প্রেমের পরশ পর্ব – ২৪ |লেখক -দিশা মনি

#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

কাজি অফিসে প্রবেশ করল আমান ও ছোয়া। অতঃপর তাদের বিবাহ সম্পন্ন হলো। বিয়েটা হয়ে যাওয়ার পর আব্দুল হোসেন বললেন,
‘এবার বিয়েটা তো কোন ভাবে দিয়ে দিলাম। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল নিজের ছেলের বিয়েটা বড় করে অনুষ্ঠান করে দিবো। সেই ইচ্ছাটা পূরণ অবশ্যই করব। আপাতত যেমন তেমন করে বিয়ে দিলাম৷ কয়েক দিন পর ঠিকই বড় অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে।’

এসবের মধ্যে ছোয়া ও আমান একে অপরের দিকে তাকাতে পারছে না। দুজনেই যেন লাজুক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ছোয়া অনেক লজ্জা পাচ্ছে। এভাবে হঠাৎ করে যে আমানের সাথে তার বিয়েটা হবে সেটা তো তার চিন্তার বাইরে ছিল।

আমানের অবস্থাও ভিন্ন নয়। সেও ভাবতে পারেনি এত কিছুর পরে ছোয়াকে সে পাবে। তবে আজ আমান একটা কথা বিশ্বাস করে নিয়েছে। মন থেকে চাইলে ঠিকই সব পাওয়া যায়। আমান ছোয়াকে এত করে চেয়েছিল জন্যই তো তাকে পেল। অবশেষে জড়তা ত্যাগ করে ছোয়ার দিকে তাকালো সে। অতঃপর মনে মনে বলল,
‘আমি তোকে অনেক করে চেয়েছি ছোয়া। জানি না তুই আমাকে কতটুকু চাস। যেহেতু তুই বিয়েটা মেনে নিয়েছিস তাই আমার মনে হয় আমাকে নিয়ে তোর কোন সমস্যা নাই। তবে আমি কোনভাবেই আগ বাড়িয়ে তোর কাছে আসব না। তুই যেদিন চাইবি সেদিন আমি তোর কাছে যাব। তবে বেশি দেরি করিস না তুই। কারণ আমি বেশি ধৈর্য ধারণ করতে পারব না।’

ছোয়া আপনমনে ভাবছিল,
‘আমাদের বিয়েটা তো হয়ে গেল। কিন্তু এরপর কি হবে? এই সম্পর্কের কি পরিণতি হবে? বিয়ে যখন হয়ে গেছে তখন এখন আমি আর আমান ভাই স্বামী-স্ত্রী। আমাদের আর চার পাচটা স্বামী স্ত্রীর মতোই থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের সম্পর্ক কি আদৌ এত সহজ হবে? কোথাও একটা জড়তা যেন থেকেই যায়।’

৪৭.
আব্দুল হোসেন হাবিব, ছোয়া এবং আমানকে সাথে নিয়ে আদরদের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন। জান্নাতুল খাতুন তাদেরকে আসতে দেখে এগিয়ে আসেন। সবাইকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
‘তোমাদের আসতে এত দেরি হলো কেন? জানো আমরা কতক্ষণ থেকে অপেক্ষা করছিলাম। আলিয়ারা অনেক আগেই এসেছে। ওরা তো বলল, ছোয়া নাকি তোমাকে ফোন করে কি বলল তারপর দৌড়ে চলে গেল কোথাও। তোমরা ছিলে কোথায় বলো তো?’

ততক্ষণে আদরের বাবা জহির উদ্দিন চলে এসেছেন। তিনি বললেন,
‘যা আলোচনা করার পরে করা যাবে। এখন আগে বিয়েটা হয়ে যাক। আপা তুমি তোমার ছেলেকে নিয়ে চলো। আদর সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে।’

জান্নাতুল খাতুন তালে তাল মিলিয়ে বললেন,
‘হ্যা তুই ঠিকই বলেছিস। আগে বিয়েটা হওয়া দরকার। আমান চল তুই।’

আব্দুল হোসেন বেশ শক্ত গলায় বলে উঠলেন,
‘আমান কোথাও যাবে না। ওর বিয়ে ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে।’

আব্দুল হোসেনের কথায় বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত সবার সামনে একটা ছোটখাটো বি’স্ফোরণের মতোই ছিল। সকলেই ভীষণ হতবাক হয়ে যায় এধরণের কথা শুনে। বিয়ে বাড়িতে কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়। জান্নাতুল খাতুন বিস্ময়ের সাথে বলে উঠলেন,
‘এসব কি বলছ তুমি? আমানের বিয়ে হয়েছে মানে?’

আব্দুল হোসেন লক্ষ্য করে দেখলেন বিয়ে বাড়িতে অনেক লোক উপস্থিত আছে। সবার সামনে আদরের ব্যাপারে কিছু বলতে চাইলেন না তিনি। কারণ এখানে মান সম্মানেরও একটা ব্যাপার আছে। তাই তিনি জান্নাতুল খাতুন ও আদরের মা-বাবাকে বললেন,
‘আমার তোমাদের সবার সাথে খুব জরুরি একটা ব্যক্তিগত কথা আছে। কথাটা ব্যক্তিগত হওয়ায় এখানে সবার সামনে বলা যাবে না। তোমরা সবাই ভেতরে চলো।’

আব্দুল হোসেন ঠিক কি চাইছেন সেটা কেউ বুঝল না। তবে তার গাম্ভীর্য পূর্ণ মুখ দেখেই সবাই বুঝে গেল ব্যাপারটা বেশ গুরুতর। এ কারণেই প্রত্যেকে বিনাবাক্যে তার কথা মেনে নিলো। সবাই একসাথে রওনা দিলো আব্দুল হোসেনের পেছন পেছন। আদরের কানেও ইতিমধ্যে সব কথা পৌছে গেছে। আদর কৌতুহল বশত বিয়ের আসর থেকে বাইরে চলে এসে। অতঃপর যা দেখে সেটার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। হাবিবকে দেখামাত্রই অনেক ভয় হতে লাগে আদরের। ঘামতে থাকে সে। কারণ আদর এতক্ষণে বুঝতে পেরে গেছে তার সত্য সবাই জেনে গেছে। এখন এর পরিণাম যে কত ভয়াবহ হতে পারে সেটা খুব সহজেই আন্দাজ করতে পারছে আদর। আমান ছোয়ার নজরও যায় সেইদিকে। আমান আদরের কাছাকাছি গিয়ে তাকে তাচ্ছিল্য করে বলল,
‘ছি আদর ছি! তোমাকে আমি ভালো মেয়েই ভেবেছিলাম। তুমি যে এত নিচ একটা কাজ করতে পারো সেটা আমি ভাবতেও পারিনি। তুমি যখন সেইদিন আমার ফোন করে বিয়ের ডেট এগিয়ে নিতে বলছিলে তখনই আমার মনে খটকা লেগেছিল। কিন্তু আমি ভাবতেও পারিনি তুমি এতটা নিচু কাজ করবে। অন্য একজনের বাচ্চাকে আমার নামে চালিয়ে দিতে চাইছিলে! কি নিচু মেন্টালিটি তোমার।’

হাবিবও চলে আসল আদরের কাছে। অতঃপর আদরকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
‘আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি আদর। তাই তুমি চাইলে আমি এখনো তোমায় মন থেকে গ্রহণ করতে পারি।’

আদর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার মা এসে টানতে টানতে তাকে ভেতরে নিয়ে গেল।

৪৮.
সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছেন জহির উদ্দিন। যেই মেয়েকে নিয়ে তার এত অহংকার ছিল আজ সেই মেয়েটাই তার মাথা নিচু করে দিল। জান্নাতুল খাতুনও বিশ্বাস করতে পারছেন না আদর এমন কিছু করতে পারেন। আদরের মা তাকে টানতে টানতে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসল। তাকে একটার পর একটা চ’ড় থা’প্পর দিতে দিতে বলল,
‘তোকে এত ভালোবাসার আজ এই ফল পেলাম আমরা? দেখ তোর বাবার দিকে মানুষটার মাথা আজ নিচু হয়ে গেছে। তুই মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় লোকটা কত খুশি হয়েছিল অথচ আজ,,,’

জহির উদ্দিন একবার নিজের মেয়ের দিকে তাকালেন। মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তার। অথচ তার মেয়েটা তার সব স্বপ্ন এক মুহুর্তে ভেঙে গুড়িয়ে দিল। এসব কিছুর মাঝে আব্দুল হোসেন বলে উঠলেন,
‘ওরা একটা অন্যায় করেছে। এখন তো কোনভাবেই সেটা শোধরানো যাবে না।আমি বলি কি, ছেলেটা যখন রাজি আছে তখন ঐ ছেলের সাথে তোমাদের মেয়ের বিয়ে দিয়ে দাও। এতে করে সব দিক রক্ষা পাবে।’

আদরের মা বলেন,
‘কিন্তু এভাবে কি করে একটা ছেলের হাতে নিজের মেয়েকে তুলে দেব?’

এতক্ষণে মুখ খুললেন জহির উদ্দিন। তিনি বাজখাই কন্ঠে বলে উঠলেন,
‘তোমার মেয়ে যাই কাজ করেছে তারপর কোন মুখে তুমি এমন কথা বলো? দুলাভাই একদম ঠিক কথাই বলেছেন। তোমার মেয়ে যা করেছে তারপর ওর মুখ দেখার আমার কোন ইচ্ছা নাই। ওকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে বিদায় করো।’

আদর সব শুনে অনুশোচনার আগু’নে দগ্ধ হতে লাগল। তার বুক ফে’টে যাচ্ছিল। তাই সে ছুটে এসে নিজের বাবার পা ধরে বলল,
‘প্লিজ আব্বু,আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি জানি আমি ভুল করেছি কিন্তু তুমি তাই বলে তুমি এমন ভাবে বলো না।’

জহির উদ্দিন মুখ ফিরিয়ে নিলেন নিজের মেয়ের দিক থেকে। যাকে আমরা খুব বেশি ভালোবাসি সে যখন আমাদের কষ্ট দেয়, তখন সেটা সহজে মানা যায়না।

অবশেষে আদরের সাথে হাবিবের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। দুজনের বিয়েও হয়ে যায়। এসব কিছুর মাঝে জহির উদ্দিন নিরব ভূমিকা পালন করেন। বিয়েটা সম্পন্ন হতেই তিনি আদরকে বলেন,
‘এখন তুমি নিজের স্বামীকে নিয়ে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও। আমাদের সাথে আর কখনো যোগাযোগের চেষ্টা করবে না। আজ থেকে তুমি আমার কেউ নও।’

বলেই তিনি চলে গেলেন। আদর দাড়িয়ে কাদলে লাগল। আদরের মাও চলে তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল৷ তাই অবশেষে বাধ্য হয়ে হাবিবের সাথে বেরিয়ে গেলো আদর।

এত সবকিছু হয়ে যাওয়ার পর জান্নাতুল খাতুনের আব্দুল হোসেনের বলা কথাটা মনে পড়ে যায়। তাই তিনি আব্দুল হোসেনকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘আচ্ছা তুমি যে তখন বলছিলে আমান বিবাহিত এটার কি মানে?’

আব্দুল হোসেন সরাসরি বলে দিলেন,
‘আমানের সাথে ছোয়ার বিয়ে দিয়েছি আমি।’

কথাটা শুনে জান্নাতুল খাতুনের মুখের অভিব্যক্তি বদলে গেল। তিনি খুশি হলেন না রেগে গেলেন সেটা বুঝতে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨

>>কি মনে হয় আপনাদের? জান্নাতুল খাতুনের প্র‍তিক্রিয়া কি হবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here