#প্রেম_ছোয়ালে
Part:6+7+8+9+10
Writer:Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
আশফির মুখে এমন কথা শুনে নীলির বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো
কি এমন হয়েছে যে তার নীল পুরুষ আজকে তাকে এই কথা বলছে
–এই নীল পরী শুনছো আমার কথা।তুমি কি অপেক্ষা তে থাকবে আমার
–তোমার জন্য আমি সারাজীবন অপেক্ষা করতে রাজী নীল পুরুষ ।আমি তোমার ভালোবাসার জন্য প্রয়োজন এ আমার কালো চুল গুলো কে সাদা হওয়ার সময় ও দিতে পারি
–তাহলে আমার আর কোন চিন্তা নেই।আমি নিশ্চিন্তে চলে যেতে পারবো এবার ।আমার বিশ্বাস ছিল তুমি কখনো আমাকে ফেরাতে পারো না
আশফির কথা গুলো নীলির বুকে বিধছে।কোথায় যাবে তার নীল পুরুষ তাকে ছেড়ে
–আশফি কি বলছো তুমি এসব ,আর কেন অপেক্ষা র কথা বলছো,কোথায় যাবে তুমি?
–তোমার কথা সত্যি হয়েছে।আমার স্বপ্ন পূরন হতে চলেছে
–মানে
আশফি একে একে সব কথা বললো নীলিকা কে।কিন্তু এটা বললো না যে তার ক্যানসেল করার জন্য ই হয়তো আশফি আজ চান্স পেয়েছে
–তুমি কি করতে চাইছো আশফি,আমি কিছু বুঝতে পারছি না
প্রশ্ন টি খুব শান্ত গলায় করলো নীলিকা ।চোখের পানি এদিকে ঝরনার মতো ঝরছে।আশফি র কথা শুনে সে খুশি হবে না কি কষ্ট পাবে সেটা সে বুঝছে না ।যেই ইউনিভার্সিটি তে পড়ার স্বপ্ন সে দেখেছিল আজ আশফির কথা ভেবে সে বুকে পাথর চাপা দিয়ে নিজের হাতে গলা টিপে মেরেছে তার স্বপ্ন কে।অথচ আজ আশফি ই তার স্বপ্ন পূরণ এ তার স্বপ্ন এর জায়গায় যেতে চাইছে
আচ্ছা নীলিকা র কি খুশি হওয়া উচিত?
নীলিকা র কথা শুনে আশফি খুব হাসি মুখে ই জবাব দিল
–নীলি এই কারণ এই তো আজ সারাদিন তোমার ফোন ধরতে পারিনি।আমি ভিসার কাজ করতে দিয়ে এসেছি
–আর পাসপোর্ট
–আমার আগের পাসপোর্ট দিয়ে ই হবে
–ওহ
নীলিকা খুব শান্ত গলাতে উওর দিচ্ছে।আশফি র কাছে মনে হচ্ছে এটা যেন ঝড় আসার পূর্বভাস
–নীলি তুমি খুশি হও নি,তুমি কি চাও না আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করি
–আমাদের বিয়ে র আর কদিন বাকি আশফি?
–নীলি আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছি
–আগে আমার প্রশ্ন এর উওর দেও আশফি ।আমিও তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছি
নীলি চিতকার করে কাঁদতে কাদতে কথা বললো।আশফির গলার স্বর পালটে আসছে।নীলি আজ অবধি কখনো তার সাথে এভাবে কথা বলেনি
–কি হলো কথা বলছো না কেন?আমার কথা তুমি শুনতে পাচ্ছো না।না কি কানের রোগ হয়েছে তোমার
–এসব কোন ধরনের কথা শুরু করেছো নীলি
–আমি তোমার কাছে এই উওর চাইনি।আগে বলো কতো দিন বাকি আমাদের বিয়ে র
–উনিশ দিন
–কোথাও যাওয়া হবে না তোমার শুনেছো।কান খুলে শুনে রাখো।তোমার কোন পিএইচ ডি করার দরকার নেই।আমি তুমি যেভাবে আছো ঐ ভাবেই তোমাকে বিয়ে করবো শুনেছো।এখন ফোন দিয়ে এসব নাটক না করে বিয়ে র প্রস্তুতি নেও
আশফি র ও রাগ উঠলো এবার
–এই তোমার কি মনে হচ্ছে আমি তোমার সাথে তামাশা করছি।তুমি শুনতে পাওনি আর কিছু দিন পরই আমার ফ্লাইট।আমি দেশের বাইরে যাচ্ছি ব্যাস এইটাই শেষ কথা আমার
–শেষ কথা মানে টা কি
–মানেটা কি সেটা বোঝা র মতো বয়স তোমার আছে নীলি।আমি আমার মা বাবা র স্বপ্ন পূরন করতে যাচ্ছি ।তারা অনেক কষ্ট করেছে আমাকে বড় করার জন্য ।আমি এখন তাদের জন্য করতে চাই
–ও তোমার মা বাবা কষ্ট করেছে।আর আমার মা বাবা কি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে।তোমার মা বাবা র স্বপ্ন থাকতে পারে আমার মা বাবা র স্বপ্ন নেই।এতো ই যদি নিজের বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছে ছিল তাহলে আমার টা কেন আটকালে
–একটা ও বাজে কথা বলবে না নীলি।আমি তোমাকে আটকায়নি।আমি বলেছিলাম তুমি গেলে যেতে পারো
–ও তাই।তাহলে এ কথা টা কে বলছিল যে যাও কিন্তু আমার আশা ছেড়ে দিও।বলো আমাকে
–,,,,,,,,
— কি হলো বলো
–শোনো নীলি বিদেশে গিয়ে কি করতে তুমি ।পড়াশোনা করতে এই তো ।কি গ্যারান্টি আছে যে সেখানে গিয়ে তুমি নিজেকে বদলে গিয়ে অন্য ছেলেদের,,,,,
–আশফি মুখ সামলে কথা বলো।তোমার সাহস কম না তুমি আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলছো।তোমার গ্যারান্টি আগে দেও যে তুমি ওখানে গিয়ে কোনো মেয়ে কে নিয়ে এনজয় করবে না
–নীলিইইই
এদিকে নীলির মা বাবা বোন সবাই উপরে চলে এসেছে নীলিকার চেঁচামেচি শুনে।তারা ভালোই বুঝতে পারছে কোন ঝড় উঠছে
–কি নীলি নীলি করছো হ্যাঁ ।এতো ই যদি আমার চরিত্র নিয়ে তোমার সমস্যা তাহলে প্রেম নিবেদন করতে এসেছিলে কেন
–নীলি আমি তোমাকে ভালবাসি ।তুমি আমার ভালোবাসা কে অপমান করছো
–অপমান করেছি।একদম বাজে কথা বলবে না আশফি
–কি বাজে কথা বলবো না।তুমি কি ভেবেছো আমি বুঝছি না তুমি কি চাও।আমি বেকার এখন।এখন বিয়ে করে তারপর তোমার বাবার কাছে হাত পেতে টাকা নেবো,বৌ এর গোলামি করবো এটাই বলতে চাইছো তুমি, তুমি কি মনে করো আমি কিছুই বুঝি না
নীলিকা ভাবতে পারে নি আশফি এতো নিচু মানসিকতার মানুষ ।তার মুখ দিয়ে এই কথা বেরোতে পারে
–আশফি চুপ করবে তুমি ।তুমি কি ভেবে দেখেছো তখন থেকে তুমি কি ব্যবহার করছো আমার সাথে
–কিছুই করিনি।আমি বিদেশ যাচ্ছি এটাই ফাইনাল।শুনেছো তুমি
–আশফি,,,,,
ওপাশে আশফি ফোন কেটে দিয়ে সুইচ ড অফ করে দিল।সে জানে নীলিকা আবার তাকে ফোন করবে
–বুঝতে পারছি না কি করবো আমি।আমি চলে গেলে যদি নীলিকা অন্য কাউকে বিয়ে করে নেয়।না তা হবে না।আমি জানি ও এরকম কিছু করবে না
এদিকে
নীলি আশফি র ফোনে কল দিচ্ছে কিন্তু ফোন সুইচ ড অফ
নীলি ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারলো।ঢপ করে বসে কাঁদতে শুরু করলো
নীলির মা বাবা এবার মেয়ে র কাছে ছুটে এলেন
–মা কি হয়েছে তোর এভাবে কাঁদছিস কেন
নীলি ওর বাবা র বুকে মুখ গুঁজে কান্না শুরু করলো।ছোট বেলা থেকেই বাবা র বুকে তার পরম শান্তি লাগে
–কি হয়েছে মা বল
–বাবা আমার সাথে এটা কি হচ্ছে ।বাবা আমি আশফি কে ছাড়া কিভাবে থাকবো।আমি ওকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।বাবা আমার সব কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে
চলবে———
#প্রেম_ছোয়ালে
Part:07
Writer:Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
–কি হয়েছে মা বাবা কে বলবি না
–বাবা আশফি দেশ ছেড়ে চলে যাবে
–মানে কি হয়ে ছে
নীলি একে একে সব বললো তার বাবা কে।নীলি র কথা শুনে ক্রমশ চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে নাবিল সাহেবের
–বাবা আমি কি করবো এখন
–প্রথম এই ঐ ছেলেটাকে আমার পছন্দ হয় নি।ওকে যেদিন দেখতে এসেছিল সেদিন ঐ ছেলের মা বাবা র ব্যবহার দেখেছিলে ।কোন ভদ্র লোকের ব্যবহার এমন হয় ।তবুও মেয়ে টার কথা ভেবে তো রাজী হয়ে ছিলাম ।ভেবেছিলাম বাবা মা যেমন ই হোক ছেলেটা ভালো ।বাবা মা অশিক্ষিত তাই হয়তো এমন হতেই পারে।কিন্তু ছেলেকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে ছেন।কিন্তু একি দেখছি।আমার মেয়ে র ভবিষ্যত টা নষ্ট করলো ঐ ছেলে আর এখন নিজে
–মা তুমি চুপ করো।আমি আর সহ্য করতে পারছি না
নীলি র বাবা ওর মাকে চুপ করতে ইশারা করলেন
— মা তোকে আমি সেদিন ই বলেছিলাম যে সিদ্ধান্ত নেও ভেবে চিন্তে নিও।তুমি তোমার জীবন এ এতো বড় স্বপ্ন দেখেছিলে সেটা পূরনের সুযোগ পেলে কিন্তু নিজের ভুল সিদ্ধান্ত র জন্য আজ দেখো তোমার কাঁদতে হচ্ছে
–বাবা যা হবার হয়ে গেছে।আমি কি করবো এখন
–সেটাই।নীলি র বাবা তুমি ভেবে দেখেছো সব আত্মীয় স্বজন দের দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে আয়োজন এর যা দরকার কেনাকাটা সব শেষ।এখন বিয়ে ভাঙলে আমার মেয়ে টা কে যে এই সমাজ শকুন এর মতো কথা দিয়ে খুবলে খাবে
–আমি আমার মেয়ে র কোন অসম্মান হতে দেবো না।এর জন্য নিজেকে কতোটা কঠোর হতে হয় প্রয়োজন এ আমি তাই হবো
–বাবা তুমি কি করবে?
— মা সেদিন তুমি বাবা মা র কথা শোনো নি।আজ তুমি আমার কথা শুনবে ।একটা কথাও বলবে না।যা করার আমি করবো
নীলি র বাবা নীলিকা কে চোখ মুছিয়ে উঠে বসালো
–তোমরা ভরসা আছে না তোমার বাবা র প্রতি
–হ্যাঁ বাবা
–তাহলে এখন আমার গুড গার্ল হয়ে যাও।এখন কান্না কাটি বন্ধ করো।কদিন পরে আমার মেয়ে টা এমনিতেই চলে যাবে আমাকে ছেড়ে ।এখন যদি একটু হাসি খুশি না থাকো বাবা র ভালো লাগবে
–সরি বাবা ।দেখো আমি চোখ মুছে ফেলেছি
–এই তো ।এখন একটু ঘুমাও তো।সকাল এ উঠলেই দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে
–সত্যি
–হুম সত্যি
নীলি কে ঘুম পাড়িয়ে ওর বাবা ওর মাকে ওর পাশে বসিয়ে ওনার ঘরে গেলেন
তারপর ফোন দিলেন আশফি র বাবার নাম্বার এ
–হ্যাঁলো কে বলছেন
–আসসালামু আলাইকুম বেয়াই মশাই ।চিনতে পারলেন না নাকি
–ওয়ালাইকুম আসসালাম ।জি বলুন।এতো রাতে ফোন দিয়ে কেন?
আশফি র বাবার কথাতে নীলি র বাবা খুব অপমান বোধ করলেন।আশফি র বাবা তো ঐদিকে অহংকার এ শেষ।তার ছেলে বিদেশ যাচ্ছে
–বলছি আশফি,,,,
–হ্যাঁ আমি সব জানি।আমি আমার ছেলেকে বিদেশ পাঠাবো
–তাহলে বিয়ে
–বিয়ে না হয় চার বছর পরে হবে।অবশ্য চার বছর পর হলে তখন আমার ছেলে এমনিতেই আপনার মেয়ে কে বিয়ে করতে চাইবে না।আপনার মেয়ে তো বুড়ি হয়ে যাবে।এমনিতেই এখন হয়তো চব্বিশ তেইশ চলছে।তার চেয়ে বরং আপনার মেয়ে কে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিন
আশফি র বাবার কথা শুনে নীলির বাবা য আশ্চর্য সপ্ত আসমানে ।তার মেয়ে কে নিয়ে এই রকম কথা কেউ বলবে সে ভাবে নি কখনো
–মুখ সামলে কথা বলবেন।আপনাকে এতোক্খন সম্মান দিয়েছি বলে এটা ভাববেন না যে আপনি মাথা র উপরে উঠে গেছেন।বিয়ে টাকি আপনার ছেলে খেলা মনে হচ্ছে ।না কি কি মনে করেছেন আপনি নিজেকে।কি ই বা আছে আপনার ।আপনার ছেলেই তো এসেছিল বিয়ে র প্রস্তাব নিয়ে ।আমার মেয়ে র মুখের দিকে তাকিয়ে সব মেনে নিয়ে ছি ।কি বলতে চান আপনি।আমার মেয়ে কি পন্য নাকি যে এই হাটে বেচতে না পারলে ঐ হাটে বেচবো
–দেখুন আমি সে সব বলেনি।চাহিদা থাকতে জিনিস দিয়ে দেওয়া ভালো।আপনার মেয়ে র এমনিতে ও বয়স হয়েছে।এর পর তো আর চাহিদা থাকবে না।তখন দেখা যাবে আমার ছেলেই এমন বয়স্ক মেয়ে বিয়ে করতে চাইবে না।তখন,,,,,
–খবরদার ।একদম মুখ সামলে কথা বলবেন বলে দিলাম ।আপনার মতো অসভ্য লোক আমি জীবন এ একটা দেখিনি।আপনি কি ভুলে যাচ্ছে ন আপনার ঘরেও মেয়ে আছে ।আমার তো মনে হয় আপনি বাজারের আলু পটলের মতো আপনার মেয়ে র জন্য বড়লোক ক্রেতার খোঁজে আছেন
–কিহ এতো বড় কথা,,আশফি আশফি,,,কোথায় গেলি নিচে আয়,,দেখ তোর ঐ নীলিকা র বাবা র রূপ দেখ,,,
আশফি বাবা র ডাক শুনে নিচে এলো।আশফি র বাবা নীলিকা র বাবা র সাথে কথা বলতে বললেন
–হ্যালো আশফি
–কি হয়েছে, কি শুরু করেছেন আপনারা
–আমরা শুরু করেছি
–তা নয় তো কি।আচ্ছা আপনারা কি একটা মানুষ এর ভালো দেখতে পারেন না
–আশফি তুমি কার সামনে কি বলছো ভেবে বলছো
–হ্যাঁ ভেবেই বলছি।কি মনে করেন নিজেকে আপনি।বাংলাদেশের প্রেসিডেনট ।যে আপনার সাথে কথা বলতে গেলে ভেবে কথা বলতে হবে
নীলি র বাবা অবাক না হয়ে পারছেন না।এ রকম ছেলের কাছে তিনি নিজের মেয়ে কে তুলে দেবেন ভাবতেই তার গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে
–আশফি ঠিক করে কথা বলো
–কি ঠিক করে কথা বলবো।কি ভাবছেন আপনার চালাকি বুঝিনি।ঘর জামাই রাখার চিন্তা তে আছেন আপনি এজন্য ই তো বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইলেন মেয়ে কে
–আশফি
–গলা নামিয়ে কথা বলবেন ।আপনার মেয়ে কে ভালোবাসি বলে এই না যে আপনার মেয়ে আমার মাথায় চড়ে বসেছে।তাকে বলে দেবেন আশফি কারোর দাসত্ব করার জন্য বসে নেই
এবার নীলিকা র বাবা র ধৈর্য এর বাধ ভাঙলো
–অনেকখন ধরে তোমার অনেক বেয়াদবি সহ্য করেছি ।কি ভেবেছো কিছু বলছি না।আজ শুনে রাখো আমার কথা তোমার পুরো পরিবার কে প্রতারণা র দায়ে,ঠকানোর দায়ে যদি জেলের ভাত না খাইয়ে ছি তো আমি ও নীলিকা র বাবা নই
–কি ভয় দেখাতে চাইছেন আপনি?আমি ও দেখবো কি করার ক্ষমতা আপনি রাখেন
–ক্ষমতা।বাংলাদেশের প্রেসিডেনট না হতে পারি কিন্তু একজন সরকারি চাকুরি জীবী হিসেবে তোমাকে কতোটা শিক্ষা দিতে হয় তোমাকে টের পাওয়াচ্ছি ।এতোক্খন একজন ভালো মানুষ দেখেছো,এবার দেখবে একজন আর্মির রিটারড অফিসার হয়েও তোমার কি হাল করি
–দেখুন,,,,
আশফি আর কিছু বলতে পারলো না।তার আগেই নীলিকা র বাবা ফোন কেটে দিলেন
এদিকে
নীলি র বাবা বসে ভাবছেন
–না এখন মেয়ে টা ঘুমোচ্ছে এখন কাউকে কিছু বলবো না।কিন্তু কাল সকালে ওকে বলবো ঐ ছেলে কি ব্যবহার করেছে আমার সাথে।আমি জানি নীলিকা এ সব শোনার পর কখনো ঐ ছেলে কে বিয়ে করতে রাজী হবে না।এরকম ছোটো লোক জীবন এ দেখিনি আমি।ছিহহ।কি স্বার্থপর সব
এদিকে
আশফি ফোন রেখে ওর বাবা মা কে সব বললো
–দেখলি তো আশফি এখনি এতো কথা শোনাচ্ছে ।বিয়ে র পর কি করতো।ভাগ্যিস তোর ঐ বিদেশ যাবার উপায় এলো না হলে বুঝতে ও পারতিস না এদের চাল
–হ্যাঁ আশফি র মা ঠিক বলেছো।দেখ বাবা এবার মা বাবা র কথা ভাব।দেখলি পুলিশ এর ভয় দেখাচ্ছে।তুই ঐ মেয়ে র কথা বাদ দে
আশফি চোখ এদিকে জলে ভরে আসছে।সে কিভাবে পারবে নীল পরিকে ভুলতে।কতো সাধনায় পেয়েছে তাকে
এদিকে মাইশা র মাথা তে অন্য চিন্তা
–না বাবা ভুল বলেছো।তুমি বুঝতে পারছো রিটারড হোক যাই হোক ঐ নীলি আপুর বাবা যদি একবার গিয়ে পুলিশ এ খবর দেয় তোমার ছেলের বিদেশ কেন এখানে আর কোথাও পড়ালেখা করার সুযোগ হবে না।তখন সবার কাছে সে ক্রিমিনাল হিসেবে পরিচিত হবে
আশফি র মাথা টনক নড়লো
–কি বলছিস মাইশা
–হ্যাঁ ভাইয়া ।দেখ আমার ও বিশ্বাস নীলিকা আপু তোর জন্য ঠিক অপেক্ষা করবে।তুই এখন ওদের কে বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলিস না।তা না হলে তোর ভিসার সব কিছু আটকে যাবে ভাইয়া
–মানে কি করবো তাহলে
–এখন মুখে মুখে সব মেনে নে।নাটক কর।সময় মতো ওদের না জানিয়ে চলে যাবি বিদেশ।আর যা বললি তাতে হয়তো তোর বিয়ে র আগেই যেতে পারিস
–কিহ নাটক করবো
–হ্যাঁ ভাইয়া ।আমাদের কথা একবার ভাব।দেখিস নীলি আপু ঠিক অপেক্ষা করবে
আশফি র মাথা তে এক চিন্তা
–সত্যি তুমি অপেক্ষা তে থাকবে তো নীল পরী
পরের দিন ভোর বেলা
নীলি র ঘুম ভাঙে ফোনের আওয়াজ এ।নীলি ঘুমিয়ে ফোন রিসিভ করলো
–হ্যালো
–নীলি পুরুষ কিভাবে পারবে নীল পরিকে ছেড়ে যেতে।তাকে ছাড়া যে সে অসম্পূর্ণ ।স্বপ্ন গুলো না হয় স্বপ্ন এ থাক।নীল পুরুষ তার নীল পরিকে নিয়ে সাজিয়ে ফেলুক তার রাজ্য
নীলি র মুখে হাসি ফুটলো
চলবে———-
#প্রেম_ছোয়ালে
Part:08
Writer:Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
আবার সেই সুর,সেই বলা কথা বা হোক না বলা,কিন্তু সবকিছু ই তো মনে গিয়ে বিধছে অদ্ভুত ভাবে
–আশফি তুমি
–হ্যাঁ, পারবো না নীল পরী।আর পারলাম না।দম বন্ধ হয়ে আসছে এখনি।পরে তো মরেই যাব।
–চুপ কি সব বলছো তুমি এগুলো
–সত্যি নীল পরী, আমি পারবো না,ছারতে।সবকিছু ছাড়লাম ছেড়ে ও দেব শুধু তুমি ছাড়া
— তুমি কি তবে,,,,
–হ্যাঁ, সত্যি যাব না।যেতে পারব না।যতটুকু সময় বাঁচি, যতক্ষণ আছি তোমাকে নিয়ে থাকতে চাই
–আশফি তুমি ঠিক বলছো তো
নীলিকা র চোখে টুপ করে পানি পড়ছে।এটা দুঃখের নয়,পরম সুখে র,তার প্রিয় মানুষটা হয়তো আর হারিয়ে যাবে না তার থেকে
–নীলি এই নীলি কাদছো কেন
–কৈ না কাঁদছি না
–তোমার প্রত্যেক টি নিঃশ্বাস এর শব্দ ও আমিও বুঝতে পারি ।তুমি কি মনে করেছো এটা পারবো না
–আশফি তুমি যাচ্ছ না তাহলে
–না।আর যাচ্ছি না।যেতে আর দিলে কোথায় ।তোমার আঁচলে তো সেই কবে ই আটকা পড়েছি।এবার পুরোপুরি পড়ার চিন্তা তে আছি
–আশফি তুমি আমাকে ভুল বুঝছো না তো
–ক্ষমা করে দিও নীলি ।অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি লাম তোমার সাথে।আসলে কি বলোতো প্রথম এ জ্ঞান এ ছিলাম না।না হলে তখন ই বুঝতাম আর যাই হোক ছেড়ে থাকতে পারব না
–ও আচ্ছা
–শোনো কাল থেকে কাজে লেগে পড়ো
–কি কাজ
–এতো দেখছি বিরাট ভয়ানক অবস্থা ।যার বিয়ে তার হুশ নেই,পাড়া পড়শির ঘুম নেই
–মানেএ
–আরে আমাদের বিয়ে,ভুলে গেছো
–ওহ।সরি।আসলে কিছু ভুলিনি।ঐ মানে একটু,,,,
–আচ্ছা ঠিক আছে।এখন উঠে নামাজ পড়ে নেও।শোনো বিকেল এ বের হতে পারবে
–কেনো?
–কেনো আবার ।প্রেমিক এর সাথে একটু টাইম পাস করবে ।আর কদিন পর তো আমাকে ভুলেই যাবে
–এ মা ভুলতে যাব কেন
–তখন তো আর প্রেমিক থাকবো না।স্বামী হয়ে যাব তাই
–হা হা,আচ্ছা রাখি
–আল্লাহ্ হাফেজ
–আল্লাহ্ হাফেজ
নীলিকা ফোন রেখে উঠে পড়লো।সকাল এর মিষ্টি রোদ ঘরে ঢুকেছে।বাইরে পাখির কিচিরমিচির শব্দ
–এই যাহ।আশফি কি বললো।এখন নামাজ পড়বো কি করে।সূর্য উদয় হয়ে গেছে ।এই সময় নামাজ পড়লে তো গুনাহ হবে।তার চেয়ে সূর্য পুরো উঠুক পরে ইশরাক এর নামাজ পড়ে নেব
নীলিকা উঠে ফ্রেশ হতে গেল
এদিকে
আশফি ফোনের দিকে তাকিয়ে নীলির আর তার সুন্দর কিছু মুহূর্ত এর ছবি দেখছে
–আমাকে ক্ষমা করে দিও নীলি।পারলাম না সবটা তোমায় দিতে।আমি আজ বড় অসহায় ।নদীর মাঝে দাঁড়িয়ে আছি।না পারছি পেছনে নিজের পরিবার কে ফেলতে,না পারছি তোমাকে নিয়ে সামনে যেতে
সত্যি জীবন টা এমন কেন হয়।পরীক্ষা দিতে দিতেই পার হয়ে যায় ।শুধু কি পড়াশোনা করলেই পরীক্ষা দিতে হয়।একদম না।প্রতি মূহুর্তে জীবন কিছু না কিছু শিখিয়ে দিয়ে যায়।আর তার পরীক্ষা কখনো না কখনো দিতেই হয়।কিন্তু এ পরীক্ষা যে বড়ই আজিব ।কখন রাস্তা র মোড় ঘুরে যাবে টের পাওয়া যাবে না
আশফি উঠে আলমারির কাছে গেল
–আমি থাকতে চাই তোমার সাথে।যতক্ষণ আছি।যে কটা দিন আছি তোমাকে নিয়ে থাকতে চাই ।তোমার স্মৃতি গুলো কে নিয়ে যাব।যাতে থাকতে কষ্ট না হয়।আর স্মৃতি গুলো তোমাকে ও দিয়ে যাব যাতে অপেক্ষা করতে পারো তুমি ও।আমি জানি নীল পরী তুমি পারবে।কেউ না বুঝলে ও তুমি আমাকে বুঝবে
–মা আরেকটা পরোটা দেও
–বাহ আমার মেয়ে র দেখছি সকাল সকাল আজ মুড খুব ভালো
–হ্যাঁ বাবা
নাস্তার টেবিলে বসে আছে সবাই ।নীলির বাবা শুধু ভাবছেন কি করে কথা টা বলবেন
–কোন মুখে কথা গুলো বলবো।ঐ সব ছোট লোকের মতো ভাষা তে জীবন এও কথা বলিনি।সেখানে নিজের মেয়ে কে।নাহ্ নীলির ভবিষ্যত এর সাথে জড়িত আমাকে জানাতে হবে(মনে মনে)
–বাবা কিছু ভাবছো
–হ্যাঁ মা আসলে তোদের সবাই কে আমার কিছু বলার ছিল
–কি হয়েছে বাবা বলো
–কাল আশফি র বাবা, আশফি সবার সাথে কথা হয়েছিল
নাবিল সাহেবের কথা শুনে সবাই খাওয়া ছেড়ে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
–কি,তারপর
চলবে———–
#প্রেম_ছোয়ালে
Part:09
Writer:Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
নীলিকা, সাওদা,নাবিল সাহেবের স্ত্রী সকলেই উত্সুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
নাবিল সাহেব সব কিছু খুলে বললেন কালকের রাতের ঘটনা
–এই কথা হয়েছিল আমার আশফি র সাথে আর ওর বাবা র সাথে
–কি বলছো কি তুমি ।এরকম লোকের হাতে আমার মেয়ে কে তুলে দিতে যাচ্ছি আমি
নাবিল সাহেব নীলিকা র দিকে চোখ দিলেন।একটু আগেও সে তার বাবার কথা মন দিয়ে শুনছিল।এখন দিব্যি খেয়ে যাচ্ছে ।যেন কিছুই হয় নি
–নীলি মা
–হুম বলো
ভাতের লোকমা টা মুখে নিয়ে বাবা র দিকে তাকালো নীলি
–নীলি মা তুমি কি আমার কথা শুনতে পেয়েছো
–হুম শুনেছি
–এখন তবে তোমার কি মত?
–এ আর নতুন কি বাবা ।তোমার যে প্রথম থেকেই আশফি কে পছন্দ না সেটা তো আমার অজানা নয়।ও বেকার,ওর বাবা র কথা গুলো কেমন আরো কতো কি
–মানে।এসব কি বলছিস তুই নীলি
–কিছু কি ভুল বললাম মা।বাবা র তো শুরু থেকেই এ নিয়ে সমস্যা
নীলি র বাবা মেয়ে র কথা শুনে যেন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললেন।তার মেয়ে যে তাকে এভাবে অবিশ্বাস করবে তিনি ভাবতেও পারেন নি
–নীলি মা,তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে মিথ্যা বলছি।বুঝলাম আশফি কে আমার প্রথম এ পছন্দ হয় নি তাই বলে কি তোমাকে মিথ্যা বলতে যাব আমি।তোমার কি মনে হয় আশফি র বাবা যেসব কথা বলেছেন এগুলো আমি তোমাকে বানিয়ে বলছি
–তুমি সত্যি বলছো না মিথ্যা বলছো সেটা তুমি ই ভালো জানো বাবা ।আর আশফি যদি বিয়ে না করবে তাহলে সকালে উঠে ই আমাকে ফোন দিয়ে বিয়ে র জন্য মনস্থির করতে বলতো না
–তোমাকে আশফি ফোন দিয়ে ছিল,কৈ এতোক্খন তো বলোনি
–বললে তো আর বুঝতাম না তোমার আশফি র প্রতি এতো রাগ
–নীলিকা এসব কি হচ্ছে, তোমার বাবা র সাথে তুমি এভাবে কথা বলতে পারো না
–কিছু হয় নি মা।তবে হবে।বাবা র কারণে ।বাবা যদি এভাবে আশফি র প্রতি রাগ দেখাতে থাকে তাহলে বিয়ে ই হবে না দেখে নিও
বলেই নীলিকা খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে গেল
–নীলি নীলি,,,,খেয়ে যা
–ওকে ডেকে লাভ নেই।ও এখন কিছুই শুনবে না সেলিনা।ওর মাথা তো তার আগেই ঐ ছেলেটি খেয়ে নিয়ে ছে
–ওগো আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না কি হতে চলেছে
–জানিনা ।তবে আল্লাহ্ র কাছে আমার ফরিয়াদ মেয়ে টাকে ভালো রাখুক।যেখানেই দিক।ও আমাকে ভুল বুঝলো তাতে আমি কষ্ট পাই নি।ও যদি আশফি র বাবার বলা সব কথা শুনতো তাহলে কি করতো সেটা ভাবছি
–পুরো কথা মানে।আরো কি বলেছে আশফি র বাবা ।বলো আমাকে।কি লুকিয়ে যাচ্ছ তুমি
–সব সময় সব কথা বলা যায় না।যদি কোন দিন সুযোগ আসে তবে সেদিন বলবো
নাবিল সাহেব ও ঘরে চলে গেলেন
“”প্রেম একটা নেশা
মারাত্মক নেশা
যেটা হয় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে যায়
নয়তো শীতল বাতাস দিয়ে ভিজিয়ে দেয় সকল কিছু
এ নেশাতে যেমন মাদক আছে
তেমনি ধোয়া আছে
হয় সব কিছু কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দেবে
নয়তো ধোঁয়া র মতো ঝাপসা হতে হতে একটা সময় সবকিছু পরিষ্কার করে দেবে
ঘটবে সূচনা নতুন সকালের””
নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে দুইটি ছায়া।পানিতে তাদের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট ।দুপুরের রোদ হেলে পড়েছে ।বিকেল এর শুরু হবে এখন।চারদিকে আবছা রোদ আবার আবছা ছায়ার ঘনঘটা।মৃদু বাতাসে গাছের পাতা র সাথে নদীর ঢেউ গুলো ও যেন তালে তালে নাচছে।দু একটা নৌকা ও চলছে নদীতে
–আশফি চলো না নৌকাতে উঠি
–না এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে তো
–শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থেকে কি করবে, তার চেয়ে চলো
–কি আর করবো তোমাকে দেখবো।আর তো মাত্র কটা দিন কাছে পাব
কথাটি আনমনে বলে ফেললো আশফি।নীলি কে তার বাসা থেকে অনেক দূরে এই নদীর পাড়ে নিয়ে এসেছে।যাওয়ার আগে তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে কাটানো প্রতি টা সময় আশফি খুব ভালো করে উপভোগ করতে চায়।তার স্মৃতি গুলো কে নিতে চায়
–এ কেমন কথা।যে কটা দিন আছো মানে
–আরে বুঝলে না।যে কটা দিন আনমেরিড আছি।এর পর তো মেরিড হয়ে যাব তাই না
–উহহ তুমি না পারো ও
খুনশটি তে কেটে গেল আরো কিছু দিন।নীলি কার বাড়ি তে ভালোই গম গম পরিবেশ ।বিয়ে বাড়ি বলে কথা
আর মাত্র চারদিন।তার পর ই নীলিকা র সেই প্রতীক্ষা র দিন।যেদিন সারা জীবন এর জন্য নীলিকা আশফি র হয়ে যাবে
সকালে
আশফি র ফোনে টোন বেজে উঠলো
আশফি অন করে দেখে ইমেইল ।তাতে স্পষ্ট লেখা আছে আর চারদিন পর দুপুর দুটোতে আশফির ফ্লাইট
আশফি চোখ বুলিয়ে নিল ভালো করে।হ্যাঁ তাদের বিয়ে র তারিখ এই আশফি র ফ্লাইট ।আশফি খুশি হবে না কষ্ট পাবে ভেবে পারছে না
সে চেয়েছিল তার ফ্লাইট অনেক দেরি ।বিয়ে র দিন সে কাউকে না জানিয়ে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাবে।আশফি র গ্রামের বাড়ি কোথায় নীলিকা ও জানে না।আশফি ভেবে ছিল তারপর সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার পর আবার নীলিকা র সাথে যোগাযোগ করবে।তাতে হয়তো তার নীল পরীর রাগ ভাঙবে
আশফি কি সত্যি পারবে তার নীল পরিকে ছেড়ে যেতে।না কি ঘটবে অন্য কিছু।যার পরিনতির কারন এ আজ তারা দু জন দুই প্রান্তে
চলবে————
#প্রেম_ছোয়ালে
Part:10
Writer:Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
আশফি তার মা বাবা কে খবর টা দিল।
ঘরের ভেতর রোদ পড়েছে।সূর্য এর আলো আর বাইরে হালকা বাতাস।দুলতে দুলতে লুকোচুরি খেলছে জানালার পর্দা গুলো।
আশফি ওপরে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে
“””মন যেটা চায়,সেটা পায় না,
মন যেটা পায় সেটা চায় না,
মন যেটা পায় সেটা ছারতেও চায় না
মন যেটা ছেড়ে যেতে চায় সেটাও ছারতে চায় না
তবে কি আমি পাব তোমাকে প্রিয়তমা
নাকি আবছা আলো আর ভাঙা কাচের মতো ঝাপসা হবে
ভেঙে যাবে সব স্বপ্ন
যেটা রাতে দেখা
সকাল এ চোখ খুললেই হয়তো মিলিয়ে যাবে
ঢেকে যাবে সব কুয়াশা
আবার উঠবে সূর্য
সূচনা ঘটবে
এক নতুন সকালের
সেই প্রতীক্ষায়
দীর্ঘ সমীক্ষায়
আমার অপেক্ষায়
তুমি কি থাকবে প্রিয়তমা??”””””(স্বরচিত)
কবির মনে যে কবিতা,লেখনি তে যে লেখনি আশফির মনে ও কি তাই
আশফি র খুব ইচ্ছে করছে দৌড়ে ছুটে গিয়ে এক টানে নীলিকা কে জরিয়ে ধরতে ।মন খুলে হাসতে ইচ্ছে করছে।বুক ফুলিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে এই সুখবর।
কিন্তু নিয়তি বড় অদ্ভুত ।চাইলেও আশফি পারবে না তার নীল পরিকে এটা বলতে।একদিকে যেমন তার নীল পরী,অন্য দিকে তার পরিবার।মাঝখানে নিজে হাবুডুবু খাচ্ছে ।তাকে শুনতেই হবে পরিবার এর কথা
–আচ্ছা নীল পরী আমার যে আজ বড্ড অসহায় লাগছে ।তুমি তো বলেছিলে না কখনো একা হতে দেবে না আমায়।খুব একা লাগছে আজ।তুমি কি একটি বার আসবে আমার কাছে।তোমাকে যে আজ আমার খুব প্রয়োজন
দুপুর বেলা, বাড়িতে খুব হৈ চৈ।
সেই সকাল থেকে আশফি ঘর থেকে বের হয় নি।ঘুমিয়ে ছিল।ঘুমিয়ে থাকাকালীন বোধ হয় মানুষ সব ভুলে যায় ।ঘুমিয়ে থাকলে নাকি অন্তর আত্মা ও কাছে থাকে না।এ জন্য ঘুমন্ত মানুষ কে কখনো জোরে ডাকা উচিত না।
আশফি হাই তুলতে তুলতে নিচে এসে পুরো অবাক ।ঘর ভরতি তাদের আত্মীয় স্বজন ।তাদের কে রীতিমতো নাস্তা দিতে আপ্যায়ন করতে হিমশিম খাচ্ছে আশফির মা ,বাবা, আর মাইশা ।সাথে আবার মাইশা র কিছু বান্ধবী ও আছে
আশফি নিচে গিয়ে সোজা মায়ের কাছে গেল
–কি হলো মা ,হঠাত্ এতো আয়োজন কেন বাড়ি তে
পান টা মুখে পুরে নিলেন,তারপর ছেলের জবাব দিলেন তিনি
–তুই বিদেশ যাবি পড়াশোনা করতি তাই ওদের এনেছি।ওদের কে দেখাতে হবে না আমার ছেলে ও বিদেশ যাচ্ছে
বলে অন্য দের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে অতি গর্ব এর সহিত হেঁটে চলে গেলেন তিনি
আশফি আর কিছু বললো না।তার বাবা মায়ের এতো নাচানাচি তার কাছে বোকামি ছাড়া কিছু নয়
এদিকে
মাইশা র কয়েক টা বান্ধবী তো আশফি র ওপর সেই ক্রাশড
–কি রে মাঈশু এতো দিন তো তোর ভাইকে আমাদের সামনে আনতিস না
–আরে বুঝলি না তাইলে যে আমরা অনেকেই ওর ভাবী হওয়ার চেষ্টা করতাম সেজন্য হয় তো
সবাই হাসা হাসি করছে
এমন সময় মারুফা মাইশা র দিকে এগিয়ে আসলো।বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে সে।খুব বড়লোক পরিবার এর মেয়ে ।তার বাবা র কোন কিছু র অভাব নেই বললেই চলে
–মাইশা
–আরে মারুফা তুই যে,,যাক এই গরীব এর ঘরে তোর পা র ধুলো পরলো
–আহ কি যে বাজে বলিস না।এই আশফি ভাইয়া তো দেখছি পুরো রাজপুত্র ।তোর ভাই দেখে কেউ বলবেই না
–কেন তোর পছন্দ হয়েছে নাকি?
উওরে মারুফা একটু মুচকি হেসে লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে পাশে চলে গেল
এদিকে মাইশা র মনে বিজয়ের হাসি
–আমার বড়লোক বান্ধবী যে কি না জীবন এ ছেলেদের দিকে তাকায় না সে কি না ভাইয়া র প্রশংসা করলো।এখন ভাইয়া বিদেশ যায় নি তাই এই অবস্থা ।না জানি গেলে কি হবে।তারপর এরকম বড়লোক এর মেয়ে দেখে বিয়ে দিলে আমরা তো আজীবন পায়ের ওপর পা তুলে খাব
এদিকে
নীলিকা দের বাড়ি তে বেশ রমরম অবস্থা ।আত্মীয় স্বজন সবাই আশা শুরু করেছেন।বড় মেয়ে র বিয়ে।নাবিল সাহেব মোটামুটি ভালোই আয়োজন করেছেন
এদিকে সাওদা আর নীলিকা বসে গল্প করছে
–আপু একটা কথা বলি
–বল
–মন খারাপ করবি না তো
–আরে বল না
–আমার বন্ধু আবির আছে না
–হ্যাঁ ।আশফি দের ঐ দিকেই তো বাড়ি ।কেন?
–ও বলছিল।আশফি ভাইয়া দের বাড়ি তে নাকি বিয়ে র কোন তোরজোর ই নেই।আর ওরা তো বেশি দুরের না।আশফি ভাইয়াদের প্রতিবেশি বলা যায়
–তো
–ওদের নাকি আশফি ভাইয়া বাড়ি থেকে বিয়ে র দাওয়াত পর্যন্ত দেওয়া হয় নি।আরে শুধু তাই না আশফি ভাইয়া দের পাশের যে একতালা বাড়ি তুষার আছে না,ওর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল ওরা দাওয়াত পেয়ে ছে কিনা।তুষার না কি বলেছে ও আবির এর কাছ থেকে ই প্রথম আশফি র বিয়ের খবর শুনছে।কেউ কিছু জানে না
কথা গুলো শুনে নীলিকা র মনে কেমন কু ডাকতে শুরু করলো।আজকাল সে রাতে স্বপ্ন ও দেখছে।গত তিনদিন যাবত একি স্বপ্ন
দুইটি ফড়িং পাশা পাশে উড়ছে ।উড়তে ই আছে।হঠাত্ করে একটি ফড়িং এর একটা পাখা ভেঙে গেল।হঠাত্ উড়ে বন্ধ করে ফড়িং টা পরে গেল।কিন্তু সঙ্গী ফড়িং টা তার জন্য দাঁড়ালো না।সে দিব্যি উড়ে চলে।হঠাত্ কোথ থেকে আরেকটি নতুন ফড়িং এসে ঐ ডানা কাটা ফড়িং এর পাশে বসলো
এই স্বপ্ন এর মানে কি নীলি নিজেও জানে না।শুধু এটুকু অনুভব করছে কিছু খারাপ ঘটবে
চলবে———