#প্রেম
#সিজন ২
#পর্বঃ৪
#Tanisha Sultana (Writer)
রাত বারোটা বেজে আট মিনিট। মিষ্টি বই পড়ছে। মলি মিষ্টির পাশেই ঘুমচ্ছে। হঠাৎ একটা গানের শব্দ ভেসে আসে
“ভালো যদি তুমি আমাকে
ছুটে চলে আসো না….
দুরে কোথাও আছি বসে
হাত দুটো দাও বাড়িয়ে……
“গানটা নিশ্চয় লেজ ছাড়া বাঁদর গাইছে। খুব ভালো গান করে। গান নিয়ে এগোলে ফিউচারে অনেক ভালো একটা পজিশনে যেতে পারবে
মিষ্টি উঠে বেলকনিতে যায়। দেখে জীম গিটার বাজাচ্ছে আর গান গাইছে। মিষ্টি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছে।
জীমের মিষ্টির দিকে চোখ পড়তেই গান বন্ধ করে দেয়। মিষ্টিও চমকে জীমের দিকে তাকায়
” ওই ফুলটুসি এদিকে আয়
মিষ্টি এদিক সেদিন তাকিয়ে জীমের কাছে যায়। জীম একটু সরে বসে মিষ্টিকে বসার জায়গা দেয়। মিষ্টি দাঁড়িয়ে আছে
“বস
” নাহহ আমি এভাবেই ঠিক আছি
জীম মিষ্টির হাত ধরে টান দিয়ে বসিয়ে দেয়।
“আই লাভ ইউ ফুলটুসি
মিষ্টি ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।
” আমি কিছু বলছি
“হুমম
” কি হুম
“আমি শুনছি
” তো এন্সার
“দেখুন ক্যারিয়ার সুন্দর করতে গেলে এসব প্রেম ভালোবাসা ঠিক না। আমি এসব নিয়ে ভাবতে চায় না। আমার কাছে সব থেকে আগে বাপির ড্রিম। বাপি কষ্ট পাবে এমন কিছু আমি করবো না।
” তাহলে তুই আমার সাথে প্রেম করবি না
“আমার
” ইয়েস ওর নো
“বলছিলাম কি
” এন্সার মি
জীম ধমক দিয়ে বলে ওঠে। মিষ্টি ভয় পেয়ে কেঁপে ওঠে। জীম মিষ্টির দুই বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলে
“তোর ওই আসলে নকলে শোনার টাইম জীমের নেই। জীম সোজাসাপ্টা কথা পছন্দ করে এবং বলে। তো তুই সোজাসুজি বল
ভয়ে মিষ্টির হাঁত পা কাঁপছে আর চোখ দিয়ে গড়গড় করে পানি পড়ছে
” ডু ইউ লাভ মি
মিষ্টির গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। জীম মিষ্টির কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে
“চুপ করে থাকা সম্মতির লহ্মণ
মিষ্টি ভয়ের সাথে এবার অস্বস্তিতে পড়েছে। জীমের নিশ্বাস মিষ্টির চোখে মুখে পড়ছে। অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছে মিষ্টির সারা শরীরে। অদ্ভুত ভালো লাগা। এই ভালো লাগার সাথে মিষ্টি আগে কখনো পরিচিত হয় নি।
মিষ্টি চোখ তুলে জীমের দিকে তাকায়।
” ফুলটুসি
“হুমমম
জীম চোখের পানি মুছে দেয়।
” বলছিলাম
“বল
” আপনি তো ভালো গান করেন তো গান নিয়ে এগোলে ক্যারিয়ার ব্রাইট হবে
“ক্যারিয়ার ফিউচার এসব নিয়ে ভাবার সময় আমার নেই। আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি। জীমনটা দুইদিনের আর এই দুইদিনের জীবনে ক্যারিয়ার গড়াটা বেশি ইমপটেন্ট না। ইমপটেন্ট ভালো থাকাটা। অবশ্য তুই এটা বুঝবি না
” হুমম
“হুমমম। চল কাল তোকে নতুন এক জগৎএ নিয়ে যাবো
” কোথায়?
“গেলেই দেখতে পাবি। বাইরের জগৎটা যেটার সাথে তুই পরিচিত না
” ওহহহ
“যাহহ রুমে যা। অনেক রাত হলো
মিষ্টি চলে যায়।
” সবাই ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত আর আমি ক্যারিয়ার শেষ করতে।
জীম একটু হাসে
জীম মিষ্টিকে কড়া করে বলে দিয়েছে মিষ্টি যেনো আক কলেজ ড্রেস না পড়ে। মিষ্টি নিজের বাসায় আসে। আজ রাতে বাবা মা ভাই আসবে। মিষ্টির খুব ভালো লাগছে। বাসায় ঢুকে দরজা বন্ধ করবে তখন জীম এসে হাজির। দরজায় হাত দেয়। মিষ্টি চমকে ওঠে। জীম বাসায় ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়
“আআপনি
” হুমম আমি
“কেনো?
” কোন ড্রেসটা পড়বি সেটা চুজ করে দিতে এলাম
“প্লিজ আপনি যান
” তোর মনে হয় তুই বললেই আমি চলে যাবো
“আমি তো চেঞ্জ করবো
” আমি দেখবো
মিষ্টি চোখ বড়বড় করে তাকায়। জীম পাত্তা না দিয়ে মিষ্টির রুমের দিকে হাঁটা শুরু করে। মিষ্টিও পেছন পেছন আসছে
“দেখুন
জীম থেমে গিয়ে বলে
” বিয়ের পরে দেখবো। এখন দেখার ইচ্ছে নেই। কিন্তু তুই যদি জোর করে দেখাতে চাস তো আমি দেখতেই পারি
মিষ্টি আবারও লজ্জায় পড়ে যায়। কি একটা কথা বললো যেটাতে নিজেই লজ্জায় মরছে।
“কি বেপার তুই এমন টমেটো হচ্ছিস কেনো?
” টমেটো
“তা নয়ত কি? লজ্জায় তো একদম টমেটো + স্ট্রবেরি হয়ে গেছিস। তবে পবলেম নেই দুটোই আমার খুব প্রিয়
মিষ্টি চুপ হয়ে যায়। আবার কিছু বলে লজ্জা পাওয়ার ইচ্ছে মিষ্টির নেই।
জীম মিষ্টির রুমে গিয়ে আলমারি খুলে লাল একটা গাউন বের করে
” এটা পড়ে আয়
“আমি এটা পড়বো না
” বুঝেছি আমার পড়িয়ে দিতে হবে।
জীম মিষ্টির দিকে এগোতে নিলেই মিষ্টি গাউন হাত থেকে নিয়ে নেয়
“না আমি নিজেই পড়ে নিচ্ছি
” গুড গার্ল
মিষ্টি গাউন নিয়ে অন্য রুমে চলে যায়। চেঞ্জ করে এসে দেখে জীম মেচিং কানের দুল চুড়ি বাঁচচ্ছে।
“আমার ইমপটেন্ট ক্লাস আছে
” হুম তো
“কলেজে যাবো
” আমি যেতে না দিলে যেতে পারবি না
“আপনি করতে চাইছেন কি?
” হলে যাবো তোকে নিয়ে
“হল কি?
” ছিনেমা হল
“ওখানে কেনো?
” ছিনেমা দেখতে
“আমি ছিনেমা দেখি না
” এবার থেকে দেখবি। শুধু ছিনেমা কেনো আরও অনেক কিছু করবি
“🤨
” আমি যেমন আছি তেমনই থাকবো তোকে আমার মতো হতে হবে। আমার মতো বলতে হাজারটা ছেলের সাথে কথা বলা না। আমার যা ভালো লাগে তোকে তার সাথে পরিচিত হতে হবে। যেমন ছিনেমা দেখা লং ডাইভে যাওয়া এরকম অনেক কিছু। আমার প্রেম দিয়ে আমি তোকে চেঞ্জ করে নেবো
“আমি কিন্তু আপনাকে এক্সেপ্ট করি নি
” আমি তো এক্সেপ্ট করতে বলিও নি
“উফফফফ
” দমক দিলেই তুই কেঁদে ফেলিস তাই আপাতত ধমক দিতে চাইছি না তবে বাধ্য করলে চড়ও দিতে পারি
মিষ্টি জীমের দিকে একটু তাকিয়ে কানের দুল চুড়ি পড়তে থাকে। চুল গুলো না আঁচড়িয়েই বাঁধতে যায় জীম দেয় না। খুব যত্ন করে মিষ্টির চুল গুলো আঁচড়ে দেয়
মিষ্টির মুখের কাছে মুখ নিয়ে আয়নায় দেখতে দেখতে বলে
“পারফেক্ট
মিষ্টি সরে যায়।
জীমের বাইকের পেছনে বসে আছে মিষ্টি। বিরক্তি ভয় সব একসাথে কাজ করছে। এভাবে কখনো অন্য ছেলের সাথে বাইকে বসবে তা মিষ্টি কখনো কল্পনাতেও ভাবে নি। ইফাদ আর বাবা ছাড়া আর কোনো ছেলের সাথে কখনো কথাই বলে নি। সেখানে অন্য ছেলের বাইকে। বাবা দেখলে মিষ্টি কি করবে? এসব ভাবতে ভাবতে জীম বাইক থামায়
” নামো
মিষ্টি নামে। জীম বাইক দাঁড় করিয়ে নিজেও নামে।
“চল
” এটা কোন জায়গা
“ছিনেমা হল
” আমি যাবো না প্লিজ
“কোলে নিতে চাচ্ছি না আপাতত
মিষ্টি হাঁটা শুরু করে। জীম দুটো টিকিট কিনে ভেতরে যায়। ভেতরে গিয়ে মিষ্টির ভয় বাড়তে থাকে
” এখানে তো কেউ নেই
“কে বললো
” আমি দেখছি তো। আর অন্ধকার কেনো?
“ছিনেমা হল অন্ধকারই থাকে
” কিন্তু
“বসো
জীম মিষ্টিকে বসিয়ে নিজেও বসে। এবার মিষ্টি চারদিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখে অনেক মানুষ আছে এখানে। মিষ্টিদের সামনে একটা কাপল বসেছে। kabir sing এর একটা মুভি হচ্ছে। মিষ্টি অনইজি ফিল করছে। জীম ছিনেমা দেখছে মন দিয়ে।
মিষ্টিরও ভালো লাগছে। মিষ্টির তেমন ছিনেমা দেখা হয় না। সারাক্ষণ তো বই নিয়েই বিজি থাকে।
” কেমন লাগছে
জীম ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে
“হুমমম
” এটা আমার জগৎ। আজ সারাদিন আমি তোকে আমার পৃথিবীর ঘুরে দেখাবো
মিষ্টি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে ছিনেমায় হিরো হিরোইনকে লিপ কিস করছে। জীম মিষ্টির দিকে তাকায় মিষ্টি জীমের দিকে। মিষ্টি ঢোক গিলে আবার সামনে তাকিয়ে দেখে সামনের কাপলরাও সেম
“থাকবো না আমি এখানে
মিষ্টি উঠে দাঁড়ায়। জীম টান দিয়ে বসিয়ে দেয়
” প্লিজ থাকবো না এখানে
“কেনো?
” বাজে জায়গা এটা
“এটা হতেই পারে। কমন বেপার। আরও অনেক কিছু হয়।
” মানে
জীম মিষ্টির দিকে এগোতে নিলেই মিষ্টি ঠোঁটে হাত দেয়। জীম মুচকি হেসে হাতের ওপরই কিস করে। মিষ্টি এবার কান্না করে দেবে এমন অবস্থা
“এই এই একদম কান্না করিস না প্লিজ তাহলে পাবলিক আমাকে গনোধোলাই দেবে। ভাববে তোর সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করছি
” সরুন আমি যাবো
“আর একটু দেখি না মুভিটা জোশ
মিষ্টি জীমকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে বেরিয়ে যায়। জীমও পেছন পেছন যায়। ছিনেমা হলের বাইরে গিয়ে মিষ্টি বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। এতোখন প্রায় দম আটকে ছিলো। ওি ছেলেটা সত্যিি লেজ ছাড়া বাঁদর। নাহলে এরকম একটা বাজে জায়গায় কেউ আসে। ছি
” আপনার জগৎ টা জঘন্য। আমার জগৎটা ভালো। ছি এরকম নোংরা জায়গায় কখনো কোনো ভালো মানুষ আসে না। জারা আপনার মতো লেজ ছাড়া বাঁদর তারাই আসে।
“তাই বুঝি
মিষ্টি নিজে নিজেই বলছিলো। তখন জীম শুনে ফেলে আর বলে। মিষ্টি চমকে পেছনে তাকায়
” আমার জগৎটা আমার কাছে বেস্ট। এবার নেক্সট
“আমি বাসায় যাবো
” অবশ্যই তবে আমি যখন চাইবো
“আপনি
” চলো ফুলটুসি
জীম মিষ্টির হাত ধরে হাঁটা শুরু করে।
“আল্লাহ এই পাগলের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও। এ করতে চাইছে টা কি? বাপি যদি জানতে পারে মেরে ফেলবে আমাকে। এখন একে কে বোঝাবে
মিষ্টি মনে মনে বলতে থাকে
চলবে