#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ৩৩(শেষ পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা_মনি
সময় বহমান। সময়ের স্রোত এগিয়ে চলে আপন গতিতে। কারো জন্য অপেক্ষা করে না বা কারো আশায় বসেও থাকে না। এভাবেই গড়িয়ে গেছে ৫, ৫ টি বছর।
ছোয়া আজ একটি স্বনামধন্য স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি করছে। নিজের বাবার ইচ্ছা সে পূরণ করতে পারছে৷ এজন্য অনেক বেশি খুশি সে। আমানও খুব খুশি নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর এই সাফল্যে। তবে এত সুখের মাঝেও তাদের মধ্যে এতদিন একটা অপূর্ণতা ছিল। সেটা হলো অনেক চেষ্টা করেও ছোয়ার কিছু সমস্যা থাকায় সে সন্তান গর্ভধারণ করতে পারে নি। তবে অনেক ডাক্তার দেখিয়ে অবশেষে ছোয়ার সমস্যা দূর হয়েছে। এখন ছোয়া কনসিভ করার জন্য একেবারে উপযুক্ত। তাই আমান ও ছোয়া চেষ্টা করছে একটি নতুন প্রাণ পৃথিবীতে আনতে।
এতকিছুর মধ্যে আবার আলিয়ার বিয়ের কথাও তুলছেন আব্দুল হোসেন। আজকাল তার শরীর বেশি ভালো যাচ্ছে না। দু দু-বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। তার মনে হয়, তার আয়ু আর বেশিদিন নেই। তাই নিজে বেচে থাকতেই নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে চান তিনি।
তবে হুট করে নিজের মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তার বিয়ে দিতে চান নি আব্দুল হোসেন। তাই তো আলিয়াকে নিজের রুমে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন,
‘আমি তোর বিয়ে দিতে চাই মা। কিন্তু তার আগে মনে হয় তোর সাথে কথা বলে নেয়া জরুরি। কারণ তুই বড় হয়েছিস। তোরও তো কোন পিছব অপছন্দ থাকতে পারে। আচ্ছা আলিয়া তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?’
আলিয়া কি উত্তর দেবে বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকে। কারণ সে তো শাহিনকে পছন্দ করে। কিন্তু শাহিনের কথা আর বাবাকে কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। অন্যদিকে শাহিন এতগুলো দিন থেকে আলিয়ার জন্য প্রতীক্ষা করেছে তাই তাকেও নিরাশ করতে চায় না আলিয়া। তাই নিজের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করেই সে বলে ওঠে,
‘আমি একজনকে পছন্দ করি আব্বু৷ তার সাথে আমার অনেক দিনের সম্পর্ক।’
আব্দুল হোসেন মৃদু হেসে বললেন,
‘এমন কিছুই ভাবছিলাম আমি। আমি কিন্তু অন্য বাবাদের মতো না যে তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করব। তুই যাকে পছন্দ করিস সে বড়লোক কি ধনী, চাকরি করে কি না এসব কিছু আমি দেখব না। শুধু দেখব তার চরিত্র কেমন। আমি চাই একজন সৎ চরিত্রবান ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিতে চাই। কারণ আমি মনে করি চরিত্র সুন্দর তো সব সুন্দর।’
নিজের বাবার কথায় আলিয়ার ভয় অনেকটাই দূর হলো। তাই সে সাহস করে বলল,
‘আমি যাকে পছন্দ করি তাকে তুমি চিনো আব্বু।’
আব্দুল হোসেন কৌতুহলী হয়ে জানতে চান,
‘কে সে?’
আলিয়া কিছুটা সময় নিয়ে বললো,
‘তোমার কোম্পানিরই আস্থাভাজন একজন কর্মচারী শাহিন খান।’
আব্দুল হোসেন অবাক হন প্রচুর। তার নাকের ডগায় তার মেয়ে তারই কোম্পানির একজনের সাথে প্রেম করল অথচ তিনি ধরতেও পারলেন না। তবে তিনি খুশিই হলেন। কারণ শাহিনকে তিনি চেনেন। শাহিন মানুষ হিসেবে এবং স্বামী হিসেবে নিঃসন্দেহে সেরা হবে। তাই আব্দুল হোসেন আপত্তি করলেন না মোটেই। দ্রুত বলে উঠলেন,
‘ঠিক আছে। আমি শাহিনের সাথে কথা বলে দেখব। প্রয়োজনে কালই শাহিনকে স্বপরিবারে আসতে বলব। সেখানে সবার সম্মতিক্রমেই নাহয় তোমাদের বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা আগাবো।’
আলিয়া খুশি হয়ে আব্দুল হোসেনকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘ধন্যবাদ আব্বু। তুমি এই পৃথিবীর বেস্ট আব্বু।’
✨সমাপ্ত ✨
>>