প্রেয়সী পর্ব ২৯+৩০

প্রেয়সী – ২৯

এনিভার্সিরির রাতের সেই ভয়ানক ঘটনার পর আমি তন্ময় ভাইকে এভোয়েড করতে শুরু করলাম। কিন্তু বেশিদিন করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা যাবার পূর্বের দিন তিনি জোরপূর্বক রুমে আসলেন। সর্বশক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। এবার ফিরতে দেরি হবে। সাবধানে
থাকবি।
তিনি যখন নিজে বলে গেলেন, ফিরতে দেরি হবে। তারমানে সেটা সাধারণ দেরি নয়। হলোও সেটা। মাসের পর মাস যাচ্ছে তিনি ফিরছে না। এদিকে আমি দু’দিন ফোনে কেঁদে ফেলেছি। বারবার বলার পরও তিনি ফিরেনি। খাওয়া দাওয়া কমে গিয়েছে। ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে না। কত রাত কেঁদেকেঁদে ঘুমিয়েছি
হিসেব নেই।
অথচ, এতো কষ্টের মাঝে কলেজ যেতে হয়েছে প্রতিদিন। সেখানে গিয়েও শান্তি নেই। সুমনার নতুন নতুন বাজে কথা। আমাকে দেখলেই নানান স্ল্যাং ব্যবহার করবে। জবাব দিতে পারছিনা কারণ ইংগিত করে বলে। সরাসরি বললে ওর চুল ছিঁড়ে হাতে ধরাই দিব।সেবার ওর বন্ধুবান্ধব নিয়ে টিটকারি মেরে বলছিল,
– কিছু বেশ্যা আছে না? যেগুলো অন্যের জিনিস নিয়ে নেয়। এমন একটাকে আমি চিনি। মা*বাজ। আমার যা পছন্দ তাই ওর লাগবে। উপর দিয়ে ভীতু সেজে ছেলে ধরে। সেগুলো’কে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।
ঘেন্নায় শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো। মারজি ভিষণ রেগেছিল। চুল টেনে ধরেছিল সুমনার। আমি দ্রুত ছাড়িয়ে আনি। তাতে কী? সুমনার বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই। ঝগড়া করার জন্য মেয়েটা সর্বদা তৈরি থাকে।
প্রচুর ঝগড়াটে। এই কাহিনি রুবি আপু জানতে পারে। চলে আসে কলেজ। ওয়ার্নিং দিয়ে গেছে সুমনা’কে। তারপরও মেয়েটার শিক্ষা হয়নি। এই মেয়ের লাগবে তন্ময় ভাইর শক্ত হাতের শক্ত চড়। ঠিক এবার আসুক ফিরে তিনি। এই সুমনা’কে তার শক্ত হাতের চড় না দিলে তার সাথে কথা নেই।
নির্লজ্জ মেয়ে মানুষ।

আজ বিকেল দিকে কানাকানির মাধ্যমে জানলাম, তন্ময় ভাই বাড়িতে আমাদের বিয়ের বিষয়ে জানিয়েছেন। যেদিন আমাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেদিন তিনি বাড়ি ফিরবেন। এতদিন এই বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিলো না আমার। এমনকি দীপ্ত, রুবি আপু তাদের ও ধারণা নেই। গোপন বিষয় ছিলো। তিনি যখন জেদ ধরেছেন তারমানে, যেই বিষয়ে জেদ ধরেছেন তা পূর্নতা পাবে।
বৃহস্পতিবার রাত দশটা’র দিক বড় চাচ্চু ডেকে পাঠালেন। আমিতো শিয়র বিয়ের বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। যখন ড্রয়িং রুম পৌঁছালাম সকলে উপস্থিত। চাচ্চু ইশারা করলেন তার পাশে বসতে। বসলাম। আমার বাম পাশে বাবা বসে। আঁড়চোখে বাবা’কে দেখে নিলাম। তিনি হাসছেন। চাচ্চু আমাকে সোজাসাপটা প্রশ্ন করলেন,
– অরু? বিয়ে নিয়ে তোমার কোনো চিন্তাভাবনা আছে?
চুপ রইলাম। আসলেই বড় চাচ্চুর সামনে জবান বন্ধ হয়ে আসে।
রুহ কাঁপে। একটি শব্দ উচ্চারণ করার সামর্থ্য থাকে না। রুবি আপু ত ঠিকই বলেছিল। জবাব না পেয়ে চাচ্চু হাসলেন।
আবারও বললেন,
– তোমার সিদ্ধান্ত শেষ সিদ্ধান্ত হবে। তুমি যা বলবে সেটাই হবে।
তন্ময় তোমায় পছন্দ করে, তাই তাকে বাধ্যতামূলক বিয়ে করতে হবে, তারমানে নেই কোনো। বা আমরা তোমার আপনজন সেটা ভেবে রাজি হবে যে সেটাও না। তোমার যদি তন্ময়’কে পছন্দ না হয়, নির্ভয়ে জানাতে পারো। বা অন্যকাউকে পছন্দ করো কী-না? সেটাও জানাতে পারো। তোমার সুখ সর্বপ্রথম আমাদের জন্য।
বোঝা গেল?
মাথা দোলালাম। গলা শুঁকিয়ে আসছে। এই কোথায় ফাঁসলাম।
বাবা মাথা হাত রাখলেন। ধীরে প্রশ্ন করলেন,
– তন্ময়’কে কেমন লাগে তোমার? তুমি তাকে শুধু একজন ভাইয়ের নজরে দেখ?
কী জবাব দিব? আমার চুপ থাকা দেখে ছোট চাচ্চু ছোট শ্বাস ফেললেন।
– জবাব দিতে হচ্ছে অরু। নাহলে সিদ্ধান্ত কিভাবে নিব?
আমতাআমতা স্বরে জবাব দিলাম,
– আপনারা যা সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাই।
বড় চাচ্চু শান্ত কন্ঠ। অথচ সেই কন্ঠে আমার হার্টবিট একশো বেগে দৌঁড়াচ্ছে,
– সারাজীবন তুমি যার সাথে থাকবে তার সিদ্ধান্ত আমরা কীভাবে নিব? তারমানে তোমার কোনো আপত্তি নেই তন্ময়’কে মেনে
নিতে? তুমি তাকে বিয়ে করতে রাজি?
অনেকক্ষন ঠাঁই বসে রইলাম। লজ্জায় জবাব দিতে পারছিনা।
বিশ্বযুদ্ধের শেষ পদক্ষেপ নিয়ে নিলাম। চোখ বুঝে ক্রমগত মাথা দোলালাম। কী করলাম সেটা নিজেও বুঝলাম না। সকলের হাসি’তে কিছুটা লজ্জা পেলাম।

রাতে তন্ময় ভাই’কে কল করলাম। তারউপর আমি প্রচন্ড রেগে। বদমায়েশ লোক। আমাকে একা ফাঁসিয়ে দিল। কে বলেছে তাকে এমন তাড়াহুড়ো করতে? এইযে আজকে বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছি। আর তিনি? দিব্যি আয়েস নিয়ে আছে। তার যেহেতু বিয়ে করার তাড়া তাহলে তিনি নিজে সকল সমস্যা নিতেন ঘাড়ে। শুধু শুধু যন্ত্রণা দিলেন কতগুলো মাস। একটা রাতও ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। তাকে একবার দেখার জন্য কতটা যন্ত্রণায় ভুগেছি। অথচ তার তো কোনো সমস্যা নেই। আমাকে না দেখলে তার কষ্ট হয়না। কিচ্ছু হয়না তার।
তিনি ফোন ধরতেই মনের সব কথা ঝেরে ফেললাম,
– আপনি এমন কেন করলেন? হ্যাঁ? কোনো কাজ নেই আপনার। শুধু শুধু ঢাকা পড়ে আছেন। আমি সব জানি।
তার হাসির শব্দ। ইশ, এটা হাসার সময়? তিনি কী জানেন না আমি সিরিয়াস? কতটা রেগে আছি তার উপর?
তার আবেদনময়ী কন্ঠ,
– খেয়েছিস?
তার কথার জালে আজ পড়ব না।
– জবাব দিন। এগুলো করা কী দরকার ছিলো? বিয়ে তো হবে। এই কারণে আপনি বাড়ি আসবেন না? জানেন কত মাস যাবত আপনি ফিরছেন না? পুরো পাঁচমাস ছয়দিন যাবত ফিরছেন না। আপনি, ‘
গলা ধরে আসছে আমার। কতটা মিস করেছি তার কোনো ধারণা আছে? তিনি কী অন্ধ, অবুঝ? আমার অনুভূতি কী তিনি বুঝেন না?
তন্ময় ভাইয়ের হাসি বন্ধ হয়েছে। বরং ধীরে ধমক দিলেন,
– চুপ। কাঁদলে আর ফিরব না একদম।
কত্তবড় সাহস। খেয়ালই করলাম না যে আমি অলরেডি চুপ হয়ে গিয়েছি। লুকিয়ে লুকিয়ে হেঁচকি তুলছি। তার শান্ত কন্ঠ,
– এতো ইমোশনাল তুই। তা ত আমি জানতামই না।
চুপ থাকলাম। তিনি দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন। ধীরে বলতে শুরু করলেন।
– কাউকে ছোট থেকে পছন্দ করাটা সুন্দর অনুভূতি হলেও সেটার পরিনতি ভিন্ন। কাউকে পছন্দ করা মানে, তাকে সর্বদা দেখতে চাওয়া, ছুঁতে চাওয়া। এই আকাঙ্খা গুলো পূর্নতা না পেলে মন শক্ত হয়ে যায়। আমারও হয়েছিলো। এতবছরের শক্ত মন ইদানিং ভেঙে যাচ্ছে। তোকে দেখলে নিজের প্রতি যেই কন্ট্রোল ছিলো, তা আজকাল আর নেই। দেখলি তো সেদিন কী করে বসলাম। একই বাড়ি, পাশাপাশি রুম এই বিষয়’টা কষ্টদায়ক।
কিছু মাসের দুরত্বে যদি তোকে সারাজীবনের জন্য পাই, তাতে ক্ষতি কী?
শেষপর্যন্ত তিনি শিকার করলেন। আমাকে পছন্দ করেন সেটা নিজের মুখে বললেন। আর কী লাগবে? লজ্জা পাব? নাকি হাসব? খুশি হব? না, শুধু ফোন কান গুঁজে বসে রইলাম।

রুবি আপু এসেছে। তাকে এতো খুশি আমি আগে দেখিনি। আমাকে নিয়ে নেচে-কুঁদে বাড়ি আনন্দে ভোরে তুলেছে। কয়েকবার প্রশ্ন করতে গিয়েও পারছিনা না তার তীব্র গানের কন্ঠে। হলো কী? তিনি থেমে চেঁচাচ্ছে,
– অরু’রেএএএএএএএএএ ‘
কান চেপে ধরলাম। বসে পড়লাম বিছানায়। আপুর সাথে আমি।পারবো না। শান্ত হলে নিজেই সব খুলে বলবে। হলোও সেটা। কিছুটা শান্ত হতেই বিচলিত কন্ঠে বলল,
– জানিস হয়েছে কী? বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে। ত্রিশ তারিখ।
– ওয়াও।
আপু মাথায় থাপ্পড় দিলেন আমার।
– বোকা। তোর আর তন্ময়ের বিয়েও সেদিন হবে। একই কাজি
দ্বারা।
এবার আমার হাসি হারিয়ে গেল। জানতাম বিয়ে হবে। কিন্তু এতটা জলদি হবে সেটার ধারণা ছিলো না। আপু আবারও আমাকে নিয়ে নাচতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণের মাঝে দীপ্ত এসেও যোগ হলো।
দুষ্টু গলায় বলছে,
– ভাবী বলব না আপু? অরু আপুর যায়গায় বলব ভাবীপু।
ছেলেটা এতো পাঁকা যে বলার বাহিরে। ও ঠিক আমাকে ভাবীপু ডাকতে শুরু করেছে। ড্রয়িং রুমে যখন টিভি দেখছিলাম, সকলের সামনে বলল,
– ভাবীপু আইসক্রিম আনব?
কেমন টা লাগে? বড় মা হাসতে হাসতে বলছে,
– এই ফাজিল। এগুলো কী ধরন ডাকার?
দীপ্ত বড়দের মতো সোফায় বসে, বড় মা’কে বোঝাতে লাগলো,
– অরু আপু হচ্ছে আমার আপু। তেমনই তন্ময় ভাই হচ্ছে আমার ভাইয়া। যদি তাদের বিয়ে হয়। তাহলে অরু আপু হবে ভাবী, তাই না?
তো ভাবী আর আপু। দুটো মিলিয়ে ভাবীপু। তেমনই তন্ময়ের ভাইয়ের ক্ষেত্রে হবে, জীজুভাই। কিন্তু তাকে শুধু ভাইয়া বলব। নাহলে তন্ময় ভাই দিবে এক চড়।

তাহলে কী সত্যি আমি খুব শীগ্রই দীপ্তর ভাবীপু হয়ে যাব?
প্রেয়সী – ৩০

বিয়ের বাকি পাঁচদিন। তন্ময় ভাই কাল সকাল আসবে আটটায়। আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি এসে যেনো, আমায় ড্রয়িংরুমে দেখতে পান। ইশ, এ-তো সোজা? পাগলের মতো কাঁদিয়েছে আমায়। ছয়মাস দেখতে দেয়নি নিজেকে। আসুক। আমিও তাকে এটার শাস্তি দিয়ে ছাড়বো। জাহিল লোক।
এই ছয়মাসের মাঝে কেউ তন্ময় ভাইকে বাড়িতে ফেরাতে সক্ষম হয়নি। তিন মাসের উর্ধ্বে তিনি কখনও ঢাকা থাকেনা। এটাই তার প্রথম মাসের পর মাস ঢাকা থাকা। বড় মা খুবই দুঃখী। দিনে
দু- তিনবার ভিডিও কল করবে নিজের ছেলেকে। অবশ্য, তখন আমি আঁড়চোখে লুকিয়ে স্ক্রিনের দিক তাকাই তাকে একবার দেখার আশায়। যাক। অবশেষে কাল সাহেব ফিরবেন। আনন্দে বুক কাঁপছে। তেমনি তার উপর ভিষণ অভিমান রয়েছে। এই অভিমান তিনি কীভাবে ভাঙাবেন দেখতে চাই আমি।

কলেজ থেকে বেরোলাম ঘুরতে। সাথে রয়েছে মারজি, এহসান।
দৈনন্দিন জীবনে ঘুরাফেরা আমার ঠিক হয়না। ঘুরতে গেলে অনেক বাঁধা আসবে। বাঁধা আর বাঁধা। এভাবে জীবন উপভোগ করা যায়?
উঁহু। একদম না। এইতো কিছুক্ষণের মাঝে কল আসবে তন্ময় ভাইয়ের। উচ্চ স্বরে দিবেন এক ধমক আমায়। ধমকে বলবেন,
– তুই কী চাস? পা ভাঙব তোর?
হাহ। এগুলো পুরনো ব্যাপার স্যাপার। তার সব জানি। আমার ঘুরাফেরা তিনি একদম নিতে পারেন না। আরে নিজে ঢাকায় কি কি করে, আমি কী নাক গলাই? কৈফিয়ত চাই? চাই না। কারণ, আই এম অ্যা ব্রোড মাইন্ডেড পারসন। মারজি নিচুস্বরে বলল,
– এই ব্যাটা এভাবে তাকাচ্ছে কেন?
এইতো। ফোনটা ওদের দুজনের সামনে ধরলাম। তারপর বললাম,
– জাদু দেখবি?
এহসান ভ্রু কুঁচকে ফেলল,
– জোকার হবি?
এটা কোনো কথা?
– ধুর, গাঁধা। দেখ, এখনই আমার ফোনে কল আসবে।
মারজি ভেঙাল।
– বললেই হচ্ছে?
তৎক্ষণাৎ কল এলো। আমার মুখে বাঁকা হাসি। চোখ টিপ মেরে জবাব দিলাম,
– এটা হচ্ছে, অরুর জাদু। কী বুঝলি?
ফোন রিসিভ করলাম। তার কন্ঠ শান্ত। আগেকার মতো গরম কন্ঠে ধমক দেননি। বরং ধীর আওয়াজে প্রশ্ন করলেন,
– কোথায় তুই?
বাহ। এতো পরিবর্তন? সাব্বাশ তন্ময় সাহেব। এমন পরিবর্তন আপনার হতে নিয়মিত চাই। ভাব নিয়ে বললাম,
– আপনার কী?
– ধৈর্যের পরিক্ষা নিচ্ছিস? আমার? তন্ময়ের?
– কে, আপনি ভাইয়া ?
অপর পাশে কেউ তন্ময় ভাইকে ডাকছেন। সে ধীরে জবাব দিলেন,
– কথা বলছি। একটু পর আসছি।
তারপর আমাকে বললেন,
– তোর জামাই?
– ইশ, বললেই হলো।
– আর মাত্র পাঁচদিন। পাঁচদিন যেতে দে।
লজ্জা পেলাম। তাকে টের পেতে দিলাম না। আঁড়চোখে তাকালাম কৌতূহল মারজির দিক।
– আপনাকে বিয়ে করবে কে?
তার হাসির শব্দ।
– ফোনে এতো সাহস দেখাচ্ছিস, হু? সামনে আসলে তো চোখে চোখ রাখতে পারিস না। কাল আসছি। সামনে এগুলো বলতে না পারলে, দেখবি কী করি তোর।
ঢোক গিললাম। সাহস যোগালাম,
– কি করবেন? আপনি ভয়ে আমার সামনেই আসবেন না।
তিনি হাসলেন,
– আম বিজি। রাত্রে কথা বলব। বাড়ি যা। এখনই যাবি।
– হ্যাঁ, তো যান। বিজি থাকুন। আপনাকে ধরে বসে নেই আমি।
দিলাম কল কেঁটে। কী একটা অবস্থা। কাল থেকে কোনো কল দিল না। যাও দিলো, বলে কি বিজি। থাক, বিজি। জন্মের মতো বিজি থাক। কথা বলতে বলেছে কে? শয়তান। কিছুক্ষণ পর আবারও কল দিলেন। ভাবলাম ধরব না। কিন্তু মন? মন্ কী মানে? ধরে ফেললাম।
– বলুন।
সে এক্সপ্লেইন করলেন। খুব ধীর আওয়াজে।
– অনেকদিনের জন্য ফিরছি। মাস খানেক? তার জন্য এখানকার সব সামলে আসতে হচ্ছে। তারপর আর অভিযোগ পাবি না। আপাতত লক্ষি মেয়ের মতো বাড়ি যাবি।
হু। কিউট। মন ভালো হয়ে গেলো। নিমিষেই পৃথিবীর সব ভালো লাগতে শুরু করল।

বাড়িতে গিয়ে দেখলাম রুবি আপু রূপচর্চায় ব্যস্ত। সামনে বিয়ে। নতুন বঁধু কে অবশ্যই গর্জিয়াস লাগতে হবে। আপু আমাকে তাড়া লাগালেন,
– শোন। দ্রুত ড্রেস চেঞ্জ করে আয়।
– কেনো?
– কেনো মানে? সামনে তোর বিয়ে। রূপচর্চা ইজ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট।
বড় মা হাসলেন। ডাইনিং সাজাতে সাজাতে বললেন,
– পরের বাড়ি তুই যাবি। অরু না। ও রূপচর্চা করলেও এখানেই, না করলেও এখানেই।
– হ্যাঁ, তা ঠিক। তারপরও। বিয়ে তো একবারই হবে তাই না অরু?
– হু। আমি করব। রাতে রূপচর্চা করব। এখন ঘুম ধরেছে।
দীপ্ত উপর থেকে দৌঁড়ে আসছে। হাতে ড্রয়িংবুক। রুবি আপুর পাশে বসে বলল,
– রূপচর্চা করে কী হবে? সেইতো পেত্নীই দেখাবে।
আমি আলগোছে উপরে উঠে যাই। নাহলে আমাকেও হেনস্তা করবে। হলও সেটা। দীপ্ত শব্দ করে আমাকে ইঙ্গিত করলো,
– ভাবীপু, কলেজ কেমন গেলো?
লজ্জা আর লজ্জা। আমি দৌঁড়ে উপরে এলাম। এই ছেলে কী আমাকে মেরে শান্তি হবে? অউফ।

রাতে দরজা শক্ত করে লাগালাম। তিনি সকাল আটটায় চলে আসবেন। সামনে যাবো না তার। শুধু আমি লুকিয়ে দেখব তাকে। কিন্তু তাকে আমাকে দেখতে দিব না। একদম না। বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করলাম। ঘুম আসছে না। প্রচন্ড অস্থির লাগছে।
ফোন হাতে নিলাম। ছবিগুলো দেখতে লাগলাম। এগুলো সেদিনের ঘুরতে যাওয়ার ছবি। একেক করে দেখতে গিয়ে অনুভব করলাম বুক কাঁপছে। তীব্র ভাবে। ক্রমাগত।

বাড়িতে হৈচৈ। নিশ্চয়ই তন্ময় এসে গেছেন। হালকা করে দরজা খুললাম। এভাবেও আমার সারারাত ঘুম হয়নি। এতক্ষণ যাবত ঘড়ির দিক তাকিয়ে ছিলাম। কখন লোকটা আসবে। সময় যেন যাচ্ছিলো’ই না আজ। অবশেষে তিনি এসেছেন। নিচে নেমে বড় মা’র রুমের দরজার সামনে লোকালাম। এখান হতে তাকে সরাসরি দেখা যাচ্ছে। লোকটা কী আরও সুন্দর হয়ে এলো? কী সাংঘাতিক দেখাচ্ছে। বড় মা’র আদুরে কান্না। ছেলের কাছে অভিযোগ করে যাচ্ছেন। দীপ্তর তন্ময় ভাই, তন্ময় ভাই ডাকাটা অপরিসীম মিষ্টি শোনাচ্ছে। বড় চাচ্চুর গম্ভীর অসহায় কন্ঠ,
– তোমাদের হয়েছে? ছেলেটাকে রুমে যেতে দাও।
তন্ময় ভাই আশেপাশে তাকাচ্ছেন। মাথা দরজার পেছনে লোকালাম। দেখে ফেললে সর্বনাশ। শেষ আমি। আলগোছে উপরে উঠে এলাম। দ্রুত দরজা আটকে ফেললাম।
কিছুক্ষণের মাঝে দরজায় নক। তন্ময় ভাই। সেই এতো আওয়াজ করে নক করেন। খুলব না। তুই যা ভাগ।
দ্বিতীয় বার আর নক আসলো না। কী হলো? মাত্র একবার নক করলো? আমাকে দেখার উত্তেজনাও নেই? এই তার ভালবাসার নমুনা? তখনই মেসেজ রিংটোন বেজে উঠল। দ্রুত চেক করলাম। তন্ময় ভাইয়ের মেসেজ।
– What’s wrong with oru? ki bolchilam ami?
এহ। কি বলেছিলাম অরু? বলতে থাক। রিপ্লাই দিব না।
টেবিলে বসলাম। খাতার পেইজে বড়বড় অক্ষরে লিখলাম,
‘ আমার মাথা ব্যাথা করছে। ঘুম প্রয়োজন। ডোন্ট ডিস্টার্ব ‘
দ্রুত এটা দরজায় লাগাতে হবে। নাহলে জ্বালাতে চলে আসবে রুবি আর দীপ্ত। ব্যস। লাগাতে যাবো তখনই দীপ্তর আওয়াজ।
– ভাবীপু? তন্ময় ভাই এসেছে।
এই অবাস্তবিক ছেলেটাকে কি করব? কয়েকটা মেইন যায়গায় থাপ্পড় দিব? ও লম্বা আওয়াজে আবারও চেঁচাচ্ছে,
– নিচে আসতে বলেছে ভাইয়া। এক্ষুনি।
খুলব না। একদম খোলা যাবে না। বললাম,
– মাথা ব্যাথা। ঘুমাব। কাউকে ডিস্টার্ব করতে না করে দে।
– কি আমার একটা মাথা। দ্রুত না আসলে তোমার মাথা ফাটাবে। আমি গেলাম।
ভয় দেখাচ্ছে? হু। ভয় কে পায়? আমিতো পাই না। এবার দেখব। এই তন্ময় সাহেব কী করেন। হু। পা উঁচু করে বসলাম।
মুডে আছি।

চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here