প্রেমের জোয়ার ভাটা পর্ব -০২

#প্রেমের_জোয়ার_ভাটা
#পর্ব_০২
#অধির_রায়

প্রেম, ভালোবাসা এক অদ্ভুত মায়া। মন কখনও বাঁধা মানে না৷ মন পড়ে থাকে সেই ভালোবাসা প্রেয়সী মানুষটার কাছে৷ আরুশের মনে নাড়া দিচ্ছে মীরার সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো। কেন সময় চলে যায়? থমকে যেতে পারল না। মুগ্ধতার চাহনিতে দুই নয়ন শুধু মীরাকেই দেখতো৷

আঁধার কেটে ভোরের আলো ফুটেছে ধরনীর বুকে৷ আরও একটি নতুন দিনের সূচনা করলেন সূর্যদেব। ঝলমলের রোদের আলোয় পাশাপাশি হাঁটছে নিষ্পাপ দু’টি প্রাণ৷ স্তব্ধতা বিরাজ করছে দু’টি দেহে৷ ক্ষণে ক্ষনে চোখাচোখি, ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসি।কথা বলার জন্য ওষ্ঠদ্বয় আকুল হয়ে আছে৷ কোথা থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না কেউ? আরুশ লজ শরম দূরে রেখে নম্ব স্বরে বলল,

“মীরা তুমি দেখতে অনেক সুন্দর! বিশেষ করে তোমার ডাগর আঁখি দু’টো মায়ায় ভরা। যে কেউ তোমার চোখের প্রেমে পড়বে৷”

মীরা মুচকি হেসে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল,

“জানিনা আমার চোখ কতোটা সুন্দর। আমার বান্ধুবী আমার চোখকে গরুর চোখের সাথে তুলনা করতো৷ তার কথা আমি বিশ্বাস করতাম না৷ কারণ বন্ধুদের কথা সব বিশ্বাস করতে নেই৷ তেমনই আপনার কথাও আমার ততটা বিশ্বাস হলো না৷”

মীরার কথায় আরুশ উদাস পাড়ায় চলে গেল৷ উদাসীন মলিন কন্ঠে বলল,

“আমি কবি হলে তোমার সৌন্দর্যের কথা অপরূপভাবে উপস্থাপন করতাম। প্রেমিক হলে মুগ্ধ নয়নে তোমায় দিনভর নয়ন ভরে দেখতাম৷ মনের তৃপ্ত বাসনা পূর্ণ করতাম৷”

মীরা অবাক চোখে মিহি কন্ঠে বলল,

“ভাইয়া আমি আপনার ছোট বোনের মতোই৷ আমাকে নিয়ে এসব স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেন৷ ভাইয়া না বললে আপনার সাথে ঘুরা তো দূর কথাও বলতাম না৷ আপনি ভালো বলেই আপনার সঙ্গ দিছি৷”

আরুশ আনমনে বিরবির করে বলল,

“আমি তোমাকে নিজের করে পেতে চাই৷ তার জন্য আমাকে যা করতে হবে আমি তাই করব। আমার ভালবাসায় তোমার ভাই বা ফ্যামিলি বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে আমি তাদের আমার ভালোবাসা বুঝাব৷ আমার থেকে কেউ তোমায় বেশি ভালোবাসাতে পারবে না৷”

“আপনি একা একা কি বলছেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না৷ একটু জোরে বলেন৷”

আরুশ মুচকি হেঁসে জবাব দিল,

“তেমন কিছু নয়৷ তুমি খুব মিশুক এবং চালাক৷ তবে আমি ভালোবাসার কথা বলিনি৷
তুমি কি আমাদের সাথেই ঢাকা যাবে?”

মীরা মাটির দিকে তাকিয়ে জবাব দিল,

“জ্বি। আমি আপনাদের সাথেই ঢাকা যাব৷ ভাইয়া আমাকে নিয়ে যেতেই বাড়িতে আসছে৷ আমি ঢাকায় গিয়েছি দুই তিন বার৷ কিন্তু থাকা হয়নি৷ সেজন্য ঢাকায় পথঘাট কিছুই চিনি না।”

“ধীরে ধীরে সব চিনে যাবে৷ মন দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে৷ আমি কিন্তু মাঝে মাঝে খরব নিব৷”

মীরা আমতা আমতা করে বলল,

“আপনাকে একটা কথা বলি। রাগ করবেন না কিন্তু?”

আরুশ মুচকি হেঁসে মীরার কথার জবাব দিল,

“তোমার মনে যা আছে নিঃসন্দেহে বলতে পারো৷ আমি কিছু মনে করব না৷”

“আপনার রাতে ঘুম হয়না৷ ভাইয়ার কাছে শুনেছি আপনি অনেক বড়লোক ঘরের সন্তান৷ অনেক রাত করে ঘুমান৷ কিন্তু ভোরেই উঠে পড়েন৷ আমরা গরিব৷ আমাদের এখানে ঘুমাতে কোন অসুবিধা হচ্ছে৷ ভাইয়া তো ঘুমিয়েই আছে৷”

মীরার কথায় কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না? আরুশ মুচকি হেঁসে বলল,

“তেমন কিছুই না৷ আমার ঘুম সকালেই ভেঙে যায়৷ বাসায় থাকলে আবার ঘুমাতাম। গ্রামের পরিবেশ অনেক সুন্দর। সকালের মাতাল হাওয়া মনে তৃপ্তি নিয়ে আসে৷ মন খুলে শ্বাস নিতে পারি৷ সেজন্য সকালে ঘুমাতে ইচ্ছা করে না৷”

মীরা উত্তেজিত উল্লাস কন্ঠে বলল,

“সত্যি! আপনার গ্রাম খুব ভালো লাগে৷ আমারও খুব ভালো লাগে৷ আমি ঢাকায় ঘুরতে গেছিলাম। আমার একদম ভালো লাগেনি৷ মনে মনে বলছি কখন বাড়িতে আসব! ঢাকায় খাঁচা বন্ধির পাখির মতো নিজেকে বন্ধি রাখতে হয়৷ আমার ধম ফুরিয়ে যায় ঢাকায়৷”

“এখন থেকে তোমাকে ঢাকায় থাকতে হবে৷ ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে৷ বোরিং হলে আমায় ফোন দিবে৷ আমার সাথে কথা বলবে এমনিতেই মন ভালো হয়ে যাবে৷”

মীরা সন্দেহ প্রবণ চোখে তাকিয়ে বলল,

“আপনাকে কেন ফোন দিব? মন খারাপ করলে ইহান ভাইয়া আছেন। বাড়িতে মা বাবা আছেন। মন খারাপ হলে তাদের ফোন দিব৷”

“তুমি দেখছি ঝগড়ায় মেতে উঠছো৷ আমাকে বড় ভাই হিসেবে ফোন দিবে৷ যাক বাবা আমাকে ফোন দিতে হবে না৷”

“আপনার সাথে ঝগড়া করার কোন ইচ্ছাই আমার নেই৷ বাড়িতে চলেন৷ মা আপনার জন্য পিঠাপুলি বানিয়েছেন৷ দেরি করলে মা আমাকে বাড়ি ছাড়া করবে৷”

আরুশ মুচকি হেঁসে বলল,

“চল! তোমাকে বাসা ছাড়া থেকে উদ্ধার করি৷”
_______

গ্রামের সময়কার ঘনিয়ে আসছে৷ ঢাকায় যেতে হবে৷ গ্রামে থাকা অবস্থায় মীরাকে এখনও ভালোবাসার কথা বলা হলো না৷ ঢাকায় কি বলতে পারবে? মীরা কি আরুশের ভালোবাসা বুঝতে পারবে?

আজ দুই দিন হলো আকন্দপুর গ্রাম থেকে ঢাকায় আসছে আরুশ৷ দুই দিন থেকে কোন কথা নেই মীরার সাথে৷ একটু কথা বলার জন্য মনটা কুঁকড়ে যাচ্ছে৷ মীরার মায়াবী হাসি, ডাগর আঁখি আরুশ ভুলতে পারছে না৷ বেস্টফ্রেন্ড বোন বলে কিছু বলতেও পারছে না৷ কিভাবে যোগাযোগ করবে বুঝতে পারছে না? ফেসবুক মীরা নাম দিয়ে সার্চ দিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেছে৷ লাজ শরমের মাথা খেয়ে ইহানকে ফোন দিল৷ ইহান ফোন পিক করল৷ কিন্তু কিছু বলতে পারল না৷ আমতা আমতা করে আরুশ ফোন রেখে দিল৷ ইহান পুনরায় ফোন দিল। ইহান অপর পাশ থেকে বলল,

“কি হয়েছে? এভাবে ফোন রেখে দিলি কেন? কোন কিছু হয়েছে?”

আরুশ মনে সাহস নিয়ে বলল,

“দোস্ত আমি একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছি৷ তাকে হাজার ভুলার চেষ্টা করছি৷ কিন্তু কিছুতেই ভুলতে পারছি না৷ তার হাসি ঝর্নার জলের মতো কানে বাজে৷ তার ডাগর আঁখি আমায় মুগ্ধ করে৷ তার নিষ্পাপ চাহনি আমি ভুলতে পারছি না৷”

ইহান মুচকি হেঁসে বলল,

“তাকে প্রপোজ কর৷ তোর মনের কথা তাকে জানিয়ে দে৷”

“কিভাবে জানাব? তার সাথে কোন যোগাযোগ নেই। ফেসবুক একাউন্টও জানি না৷”

ইহান হতাশ কন্ঠে বলল,

“তুই তাকে ভুলে যা। তুই মরীচিকার পিছনে ছুটা বন্ধ কর। কোনদিন তার সাথে দেখা হলে ফেসবুক একাউন্ট চেয়ে নিবি৷”

“আমি তাকে অনেক ভুলার চেষ্টা করছি৷ কিছুতেই ভুলতে পারছি না৷ সে আমার মনে ভালোবাসার বীজ রোপণ করেছে৷ তাকে সনে ঘর বাঁধার স্বপ্ন বুনেছি। আমি তাকে কোনদিন ভুলতে পারব না৷ তুই একমাত্র পারিস আমাকে সাহায্য করতে।”

ইহান গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল,

“আমি তোকে কিভাবে সাহায্য করব? আমি কিভাবে চিনব৷ পা’গ’লের মতো কথা বলা বন্ধ কর৷ ফোন রাখ৷ আমি টিউশনিতে যাব৷”

“তুই আমার সাথে দেখা কর৷ আমি তোকে সব খুলে বলব৷ তুই তাকে খুব ভালো করে চিনিস৷”

“আমাদের ডিপার্টমেন্টে কেউ? আমাদের ডিপার্টমেন্টে হলে আমি সাহায্য করতে পারি৷”

“ধন্যবাদ দোস্ত৷ তুই একমাত্র পারবি আমাদের ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে৷”

আর কিছু না বলে আরুশ ফোন রেখে দিল৷ ইহান আরুশের কথা কিছু বুঝতে পারল না৷ সবকিছু ইহানের মাথা দিয়ে গেল৷ ইহান এসব ভাবনা এক দিকে রেখে নিজের দিকে মন দিল৷
_______

চার বন্ধু মিলে ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল৷ আরুশ গিটারে টুংটাং শব্দ তুলছে। সাদাফের কন্ঠে ধ্বনিত্ব হচ্ছে রবীন্দ্র সংগীত। সাদাফ কন্ঠে রবীন্দ্র সংগীতের কোন তুলনা হয়না৷ ভার্সিটির প্রতিটি ইভেন্টে সাদাফের কন্ঠে রবীন্দ্র সংগীত থাকবে৷ মন উজার করে রবীন্দ্র সংগীত গায় সাদাফ৷ আড্ডার মাঝে ইহানের ডাক পড়ে৷ আরুশ ঘাড় ঘুরিয়ে মীরাকে দেখতে পাই৷ আরুশের মনের তৃপ্ত বাসনা পূর্ণ হয়৷ আরুশ হা করে তাকিয়ে আছে মীরার দিকে৷ ইহান খেয়াল না করলেও সাদাফ, রঙ্গন খেয়াল করেছে। সাদাফ আরুশের কাঁধে হাত রেখে বলল,

“দোস্ত কবে থেকে চলছে৷ তুই ইহানের বোনের সাথে প্রেম করিস৷”

ইহান মীরা সেখান থেকে চলে যাওয়ায় আরুশ, সাদাফ, রঙ্গনের কোন কথা শুনতে পাইনি৷ আরুশ আমতা আমতা করে বলল,

“কি বলিস এসব? আমি কেন মীরার প্রেমে পড়তে যাব৷ আমি তো মীরাকে চিনিই না৷”

রঙ্গন উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,

“মামা তুমি ইহানের বোনকে চিননা৷ কিন্তু ইহানের বোনের নাম জানো৷ ইহান তো কাউকে তার বোনের নাম বলেনি৷”

সাদাফ রঙ্গনকে থামিয়ে বলল,

“আরুশ তুই সবাইকে ফাঁকি দিতে পারলেও আমাকে ফাঁকি দিতে পারবি না৷ যা করবি ভেবে চিন্তে করবি৷ ইহানের বোন হয়৷ আমাদের থেকে ইহান তোকে বেশি ভালোবাসে৷ এমন যেন না হয় তোদের বন্ধুত্বের মাঝে ফাটল ধরে৷”

ইহান ছলছল নয়নে বলল,

“আমি কি করব? আমি কিছুতেই মীরাকে ভুলতে পারছি না৷ মীরা আমার হৃদয়ের সাথে মিশে রয়েছে। আমার বা পাশের হাড় দিয়ে মীরার সৃষ্টি। আমি তাকে অনেক ভুলার চেষ্টা করছি৷ তার হাসির শব্দ, ডাগর আঁখি, মন মাতানো সুরেলা কন্ঠ আমায় ভুলতে দেয়না৷ প্লিজ দোস্ত আমাকে তোরা সাহায্য কর৷”

সাদাফ ভেবে চিন্তে বলল,

“তোর ভালোবাসায় কিছু হবে না৷ মীরাকেও তোকে ভালোবাসতে হবে৷ যদি মীরা তোকে ভালোবাসে তাহলে আমরা তোকে সাহায্য করব৷ ইহানকে আমরা বুঝাব৷ তোর ফ্যামিলিকে তোকে রাজি করাতে হবে৷ তোর ফ্যামিলি যদি গরিব বলে দূরে ঠেলে দেয় তখন তুই কি করবি?”

আরুশ সাদাফের হাত ধরে বলল,

“আমি আমার ফ্যামিলিকে মানিয়ে নিব৷ তারা ঠিক মীরাকে মেনে নিবেন৷ আমার ফ্যামিলি থেকে কোন সমস্যা হবে না৷”

“চল আমরাও তাদের ভাই বোনের সাথে যোগদান করি৷ এ সুযোগে আরুশ মীরার সাথে কিছু কথা বলতে পারবে৷” (রঙ্গন)

রঙ্গনের কথায় আরুশ খুব খুশি হলো৷ খুশিতে আত্মহারা হয়ে রঙ্গনকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“তোদের মতো বন্ধু যেন সবার হয়৷ আমি তোদের মতো বন্ধু পেয়ে আমার জীবন ধন্য।”

চলবে…..

কাল থেকে আসবে মূল কাহিনি। অনেকদিন থেকে লেখা হয়না৷ খাপছাড়া লেখা হচ্ছে মনে হয়৷ চেষ্টা করব ভালো কিছু লেখার৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here