ফিরোজা পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

ফিরোজা
সমাপ্তি পর্ব

# ৫ টার দিকে এয়ারপোর্টে গিয়ে পৌঁছালো কুহূ।
আরও ৪৫ মিনিট পর প্লেন টেক অফ করবে।
আর ১ ঘণ্টার মাঝে জেমি ও সাজিদের বিয়েও পড়ানো হবে নিশ্চয়।
‘ কবুল ‘ বলাটা শুনলে ভালো হতো। জীবনে কখনো আর পিছুটান হতো না।
বিয়ে পড়ানোটা ভিডিও কলে দেখতে গিয়ে কুহূর ১০ মিনিট লেট হলো।
দ্রুত সে রিসিপশনে গেল।
_ Excuse me, Boeing 787 প্লেন কি take off করে ফেলেছে?
_ yes. আপনি ওটার যাত্রী ছিলেন?
কুহূ দুশ্চিন্তা নিয়ে বললো,
হ্যাঁ।
_ Congratulation ম্যাম। আপনি একটুর জন্য বেঁচে গেছেন। Boeing 787 প্লেন take off করার ৩ মিনিটের মাঝে তা crash করেছে। তবে good news হলো আগুন ধরার পূর্বেই যাত্রীদের বের করা সম্ভব হয়েছে। তবে সম্ভবত একজন মারা গেছে।
_ এখানে congratulation বলার কোনো মানে হয় না। আমি কেন প্লেনে উঠলাম না। কেন মরলাম না!
_ ম্যাম, আপনার নাম কি ফিরোজা নূর?
_ হ্যাঁ।
রিসিপশনিস্ট কয়েকজনকে ডেকে বললো,
পেয়ে গেছি।
_ ম্যাম, আপনাকে আমাদের সাথে একটু যেতে হবে।
কুহূ প্রশ্ন করতে গিয়েও করলো না। পিছে পিছে যাওয়া শুরু করলো।

কিছু মানুষের কান্নার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
তন্মধ্যে একজন পুরুষ মানুষও আছে।
কুহূ যত আগাচ্ছে তার পা তত কাঁপছে ।
মানুষটি কি তার পরিচিত?
কুহূর হৃদ স্পন্দন বাড়ছে। সে এখন মানুষের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
কেউ ফিরো বলে কাঁদছে। সবাই কি তাকে মৃত ভাবছে নাকি!
ফিরো তো সাজিদ ডাকতো তবে কি সাজিদ কাঁদছে? সে তো কাঁদার মানুষ নয়।
হ্যাঁ সাজিদই কাঁদছে। এটা সাজিদের আওয়াজ। কুহূ দৌঁড় দিলো আওয়াজ অনুসরণ করে।
সে সাজিদের ঠিক পিছনে এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
‘ আমার এক ছোট ভুলের জন্য এত বড় শাস্তি দিও না ফিরো। আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না ফিরো? প্লিজ ফিরে এসো। ‘
_ আমি সবই শুনতে পাচ্ছি।
সাজিদ দ্রুত দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো। বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলো। সাথে কুহূও কাঁদছে ।
_ কি করছো সাজিদ! তোমার বউ দেখলে খারাপ ভাববে।
_ আমার বউ তো তুমি।
_ মিথ্যে বলো না। তোমার বিয়ে হয়েছে জেমির সাথে।
_ হয় নি।
_ আমি যে কবুল বলতে শুনলাম!
_ অন্য কেউ বলেছে।
_ মিথ্যে বলছো তুমি। দূরে থাকো আমার থেকে। অনেক কষ্ট দিয়েছো আমায়।
সাজিদ আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
কুহূ কান্না থামালে সাজিদ হাঁটু গেড়ে বসে পকেট থেকে বিং বের করলো।
_ I love you. ফিরো।
_ I hate you.( কুহূ)
_ I don’t care. শুধু accept my proposal. Will you marry me?
আশেপাশের সকলে হাততালি দিচ্ছে ও তাল মিলিয়ে বলছে,
Please say yes. Please say yes.
কুহূও কান্নামিশ্রিত চোখে মিষ্টি হেসে বললো,
Yes, I will.
সাজিদ রিং পরিয়ে আবারও জড়িয়ে ধরলো।
বহুদিন পর তাদের ভুল বুঝাবুঝির ইতি হলো। অবশেষে এয়ারপোর্টে পূর্ণতা পেল তাদের ভালোবাসা।

কুহূর ঘুম ভাঙলো এয়ার হোস্টেজের কথায়।
৫ মিনিটের মধ্যে প্লেন লেন্ড করবে। কুহূ পা রাখবে কানাডার মাটিতে । তার কর্মস্থলে। তার স্থায়ী ঠিকানায়।
এতক্ষণ সে স্বপ্ন দেখেছে। মূলত কবুল বলার পর ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
তার এ স্বপ্ন হয়তো সত্যি হতো যদি সে কসম না দিতো।
এসব অবশ্য টিভি সিরিয়ালে বেশি হয়। বাস্তবে তো খুব কমই হয়।
তার জীবনেও হলো না। সেও পূর্ণতা পেল না।
জানালার বাহিরে মেঘ দেখতে দেখতে কুহূ বললো,
‘ আজ এক জোড়া পাখি পেল পূর্ণতা,
শুধু আমার মাঝেই রয়ে গেল
এক গাদা শূণ্যতা।
কখনো আর তোমায় চাইবো না
যে আমার না, তাকে চাওয়াও ঠিক হবে না। ‘
সত্যিই আজ বহু অভিযোগ হচ্ছে নিজেকে নিয়ে।
কেন আমি পূর্ণতা পেলাম না?
আমার জীবনের ইতি কি সুখময় হতে পারতো না?
একটা মানুষের জন্য কেন সে নিজের দেশ, শহর, পরিবার ছাড়লো! কি দোষ ছিল তার মার।
সে তো চলে এলো, তার মাকে কে দেখবে? বোনেদের যে বিয়ে হয়ে গেছে।
আচ্ছা, তার মার কথা নাহয় বাদই দিলাম।
কুহূ কি কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে? সে তো ছেলেদের সহ্যই করতে পারে না। বিশ্বাসঘাতক মনে করে।।
কুহূ শেষবারের মতো বললো,
আমি শপথ করে বলছি,
” এই পূর্ণতার শহরে,
আমি আর ফিরবো না।
এই শহর আমার না
মাফ করো আমায়, প্রিয় মা।। ”

🪦🔚 সমাপ্ত
📝লেখনিতে সাবরিনা সুম্মা.,.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here