাদ: এই নিন মেম….. [ সাদের মুখে আলাদা একটা হাসি ফুটে উঠেছে ]
আরিয়া আর একমুহূর্ত দেরি করে না চলে যায় টাকাটা নিয়ে।
রাজ: সাদ খবর নেও। এমন কি কাজ যার কারনে আরিয়া বাধ্য হলো আমার থেকে টাকা নিতে।
সাদ: ওকে স্যার কিন্তু…….
রাজ: আমি সেই জিনিসটা দেখতে চাই যা আরিয়ার মত মেয়েকেও বাধ্য করল মাথা নিচু করতে।
সাদ: ওকে……
,
,
,
,
,
,
,
,,
,
সাদ আরিয়ার পিছু করতে করতে বেশ অবাক হয়। কারন ও একটা হাসপাতালে ভিতর ঢোকে। আর এই খবরটা দ্রুত সাদ রাজকে জানায়। আরিয়া হাসপাতালে ডুকে এমারজেন্সিতে যায়। ভিতরে থাকা মানুষটিকে দেখে চোখ বেয়ে জল বেড়িয়ে পরতে থাকে। কিন্তু চাইলেও ভিতরে যেতে পারে না। কারন ডক্টরের বারন। তারপর আরিয়া কাউন্টারে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে দেয়।
আরিয়া: এবার তো অপারেশন শুরু করতে পারেন।
মেয়েটি: yes mem……
আরিয়া: আমি কি ওকে দেখতে পারি।
মেয়েটি: সরি মেম অপারেশন না হওয়া পর্যন্ত দেখা করা যাবে না। পেশেন্টের ক্ষতি হতে পারে।
আরিয়া: ওকে…. [ পিছনে আসার সময় মেয়েটি ডাক দেয় আরিয়াকে ]
মেয়েটি: ম্যাম কাইন্ডলি শুনছেন।
আরিয়া: জি….
মেয়েটি: আপনি ফর্মপুরন করার সময় ওর বাবার নাম লিখতে ভুলে গেছেন। মানে আপনার হাজবেন্ডের নাম লিখেন নি।
আরিয়া:……
মেয়েটি: মেম কাইন্ডলি বলবেন।
আরিয়া:…….
মেয়েটি: any problem mem…..
আরিয়া: নাহহহ….
মেয়েটি: আসলে মেম আমাদের কিছু রুলস আছে। আইরার বাবার নামটা…
আরিয়া বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকে…..
আরিয়া: আমার মেয়ের বাবা নাম…….
রাজ: রাজ আহমেদ….. [ কথাটা শুনে আরিয়া পিছনে তাকিয়ে রাজকে দেখতে পায়। অবাক না হলেও ভয় ঠিকি পায় ]
আরিয়া: আপনি….
রাজ: ওনার মেয়ের বাবার নাম রাজ আহমেদ……
মেয়েটি: ওকে….. সবকিছু কমপ্লিট হয়ে আছে। যেহেতু টাকা জমা করে দিয়েছেন এখন আমরা অপারেশন শুরু করতে পারি।
রাজ: ও তাহলে এটা ছিল তোমার হার মানার কারন। নিজের মেয়ে। That’s Great….
আরিয়া: আপনি এখানে…..
রাজ: যেই জন্য ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করলাম সেটা দেখতে হবে না। যে আমি কিসে ইনভেস্ট করেছি।
আরিয়া:……..
রাজ: মেয়েটা কি তোমার…… মনে ত তাই হচ্ছে।
আরিয়া: হুমম।
রাজ: যাক কিছু তো ছিল যা তোমার মত মেয়েকেও হারতে বাধ্য করে। সে যাই হোক আমি কিন্তু অবাক হইনি। এটাই স্বাভাবিক। তবে জানতে ইচ্ছে করছে মেয়ের বাবা কই। কারন যেটা মনে হলো তাতে তো……
আরিয়া: দেখুন এখানে এসব কিছু বলবেন না। আমার মেয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তাই দয়া করুন…..[ কান্না কণ্ঠে ]
রাজ আর তেমন কিছু বলল না।
রাজ আরিয়া দুজনেই O.T সামনে দাড়িয়ে আছে। আরিয়া নিজেকে শক্ত রেখেছে ঠিকি কিন্তু চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। রাজ বার বার আরিয়ার দিকে তাকাচ্ছে। একটা মানুষ কতটা অসহায় হতে পারে তা আরিয়াকে দেখে বোঝা যাচ্ছে। নিজেকে শক্ত রাখলেও বারবার ওটির দরজার দিকে তাকানো রাজকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে আরিয়া ভিতর থেকে কতটা ছটফট করছে। আরিয়া শক্ত হয়ে থাকলেও শান্ত হতে পারছেনা। তখন রাজ গিয়ে ওর পাশে বসে…..ওর দিকে রুমাল দেয়। কিন্তু আরিয়া তা নেয় না।
রাজ: কি নাম ওর…..
আরিয়া:……
রাজ: জানি মেয়েটা তোমার তা বলে কি আমাকে বলতে পারবে না।
আরিয়া: আইরা আরিয়াত…..
রাজ: আ…ই.. রা…. মানে আরিয়া, ইশাদ… [ তার পরের নামটা বলতে থমকে যায়। ] শেষ নামের অক্ষরটা কি আমার আরিয়া।।।
আরিয়া:……..
রাজ: থাক বলতে হবে না। আর ইশাদ কই….
আরিয়া:…….
রাজ: যার মেয়ে সে কি জানেনা তার মেয়ের কি অবস্থা……
আরিয়া করুন চোখে রাজের দিকে তাকায়……
আরিয়া: হয়তো জানেনা। জানলে কি হত তাও হয়তো জানিনা।
রাজ বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে…..
রাজ: আরিয়া তুমি কি বলবে না ইশাদ কই?? জানিনা কি হয়েছে কিন্তু যেহেতু ওর মেয়ে ওকে জানানো দরকার।
আরিয়া: সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না।আমার মেয়ের ব্যাপারে যা ভাবার আমি ভাববো।
রাজ আর কথা বাড়াল না।
,
,
,
,
,
,
,
,
প্রায় ২ ঘন্টা পর ডক্টর বের হয়। আরিয়া পাগলের মত ছুটে যায় ডক্টরের কাছে।
আরিয়া: আমার মেয়ে আইরা। ও কেমন আছে……
ডক্টর: নাও সি ইজ ফাইন….. কাল ওকে বেডে দেওয়া হবে। আপনি ওর সাথে কাল দেখা করতে পারবেন।
আরিয়া: Thanks doctor…. Thanks a lot.. [ কান্না করে দিয়ে ]
ডক্টর: It’s my duty……
আরিয়া ওখানে বসেই কান্না করে দেয়। মুখে অদ্ভুত মমতা জড়ানো একটা হাসি ফুটে উঠেছে। রাজ অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। আরিয়ার শুকনো মুখে একটা প্রশান্তির হাসি দেখতে পাচ্ছে। যা হয়তো এর আগে কোনোদিন দেখেনি।
,
,
,
,
,
,
,
সকালে আরিয়া কেবিনে ডুকে দেখে আইরার জ্ঞান ফিরেছে…….. সাথে রাজও ঢুকে। দেখে আনুমানিক ৩-৪ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে শুয়ে আছে। দেখতে বেশ কিউট। মেয়েটাকে দেখে রাজের বুকে মোচর দেয়। অদ্ভুত একটা আবেগ কাজ করে রাজের।
আরিয়া: কেমন আছেন আপনি??? [ নিজের চোখ মুছে ]
আইরা: এতক্ষন তো ভালোই ছিলাম। কিন্তু তুমি এসেছ তাই আর ভালো থাকতে পারলাম না। [ বেশ বিরক্ত হয়ে ]
নার্স: এটা কি বলছ তুমি তো তখন থেকে মামনি মামনি বলে মাথা খারাপ করছিলে….
আইরা: তুমি চুপ করো। বেশি জানো নাকি আমার চেয়ে…. শুধু বাজে বাজে ওই ওষুধ গুলো খাইয়ে যাচ্ছে উফফফ…..
আরিয়া: আইরা….
আইরা: দেখ….. [ তখনি রাজের দিকে খেয়াল যায়। ভ্রু কুচকে তাকায় ওর দিকে। রাজ বেশ ইতস্তত হয়। বাচ্চা মেয়েটা এমন ভাবে দেখছে যেন সে কোন চোর ] Hay u… তুমি কে???
রাজ: আমি কে??
আইরা: উফফফ পাগল হয়ে যাব আমি??? এমনিতে এখানে ভালো লাগছে না তার পর এই সিংচেনের আব্বু….
রাজ: মানে….. 🙄🙄🙄
আরিয়া: আইরা…. তুমি সুস্থ নও😡😡😡
আইরা: তুমি বেশি বুঝো কেন??? আর এইযে আপনি কে???
রাজ: আমি তোমার…….
আইরা: দেখ আমি এমনিতেই একজনের জালায় মরছি তুমি আমাকে ডিস্টার্ব করো না।
রাজ: বলে কি পিচ্চিটা…. [ তবে বেশ মজা পায় ]
আইরা: এই ডোন্ট কল্ড মি পিচ্চি….
রাজ: ওকে বুড়ি……
আইরা:তুমি😡😡😡
আরিয়া: আইরা 😡😡😡 তুমি এখনো সুস্থ নও তোমার ব্রেনে ইফেক্ট পরবে। খেয়ে ঘুমিয়ে যাও।
আইরা: উফফফ ভালো লাগে না। 😡😡
তারপর আরিয়া ওকে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়ায়। আর সাথে ঝগড়া তো আছেই। রাজের বেশ মজাই লাগছিল আইরার কথায়……. আরিয়া ওকে ঘুম পাড়িয়ে বাইরে এসে দাঁড়ায়। সাথে রাজও….
,
,
,
,
,
,
,আরিয়া: দেখেছ কি দর্শী মেয়ে আমার। কাল অপারেশন হল আর আজ……
রাজ: [ যেমন মা তেমন মেয়ে ] হুমম…. তা কি হয়েছিল সেটাই তো বললে না।
আরিয়া: এতদিন ঠিক ছিল। কিন্তু হঠাৎ মাথা ঘুরে পরে যায়। অনেক ডেকেছি কিন্তু জ্ঞান ফেরেনি। তাই হাসপাতালে নিয়ে আসি। আর ওনারা বলে আইরার ব্রেনে কিছু হয়েছে কয়েকঘন্টার মাঝে অপারেশন না করলে হয়ত ওকে বাচানো যাবে না। নয়ত চিরজিবনের জন্য……
রাজ: আর এই কারনেই তুমি বাধ্য হয়ে আমার কাছে এসেছ।
আরিয়া: হুমম কিছুদিন আগেই এখানে এসেছিলাম একটা কাজে। কিন্তু সেটা যে আবার অতিতের সামনে দাড় করাবে জানা ছিল না।
রাজ: তা ভালই…. শেষ মেশ নিজের সন্তান তোমাকে হার মানালো। তোমার জেদ ভাঙালো।
আরিয়া: একটা মেয়ের যতই ইগো, রাগ অভিমান, জেদ থাকুক না কেন যখন তার সন্তানের দিকে আচ আসে তখন সেগুলো তার কাছে কোনো মেটার করেনা। বাবা ঠিক বলত যখন মা হবি তখন বুঝবি কেন সন্তানের কথা মেনে নেই।
রাজ: আইরার জন্য সব পারো তুমি…..
আরিয়া: সন্তান যদি বাবা মাকে দুরে ঠেলে দেয় তবুও বাবা মা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে না। আমার রাগ জিদ অভিমান সবটা মুছে যায় যখন আমি ওর মুখটা দেখি। আগে কিছু না পেলে মরে যেতে ইচ্ছে করত। আর এখন হাজার না পাওয়া সত্ত্বেও বাচতে ইচ্ছে করে যাতে ওর সব চাওয়া পুরন করতে পারি। মেয়েরা সব কিছু নিয়ে অভিমান করতে পারে শুধু পারে না নিজের সন্তানের সাথে। সন্তানের জন্য এক মা মরতেও পারে। নিজের জমানো সব রাগ জেদ আমি বির্সজন দিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম যাতে আমার মেয়ের মুখের মা ডাকটা থেকে বঞ্চিত হতে না হয়। কাল যখন ডক্টর আমাকে ওর ওই অবস্থার কথা বললো তখন আমি কে কি কেন তা মনে ছিল না। শুধু একটা কথাই মনে ছিল যেকরেই হোক আমার সন্তানকে আমার বাচাতে হবে। যার জন্য রাতের পর রাত জেগেও কষ্ট হয়নি। যার কান্নাতে আমার বুক ফেটে যায়। যার একটা হাসির জন্য আমি চাইলেও চাদটাও এনে দেওয়ার চেষ্টা করি আর যাই হোক সেই অমুল্য মাতৃত্বের স্বাদ আমি ছাড়তে পারব না। কারন এই স্বাদ সবাই পায় না। যারা পায় তারা ভাগ্যবতী। এই এর চেয়ে বেশি সুখের একটা মেয়ের জন্য আর কিছু হতে পারে না। [ চোখটা বন্ধ করে প্রশান্তির নিশ্বাস নিয়ে ]
,
,
,
,
,,
,
,
,
,
[ বাকিটা পরের পর্বে জানবেন ]