#প্রেম_পায়রা 🕊️🕊️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#একবিংশ_পর্ব
ফোনের স্ক্রিনে চোখ যেতে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় মিশরাত। মুখ দিয়ে টু শব্দ ও বের হচ্ছে না। একটা কথা আছে না, অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর! সে অবস্থাই বর্তমানে মিশরাতের হয়েছে।
রবিনের সাথে মিশরাতের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য ফোনের স্ক্রিনে বন্দী। আর সেটা দেখে লজ্জায়, ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো মিশরাত!
– ” এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিস কেন? এখন দেখতে খারাপ লাগছে? লজ্জা করলো না ঐ রাসকেলের সাথে নোংরামি করতে?”
হুংকার দিয়ে উঠল স্নিগ্ধ। রাগ কন্ট্রোল করার জন্য জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে সে। কিছুক্ষণ পর শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে উঠলো,
– ” তুমি তো বলেছিলে তুমি আমাকে ভালোবাসতে চাও, তাইনা? নতুন করে সম্পর্কটা শুরু করতে চাও, তাহলে এগুলো কিভাবে করলে মিশরাত।
মিনিমাম লজ্জাবোধ টুকুও তোমার মাঝে ছিল না নাকি?
কিভাবে পারলে ঐ ছেলেটার সাথে এমন,,, বলতেও লজ্জা লাগছে!
আসলেই মেয়ে জাতটাই বোধ হয় একই। তুমি এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে।”
বলেই মিশরাতকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টেনে হিচড়ে নিচে নিয়ে যেতে লাগলো স্নিগ্ধ।
– ” স্নিগ্ধ, আমার লাগছে! ছাড়ুন আমাকে!
আমার পুরো কথাটা তো শুনুন। আমার আর রবিন ভাইয়ের মাঝে কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই। প্লিজ লেট মি এক্সপ্লেইন। সবটা না জেনে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন না!”
কিন্তু সেদিকে কর্ণপাত না করে স্নিগ্ধ মিশরাতকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে চিল্লাচিল্লি করার শব্দ শুনে হুড়মুড় করে রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী। পেছন পেছন মিস্টার ইফতেখার চৌধুরীও আসলেন।
– ” কি ব্যাপার স্নিগ্ধ? তুমি মিশরাতকে এভাবে টেনে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?
কি হয়েছে কি!!”
প্রশ্ন করে উঠলেন মিসেস ইফতেখার চৌধুরী।
ততক্ষণে স্নিগ্ধ মিশরাতকে নিয়ে দরজার কাছটায় চলে গিয়েছে।
– ” বের হয়ে যাও এ বাড়ি থেকে!
আমার বাড়িতে আর যাই হোক কোনো নষ্টা মেয়ের জায়গা নেই!
আমাদের সবার জীবন থেকে চলে যাও তুমি!!”
সারা শরীর হীম ধরে গিয়েছে মিশরাতের। মাথাও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। স্নিগ্ধর বলা প্রতিটা কথা তার মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে। স্নিগ্ধর কথা শুনে মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী আর মিস্টার ইফতেখার চৌধুরী দুজনেই অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলেন।
– ” কি বলছিস কি স্নিগ্ধ? তুই মিশরাতকে কি উল্টোপাল্টা অপবাদ দিচ্ছিস সেটা তোর খেয়াল আছে!!”
অবাক হয়ে বলে উঠলেন মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী।
– ” হ্যাঁ মা, আমি যা বলছি তা ঠিকই বলছি!
এই মেয়ে এই বাড়িতে থাকতে পারবে না। ওকে এখান থেকে বের হয়ে যেতে বলো!”
স্নিগ্ধ কাঠকাঠ গলায় বলে উঠলো। মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী দৌড়ে মিশরাতের কাছে এসে দাঁড়ালেন।
– ” মিশরাত, স্নিগ্ধ এসব কি বলছে? সত্যিটা কি আমাকে খুলে বলো! কি হয়েছে?”
মিসেস ইয়ামিন চৌধুরীর কথা কানে পৌঁছাতেই পাশ ফিরে তাকালো মিশরাত।
– ” মা বিশ্বাস করুন, আমি কিছু করিনি। আমি জানি না কে এভাবে আমার রবিন ভাইয়ের ছবি তুলেছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি এসবের কিছুই করিনি!”
মিশরাতের কথা শুনে স্নিগ্ধ রেগে তেড়ে আসে তার দিকে।
– ” দেখো মিশরাত, আমি এখন কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাই না। তাই বলছি চুপচাপ চলে যাও।
আর আগামী সাত দিনের মাথায় তুমি তোমার ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবে! নাও গেট লস্ট। ”
স্নিগ্ধর মুখে ডিভোর্স পেপারের কথা শুনে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল মিশরাতের। কি বলছে এগুলো সে!
– ” কি বলছেন স্নিগ্ধ? প্লিজ এমনটা করবেন না, আমি সত্যিই কিছু করিনি। আপনি আমার কথার বিশ্বাস করছেন না কেন!!”
মিশরাতের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসলো স্নিগ্ধ। চোখে চোখ রেখে সোজাসাপ্টা গলায় বলল,
– ” কি বলছি সেটা তুমি বুঝতে পারছো না তাই তো!
আমি সোজাসাপ্টা ভাবে বলছি, আই ওয়ান্ট ডিভোর্স, তোমার মতো নষ্টা মেয়েকে আমি আমার স্ত্রী মানি না!”
স্নিগ্ধর কাছ থেকে বারবার এমন অপবাদ পেয়ে মিশরাতের রাগে লজ্জায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। সে যখন এগুলো কিছুই করে নি তাহলে শুধু শুধু কেন দোষারোপ শুনতে হবে তাকে।
– ” ইনাফ ইজ ইনাফ মিস্টার স্নিগ্ধ।
অনেক হয়েছে। আপনি সেই কখন থেকে আমাকে অযথা দোষারোপ করে যাচ্ছেন। একবারও আমার কথা শুনেছেন? আমি নষ্টা মেয়ে হিসেবে অপবাদ দিচ্ছেন?
আসল নষ্টামি কে করেছে সেটা আপনার শার্টের এসব চিহ্ন দেখলেই বোঝা যায় মিস্টার স্নিগ্ধ!
আমাকে অপবাদ দিচ্ছেন? তাহলে কাল রাতে নেশায় বুঁদ হয়ে অরিন আপুর সাথে বাড়ি ফিরলেন কেন? অরিন আপুই বা আমাকে সেসব কথা কেন বললো?
কই আমি তো বিশ্বাস করিনি আপনি অরিন আপুর সাথে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করেছেন। সে তো আমাকে সবটাই বলেছে!!”
মিশরাতের কথা শুনে স্নিগ্ধ বিস্ফোরিত চোখে তাকালো মিশরাতের দিকে। মিশরাতের কথায় শার্টের দিকে নজর যেতেই সে আতকে উঠলো।
– ” আপনার আমার প্রতি বিশ্বাস এতোই ঠুনকো ছিল স্নিগ্ধ, যে একটা ছবির উপর ভিত্তি করে আপনি আমাকে আজ এত বড় অপবাদ দিয়ে বসলেন?
লিসেন, আমি আমাকে নির্দোষ প্রমাণ করেই ছাড়বো আর এ বাড়ি থেকেও বের হয়ে যাবো। আর সেটা আপনার এই ঘৃণিত অপবাদের জন্য না, সেটা আমার নিজের আত্মসম্মানের জন্য!
তবে হ্যাঁ সেদিন সত্যিটা জেনে যাবেন আপনি চাইলেও আমাকে আর ফিরিয়ে আনতে পারবেন না, মিস্টার স্নিগ্ধ!!!
মাইন্ড ইট!”
অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে উঠলো মিশরাত। গুটি গুটি পায়ে গিয়ে মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী আর ইফতেখার চৌধুরীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে।
– ” মা, বাবা! আমি জানি আপনারা আমাকে ভুল বুঝবেন না, আপনারা আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন! আমি জানি না আমি আদৌও তার যোগ্য কি না?
তবে হ্যাঁ প্লিজ আমাকে আটকাবেন না, আমি এত বড় একটা মিথ্যে অপবাদ নিয়ে স্নিগ্ধর সাথে একই ছাদের নিচে থাকতে পারবো না!
এ কয়েক মাসে আমি যতটুকু ভালোবাসা পেয়েছি তাতে আমি মুগ্ধ।
আপনারা নিজেদের খেয়াল রাখবেন। আমার চলে যাওয়ার সময় এসে পড়েছে। ভালো থাকবেন!!”
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো মিশরাত। চোখে জমে থাকা অশ্রু টুকু টুপ করে গড়িয়ে গালে এসে পড়লো।
মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী মিশরাতকে আটকাতে গিয়েও থেমে গেলেন। কোন মুখে আটকাবে সে!
মিশরাত এগিয়ে গেল দরজার দিকে। যাওয়ার পূর্বে এক পলক স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে আবারো হাঁটা শুরু করলো সে। আর স্নিগ্ধ ঠায় মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে। চিন্তাশক্তি হারিয়ে গিয়েছে তার। মিশরাতের বলে যাওয়া প্রতিটি বাক্য তার কানে বাজছে। এত বড় ভুল সে কি করে করতে পারলো!
মিশরাত বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেই মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী এসে দাঁড়ালেন স্নিগ্ধর সামনে। স্নিগ্ধ মাথা তুলে তাকাচ্ছে না। দৃষ্টি তার মেঝেতে আবদ্ধ। মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলেন স্নিগ্ধর গালে।
– ” লজ্জা করলো না, এসব করতে?
তোকে আমার নিজ গর্ভের সন্তান বলতেও ঘৃণা হচ্ছে স্নিগ্ধ!!
মিশরাতের মতো ওমন একটা মিষ্টি মেয়েকে তুই এতো বড় অপবাদ দিলি?
আর তুই নেশা করিস? অরিনের সাথে কিসের সম্পর্ক তোর? যদি কেউ নষ্টা হয়ে থাকে সেটা মিশরাত না সেটা হলো তুই!
আমার চোখের সামনে থেকে এই মুহূর্তে দূর হয়ে যা স্নিগ্ধ। আমার তোর চেহারা দেখতেও ঘৃণা লাগছে!!”
এদিকে ইফতেখার চৌধুরীর শরীর ঘর্মাক্ত হয়ে উঠেছে। বুকে অসহনীয় ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে। এ কিসের লক্ষণ তবে?
কারো চাপা আর্তনাদের শব্দ কানে পৌঁছাতেই পেছনে ফিরে তাকালো মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী আর স্নিগ্ধ। মিস্টার ইফতেখার চৌধুরী সোফার উপর বসে পড়েছেন বুকে হাত দিয়ে। বুকের ভেতর চাপ অনুভব হতেই চাপা আর্তনাদ ভেসে আসে।
– ” বাবা, বাবা! কি হয়েছে বাবা? চোখ খুলো! বাবা চোখ খুলে রাখো! কিছু হবে না!
আমরা এক্ষুনি হসপিটাল যাচ্ছি, তুমি ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করো না!!”
ইফতেখার চৌধুরীকে ধরে প্রলাপ বকতে থাকে স্নিগ্ধ।
– ” খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না স্নিগ্ধ! ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে গিয়েছে, এখন পরিবারের লোকজন ও দূরে ঠেলে দিচ্ছে!
হওয়া উচিত!
আমারো এমন কষ্ট হয়েছিল। তোমার জন্য আমি আনানকে, আমার অস্তিত্ব, আমার চেহারা হারিয়েছি! কিভাবে তোমাকে ছেড়ে দেই বলো!”
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো অরিন। চোখে মুখে প্রতিশোধের তীব্র নেশা!………….
#প্রেম_পায়রা 🕊️🕊️
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#দ্বাবিংশ_পর্ব
হসপিটালের করিডোরের সামনে গম্ভীর হয়ে এক কোণে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ। পাশেই মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী চেয়ারে বসে আছেন। তার মাঝে অস্থিরতা বিরাজমান। কিছুক্ষণ পর ই ভেতর থেকে ডক্টর বেরিয়ে আসেন।
ডক্টর কে দেখামাত্র স্নিগ্ধ এগিয়ে যায় সেদিকে।
-” ডক্টর, বাবা কেমন আছেন? সিরিয়াস কোনো কিছু হয় নি তো?”
– ” নো মিস্টার স্নিগ্ধ, হি ইজ ফাইন। তবে অল্পের জন্য তিনি রক্ষা পেয়েছেন। নেক্সট টাইম থেকে উনার একটু বেশি খেয়াল রাখতে হবে। কেননা কদিন আগেই হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে ভয়াবহ ধাপ থেকে ফিরে এসেছেন।
আর এবার যদি ফের তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন তাহলে আমাদের তাকে বাঁচানোর কোনো চান্স থাকবে না। সো বি কেয়ারফুল!
এক্সকিউজ মি!”
বলেই স্নিগ্ধর পাশ কাটিয়ে চলে আসলেন ডক্টর। আর স্নিগ্ধ এখনো সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার ছোট্ট একটা ভুলের কারণে পরিস্থিতি কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে গিয়েছে।
– ” এবার খুশি হয়েছিস তো!!
মেয়েটাকে বিনা অপরাধে বাসা থেকে বের করে দিলি তাও একটা মিথ্যে অপবাদের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু তুই? তুই কি করেছিস!
রাত বিরেতে মদ খেয়ে নেশায় বুঁদ হয়ে অন্য একটা মেয়ের সাথে, ছিঃ!
আর শুধু তোর জন্য আবারো তোর বাবার এই অবস্থা! এখন যতদিন না পর্যন্ত তুই মিশরাতকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে না পারবি আমার চোখের সামনে আসবি না তুই! চলে যা এখান থেকে!”
মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী স্নিগ্ধ কে উদ্দেশ্য করে গর্জে উঠলেন। মিসেস ইয়ামিন চৌধুরীর কথা কানে পৌছালেও মস্তিষ্ক জুড়ে মিশরাতের বলা কথাগুলোর বিচরণ।
– ” আপনার আমার প্রতি বিশ্বাস এতোই ঠুনকো যে, একটা ছবির উপর ভিত্তি করে আমায় এত বড় অপবাদ দিয়ে বসলেন?
একদিন আপনি সবটাই জানবেন কিন্তু আর চাইলেও আপনি আমাকে আর কাছে পাবেন না!!”
মিশরাতের বলে যাওয়া প্রতিটা কথা বারংবার স্নিগ্ধর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
– ” কি করে এতো বড় একটা ভুল করে ফেললাম আমি! মিশরাতের বলা কথাগুলো কী তবে সত্যি?
আর কাল রাতে কি হয়েছিল কিছুই তো মনে পড়ছে না আমার। কাল রাতে তো,,”
ফ্ল্যাশব্যাক,
– ” মে আই কাম ইন স্যার?”
কারো গলার আওয়াজ পেয়ে ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে তাকালো স্নিগ্ধ।
– ” ইয়েস কাম ইন!”
স্নিগ্ধর অনুমতি পেয়ে অরিন কেবিনে প্রবেশ করলো।
– ” স্যার এই যে একজন একটা পেনড্রাইভ দিয়ে গিয়েছে আপনার জন্য। ”
পেনড্রাইভের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকলো স্নিগ্ধ। হঠাৎ পেনড্রাইভ কেউ পাঠাবে কেন?
– ” ওকে গিভ মি!”
বলেই পেনড্রাইভ টা অরিনের কাছ থেকে নিয়ে সেটা পরখ করে নিয়ে ল্যাপটপে লাগিয়ে নিল। তারপর সেটা থেকে মেইন ফাইল ওপেন করতেই স্নিগ্ধর চেহারার রং ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে শুরু করলো।
পেনড্রাইভের ফাইলে কয়েকটা ছবি ভেসে উঠছে। মিশরাত আর রবিনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি। লজ্জায় রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে স্নিগ্ধর। এক মিনিটের জন্য কেন জানি মনে হয়েছিল সবটা মিথ্যে।
– ” স্যার কি হয়েছে আপনাকে এত টেনশ্ড দেখাচ্ছে কেন? এনিথিং রং?”
স্নিগ্ধ মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। পরমুহূর্তেই অরিন পাশ থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে স্নিগ্ধর দিকে এগিয়ে দেয়। কিন্তু আচমকা হাত লেগে কিছুটা পানির গ্লাস থেকে পানি স্নিগ্ধর শার্টের উপর পড়ে যায়।
– ” সো সরি স্যার! আমি ইচ্ছে করে করি নি। ইটস এ এক্সিডেন্ট!
আরে এটা মিশরাত আপু না?”
ল্যাপটপের স্ক্রিনে দিকে তাকিয়ে বলে উঠল অরিন।
– ” স্যার ইনাদের তো আমি কিছুদিন আগেও একসাথে দেখেছি শপিং মলে!”
অরিনের কথা শুনে পাশ ফিরে সরু চোখে তাকায় স্নিগ্ধ। মাথার ভেতর হাজারো উদ্ভট সব চিন্তা ভাবনা!
– ” আর ইউ শিওর, মিস অরিন?
তুমি কি ঠিক এই ছেলেটাকেই মিশরাতের সাথে দেখেছিলে!”
– ” ইয়েস স্যার! আমি এদের দুজনকে একসাথে দেখেছি!”
এতক্ষণ জমে থাকা বাদবাকি রাগটুকুও জাগ্রত হয়ে উঠলো স্নিগ্ধর।
ল্যাপটপ টা পাশে ছুড়ে দিয়ে তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ালো সে। অরিন কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল।
– ” স্যার , কুল ডাউন!
কি হয়েছে?”
বলেই তড়িঘড়ি করে পাশ থেকে বাইরে থেকে আরেকটা পানির গ্লাস নিয়ে আসলো সে। এদিকে স্নিগ্ধ রাগে ফুঁসছে।
স্নিগ্ধর সামনে পানির গ্লাস এনে ধরতেই স্নিগ্ধ সেটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে খাওয়া শুরু করে দিলো। গ্লাসটা পাশে রাখতেই মিনিট পাঁচেক পর মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করতে থাকে। ধীরে ধীরে চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসতেই এরপর থেকে কিছু স্পষ্ট মনে পড়ছে না তার!!”
বর্তমানে,,
– ” ওহ্ শিট! কাল রাতে তো আমি কোনো প্রকার ড্রাংক ই করি নি তাহলে মিশরাত সেসব কথা বললো কেন। যতদূর মনে পড়ছে কালকে ও গ্লাসে পানি খাওয়ার পর ই মাথাটা ঝিমঝিম করছিলো। এর পরে কি হয়েছিল। আমার শার্টেই বা এই দাগগুলো আসলো কোত্থেকে?
ওয়ান মিনিট, ওয়ান মিনিট!!
আমি যদি ড্রাংক ই না করি তাহলে অরিনের সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করার কথা আসবে কোত্থেকে? আর অরিনই বা সেসব মিথ্যে বলবে কেন!
এখন তো এসব কিছুর উত্তর একজন ই দিতে পারবে!!”
বলেই গটগট করে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসলো স্নিগ্ধ। আর মিসেস ইয়ামিন চৌধুরী স্নিগ্ধর যাওয়ার পানে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছে মিশরাত। চোখের দু পাশে কান্না করার জন্য দাগ পড়ে গিয়েছে। গাল আর নাকের ডগাও লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায় মস্তিষ্কের ভেতরে স্নিগ্ধর বলা প্রতিটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে আর সেটাই বারংবার মনে সুচের মতো বিঁধছে।
– ” কি করে পারলেন এমনটা করতে স্নিগ্ধ? এই ছিল আমার প্রতি আপনার বিশ্বাস?
কই আমি তো চেয়েছিলাম আপনাকে নতুন করে ভালোবাসতে। আপনার সাথে জীবনের বাকি অধ্যায় গুলো একসাথে পার করতে!
কিন্তু আপনি? কিভাবে বলতে পারলেন? হয়তো ঠিকই বলেছিলেন এক সময়। আমাদের বিয়েটা একটা ডিল ব্যাতীত অন্য কিছুই নয়!!”
মনে মনে বিড়বিড় করে বললো মিশরাত। তার ভাবনার মাঝেই গাড়ি এসে থামে একটা চেনা পরিচিত বাড়ির সামনে।
কলিং বেলের আওয়াজ পেতেই একজন দরজা খুলে দিল। মধ্যবয়সী একজন মহিলা চোখের চশমা ঠিক করতে করতে সামনে তাকাতেই চমকে উঠলেন। চোখে মুখে একরাশ খুশির ঝিলিক। অস্ফুট স্বরে বলে উঠলেন,
– ” ফা,ফারাহ্!”
মিশরাতও এগিয়ে গিয়ে মহিলাটিকে জড়িয়ে ধরলো।
– ” দিদা!!
কেমন আছো তুমি?”
আদুরে গলায় বলল মিশরাত।
– ” এতদিন পর এই বুড়ির কথা বুঝি তোর মনে পড়লো!”
অভিমানী গলায় মিশরাতকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন সিদ্দিকা বেগম।
– ” আহা কি বলছো এসব দিদা?
কে বলেছে আমার দিদা বুড়ি হয়ে গিয়েছে! আমার দিদা তো এখনো অনেক সুন্দরী। বাইরে বের হলে ছেলেদের লাইন পড়ে যাবে!”
– ” হয়েছে হয়েছে এবার থাম! বল তুই কেমন আছিস?”
– ” এইতো দিদা!
আশ্রমের বাচ্চা গুলো কোথায়? সেগুলোকে দেখছি না তো?”
জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো মিশরাত।
সিদ্দিকা বেগম মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে উঠলেন,
– ” এইতো তোর রহিম চাচার সাথে বাচ্চাগুলো একটু ঘুরতে বেরিয়েছে। ফেরত এসে তোকে দেখলে অনেক খুশি হবে!
আয় ভেতরে আয়।”
মিশরাত গুটি গুটি পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
এই অনাথ আশ্রম টা তার অনেক প্রিয় একটা জায়গা। মন খারাপেরা এসে ভীড় জমালেই মিশরাত এখানে চলে আসে। এখানকার ওনার সিদ্দিকা বেগমের সাথে রক্তের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও খুব ভালো একটা বন্ডিং রয়েছে। মাঝেমধ্যেই আসা হয় এখানে। কিন্তু গত পাঁচ মাসে ব্যস্ততার কারণে আর আসা হয়ে উঠেনি।
– ” আর তুই একা এসেছিস কেন? তোর জামাই কোথায়? সে আসেনি!”
চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে বলে উঠলেন সিদ্দিকা বেগম।
– ” না দিদা সে আসেনি, আমি একাই এসেছি!”
– ” সে কি কথা তুই একা আসছিস মানে?
তোদের দুজনের মাঝে আবার ঝগড়া হয় নি তো? রাগ করে চলে এসেছিস?”
সিদ্দিকা বেগমের কথায় হালকা ঘাবড়ে গেল মিশরাত।
– ” না না দিদা! তেমন কিছুই হয় নি! আসলে এমনি তোমার সাথে দেখা করতে মন চাইলো তাই চলে আসলাম। এখন কি এতেও কোনো বারণ আছে না কি?”
– ” না রে পাগলী! বারণ থাকবে কেন? আমার কাছে যখন খুশি তখন আসতে পারবি! এতে বারণের কি আছে?”
মিশরাত বিনিময়ে মুচকি হাসি দিল। ফ্রেশ হয়ে এসে জানালার কাছে এসে দাড়াতেই মৃদু দমকা হাওয়া এসে তাকে ছুঁয়ে দিয়ে গেল।
– ” আমি জানি না কোনদিন আপনি আমার নাগাল পাবেন কিনা স্নিগ্ধ!
আমি চাই না আবারো আপনার লাইফে ফিরে যেতে! তবে আপনার প্রতি আমার ভালোবাসাটা এক বিন্দু পরিমাণ ও কমবে না। কিন্তু ভালোবাসা আর সেল্ফ রেসপেক্ট নিজ নিজ জায়গায়!
একটা ব্রেক করে আমি আরেকটা জোড়া দিতে পারবো না তাতে যদি আমার আপনার থেকে দূরে থাকতে হয় তাহলে সেটাই হোক!!”…………….
#চলবে 🍂
( আসসালামুয়ালাইকুম। সবাই কেমন আছেন। আপনাদের সবার অবগতির জন্য জানানো হচ্ছে যে আগামী পরশু দিন থেকে আমার এক্সাম শুরু। তাই দু একদিন একটু লেট হতে পারে। সবাই একটু ম্যানেজ করে নিবেন।
তবে রেগুলার দেয়ার চেষ্টা করবো।
কেমন হয়েছে জানাবেন।
ভালোবাসা অবিরাম 🖤🖤)
#চলবে 🍂
( আসসালামুয়ালাইকুম। অনেকেই বলেছেন সবকিছু নরমাল রাখতে। আসলে গল্পে টুইস্ট গুলো আমার থিম অনুযায়ী সাজানো। আর পুরোটা গল্প শেষ হলে আশা করি কেউ নিরাশ হবেন না।
কেমন হয়েছে জানাবেন।
ভালোবাসা অবিরাম 🖤🖤)