ফিলোফোবিয়া পর্ব -৩৫

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা ( সাজিয়ানা মুনির)

৩৫.

(কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ)

পর্দার আড়াল হতে উপচে আসা রোদ, চোখে পড়তে নড়েচড়ে উঠল প্রিয়। আধো আধো চোখ মেলে আশেপাশে চাইল। অন্ধকার ঘরে এক ফালি রোদ এসে ছুঁইছে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল। তড়বড়ে হাতে বিছানায় মোবাইল খুঁজল। বালিশের পাশেই পেল। ঘড়িতে আটটা বাজছে। হেলেদুলে বিছানা ছাড়ল। ফ্রেশ হয়ে আলতো পায়ে শতাব্দের ঘরের সামনে গেল। ঘরে নেই শতাব্দ। এতো সকাল সকাল কোথায় গেল? আনমনা হয়ে ড্রাইং রুমের দিক এলো। কড়াই, খুন্তির আওয়াজে চমকে উঠল। রান্না ঘরে ধোঁয়া উড়ছে। কেউ রান্না করছে। কে করছে? শতাব্দ! আশ্চর্য মুখভঙ্গি নিয়ে সেদিকে পা বাড়াল। রান্নাঘরের দরজার সামনে যেতে চমকে উঠল। সেখানে মাঝবয়েসী একজন মহিলা রান্না করছে।
প্রিয়’র উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে ফিরলেন তিনি। এক গাল হেসে বলল,
‘ কিছু লাগবো ম্যাডাম?’
হতভম্ব স্বরে প্রশ্ন করল প্রিয়,
‘ আপনি কে?’
কপালের ঘাম মুছে হাসি হাসি মুখ করে বলল,
‘ আমি রহিমা। এই ছুসাইটির দারোয়ানের বউ। অনেক বছর এখানে কাজ করি। রান্নাবান্না, ঘর গোছানো সব করি। পোলাও গোস্ত সব রান্না পারি।’
মাথা নাড়াল প্রিয়। ঠোঁট গোল করে বলল, ‘ওহ’
রহিমা আবারও জিজ্ঞেস করল,
‘ আপনার কিছু লাগবো ম্যাডাম?’
দুদিকে মাথা নাড়াল প্রিয়। একটু চুপ থেকে জিজ্ঞেস করল,
‘ উনি কই?’
‘ কে শতাব্দ স্যার?’
মাথা ঝাঁকাল প্রিয়। রহিমা বলল,
‘ স্যার তো চইলা গেছে।’
অবাক হলো প্রিয়। ঘড়ির দিক চাইল। সবে আটটা বিশ। হতভম্ব হয়ে বলল,
‘ এতো তাড়াতাড়ি!’
‘ স্যার সবসময় এইসময়ই যায়। সকাল বেলা অফিস আদালতের সময় জ্যাম থাকে। তাই তাড়াতাড়ি বাইর হয়। কেন জানেন না আপনি? কইয়া যায় নাই?’
লজ্জায় পড়ে গেল প্রিয়। নিজের স্বামীর খবর বাড়ির কাজের লোক থেকে শুনতে হয়। চুপ করে রইল। রহিমা মৌনতার কারণ বুঝল হয়তো। বলল,
‘ মন কষাকষি চলতাছে বুঝি। ব্যাপার না নতুন বিয়া হইলে হয়। আমগো বিয়ার বিশ বছর। তেনার সাথে এখনও ঝামেলা হয়। দিনের বেলা হাজার ঝামেলা মা*রামারি কা*টাকা*টি যাই থাকুক রাইতে বিছানায় আইলে মিটা যায়। পুরুষ মানুষ তো।রাগ কইরা আর কতক্ষণ থাকবো।’
লজ্জায় মাখোমাখো হয়ে গেল রহিমা। কথা এড়াতে চাইল প্রিয়। বলল,
‘ উনি নাস্তা করে গেছে?’
‘ এক কাপ চা খাইয়া গেছে শুধু। আপনারে নাস্তা দিমু ম্যাডাম?’
মাথা নাড়াল প্রিয়। রহিমা রান্নাঘরের দিক পা বাড়াল। পেছন থেকে ডাকল প্রিয়। রহিমা থেমে গেল। পিছনে ফিরল। বলল,
‘ কিছু বলবেন ম্যাডাম?’
প্রিয় গম্ভীর হয়ে বলল,
‘ আমাকে ম্যাডাম বলবেন না। আমার নাম ধরে তুমি করে ডাকবেন খালা।’
ছলছল করে উঠল রহিমার চোখ। ঢাকা শহরে এসেছে এতবছর! আজ অবধি এভাবে বলেনি কেউ। গরিব বলে বড়ঘরের লোকেরা দূরদূর করে তাড়িয়েছে সবসময়। প্রিয়’র মুখে ‘খালা’ ডাক শুনে অদ্ভুত এক টান জন্মাল। মনের কোণে প্রিয়’র প্রতি সম্মানটা আরো বাড়ল।

ক্লাসের জন্য রেডি হয়ে বাহিরে বের হতে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এলো। গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে কিন্তু কিন্তু করে বলল,
‘ স্যার গাড়িতে যেতে বলেছে ম্যাডাম।’
কপাল কুঁচকে তাকাল প্রিয়। জিজ্ঞেস করল,
‘ উনি গাড়ি করে যায়নি?’
‘ জি। স্যারকে পৌঁছে দিয়ে মাত্রই ফিরছি।’
‘ ওহ’
উবার আসতেই সামনের দিক পা বাড়াল প্রিয়। ড্রাইভার পেছন থেকে ডাকল। কিন্তু কিন্তু করে জিজ্ঞেস করল,
‘স্যারকে কি বলব ম্যাডাম?’
‘ আপনার কিছু বলতে হবেনা। যা বলার আপনার স্যারকে আমি বলব।’
বলেই উবারে চড়ে চলে গেল প্রিয়।

কেবিনের বাহিরে গোটাগোটা অক্ষরে লেখা ‘ ডা. আহসান খাঁন শতাব্দ। তখন দুপুর দেড়টা। লাঞ্চ ব্রেক। ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে শতাব্দ। চোখমুখ ক্লান্ত ভীষণ। ছুটিতে অনেক কাজ জমেছে। রোগী দেখে আপাতত ভীষণ ক্লান্ত সে। মোবাইল বের করতে, ড্রাইভারের অনেক গুলো মিসকল দেখল। কল ব্যাক করে ড্রাইভারের কাছ থেকে সকালের ঘটনা শুনল। কপালে হাত বুলিয়ে, হতাশ শ্বাস ফেলল শতাব্দ। মাথা ধরছে প্রচন্ড। কিভাবে ফিরে পাবে তার সেই প্রিয়। লোকে নাকি বউ নাচায়? অথচ তার সাথে ঘটছে উল্টো। আজকাল নিজেকে নিরুপায় লাগে প্রচণ্ড। যেখানে পুরো গ্রামের লোক, সিনিয়র, জুনিয়র তার ইশারায় চলে। সেখানে নিজের বউ তার অবাধ্য। জোর খাটিয়ে যদি প্রিয়’কে পাওয়া যেত, কবেই না পেয়ে যেত। কিন্তু তা সম্ভব না। মনের ব্যাপার গুলো ভীষণ নাজুক হয়। এখানে ক্ষমতা, জোরজবরদস্তি কিছুই খাটে না। ভালোবেসে-ই ভালোবাসা পাওয়া যায়। যদিও তা অনিশ্চয়!
কিছু একটা ভেবে মোবাইল হাতে নিলো শতাব্দ। ফেসবুকে লগইন করতেই দেখল নোটিফিকেশন। লাইভে এসেছে প্রিয়।পড়নে ড্রার্ক পিংক ঢাকায় জামদানী শাড়ি। হাত ভর্তি কাচের চুরি। নিদারুণ সেজে ঠোঁটের কোণে চমৎকার হাসি ঝুলিয়ে। বেশ গুছিয়ে সুন্দর করে মন্তব্যের উত্তর দিচ্ছে,শাড়ির কোয়ালিটি ম্যাটেরিয়াল নিয়ে বলছে। মাঝেমাঝে কথার ফাঁকে আনমনা হাসছে। বিয়ের পর এই প্রথম প্রাণ খুলে হাসতে দেখছে। কি দারুণ লাগছে এই হাস্যোজ্জ্বল প্রিয়’কে।
মাঝেমধ্যে খুব রাগ হয় শতাব্দের, প্রিয়’র ভিউয়ার’সদের প্রতি প্রচন্ড হিংসা হয়। সবার সাথে হাসছে প্রিয়, কই তার জন্য একটু হাসেনা। তার জন্য কেন সাজে না। কেন তাকে একটু ভালোবাসেনা!
এক রাশ আক্ষেপ নিয়ে মোবাইলের স্কিনে আঙ্গুল ছোঁয়াল। কন্ঠে আফসোস জুড়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ তুমি আমার হয়েও, আমার হইলা না।’

সেদিনের পর পুরোপুরি বদলে গেছে প্রভা। আজকাল সমুদ্রের সন্দেহ হয়, ভীষণ চমকায়। সত্যি কি এটা তার-ই প্রভা? কথা বলা বন্ধ করেছে, বিছানা ছেড়েছে, শুধু ঘর ছাড়তে বাকি এখন। সম্ভব হলে ঘরটাও ছেড়ে দিতো বোধহয়। প্রভার এই রুষ্টতা মেনে নিতে পারছেনা সমুদ্র। অনেক তো হলো। আর কত? তার কথা একটাবার শুনুক অন্তত!
আটঘাট বেঁধে শক্ত হয়ে বসল সমুদ্র। যে করেই হোক, সামনা সামনি বসে প্রভার সাথে কথা বলে এর একটা বিহিত টানবে আজ।
রাতের খাবারের পর শাশুড়ীর হাতেহাতে সবকাজ গুছিয়ে ঘর ফিরল প্রভা। চৌকাঠ পাড় হতেই হাতে হেঁচকা টান পড়ল। ভারী আওয়াজে দরজা বন্ধ হলো। সবটা এত দ্রুত ঘটল যে, প্রভা হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল। শক্ত করে হাত চেপে ঝুকে আছে সমুদ্র। প্রভা হাত ছাড়াতে চাইল। শরীরের সব শক্তি মিলিয়ে ঠেলে সরাতে চাইল। পারল না। আরো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল সমুদ্র। প্রভা বিরক্তির কন্ঠ জুড়ে বলল,
‘ হাত ছাড়ো লাগছে আমার।’
সমুদ্রের অকপট আওয়াজ,
‘ লাগুক, ছাড়ব না হাত। আমার কথা শুনতে হবে আজ।’
‘ না শুনলে কি করবে তুমি?’ চাপা জিদ এঁটে বলল প্রভা।
‘ তোমাকে আমার কথা শুনতে হবে। তুমি শুনবে।’
প্রভা আরো বেশি রেগে গেল। হাত ঝাড়া দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে রইল সমুদ্র। আলতো স্বরে বলল,
‘ এতো ভালোবেসে, যুদ্ধ করে এমন ভবিষ্যৎ কি চেয়েছিলাম আমরা? এমন কিছুর তো কথা ছিলনা প্রভা!’
চিকচিক করে উঠল প্রভার চোখ। নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত করার চেষ্টা করল। ভাঙ্গা সুরে বলল,
‘ তখন এই লুকোচুরি খেলার কথা যে জানতাম না।’
‘ সে আমার অতীত ছিল।’
‘ আমি তোমার জীবনের দ্বিতীয়জন, মানতে পারছিনা। তাকে এখনো ভালোবাসো? তাই বুঝি তার স্মৃতি আগলে রেখেছ!’
‘ আমার কালো অতীত সে। তুমি আমার একমাত্র।’
‘ অনেক দেরি হয়ে গেছে। মানতে পারছিনা আর।’
চোখমুখে হাত ঢোলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করল। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ তুমি কি চাও এভাবেই চলুক। দুরত্ব বাড়ুক?’
‘ দুরত্ব বাড়িয়ে যদি একটু শান্তি পাওয়া যায়। বাড়ুক না! ক্ষতি কি। ‘
অনড় চেয়ে আছে সমুদ্র। খানিক চুপ থেকে প্রভা আলতো স্বরে বলল,
‘আমার কিছু সময় চাই আপাতত।’
সমুদ্রের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে, চাদর নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ল প্রভা।

বাড়ি ফিরতে রাত দশটা বাজল। দরজা খুলে বিমূঢ় শতাব্দ। অন্ধকারে বিলীন চারিপাশ। তবে কি প্রিয় বাড়ি ফিরেনি? কপাল কুঁচকে আলো জ্বা*লালো। ভেতরে এসে আরো বেশি চমকাল। সব ঘরের আলো বন্ধ। পকেট থেকে মোবাইল বের করে, প্রিয়’র ফোনে ফোন করল। বাড়িতেই বাজছে কোথাও। মোবাইলের রিংটোনের অনুসরণ করে বারান্দায় গেল। ঝুলন্ত দোলনায় বইয়ের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে আছে প্রিয়। স্বস্তির শ্বাস ফেলল শতাব্দ। এক গাল হাসল।
বিয়ের এক সাপ্তাহ আগে বারান্দা রিডেকোরেট করিয়েছিল। কিছু গাছ এনেছে আর বড় একটা দোলনা ঝুলিয়েছে। দোলনা ঝুলা প্রিয়’র ভীষণ পছন্দ। ইমান্দিপুর প্রিয়’র নানা বাড়িতে দোলনা ছিল। সেখানে বসে সারাক্ষণ ঝুলতো। প্রিয়’র অবসর সময় এখানে কাটাবে বলে এসব করিয়েছিল। যাক কিছু তো পছন্দ হয়েছে ওর।
কয়েক কদম বাড়িয়ে দোলনার দিক এগিয়ে গেল। বইয়ের উপর মাথা রেখে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে প্রিয়। পড়নে এখনো দুপুরে লাইভে পড়া সেই শাড়ি। মুখের মেকআপ তুললেও কাচের চুড়ি খোলা হয়নি। বাতাসে ঝনঝন করে বাজছে। চোখমুখ ক্লান্ত ভীষণ। রাতের খাবার খায়নি নিশ্চয়ই।

কারো ডাকে পিটপিট চোখ মেলল প্রিয়। দুর্বল হাতে ভর দিয়ে, ভারী মাথা তুলে উঠে বসল। পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিল! টেরই পায়নি। ঘোলাটে চোখ জোড়া স্পষ্ট করে সামনে তাকাল। শার্টের হাতা ফোল্ড করা, কিচেন এপ্রোন পড়ে দাড়িয়ে আছে শতাব্দ। নড়েচড়ে বসলো প্রিয়। নিজের দিক নজর পড়তেই বড়বড় হয়ে এলো চোখ। কৌটা থেকে বেরিয়ে আসবে যেন। শাড়ির পাড় হাঁটু অবধি ঠেকেছে, বুকের আঁচল খানিক ঝুলে। লজ্জায় চোখজোড়া বুজে এলো। তড়িঘড়ি হাত চালিয়ে শাড়ি ঠিক করল। ধুপধাপ পা ফেলে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ কখন এসেছেন আপনি?’
শতাব্দের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি আভাস। কন্ঠ শান্ত রেখে উত্তর দিলো,
‘ অনেকক্ষণ।’
‘ আমাকে ডাকেননি কেন?’ বিমূঢ় কন্ঠে বলল প্রিয়।
‘ ঘুমাচ্ছিলে। তাই বিরক্ত করিনি। রহিমা আন্টি কখন বেরিয়ে?’
‘ সন্ধ্যায়। যেতে চাচ্ছিল না। রাত হচ্ছিল তাই চলে যেতে বলেছি।’
‘ রাতে খাওয়া হয়েছে?’
‘ না’
‘ আমার আসার অপেক্ষা করছিলে?’
অস্বস্তিতে পড়ল প্রিয়। চোখমুখ স্বাভাবিক রেখে বলল,
‘ না, পড়ছিলাম খাওয়ার খেয়াল ছিলনা।’
হাসল শতাব্দ। বলল,
‘ খাবার রেডি চলো।’
কথা বাড়াল না প্রিয়। কুলি করে, হাত ধুয়ে চুপচাপ ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসল।আগেই ফ্রিজ থেকে সব নামিয়ে গরম করে টেবিল সেট করে রেখেছে শতাব্দ। কিচেন এপ্রোন খুলে প্রিয়’র সামনা সামনি চেয়ারটায় বসল। চেয়ারে বসে ঝিমাচ্ছে প্রিয়। নিগূঢ় হয়ে শতাব্দের দিক চেয়ে আছে। ফোল্ড করা শার্টের হাতা, পরিপাটি মানুষটা সবকিছু গোছগাছ করে রেখেছে। ঠিক যেন জেন্টলম্যান!

প্লেটে ভাত বেড়ে দিতে দিতে প্রিয়’র মুখপানে চাইল শতাব্দ। ভীষণ ক্লান্ত মুখ। একদিনেই মুরছে গেছে চেহারা। ঘুমে লাল টলমলে হয়ে আছে চোখজোড়া। শতাব্দ বলল,
‘ পড়াশোনা কাজ এক সাথে চালিয়ে নিতে কষ্ট হলে। আপাতত কাজ থেকে ব্রেক নিতে পারো। ফাইনাল এক্সামের পর কন্টিনিউ করিও আবার।’
স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিলো প্রিয়,
‘ আমার কাজ আমার পরিচয়। প্রিয়’কে কেউ চিনেনা। অশীতা জাফর প্রিয়কে অনেকেই চিনে। যখন আমি পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছিলাম। কলেজের পর বিষন্ন ভরা অবসর সময় পাড় করছিলাম, তখন আমার কলেজের প্রত্যাশা ম্যাম তাদের ছোট ব্যাবসা’র মুখ হতে অনুরোধ করলেন। উনার আর তার ছোটবোনের ব্যাবসা। উনাত নামেই ‘প্রত্যাশা শাড়ি ব্র্যান্ড’। প্রথমে রাজি না হলেও, বিষন্নতা গোছাতে রাজি হলাম। শুরুর দিকে শাড়ির মডেল হলেও আস্তে আস্তে লাইভ করতে শুরু করলাম। আমার কনফিডেন্স লেভেল বরাবরই শূন্যের কোটায়। প্রথম লাইভে ভীষণ এলোমেলো, অশান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমি হার মেনে নিয়েছিলাম একপ্রকার । প্রত্যাশা ম্যাম তখন সাহস জোগা্ল। এক নতুন আমি’র সাথে আমার পরিচয় হলো।পরবর্তীতে ব্যবসা বড় হলো, ছোট ব্যবসাটা ‘প্রত্যাশা শাড়ি ব্র্যান্ড ‘ নামে পরিচিতী পেল। জনপ্রিয়তার তুখোড়ে পৌঁছাল। আমি হলাম ব্র্যান্ড প্রমোটর। প্রত্যাশা শাড়ি ব্র্যান্ড আমার পরিবারেরই অংশ। যদিও অন্যকাজের তুলনায় আমার কাজটা তুচ্ছ। তবুও আমার কাজই আমার সব।’
‘ কাজ থেকে বিরতি নিবেনা। জ্যামজটের শহর। ক্লাস কাজে দৌড়াদৌড়ি করো। অন্তত গাড়িটা নিয়ে তো যেতে পারো! ‘
‘ প্রয়োজন নেই। এর আগেও আমার জীবন চলছিল। বিলাসবহুল জীবন আমার চাইনা। আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মত চলতে পছন্দ করি।’
কাঠকাঠ হয়ে চেয়ে রইল শতাব্দ। গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ আমার চিন্তা হয়। সারাক্ষণ ব্যাকুল থাকে মন।’
‘ কাজ ফেলে যদি আমার চিন্তা মাথায় ঘুরঘুর করে সারাক্ষণ। সেটা আপনার সমস্যা। আমার না।’
‘ তো তুমি গাড়ি ব্যাবহার করবে না?’
‘ না’ প্রিয়’র রুখা উত্তর।
বিরক্ত হলো শতাব্দ। খাওয়া হলো না আর। রাগ চেপে, আড়ষ্ট হয়ে চেয়ে রইল মুখপানে প্রিয়’র।

চলবে………

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই সবার মতামত জানাবেন।

টাইপোগ্রাফি: মুগ্ধ তা আপু🌺❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here