ফিলোফোবিয়া পর্ব -১৯

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

১৯.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )

ঢাকায় এসে কোথাও মন বসাতে পারছেনা প্রিয়। সবকিছুতে কেমন অস্বস্তি লাগছে। মাথায় শুধু শতাব্দের কথা ঘুরছে সারাক্ষণ। শতাব্দ কি খুব বেশি রেগে আছে?
রাতের খাবারে আমেনা বেগম বিশাল আয়োজন করেছে। অনেকদিন পর মেয়ে বাড়িতে এসেছে। মেয়ের পছন্দের সব খাবারে টেবিল সাজিয়েছে। পাশে বসে প্লেটে এই আইটেম ওই আইটেম তুলে দিচ্ছে। এত খাবার দেখেই হাঁপিয়ে উঠেছে প্রিয়। কপাল কুঁচকে আওয়াজ করে বলল,
‘ পেট ভরে গেছে মা। আর খাবোনা।’
আমেনা বেগম ভড়কে বললেন,
‘ তোর পছন্দের জিনিস রান্না করেছি সব।মাত্রই তো খেতে বসলি। এত তাড়াতাড়ি পেট ভরে গেল। শরীর ঠিক আছে তো তোর?’
বিরক্ত হলো প্রিয়। বলল,
‘ শরীর পুরোপুরি সুস্থ মা। দুইজন মানুষের খাবার প্লেটে তুলে দিচ্ছ। এত খাবার এক সাথে খাবো কি করে?’
মেয়ের কথা আমেনা বেগমের বিশ্বাস হলোনা সন্দিহান দৃষ্টিতে চাইল একবার। গম্ভীর কন্ঠে আওড়াল,
‘ আসার পর থেকে এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে তোর?’
‘ কিছুনা মা। জার্নি করে একটু ক্লান্ত লাগছে। ঘুমাবো।’
আমেনা বেগম আর জোর করলেন না। ঘরে পাঠিয়ে দিলেন মেয়েকে। ঘরে এসে বিছানায় বসলেই বাবা আর প্রভা এলো। প্রিয়’র অনুপস্থিতে এতোদিন কি কি ঘটেছে উৎসাহ নিয়ে বলছে সব।
বারবার ঘড়ি দেখছে প্রিয়। শতাব্দের সাথে কথা বলার জন্য উসখুস করছে মন। কারো সামনে বের করতে পারবেনা ফোন। অস্বস্তি চিন্তায় নাজেহাল অবস্থা তার।
রাত বারটা বাজছে।মাত্রই ঘুমিয়েছে প্রভা। সবাই ঘুমানোর পর ব্যাগ খুলে মোবাইল বের করল প্রিয়। মোবাইল অন করতেই। উঁচু আওয়াজ হলো। তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে অন্ধকার জানালার দিক পা বাড়াল প্রিয়। দ্রুত হাতে ফোন সাইলেন্ট করলো। ঝটপট করে শতাব্দের নাম্বারে ফোন দিলো। রিং হচ্ছে অপর পাশ থেকে তুলছেনা ফোন। আবারো ফোন করলো প্রিয়। বেজে বেজে কেটে গেল। কষ্টে কান্না পেল প্রিয়’র। শতাব্দ কি রেগে আছে তার উপর? এর জন্যই কি ফোন তুলছে না। ডুকরে কেঁদে উঠল হ্ঠাৎ। আচানক পেছন থেকে প্রভার হতভম্ব আওয়াজ ভেসে এলো,
‘ ফোন! কোথা থেকে পেলি আপা? প্রেম করছিস তুই?’
ভয়ে আঁতকে উঠল প্রিয়। চোখমুখ মুছে, তড়িঘড়ি পায়ে প্রভার কাছে এলো। প্রভার মুখ চেপে বলল,
‘ আস্তে আব্বা আম্মা শুনে ফেলবে।’
প্রভা শুনলো না। আগের মত ভড়কে যাওয়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ আপা কতদিন ধরে চলছে এসব। ছেলেটা কোথাকার? ঢাকার নাকি ইমান্দিপুরের? তোর সাথে তার কিভাবে পরিচয়? তাড়াতাড়ি বল আপা’
প্রভার কন্ঠে প্রচন্ড তাড়া, চাপা উত্তেজনা। প্রিয় হাত বাড়িয়ে দিলো। গম্ভীর হয়ে বলল,
‘ তার আগে আমাকে ছুঁয়ে কথা দিতে হবে কাউকে বলবি না তুই। কাউকে না।’
চোখমুখ ছোট হয়ে এলো প্রভার। আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
‘ আমি কি কারো কথা কারো কাছে বলি আপা?’
‘ আলবাত! বিশ্বাস নেই। যদি মায়ের সামনে উবলে ফেলিস।’
‘ আচ্ছা, বলবো না। এবার বলো।’
‘ সে ইমান্দিপুরের। বেশ পাওয়ারফুল ফ্যামিলির বড় ছেলে। নাম শতাব্দ। ঢাকা মেডিকেলে পড়াশোনা করছে।’
প্রভাকে বিস্তারিত কিছু বলল না প্রিয়। প্রভাকে এক পয়সার ভরসা পায়না সে। দেখা যাবে মায়ের কাছে ভালো সাজতে গিয়ে উবলে ফেলেছে সব। শতাব্দের ব্যাপারে বিন্দু মাত্র রিস্ক নিবেনা সে।
প্রভা নেচে উঠল খুশিতে। খুশিতে গদগদ করে বলল,
‘ তার মানে সে ভবিষ্যৎ ডাক্তার। ওয়াও। নিশ্চয়ই ভীষণ হ্যান্ডসাম তাই না আপা? তোকে খুব ভালোবাসে?’
প্রভার দিক গোল গোল চোখ করে তাকালো প্রিয়। চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,
‘ এত জানতে হবেনা তোকে। ছোট ছোট’র মত থাক।’
‘ এটা ঠিক না আপা। তুই আমাকে ভুলভাল বুঝ দিচ্ছিস। বি..
ফোনের ভ্রাইবেশন বেজে উঠল হ্ঠাৎ। অন্ধকারে বারবার আলো নিবছে আর জ্বলছে। কেঁপে উঠল প্রিয় শতাব্দের ফোন কাঁপাকাঁপি হাতে ফোন তুলে কানে ধরতেই অপর পাশ হতে শতাব্দের অস্থির আওয়াজ ভেসে এলো,
‘ আমি তোমাদের বাড়ির সামনে। নিচে আসো। এক্ষুনি!’
‘ কিন্তু….
‘এক্ষুনি নিচে আসছ তুমি! কুইক।’
প্রিয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, ফোনটা কেটে দিল শতাব্দ। ফোন হাতে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল প্রিয়। পাশ থেকে প্রভা ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হয়েছে আফা? এমন জমে আছো কেন?’
পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়। যন্ত্রের মত করে বলল,
‘ সে এসেছে। আমাকে নিচে যেতে বলছে।’
‘ কি! উনি এখানে এসেছে আপা?’
‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়াল প্রিয়। হতভম্ব হয়ে থাকা প্রভার মুখটা আচমকা খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে এলো। লাফিয়ে উঠল। গদগদ করে বলল,
‘ ওয়াও! ভাইয়া কত রোমান্টিক মুভির হিরোদের একদম।’
রেগে গেল প্রিয়। প্রভার দিক সরু দৃষ্টিতে চেয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। চিন্তিত হয়ে বলল,
‘ নিচে যাবো কি করে! আব্বা টের পেয়ে যায় যদি?’
‘ ওহো আপা! এত চিন্তা করছিস কেন। আমি আছি না? এক্ষুনি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
‘ কিন্তু…
‘ কিন্তুকিন্তু না করে তাড়াতাড়ি নিচে যা। নয়তো তোর হিরো উপরে চলে আসবে আপা।’
ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে চাবি এনে, ধীরপায়ে দরজার দিক এগিয়ে গেল দুবোন। দরজা খুলে দিয়ে প্রভা ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ তুই যা, আমি এদিকটা দেখছি আপা। বারান্দায়ই আছি।’
থতমত মুখে উপর নিচ মাথা ঝাকাল প্রিয়। ভয় চিন্তায় হাতপা থরথর করছে তার। ধীর পায়ে শব্দহীন বেড়িয়ে পড়ল প্রিয়। প্রভা জানালার কাছে এসে দাঁড়াল। রাস্তার ওই পাড়ে মেরুন গাড়ি দাঁড়িয়ে। পাশে একজন পুরুষ মানুষের ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে। ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলোয় মানুষটাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা। উত্তেজনায় মাথা উঁচিয়ে দেখতে চাইল প্রভা। কিন্তু অন্ধকার হওয়ায় তার চেষ্টা বিফল হলো। দেখতে পেলো না শতাব্দকে।

ঘড়িতে রাত সাড়ে বারট। ঢাকার রাস্তাঘাট এখনো সজাগ। শোঁশোঁ করে গাড়ি চলছে। গায়ে পাতলা চাদর জড়িয়ে, গ্রিন সিগ্ন্যালের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। সিগ্ন্যাল পড়তেই দ্রুত পায়ে ছুটে গেল প্রিয়। অপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দ। বিধ্বস্ত মুখ। এলোমেলো চুল। কাছাকাছি যেতেই থমথমে হয়ে গেল প্রিয়। পা জোড়া কাঁপাকাঁপি শুরু করল। রেগে যাবেনা তো শতাব্দ?
ভয়ে জড়সড় পায়ে শতাব্দের সামনে দাঁড়াল। কাঁপা কাঁপা ভীতু স্বরে বলল,
‘ আ..আমি জানতাম না হুট করে আব্বা এসে ঢাকায় নিয়ে আসবে……আপনাকে ফোন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পাশে খালা থাকায়.. সরি..’
আচমকা হেঁচকা টান দিয়ে বুকে মিশিয়ে নিলো শতাব্দ। প্রিয় থমকে গেল। ঝটপট করে কথা বলাটা, থেমে গেল হুট করে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আষ্টেপৃষ্টে মিশিয়ে নিলো শতাব্দ। উৎকণ্ঠা স্বরে বলল,
‘ অনেক মিস করছি প্রিয়! খুব, খুব, খুব বেশি।’
স্তব্ধ হয়ে গেল প্রিয়। আচানক চারিপাশের সবকিছু থমকে গেল যেন। শক্ত মূর্তি বনে দাঁড়িয়ে রইল। শতাব্দের হাতের বাঁধন আলতো হলো। প্রিয়’কে মুখোমুখি দাঁড় করালো। গাড়ির জানালার কাচ যেয়ে ঠেকলো প্রিয়’র পিঠে। ল্যাম্পপোস্ট থেকে সামান্য দূরে বড় বটগাছটার নিচে দাঁড়িয়ে। ল্যাম্পপোস্টের আবছা হলদেটে আলোটা প্রিয়’র মুখ ছুঁইছে। তিরতির করে কাঁপছে প্রিয়’র আঁখিপল্লব। অনুভূতি, উত্তেজনায় উসখুস করছে। খোলা কেপ মৃদু বাতাসে থরথর করছে। গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শতাব্দ। দৃষ্টিতে প্রিয়তমাকে কাছে পাওয়ার অসীম তৃষ্ণা। নেশাতুর চোখ জোড়ায় গভীর ঘোর। ধীরেধীরে তা আরো তীব্র হচ্ছে। অজানা কোন ব্যথি’র মত সারা অঙ্গ শুষে মাথায় চড়ছে এখন। নিষিদ্ধ, অবাধ্য এক ইচ্ছা জাগ্রত হলো মনে। আচানক প্রিয়’কে চেপে ধরল। গাড়ির সাথে মিশিয়ে নিলো। ঠোঁট জোড়ায় গভীর করে চুমু দিলো। বিমূঢ় প্রিয়। শক্ত পাথরের মত জমে গেছে সে। সারা শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক অনুভূতি বইছে। বিভ্রান্ত চোখ জোড়া গোল গোল করে চেয়ে। উন্মাদের মত আচরণ করছে শতাব্দ। চোখ গাল কপালে অনবরত ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে। যেন হাজার বছর অপেক্ষা’র পর কোন অমূল্য রত্ন পেয়েছে। অদ্ভুত পাগলাদে তার আচরণ। অসহায় প্রিয় দাঁড়িয়ে। অনুভূতি শরীর ধরধর কাঁপছে। কন্ঠে অচেনা এক তৃষ্ণা জমে।
বেশ কিছু সময় থামলো শতাব্দ। চোখ বুজে প্রিয়’র কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে ভারী ভারী নিশ্বাস ফেলল। একটু সময় নিয়ে গভীর উৎকণ্ঠা স্বরে ডাকলো,
‘ আমার প্রিয়’
কেঁপে উঠল প্রিয়। শতাব্দের এমন অধিকার নিয়ে উৎকন্ঠা আওয়াজটা বুক চিড়ে গেল। অজানা এক আনন্দ মনে যেয়ে ঠেকলো। চোখ বুজে আছে প্রিয়। শতাব্দ আবারো আগের মত ডেকে বলল,
‘ ড্যাম! ঠিক এই ভয়টাই ছিল….আবারো কন্ট্রোলেস…আমি এত নিয়ম বেঁধে ভালোবাসতে পারব না প্রিয়!….চেষ্টা করেছি হচ্ছেনা, পারছিনা। ভদ্রপ্রেমিক হওয়াটা কি খুব জরুরী? পারছিনা তো! চলো, বিয়ে করে ফেলি? তারপর পুতুল সাজিয়ে চোখের সামনের বসিয়ে রাখবো সারাক্ষণ! যখন ইচ্ছা ধুপধাপ চুমু খাবো তখন।’
লজ্জায় মিয়িয়ে গেল প্রিয়। চোখজোড়া আরো শক্ত করে বুজে নিলো। মানুষটা এমন বেফাঁস, শিথিল কেন?
প্রিয়’র কানের পেছন চুল গুজে দিতে দিতে বলল শতাব্দ,
‘ ইমান্দিপুর গিয়ে তোমাকে না পেয়ে মাথা আউলে গেছিল। সবকিছু তছনছ করে দিতে ইচ্ছে করছিল। ঘরে যাওয়া হয়নি। গাড়ি থেকেই ফিরে এসেছি। এই বিরহ যন্ত্রণা আর ভালো লাগেনা প্রিয়। চলো বিয়ে করে ফেলি। এই কাপড়ে, এক্ষুনি!’
শতাব্দের এমন কথায় বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকালো প্রিয়। ছেলেমানুষী আবদারে ফিক করে হেসে ফেলল। বলল,
‘ আব্বা- মা মানবেনা কখনি।’
ঝুঁকে এলো শতাব্দ। প্রিয়’র আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল ডুবিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,
‘ মানিয়ে নিবো আমি।’
শতাব্দের চোখমুখ বেশ সিরিয়াস। প্রিয় সম্মতি দিলে এখনি কাজি অফিসে চলে যাবে। মাথা ঝুঁকিয়ে নিলো প্রিয়। নিচের দিক তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ধীর কন্ঠে বলল,
‘ বড় আপা কাউকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিল। পরে অবশ্য জানাজানির পর আনুষ্ঠানিক ভাবে আব্বা তুলে দিয়েছিল। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল। আপা মারা যাবার এতদিন পরও তা ভেবে কষ্ট পায় আব্বা। আমি চাইনা আমার জন্য আবারো কষ্ট পাক আব্বা।’
খানিক নীরব থেকে মাথা তুলে তাকালো প্রিয়, শতাব্দের চোখেচোখ রেখে ধরে আসা নিবিড় কন্ঠে বলল,
‘ আমি আপনাকে চাই শতাব্দ। খুব করে চাই। তবে সবার অনুমতি দোয়া নিয়ে আপনাকে পেতে চাই।’
চোখ চিকচিক করছে প্রিয়’র। প্রচন্ড অনুভূতিতে হয়তো। ঠোঁট মেলে হাসলো শতাব্দ। দু’কদম এগিয়ে এলো। প্রিয়’র হাত জোড়া হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
‘ কথা দিচ্ছি, সবার অনুমতি নিয়ে ঘটা আয়োজন করে লাল শাড়িতে মুড়িয়ে বউ সাজিয়ে ঘরে তুলবো তোমায়।’
লজ্জায় মিয়িয়ে গেল প্রিয়। দৃষ্টি সরিয়ে, মাথা নুয়ে নিলো। মনে মনে বলল,
‘ সেই দিনটার অপেক্ষায় রইলাম’

প্রিয়’কে রাস্তা পাড় হতে দেখে, তড়িঘড়ি করে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো প্রভা। দরজা খুলতেই ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকল প্রিয়। ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ টের পায়নি তো কেউ’
‘ উহু, নজর রেখেছি। দরজা আটকে বারান্দায় ছিলাম এতক্ষণ।’
ফোঁস করে স্বস্তির শ্বাস ফেলল প্রিয়। ঘরে যেতেই উত্তেজনায় ঝেঁকে ধরলো প্রভা। টাইপিং মেশিনের মত অনর্গল প্রশ্ন ছুঁড়তে লাগল,
‘ ভাইয়া চলে গেছে? কোথায় যাবে এখন? ইমান্দিপুরে? এত রাতে!… আচ্ছা এতক্ষণ কি বললি তোরা পার্সোনাল কিছু? আমাকে বলা যাবে? আচ্ছা আপা ভাইয়া কি রেগে ছিল? তুমি…
‘ আস্তে প্রভা। ধম ফেল। এত কথা কেউ এক সাথে বলে? শ্বাস আটকে ম*রে যাবি তো।’
মুখ চুপসে নিলো প্রভার। বিড়বিড় করে বলল,
‘ এমন করছ কেন বলো না আপা!’
ছোট নিশ্বাস ফেলল প্রিয়। শান্ত স্বরে বলল,
‘ সে এখন এখানে তার এপার্টমেন্টে গেছে। কাল সকালে ইমান্দিপুর যাবে। রেগে ছিলনা। চিন্তা করছিল একটু। আর সব কথা শুনতে হবে কেন তোর?’
চোখমুখ কুঁচকে নিলো প্রভা। চাদরের নিচ থেকে চকলেটের বক্সটা বের করল প্রিয়। প্রভার দিক এগিয়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ সে দিয়েছে, এটা তোর জন্য।’
চকলেট বক্স দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠল প্রভা। তড়িঘড়ি হাতে নিয়ে গদগদ কন্ঠে বলল,
‘ ওয়াও! Ferrero Rocher. তাও আবার আটচল্লিশ পিসের! এটা তো অনেক দামী…আমার ভীষণ পছন্দের … ভাইয়া জানলো কি করে?’
‘ আমার জন্য এনেছিল। তোর কথা শুনে তোকে দিতে বলল। আরো বলল, পরেরবার গিফট নিয়ে আসবে তার শালিকার জন্য।’
প্রভা এবার খুশিতে নেচে উঠল। বলল,
‘ আজ দেখতে পারিনি। পরেরবার অবশ্যই ভাইয়াকে সামনা সামনি দেখবো। আর গিফটও নিবো। আচ্ছা আপা, ভাইয়া কি খুব হ্যান্ডসাম? ‘
‘ হুম, খুব।’
‘ কেমন?’
‘ স্বপ্নের রাজপুত্রের মত।’
‘ তোমার স্বপ্নে আসে?’
‘ আসে। এসে, ভীষণ রকম জ্বালায় রোজ।’
ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে চোখ বুজে নিলো প্রিয়। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে যে! স্বপ্ন জগতে আসবে তো সে?

চলবে……

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই সবার মতামত জানাবেন।

টাইপোগ্রাফি : মুগ্ধ তা আপু🌺🥀

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here